#এক_মুঠো_প্রণয়
#সিজন_টু
#পর্ব_১১
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
ব্যস্ততায় আর চিন্তায় নির্ঘুমভাবে কাঁটল আরো চারটে রাত। জ্যোতির বাবার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে চারদিন আগেই।অবশ্য সেদিনই গ্রাম থেকে ছুটে এসেছিল ছোট মিথি, তার দাদী এবং তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীও।এই চারটে দিন হসপিটাল ছাড়া বাকিটা সময় নাবিলাদের বাসাতেই থেকেছেন উনারা। জ্যোতির বাবা যদিও এখন আগের থেকে সুস্থ তবুও হসপিটাল থেকে ছাড়ানে হয়নি। ধারণা অনুযায়ী আর তিন চারদিন পরই হসপিটাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবেন উনাকে। মিথি অবশ্য এই কটা দিন বাবার খুব কাছে কাছেই ছিল। যেন বাবার একদম বাধ্যগত আদর্শ মেয়ে। আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। হসপিটালে রাতের বেলায় মিনার থাকলেও সকাল সকালই মেহু আর জ্যোতির সাথে হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়েছে মিথিও। শর্ত ছিল সে বাবাকে দেখে মিনারের সাথে ফের মেজেরাজদের বাসায় ফিরে যাবে। সে শর্তানুযায়ী বাবাকে একবার দেখে নিয়ে মিনারের সাথে বেরিয়েও গেল। কিছুটা দূরে এসে রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে হঠাৎই মিনারের মনে পড়ল একটা প্রয়োজনীয় ঔষুধ কেনার কথা৷ তাই মিথিকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেই দ্রুত গেল ঔষুধটা কিনে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে দিতে। মিথি না করল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে এপাশ ওপাশ দেখতে লাগল।কিন্তু কিছুটা সময় পরই যেন বিস্ময়কর কিছু দেখে চোখের চাহনি বদলে এল। দেখতে পেল কিছুটা দূরে দাঁড়ানো এক যুবককে। এই যুবকটিকে সে ভালোভাবে না চিনলেও অল্প হলেও চেনে।এই হসপিটালেরই মেহেরাজ ভাইয়ের পরিচিত এক ইন্টার্ন ডক্টর।তার মনে আছে এখনও, তিনদিন আগেই একবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল মেহেরাজ ভাই। কিন্তু সেসব কথা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো এই লোক হসপিটালের সামনের রাস্তাতেই একজন ডক্টর হয়ে সিগারেট ফুঁকছে কি নির্ভয়ে। কতোটা বিচ্ছিরি আর জঘন্য!প্রথমদিন কান্নাকাঁটির দাপটে খেয়াল না করলেও পরে যখন এই ছেলেটাকে সে খেয়াল করেছিল তখন সাদা এপ্রোনে মারাত্মক সুদর্শন বোধ হয়েছিল। কিশোরী মন বোধ হয় ছেলেটার গম্ভীর চোখমুখের চাহনি, ভদ্রভাবে কথা বলা, এসবে আকৃষ্টও হয়েছিল। কিন্তু কে জানত এই ছেলের এমন একটা অভদ্র রূপ ও আছে? এ অভদ্র গুণ নিয়ে এই ছেলে আবার নাকি হবে ডক্টর? ডক্টর হয়ে আবার করবে নাকি মানুষের চিকিৎসা? নাক মুখ কুঁচকাল মিথি। দুই পা এগিয়ে এসেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়েই ডাকল সেই অল্প পরিচিত ডক্টরকে। গলা উঁচিয়ে বলল,
“এই যে ডক্টরসাহেব, শুনুন এই যে?”
