#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_৩৩
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
জ্যোতির পা এখন ঠিক হয়েছে৷ এতগুলো দিন পর নিজের পায়ে হাঁটাচলা করতে পেরে মনে মনে তৃপ্তি ও পেল। এতদিন ভার্সিটিতে যায় নি ভেবেই সিদ্ধান্ত নিল আজ যাবে। সকাল সকাল ঘুম ছেড়ে উঠতেই টের পেল মেহেরাজের বাহুবন্ধন।আলতো হাতে পুরুষালি হাতটা সরাতে নিতেই বন্ধন আরো দৃঢ় হলো। কানে আসল মেহেরাজের ঘুমঘুম জড়ানো স্বর,
” উহ, ঘুমাচ্ছি তো জ্যোতি। ”
জ্যোতির কপাল কুঁচকে নিল। হাত সরালে ঘুমোতে পারবে না এমন তো কোথাও লেখা নেই? হাত সরানোর সঙ্গে ঘুমানোর কি সম্পর্ক। মৃদু আওয়াজে তা বলেও নিল,
” হাত সরালে ঘুমোতে পারবেন না? ”
মেহেরাজ কিছুটা নড়চড় করল। হাত দিয়ে জ্যোতিকে জড়িয়ে রেখেই হঠাৎ মুখ গুঁজল জ্যোতির চুলে। কানের কাছে ভরাট গলায় শুধাল,
” না।”
জ্যোতি দেওয়াল ঘড়িতে তাকাল। ঘড়ির কাঁটায় আটটা পেরিয়ে গেছে। ঠোঁট চেপে বলল,
” আমায় উঠতে হবে। হাত সরান মেহেরাজ ভাই। ”
মেহেরাজ সরাল না হাত। আলতো হেসে মাথা উঁচু করেই ঘুমঘুম চোখে তাকাল জ্যোতির দিকে। আকস্মিক নিজের ওষ্ঠদ্বয় জ্যোতির কোমল গালে ছুুঁয়ে দিয়েই আবার চোখ বুঝল। হাতের বন্ধন আলগা করে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল,
” হাত সরালে কি বিনিময়ে তুই আমায় কিছু দিবি?”
জ্যোতি অস্ফুট স্বরে শুধাল,
” হ্ হু?”
মেহেরাজ চোখ বুঝে রেখেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। হাত জোড়া সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে শুঁয়েই গম্ভীর স্বরে শুধাল,
” হাত সরানোর বিনিময়ে কয়েকটা চুমু দিতেই পারিস।আমার নিষেধ নেই। কেউ দেখবেও না।আমি চোখ বুঝেই আছি, আমিও দেখব না৷ তুই লোকলজ্জ্বার ভয় না পেয়ে দুয়েকটা চুমু দিতে পারিস জ্যোতি। ”
কথাগুলো এতোটাই গম্ভীর স্বরে শুধাল যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে ফেলল সে। অপর দিকে সে কথাগুলো শুনেই জ্যোতির কৃষ্ণবর্ণীয় মুখে হঠাৎই লাজুকতা এসে ভর করল।আরক্ত হলো মুখ।কান জোড়া উষ্ণ অনুভব হলো মুহুর্তেই। লজ্জ্বায় অস্বস্তিতে জড়োসড়ো হয়েই তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে বসল। মেহেরাজের দিকে আর একনজরও না তাকিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াতে নিতেই হাতে টান পড়ল সঙ্গে সঙ্গে। কানে এল জড়ানো গলার স্বর,
” কি বললাম আর কি করছিস? ”
জ্যোতির সারা শরীর এবার কেঁপে উঠল আকস্মিক। লোমকূপ জুড়ে সারা শরীরে শিহরন বইল।সর্বাঙ্গে কেমন শিরশিরে অনুভূতিতে কম্পন উঠল।বুকের ভেতর যেন কেমন কেমন করে উঠল। মেহেরাজ সে সবটাই খেয়াল করল ঘুমুঘুমু চোখে তাকিয়ে। পরমুহুর্তেই হাতটা ছেড়ে দিয়ে নিঃশব্দে ঠোঁট চওড়া করে হাসল। বলল,
” ছেড়ে দিলাম। কিন্তু তুই চাইলেই… ”
মেহেরাজের কথাটুকু শেষ হওয়ার আগেই জ্যোতি অস্বস্তি আর লজ্জ্বারত কন্ঠে কোনভাবে বলল,
” চাই না। ”
তারপর আর সেখানে বসে থাকতে পারল না। দ্রুত পা চালিয়ে ওয়াশরুমে এগিয়ে গেল৷ ঘনঘন শ্বাস ফেলেই মুখচোখে পানি দিল দ্রুত৷ কিয়ৎক্ষন ওয়াশরুমেই থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল কেবল। আর ভাবল একটু আগের সে কথাগুলো। বারংবার যেন কথাগুলো কানে বাঁজল। বারংবার!
.
