এক মুঠো প্রণয় ২ পর্ব-০৪

0
520

#এক_মুঠো_প্রণয়
#সিজন_টু
#পর্ব_০৪
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

মেহেরাজ তখন সবেই ঘুম ছেড়ে উঠেছে।চুলগুলো অগোছাল হয়ে কপালে পড়ে আছে। চোখে সদ্য ঘুম ছেড়ে উঠার রেশ৷পরনের শার্টটার বোতাম লাগানো নেই। এক হাতে হাতা গুঁটিয়ে বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতেই ছাদে উঠার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির সব ধাপ শেষ করল। পরমুহুর্তেই বিরক্ত হলো যেন। ছাদ আগে থেকেই মেয়েদের দখলে।পাশে অবশ্য সাঈদও বসে আছে। ব্যস্ত হয়ে সবাই কথা বলছে,আড্ডা জমাচ্ছে। ঠিক তার মধ্যেই শোনা গেল সামান্তার রিনরিনে কন্ঠ। প্রায় ফিঁসফিঁসিয়েই বলে উঠল সে,

“ উফফফ!আমার বুক ধড়ফড় করছে। কেমন একটা জানি লাগছে। ”

মেহু, নাবিলা সহ প্রত্যেকটা মেয়েই অবাক হয়ে তাকাল মুহুর্তেই। পরমুহুর্তেই আবার ওর দৃষ্টি অনুসরন করে মেহেরাজের দিকে তাকাল সকলে। নাবিলা মৃদুস্বরে জিজ্ঞেসও করল,

“ রাজ ভাইয়াকে দেখেই তোমার বুক ধড়ফড় করছে আপু? ”

সামান্তা মাথা দুলাল। সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েলি কন্ঠগুলোতে হাসির ঝংকার উঠল। সে হাসি শুনেই মেহেরাজ ফিরে চাইল এদিক পানে। কি আশ্চর্য!তাকে কি জোকারের মতো লাগছে? হাসল কেন সবাই তার দিকে তাকিয়ে? ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ছুড়ে মারতেই মিথি বলে উঠল,

“ মেহেরাজ ভাই? এদিকে আসো তো। আমার জানামতে তো ভূতপ্রেত দেখলেই বুক ধড়পড় করে। এদিকে আসো,তোমায় ভূতপ্রেতের মতো দেখাচ্ছে কিনা সামনে থেকে পরখ করি। ”

মেহেরাজ ফের বিরক্ত হলো। পাত্তা না দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে ফের চলে যেতে উদ্যত হতেই সাঈদ বলে উঠল,

“ শালা তুই বেলা এগারোটায় ঘুম থেকে উঠে অগোছাল চুল নিয়া মেয়েদের সামনে আসার কি দরকার ছিল। আমার তো বউ কমে যাচ্ছে এইবারে।”

“ তোর বউয়ের অভাব আছে? ”

“ তো?তুই যে রূপ দেখিয়ে আমার বউ কেড়ে নিচ্ছিস কমে যাচ্ছে না? ”

মেহেরাজ সরু চোখে চাইল। হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে ঠেলে বলল,

“ হুরর!অন্যের বউ কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাক্তিত্বহীন নই আমি।”

সাঈদ মুখ বাঁকাল। বলল,

“ তো আমি কি ব্যাক্তিত্বহীন?”

মেহেরাজ মৃদু হাসল এবারে।ছাদ ছেড়ে যেতে যেতে বলে উঠল,

“তুই তো সাক্ষাৎ চরিত্রহীন। ”

মুহুর্তেই হাসির রোল পড়ল। সাঈদ মুখ কালো করল।নিরস মুখে বলল,

“ ও আমায় চরিত্রহীন বলে চলে গেল? তোমরা কেউ কিছু না বলে হাসছো?”

