এক মুঠো প্রণয় পর্ব-৩৬ এবং শেষ পর্ব

0
907

#এক_মুঠো_প্রণয়
#অন্তিম_পর্ব( প্রথমাংশ)
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

জ্যোতি উঠে দাঁড়াল ঠিক কিন্তু পা বাড়িয়ে বেলকনি পার হতে পারল না। তার আগেই টান পড়ল ডান হাতে।পেঁছন থেকে ফিচেল স্বরে বলে উঠল মেহেরাজ,

” কি হলো? বাচ্চার আম্মু হবি না? ”

তৎক্ষনাৎ কেঁশে উঠল জ্যোতি।বিষম খাওয়া স্বরে কোনরকমে বলল,

” হাত ছাড়ুন মেহেরাজ ভাই। খাবার বাড়ছি, রাত হয়েছে। আসুন।”

মেহেরাজ হাত ছাড়ল না। জ্যোতিকে উল্টো ঘুরিয়ে নিজের সম্মুখে দাঁড় করাল। কোমড় আঁকড়ে ধরে ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি মাখা হাসি নিয়ে বলল,

” উহ, তোর তো আমার বউ ছাড়াও অন্য কোন সম্বোধন চাই? বললি না মাত্র? ”

জ্যোতির অস্থির লাগল। এমন একটা কথা আসলেই বলা উচিত হয়নি তার। কথাটার বিনিময়ে এই চরম বাক্য গুলো মেহেরাজ ফিরিয়ে দিবে জানলে সে কখনোই কথাটা বলত না। মাথা দুই পাশে দুলিয়ে বলে উঠল,

” না, আমি তেমনটা বুঝাইনি। ”

ভ্রু নাচিয়ে মেহেরাজ বলল,

” কেমনটা বুঝিয়েছিস তাহলে? ”

জ্যোতি বুঝে উঠল না কি বলবে। করুন চোখে মেহেরাজের দিকে তাকিয়েই ইতস্থত স্বরে বলল,

” মেহেরাজ ভাই… ”

বাকি টুকু বলার আগেই নরম ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল ছোঁয়াল মেহেরাজ। জড়ানো গলায় বলল,

” হুশশশ!তোর প্রতি এই মুহুর্তে আমার বোন বোন ফিলিংস আসছে না জ্যোতি। ভাই বলে ডাকবি না বলে দিলাম।”

জ্যোতি বিনিময়ে উত্তর দিতে পারল না।থতমত খেয়ে বোকার মতো তাকাল। মেহেরাজ সেই দৃষ্টি দেখেই বাঁকা হাসল। কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে জ্যোতির কানের কাছে বলল,

” বউ বউ ফিলিংস আসছে তোর প্রতি। আমার কিন্তু দোষ নেই জ্যোতি। সমস্ত দোষ তোর। কি দরকার ছিল শাড়ি পরে বউ বউ হয়ে সামনে ঘুরপাক খাওয়ার? প্রয়োজন ছিল? এখন তোকে বউ টউ ভেবে বসে কিছু করে ফেললে? দোষ কার?”

জ্যোতি তৎক্ষনাৎ দুই পা পিঁছিয়ে দাঁড়াল। কথাগুলোতেই নাকি কন্ঠের মধ্যে কি জানি ছিল। যা মুহুর্তেই বুকের ভেতর কম্পন উঠাল। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন আর শ্বাস প্রশ্বাস টেনে অস্ফুট স্বরে বলল,

” শাড়ি চেঞ্জ করে নিচ্ছি তাহলে।”

মেহেরাজ গম্ভীর স্বরে বলল,

” আসলেই কি তুই অতোটা অবুঝ? কি বুঝাতে চাই কি বুঝে থাকিস।”

জ্যোতি ছোটশ্বাস টানল। নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক গলায় শুধাল,

” খাবেন না? রাত হয়েছে। আপনার কফিটাও ঠান্ডা হয়ে বোধ হয় বরফ হয়ে গেছে। ”

দৃঢ় স্বরে উত্তর এল,

” হয়ে যাক। ”

জ্যোতি ফের কথা ঘুরানোর জন্য বলল,

” মেহু আপুর সাথে কথা হ… ”

মেহেরাজ বুঝে ফেলল জ্যোতির উদ্দেশ্য।হাত দিয়ে জ্যোতির কোমড় দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে বলল,

” তুই যতটুকু পরিপক্ব ভাবতাম এখন দেখছি ততটুকুই চতুর! প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করছিস? কিন্তু আজ তো প্রসঙ্গ পাল্টাবে না। একেবারেই পাল্টাবে না। তোর সব চতুরতা ধরে ফেলেছি জ্যোতি। ”

কথাটুকু বলেই তৎক্ষনাৎ কোলে তুলল শাড়ি পরিহিতা জ্যোতিকে। এক হাত গিয়ে ঠেকল উম্মুক্ত কোমড়ে।জ্যোতির মাথা গিয়ে ঠেকল মেহেরাজের বুকে।মুহুর্তেই কুঁকড়ে গেল জ্যোতি। মুখে ফুঁটে উঠল ভীত, সঙ্কীত, লজ্জ্বায় লালাভ আভা। মেহেরাজ হাসল। রুমে পা বাড়াতে বাড়াতেই বলে উঠল,

” স্বাভাবিক বিষয়ে ভয় পাচ্ছিস?”

জ্যোতি চোখ বুঝল। এটা স্বাভাবিক বিষয়? শুধুই স্বাভাবিক বিষয়? জ্যোতির মস্তিষ্ক স্বাভাবিক বুঝালেও মন মানতে চাইল না তা। মন জানাল স্বাভাবিকতার মধ্যেই অস্বাভাবিকতার আভাস। লজ্জ্বায় নুঁইয়ে মারার ইঙ্গিত।উম্মাদনার উম্মাদময় অস্থিরতা। মেহেরাজ এবারেও হাসল। রুমে এসে জ্যোতিকে বিছানায় বসিয়েই রুমের বাতি নিভিয়ে দিল। সহসা জ্যোতি কেঁপে উঠল। কাঁপা স্বরে শুধাল,

” রা রাতের খাবার খাবেন না? এখনই আলো নিভিয়ে দিয়েছেন কেন?”

মেহেরাজ নিঃশব্দে বসল জ্যোতির পাশে। দুইহাতে জ্যোতির কোমড় চেপে নিজের দিকে ঘুরাল তৎক্ষনাৎ। ঘোর লাগা গলায় বলে উঠল,

” আলো নিভিয়েছি কেন শুনবি? ”

তৎক্ষনাৎ উত্তর এল,

” না।”

মেহেরাজ হাসল।নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব ক্রমশ কমিয়ে আনল। পুরুষালি হাতজোড়ার বন্ধনে সম্মুখ নারীটিকে জড়িয়ে নিয়েই নিজের পুরু ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিল জ্যোতির পাতলা মিহি ঠোঁটে। উষ্ণ আবেশে, উষ্ণ নিঃশ্বাসে স্তব্ধ হলো জ্যোতি। হাতজোড়া খামচে ধরল শাড়ির একাংশ। হৃদস্পন্দন যেন থেমে রইল কিয়ৎক্ষন। অবশেষে পুরুষালি ঠোঁটের উম্মাদনা থেকে ছাড় পেতেই জোরে জোরে শ্বাস টানল। লজ্জ্বায় আরক্ত হয়ে সরে যেতে চাইলে ও মেহেরাজ ফের জড়িয়ে নিল। মুখ ডোবাল জ্যোতির গলায়। বার কয়েক উষ্ণ চুম্বন এঁকে শুধাল,

” অন্য কিছুর সম্বোধন পেতে চাইলে এই সম্পর্কের পূর্ণতা দিতে হবে। পূর্ণতা দিয়ে দিই? ”

জ্যোতি উত্তর দিল না৷ সহসা কেঁপে উঠল।সর্বাঙ্গ কাঁপছে কেমন অদ্ভুত ভাবে। সে কম্পন অনুভব করল নিবিড়ে জড়িয়ে রাখা মেহেরাজও। নিরবতাকে সম্মতি হিসেবে ধরে নিয়েই কৌতুক স্বরে ফিচেল গলায় বলে উঠল,

” এইটুকুতে এমন করছিস কেন? কিছু করেছি আমি?”