মেহেরাজ বিছানা ছেড়ে উঠে আলতো পায়ে বোনের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।জ্যোতির পা ভালো হওয়ার কারণেই মেহু নিজ শহরে গিয়ে ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিল। মেহেরাজকে কাল রাতে তা জানিয়েছেও। কিয়ৎক্ষন পরই রওনা দিবে। যার কারণে সকাল সকালই ঘুম ছেড়ে উঠেছে মেহু। মেহেরাজ দরজায় টোকা দিল। ভেতর থেকে মেহুর গলা শুনেই ধীর পায়ে এগিয়ে ডুকল৷ মেহুকে হাস্যোজ্জ্বল চাহনীতে তাকাতে দেখেই গলা ঝাড়ল। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
” মেহু?তোর সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। মনোযোগ দিয়ে শুনবি। হুহ?”
মেহু চোখ তুলে চাইল। বিস্ময়ের সুরে বলে উঠল,
” আমার সাথে? কি জরুরী কথা ভাইয়া? ”
মেহেরাজ দ্বিতীয়বার গলা ঝাড়ল। চেয়ার টেনে শান্ত হয়ে বসেই কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল। তারপর শীতল গলায় বলল,
” তুই কি কাউকে ভালোবাসিস মেহু? ”
আকস্মিক প্রশ্নে চমকে উঠল মেহু। ভালোবাসে? হ্যাঁ বাসে তো।সাঈদকে। সবটুকু অস্বীকার করলেও সে যে সাঈদকে ভালোবাসে এইটুকু অস্বীকার করার সাধ্য তার নেই।কিন্তু মুখে বলা গেল না তা। ছোট্ট শ্বাস ফেলে উত্তর দিল,
” হঠাৎ এমন প্রশ্ন ভাইয়া? ”
মেহেরাজ শান্ত গলায় শুধাল,
” কাউকে ভালোবাসলে ভাইয়াকে বলতে পারিস।ভাইয়া সর্বপ্রথম তোর পছন্দকেই গুরুত্ব দিবে মেহু৷ বল, ভালোবাসিস কাউকে?”
মেহু তাকিয়ে থাকল। কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে শুধাল,
” না, ভালোবাসলে তোমায় জানাতাম ভাইয়া।”
” সত্যিই?”
মেহু প্রসঙ্গ পাল্টাতেই বলল,
” হ্যাঁ, সত্যিই ভাইয়া।কি যেন বলবে বলছিলে? বলে ফেলো।”
” একটা ঘটনা বলি। মনোযোগ দিয়ে শুনবি হুহ?”
মেহু মাথা নাড়াল। মেহেরাজ অল্প হেসে গম্ভীর স্বরে বলতে লাগল,
” একটা কমবয়সী ছেলে আরো প্রায় বছর পাঁচেক আগে আমায় জানিয়েছিল সে আমার বোনকে ভালোবাসে। সে আমার বোনকে পছন্দ করে। বলতে গেলে আমার আর সে ছেলেটার বয়সের পার্থক্য খুব একটা ছিল না।হয়তো দুয়েকবছরের পার্থক্য।ছেলে হিসেবেও মন্দ ছিল না। পেশা, শিক্ষা, সৌন্দর্য সবই ছিল সন্তোষজনক। তবুও আমি তার সামনে বড়দের মতো গম্ভীরস্বরে বলেছিলাম, সে যদি চায় প্রেমে না এগিয়ে আমার বোনের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারে। আজকাল প্রেম আর টেকে কত? সে যেন একা প্রস্তাব না রেখে তার পরিবার সমেত প্রস্তাব আনে। ছেলেটা তার মা বাবাকেও দূর শহরে নিয়ে এসেছিল সে পাঁচবছর আগে। তাও আমার বোনের জন্য প্রস্তাব রাখতে। শেষমুহুর্তে আমিই না করে দিয়েছিলাম প্রস্তাবটা। কারণ নিজের বোনকে অতোটা তাড়াতাড়ি নিজের থেকে আলাদা করতে চাইনি আমি।কতই বা বয়স ছিল তখন আমার বোনের?”