মিথি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,

“ আমি কিন্তু মেহেরাজ ভাইয়ের সব কথাকেই সম্মান করি, বিশ্বাস করি। সে হিসেবে মেহেরাজ ভাই যখন বলেছে তার মানে অবশ্যই আপনি চরিত্রহীন ভেড়াসাহেব। ”

সাঈদ কপাল কুঁচকে চাইল। বলে উঠল,

“ এই পিচ্চি, তুমি চুপ করো। চরিত্রের কি বুঝো তুমি হুহ? ”

মিথি ফুঁসে উঠল এইবারে। জবাবে বলল,

“ আর কিছু বুঝি বা না বুঝি তবে এইটুকু বুঝি যে সারাক্ষন মেয়েদের সাথে চিপকে থাকা আর মেয়েদের পেঁছন পেঁছন ঘুরা ছেলেকে চরিত্রবান বলা যায় না। ”

ভ্রু কুঁচকে এল সাঈদের। মুখ বাঁকিয়ে বলল,

“ আমি মেয়েদের সাথে চিপকে থাকি? মেয়েদের পেঁছন পেঁছন ঘুরি? ছিঃ!”

“ অস্বীকার করতে পারবেন? ছিঃ হলেও এই ছিঃ মার্কা কাজটা আপনিই করেন। ”

সাঈদ পাত্তা দিল না এবারে।মহান একটা ভাব নিয়ে বলল,

“ হুরর, আমি শুধু ফ্লার্ট করি। ওটা মহান থেকেও মহানতম কাজ!এসব চিপকাচিপকির মধ্যে আমি নেই। ”

মুখ ভেঙ্গচাল মিথি। বিড়বিড় করে বলল,

“ যে না মহান ব্যাক্তি, সে না তার মহান কাজ!”

সাঈদ ফের কিছু বলার জন্য উদ্যত হচ্ছিল।এতক্ষন ওদের ঝগড়ার নিরব দর্শক হয়ে থাকলেও এতক্ষনে মেহু রাগ নিয়ে বলে উঠল,

“ কি আশ্চর্য সাঈদ ভাইয়া!আপনি ওর থেকে বয়সে এত বড় হয়ে ওর সাথে ঝগড়া করছেন? আশ্চর্য।”

.

বেলা বারোটা বাঁজে। জ্যোতি তখন উনুনে রান্না করছিল। হুট করেই উঠোনের মাঝে চোখে পড়ল নিজের আব্বাকে। ছুটিতে বাড়ি আসার পর এই প্রথমই দেখা হলো। কিন্তু কথা বলা হলো না। নিজের মতো করেই রান্নায় আবার ব্যস্ত হয়ে গেল সে। ঠিক তখনই শোনা গেল আব্বার গম্ভীর স্বর,

“ শহরে গিয়ে এতোটা বেয়াদব হয়ে গেছিস যে আব্বাকে দেখলে সালাম দিতে হয় তাও ভুলে গেছিস? এমন বেয়াদব হওয়ার জন্য তোকে শহরে পাঠিয়ে পড়াচ্ছি? ”

জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আব্বা সবসময় এমন কড়া ভাষায় কথা বলেন কেন? সবসময় কেন তাদেরই দোষ দেখেন? আর দশটা বাবার মতো কি জ্যোতির বাবাও আদুরে, নরম গলায় কথা বলতে পারত না? কেন বলে না?সব দোষ কি তাদের? জ্যোতির চোখ টলমল করল।তবুও কান্না করল না। উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,

“ আপনি তো সবসময় আমাদের সাথে কথা বলে খুশি হননা আব্বা। যেচে গিয়ে কারোর অখুশির কারণ হতে চাইনি বলেই সালাম দিইনি। কেমন আছেন? ”

ফের তেজ নিয়ে বলে উঠলেন তিনি,

“ কেমন আছি জানার হলে এই কয়েকদিনে জিজ্ঞেস করে আসতে পারতি।বাবার প্রতি নূন্যতম এই ভদ্রতাটুকুও নেই।বাহ!”

জ্যোতি তাচ্ছিল্য মেখে হাসল। উত্তরে বলল,

“ যে ঘরে ছোটবেলা থেকে আমাদের স্থান হয়নি সে ঘরে গিয়ে কি করে জিজ্ঞেস করে আসতাম? তাই ভদ্রতাটুকু দেখাতে পারিনি।”

“ দোষ চাপাচ্ছিস?আমি কি তোদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলাম?একবারও বলেছিলাম ও ঘরে না থাকতে?”

“ বলেননি,বেরও করেননি। কিন্তু এটাতো ঠিক যে ওভাবে ও ঘরে ছোট আম্মা আর আপনার মার খেয়ে পড়ে থাকলে কোন বাচ্চাই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারত না। আমি আর মিথিও হয়তো সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম না আব্বা।এখনও কি খুব সুস্থভাবেই বেঁচে আছি?যাদের আব্বা-আম্মা থেকেও থাকে না তারা সুস্থভাবে বাঁচেই বা কি করে বলুন?”