জ্যোতি উত্তর দিল না। মেহেরাজ আবার গম্ভীর স্বরে বলল,

” পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটুক তবে? ”

জ্যোতি ফের লজ্জ্বায় লালাভ হলো। অন্ধকারে সেই লজ্জ্বারাঙ্গা রং চোখে না পড়লেও মেহেরাজ তা উপলব্ধি করল বেশ করে। উত্তরটুকু মুখে বলা না হলেও বেশ করে বুঝতে পারল উত্তরটা।মুহুর্তেই ঠোঁটের কোণে ফুটল বাঁকা হাসি।

.

অন্ধকার ঘরে দুইজন যুবক যুবতীর শ্বাসপ্রশ্বাসের আওয়াজ দৃঢ় হলো ক্রমশ।সেই সাথে উষ্ণ শ্বাস ছুঁয়েও গেল একে অপরকে। বন্ধন গভীর হলো। গভীর হলো দুইজনার স্পর্শ। নিরব, স্তব্ধ, আঁধারে ঘেরা বদ্ধ ঘরে একে অপরের দেহ-মন একত্রিত হয়ে জানান দিল এক সমুদ্র ভালোবাসার৷

.

সকাল সকালই মেহেরাজের ঘুম ভাঙ্গল। পাশে থাকা ঘুমে আচ্ছন্ন মেয়েটার দিকে তাকিয়েই ঠোঁটে ফুটল হাসির রেখা। সতর্ক ভাবে শোঁয়া ছেড়ে উঠে বসল সে।হেসে জামাকাপড়, তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। কিয়ৎক্ষন পর গোসল সেরে এসে জ্যোতিকে একই ভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বিছানার এসে কোণে বসল। ঝুঁকে গিয়ে ভেজা চুলগুলো জ্যোতির মুখের সাথে স্পর্ষ করিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,

” আরো ঘুমাবি জ্যোতি? ”

জ্যোতি প্রথম দফায় সাঁই দিল না। মেহেরাজ এবারে নিজের ঠোঁটজোড়ার উষ্ণ চুম্বন আঁকল জ্যোতির কপালে। পরপরই জ্যোতি চোখ ছোট ছোট করে চাইল। কপাল কুঁচকে তাকাল মেহেরাজের দিকে। শরীর ব্যাথায় টনটন করছে। সদ্য ঘুম ছেড়ে উঠায় প্রথম দফায় কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও পরমুহুর্তেই মেহেরাজের ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি মনে করিয়ে দিল সমস্ত কিছু।সঙ্গে সঙ্গে লজ্জ্বায়, অস্বস্তিতে মরে যেতে মন চাইল তার।আর শুয়ে থাকতে পারল না। ব্যাথাময় শরীর নিয়েই দ্রুত উঠে পড়ল।বিছানা ছেড়ে উঠে যেতেই মেহেরাজ গম্ভীর স্বরে শুধাল,

” গোসল সেরে আয়।আমি খাবার গরম করছি।কাল রাতে খাওয়া হয়নি তো। ”

জ্যোতি লজ্জ্বায় মেহেরাজের সম্মুখীন হতে পারল না।অন্যপাশ ফিরে মাথা নাড়াল কেবল। মেহেরাজ আলতো হেসে বেরিয়ে গেল। মুহুর্তেই জ্যোতি জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে পা বাড়াল। গোসল সেরে এসে আয়নায় মুখ দেখতে গিয়েই চোখে পড়ল গলার কাছে দুটো লালচে ছোট দাগ।দাগগুলোর জন্য সম্পূর্ণ মেহেরাজ দায়ী তা স্মরণ হলো সঙ্গে সঙ্গেই৷ মুহুর্তেই অস্বস্তিতে হাসফাঁস করল সে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ক্ষীন চাহনিতে তাকিয়ে থাকল সে লালচে দাগের দিকে। ঠিক তখনই রুমে এল মেহেরাজ। তার পাশে এসেই বলে বসল,

” খাবার গরম করেছি। ক্ষিধে পেয়েছে, আয় খেয়ে নিই।”

জ্যোতি সরাসরি তাকাল না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বুঝাল আসছে সে। মুহুর্তেই কোন কিছু লুকানোর প্রবণতা দেখিয়ে দ্রুত গলায় ওড়না জড়িয়ে নিল।অস্বস্তিতে উঁশখুশ করল কিয়ৎক্ষন। এমন ভাবে ওড়না দিয়ে গলা ডেকে নিয়ে হাত দিয়ে চেপে রাখল যে স্পষ্টই বুঝা গেল সে কোনকিছু আড়াল করছে। মেহেরাজ ভ্রু কুঁচকাল। কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে বলল,

” এমন উশখুঁশ করছিস কেন অসুস্থ রোগীদের মতো?”

পরমুহুর্তেই কি যেন ভেবে গলার স্বর নরম হলো।কাল রাতের মুহুর্ত মনে করেই শীতল স্বরে বলল,

” অসুস্থ ফিল করছিস? খাবার খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নিবি।আমি প্লেটে খাবার বেড়ে নিচ্ছি।খেয়ে ঘুম দিবি।তাড়াতাড়ি আয়।”

জ্যোতি এতক্ষনে মুখ খুলল। আড়ষ্ট স্বরে বলল,

” তেমন নয়।শরীরে হালকা ব্যাথা। আর কিছু নয়। ”

মেহেরাজ আগের থেকেও শীতল গলায় বলল,

” আ’ম স্যরি। কাল রাতের জন্যই ব্যাথা..”

