Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এক মুঠো প্রেম রঙ্গনাএক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-২৯

এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-২৯

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ
| পর্ব ২৯ |

———————-
বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে। নওরির বেলায়্ব হয়েছে ঠিক তাই। অমনোযোগ এবং বেখেয়ালিতে ওড়নায় আগুন ধরিয়ে ফেলেছে সে।ইরা’দ কোনো রকমে ডাইনিং থেকে পানিভর্তি বোতল নিয়ে রান্নাঘরে ছুটলো। দ্রুত গিয়ে নওরির ওড়নায় পানি ঢাললো ইরা’দ। নওরির তখনো খেয়াল হয়নি যে ওড়না পুড়ছে। ইরা’দ আগুন বন্ধ করলেই নওরির হুঁশ আসে। সে আঁতকে পিছে ফিরে তাকায়। ইরা’দ এবার কড়া ধমক দিয়ে উঠলো নওরিকে।
–“সেন্স নেই তোমার? এসবের মানে কী? সাবধান থাকতে পারো না? মন কই থাকে?”

শেষোক্ত বাক্যটি বেশ জোরেই বললো ইরা’দ। নওরি কেঁপে ওঠে। মুহূর্তে-ই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইরা’দ শান্ত হলো। নওরি ফোঁপাচ্ছে এবং হাত ঝাড়ছে। ইরা’দ নওরির ক্রন্দনরত মুখশ্রী দেখে নরম হলো। হাতের দিকে তাকালো সে। হাত টান দিতে-ই নওরি চাপা আর্তনাদ করে উঠলো। ইরা’দ আস্তে করে ধরে হাতে চোখ বুলালো। ইশ! ছ্যাঁকা লেগে লাল হয়ে আছে। ইরা’দের ভেতরটা মুঁচড়ে ওঠে। নওরির দিকে তাকালো না নওরি। হাত ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
–“রুম থেকে আরেকটা ওড়না নিয়ে আসো!”

নওরি হাত ধরে ওখানেই থম মে!রে দাঁড়িয়ে রইলো। নওরি নড়াচড়া করছে না দেখে ইরা’দ আবার ধমকালো।
–“ফাস্ট!”

নওরি পুণরায় কেঁপে উঠে দ্রুত রুমে চলে গেলো। নিজের দিকে খেয়াল নেই তাঁর। বড্ড বেপরোয়া লাগছে নিজেকে। নওরি ফিরে আসতেই ইরা’দ নওরিকে টেনে-হিঁচড়ে জোর করে বেরিয়ে গেলো। নওরি ইরা’দ বারংবার আটকানোর বিফল চেষ্টা চালাতে ভুললো না। ইরা’দ নওরিকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়। ড্রাইভার তখন পানি দিয়ে গাড়ি ওয়াশ করছিলেন। কিন্তু ইরা’দকে দেখে পানির পাইপ ফেলে ড্রাইভার দ্রুত ভঙ্গিতে গাড়িতে উঠে বসলো। গার্ড আসতে চাইলে ইরা’দ শুধু তাঁর বিশ্বস্ত সহচর নাহিদকে নিয়ে রওনা হয়। নওরি মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
–“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ছেড়ে দিন!”

ইরা’দ শুনলো না নওরির কথা। ভ!য়ানক রেগে আছে সে। ইরা’দকে কখনোই এত রাগতে দেখেনি সে। ইরা’দ উলটো নওরিকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,
–“একটু শান্তি দাও আমায়!”

নওরি নির্জীব পাথরের ন্যায় বসে থাকে। ইরা’দ নাহিদের উদ্দেশ্যে বললো,
–“হসপিটাল চলো। আর্জেন্ট!”

নাহিদ ইরা’দের কথানুযায়ী ড্রাইভারকে তাই বললো। ড্রাইভার চুপচাপ তাই করলো। হাতের জ্বালায় নওরির চোখ দিয়ে এখনো অশ্রু ধরছে। গলায় যেন দম আটকে গেছে পোড়ার জ্বালায়।