জ্যোতির বাবা মুখ টানটান করলেন। তেজী গলায় বললেন,

“ সবসময় আমিই দোষী! আমিই দোষী!কি করছিনা আমি তোদের জন্য ? ”

জ্যোতির হাসল। বলতে ইচ্ছে হলো, “ বাবার ভালোবাসা দেননি আব্বা, স্নেহ দেননি, নরম গলায় মেয়ের মতো করে কথা বলেননি কখনো। কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দেননি।অসুস্থ হলে কখনো খোঁজ নেননি। তারপরও বলবেন সব করেছেন?শুধু টাকা দিয়েই কি বাবার দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায়? ছোটবেলায় যখন মা ছেড়ে গেল আমাদের তখন তো আমাদের মা নেই ভেবে আমাদের প্রতি আপনার দ্বিগুণ ভালোবাসা দেখানো উচিত ছিল আব্বা। যাতে করে আমরা আপনার থেকে মা বাবা দুইজনের ভালোবাসা পেয়ে মায়ের কথা ভুলে যেতাম। কিন্তু আপনি কি করলেন আব্বা? দিনের পর দিন রাগ দেখিয়েছেন, জেদ দেখিয়েছেন, সেই ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়ে দুটোর গালে রাগের বশে থাপ্পড় দিয়েছেন।তবুও বলব সব করেছেন? ” কিন্তু বলা হলো না। গলায় এসে আটকে গেল যেন। টলমল করল চোখজোড়া। নিস্তেজ গলায় বলল,

“ সবই করেছেন। সব!”
জ্যোতির বাবা আর দাঁড়িয়ে থাকলেন না। মুখেচোখে তেজ নিয়ে দ্রুত ছেড়ে গেলে জায়গাটা। জ্যোতি সেদিক পানে তাকিয়েই বিড়বিড় করে বলল,

“ বাবার মতো কিছু করেননি, কিছুই করেননি আব্বা। ”

বিড়বিড় করে কথাটা বলার মাঝখানেই সেখানে এসে হাজির হলো মিনার। একপলক জ্যোতির দিকে তাকিয়েই নরম স্বরে বলে উঠল,

“ এই? কি বিড়বিড় করছিস জ্যোতি?”

জ্যোতি মুহুর্তেই ফিরে চাইল। মিনারকে দেখে বলে উঠল,

“ কিছু না। ”

মিনার অবাক হলো। সে স্পষ্ট শুনেছে৷ অথচ জ্যোতি বলছে কিছু না?পরমুহুর্তেই দৃষ্টি জ্যোতির মুখে পড়তেই অবাক হলো মিনার।চোখ লাল হয়ে আছে, যেন জল গড়িয়ে পড়বে। অথচ সে জানে এই মেয়েটা এখনই চোখের জল গড়াতে দিবে না।মেয়েটা আড়ালে কাঁদে। হতাশ হলো সে। গলাটা আরো নরম করে বলল,

“ মামা কিছু বলেছেন জ্যোতি? চোখ এত লাল কেন?কষ্ট হচ্ছে?কান্না আসছে তোর?”

জ্যোতি মৃদু হাসল। মিনারের দিকে তাকিয়ে বলল,

“ মিনার ভাই,তুমি অনেক ভালো। এতোটা ভালো কেন তুমি?”

মিনার হাসল। উত্তর দিল,

“ এবার বল, মন খারাপ কেন? ”

“ মন খারাপ না।রান্নার সময় কিজানি চোখে পড়ল তাই। ”

“লুকিয়ে যাচ্ছিস? ”

জ্যোতি নিরবে শ্বাস ফেলল।কথা ঘুরাতে বলে উঠল,

“একদমই না। মিথিকে দেখেছো?দাদী আসলে ওকে না দেখলে আবার বকা দেবে। একটু ডেকে দাও।”

মিনার পুনরায় হতাশ হলে। জ্যোতি যে কথা টাকে ঘুরানোর চেষ্টা করছে তা বুঝে নিয়েই মাথা নাড়াল। পা চালিয়ে মিথিকে খোঁজার উদ্দেশ্যে চলে গেল মুহুর্তেই।

.

রান্না শেষ হতেই গোসল সারল জ্যোতি। তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল জড়িয়ে উঠোনে আসতেই শোনা গেল দাদীর গলা,

“ মিথি কই?দুপুর হইছে খাইব না ওই?সারাদিন তো ঐ বাড়িতেই পইরা থাকে এহন দেহি। পড়ালেখা তো কিচ্ছু নাই ওর। আজ আইলে কয়ডা কথা শুনাইতই হইব। ”

জ্যোতি তাকাল। মিথিটা বড্ড আদরের তার। তাই তো বকা খাওয়া থেকে বাঁচাতেই বলে উঠল,

“ দুদিন পর তো সবাই চলে যাবেই দাদী। থাক না মজা করছে, করুক। ”

“ বছরের সব কয়ডা দিনই তার লাইগা মজারই। এত বড় মাইয়া হইয়াও খালি ঘুমায় আর টো টো কইরা ঘুরে বেড়ায়।”

“ আমি ডেকে আনছি। বকা দিও না, কষ্ট পাবে ও। ছোট মানুষ, ছেড়ে দাও না। ”

“ তা কি তোর থেইকা পরামর্শ নিমু? ”

জ্যোতির মুখ থমথমে হয়ে এল। সময় দেখে বুঝল দুপুর দেড়টা বেঁজেছে৷ ধীর পায়ে পা এগুলো মেহুদের বাড়ির দিকে। পথেই চোখে পড়ল এদিকে এগিয়ে আসা শুভ্র পাঞ্জাবী পরনে থাকা মেহেরাজকে। বোধহয় মা বাবার কবরেই গিয়েছিল,নয়তো গ্রামের মসজিদে। জ্যোতি সঙ্গে সঙ্গেই নজর সরাল যাতে তার দৃষ্টিটা মেহেরাজের চোখে না পড়ে। বাকিটা পথ অবশ্য সে আর একবারও তাকাল না মেহেরাজের দিকে। কিন্তু তবুও মুক্তি মিলল না। আরো কিছুটা পথ এগিয়ে মেহেরাজকে অতিক্রম করে যেতেই কানে এল গম্ভির রাশভারী গলা,

“ জ্যোতি শোন,”

জ্যোতি মনে মনে তপ্তশ্বাস ফেলল।মেহেরাজের দিকে না তাকিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করল পরবর্তী কথার। কিন্তু ফের কথা আসল না। বরং মানুষটাই সশরীরে এগিয়ে আসল।পরখ করে দেখল সামনের মেয়েটাকে।মাথায় জড়ানো ওড়নাটা ভেজা চুলের কারণেই বোধহয় ভিজে উঠল কিঞ্চিৎ। কৃষ্ণবর্ণীয় মুখটা স্নিগ্ধ দেখাল। বুঝা গেল সদ্য গোসল সেরেই এসেছে।একপলক তাকিয়ে নজর সরিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

“ কেউ ডাকলে সাড়া দিতে হয়। এটুকু ভদ্রতাও নেই তোর মধ্যে? ”

জ্যোতির মনে পড়ল কিছু সময় আগের বাবার বলা কথাগুলো। বাবাও বলেছে সে অভদ্র, বেয়াদব!মুহুর্তেই মুখ টানটান হলো। স্পষ্ট স্বরে বলল,

“ না নেই,আমি অভদ্র। ”

মেহেরাজ বিরক্তে কপাল কুঁচকে নিল। রাশভারী আওয়াজে বলল,

“ বড়দের মুখে মুখে কথা বলছিস তুই?এতোটা বেয়াদব তুই?”

বাবার থেকে পাওয়া সবগুলো সম্বোধন ফের মেহেরাজে মুখে শুনে মুখের ভাব পাল্টাল জ্যোতির। বলল,

“ হ্যাঁ আমি বেয়াদব, অভদ্র,গায়ে পড়া মেয়ে! আর কিছু বলবেন মেহেরাজ ভাই?”

” বেয়াদবির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছিস দেখছি।”

জ্যোতি এবারেও তাকাল না মেহেরাজের দিকে। বরং কথাগুলো শুনে মুখ টানটান করে মেহেরাজকে এড়িয়ে চলার জন্য পা বাড়াল। মুহুর্তেই হাতে টান অনুভব হলো। ফিরে চাইতে চোখে পড়ল মেহেরাজ তার হাত চেপে ধরেছে। দাঁতে দাঁত চেপে শীতল গলায় বলে উঠল,

“ এড়িয়ে চলে যাচ্ছিস কোন সাহসে?ডেকেছি না?”

জ্যোতি এবারে তাকাল মেহেরাজের দিকে।নিষ্প্রভ গলায় বলল,

“ তো গায়ে পড়া মেয়েদের মতো গায়ে পড়ে থাকলে খুশি হবেন? ”

মেহেরাজ দাঁতে দাঁত চাপল। শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় শুধাল,

“ বড়দের সাথে এভাবে কথা বলিস তুই?অভদ্রতার চূড়ায় উঠে গেছিস দেখছি।”

জ্যোতি হাতের দিকে তাকিয়েই মৃদু আওয়াজে বলল,

“ হাত ছাড়ুন মেহেরাজ ভাই। এভাবে গায়ে পড়া ছেলেদের মতো হাত ধরেছেন কেন? ”

মেহেরাজ অপমানে মুখ টানটান করল। চোয়াল শক্ত হয়ে এল যেন। সম্মুখের মেয়েটার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলে নিশ্চয়ই অপরাধ হবে না এখন। তবুও নিজেকে শান্ত রাখল।হাত ছেড়ে দিয়ে শুধাল,

” ও বাড়ি যাচ্ছিস না?”

জ্যোতি উত্তর দিল শক্ত গলায়,

“ হ্যাঁ। ”

মেহেরাজ শ্বাস ফেলল।পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করে হাত বাড়িয়ে ধরল জ্যোতির সামনে। বলল,

“ মোবাইলটা সাঈদের। দিয়ে দিস। ও বাড়িতেই আছে। ”

জ্যোতি কথা বাড়াল না। মোবাইলটা হাত বাড়িয়ে নিয়েই বলল,

” আচ্ছা। ”

কথাটা বলেই দ্রুত পা বাড়াল জ্যোতি। মেহুদের বাড়িতে গিয়ে মিথিকে ডেকে নিয়েই খুঁজল সাঈদকে। আশ্চর্যজনকভাবে সাঈদের দেখা মিলল না।অবশেষে মিথিকেই জিজ্ঞেস করল,

“সাঈদ ভাই কোথায়? দেখেছিস?”

মিথি উত্তর দিল,

“ জানি না। কিন্তু তোর কি কাজ ঐ ভেড়ার সাথে?”

“ উনার মোবাইলটা মেহেরাজ ভাইয়ের কাছে ছিল। মেহেরাজ ভাই আসার সময় মোবাইলটা হাতে দিয়ে বললেন সাঈদ ভাইকে দিতে। খুঁজে দেখি উনি নেই। উনাকে খুঁজে মোবাইলটা দিয়ে আসতে পারবি মিথি?”

“ আমি কেন দিব?তুই দিয়ে আয়।”

জ্যোতি নিষ্প্রভ গলায় বলল,

“ দিয়ে এলে কি হবে?আমি তোকে ডাকতে এলাম না এতদূর?”

মিথি মাথা নাড়াল। জ্যোতির মুখচোখ ক্লান্ত, নিষ্প্রভ।গলাটাও মলিন। সে বুঝে এমনটার মানে।তাই কিছু বলতে নিয়েও আর বলল না। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়েই দৌড়ে গেল সাঈদকে খুঁজতে। ছাদ, উঠোন সব খুঁজে অবশেষে মেহুর কাছে জানতে পারল মেহেরাজের ঘরে আছে সাঈদ। তাই আর দেরি না করে দ্রুত হুড়মুড়িয়ে ডুকল মেহেরাজের রুমে। মুহুর্তেই চোখে পড়ল সদ্য গোসল করা সাঈদকে।পরনে কেবল একটা সাদা তোয়ালে।ভেজা চুল বেয়ে টপাটপ পানি গড়িয়ে আসছে কপালে। উম্মুক্ত ফর্সা বক্ষে ও ফোঁটা ফোঁটা পানি লেগে আছে। মিথি চোখ খিচে নিল মুহুর্তেই। সেও কি বাদবাকি বেহায়া মেয়েদের মতো এই অভদ্র লোকের রূপ পরখ করছিল? ছিঃ ছিঃ! নিজেকে মনে মনে কয়েকটা বকাঝকা দিয়ে হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা ধরল।বাধ্য মেয়ের মতো বলে উঠল,

“ আপনার মোবাইল। মেহেরাজ ভাই দিতে বলেছেন আপনাকে। ”

সাঈদ এতোটা সময় মিথিকে খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করল। এগিয়ে এসে মোবাইলটা হাতে নিল।ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠল,

“ একি মেয়ে! তোমার গলা আজ এত ঠান্ডা?তুমিই তো এটা?”