জ্যোতি ফের বলল,

” ব্যাথার জন্য উঁশখুশ করছিনা৷ ”

মেহেরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল।বলল,

” তাহলে ? ”

” কিছু নয়। আসুন, খাবার বেড়ে দিচ্ছি৷ ”

মেহেরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল। জ্যোতি আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়াল না। দ্রুত পায়ে রুম ছেড়ে গিয়ে খাবার বাড়তে লাগল প্লেটে৷ মেহেরাজ সেসব শুধু চেয়ে থেকে খেয়াল করল সূক্ষ্ম চাহনীতে। জ্যোতি যে একবার ও তার দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না সেটাও খেয়াল করল ভীষণ করে। খেয়াল করল প্লেটে খাবার রাখার সময় অল্প করে ওড়না সরে যাওয়া গলায় লালচে দাগ।এতক্ষনে বুঝে উঠল জ্যোতি কি লুকোতে চেয়েছিল। ঠোঁট বাকিয়ে হেসেই বলে উঠল,

” গলার দাগটার জন্য আমিই দায়ী। দাগটা আমার থেকে লুকানোর মতো কিছু দেখছি না কিন্তু। ”

জ্যোতি এইবারে চোখ তুলে চাইল। মুহুর্তেই হাত দিয়ে গলার ওড়নাটা চেপে ধরল। দেখেই নিল অবশেষে? মুহুর্তেই গাল রক্তিম হয়ে উঠল লজ্জ্বারাঙ্গা রংয়ে।অস্বস্তিতে হাতের তালু ঘষে নজর সরাল আবারও। মেহেরাজ পুনরায় হাসল।রুম থেকে মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজটা শুনতে পেয়েই উল্টো ঘুরল। যেতে যেতেই শুধাল,

” এভাবে লজ্জ্বা পেয়ে লালরাঙ্গা টমেটো হয়ে থাকতে হবে না।খেয়ে নে জলদি। আমি একটু পর আসছি। ”

জ্যোতি মাথা নাড়াল।এই মুহুর্তে মেহেরাজ না গেলে বোধহয় আরও লজ্জ্বাকর পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হতে হতো তাকে। মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

.

মেহেরাজ রুমে এসে কল তুলল। মেহুর কল। মোবাইলটা কানের সমনে নিতেই মেহু শুধাল,

” ভাইয়া, আমি আজই ফিরে আসছি। আর আজই বিয়ে করব। তুমি ছেলেপক্ষকে বলো বিয়ে হলে আজই হবে। নয়তো হবে না বিয়ে। ”

মেহেরাজ কপাল কুঁচকাল। ছোট শ্বাস ফেলে বলল,

” আমি তোকে জোর করিনি মেহু। তোর বিয়ে নিয়ে এতোটা তাড়াহুড়ো আমি কখনোই চাইনি। আগে ছেলেটার সাথে পরিচিত হবি,চিনবি, জানবি, তারপর বিয়ে হবে। ”

মেহু জেদ করে বলল,

” না, আমি এক্ষুনিই বিয়েটা করতে চাইছি। তুমি কি বলবে তাদের? ”

মেহেরাজ গম্ভীর স্বরে শুধাল,

” এটা কি পাগলামো মেহু? ছেলেটার সাথে পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন নেই তোর? ”

মেহু ফের বলল,

” না নেই।তুমি নিশ্চয় আমার জন্য খারাপ ছেলে পছন্দ করবে না। তাই না? ”

“তুই কি রাগ করে আছিস মেহু? যদি তুই না চাস আমি এক পা বাড়াব না৷ এ মুহুর্তেই কল করে না করে দিব। ”

মেহু শান্তস্বরে বলল,

” না ভাইয়া, আমি সত্যিই বিয়েটা করতে চাইছি। আজই।সকালের বাসে উঠেছি।সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছে যাব। রাতে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হয়ে যাক৷ তারপর চেনা, জানা, আনুষ্ঠানিক বিয়ে সবটা হবে। ”

মেহেরাজ লম্বাশ্বাস ফেলল,

” এমন সিদ্ধান্তি কেন? ”

মৃদু আওয়াজে মেহু উত্তর দিল,

” আমি চাইছিনা এমন কারো প্রতি অনুভূতি জম্মাক যার সাথে আমার বিয়ে হবে না। তাই বিয়ে করে তারপরই তার প্রতি আমার অনুভূতি সৃষ্টি হোক এমনটা চাইছি। ”

” এটা পাগলামো, বড়দের কাউকেই জানাইনি। চাচা চাচীদের পছন্দ হবে কিনা সেই বিষয় ও তো ভেবে দেখতে হবে। ”

” আমার কাছে সবার আগে তুমি ভাইয়া। চাচা চাচীদের থেকেও তুমিই কিন্তু আমার বেশি ভালো চাইবে।”

মেহেরাজ চাপা স্বরে বলল,

” কিন্তু এটা তো জোঁকের বশে কাজ হয়ে যাচ্ছে মেহু। ”

মেহু ফের জেদ নিয়ে শুধাল,

” অতোকিছু জানি না, আমি আজই বিয়েটা করতে চাইছি।নয়তো বিয়ে করব না। বলা যায় এটা সে ছেলের পরীক্ষাও। ছেলে যদি আমায় ভালোবাসে তাহলে নিশ্চয় সেই মুহুর্তেই বিয়ে করতে হাজির হবে তাই না?”

মেহেরাজ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলল।আরো কিয়ৎক্ষন বুঝাল মেহুকে। মেহু বুঝল না। অবুঝ বাচ্চার ন্যায় জেদ ধরে বসে আছে বিয়েটা সে করবেই করবে।তাও আজ। আজ মানে আজই।

.

সন্ধ্যায় মেহু বাসায় ফিরল।অবশেষো তার জেদের কাছে হার মেনে রাজি হতে হলো সবাইকে৷ রাজি হতে হলো ছেলেপক্ষকেও।লাল টকটকে শাড়িতে সাঁজানো হলো মেহুকে। খোঁপাতে বেলিফুলের মালা সহ, হাতে চুড়ি, কানে দুল সহ সুন্দর করেই সাঁজাল জ্যোতি। একবার মৃদু স্বরে বলে বসল মেহুকে,

” এভাবে বিয়ে করাটা কি উচিত মেহু আপু? তুমি তো একজনকে ভালোবাসতে। বাসতে না? তুমি অস্বীকার করলেও আমি তা জানি মেহু আপু। ”

মেহু তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। জ্যোতিকে শুরু থেকে সবটাই খুলে বলল। টলমলে চোখে ঠোঁট কাঁমড়ে বসে থাকল কেবল। শেষ মুহুর্তে বলল,

” ভাইয়া যেহেতু বলেছ ছেলেটা আমায় ভালোবাসে, ভালো রাখবে।তার মানে ছেলেটা সত্যিই আমায় ভালোবাসে। আর জীবনসঙ্গী তাকেই করা উচিত যে আমাদের ভালোবাসে। যে আমাদের ভালো চায়। ”

জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।বলল,

” আমি চাই তুমি সুখী হও। খুব খুব সুখী হও মেহু আপু। ”

মেহু হাসল। চুপচাপ বসে আয়নায় দেখতে লাগল নিজেকে। এই সাঁজটাতো সাঈদের জন্যও হতে পারত? পারত না? খুব বেশি কি ক্ষতি হতো সাঈদের সাথে বিয়েটা হলে? মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল, “হ্যাঁ। ক্ষতি হতো। খুব ক্ষতি হতো।”