মেঘ প্রথমেই তাকাল না। পরমুহুর্তেই চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে পিঁছু ফিরে তাকিয়ে দেখল মিথিকে। দেখতে পিচ্চি পিচ্চি ফর্সা ধবধবে মেয়েটা।নাম জানে না ঠিক সে।তবে তিনদিন আগেই জেনেছিল এই মেয়েটা মেহেরাজদের পরিচিত। এই কয়েকদিনে দুই-চারবার দেখেছেও সে এই মেয়েকে। বাবার জন্য প্রথমদিন কেঁদেকেঁটে চোখ ভাসাতেও দেখেছিল অবশ্য। নিশ্চয় বয়স খুব অল্প। নয়তো কেউ জনসম্মুখে এমন করে কাঁদে? স্মিত হাসল সে৷ ভদ্রতা দেখাতে সিগারেটে শেষবার টান দিয়েই ফেলে দিল দ্রুত। পা দিয়ে সিগারেটের শেষাংশ টা রাস্তায় ফিষে ফেলে বলল,
“ কিছু বলবে? ”
মিথি আরো দুই পা এগিয়ে এল। ভ্রু কুঁচকে কোমড়ে হাত রেখে শুধাল,
“ছিঃ ছিঃ!আপনি না একজন ইন্টার্ন ডক্টর? সত্যিই ডক্টর তো আপনি? ”
মেঘ ভ্রু উঁচু করল। মাঝরাস্তায় এটা কেমন প্রশ্ন?ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“কেন? সন্দেহ হচ্ছে তোমার?আমার গায়ে সাদা এপ্রোন চোখে পড়ে না?”
মিথি ফোঁড়ন কেঁটে শুধাল,
“সাদা এপ্রোন গায়ে দিলেই সবাই ডক্টর হয়ে যায় নাকি? আজব! ”
মেঘের বিরক্ত লাগল। একেই হসপিটালে মেহুকে দেখে পুরাতন দুঃখ সতেজ হয়ে উঠেছে।তার উপর এসব প্রলাপ যেন এই মুহুর্তে বিরক্তকর কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবুও কপাল কুঁচকে গম্ভীর স্বরে শুধাল,
“কি বলতে চাইছো তাহলে? আমি ডক্টর না? এত বছর এত পড়ালেখা করে এত পরীক্ষা পার হওয়ার পর আমি ভুয়া ডক্টর এটা বলতে চাইছো?”
“ অবশ্যই। নয়তো সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছিলেন কেন?একজন ডক্টর হয়ে কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে মনের সুখে সিগারেটে টানে? ”
মেঘের বিরক্তি শীর্ষে পৌঁছাল যেন। এই মেয়েকে এখন কি করে বুঝাবে সে সিগারেটে কেন সুখটান দিচ্ছে? আধো বলার মতো কিছু? প্রিয়তমার বিরহে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে সিগারেট ফুঁকছে এটা শুনতে নিশ্চয় বিদ্ঘুটেই লাগবে?সে বিদ্ঘুটে উত্তরটা তাই দিল না মেঘ। বলল,
“কেন? ডক্টররা কি সিগারেট টানে না? ”
মিথি হার মানল না। ফের গলা উঁচিয়ে বলল,
“কেন টানবে? কোন সুখে টানবে? রোগীদের রোগ দূর করার সুখে? ”
মেঘের গলা হঠাৎ একদম ঠান্ডা হয়ে এল। অন্যমনস্ক হয়ে শীতল স্বরে শুধাল,
“ সুখে নয়, দুঃখে।”
“আশ্চর্য!কি এমন দুঃখ থাকবে যে সিগারেট টানতে হবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে? ”
মেঘ নিষ্প্রভ ভাবে চাইল এবারে মিথির দিকে। ঠোঁট চেপে মৃদু হেসে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ কেন?ডক্টরদের দুঃখ থাকতে নেই নাকি? ”
মেঘের কথাটায় আর হাসিটায় কি ছিল কেজানে হঠাৎ মিথির মন খারাপ হয়ে এল। মনে হলো এই লোকটার সত্যি সত্যিই বিশাল দুঃখ! কিন্তু কি এমন দুঃখ? মৃদু স্বরে বাধ্য মেয়ের মতো শুধাল,
“ থাকতেই পারে, কিন্তু আপনার দুঃখটা কি? ”
মেঘ আবারও হাসল। বলল,
“তুমি ছোট, ওসব দুঃখ সম্পর্কে বুঝবে না। ”