যেহেতু ছ্যাঁকা লেগেছে সেহেতু নওরিকে ওষুধ এবং ক্ষ!তস্থানে মলম দিয়ে দেয়া হলো। মলম দেয়ায় নওরির হাত যেন আরও জ্বলছে। এমন লাগছে যেন ক্ষতস্থানে লবণ লাগানো হয়েছে৷ এত যন্ত্রণা। নওরি কাঁদতে কাঁদতে কাঁতরাচ্ছে। এক হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে ইরা’দের হাত। নখ ডেবে যাচ্ছে যেন হাতে। ইরা’দ এতে কোনোরূপ পতিক্রিয়া দেখালো না। বরং প্রেয়সীর এই কষ্টে তাঁর ভেতরটা চূর্ণ- বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যেন ক্ষতটি নওরির নয়, ইরা’দের। ওষুধ নিয়ে পুণরায় ওরা গাড়িতে করেয়াড়ির পথে রওনা হলো। নওরি নির্বিকার হয়ে ইরা’দের বক্ষে মাথা এলিয়ে রেখেছে। ইরা’দ তাকে এক হাতে আগলে রেখেছে। কেন যেন নওরি খুব আরাম পাচ্ছে। আবেশে কিছুক্ষণ পরপরই চোখ বুজছে তো আবার খুলছে। গাড়িতে পিনপতন নীরবতা।
–“স্যরি!”

নওরি চমকে মাথা তুলতে চাইলো। কিন্তু ইরা’দ তা হতে দিলো না। হাত দিয়ে বক্ষে মাথা চেপে রইলো। নওরি আমরা আমতা করে বললো,
–“কেন?”
–“তোমায় বকেছি তাই। আমার ফুলের গায়ে পোড়া দাগ লেগেছে, কী করে সহ্য করি বলো?”

নওরি নিশ্চুপ রইলো। অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে সে। এতদিনে বুঝতে পেরেছে ইরা’দ তাকে ভালোবাসে। নওরিরও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে নওরি ইরা’দকে পছন্দ করে। তবে প্রকাশ করলো না। একদম চুপ রইলো। ইরা’দ হঠাৎ নাহিদের হাত থেকে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে বললো,
–“চলমান গাড়িতে, নগরীর কোনো এক ব্যস্ত শহরে, তোমায় নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত আমি ইরা’দ আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি আমি তোমায় ভালোবাসি নৌরি ফুল! চেয়েছিলাম আরও সময় নিয়ে বলবো কারণ, তোমার জন্যে অপেক্ষা করা মৌমাছির সদ্য সংগ্রহীত মধুর মতোই। কিন্তু বুঝতে ভুল করেছিলাম যে ভালোবাসার মানুষটিকে চোখের সামনে রেখে অপেক্ষা করা মুশকিল, একাংশ বিষাদ। আমার জীবনে বেশ কিছু রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি শুধুমাত্র তোমার ভাবনায়।

মাঝেমধ্যে কিছু খারাপ লাগা ঘিরে ধরলে ইচ্ছে করতো ছুটে চলে যাই তোমার কাছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই অধিকারটা এখনো আমার হয়নি। তাই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতাম। কিন্তু আজকের পর থেকে আর সম্ভব নয় নৌরি ফুল। ভালোবাসার কথাটা লুকিয়ে রাখা আমার দ্বারা সম্ভব হচ্ছিলো না। নিঃশ্বাস আটকে আসছিলো, যেন এখনই আমি মূর্ছা যাবো। অনুমতি দিবে তোমার ওই নরম হাতে তোলা এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা আমার বুকপকেটে আগলে নেয়ার? অনুমতি দিবে ভৃঙ্গরাজের পরিবর্তে তোমার হাত জোড়ার ঘ্রাণ নেবার; যেখানে ইরা’দ নামক আঙটি তোমার অনামিকা আঙুলে থাকবে?”

নওরি চমকালো, অবাকও হলো। কিছুক্ষণের জন্যে ইরা’দের কথার ঘোরে চলে গেছিলো সে। কথাগুলো এতই আস্তে বলছিলো যে নাহিদ বা ড্রাইভার কেউ শুনেনি। ফিসফিস করে বলেছে। তাও নাহিদ মিটিমিটি হাসছে। নওরি লজ্জায় থমকালো। নুইয়ে ফেললো দৃষ্টি জোড়া। মুহূর্তেউ ভুলে গেলো পূর্বের সকল ক্ষ!ত। কী হচ্ছে তাঁর সাথে? অন্তঃস্থলে এভাবে কেন তবলা বাজছে? ধুকধুক শব্দের তবলা? রাঙা নওরির মুখ দিয়ে কিছুই বের হলো না অথচ ইরা’দ উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছে নওরির উত্তরের। হঠাৎ নওরি ইরা’দের হাত থেকে ফুল নিয়ে বললো,
–“ফুলের তোড়া সুন্দর হয়েছে।”