কিয়ৎক্ষন পরই জ্যোতি এসে নিয়ে গেল মেহুকে। বসার ঘরে বসে থাকা ছেলেপক্ষের পাঁচজন ব্যাক্তি মেহুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মেহু অবশ্য তা খেয়াল করল না।টলমলে চোখে নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকল সে। জ্যোতি আলতো পায়ে গিয়ে মেহুকে সোফায় বসাল। সম্মুখে বৃদ্ধ মতো কাজী শুরু করলেন নিজে কাজ। মেহু কোনদিক না তাকিয়েই মাথা নত করে বসে থাকল পুরোটা মুহুর্তে। কান সজাগ হলো শুধু কাজীর কন্ঠে আবিদ হাসান মেঘ নামটা শুনেই। চোখজোড়া মুহুর্তেই বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে এল। তার মানে মেঘই সেই ব্যাক্তি? মেঘই সেই ছেলে? মেহু বিশ্বাস করে উঠতে পারল না। আড়ষ্ট স্বরে তিনবার কবুল বলেই চুপ থাকল সে।কিয়ৎক্ষন পরই বিয়ে সম্পন্ন হলো। মেহুকে আবারও নিয়ে যাওয়া হলো নিজের ঘরে। তখনই ছোট বাচ্চা ছেলেটা মেহুর সামনে এল। ঠোঁট উল্টে বলল,

” তুমি তবে মেঘের বউ? ”

মেহু তাকাল। এটা সানশাইন। সে চেনে। মৃদুস্বরে বলল,

” তোমরা তো ঠকালে আমায়। তোমার বাপ যে বলল সে বিয়ে করে নিয়েছে ? অথচ আজ আমায় বিয়ে করে বসল?”

বাচ্চা ছেলেটা উত্তর দিল না। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকল কিয়ৎক্ষন। তারপর দৌড়ে চল গেল ফের। মেহু ছোটশ্বাস ফেলল কেবল।জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রইল উদাস চাহনীতে ঘন্টার পর ঘন্টা।

.

এখন রাত হলো বেশ। সন্ধ্যার দিকে হসপিটালের সবকাজ ফেলে এসেই বিয়েটা করতে হলো মেঘকে। পরিবারে বাবা-মা , ভাইয়া- ভাবীকে বিষয়টা বুঝিয়ে অতি কষ্টেই রাজি করাতে হয়েছিলো তাকে।তারপর রাজি করিয়েই পরিবার সমেত মেহুদের বাসায় উপস্থিত হয়ে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সেরে নিল। অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলে ভাবতেই ঠোঁটে হাসি ফুটল। যেভাবেই হোক, আজ থেকে মেহু নামক মেয়েটা যে কেবলই তার সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ভেবেই তৃপ্তির শ্বাস ফেলল। জানালাটা মেলতেই চোখে পড়ল ওপাশের জানালায় থাকা মেহুর মুখ।মেঘ হাসল। বলল,

” এত রাত! ঘুমাওনি? ”

মেহু তাকাল। এতক্ষনকার উদাস চাহনী বদলে গেল। চকচকে চাহনীতে তাকিয়ে শুধাল,

” আপনি আমায় মিথ্যে বলেছেন কেন?এটা আপনি জানলে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না।”

মেঘ হাসল। বলল,

” কাকে বিয়ে করতে? ”

মেহু ঠোঁট চেপে উত্তর দিল,

” যাকেই হোক, আপনাকে নয়। ”

” কাকে?”

মেহু উত্তর দিল। ত্যাড়া স্বরে বলল,

” আপনি আমার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না৷ নেচে নেচে বিয়ে করতে চলে এলেন কেন হুহ?”

মেঘ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

” যদি বলি সবটুকুই জানি? ”

মেহুর গলাটা হঠাৎ নিভে এল। ভরাট স্বরে শুধাল,

” কিচ্ছু জানেন না। আমি আপনাকে ঠকিয়েছি। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি মেঘ। ”

মেঘ ঠোঁট চওড়া করে হাসল। বলল,

” সমস্যা নেই, প্রথম ভালোবাসা না হলে ও আমি তোমার শেষ ভালোবাসা অবশ্যই হবো মেহু। ভালোবাসা দিয়ে ঠিক সব ভালোবাসা আদায় করে নিব একদিন। ঐ যে বলে না?ভালোবাসা দ্বারা সব সম্ভব? একদিন ঠিক জায়গা হয়ে যাবে তোমার মনে। ”

মেহু অবাক হলো। তাকিয়ে থাকল কেবল ছেলেটার দিকে।এতোটা আত্মবিশ্বাস? এতোটা দৃঢ়তা?সত্যিই জায়গা করে নিতে পারবে? সত্যিই সবটুকু ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারবে? এতোটাই সহজ?

#চলবে….

#এক_মুঠো_প্রণয়
#অন্তিম_পর্ব(শেষাংশ)
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

মেহেরাজ অনেকটা রাত পর্যন্ত বেলকনিতেই কাঁটাল। বাবা মাকে হারানোর পর থেকেই মেহুকে নিজের হাতে মানুষ করেছে সে। সবসময়ের মতো আগলে রেখেছিল প্রিয় বোনটাকে। এভাবে হুট করেই বোনের বিয়ে নিয়ে এগোতে চায়নি সে। তবুও হুট করেই সম্পন্ন করতে হলো বিয়েটা। সেই ছোট মেহু আজ কারোর স্ত্রী, কারোর পুত্রবধূ! মেহেরাজ লম্বা শ্বাস টানল। পাশাপাশি বাসা হওয়ায় মেহুকে সবসময় দেখতে পাবে বলে মনে মনে স্বস্তিও মিলল৷ অবশেষে বেলকনি ছেড়ে রুমে পা ফেলতেই চোখে পড়ল রুমের মৃদু আলোতে ঘুমন্ত জ্যোতিকে। কি নিষ্পাপ চাহনী! অগোছাল চুল আলগোছে হয়ে পড়ে আছে চোখে মুখে। মেহেরাজ আলতো হেসে এগিয়ে গেল। বিছানার কোণে বসেই হাত ছোঁয়াল জ্যোতির গালে। পরমুহুর্তেই ঝুঁকে গিয়ে উষ্ণ চুম্বন আঁকল ডান গালে। গতরাতের স্মৃতিচারণ করেই মেহেরাজের আলতো হাসিটা চওড়া হলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বিছানায় জ্যোতির দিকে ফিরে শুঁয়ে পড়ল। পুরুষালি হাত দিয়ে জড়িয়ে নিল সম্মুখে থাকা ঘুমন্ত রমণীকে। গুঁছিয়ে দিল মধ্যকার দূরত্ব। আলতোভাবে পুরু ঠোঁটজোড়া ছোঁয়াল জ্যোতির কপালে।ঠোঁট বাঁকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” সারাদিন লজ্জ্বারাঙ্গায় লালাভ হয়ে মুখোমুখিই হোসনি তুই। আর এখন কিন্তু দিব্যি মুখোমুখি হয়ে ঘুমিয়ে আছিস জ্যোতি।এখন লজ্জ্বা হচ্ছে না?”

ঘুমন্ত জ্যোতি বোধহয় টের পেল এবারে।শুনলও বোধহয় পুরুষালি কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো। তবুও বুঝতে দিল না। অল্প নড়চড় করলেও চোখ মেলে চাইল না একবারও। চোখ মেলে চাইলেই বোধহয় সম্মুখ পুরুষের নেশাময় দৃষ্টি তাকে জব্দ করত। নুঁইয়ে পড়ত সে মোহনীয় নজরে এক মুহুর্তেই। জড়িয়ে পড়ত ভিন্ন আবেশে। তার থেকে চোখ বুঝে ঘুমিয়ে থাকার ভান করা ভালো নয়?
.

মেহুর ঘুম ভাঙ্গল মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ পেয়েই।সাঈদের কল। মেহুর নিঃশ্বাস আটকে আসল। মনে পড়ল সেদিনকার মেয়েটার সমস্ত কথা। সেই সাথে মনে পড়ল গতকালের সকল কথা, সকল ঘটনা। এখন থেকে সে অন্যের স্ত্রী৷ এখন থেকে সে বিবাহিত। সাঈদ এখন কেবলই অতীত। শুধু এবং শুধুই অতীত। মেহু কল তুলল না। স্বার্থপরের মতো মোবাইলটা একপাশে ঠেলে রেখে উঠে বসল। পা বাড়িয়ে জানালা মেলেই অপর পাশের জানালায় একনজর তাকাল। মুহুর্তেই চোখে পড়ল ছোট বাচ্চাটাকে। আলতো হেসে বলল,

” গুড মর্নিং সানশাইন। ভালো আছো? ”

বাচ্চাটা ড্যাবড্যাব করে চাইল ঠিক তবে উত্তর দিল না৷ মেহু আবারও শুধাল,

” কথা বলবে না আমার সাথে?”

বাচ্চাটা শুধাল,

” আম্মু বলে অপরিচিতদের সাথে বেশি কথা না বলতে। ”

মেহু ভ্রু কুঁচকাল। বলল,

” আমি অপরিচিত? এক মিনিট, তোমার আম্মুটা কে?”

এবারে পেঁছন থেকে মেঘ এগিয়ে আসল। ভ্রু বাঁকিয়ে শুধাল,

” ওর আম্মুকে নিয়ে তোমার একটু বেশিই আগ্রহ মেহু। কেন বলোতো? ”

মেহু থমথমে কন্ঠে বলল,

” কি আশ্চর্য!জানতে চাইব না? যাকে বিয়ে করলাম সে যদি আগে আরো দশ পাঁচটা বিয়ে করে বসে থাকে তাহলে? আমি এই দশ- পাঁচ বিষয়টা সহ্য করতে পারিনি বলেই আপনাকে বিয়ে করেছি। এখন আপনিও যদি আরো দশ- পাঁচজনের সাথে জড়িয়ে থাকেন তাহলে দ্বিতীয়বার পা বাড়াব না। ”

মেঘ বাঁকা হাসল। সানশাইন ততক্ষনে দৌঁড়ে রুম ছেড়ে গিয়েছে। মেঘ একনজর পিছুঁ ফিরে সানশাইনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার মেহুর দিকে ফিরল। বলল,

” পা বাড়াতে চাইছো তার মানে? ”

” না! ”

বাঁকা হেসে আবারও বলল,

” চাইলেও সমস্যা নেই। বাড়াতে পারো নিশ্চিন্ত মনে।সানশাইন হলো ভাইয়ার ছেলে। ভাইয়া ভাবিকে দেখেছো আশা করি বিয়ের দিন?তাই সানশাইনের আম্মুকে নিয়ে আতংকে থাকতে হবে না।আর শোনো,আমার জীবনে প্রথম নারীটিও তুমি, শেষ নারীটিও তুমিই হবে।এর মাঝে অন্য কোন নারী আসবে না।”

মেহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভারী গলায় বলে,

“শুনুন ডক্টরসাহেব, পৃথিবীতে সবকিছুই বদলায়। সবকিছুই! এই কথাটাও বদলে যেতে দুই সেকেন্ড সময় নিবে না। এতটা দৃঢ়ভাবে বলবেন না। পরে যদি বদলে যায় কথাটা?”

দৃঢ়গলায় উত্তর আসল,

” বদলাবে না। আমার নিজের প্রতি আমার এইটুকু বিশ্বাস আছে। ”

” কিন্তু আমি যে বিশ্বাস করতে পারছি না।তবে আমি মনে প্রাণে চাইছি আপনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে। আচ্ছা মেঘ?কতোটা ভালোবেসেও ব্যর্থ হলে, কতোটা যন্ত্রনায় ছটফট করলে মানুষ দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে ভয় পায়?কতোটা আঘাতে জর্জরতি হলে মানুষ দ্বিতীয়বার কারোর সাথে নিজেকে ভাবতে গিয়ে ভয় পায়?কতোটা?”

মেঘ আলতো হাসে। বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে,

” জানো মেহু?একটা কথা আছে, এই পৃথিবীতে আমরা কাউকে যতোটা কষ্ট দিই ততোটাই কষ্ট আবার ঘুরেফিরে আমরা পাই।আমি জ্বলেছিলাম তোমার দহনে, তুমি জ্বলেছিলে অন্য কারো দহনে। আবার তোমাকে যে জ্বালিয়েছে?সেও জ্বলবে। কয়েক দিন, কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছর পর হলেও জ্বলবে।এটাই বাস্তবতা।”

কিছুটা থেমে আবারও বলল,

“জানো মেহু? চারবছর আগে চোখের সামনে তোমার কপালে কাউকে চুম্বন আঁকতে দেখেছিলাম।লোকটা সাঈদ নামক ব্যাক্তিটাই, যাকে তুমি ভালোবাসতে। উহ!কি অসহনীয় যন্ত্রনায় আমি পুড়েছিলাম সেই ক্ষনে।এই সত্যটা জানার পর যেন বুকের ভেতর উত্তপ্ত আগুনে ছারখার করছিল সবকিছু।আমি মুখ ফিরিয়ে সরে আসলাম, যেভাবেই হোক না কেন নিজেকে গুঁছিয়ে নিলাম। তবুও দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আমি জ্বলেছি। শুধুই জ্বলেছি। ”

মেঘ আবারও বলল,

” আমি জানি, এখনো তুমি তাকে ভালোবাসো। হয়তো অনেকটা বেশিই ভালোবাসো। তাই না? তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে অনেকটা ভালোবাসা একদিন ফিকে হয়ে যাবে, আর আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাটা সেদিন গাঢ় হয়ে যাবে। ঐ যে, নারী ভালোবাসায় আটকায়?আমি তোমায় ভালোবাসাতেই আটকাব মেহু।এতোবেশি আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করবে যে একদিন তুমি আমায় ভালোবাসবেই! বাসতেই হবে। ”

মেহু কিছু বলল না। শুধু নিস্তব্ধ চাহনীতে তাকিয়ে রইল মেঘের দিকে। আসলেই ভালোবাসতে পারবে সে?সেও তো চায় সবটা ভুলতে। সেও চায় নতুন করে জড়াতে কারোর সাথে। সেও চায় সাঈদকে শুধু এবং শুধুই অতীত হিসেবে মেনে নিতে।

.