মিথি কিয়ৎক্ষনের জন্য শান্তরূপ ধারণ করলেও আবার জ্বলে উঠল যেন। তীক্ষ্ণ চাহনি ফেলে বলে উঠল,
“ কে ছোট? আমার বয়স ষোল। আপনি জানেন?আমার বয়সী বান্ধবীদের যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের এতদিনে এক-দুটো বাচ্চাও হয়ে গেছে।”
মেঘ এবারে সজোরেই হেসে উঠল। হঠাৎ খেয়াল করল তার মন খারাপ ভাব কেঁটে যাচ্ছে। হসপিটালে মেহুকে দেখে যে মেঘ জমেছিল মনের কোণে তা যেন হুট করেই উবে যেতে শুরু করেছে।হাসি হাসি গলাতেই শুধাল,
“ আর তোমার? ”
মিথি মুখ ভেঙ্গাল।বলল,
“ বিয়ে হলে এতদিনে নির্ঘাত দুই তিন বাচ্চার জননী হয়ে যেতাম।বুঝলেন? বিয়ে হয়নি দেখেই জননী হতে পারলাম না এখনো।”
মেঘের এবার দমফাটা হাসি পেল। ইচ্ছে হলো জোরে জোরে হেসে উঠতে। কিন্তু পারল না। কোন রকমে হাসি চেপেই ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ নিজেই এখনো বাচ্চা! সে কিনা আবার দুই তিন বাচ্চার জননী হবে।সিরিয়াসলি? ”
“ কি আশ্চর্য! এতোটা অবাক হওয়ার মতো কি আছে?”
মিথি বিরক্তিসুরে কথাটা বললেও পরমুহুর্তেই থেমে তাকাল সামনের দিকে। একটা সাদা রংয়ের গাড়ি তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছে। সে গাড়ি থেকেই দ্রুত নেমে বের হলো এক বাচ্চা ছেলে। গোল গোল চোখ দিয়ে একবার মিথি তো একবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,
“পাপা,কাজ শেষ তোমার? ”
মিথি অবাক হলো। এই অল্পবয়স্ক,সুদর্শন ছেলেটা এই বয়সেই এক বাচ্চার বাপ হয়ে বসে আছে? কি আশ্চর্য! বার কয়েক বাচ্চা ছেলেটা আর মেঘের দিকে তাকাল চোখ গোল গোল করে।হ্যাঁ, অনেকাংশেই এদের দুইজনের চেহারার মিল পরিলক্ষিত। তার মানে সত্যি সত্যিই দুইজনে বাপ ব্যাটা। মিথি যেন দুঃখ পেল। তবুও বলল,
“ আপনি এই বয়সেই বাচ্চার বাপ হয়ে যেতে পারলেন ডক্টরসাহেব? আপনাকে দেখে তো লাগেই না। ”
মেঘ হাসল। ঝুঁকে গিয়ে সামনের বাচ্চা ছেলেটাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
“ কি লাগে না? ”
“ আপনি যে বাচ্চার বাপ তা তো লাগেই না৷ সিরিয়াসলি?বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। ”
মেঘ ফের হাসল। মিথির কথাটাই ফের তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল,
“ কি আশ্চর্য! এতোটা অবাক হওয়ার মতো কি আছে? যথেষ্ট বয়স হয়েছে না আমার বাপ হওয়ার? ”
মিথি তখনও গোলগোল চোখে তাকিয়ো থাকল মেঘের দিকে আর মেঘের কোলের বাচ্চাটার দিকে। যেন সত্যিই বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য না। মেঘ সে দৃষ্টি দেখেই হেসে দিল। উত্তরে বলল,
“ ভাই আর ভাবির ছেলে। এখনও বাপ হওয়ার সাহসটা করে উঠতে পারিনি বুঝলে পিচ্চি? ”
মিথি এবারে হেসে উঠল। পরমুহুর্তেই কিছুটা দূরে মিনারকে দেখে দ্রুতই সে স্থান ছেড়ে এগিয়ে গেল মিনারের দিকে। মেঘ একবার তাকাল ঠিক তবে পরমুহুর্তেই নজর সরাল।নজর সরাল না কেবল তার কোলের বাচ্চা ছেলেটা। আধো গলায় জিজ্ঞেস করল,
“মেয়েটা কে পাপা? নাম কি?”
মেঘ ঠোঁট চেপে উত্তর দিল,
“ নাম তো জানা নেই, এমনিই পরিচিত বলতে পারো। ”
.
তখন সন্ধ্যা। মেহু বাসা ছেড়ে হোস্টেলে ফিরেছে আজই।তবুও ভার্সিটি থেকে ফিরে জ্যোতির সাথে ফের হসপিটালে আসল ।জ্যোতির দাদী আজ বাড়ি ফিরে যাবে মিনারের সাথে। যদিও মিথি আর তার ছোট আম্মা অর্থ্যাৎ তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী একেবারে তার বাবাকে হসপিটাল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার দিনই যাবে৷তবে বাড়ির দিকটা ভেবে দাদী আজই চলে যাবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী যাওয়ার আগে একবার নিজের ছেলেকে দেখে যাবেন। তাই জ্যোতি আর সে বাসায় না গিয়ে হসপিটালেই আসল। পাশাপাশি মেহু -জ্যোতি দুইজনে বসে অপেক্ষা করল হসপিটালে দাদীর আসার। পরমুহুর্তেই কি মনে করে মেহুকে জিজ্ঞেস করল,
“ সাঈদ ভাই আর যোগাযোগ করেনি মেহু আপু? ”
আকস্মিক প্রশ্নে অবাক হলো মেহু। পরমুহুর্তেই আবার সামলে নিয়ে উত্তর দিল,
“ করেছিল তো। ”
জ্যোতি কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল। পরক্ষনেই বলল,
“ সাঈদ ভাইয়ের সাথে একবার দেখা করবে আপু?যদি সরাসরি কথা বলে সবটা ঠিক হয়ে যায়? ”
মেহু ব্যঙ্গসুরে বলল,
“দেখা করে কি হবে? ভালোবাসা ভিক্ষা চাইব জ্যোতি? ”
“ হতে পারে সাঈদ ভাই তোমায় ভালোবাসে আপু কিন্তু জানাতে চায় না। হতে পারে না?”
মেহুর উত্তর এল,
“উনার কথা অনুযায়ী পারে না৷ উনি আমায় ভালোবাসে না জ্যোতি। উনি আর পাঁচ দশজন মেয়ের মতোই দেখেছেন আমায়। আর পাঁচ দশজন মেয়ের মতোই ফ্লার্টিং করে গেছেন আমার সাথে। এর চেয়ে বেশি কিছুই হয়তো ছিল না। ”
“ কিন্তু..”
মেহু বলতে দিল না জ্যোতিকে। থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,
“আর কিছু নয় জ্যোতি। আমায় দুর্বল করে দিস না প্লিজ। আমি উনার থেকে সরতে চাইছি যে কোন মূল্যে। কান্না থেকে, কষ্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইছি। নয়তো ফের আবার দুর্বল হয়ে পড়ব। ”
জ্যোতি এবারে আর কথা বাড়াল না । চুপ হয়ে গেল।উঠে গিয়ে বাবাকে আড়ালে একবার দেখে আসতেই সম্মুখীন হলো মেহেরাজের। কানে এল মেহেরাজের গম্ভীর গলা,
“ মেহুর সাথে সারাক্ষন কি কথা হয় তোর?আমি জানি তুই ওর মন খারাপের বিষয়ে সবটা জানিস। অথচ এড়িয়ে যাস। ও কি কাউকে ভালোবাসে জ্যোতি? প্লিজ আমায় বল।”
জ্যোতি মৃদু হাসল। কারো ব্যাক্তিগত কথা তার অনুমতি অনুযায়ী বলাটা ঠিক হবে কিনা তা ভেবে নিয়েই বলল,
“ ধরে নিন এবারও এড়িয়ে গেলাম। তবে একটা সাহায্য করবেন মেহেরাজ ভাই? একটা সত্যি কথা বলুন, সাঈদ ভাইয়ের কি কারো সাথে রিলেশন আছে? কিংবা কখনো কোন মেয়েকে ভালোবেসেছেন উনি?”
মেহেরাজের মেজাজ খারাপ হলো কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে। অফিস থেকে ফেরার পথে একবার হসপিটাল দিয়ে এসেছিল জ্যোতির বাবাকে দেখার জন্যই। এখানে এসে জ্যোতি আর মেহুকে কথা বলতে দেখে আবারও তার মনে হলো জ্যোতি সবটা জানে। কিন্তু জ্যোতি উত্তর দিল না এবার ও। কত বড় বেয়াদব হলে মুখের উপর এভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলে।পরমুহুর্তেই আবার জ্যোতির মুখে ফের সাঈদের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে এল যেন মেহেরাজের।মেজাজ খারাপটা যেন এবারে শীর্ষে পৌঁছাল। শক্ত গলায় হলেও মৃদু আওয়াজে শুধাল,
“ আমি কি ওর সার্ভেন্ট? ওর খোঁজখবর সব হাতে নিয়ে বসে আছি আমি? ”
জ্যোতি শক্ত গলা শুনে ছোট শ্বাস ফেলল।নরম গলায় শুধাল,
“ আপনি উনার কাছের বন্ধু মেহেরাজ ভাই। কাছের বন্ধু হয়ে এইটুকু খবর জানেন না এটা তো অদ্ভুত শোনায়। ”
মেহেরাজের গলা আরো দৃঢ় হলো। একদম শান্ত গলায় অথচ দৃঢ় স্বরে শুধাল,
“ ভেবে নে তোর মতোই এড়িয়ে গেলাম আমিও। ”
কথাটা বলেই মেহেরাজ পিছু ঘুরে চলে গেল দ্রুত। নিজের উত্তরটাই ফের ফেরত পেয়ে থমথমে হয়ে এল জ্যোতির মুখ।কি আশ্চর্য! সে কি খারাপ কিছু জিজ্ঞেস করেছে?
.
জ্যোতির দাদী সব গোঁছগাছ করেই কথা বলছিলেন নাবিলার মায়ের সাথে। কথা হচ্ছিল মূলত জ্যোতির বিয়ের বিষয়ে। বাবার এহেন অসুস্থতা, মেয়েদের এভাবে ভেঙ্গে পড়া নিজের চোখেই সবাই দেখেছে।এমন নয় যে জ্যোতির দাদী পড়ালেখা পছন্দ করেন না। তিনি মনেপ্রাণে চান তার নাতনিরা পড়ালেখা করুক, প্রতিষ্ঠিত হোক, তার মুখ উজ্জ্বল করুক। কিন্তু বিয়ের সম্বন্ধ নিয়েও তার ভাবনা ঠুনকো নয়। এই যে নাবিলার মায়ের কাছ থেকেই কিছুটা সময় আগেই যে বিয়ের প্রস্তাবটা পেলেন তা নেহাৎই খারাপ নয়। ভালো ভাবে বিবেচনা করলে উত্তম সম্বন্ধ!সে বিবেচনার মাঝপথেই হঠাৎ সেখানে এসে হাজির হলো মেহেরাজ। শান্ত গলায় শুধাল,
“আপনার সাথে আলাদাভাবে আমার কিছু কথা আছে দাদী। শুনবেন?”
দাদী হ্যাঁ বললেন। রাজি হয়ে অন্যপাশটায় যেতেই মেহেরাজ গিয়ে দাঁড়াল তার সামনে৷ এক নজর তাকিয়ে বলে ফেলল,
“ আমি জ্যোতিকে বিয়ে করতে চাই দাদী। আপনার কি মত এই বিষয়ে? আশা রাখি আমি খুব অযোগ্য বিবেচিত হবো না আপনার বিবেচনায়। তাই না? ”
#চলবে……