মেহু সবটাই শুনল মনোযোগ দিয়ে।ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
” তারপর? ”
মেহেরাজ আবারও শান্ত গলায় বলল,
” ছেলেটার সাথে আমার এর পরেও বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গেল ছেলেটা। তবে আজ এতগুলো দিন পর আমি সত্যিই ভাবিনি ছেলেটা আবারও একই প্রস্তাব নিয়ে হাজির হবে। ”
মেহুর এবারে বাকি কথা বুঝতে দেরি হলো না। মৃদু আওয়াজে শুধাল,
” বিয়ের প্রস্তাব ? ”
মেহেরাজ হাসল এবারে। ঠোঁট চওড়া করে নরম গলায় বলল,
“হ্যাঁ মেহু। ভাই হিসেবে এটুকু বলব, যে ছেলেটা একপাক্ষিক ভাবে এতগুলো বছর একটা মেয়েকে ভালোবাসতে পারে সে নিশ্চয় আমার বোনকে অল্পস্বল্প ভালোবাসে না? অনেকটুকু ভালোবাসে। তাই না?যদি অনেকটুকু ভালো না বাসত তবে সে একপাক্ষিকভাবে এতগুলো দিন অনুভূতি পুষে রাখত না।আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে ছেলেটা আমার বোনকে সবসময় সুখে রাখবে।সবথেকে বেশি সুখে রাখবে।সবসময় ভালো রাখবে।একদম জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবে।ছেলেটার চোখে সে পরিমাণ ভালোবাসা দেখেছি আমি। ভাই হিসেবে বোনের জন্য আমি নিশ্চয় এমনই একটা ছেলে চাইব যে আমার বোনকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি ভালো রাখবে, ভালোবাসবে। তাই না মেহু?বাকিটা তোর ইচ্ছে। যদি তুই রাজি হোস, তবেই হ্যাঁ বলব। নয়তো না। ”
মেহুর আগ্রহ জাগল৷ছেলেটা কে হতে পারে তা নিয়ে ভাবলও গভীরভাবে। কিন্তু উত্তর পেল না। কিশেরী বয়স থেকেই বহুবার বহু ছেলের কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে সে। তাদের মধ্যে কোন ছেলেটা এতগুলো দিন তাকে ভালোবাসে বুঝে উঠল না সে। প্রশ্ন করল,
” ছেলেটা কে ভাইয়া? ”
মেহেরাজ চমৎকার হেসে উত্তর দিল,
” ছেলেটা তোর পূর্ব পরিচিত।আমি চাই না তুই তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নে। বা তাড়াহুড়ো করে তোর জীবনের কোনকিছু সম্পন্ন হোক। জোর ও করছি না। তুই ভেবে দেখতে পারিস বিষয়টা। ভেবে যদি হ্যাঁ মনে হয় আমাকে জানাবি। আমি সাক্ষাৎ এর ব্যবস্থা করে দেব ছেলেটার সাথে। তবে কেন জানি না আমার ছেলেটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে মেহু।আমি জানি, তোরও পছন্দ হবে।”
কথাটুকু বলেই মেহেরাজ উঠে দাঁড়াল। বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসবে এই উদ্দেশ্যে আলতো হেসে বের হয়ে গেল রুম ছেড়ে।যেতে যেতে বাসার দরজা লাগানোর কথাও বলে গেল। মেহু আনমনে সেদিক পানে তাকিয়েই ভাবতে লাগল, আসলেই কি ছেলেটাকে পছন্দ হবে?যে মনের পছন্দ, ভালো লাগা, ভালোবাসা একজনের নামে ইতোমধ্যেই বিলিয়ে দিয়েছে সে মনে দ্বিতীয় পুরুষের ঠাঁই হবে ? আসলেই কি সাঈদ ব্যাতীত দ্বিতীয় কোন পুরুষের সাথে সে মানিয়ে নিতে পারবে? দ্বিতীয় কোন পুরুষকে ভালোবাসতে পারবে কি?পরমুহুর্তেই মনে পড়ল সামান্তা আর তার ভাইয়ার পুরাতন সম্পর্কের কথা৷ সামান্তা আর তার ভাই যদি এক মনে দ্বিতীয় মানুষকে জায়গা দিতে পারে সে কেন পারবে না? অবশ্যই পারবে। পৃথিবীতে অসম্ভব কিছুই নেই। সব কিছুই চাইলেই সম্ভব। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। সে চায় না তার মনে দ্বিতীয় কারো বাস হোক, কিন্তু প্রথম জনের দিকে হাত বাড়ানোরও যে সাহস নেই। যার প্রতি একপাক্ষিক অনুভূতি পুষে এতগুলো দিন এতোটা কষ্ট পেল তার সাথে জড়ালে আরো কতোটা দগ্ধ হতে হবে তাকে কে জানে। সে কি এই দহন সহ্য করতে পারবে? অতোটুকু সহ্যক্ষমতা কি আছে তার?
.
জ্যোতি গোসল সেরে বের হলো কিয়ৎক্ষন পর।পরনে একটা গাঢ় সবুজ রংয়ের গোল জামা আর পায়জামা।গলায় ওড়না পেঁছানো থাকলেও অন্যদিনের মতো মাথায় ঘোমটা দেওয়া নেই। পা এগিয়ে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুঁছড়ে নিয়ে মুঁছেই ঝাড়া মারল। রুমে একবার দৃষ্টি ঘুরাল। সারা রুমে তাকিয়ে কোথাও মেহেরাজকে দেখা গেল না। তারপর দু পা বাড়িয়ে বেলকনিতে গিয়ে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখল তোয়ালেটা।কিয়ৎক্ষন সেখানে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল। ফের রুমে ফিরে আসতেই চোখে পড়ল বিছানায় বসে থাকা মেহেরাজকে। বুকে হাত গুঁজে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। জ্যোতি ভ্রু কুঁচকাল। বিনিময়ে মেহেরাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,
” তুই চুমু দিসনি ভালো, এখন আমি চুমু দিয়ে দিলে ক্ষতি হবে না নিশ্চয়?”