সাঈদ মেহুর বিয়ের বিষয়টা জানতে পারে সকালেই। মেহেরাজের থেকে। তখন থেকেই এক নাগাড়ে কল দিয়েছে মেহুকে। মেয়েটা কল তুলেনি। অবশেষে ম্যাসেজ করে জানিয়েছে, অন্তত একবার হলেও দেখা করুক।শেষবারের মতো হলেও একবার সম্মুখীন হোক তার। মেহু রাজি হলো। রেস্টুরেন্টে চেয়ার টেনে বসতেই চোখে পড়ল এক অগোছাল সাঈদকে।চুল উষ্কুখুষ্কু অগোছাল। চোখমুখে কেমন অদ্ভুত ভাব স্পষ্ট। পরনে একটা টিশার্ট আর টাউজার যা সাধারণত বাসায় তার পরনে থাকে। মেহু অনেকক্ষন যাবৎ পরখ করল সামনে বসে থাকা সাঈদকে।রক্তরাঙ্গা চোখ আর শক্ত চোয়ালে একইভাবে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে ছেলেটা।অবশেষে চোখ তুলে চাইল মেহুর দিকে। বলল,

” খুব বেশি অযোগ্য ছিলাম আমি মেহু? এমনটা কেন করলে? তুমি জানতে না আমি তোমায় ভালোবাসতাম?কি হলো?জানতে না তুমি?”

মেহু জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজাল। মৃদু স্বরে বলল,

” এটা কেমন ভালোবাসা?যে ভালোবাসায় অন্য নারীর দিকে ঝুঁকতে হয়?এটা কখনো ভালোবাসা হতে পারে না।”

সাঈদ হাসল। ব্যর্থ হাসি। মৃদু আওয়াজে বলে উঠল,

” সেদিন যে মেয়েটাকে দেখেছিলে? সে আমার ভার্সিটিতে থাকাকালীন ফ্রেন্ড।ওর সাথে মাস তিনেকের পরিচয় ছিল। তারপরই ও ফেমিলিসহ অন্য দেশে শিফট করে।তবে এটা ঠিক যে আমার সাথে ফিজিক্যালি সম্পর্ক হয়েছিল ওর। একবার দেশের বাইরে ট্যুরে গিয়েই মাথায় ভুত চেপে গেল।দেখা হলো ওর সাথে৷ মেয়েটা কেমন জানি। নিজ থেকেই প্রস্তাব রাখল ফিজিক্যাল রিলেশনের। আমি প্রথমবারে এমন প্রস্তাবে না করলেও পরেরবার আমিও মজা লুফে নিতে রাজি হয়ে গেলাম একপ্রকার। ঐ যে প্লে বয় ছিলাম? সেই সম্মোধনের জেরেই বোধ হয় এই বিষয়টা ঘটে গিয়েছিল তখন। তারপর ওর সাথে আমার আর যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগেই বিজন্যাসের একটা মিটিংয়ে দেশের বাইরে যেতে হলো।তারপর তারসাথে আমার আবারও দেখা। এবারে আমি তার সাথে সহজভাবেই বন্ধুর ন্যায় কথা বললাম।গল্প করলাম। কিন্তু ভাবিনি সে উম্মাদের ন্যায় আচরণ করবে। ইভেন এখনও পিঁছু পিঁছু ঘুরে জ্বালাচ্ছে! এতে কি আমার দোষ আছে মেহু? ওর সাথে যা করেছি সবটা অনেক আগের ঘটনা!অনেক অনেক আগের। তোমায় ভালোবাসার পর আমি আর কারোর দিকে টান উপলব্ধি করিনি মেহু। না শরীরের দিক দিয়ে আর না তো মনের দিক দিয়ে। ”

সাঈদ থামল। একবার মেহুর দিকে তাকিয়েই আবারও ভরাট গলায় বলে উঠল,

” তোমায় ভালোবাসি এটা উপলব্ধি করার পর তো আর ঝুঁকিনি কারোর দিকে মেহু। কারোর দিকেই ঝুঁকিনি। চারবছর আগে একটা মেয়েকে কিস করেছিলাম। আর সে দৃশ্য দেখেই তুমি এড়িয়ে চলতে শুরু করলে আমায়। আমি জানতাম তুমি আমার প্রতি দুর্বল। আমার প্রতি তোমার প্রচন্ড দুর্বলতা আছে। তবুও তুমি আমার কাছে আমার বন্ধুর বোন হিসেবেই ছিলে মেহু।এর আগে মুখে মজা করলেও কখনো অন্য নজরে তাকিয়েছিলাম তোমার দিকে? তাকাইনি। কিন্তু সেদিন মেয়েটাকে কিস করার পর যখন বুঝলাম তুমি দেখে নিয়েছিলে?তোমার মুখের অসহায়ত্ব যখন দেখেছিলাম?হুট করেই অপরাধ বোধ জাগল। অনুভব করলাম তোমার অসহায়ত্ব, চোখের পানি আমার দুর্বলতার একাংশ। তবে হ্যাঁ, তখনও বুঝে উঠিনি আমি তোমায় ভালোবাসি। বুঝলাম তখন, যখন তুমি ক্রমশ এড়িয়ে চলতে শুরু করলে। ক্রমশ বুঝিয়ে দিতে লাগলে তুমি আমার থেকে সরে যাচ্ছো। অনেকটুকু দূরে সরে যাচ্ছো। তার মাস খানেক পরই তোমার টলমল চোখের জলের সম্মুখীন হলাম আবারও। সেদিন কেন জানি সে অশ্রু, সে কষ্ট আগলে নিয়ে মুঁছে নিতে মন চাইল। তাই তো তোমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। আর তুমি ভাবলে আমি সুযোগ নিলাম।অথচ তুমি জানলে না, তোমার অশ্রু আমায় কতোটা যন্ত্রনা দেয়। আর সে কারণই তোমার অশ্রুসিক্ত নয়নে আমি দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখতাম না।বরাবরই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি তোমার কান্নামাখা মুখকে।”

মেহুর চোখ টলমল করল। আসলেই কি এই লোকটাকে আপন না করে সে ভুল করে ফেলেছে? মুহুর্তেই মস্তিষ্ক জানাল, সে বিবাহিত। সে এখন অন্য কারো। সাঈদের দিকে ঝুঁকলে এখন ঐ লোকটার প্রতি অন্যায় হবে।লম্বা শ্বাস ফেলল মেহু। সাঈদ আবারও ব্যাথাময় স্বরে শুধাল,

” মেহু?আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মেহু। একবার বলো না সবটা মিথ্যে। একবার বলো প্লিজ!আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তোমাকে অন্য কারোর সাথে মেনে নিতে। ”

মেহু উঠে দাঁড়াল এবারে। এর চেয়ে বেশিক্ষন থাকলে হয়তো সে আর স্থির থাকতে পারবে না। সত্যিই পারবে না। শক্ত গলায় শুধাল,

” এসব সত্যি। আপনি ফিরে যান।ফিরে যান সাঈদ ভাইয়া। আমি আর কিছুই শুনতে চাই না। আপনার কষ্ট, কৈফিয়ত কিছুই জানতে চাই না। ”

কথাটুকু বলেই পা বাড়াল মেহু।সাঈদ তাকিয়ে থাকল কেবল সেদিক পানে। বুকের ভেতর বিষাক্ত দহনে জ্বলছে সমস্ত কিছু। অস্ফুট স্বরে বলল,

” আমার হৃদয়ে তোমার নামে এক মুঠো প্রণয় ছিল মেহু। আপসোস! আমি সেই প্রণয়ে তোমায় জড়িয়ে নিতে পারলাম না। জীবনে অসংখ্য নারীর সন্নিকটে থাকলেও প্রথম প্রণয়টা তুমিই মেহু। আমি সেই প্রণয়ে আর কাউকে জড়াব না। কাউকেই না। তুমি আমার না হয়েও আমারই রবে। আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থাকবে।আমার কল্পনায়।”

.

সপ্তাহখানেক পরই মেহু আর মেঘের বিয়ের অনুষ্ঠানটা আনুষ্ঠানিভাবে করা হলো। সেই সঙ্গে বড়দের নির্দেশ অনুযায়ী মেহেরাজ আর জ্যোতির বিয়েটাও আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন হলো। মেহেরাজদের গ্রামের বাড়িতেই সব করা হলো।জ্যোতি আনমনে ভাবল দাদীর কথা, ছোট্ট মিথির কথা।ভাবল মিনারের কথাও। সেই চিঠিটার পর থেকে মিনারের সাথে খুব কমই যোগাযোগ হয়েছে। শুনেছে ঢাকায় কোথাও চাকরী করে এখন সে। আচ্ছা, সে মানুষটা এখন কেমন আছে?পরমুহুর্তেই ভাবল দাদীর কথা।এই দিনটাতে নিশ্চয় তার দাদী খুব খুশি হতো? নিশ্চয় নিজের প্রিয় নাতনির সুখে ভীষণ সুখী হতো?ভাবতেই চোখজোড়া টলমল করল। সেই টলমলে দৃষ্টিতে, ফুলে ফুলে সজ্জ্বিত ঘরে ফুলের সুভাসে হঠাৎই দেখা মিলল পুরুষালি মুখয়ব। মেহেরাজের উপস্থিতি। মুহুর্তেই বুকের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতি হলো।সপ্তাহখানেক আগের সেই রাত, সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত গুলোর কথা আবারও স্মরনে এল। মুহুর্তেই অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসল সে। মেহেরাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। কাছাকাছি এসে ঝুঁকে গিয়ে বলল,

” এমন ছটফট করছিস কেন জ্যোতি?আচ্ছা, তুই কি মনেমনে বাসরটাসর নিয়ে ভেবে বসে আছিস জ্যোতি? ছিঃ!”

জ্যোতি বোকার মতো চাইল। স্বাভাবিক ভাবে ফুলশয্যার রাতে,ফুলে ফুলে সজ্জ্বিত এমন একটা ঘরে থাকলে যা ভাবার তাই ভেবেছে সে।ছিঃ এর কি আছে?মেহেরাজ আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে শুধাল,

” তুই যা ভাবছিস তা যদি আবারো সেদিনের মতো সত্যি হয়ে যায়?আমার কিন্তু দোষ নেই জ্যোতি। ”

জ্যোতির নিঃশ্বাস এবারে ঘন হলো। আর একবারও তাকাল না মেহেরাজের দিকে। লোকসম্মুখে ভদ্র, গম্ভীর মেহেরাজই সুযোগ ফেলে যে অভদ্র হয়ে যায় তা তার জানা হয়ে গেছে। তাই চুপ থাকল। অন্য দিকে ফিরে নিজের অস্বস্তি লুকানোর চেষ্টা চালাল। মেহেরাজ এবারে নেশাময় কন্ঠে শুধাল,

” আ’ম স্যরি জ্যোতি। তোর ভাবনাটাই দ্বিতীয়বার সত্যি হতে যাচ্ছে আজ রাতে। ”

মুহুর্তেই জ্যোতি চোখ বুঝল। কম্পমান মিহি ঠোঁটজোড়া ততক্ষনে পুরুষালি ঠোঁটজোড়ার দখলে। জ্যোতির হৃৎস্পন্দ ক্রমশ দ্রুত হলে।আঁকড়ে ধরল মেহেরাজের ঘন চুল।

.

মেহুর চেহারা মলিন।সে জানে অন্য সব বর বউয়ের মতো তাদের বিয়ের রাতটা স্বাভাবিক হবে না। তবুও মনে মনে কোথাও অপরাধবোধ হচ্ছে৷ সে কি মেঘকে আসলেই ঠকাচ্ছে?আসলেই মেঘকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে? সে তো মনেপ্রাণে চায় মেঘকে ভালোবাসতে।হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি কেবলই মেঘের নামে করে দিতে। তবুও কেন পারছে না? ভাবতেই লম্বা শ্বাস ফেলল। মেঘ কাছে এসে বসল। মেহুর একহাত নিজের হাতে নিয়েই শুধাল,

” মন খারাপ?”

উত্তর আসল না। মেঘ কিছুটা থেমেই মেহুকে নিজের মুখোমুখি করল।মেহুর কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল,

“আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা না জম্মানো অব্দি তোমার কাছে ভালোবাসার আবদার রাখব না মেহু।তোমায় স্ত্রীর ন্যায় গভীর ভাবে ছোঁব ও না। যেদিন তুমি ভালোবাসবে সেদিনই তোমায় পরিপূর্ণভাবে স্ত্রী হিসেবে কাছে টানব। ভয় নেই।আমার প্রতি এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।”

মেহু মৃদু গলায় বলল,

” আমি আপনাকে বিশ্বাস করি মেঘ, ভয় পাচ্ছি না।”

মেঘ হাসল। বলল,

” বিশ্বাস ভালোবাসার গভীরতম ধাপ। যেখানে বিশ্বাস আছে সেখানে ভালোবাসা অবশ্যই জম্মাবে মেহু।”

মেহু শান্ত কন্ঠে শুধাল,

” তাই যেন হয়। ”

.

এর মাঝে কেঁটে গেল প্রায় আঠারোটা মাস। এতগুলো দিনে মেহু বারংবার মুগ্ধ হয়েছে মেঘের ভালোবাসায়। খুব করে এই মানুষটার মায়ায় পরেছে। নারী সত্যিই ভালোবাসায় আটকায়। প্রিয় পুরুষের যত্নে আটকায়, আগলে রাখাতে আটকায়, অনুভূতিতে আটকায়।আজকাল সাঈদের প্রতি অনুভূতিটা যতোটা ফিকে হয়েছে মেঘের প্রতি অনুভূতিটা ততোটাই দৃঢ় হয়েছে। গভীর হয়েছে! সাঈদ আজ সত্যিই অতীত।হয়তো মাঝেমাঝে ওক আধটা দীর্ঘশ্বাসে মনে পড়ে সেই অতীতকে। এর থেকে বেশি না। মেহু মলিন হাসল।

মেঘ যখন ফিরল তখন রাত বারোটা। ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসে রুমে প্রবেশ করতেই সর্বপ্রথম চোখে পড়ল মেহুকে। লাল টকটকে শাড়ি, সাথে মোহনীয় সাঁজ। মেঘ আড়চোখে কয়েকবার তাকিয়ে শুধাল,

” হঠাৎ এই সাঁজ?”

” বরের জন্য বউয়ের সাঁজ নিষেধ নাকি?একটা গোপণ কথা শুনবেন? সাঁজটা আসলে আমার নয়, আপনার স্ত্রী মেহুর।শুধু এবং শুধুই আপনার স্ত্রী। স্ত্রী রূপে কাছে টেনে নিবেন? ”

মেঘ দ্বিধান্বিত চাহনীতে চাইল। বলল,

” কিসব বলছো মেহু?”

” যেটা বুঝেছেন সেটাই বলছি। বয়সতো কম নয় আমার। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আমি বুঝি মিঃ মেঘ।তাই জেনেশুনেই বলছি সমস্তটা।জ্যোতি বয়সে আমার চেয়ে ছোট হয়ে এক মেয়ের মা হয়ে যাচ্ছে। আমি মা হবো না? ”

মেঘ চোখ বড়বড় করল। জ্যোতি সাতমাসের প্র্যাগনেন্ট! আল্ট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্ট অনুযায়ী অনাগত সন্তান মেয়ে। কিন্তু এই নিয়ে মেহু এভাবে ফট করে একটা কথা বলে বসবে ভাবেনি সে।ধীরপায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেষ হয়ে আসতেই তার বিস্ময়ের মাত্রাকো দ্বিগুণ করে এবার মেহু জড়িয়ে ধরল। বুকে মুখ গুঁজে বলে উঠল,

” ভালোবাসি আপনাকে মেঘ।অনেকটুকু! ”

মেঘ গম্ভীর গলায় শুধাল,

” আমার তবে অবশেষে এক মুঠো প্রণয়ের প্রাপ্তি হলো?আমি আমার জায়গাটা তবে করে নিতে পেরেছি মেহু?”

” পারতে তো হতোই।এতো ভালোবাসার বিনিময়ে আমি কি এতোটুকুও ভালোবাসা দিতাম না? ”

মেঘ কিছুই বলল না।শুধু নিঃশব্দে হাসল।মেহু আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

” এবার পুরোপুরি স্ত্রীরূপে ধরা দিলাম। আমায় পুরোপুরি স্ত্রীরূপে কাছে টানবেন না মেঘ?”

মেঘ হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে। ঝুঁকে গিয়ে প্রিয়তমা নারীর কপালে চুম্বন এঁকে পরপর নরম ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে নিল নিজের ঠোঁটজোড়া দিয়ে। পরমুহুর্তেই কোলে তুলে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” উহ!স্ত্রী রূপে কাছে টানতে গিয়ে অসভ্য হয়ে গেলে দোষ দিবে না মেহু। ”

উত্তরে মেহু কিছুই বলল না। হাতজোড়া দিয়ে মেঘকে আঁকড়ে রাখল ঠিক আগের মতোই। মেঘ আরো গভীরে জড়িয়ে নিল মেহুকে। কিয়ৎক্ষন জড়িয়ে রেখে উষ্ণ চুম্বনে,উষ্ণ স্পর্শে উম্মাদনায় মত্ত করল তারই প্রিয়তমাকে।

.

জ্যোতি সাতমাসের ভরা পেট নিয়েই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। অন্ধকার আকাশে জ্বলমলে চাঁদটার দিকে তাকিয়েই ঠোঁটে ফুটে উঠল হাসি। বাইরের মৃদু শীতল হাওয়াটা ভালোই বোধ হলো তার কাছে। এর মাঝেই নিঃশব্দে বেলকনিতে উপস্থিত হলো মেহেরাজ। পেঁছন থেকে জ্যোতিকে জড়িয়ে নিয়েই হাত রাখল জ্যোতির পেটে৷ ঘাড়ের কাছে চুমু দিয়ে বলল,

” আমার ঘুমের বারোটা বাঁজিয়ে ,একা আমায় রেখে এসে এখানে সময় কাঁটানোর মানে কি?”

জ্যোতি কিছু বলল না উত্তরে। মেহেরাজ ফের বলল,

” তুই এখানে থাকলে থাকতেই পারিস আমার থেকে দূরে দূরে।কিন্তু আমার প্রিন্সেস কেন থাকবে আমার থেকে দূরে? ”

জ্যোতি এবারে উত্তর দিল,

” উহ, ঘুম হচ্ছে না। আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন, তাই ডাকিনি আর। ”

মেহেরাজ ত্যাড়া স্বরে শুধাল,

” তো লাভটা কি হলো?তুই আসামাত্রই তো ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিসব জাদুটাদু করে রেখেছিস আমার উপর বলতো?”

জ্যোতি অস্ফুট স্বরে শুধাল,

” আমি?”

মেহেরাজ সতর্ক করল।হুশিয়ারি দিয়ে বলে উঠল,

” হুশশশ!ও নড়াচড়া করছে।আমার আম্মুটা!”

জ্যোতি চুপ হয়ে গেল।যখনই মেহেরাজ থাকাকালীন বাচ্চাটা এভাবে নড়াচড়া করে তখনই মেহেরাজ এভাবে অনুভব করে। এটা নতুন নয়৷ কিয়ৎক্ষন পর বাচ্চার নড়াচড়া আবার থেমে গেল। জ্যোতি হাসল। বলল,

” জানেন?আমি চাই না ও আমার কিংবা আপনার মতো গম্ভীর হোক। আমি চাই ও মিথির মতো চঞ্চল হোক। মিথি যখন ছোটবেলায় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে গেল? চলে গেল আমায় ছেড়ে?আমার সে মুহুর্তটা মনে পড়লে আজও কান্না আসে। আমি চাই ওর মাধ্যমেই মিথি ফিরে আসুক আমার কাছে৷ সেই ছোট্ট মিথি। আমার মিথি! ”

মেহেরাজ ঠোঁট চওড়া করে হাসল।ভরাট গলায় বলল,

” খুব শীঘ্রই আসবে। ”

জ্যোতিও এবারে হাসল। মেহেরাজের হাত আঁকড়ে ধরে বলতে লাগল,

” মেহেরাজ ভাই..”

বাকিটুকু বলা হলো না। মেহেরাজ দৃঢ় কন্ঠে রাগ দেখিয়ে বলে উঠল,

” হুশশ!ভাই? কিসের ভাই?তোর ভাই হই আমি?তুই তো সাংঘাতিক মহিলা জ্যোতি। এসব ভাইটাই বলে আমাকে কি আমার বাচ্চারই মামা বানানোর প্ল্যান করে রেখেছিস?”

জ্যোতি হতাশ হলো। ঘাড় ঘুরিয়ে মিনমিনিযে চোখে চাইতেই মেহেরাজ ফের বলল,

” এভাবে তাকাবি না৷ আমার বাচ্চার আম্মু হওয়ার দাবি করে আমার সরল মনে জায়গা করে কতকিছু করে ফেললি আমার সাথে৷ শেষমেষ আমার বাচ্চার আম্মুও হয়ে বসে আছিস৷ আর এখনও আমায় ভাই বলিস?খবরদ্দার!আমার বাচ্চার সামনে আমাকে ভাই-টাই ডাকলে সোজা আঁছাড় মারব দোতালা থেকে।”

কথাটা বলেই জ্যোতিকে নিজের দিকে ঘুরাল। ঝুঁকে গিয়ে জ্যোতির পেটে পরপর কয়েকটা চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

” শোনো প্রিন্সেস, তোমার আম্মুকে কখনো বলা হয়নি। তবে তোমায় বলছি, তোমার বাবা তোমায় অনেকটা ভালোবাসে।এতটুকু ভালোবাসা তোমার আম্মুকেও বাসে না। তোমার আম্মুর ভাগে কেবল এক মুঠো প্রণয়ই আছে। বাকিটুকু সব তোমার। ”

#সমাপ্ত

[ বিদায়! ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।শেষটুকুতে কেন জানি আমারই তৃপ্তি হলো না। জানি না আপনারা কেমর তৃপ্তি পাবেন। ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে