#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_২৯
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
মেহেরাজের পরনে শুভ্র রাঙ্গা শার্ট,টাই আর কালো প্যান্ট।ফর্মাল ড্রেসাপে লম্বা চওড়া শরীরটা আরো সুদর্শন বোধ হলো। জ্যোতি এক নজর তাকিয়েই চোখ ফেরালো।ঘড়ির কাঁটা তখন নয়টার ঘরে। ছোট্ট শ্বাস ফেলে অগোছাল চুল গুলো নিজের হাতে করে খোঁপা করতে নিতেই মেহেরাজ এসে উপস্থিত হলো সম্মুখে। হুট করেই বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে আটকে দিল জ্যোতির হাত।অগোছাল এলোমেলো চুলগুলো আগের ন্যায় খুলে দিয়ে গভীর চাহনীতে তাকাল জ্যোতির মুখপানে। জ্যোতির মুখ শুকনো।গালের ডানপাশে ঘষে যাওয়া দাগ কালচে হয়েছে।কপালের কোণায় ব্যান্ডেজের চিহ্ন।মুখে সদ্য ফুলে উঠা কয়েকটা লালচে ব্রনের অস্তিত্ব।চিকন ঠোঁট জোড়ায় ফোলা ভাবটা কমেছে।ঠোঁটের কোণায় আঘাতের চিহ্নটা শুঁকাতে শুরু করেছে।মেহেরাজ কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল পুরো মুখ, মুখের ক্ষত আর ডাগর চোখজোড়া। জ্যোতি অস্বস্তিতে গলা ঝাড়ল এবার। হালকা স্বরে বলল,
” মেহেরাজ ভাই, কোন দরকার আছে কি?”
মেহেরাজ দৃষ্টি সরাল না। বুকে হাতজোড়া গুঁজে নিয়ে একইভাবে তাকিয়েই গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
” হ্যাঁ, আছে।”
” কি দরকার?”
আগের ন্যায় গম্ভীর স্বরে উত্তর আসল,
” বলতে ইচ্ছুক নই তোকে।”
এবারের কথাটায় জ্যোতি ভ্রু কুঁচকে নিল। মুখ মলিন করে থমথমে চাহনী নিয়ে স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন মেহেরাজ ভাই?”
মেহেরাজ ভ্রু উঁচু করল। চাহনীতে স্পষ্ট বোঝা গেল প্রশ্নটা তার পছন্দ হয়নি। কপাল কুঁচকে নিয়ে বিরক্তির সহিক বলে উঠল,
” তাকাচ্ছি তো আমি,তুই তো তাকাস নি। তোর অসুবিধা কোথায় তাই তো বুঝলাম না।”
জ্যোতির স্থির আর স্পষ্টভাবে তাকাল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সোজাসুজি উত্তরে বলে উঠল,
” অসুবিধাটা হলো আপনি আমারই দিকে তাকিয়ে আছেন।”
মেহেরাজের কপালের ভাজ ঘন হলো। ভ্রু নাচিয়ে শুধাল,
” তো? তাকিয়েছি কেবল, কিছু তো করে ফেলিনি যে অসুবিধা হবে।”
” তাকাবেন কেন? ”
মেহেরাজ দাঁতে দাঁত চাপল। মুখ টানটান করে দৃঢ় গলায় উত্তর দিল,
” তাকাব, তোর সমস্যা?”
” এভাবে একটা মেয়ের প্রতি একটা পুরুষ মানুষের নজর নিশ্চয় অস্বস্তির কারণ।আপনার উচিত নজর সরানো। ”
” তুই তো আর যেকোন একটা মেয়ে নোস। সাক্ষাৎ মেহেরাজের বউ বলেই মেহেরাজ তোর দিকে তাকিয়েছে। এবার বল অনুচিত হবে?”
মেহেরাজের কন্ঠে কিছু ছিল নাকি কথাগুলোতে বুঝে উঠল না জ্যোতি। তবে বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠল তার। ঠোঁট ভিজিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
“অযথা কথা বাড়ছে। কিছু কি বলবেন মেহেরাজ ভাই?”
মেহেরাজ তাকাল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে অন্যমনস্ক হয়েই বলল,
” না, কিছু একটা করব ভাবছি।”
জ্যোতি বুঝল না কি করবে। তাই ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি করবেন?”
মেহেরাজ একদৃষ্টিতে জ্যোতির ঠোঁটে তাকিয়ে থাকল।আকস্মিক খাটের একপাশে বসে ডান হাতটা ছুুঁয়ে দিল জ্যোতির কোমল ঠোঁটের কোণে। যেখানাটায় সেদনিকার রাস্তার খসখসে জমিতে লাঘা আঘাতটা মাত্রই শুঁকাতে আরম্ভ করেছে।মেহেরাজ আঙ্গুল ছুঁয়ে বুক টানটান করে মুহুর্তেই এক মিথ্যে বলে বসল দক্ষভাবে,
” তোর ঠোঁটটা এখনো ফুলে আছে।খেয়াল করিস নি তুই?”
জ্যোতির ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল।আকস্মিক ঠোঁটে মেহেরাজের হাতের ছোঁয়া পেয়ে অবাক হলেও ঠোঁট ফোলার কথাটা মাথায় আসতে স্বাভাবিক ভাবেই নিল । সহসা হাত গেল নিজের ঠোঁটের কাছে।মনে হলো না ঠোঁট অতোটা ফোলা। তবুও মেহেরাজ মিথ্যে বলবে না ভেবে বিশ্বাস করে নিল। বলে উঠল,
” ফোলা তো কমে যাওয়ার কথা। দুদিন হয়ে গেল, এখনও ফোলা কমল না?”
মেহেরাজ মনে মনে চাপা হাসল। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আকস্মিক জ্যোতির কোমল ঠোঁটজোড়ায় বুলিয়ে মুখ এগোলো। মুহুর্তেই নিজের পুরু ওষ্ঠদ্বয় আলতো করে ছুঁয়ে দিল জ্যোতির ঠোঁটজোড়ায়। জড়ানো গলায় মৃদু আওয়াজে ঠোঁট নাড়িয়ে বলতে লাগল,
” কেঁটেছে না রাস্তার খসখসে জমিতে?তাই কমে নি।এবার আমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিল তোর ঠোঁট। ফোলা কমে যাবে। ”
মেহেরাজ কথাগুলো বলার সময় বারংবার তার পুরু ঠোঁটের ছোঁয়া পড়ল জ্যোতির চিকন,কোমল ঠোঁটে।উষ্ণ নিঃশ্বাস উপচে পড়ল জ্যোতির মুখপানে।জ্যোতি এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হলো। পরমুহুর্তেই অনুভব করল শরীর জুড়ে তীব্র শিহরণ। যার দরুণ মুহুর্তেই কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ৷ কিঞ্চিৎ কাঁপতে লাগল নরম ঠোঁটজোড়া ও। স্পষ্টভাবে কথা বলা মেয়েটা স্পষ্টভাবে কথা বলা তো দূর, প্রথম পুরুষালি ওষ্ঠের উষ্ণ ছোঁয়ায় স্পষ্টভাবে তাকানোও দায় হয়ে পড়ল। তুমুল অস্বস্তিতে এবার হাত পায়ের আঙ্গুল খিচে এল। বার কয়েক শ্বাস টেনে কাঁপা স্বরে বলতে লাগল,
” ক্ কি.. ”
বাকিটুকু বলতে পারল না। মেহেরাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসেই ফিসফিসিয়ে বলল,
” প্লিজ জ্যোতি, চুপ কর।মুহুর্তটাকে তোর উল্টাটাল্টা লজিক দিয়ে থামাবি না বললাম।”
এবারও ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ হলো কয়েকবার। জ্যোতি থম মেরে গেল। ঘনঘন শ্বাস টেনে ক্ষীন চাহনিতে মেহেরাজের দিকে তাকাতেই মেহেরাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ঠোঁট ছোঁয়াল ডান গালের কালচে আঘাতের জায়গাটায়। ফিচেল স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
” শখের পুরুষের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায় নারীর আঘাত এক মুহুর্তেই সারে। তোর আঘাতগুলোও সেরে উঠবে।খুব শীঘ্রই।তখন আর ভেতর, বাহিরে কোন আঘাতই অবশিষ্ট থাকবে না। না মানে,এই যে ছুঁয়ে দিলাম তোর আঘাত গুলো।দেখবি খুব শীঘ্রই সেরে গেছে।”
জ্যোতির চাহনী তখনো স্থির।লজ্জ্বায় নাকি অস্বস্তিতে তা জানা না থাকলেও এটুকু টের পেল দুই কান উষ্ণ অনুভব হচ্ছে৷ বুকের ভেতর তোলপাড় কম্পন আরম্ভ হয়েছে।অস্থিরতায় নিঃশ্বাস ঘন হচ্ছে। যেন সবকিছুই জড়িয়ে যাচ্ছে। সবকিছুই আটকে যাচ্ছে। বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলতেই মেহেরাজ ঠোঁট সরাল। জ্যোতির এমন চুপসে যাওয়া অবস্থা দেখেই এক পেশে হাসল। পরমুহুর্তেই মুখচোখ গম্ভীর করে বলে উঠলল,
” রোমান্টিকতা নেই বলে হাসফাঁস করছিলি বান্ধবীদের সামনে, অথচ রোমান্টিকতা দেখাতেও এমন ভাবে হাসফাঁস করছিস কেন?কিছু করেছি আমি?শুধু তোর আঘাত সারার জন্য ঠোঁটের স্পর্শ দিয়েছি, চুমুও তো খাইনি৷ ”
কথাগুলো মেহেরাজ এতোটাই গম্ভীর স্বরে বলল যেন সে বাধ্য হয়েই ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। আসলেই কি শখের পুরুষের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায় নারীর আঘাত সারে? মেহেরাজ কি শুধু এই বাক্যটা মানতেই এই কাজটা করল? জ্যোতি বুঝে উঠল না। মেহেরাজ তখনও বসা ছেড়ে উঠল না।কানের কাছে মুখ নিয়ে পুনরায় ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
” অল্প রোমান্টিকতা দেখাচ্ছি বলে কষ্ট পাস না আবার। তুই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে পুরোপুরি রোমান্টক হয়ে যাব। ”
কথাগুলো বলেই বাঁকা হেসে চোখ টিপল মেহেরাজ। সটান উঠে দাঁড়িয়ে বুক টানটান করে গম্ভীর চাহনী করে এমন ভাবে পা বাড়াল যে একটু আগে কিছুই হয়নি।যেন একটু আগে কিছুই ঘটেনি।
.
মেহু, নাবিলা, নাফিসা সবাই মিলেই সন্ধ্যার দিকে মেহেরাজের রুমে জ্যোতির সাথে আসর জমাল। সারাদিনে খাওয়া, ওয়াশরুম যাওয়া হতে বিভিন্ন কাজেই এই তিনজন সবরকম ভাবে সাহায্য করে গেছে জ্যোতিকে। অবশেষে চারজনে মিলেই আড্ডা জমাল। সে আড্ডার সময় এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা করে অনেকটা সময় কেঁটে গেল৷আকস্মিক নাবিলা হেসে বলে উঠল,
” জ্যোতি?দুটো ইন্ট্রোভার্টের সংসার কেমন হয়? না মানে ইন্ট্রোভার্টরা কি নিজেদের একসাথে কাঁটানো মুহুর্ত গুলো ও এমন বোরিং ভাবেই গম্ভীর হয়ে কাঁটায়? কি বিরক্তিকর!এরা তো বোধহয় সবকিছুতেই গম্ভীর থাকে। যেমনটা তুই আর রাজ ভাইয়া।দুইজনই কেমন জানি ফাংসে! ”
কথাগুলো একটানে বলেই থামল নাবিলা। নাফিসা আর মেহু হাসল। নাবিলা পরমুহুর্তেই আবার কি ভেবে অতি উৎসাহী নজর ফেলে ভ্রু উঁচু করে শুধাল,
” আচ্ছা বাই এনি চান্স ইন্ট্রোভার্টরা প্রেম করতে পারে তো? তোদের মাঝে আসলে প্রেম ট্রেম কিছু ঘটেছে জ্যোতি? আমার তো রাজ ভাইয়াকে দেখে কিশোরীকাল থেকেই মনে হতো উনার বউ উনার প্রেমে পড়ে চুমু খেতে গেলেও রাজ ভাইয়া গম্ভীর গলায় আদেশ করে বলবে যে প্রেমে পড়া বারণ!এত বেশি গম্ভীর রাজ ভাইয়া।”
কথাগুলো শুনে হঠাৎ জ্যোতির মনে পড়ল সকালের ঘটনা। মেহেরাজকে উপর দিক দিয়ে যতোটা গম্ভীর দেখায় আসলেই কি অতোটা গম্ভীর? যতোটা প্রেমিক সত্ত্বা বিহীন বোধ হয় অতোটায় কি প্রেমিক সত্ত্বা বিহীন সে?নিশ্চয় নয়। যদি প্রেমিক সত্ত্বা তার মাঝে নাই থাকত তবে নিশ্চয় এতগুলো বছর সামান্তার সাথে প্রেম টিকত না তার।সামান্তা নামক রমণীটা পাগলের মতে আচরণ করত না এই যুবকের জন্য।নাবিলা ফের আবারও বলল,
” রাজ ভাইয়া আর সাঈদ ভাইয়া দুজনই বন্ধু। অথচ দুইজন দুই মেরুর। একজন ভীষণ প্রেমিক মানুষ, অন্যজন একদম প্রেমবিদ্বেষী। এদিক থেকে সাঈদ ভাইয়া দারুণ মানুষ কিন্তু।”
মেহু জ্বলে উঠল মুহুর্তেই। শুধাল,
” তুই কি করে বুঝলি সাঈদ ভাইয়া প্রেমিক মানুষ? প্রেম হয়েছে তোর উনার সাথে?”
নাবিলা ঠোঁট টিপে হাসল। বলল,
” উহ! কি যে বলো, উনার সাথে প্রেম হওয়া লাগে নাকি?উনার সাথে তো আমার সে জম্মকাল থেকেই প্রেম। ”
মেহু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,
” বাহ! তো এতকাল প্রেম না করে বিয়েটা করে নিলেই তো পারিস। ”
নাবিলা হাসল।চোখ টিপে বলল,
” উহ আপু,কি যে বলো। আমি এসব বিয়ে টিয়ে তে নেই।তবে পৃথিবীর সব প্রেমিক পুরুষেরই প্রেমে পড়তে রাজি আছি। আর সাঈদ ভাইয়া তো সেখানে সাক্ষাৎ প্রণয়পুরুষ। প্রেমে না পড়ে পারি?একদম পিঁছলে পড়ে গিয়েছি।”
নাফিসাও সে সুরে তাল মিলিয়ে বলে উঠল,
” সত্যিই সাঈদ ভাইয়া মানেই ভালোবাসা। আমার সাথে সাঈদ ভাইয়ার বয়সের পার্থক্য আছে। তবে প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স ডাজ’ন্ট ম্যাটার। তাই না মেহু আপু?”
মুহুর্তেই নাবিলা ক্ষেপে উঠল। নাফিসা, নাবিলা দুইজনই মুহুর্তে এক পুরুষ নিয়ে ঝগড়া বাঁধাল। মেহুর বুকের ভেতর জ্বলে উঠল হঠাৎ। মুখ হয়ে উঠল থমথমে। কেন সব মেয়েরা তার জন্যই পাগল হবে? কেন সবাই তাকে চাইবে?মেয়েদের সাথে এতোটা গভীরভাবে মেশারও কি প্রয়োজন? মুখ থমথমে করে আর বসে না থেকে নিজের রুমে গিয়ে গা এলিয়ে দিল মেহু। পরমুহুর্তেই কি বুঝে সাঈদকে কল করল। কল রিসিভড হতেই ঝাঝালো স্বরে বলে উঠল,
” আপনাকে আমার সহ্য হয় না সাঈদ ভাইয়া। জাস্ট হেইট ইউ।”
সাঈদের বোধ হয় আকস্মিক কথাটা বুঝে উঠতে সময় লাগল। পরমুহুর্তেই বলল,
” আমি আবার কি করেছি মেহু?এভাবে বউয়ের মতো রাগ দেখাচ্ছো কেন?পরে বউ ভেবে কিছু বলে ফেললে বা করে ফেলল তো দোষটা আমারই হবে।”
মেহুর রাগ বাড়ল। বলল,
” কল রাখুন, আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই।”
সাঈদ বোধহয় হাসল। বলল,
” কল কিন্তু তুমিও রাখতে পারো।”
” এসব কেন পাঠিয়েছেন আমায়? চিরকুটে কি লিখেছেন? আমি বলেছি পাঠাতে?এসব করেই মেয়েদের পটিয়ে নেন তাই না? ”
সাঈদ হাসল৷ ফিচেল স্বরে বলে উঠল,
” তুমি পটেছে কিনা তাই বলো প্রিয়। ”
মেহু দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
“আমি আপনার পেছনে ঘুরঘুর করা সেসব মেয়েদের পর্যায়ে পড়ি না। আপনি একটা জঘন্য মানুষ সাঈদ ভাইয়া। জঘন্য! ”
সাঈদ প্রশ্ন ছুড়ল,
” কেন?”
” আপনি সবসময় মেয়েদের সাথেই ঝুলে থাকেন। অসহ্যকর একটা লোক আপনি। ”
সাঈদ পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,
” তুমি জ্বেলাস?”
মেহু থমথমে কন্ঠে উত্তর দিল,
” না, একদমই নয়।তবে আপনি চতুর,চরিত্রহীন একটা মানুষ। মেয়েদের মনে জায়গা করতে দক্ষ।আমাদের নাফিসার বয়স কত?ওকে পর্যন্ত আপনি ছাড়লেন না?”
সাঈদ চুপসে যাওয়া কন্ঠে অতি নিরীহ ভাবে বলে উঠল,
” কসম মেহু, আমি নাফিসাকে ধরিওনি, ছাড়া তো দূর। তুমি উল্টাপাল্টা দোষ চাপাতে পারো এই নিরীহ মানুষটার উপর। ”
মেহু এবার হুট করেই কল রাখল। মোবাইলটা বিছানার এককোণে ফেলে রেখেই চোখ বুঝল। ওপাশ থেকে বারংবার কল আসল। মোবাইলের আওয়াজ হলো। কিন্তু মেহু কল তুলল না।কল তোলার নুন্যতম ইচ্ছাও হলো ন।
#চলবে…
#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_৩০
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
মেহেরাজ বাসায় ফিরল একেবারে রাত আটটায়। ঘর্মাক্ত মুখ, আর ক্লান্ত চাহনী। একনজর জ্যোতির দিকে তাকিয়েই ওয়াশরুমে পা বাড়াল। মুখে চোখে পানি দিয়ে ফের ফিরেও এল কিয়ৎক্ষনের মধ্যে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুঁছে জ্যোতির পাশে বসে হঠাৎ কপালে আসা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল। ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল,
এখন কি অবস্থা পায়ের?ঠিকমতো ঔষুধ খেয়েছিস?”
জ্যোতি চোখ তুলে একবার মেহেরাজের দিকে চাইল। একই বিছানায় দিনরাত বসে থেকে কোমড় ব্যাথা করছে এখন।শরীর কেমন যেন ঝিমঝিম করছে।নিরস গলায় উত্তর দিল,
” খেয়েছি।”
মেহেরাজ সূক্ষ্ম চাহনি ফেলল। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে উঠল,
” তোর ঠোঁটের ফোলা কমে এসেছে জ্যোতি। দেখলি আমার ঠোঁটের ছোঁয়া কতোটা কার্যকর!এবার থেকে আঘাত পেলেই বলবি। সব আঘাত ঠোঁটের ছোঁয়ায় সেরে যাবে।”
আকস্মিক কথাটায় জ্যোতি অস্বস্তিতে পড়ল। অপ্রস্তুত হয়ে গলা ঝাড়ল কিঞ্চিৎ।নড়েচড়ে বসে বার কয়েক ঢোকও গিলল। তারপর ঝিমঝিম করা মাথা আর কোমড় ব্যাথা নিয়ে প্রসঙ্গ বদলাতে বলে উঠল,
” আমার এইখানে এই বাসায় পড়ে থাকতে ভালো লাগছে না মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ ভ্রু উঁচু করল।বলল,
” বাসাটা তো তুই পছন্দ করেছিলি।এখন আর ভাল্লাগছে না?”
এই বাসাটা যে সে আর মেহেরাজ মিলে যে বাসাটা দেখে গিয়েছিল সে বাসাটাই তা জ্যোতি জানে। মেহু এই নিয়ে অনেক কিছু বলেছেও। মেহেরাজ নাকি তার সাথে সংসার করার জন্য এতদূর বাসা নিয়েছে, এতদূরে ছুটে এসেছে। আসলেই কি সত্য এই কথাগুলো? সত্য হলেও সংসার করাও কি মেহেরাজের কাছে কেবলই দায়িত্ব?আজকে সকালের আকস্মিক উদ্ভট কাজগুলোও কি কেবলই দায়িত্ব? মন বলছে এসব শুধুই দায়িত্ব নয়। তবুও দায়িত্বের উর্ধ্বে গিয়েও কিছু ভাবতে সংশয় হলো।আসলেই কি এতগুলো দিনে সত্যিই কিছু একটা তৈরি হয়েছে তাদের মাঝে?সত্যিই মেহেরাজের মনে এটুকু হলেও জায়গা হয়েছে তার?শুকনো ঢোক গিলল জ্যোতি। মৃদু আওয়াজ তুলে বলে উঠল,
” এভাবে সারাক্ষন শুয়ে বসে থাকাটা কেমন জানি। আপনাদের ঝামেলায় ফেলে দিলাম শুধু শুধু ।”
মেহেরাজের মুখের উৎফুল্ল ভাব হঠাৎ উধাও হলো।গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
” কি বলতে চাইছিস খুলে বল।”
জ্যোতি ইতস্থত করে মৃদু আওয়াজে বলে উঠল,
” আমার পা ঠিক হতে বোধহয় বহু সময়। এতকাল এভাবে আপনার সাথে একঘরে থাকাটা অস্বস্তির নয়?তার উপর মেহু আপু আর আপনাকেও তো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।”
মেহেরাজ বুকে হাত গুঁজে টানটান গলায় ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
” তো?তুই কি চাইছিস? ”
প্রশ্নটায় রাগ ছিল। বিনিময়ে জ্যোতি উত্তর দিল না।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে স্পষ্টস্বরে বলল,
” মেহেরাজ ভাই? কিছু কথার উত্তর দিবেন আমায়? ”
মেহেরাজ আগের ন্যায় টানটান স্বরে উত্তর দিল,
” বলে ফেল।”
জ্যোতি বলতে লাগল,
” নিজ শহর ছেড়ে এতদূর কেন আসলেন? নিজের বাসা থাকতে এতদূর এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন কেন? আর সেদিন আমায় মিথ্যেই বা বললেন কেন?আপনি তো বলেছিলেন আপনার কোন এক বন্ধুর জন্য বাসা খুঁজছেন। তাই না?”
মেহেরাজের মুখের রাগ রাগ ভাব বোধ হয় কমে এল। তবুও গম্ভীর ভাব কমল না। শীতল গলায় বলল,
” প্রশ্ন গুলোর উত্তর তোর কাছেও থাকার কথা।তুই তো এত বোকা নোস যে উত্তরগুলো অজানা থাকবে।ভেবে দেখ, পেয়ে যাবি উত্তর।”
জ্যোতি ফের স্পষ্টস্বরে বলে উঠল,
” আমি আপনার থেকে জানতে চাইছি।”
” কি?”
” এই শহরে আসার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?”
মেহেরাজ চুপ থাকল কিয়ৎক্ষন। তারপর ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। বলল,
” শহরটা সুন্দর তাই । শহরের মানুষগুলোও সুন্দর।তবে সবথেকে সুন্দর হলো হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি।হৃদয়ের টানে চলে এসেছি।”
শেষের কথাটা শুনেই জ্যোতির বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভব হলো। হৃদয়ের টানে? কার হৃদয়ের টানে?তবে কি মেহুর বলা কথা গুলো সত্যিই?এটুকু হলেও কি জ্যোতির জন্য কোন অনুভূতি তৈরি হয়েছে মেহেরাজের হৃদয়ে? জ্যোতি আর ভাবতে পারল না। অস্ফুট স্বরে বলল,
” হ্ হু?”
শীতল গলায় উত্তর এল,
” উত্তর বলেছি।আর কিছু?”
জ্যোতি ফের কিছু বলার সাহস পেল না৷ বুকের ভেতর কেমন জানি করছে তার। সত্যিই কি তাকে ঘিরে কোন অনুভূতি তৈরি হয়েছে মেহেরাজের হৃদয়ে?সত্যিই?এসব ভেবেই ইতস্থত বোধ করে নরম গলায় বলতে লাগল,
” মেহেরাজ ভাই?আরেকটা প্রশ্ন আছে।আপনার মনে কি আম্…”
বাকিটুকু বলা হলো না।তার আগেই মোবাইলের আওয়াজ শুনে চোখ ফিরিয়ে মোবাইলের দিকে চাইল৷ বাড়ি থেকে জ্যোতির বাবা কল করেছে।জ্যোতি বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলে মোবাইল হাতে নিল। কল তুলে মৃদু আওয়াজে বলে উঠল,
” আসসালামু আলাইকুম আব্বা, কেমন আছেন?”
ওপাশ থেকে তার বাবার গম্ভীর স্বর ভেসে আসল,
“মেয়ে হয়ে সংসার ছেড়ে অতোদূরে পড়তে গেছিস, কিছু বলি নাই। কিন্তু তাই বলে এক্সিডেন্ট হয়েছে এইটা জানানোর প্রয়োজন মনে করিস না জ্যোতি?”
জ্যোতি অবাক হলো। সে তো জানায়নি। জিজ্ঞেস করল,
” আব্বা, আপনি কি করে জানলেন?”
তার বাবার তীক্ষ্ণ কন্ঠ ভেসে আসল মুহুর্তেই,
” মানছি আমার আর তোর সম্পর্কটা স্বাভাবিক বাবা মেয়ের সম্পর্ক ছিল না, নেইও। তবুও আমি কল করে খোঁজ নিই তো দুইতিনদিন পর পর।আমাকে জানালি না কেন? ”
” এমনিতেই। মনে হয়েছিল জানালেও যদি আপনার সময় হয়ে না উঠে , তাই বলা হয়নি আব্বা।”
” এবার আর আলাদা থাকতে যাবি না।বিয়ে হয়েছে তোর, সংসার আছে। রাজ যেহেতু ওখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার তোদের একসাথে থাকা উচিত জ্যোতি।অতোদূর একটা মেয়ে একা থাকা অতোটাও নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো বিষয় নয়।”
জ্যোতড তাচ্ছিল্য নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” মেয়ে বলে তুচ্ছ ভাবলেন আব্বা?”
ওপাশ থেকে শক্তপোক্ত জবাব এল,
” যাই ভাবি, যেটা বললাম সেটা মাথায় রাখবি।”
” মেহেরাজ ভাইদের বাসায় এভাবে পড়ে থাকাটা বিচ্ছিরি বোধ হবে আব্বা।”
” বেশি বুঝিস। তোকে তো অতো বুঝতে হচ্ছে না।”
” এই কথাটা বলেই বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন নাহয় আপনার মতে আমার বুঝার বয়স ছিল না। এখনও কি নেই বুঝার বয়স?”
” না, নেই। ”
থমথমে কন্ঠে কথাটুকু বলেই কল কাঁটল জ্যোতির বাবা।জ্যোতি চোখ বুঝে তপ্তশ্বাস ফেলল।তার আব্বা এখনও আগের মতোই আছেন ভেবে বুকের ভেতর কষ্ট হলো। মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে অথচ একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, সে কেমন আছে। এখন কি অবস্থা শরীরের। অথচ রাগ ঝেড়ে কয়েকটা আদেশ ঠিকই করতে পেরেছেন।একরাশ অভিযোগ নিয়ে মনে মনে কষ্ট পুষে কথা গুলো ভাবতেই চোখে পড়ল মেহেরাজকে। পরনে টাউজার আর ছাঁইরাঙ্গা শার্ট।শার্টের বোতামগুলো খোলাই রাখা।হাত দিয়ে একে একে বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতেই এগিয়ে এল জ্যোতির সামনে। বুকের কাছে দুই তিনটে বোতাম খোলা রেখেই নজর ফেলল জ্যোতির দিকে। ধারালো চাহনী নিয়ে টানটান গলায় বলল,
” কি যেন বলছিলি চাচাকে? ”
জ্যোতি বুঝতে পারল না। ভ্রু বাঁকিয়ে শুধাল,
” কি?”
মেহেরাজ তপ্তশ্বাস ফেলল। চোখজোড়ায় রাগমিশ্রিত চাহনী নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
” এই বাসায় থাকাটা বিচ্ছিরি বোধ হবে?”
জ্যোতি বুঝতে পারল এবার।বলতে লাগল,
” আসলে,… ”
পুরো বাক্যটা সম্পূর্ণ করার আগেই মেহেরাজ রাগ ঝেড়ে বলে উঠল,
” ঠিকাছে, থাকতে হবে না তোকে।চলে যা।”
জ্যোতি তাকাল।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে বলল,
” পা টা সুস্থ হলেই চলে যাব মেহেরাজ ভাই। এখন তো হেঁটে যেতে পারব না। ”
মেহেরাজের রাগ এবার তরতর করে বাড়ল। চোয়াল শক্ত করে, মুখ টানটান করে দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
” আবার বল।”
জ্যোতি স্বাভাবিক গলায় বলল,
” পা সুস্থ হলেই চলে যাব।”
মেহেরাজের রাগটা বোধহয় আরো বাড়ল। সে রাগের বহিঃ প্রকাশ ঘটাতেই অত্যন্ত শীতল গলায় রাগ নিয়ে বলে উঠল,
” তোর পা পুরোপুরি সুস্থ হওয়া তো দূর, সুস্থ হওয়ার আগেই আবার পা ভেঙ্গে দিব। সবসময় এভাবে ভাঙ্গা পা নিয়ে পড়ে থাকবি এখানে। এবার বল, বাসাটা বিচ্ছিরি লাগবে নাকি লাগবে না?”
আকস্মিক হুমকিতে অবাক হলো জ্যোতি।অস্ফুট স্বরে বলল,
” হ্ হু?”
মেহেরাজ ফের বলল,
” শুনসিনি?এই বাসায় থেকে যাওয়ার কথা বললে হাত পা ভেঙ্গে এভাবেই রেখ দিব সবসময়।তাই দ্বিতীয়বার কথাটা বলার আগে ভেবে বলিস। ”
কথাগুলো বলেই পা বাড়িয়ে বেলকনিতে চলে গেল মেহেরাজ। জ্যোতি কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। এতোটা রাগ?এতোটা রাগ কি কেবলই তার চলে যাওয়ার প্রসঙ্গে?
.
জ্যোতি বিছানায় আলতো ভাবে শরীর এলিয়েই চোখ বুঝে নিয়েছিল। দুই রাত ঘুম না হওয়ার কারণেই শরীর ভেঙ্গে আসছে।ঘুম না আসলেও ক্লান্ত শরীরে চোখ মেলতে ইচ্ছে হলো না তার। কিয়ৎক্ষন পর আকস্মিক নিজের পাশে চেনা পুরুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে নড়ে চড়ে উঠল জ্যোতি৷ চোখজোড়া মেলে ধরতেই দেখতে পেল নিজের দিকেই তাকিয়ে থাকা মেহেরাজকে।মেহেরাজের দৃষ্টির নড়চড় হলো না। বরং ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” না ঘুমিয়ে জেগে থাকবি নাকি?”
” ক্লান্ত লাগছে, ঘুমও পাচ্ছে। কিন্তু চোখে ঘুম মিলছে না। ”
মেহেরাজ মাথা উঁচু করল। আকস্মিক জ্যোতির ঘন কালো চুলে হাত ডুবিয়ে বুলিয়ে দিতে লাগল। আদেশের সুরে বলে উঠল,
” চোখ বুঝ।”
জ্যোতি প্রথম দফায় স্তব্ধ হয়ে মেহেরাজের মুখপানে তাকিয়ে থাকলেও পরমুহুর্তেই চোখ বুঝে নিল। মুহুর্তেই মেহেরাজ অদ্ভুত এক কাজ করে বসল। জ্যোতির কপালে নিজের পুরো ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিয়েই গভীর চুমু দিল। পরমুহুর্তেই নিজের মুখচোখ এতটাই স্বাভাবিক করে নিল যেন কিছুই করেনি সে।অপরদিকে জ্যোতি যেন থমকে রইল। চোখ বোঝা মাত্রই আকস্মিক এমন শীতল ছোঁয়ার অস্তিত্ব টের পেয়েই চোখজোড়া বড় বড় করে চাইল। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল মেহেরাজের পানে।মেহেরাজ সেই চাহনী আমলে নিল না।স্বাভাবিক ভাবেই শীতল গলায় বলল,
” এবার ঘুম আসবে। ঘুমা। ”
জ্যোতি কি প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝল না। আকস্মিক এমন একটা কাজ করে কেউ এতটা স্বাভাবিক থাকতে পারে? কেউ এতোটা নির্লিপ্ত হওয়ার ভান করতে পারে? জ্যোতির জানা নেই। মেহেরাজ ফের বলল,
” ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?কিছু করেছি তোকে?”
জ্যোতি বলতে পারল না মেহেরাজ কি করেছে। বলতে পারল না কি এক ভয়ানক আভা ছড়িয়ে দিল তার মাঝে। কি এক শীতল ছোঁয়ায় স্তব্ধ হয়ে রইল তার ভেতর বাহির।
.
মেহুর চোখে পানি।চোখের পানির মূল কারণ নাবিলার সাথে সাঈদের ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ।এখন প্রায় রাত বারোটা।প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে কথা বলছে সাঈদের সাথে।মাঝেমাঝেই আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। মেহুর যন্ত্রনা হলো৷ বুকের ভেতর জ্বলন্ত দুঃখ তরতাজা হয়ে উঠল। একপাশ হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রাখলেও সচেতন কান তাকে ঘুমোতে দিল না।বার বার কানে আসল নাবিলার কথাগুলো।এতোটাই প্রেমবোধক কথা কেন হবে তাদের মাঝে? কি দরকার সাঈদের এতরাতে এতোটা প্রেম প্রেম ভাবে নাবিলার সাথে কথা বলার?মেহু আর শুঁয়ে থাকতে পারল না।অবশেষে উঠে দাঁড়িয়ে একবার বেলকনিতে উঁকি দিল। নাবিলাকে গলা উঁচিয়ে বলল,
” ঘুমাবি না?এভাবে হাসাহাসি করছিস কেন?আমার ঘুম আসছে না তোর এসব কথাবার্তার জন্য।”
কথাটা বলেই আবার পিঁছু ঘুরল। নিজের ঘরের জানালার পাশে হাঁটু গুঁজে বসে জানালাটা মেলে দিল। পাশাপাশি আরো একটা বিল্ডিং। দূরত্ব কয়েক হাত এর। মুখোমুখি অপর বিল্ডিংটার আরো একটা জানালা।জানালাটা এই পর্যন্ত সে কোনদিন খোলা দেখেনি। তবে আজ জানালাটার থাইগ্লাস একপ্রান্তে সরিয়ে রাখা।অপর প্রান্ত খোলা। স্পষ্ট চোখে পড়ল ঘরের আলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন গিটারে সুর তুলে গান গাইছে,
” তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়ো মাঝে,
আরও কিছু নাহি চাই গো ।
আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিবো বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী
দীর্ঘ বরষ্ মাস ।
যদি আরও কারে ভালোবাসো,
যদি আরও ফিরে নাহি আসো,
তবে তুমি যাহা চাও,
তাই যেন পাও,
আমি যত দুঃখ পাই গো ।…………”
মেহু গানটা এর আগেও বহুবার শুনেছে।কিন্তু পুরুষালি গলায় এই প্রথম শুনল। পুরুষালি গলায়ও গানটা এতোটা সুন্দর শোনায় তা এই মুহুর্তেই বোধ হলো।মেহুর কাছে গলাটা পরিচিত ঠেকল।যেন বহুকাল আগে সে কোথাও এই গলা শুনেছিল। বহুকাল আগে যেন কোন পুরুষ তীব্র আকুতি নিয়ে এই গলায় ছুড়েছিল আবেদন।মেহুর উৎসাহ বাড়ল। উৎসুক হয়ে সমস্ত গানটাই নিশ্চুপে শ্রবণ করল মেহু। অচেনা পুরুষ, অচেনা যুবকের গানটি তার কাছে মনোমুগ্ধকর বোধ হলো মুহুর্তেই।দুয়েক নজর তাকিয়ে চেষ্টাও চালাল অচেনা পুরুষটিকে দেখার জন্য। কিন্তু আপসোস! দেখা হলো না।
#চলবে….