জ্যোতি কপাল কুঁচকাল। অস্ফুট স্বরে বলল,
” জ্ জ্বী?”
” কানে না শোনার নাটক করলে দ্বিগুণ চুমু প্রাপ্য। অধিকার আছে কিন্তু আমার। ”
জ্যোতি জমে গেল। মেহেরাজ আড়ালে চাপা হাসল। বসা ছেড়ে উঠে শার্টের হাতা গুঁটাতে গুঁটাতেই জ্যোতির সম্মুখে এসে দাঁড়াল। হালকা ঝুঁকে ভ্রু নাচিয়ে শুধাল,
” কি হলো? চুপ হয়ে গেলি কেন ? ”
জ্যোতি চোখ তুলে চাইল। মেহেরাজের চোখের দিকে তাকিয়েই আবারও নজর সরাল দ্রুত। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
” কি বলব ঠিক বুঝে উঠছি না।”
মেহেরাজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল।চোখের দৃষ্টিতে খেলে গেল কৌতুকময় রেশ। আরেকটু ঝুঁকে গিয়ে জ্যোতির কানের কাছে ভরাট গলায় ফিসফিসিয়ে শুধাল,
” বলবি তোর দ্বিগুণ চুমুই চাই।স্ত্রী হিসেবে স্বামীর চুম্বনে তোর অধিকার আছে না? ”
আকস্মিক বলা কথাগুলো কানের সামনে বাঁজতেই জ্যোতি ঠোঁটে ঠোঁট চাপল।ভয়ানক অস্বস্তি থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
” অধিকারের বশে স্বামীর চুম্বন তো সকল স্ত্রীই পেতে পারে মেহেরাজ ভাই। অধিকারের বশে সকল স্বামীও সকল স্ত্রীকে চুম্বন দিতে পারে। কিন্তু অধিকার দিয়ে কি আসলে পরিপূর্ণতা আসে শেষ পর্যন্ত ? আসে না।”
মেহেরাজ মাথা উঁচু করে চমৎকার হাসল। হাত বাড়িয়ে হঠাৎ আঁকড়ে ধরল জ্যোতির কোমড়। এক টানে সবটুকু দূরত্ব গুঁছিয়ে নিজের সম্মুখে এনে দাঁড় করাল জ্যোতিকে।ঝুঁকে গিয়ে জ্যোতির কপালে নিজের উষ্ণ ঠোঁটজোড়ার ছোঁয়া দিয়ে বলতে লাগল,
” যেটুকুতে পরিপূর্ণতার প্রাপ্তি ঘটে সেইটুকু অনুভূতির বশেই চুম্বন আঁকছি তোর কপালে..”
কথাটার অর্থ অজানা নয় জ্যোতির কাছে। তাই অর্থটা বুঝতে দেরিও হলো না। মুহুর্তেই বুকের ভেতর অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা টের পেল।লজ্জ্বায় লালাভ রংয়ে আরক্ত হয়ে উঠল তার কৃষ্ণবর্ণীয় মুখ। কানজোড়া উষ্ণ থেকেও উষ্ণ অনুভব হলো। বাক্যটা বলার সময় প্রতিটা শব্দে শব্দে তার কপালে বারংবার যখন মেহেরাজের ঠোঁট ছুঁয়ে গেল বুকের ভেতর তখন বারংবার যেন ঝড় উঠল। পরপরই মেহেরাজ একটা গভীর চুম্বন আঁকল কপালে।সে চুম্বনই যেন মুহুর্তে বুকের ভেতরের সে ঝড় থামিয়ে শীতল করে দিল সর্বাঙ্গ, সর্বত্র। কিয়ৎক্ষন সেভাবেই থেকে পরমুহুর্তেই মেহেরাজ ঠোঁট নামিয়ে ডান গালের লালচে ব্রনের উপরাংশে ঠোঁট ছোঁয়াল। ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
“চুম্বন আঁকছি তোর গালে..”
পরপরই আবারও গভীর চুম্বন দিল ডান গালে। জ্যোতির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল।বুকের ভেতরের হৃদস্পন্দন দ্রুততর ভাবে বাড়ল যেন। নিঃশ্বাসের গতিও ঘন হলো। সেই গতিটা ঘন থেকে ঘনতর করতেই মেহেরাজ ঠোঁট নামিয়ে নিজের ঠোঁট স্থির রাখল জ্যোতির ঠোঁটে।নেশাক্ত জড়ানো গলায় শুধাল,
” সর্বশেষ ঠোঁটে চুম্বন দিলাম। ”
কথাটুকু বলতে দেরি হলেও মেহেরাজের ঠোঁটজোড়া জ্যোতির কোমল ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরতে দেরি করল না।আকস্মিক এহেন কান্ডে জ্যোতির কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত বুঝে উঠল না সে। শুধু টের পেল সম্মুখ পুরুষের মাতাল করা উষ্ণ আবেশ আর উম্মাদময় পুরুষালি অধরের স্পর্শ। টের পেল কোমড়ে শক্ত করে খিঁচে ধরা বলিষ্ঠ হাতের বন্ধন। মুহুর্তেই চোখ বুঝে এল। শ্বাস বন্ধ হয়ে এল। অবশেষে কিয়ৎক্ষন পর শ্বাসরুদ্ধকর সে চুম্বনের স্থায়িত্বের অবসান ঘটল। জ্যোতি আর দাঁড়াতে পারল না। জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতেই দ্রুত প্রস্থান করল সে স্থান ছেড়ে। বুকের ভেতর ভয়ঙ্কর অস্থিরতা ততক্ষনে তান্ডব আরম্ভ করেছে। একছুটে গিয়ে পৌঁছাল মেহুর ঘরে।
.
মেহু আজ সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাল নিজ বাসায়। সামান্তার সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়েই বের হয়েছিল বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে। বহুদিন বান্ধবীদের সঙ্গে একসাথে ঘোরা হয়নি। অবশেষে বান্ধবীদের সাথে রেস্টুরেন্টে যেতে হলো। কোনার দিকে একটা টেবিলে সবাই মিলে বসতেই কয়েক টেবিল পর চোখে পড়ল সুদর্শন সাঈদকে। কালো রংয়ের শার্ট পরনে। দেখতে মারাত্মক সুদর্শন বোধ হলেও পরমুহর্তেই মেহুর মুখটা কালো হয়ে গেল। দৃশ্যমান হলো সাঈদের হাত জড়িয়ে বসে এক আধুনিক, সুন্দরী রমণীকে। রমণীর পরনে ও কালো রংয়ের লেডিস শার্ট আর জিন্স। মেহুর চিনতে দেরি হলো না। মেয়েটাকে সাঈদের সাথে ছবিতে দেখেছে। সাঈদের সোশ্যাল সাইটে বাইরের কোন এক দেশে তোলা ছবিতেই দেখেছিল। মেহুর চোখ টলমল করল মুহুর্তেই।বান্ধবীদের বুঝাল তার বের হওয়াটা জরুরী। অবশেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে দাঁড়াল। পা বাড়িয়ে সাঈদদের টেবিল অতিক্রম করতেই কানে এল মেয়েলি কন্ঠে বলা কথাগুলো,
” ভার্সিটি লাইফে তোমার আর আমার ফিজিক্যাল রিলেশনও ছিল সাঈদ। তুমি ভুলতে পারো না সেসব৷ তুমি আমায় ঠকাচ্ছো সাঈদ বেইবি।”
মেহুর পা থমকে গেল৷ আকস্মিক বলা কথাগুলোতে বুক কেঁপে উঠল তার। কান্নারা এবার দম মানল না। মুহুর্তেই ঝরে পড়ল গাল বেয়ে। পাশ ফিরে সাঈদের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল সাঈদের শক্ত চোয়াল আর রাগান্বিত চাহনী। মেয়েটার হাত ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই চোখে পড়ল মেহুর অশ্রুমিশ্রিত চাহনী। সাঈদ দ্বিতীয়বার মেহুর চোখের দিকে তাকাল না। অন্যপাশে তাকিয়ে উঠে গিয়ে মেহুর সম্মুখীন হয়ে দাঁড়াল।বলল,
” মেহু? কাঁদছো কেন? ”
মেহু সে প্রশ্নের উত্তর দিল না।স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
” মেয়েটা সত্যি বলল সাঈদ ভাইয়া ? সত্যিই আপনাদের শারিরীক সম্পর্ক ছিল? সত্যিই আপনি মেয়েটার শরীর ছুঁয়েছিলেন? ”
সাঈদ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ল। নরম সুরে শুধাল,
“হ্যাঁ, ছুঁয়েছি। ”
মুহুর্তেই জ্বলে উঠল মেহু।জ্বলন্ত ঘৃণায় দগ্ধ হলো তার চাহনী।কিছুটা উঁচু স্বরে বলল,
” আপনি একটা অসহ্যকর লোক সাঈদ ভাইয়া৷ আমি আপনাকে ঘৃণা করি। শুধু ঘৃণা নয়, চরম।চরম ঘৃণা করি। ”
সাঈদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। বলল,
” ঘৃণা তো ভালোবাসার মানুষকেই করা যায়। এতো কেন ভালোবাসো আমায় প্রিয়? ”
মেহু দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
” আর বাসি না। আর ভালোবাসা নেই আপনার জন্য। ”
” মিথ্যে বলছো। ”
” একটুও না। আজকের পর থেকে আমার মধ্যে আপনার জন্য কোন অনুভূতি থাকবে না। কোন অনুভূতিই না। ”
সাঈদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। বলল,
” দেখা যাক তবে। ”
মেহু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। বলল,
” দেখবেন, খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করবেন তা। আমি কোন চরিত্রহীন লোককে ভালোবাসতে পারি না। আপনি সত্যিই চরিত্রহীন, প্লে বয়, মেয়েদের শরীরে আসক্ত পুরুষ। আমার আপনাকে চাই না।”
কথাগুলো বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেল মেহু। অশ্রুতে চোখজোড়া ভিজে লাল রক্তিম হয়ে উঠেছে। এই অল্পক্ষনেই কেমন বিধ্বস্ত রূপ ধারণ করল তার চোখ মুখ।
# চলবে…
#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_৩৪
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
চুলায় তরকারির কড়াই। জ্যোতি মনোযোগ দিয়ে সেদিক পানেই খেয়াল করল।বাসায় মেহু, মেহেরাজ কেউ না থাকাতে রাতের রান্নাটা সেই করার সিদ্ধান্ত নিল। হঠাৎই কলিং বেল বাঁজায় কান সচেতন হলো৷ তিন চারবার বাঁজতেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে দরজা খুলতেই মেহেরাজকে দেখতে পেল। মেহেরাজের মুখে প্রথম দফায় হাসির রেশ দেখা গেলেও পরের দফায় হঠাৎই মুখটা গম্ভীর দেখাল।জ্যোতি একনজর চাইল। সকালের চুম্বনের কথা মনে উঠতেই দ্রুত পা সরিয়ে প্রস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিল। ঠিক তখনই মেহেরাজ বাসায় ডুকে দরজা লাগাল। চাপা স্বরে বলল,
” এভাবে আর দরজা খুলতে আসবি না। মাথায় থাকবে? ”
জ্যোতি বুঝল না কথার অর্থ। পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে নিতেই মেহেরাজ তাকাল। আবার বলল,
” যদি আমার জায়গায় অন্য কোন পুরুষ থাকত? এভাবে আসবি না দরজা খুলতে। ”
জ্যোতি এবারেও বুঝল না। প্রশ্নটা ছুড়েই দিল এবারে,
” কিভাবে এসেছি? ”
মেহেরাজ থমথমে স্বরে উত্তর দিল,
” কিভাবে এসেছিস জানিস না? ”
জ্যোতি স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
” না বললে বুঝব কি করে? ”
মেহেরাজ এবারে গলা ঝাড়ল হালকা। শাসানি সুরে বলল,
” ওড়না কোথায় তোর?”
আকস্মিক প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল জ্যোতি। নিজের দিকে তাকিয়েই বুঝতে বাকি রইল না যে তার বুকে ওড়না নেই। রান্নাঘরে কাজের ফাঁকে গরম লাগছিল বলই একপাশে খুলে রেখেছিল। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে এতোটা তাড়াহুড়োয় ছুটে এসেছে যে খেয়ালই করা হয় নি গায়ে ওড়না না থাকার বিষয়টা। মুখ কালো করল জ্যোতি।অস্বস্তিতে হাত পায়ের তালু ঘেমে উঠল। এভাবে ওড়না হীন সম্মুখ পুরুষটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই দ্রুত পা বাড়িয়ে গিয়ে থামল রান্নাঘরে। একপাশে রাখা ওড়নাটা তাড়াতাড়ি বুকে জড়িয়ে মাথায় ঘোমটা টানল৷ আর একবারও মেহেরাজের সামনে না গিয়ে ওখানেই ঠাঁই বসে রইল। ছিঃছিঃ! কি লজ্জ্বাকর পরিস্থিতি।মেহেরাজ কি এটা জ্যোতির ইচ্ছাকৃত কাজকর্ম ভাবছে? কথাটা ভাবতেই চোখ বুঝে নিল জ্যোতি।অনেকক্ষন সেভাবেই বসে বারকয়েক শ্বাস টানল৷ নিজেকে স্বাভাবিক করে চুলায় ভাত বসাল মুহুর্তে।রান্নাঘরে আরে গোছগাছ সহ টুকটাক কাজে ব্যস্ত হলো। তার কিছুক্ষন পরই বুক টানটান করে টাউজারের পকেটে হাত গুঁটিয়ে হাজির হলো মেহেরাজ। কিঞ্চিৎ গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
” কি আশ্চর্য! তুই কি আজ সারারাত রান্নাঘরেই কাঁটিয়ে দিবি নাকি জ্যোতি? ”
জ্যোতির অস্বস্তি আবার বাড়ল। অস্ফুট স্বরে উত্তর এল,
” হ্ হু?”
মেহেরাজের মেজাজ কিঞ্চিৎ চটে গেল। এতক্ষন যাবৎ রুমে বসে থেকেএ জ্যোতির উপস্থিতি না পেয়ে এখানে এসেছিল। এখানে এসে প্রশ্ন শুধানোর পর ন শোনার ভান করে হু শোনাটা ব্যাপক বিরক্তিকর। দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
” হু কি? তোর কানে সমস্যা আছে? ”
জ্যোতি গলা ঝেড়ে বলল,
” না,রান্না করছিলাম তো।তাই।”
মেহেরাজ ফের ত্যাড়া স্বরে প্রশ্ন শুধাল,
” রান্না করতে কে বলেছে?”
জ্যোতি তাকাল৷স্বাভাবিক স্বরে বলল,
” কেউ বলতে হবে কেন? এটা তো আমার দায়িত্ব মেহেরাজ ভাই। তাছাড়া এতক্ষনে বাইরে থেকে ফিরে আপনি রান্না করতেন? ”
মেহেরাজ এবারে হেসে দিল আড়ালে৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে জ্যোতির একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ঝুঁকে গিয়ে দূরত্ব গুঁছাতে গুঁছাতে বলল,
” বাহ! পার্ফেক্ট বউ বউ ভাব দেখাচ্ছিস নাকি তুই?বউয়ের দায়িত্ব ও পালন করছিস? ”
জ্যোতি উত্তর দিতে পারল না। শুধু তাকিয়ে থাকল স্পষ্টভাবে। মেহেরাজ হঠাৎ চোখ টিপল। দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জ্যোতিকে বাহুতে আঁকড়ে নিয়ে বলল,
” সংসার করবি আমার সাথে? একদম বাঙ্গালি বউদের মতো শাড়ি পরে, রান্না করে, বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে সংসার করবি নাকি?তোর চলন ফেরন তো সুবিধার লাগছে না রে জ্যোতি। অন্য দৃষ্টিতে দেখছিস নাকি আমায়?”
জ্যোতি একইভাবে চেয়ে থাকল। বলল,
“জ্ জ্বী? ”
মেহেরাজ আরেকটু ঝুঁকল। মুখটা আরো একটু কাছে নিয়ে জ্যোতির মুখে ফু দিল। বলল,
” উহ, জ্যোতি। বুঝিস না কিছুই? ”
জ্যোতি অবুঝ নয়৷ সবটুকু বুঝেও না বুঝার ভান ধরে শুকনো ঢোক গিলল। প্রসঙ্গ পাল্টাতে নিজেকে স্বাভাবিক করেই বলে উঠল,
“আপনার কিছু চাই মেহেরাজ ভাই? কফি করে আনব? ”
” না, কফি না। ”
” তাহলে? ”
মেহেরাজ ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। আরো খানিকটা ঝুঁকে জ্যোতির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে শুধাল,
” এই মুহুর্তে তোকে চাইছি। দশ মিনিট সময় দিচ্ছি, একটা সুন্দর শাড়ি পরে আমার সামনে হাজির হবি। ”
অস্ফুট স্বরে কথা আসল,
” হ্ হু?”
মেহেরাজ জ্যোতিকে ছেড়ে দিল হঠাৎ। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে থমথমে সুরে বলল,
” মেজাজ খারাপ হয় তোর না বুঝার ভান ধরা এই হু শব্দটা শুনলে জ্যোতি। তবে যেটা বলেছি তার অন্যথা হলে খুব খারাপ হবে। বলে রাখলাম।”
জ্যোতি মৃদু আওয়াজে বলল,
” আমি শাড়ি তেমন পরিনি কখনো।সে যে আরমান ভাইয়ের বিয়েতে শাড়ি পরেছিলাম, তাও অন্যরা পরিয়ে দিয়েছিল। ”
ভ্রু নাচিয়ে শুধাল মেহেরাজ,
” মানে শাড়ি পরতে পারিস না? ”
” না।”
মেহেরাজ শাড়ি পরাতে পারে না। তবুও বাঁকা হেসে উত্তরে বলল,
” ঠিক আছে, আমি পরিয়ে দিব শাড়ি। কুঁচি করা হতে,কুঁচি গুঁজে দেওয়া, আঁচল ঠিক করা সব করে দিব। চল। ”
জ্যোতির কান হঠাৎ উষ্ণ হয়ে উঠল লজ্জ্বায় অস্বস্তিতে।ইতস্থত স্বরে বলে উঠল দ্রুত,
” না, থাক। আমি পরতে পারব মেহেরাজ ভাই। ”
মেহেরাজ হাসল। একহাতে জ্যোতির কোমল গালে হাত রেখে আলতো ছুুঁয়ে বলল,
” গুড গার্ল। কথাটা একটু আগে বলে দিলেই তো হয়ে যেত।তাই না? ”
জ্যোতি আর কিছু বলল না। চুপচাপ পা বাড়িয়ে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নিতেই মেহেরাজ ফের বলে উঠল,
” শোন, এক কাপ কফি চাই।শাড়ি পরে আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে রাখবি। আমি বাইরে থেকে আসছি কিছুক্ষনের মাঝে।দরজা বাইরে থেকেই লক করে যাচ্ছি। হুহ?”
জ্যোতি কিছু বলল না। শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াল। মেহেরাজ হাসল কিঞ্চিৎ। তারপর আপন মনে বেরিয়ে গেল পকেটে হাক গুঁজে হাঁটতে হাঁটতে।
.
মেহেরাজের হাতে লাল টকটকে গোলাপগুচ্ছ। কাছাকাছি ফুলের দোকানে এই গোলাপের গুচ্ছই পাওয়া গেল। তা নিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে এল। একবার রুমে গিয়ে ঘুরফাঁক খেয়ে কোথাও জ্যোতিকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকাল। দু পা বাড়িয়ে এবার রান্নাঘরের সম্মুখে দাঁড়াল। মুহুর্তেই চোখে পড়ল কৃষ্ণবর্ণীয় জ্যোতির শাড়ি পরিহিত রূপ। লাল টকটকে শাড়িতে সত্যিই অপরূপ বোধ হলো।যেন রাঙ্গা ঘরোনী তার। আঁচলের এক কোণা কোমড়ে গুঁজে আছে সে। চুলগুলো খোঁপা করা। চুলায় অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে কোনকিছু করতে ব্যস্ত সে। মেহেরাজ মনে মনে হাসল কিঞ্চিৎ৷ অপলক তাকিয়ে থেকে পা বাড়াল ধীরে ধীরে। তারপর একদম জ্যোতির পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেই নিজের পুরুষালি বুকটায় গিয়ে ঠেকল জ্যোতির পিঠ।সঙ্গে সঙ্গে মেহেরাজ তার বলিষ্ঠ হাতজোড়া বাড়িয়ে জড়িয়ে নিল সম্মুখের রমণীর শরীর।শাড়ির আড়ালে ডান হাতটা আঁকড়ে ধরল জ্যোতির মসৃন পেটের একাংশ। গভীরভাবে পুরু ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া আঁকল জ্যোতির ঘাড়ে।ফলস্বরূপ অদৃশ্য কম্পনে কেঁপে কেঁপে উঠল জ্যোতির শরীর। চুলায় বসানো কফিটা মগে ডালতে গিয়েও পারল না সে। অস্ফুট স্বরে বলল,
” মে হে ্ রাজ ভাই!”
মেহেরাজ সে কাঁপা স্বরকে পাত্তা দিল না। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ঠোঁটজোড়া একইভাবেই জ্যোতির ঘাড়ে ছুঁইয়ে স্বাভাবিকভাবে বলল,
” শুনছি বলতে পারিস। ”
” কাজ করছি মেহেরাজ ভাই। ”
মেহেরাজ এবারে আমলে নিল না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শুধাল,
” হ্যাঁ তো? আমি কি অকাজ করছি এখানে?”
জ্যোতি অস্বস্তিতি জড়োসড়ো হয়ে চুপ থাকল কিয়ৎক্ষন। জোরে জোরর বারকয়েক শ্বাস টেনে পরমুহুর্তে বলল,
” কফি বানাচ্ছি।ছেড়ে দিন,অস্বস্তি হচ্ছে।”
মেহেরাজ ত্যাড়া সুরে উত্তর দিল,
” হোক অস্বস্তি, ছাড়ব না। ”
জ্যোতি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকল।অস্বস্তিতে পায়ের নখ দিয়ে ফ্লোরটা ঘষে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরমুহুর্তেই বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,
” আপনার না কফি চাই? ”
মেহেরাজ বাঁকা হাসল। ফিচেল আর নেশালো কন্ঠে শুধাল,
” এখন অন্যকিছু চাই। ”
” কি?”
মেহেরাজ এবারে চুপ হয়ে গেল। মনে মনে কেবল হাসল। কি চাই তা মুখে বললে সম্মুখ নারীটি কিভাবে নিবে? লজ্জ্বায় কুঁকড়ে মরবে? নাকি অস্বস্তির চরম শীর্ষে পৌঁছিয়ে মুখ নত করবে?ভেবেই উত্তরটা আড়াল করল। জ্যোতি ফের আবার বলল,
” ক্ষিধে পেয়েছে? খাবার বাড়ব মেহেরাজ ভাই? ”
মেহেরাজের দাঁতে দাঁত চাপল। বলল,
” বলেছি আমি?”
জ্যোতি কি বলবে বুঝে উঠল না। অপরদিকে ঠিক তখনই মেহেরাজের ফোনটা বেঁজে উঠল। মুহুর্তেই জ্যোতিকে ছেড়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করল মেহেরাজ। মেহুর নাম্বার দেখে দ্রুত কল রিসভিড করতেই ওপাশ থেকে মেহু বলে উঠল দ্রুত,
” আমি ভেবে দেখেছি ভাইয়া। সে ছেলের বিয়ের প্রস্তাবে আমি রাজি।তুমি যদি চাও বিয়েতে এগোতে পারো।”
#চলবে…