ইরা’দ হতাশ হলো। মৃদু গলায় বললো,
–“তোমার উত্তর আশা করছিলাম নওরি।”
–“সময় হোক!” নওরির লাজুক সুর।
ইরা’দ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
–“ওকে! মেনে নিলাম যাও। তবে দীর্ঘ অপেক্ষা সম্ভব না কিন্তু!”
নওরি পুণরায় অল্প বিস্তর হাসলো।

———————
রাতে নওরি ফুলগুলো দেখছিলো এবং ইরা’দের প্রপোজের কথা মনে করছিলো। যখনই ভাবছে সে ইরা’দের বাহুডোরে তখনই লজ্জায় লাল হয়ে একবার শুয়ে পরছে তো একবার উঠে বসছে। ফ্রিশাও ধরতে পারছে না নওরির এরূপ কান্ডের কারণ। সে তো একমনে বসে নওরিকে দেখছে। পিটপিট করে। কী চলছে তাঁর মালকিনের মনে? কে জানে!

নওরি যখন লজ্জায় লাল হচ্ছিলো তখনই তাঁর ফোন বেজে ওঠে। নওরি রিংটোন শুনেই বুঝে ফেলে ইরা’দ কল করেছে। তাই কোনো রকমে বালিশের পাশ থেকে ফোনটি নিয়ে না দেখেই রিসিভ করলো। কানে দিয়ে লাজুক স্বরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভরাট কন্ঠের কেউ বলে ওঠে,
–“আহ্! ফোনে তোমার কন্ঠস্বর আরও আবেদনময়ী লাগছে নওরি। এত সুন্দর কন্ঠস্বরে কোন চৌম্বক আছে বলো তো? কেন আমাকে এত টানছে?”

নওরি যেন আকাশ থেকে পরলো। প্রিতম? নওরি একবার নাম্বার দেখে নিলো। এবার তো নওরির ভেতরটা কেঁপে উঠলো। থরথর করে কাঁপছে নওরির অধর জোড়া। নওরিকে নিরব থাকতে দেখে প্রিতম হাসলো। হাসি বজায় রেখে বলে,
–“ভাবছো কীভাবে নাম্বার পেয়েছি? হা, হা। কষ্ট তো করতে হয়েছে বটে। ভাগ্যিস কাগজটা তোমার ব্যাগ থেকে পরেছিলো, আর ভাগ্যিস তোমার কাগজটা আমার নজরে এসেছিলো। এজন্যই বলে উপকারী’রা দেরী করে হলেও মিষ্টি ফল পায়। কিন্তু আমায় দেখো, আমি তো কয়েক মিনিটেই পেয়ে গেলাম।”
প্রিতম হাসলো। আবার বললো,
–“জানো, তোমার নাম্বার খুব কষ্টে জোগাড় করেছি। তোমার ওই ট্রেইলারে গিয়ে নাম্বার খুঁজেছি। খুঁজতে খুঁজতে রাত হয়ে গেলো! আর…”
–“কেন কল করেছেন?” নওরি শক্তপোক্ত কন্ঠস্বর!
–“আহ্! কন্ঠের কী ঝংকার! আই লাভ ইট! শোনো শীঘ্রই তোমায় আমি খুঁজে বের করবো। আমার বউ হবার জন্যে তৈরি থেকো!”
–“আমি কোনোদিনও আপনার হাতে ধরা দিবো না!”
–“ঠিকাছে। আমিও দেখবো। আফটার অল, আমার মা একজন নেত্রী! তোমাকে খুঁজে বের করা তো আমার বা হাতের কাজ। শুধু কিছুদিন সময় দাও। খুব শীঘ্রই আসবো তোমায় বউ করতে!”

নওরি প্রিতমের আর কোনো কথা না শুনেই সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিলো। ভয়ে, রাগে রীতিমতো সর্বাঙ্গ কাঁপছে নওরির। কী অপেক্ষা করছে তাঁর জন্যে? কেন তাঁর এই সুখের সময়ে এই প্রিতম নামক দেয়াল এসে দাঁড়ালো? আর ইরা’দ? তাকে কী জবাব দিবে সে? প্রিতমের কথা জানলে ইরা’দ কী তাকে ভুল বুঝে তাড়িয়ে দিবে? তাকে ধো!কা দেয়া হবে? এরকম নানান চিন্তায় নওরির কঠিন হতাশায় ভুগতে লাগলো। মাথা কাজ করছে না তাঁর। কী হচ্ছে এসব? কেন-ই বা হচ্ছে?

——————-
নূরজাহান, সারিফা এবং সৈকত সাহেব গভীর ভাবনা নিয়ে বসে আছে বৈঠক ঘরে। নিদ্র এখনো ঘুমোচ্ছে। ছুটির দিন বলে কথা। সারিফার তো রীতিমতো হাত- পা বরফের মতো জমে গেছে। চোখে- মুখে আতঙ্কের সাথে একরাশ চিন্তার ভাব। আজ ভোরেই সদর দরজা খোলা দেখেছে নূরজাহান। এরপর সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও নওরিকে কোথাও পায়নি। নওরির একটি নিশানাও এই বাড়িতে নেই। কোথায় গেলো মেয়েটি হুট করে? কোথায়-ই বা গেলো? সেই চিন্তায় তিনজনই জড়ো হয়েছে বৈঠকঘরে। নূরজাহানের দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পরেছে। মিনিট পাঁচেক তাঁরা নিস্তব্ধতা পালন করলেও হঠাৎ করেই কলিংবেল বেজে ওঠে। নূরজাহান নওরি ভেবে উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত ভঙ্গিতে দরজা খুললে ভীষণ চমকায়৷ দরজার ওপারে দাঁড়ানো যুবক এবং মহিলা তাকে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। যুবকটি ভেতরে প্রবেশ করে উ!ম্মাদের মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে নওরিকে ডাকতে শুরু করে দেয়।

নূরজাহান ভয় পায়। এটা ওই ছেলে নয়তো যার সাথে নওরির বিয়ে হয়েছিলো! নূরজাহান ঘাবড়ে যায়। দ্রুত ছুটে যায় মেয়ে এবং স্বামী কাছে। সৈকত সাহেব কিছু বলতে নিলে নূরজাহান শক্ত করে তাঁর হাত ধরে বলে,
–“নওরির কথা যেন ভুলক্রমেও না জানে সৈকত!”
সৈকত দমলেন। সারিফাও পাশ থেকে মায়ের বলা সবটা শুনে মুখে কুলূপ আঁটে। নূরজাহান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
–“কে আপনারা! এভাবে হুট করে আমাদের বাসায় ঢুকে পরেছেন কোন সাহসে?”

প্রিতমের মা নূরজাহানের দিকে শক্ত চোখে তাকালেন। নূরজাহানও ঘাবড়ানোর মানুষ নয়। সেও উলটো গরম চোখে তাকিয়ে আছেন। মহিলা হঠাৎ হাসি দিয়ে বলে,
–“শুনেছি আমার একমাত্র পুত্রবধূ আপনাদের কাছে আছে। কোথায় সে? তাকে নিয়ে আসুন, নয়তো আমার ছেলে আপনাদের রুমে রুমে ঢুকতে বাধ্য হবে।”
–“কার কথা বলছেন আপনি সাহেবা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।” সৈকত সাহেবের বিরক্তি ভাব।
–“নাবালক হবার মিথ্যে চেষ্টা করবেন না ভাইসাহেব। আমরা সব খবর নিয়েই এখানে এসেছি!”
–“এতই যখন খোঁজ নিয়েছেন তাহলে আপনার পুত্রবধূকে আমরা কেন রাখতে যাবো? সে আপনাদের পুত্রবধূ আপনাদের কাছে থাকবে। সে কী মুরগি নাকি পাখি যে খাঁচায় বন্দি করে রাখব!”
–“রাখতেও পারেন। তবে আমাদের বিষয় আমরা বুঝে নিবো। সাবধান করে বলছি আমার পুত্রবধূকে আপনারা বের করুন, নয়তো…”
সৈকতের এবার বিরক্তি ধরে গেলো মহিলার কথা। গলায় একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে বলে,
–“আরে যান তো! যা ইচ্ছা করেন! যদি আপনাদের এই বিষয় মিথ্যে হয়ে থাকে তাহলে আমার সম্মানহানির কঠিন মূল্য চুকাতে হবে আপনাকে!”

মহিলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে প্রিতমকে ইশারা করলো। প্রিতম সঙ্গে সঙ্গে সব রুম চেক করলো। কোথাও কোনো প্রমাণ নেই, এমনকি নওরিও নেই। প্রিতম তন্নতন্ন করে খুঁজলো। এমনকি তাঁর লোককে ছাদে পর্যন্ত চেক করাতে পাঠালো। সেখানেও নেই। তাহলে কী সে ভুল খবর পেয়েছে? নওরির তো বিড়ালও রয়েছে। বিড়ালের কোনো চিহ্ন-ই তো পেলো না সে! হতাশ হয়ে ফিরে গেলো মায়ের কাছে। মহিলা তখন ইরা’দের সাথে কথা বলছে। ইরা’দ এসেছে দুই মিনিট হলো। নওরির অতীত হানা দিয়েছে শুনে ইরা’দের চোখ-মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মহিলা ইরা’দকে কিছু বোঝাবার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রিতম আসতেই প্রিতমের দিকে রক্তচক্ষু চাহনি নিক্ষেপ করলো। সারিফা মেসেজ করায় ছুটে এসেছে সে। সারিফা মেসেজে এও বলেছে যেন ওদের নওরির ব্যাপারে কিছু না বলে। ইরা’দ মহিলার উদ্দেশ্যে কড়া স্বরে বলে ওঠে,
–“আপনাদের নূন্যতম জ্ঞান নেই যে সন্দেহের বসে এভাবে চলে আসা ঠিক নয়! আমার তরুণী বোন আছে। আপনি কী করে এরকম বো!কামী করতে পারেন বুঝলাম না! ভদ্রলোকেদের বাসায় এভাবে চলাফেরা করা কতটা ভদ্রতা শুনি?”
–“এক্সট্রেইমলি স্যরি মিস্টার ইরা’দ। আমরা উপায়হীন হয়েই এসেছি। কিছু করার ছিলো না। একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আর…”
–“কৈফিয়ত চাইনি আপনার কাছে। আপনার কাজ হয়ে গেলে আসতে পারেন। আর কোনদিন যেন না দেখি আপনি বা আপনার ছেলে আমার বাড়ির ত্রি-সীমানায় এসেছে।”

মহিলা রাগাম্বিত হলেন। মোটকথা৷ এরকম অপ!মান তিনি প্রত্যাশা করেননি। তাও নিজেকে সামলে নিলেন। পুণরায় ইরা’দের উদ্দেশ্যে বললেন,
–“দুঃখিত। প্রিতম, চলো বাবা!”

ওরা চলে গেলো। ইরা’দ পারলে এখন-ই জ্যান্ত পুঁ!তে দিতো মা-ছেলেকে। ওরা চলে যেতেই ইরা’দ ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো। নূরজাহান এবং সারিফা হন্তদন্ত হয়ে ইরা’দের কাছে আসলো। ইরা’দ বিষণ্ণতায় চোখ বুজে রইলো। নওরি তাকে ছেড়ে চলে গেছে এটা ভাবতেই তাঁর ভেতরটা ক্ষ!ত- বিক্ষ!ত হচ্ছে। এভাবে তাকে ছেড়ে চলে গেলো কোথায় নওরি? কোথায় খুঁজবে নওরিকে? নূরজাহান উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
–“ঠিকাছিস বাবা?”
–“নওরি কোথায় চাচী? কোথায় হারিয়ে গেলো?” মিইয়ে যাওয়া কন্ঠ তাঁর।

হঠাৎ সারিফা একটি চিঠি এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“সকালে আপুর রুমে যাওয়ার পর বালিশের কাছে চিঠিটা পেয়েছিলাম। এক লাইন পড়ে মনে হলো তোমায় লিখেছে। তাই নিজের কাছেই রেখেছিলাম তোমায় দিতে।”

ইরা’দ তৎক্ষণাৎ চিঠিটা নিয়ে খুলে ফেললো। দ্রুত বেগে পড়তে শুরু করলো,
–“ভালো থাকবেন নিদ্র সাহেব। অনুমতি দেয়া হলো না এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা আপনার বুকপকেটে রাখার। নিজ চোখে সেই দৃশ্য দেখাও হলো না। কল্পনা-ই থেকে গেলো। হয়তো অনুমতি দেয়ার মতো অসাধারণ কেউ নই আমি। আপনি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন। আমি চলে যাচ্ছি, বহুদূরে।
ইতি,
ছোট নিদ্র’র নৌরি ফুল।”

——————–
~ ১ম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি। তারপর থেকে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ শুরু হইছে।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

7 মন্তব্য

  1. এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-২৯ এ এসে প্রথম পরিচ্ছেদ সমাপ্ত হয়েছিলো, তারপর থেকে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ আপলোড করা হইছে আপনারা পড়ে নিতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