“ না, আমার ভূত। ”

কথাটা বলতেই সাঈদের ফোন বেঁজে উঠল। মিথি অবশ্য আর দাঁড়াল না। পা বাড়িয়ে রুম ছেড়ে যেতে যেতেই কানে এল সাঈদের কিছু অশ্রবণীয় ভাষা।শুনেই বুঝা গেল প্রচন্ড রাগ, ক্ষোভ নিয়েই কথাগুলো বলে ফেলেছে সে। মিথি সেসব শুনেই কপাল কুঁচকাল। ফের রুমের দরজায় এসে উঁকি দিতেই দেখল সাঈদ কল তুলল। কানের কাছে মোবাইল ধরে দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বলল,

“ আপনাকে কতবার বলব আমায় কল দিবেন না। কেন কল দিয়েছেন? কেন?আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার। অবশ্য আপনার মতো চরিত্রহীনা মহিলাদের কি করেই বা সহ্য করা যায় বলুন?আমি আপনাকে ঘৃণা করি।শুধু এবং শুধুই ঘৃণা করি। ফের আবার কল দিবেন না।”

মিথি কথাগুলো শুনে শুকনো ঢোক গিলল। সদাসর্বদা হাসিখুশি থাকা ছেলেটাও এভাবে রেগে যেতে পারে কিংবা এভাবে রেগে কথা বলতে পারে তার ধারণাতেই ছিল না। পরমুহুর্তেই আবার মনে পড়ল চরিত্রহীনা শব্দটা। বাবার মুখে শতসহস্রবার মায়ের সম্বন্ধে এই শব্দটা শুনেছে সে। যদিও বা মায়ের মুখ তার মনে নেই,মা কেমন ছিল তা ও সে জানে না। তবুও শব্দটা শুনে সর্বপ্রথম তার মায়ের কথাই মনে পড়ল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাঈদের রাগে টানটান হওয়া মুখের দিকে তাকাতেই ফের কানে আসল,

“ জম্মদিন?জম্মদিন মাই ফুট!আমার কোন জম্মদিন নেই। আর এই বিষাক্ত দিনে আপনি উইশ করে যতোটা না আমার জীবনটা সুন্দর করবেন তার চেয়েও বেশি অসুন্দর, অসহনীয়, বিষাক্ত করে তুলেন। ফের আর কল দিবেন না দয়া করে।আমি আপনার থেকে মুক্তি চাইছি।”

কথাটা বলেই কল কাঁটল সাঈদ।ছুড়ে ফেলে রাখল মোবাইলটা বিছানাতে। চুল গুলো হাত দিয়ে খামচে ধরে বসে পড়ল বিছানাতে। দাঁতে দাঁতে চেপে বিড়বিড় করে বলল আরো কিছু অশ্রবণীয় ভাষা।মিথি অবাক হয়ে চেয়ে থাকল। পাশে থাকা মোবাইলটা আবারও বাঁজল। একবার, দুইবার অনেকবার বাঁজতে লাগল। কিন্তু সাঈদ কল তুলল না। অদ্ভুত ভাবে রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে মোবাইলটা হঠাৎ ই ছুড়ে মারল ফ্লোরে। পরপরই মাথা তুলে তাকাতে চোখে পড়ল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মিথিকে৷লালাভ রাঙ্গা চোখে তাকিয়েই শক্ত গলায় শুধাল,

“ কি এখানে?”

মিথি কেঁপে উঠল হঠাৎ। ঠোঁটে ঠোঁটে চেপে সরে যাওয়ার আগেই সাঈদ এগিয়ে আসল। মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিল আওয়াজ করে। মিথি অবাকের চূড়ায় পৌঁছাল।হঠাৎ এত রেগে গেল কেন সাঈদ ? কেই বা কল করল?

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে