#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_২৭
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
” হ্যাঁ জানি তো আমি।কোলে করে নিয়ে যাব।তোকে পা নাড়াতেও হবে না ”
আকস্মিক বলা কথাটা শুনে জ্যোতি অবাক হলো।কুঁচকে গেল ভ্রু জোড়া।চোখেমুখে খেলে গেল বিস্ময়। এমন একটা উত্তর সে মোটেও আশা করেনি। মোটেই ভাবেনি।স্থির চাহনীতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখে তাকিয়ে থাকল কেবল মেহেরাজের দিকে।
জ্যোতির মুখের চাহনী দেখেই মেহেরাজ ভ্রু উঁচু করল। সরু চাহনী ফেলে বলল,
” এবার সমস্যা হবে না আশা করি ”
জ্যোতির চাহনী এখনো বদলায়নি। চোখমুখে প্রশ্নময় দৃষ্টির বাহার নিয়ে একইভাবেই তাকিয়ে থাকল। উত্তরে কি বলা উচিত তাও যেন মস্তিষ্ক জানান দিল না। পাশ থেকে রিতু মিটমিট করে হেসে জবাব দিল,
” ভাইয়া, আপনি ওকে কোলে করে এখনই নিয়ে যেতে পারেন৷ আমি ব্যাগ গুঁছিয়ে দিচ্ছি। ”
মেহেরাজ রিতুকে চেনা না। গলা শুনে একনজর রিতুর দিকে তাকিয়ে দেখল জ্যোতির বিছানার পাশে চেয়ারটায় বসে মুচকি হাসছে। মুহুর্তেই গলা ঝেড়ে বলল,
” তবে গুঁছিয়ে দিন। আমি একটু পর আবার আসছি।”
কথাটা বলেই মেহেরাজ বের হলো। জ্যোতির পায়ের যা অবস্থা রিক্সায় নেওয়া যাবে না। আবার সারা রাস্তা কোলে করেও নেওয়া যাবে না। একটা গাড়ি খুঁজতে হবে। তাই মূলত বেরিয়ে গেল। অপরদিকে জ্যোতি হতবিহ্বল চাহনীতে মেহেরাজের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকল। পরমুহুর্তেই রুমে উপস্থিত আরো দুইজোড়া হাস্যোজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়েই শ্বাস টানল।দরজার দ্বারে দাঁড়ানো মেয়েটির নাম তৃষ্ণা। বলা যায় রিতুর থেকেও দুয়েক ধাপ উপরে ঠাট্টা, মজা এসবে।দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে ক্রমশ মুচকি হাসছে।হাসছে চেয়ারে বসে থাকা রিতুও। এগিয়েই এসেই রিতু চোখ টিপে বলল,
” কি সাংঘাতিক রেগে গেছেরে ভাইয়া? তোর মুখে কোনদিন উনার নামে কিছুই শুনিনি অথচ আজ এইটুকুতেই আমার মন বলছে উনি সাংঘাতিকভাবে ভালোবাসতে জানে। এমন একটা বর ফেলে কেউ একা একা পড়ে থাকে কিভাবে ভাই?”
রিতুর কথাটা শুনেই শব্দ করে হেসে উঠল তৃষ্ণাও। দুই পা এগিয়ে জ্যোতির কাছে এসেই বলল,
” ইশশ! দরজা খোলার পরই দেখি হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।কোথায় ক্রাশ ট্রাশ খাব তা নয়, ছেলে গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
‘ জ্যোতিকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে বলবেন?’।প্রথমে না বুঝলেও পরে মনে পড়ল এটা জ্যোতির বর।মুহুর্তেই হৃদয়টা ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। এমনভাবে বলল যেন বউকে দেখার জন্য কত যুগ ধরে তৃষ্ণার্ত। ”
রিতু ফের হেসে বলল,
“তাই নাকি? এখানে এসেই তো কি রাগ দেখাল। হাজব্যান্ড হলে এমন হওয়া উচিত।বুঝলি?বউ আঘাত পেলেই বউয়ের আগে বরের আঘাত লাগবে।কি বলিস তৃষ্ণা?”
তৃষ্ণা মাথা নাড়াল দ্রুত। ঠোঁট কাঁমড়ে বলল,
” একদম!এমন একটা জামাইয়ের অভাববোধ করছি খুব করে এই মুহুর্তে।”
রিতু আপসোসের সুরেই বলে উঠল,
” আমি তো এমন জামাইয়ের অভাবেই বিয়েটা করতে পারছি না। পাওয়া মাত্রই টুপ করে বিয়ে করে নিব।”
জ্যোতি সরু চোখে তাকাল দুইজনের দিকে৷ ছোট্ট শ্বাস টেনে স্বাভাবিক গলায় বলল,
” আচ্ছা বুঝলাম।”
রিতু প্রশ্ন ছুড়ল ভ্রু উঁচিয়ে,
” বুঝলি মানে? এত কেয়ারিং হাসব্যান্ড রেখে এতদূর কিভাবে মন টিকে তোর?”
জ্যোতি স্থির চাহনীতে তাকাল। সত্যিই মেহেরাজ অনেক কেয়ারিং আর দায়িত্ববান ছেলে। এই নিয়ে তার এইটুকুও সন্দেহ নেই। কিন্তু আধৌ কি মেহেরাজের মনে তার জায়গা হবে?জায়গা হওয়া তো দূর মেহেরাজ তাকে সম্পূর্ণ সম্পর্কটা থেকেই বের করে দিতে চায় এমনটা ভেবেই দুঃখ হলো। প্রিয়মানুষের সাথে অন্য কোন নারীকে সহ্য করার কষ্টে দহন ঘটল। চাপাস্বরে বলল,
” কেয়ারিং হলেই কি লাভিং পার্সন হওয়া যায়? একজনের প্রতি যত্নশীল হওয়া আর একজনকে ভালোবাসা এর মধ্যে তফাৎ নেই বলছিস? ”
রিতু নরম গলায় উত্তর দিল,
“থাকতে পারে। তবে আমার কিন্তু উনাকে দেখেই যথেষ্ট প্রেমিক পুরুষ মনে হয়েছে। লাইক এ কেয়ারিং এন্ড রোমান্টিক হাজব্যান্ড।”
জ্যোতি বলল,
” দ্বিতীয় সম্বোধনটা ভুল। তবে প্রথম সম্বোধনটা সঠিক। উনি যথেষ্ট কেয়ারিং , শুধু যে আমার প্রতি এমন নয়। সবার প্রতিই। ”
তৃষ্ণা অবাক হলো। গলাটা উঁচু করেই অবাক কন্ঠে বলে উঠল,
” উনি রোমান্টিক নয় বলছিস? ”
জ্যোতি নিরস গলায় উত্তর দিল,
” ঠিক জানা নেই।”
তৃষ্ণা জ্যোতির মাথায় চাটি মারল। দাঁত চেপে বলল,
” জানবি কি করে? জামাইকে ছেড়ে এতকাল এখানে পড়ে আছিস তো রোমান্টিকতার কি বুঝবি গর্দভ।তুই তো অদ্….”
কথাটুকু বলে শেষ না করতেই তৃষ্ণার চোখ গেল দরজার দ্বারে দাঁড়ানো মেহেরাজরন দিকে। তাদের কথোপকোতনের কতটুকু কি শুনেছে তা ভেবেই শুকনো ঢোক গিলল। ঠোঁট চওড়া করে মেকি হেসে বলল,
” একি ভাইয়া, এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসলেন? আপনার পায়ের আওয়াজও তো শুনতে পেলাম না। ”
জ্যোতি মুহুর্তে ফিরে চাইল। মেহেরাজের নিঃশব্দে চলনের সম্পর্কে জানা আছে বলেই চমকাল না। কপাল কুঁচকে ভাবল রিতু আর তৃষ্ণার কতটুকু কথা শুনতে পেয়েছে?সে যে বলেছে সেগুলোই বা কতটুকু শুনল? জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে স্পষ্টস্বরে মেহেরাজের দিকে তাকিয়েই বলল,
” এই অবস্থায় সে বাসায় যাওয়াটা কতটুকু ইম্পোর্টেন্ট মেহেরাজ ভাই। মেহু আপু চিন্তা করবে তাই বলা হয়নি পায়ের কথাটা৷ আপনি গিয়ে বুঝিয়ে বললে ঠিকই বুঝবে।”
মেহেরাজ এগিয়ে আসল। শার্টের হাতা গুলো গুঁটিয়ে নিয়ে ঝুঁকে গেল জ্যোতির সামনে। টানটান গলায় বলল,
” সেটা আমি বুঝব। তোর থেকে শুনতে চাইছি না সেসব।”
কথাটা বলেই আর দেরি করল না সে। বলিষ্ট হাতজোড়া ছুঁইয়ে মুহুর্তেই তুলে নিল সামনের রমণীকে।সযত্নে কোলে তুলে রিতু আর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়েই নরম গলা বলল,
” কাইন্ডলি কিছু কাপড় আর ঔষুধপত্র গুঁছিয়ে দিলে উপকার হবে। দিবেন?আমি ফের এসে নিয়ে যাচ্ছি।”
রিতু আর তৃষ্ণা মুহুর্তেই মাথা নাড়াল।সমস্বরে বলল,
” অবশ্যই ভাইয়া। আপনি যান, আমরা নিচে নেমে ব্যাগ দিয়ে আসছি। ”
মেহেরাজ হাসল। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছেড়ে পা বাড়াল জ্যোতিকে নিয়ে। অপরদিকে জ্যোতি অনুভূতিহীন হয়ে জমে রইল।তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো প্রিয় পুরুষের এহেন কান্ডে লজ্জ্বায় নুঁইয়ে পড়ত। মুখটা হয়তো লজ্জ্বা রাঙ্গা রক্তিমতায় লালাভ হয়ে উঠত। কিন্তু তার মুখে খেলে গেল কেবল বিস্ময়। অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল মেহেরাজের মুখপানে৷ কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই যেন বোধগম্য হলো না কিয়ৎক্ষনের জন্য। মেহেরাজ একনজর জ্যোতির দিকে তাকিয়েই চাপা হাসল। ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেই গাড়িতে জ্যোতিকে বসিয়েই ভ্রু উঁচু করল।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
” এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে কি দেখছিস?আগে কখনো দেখিসনি আমায়?”
মেহেরাজের এই কথাটা শুনেই জ্যোতির মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে এল। মুহুর্তেই নজর সরিয়ে অন্যপাশে তাকাল৷ এতক্ষন সবকিছু জমাট বাঁধা স্থির অনু়ভব হলেও এই মুহুর্তে এসেই তীব্র অস্থিরতায় ছটফট করে উঠল মন৷ অস্বস্তিতে হাত পায়ের তালু ঘেমে উঠল তৎক্ষনাৎ। খেয়াল হলো কোলে তোলার সময় থেকে মেহেরাজের একটা হাত এতক্ষন তার পেটের উপরাংশেই চেপে রাখা ছিল। তার শরীরটা মেহেরাজের শরীরের সাথেই লাগোয়া ছিল এতোটা সময়। এসব ভেবেই ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ল।অস্থির শিরশিরে অনুভূতি হলো সর্বাঙ্গে। সে অনুভূতি দমাতেই বারকয়েক শ্বাস ফেলল। মেহেরাজের দিকে চোখ তুলে তাকাতে নিতেই দেখল রিতু আর তৃষ্ণা এসে হাজির হয়েছে।তার ব্যাগ গাড়ির এককোণে রেখেই তৃষ্ণা চোখ টিপে ফিসফিস করে বলল,
” আমি আবেগে আপ্লুত দোস্ত।আই উইশ, আমারও পা ভাঙ্গুক। আমাকে আমার প্রেমিক এভাবেই যত্ন করে কোলে তুলে হাঁটুক। সুন্দর হবে না?”
জ্যোতির চাহনী ক্ষীণ হলো। তৃষ্ণা সে চাহনীকে পাত্তা দিল না। দাঁত কেলিয়ে হেসে মেহেরাজের দিকে তাকাল। বোকা বোকা হেসে বলল,
” ভাইয়া আপনি কিন্তু হাজব্যান্ড হিসেবে খুব ভালো। এমন হাজব্যান্ড কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন? ”
মেহেরাজ ভ্রু কুঁচকাল। রিতু আর তৃষ্ণা ততক্ষনে আর দাঁড়িয়ে রইল না।আকস্মিক কি বলে ফেলেছে তা বুঝতে পেরেই তৃষ্ণা লাজুক হেসে রিতুর হাত চেপে দ্রুত পা এগিয়ে সে স্থান ছেড়ে চলে গেল। মেহেরাজ চাপা হাসল৷বুক টানটান করে গাড়িতে উঠে বসেই তাকাল জ্যোতির দিকে। বলল,
” তোর উচিত ছিল এক্সিডেন্টের বিষয়টা জানানো৷ জানিয়েছিলি? আমাকে না হোক মেহুকে জানানো যেত না?”
মেহেরাজের শান্ত গলায় কথাগুলো শুনে জ্যোতি ফিরে তাকাল। মৃদুস্বরে বলল,
” এতকাল কিন্তু একা একাই সব ফেইস করেছি মেহেরাজ ভাই। কাঁটা ছেড়া হোক বা পা ভাঙ্গা। আজকে হয়তো এক্সিডেন্টের কথাটা কোনভাবে জেনে নিয়েছেন কিন্তু এতকাল তো আর জানতে পারেননি।এতকাল সবকিছু ঠিক সামলে নিতে পেরেছি। এখনও পারতাম। তাই আর জানাইনি।তাছাড়া এসব ছোটখাটো ঝামেলায় আপনাদের আর জড়াতে মন চায়নি।বেশিকিছু হলে আমি অবশই জানাতাম। ”
মেহেরাজের রাগ হলে। দাঁতে দাঁত চেপে তীক্ষ্ণ চাহনী ফেলে বলল,
” হ্যাঁ, ওপারে চলে গিয়ে জানাতি। রাইট? ”
জ্যোতি হাসল কিঞ্চিৎ। বলল,
” ওপারে চলে যাওয়ার মতো তো কিছু হয়নি। শুধু পায়ের একটা হাঁড় ভেঙ্গেছে।তেমন বিশিকিছু নয় এটা। ”
মেহেরাজ ফের রাগ দেখিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
” আমার উচিত এখন তোর আরেক পাও ভেঙ্গে দেওয়া। তবেই বেশিকিছু হতো।”
বিনিময়ে জ্যোতি আর কিছু বলল না। মেহেরাজও আর কথা বাড়াল না।থমথমে মুখে অন্যপাশে ফিরে চাইল।
.
মেহুর মোবাইলে কাল রাত থেকেই অনেকগুলো কল করেছিল সাঈদ। একবারও কল তুলে নি সে। এখনও অনেকবার কল এসেছে। মেহু কল তুলল না। ছোট্টশ্বাস ফেলে মোবাইলটা বন্ধ করে দিল। কিয়ৎক্ষন পরই তাকে চমকে দিয়ে নাবিলা বলে উঠল,
” আপু, মোবাইল বন্ধ করে রেখেছো তুমি?সাঈদ ভাইয়া অনেকবার কল করেছে তোমায়। তুমি নাকি কল তুলোনি। সাঈদ ভাইয়া তোমাকে মোবাইল অন করে কল ব্যাক করতে বলেছে।”
মেহু ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল৷ বিষয়টা নাবিলা পর্যন্ত যাবে ভাবে নি সে৷ মৃদু আওয়াজে বলল,
” কেন? ”
” সেটা জানা নেই, জরুরী দরকার আছে বলেছে। ”
মেহু ছোট্ট শ্বাস ফেলল। বেলকনিতে গিয়ে মোবাইল অন করে কল করল সাঈদকে। রিং হওয়ার পর অপেক্ষা করতে হলো না। কয়েক সেকেন্ডে কল তুলেই ওপাশ থেকে সাঈদ নরম গলায় বলল,
” এই কেমন অন্যায় শুনি ? কাল রাত থেকে কন্টিনিউ কল দিচ্ছি অথচ কল তুলছো না। অবশেষে ফোন সুইচড অফ করে রেখে দিয়েছো ? ”
মেহু মৃদু আওয়াজে জিজ্ঞেস করল,
” কিছু বলবেন?”
সাঈদ চুপ থাকল কিয়ৎক্ষন। তারপর বলল,
” জম্মদিনের শুভেচ্ছা নিও প্রিয়৷ ”
” ধন্যবাদ৷ ”
সাঈদ আবারও চুপ হয়ে গেল। তারপর হঠাৎই অভিমানী সুরে বলল,
” আমায় কি ভালোবাসো না আর? ”
মেহু অবাক হলো এরূপ কন্ঠস্বর শুনে।বলল,
” কাকে বলছেন?”
শান্তস্বরে উত্তর এল,
” তোমাকে।”
“আমি আপনার বন্ধুর বোন হই সাঈদ ভাইয়া।এসব কি প্রশ্ন করছেন? ”
সাঈদের কন্ঠ মুহুর্তেই পরিবর্তন হলো। ফিচে গলায় বলল,
” হবু বউ হও তুমি।আপাতত সে সম্পর্কটাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। ”
” আপনি যদি এসব বলার জন্যই কল দিয়ে থাকেন তবে রাখছি৷”
কথাটা বলেই কল রাখল মেহু।নরম মন হুহু করে কেঁদে উঠল যেন এবারে। চোখজোড়া দিয়ে বইল নোনা পানির ধারা। নারী মন সরল, নরম।পুরুষের মুখের দুয়েকটা শব্দই সে নারী মনে কান্নার ধারা বইয়ে দিতে পারে আবার সে নারী মনকেই এক মুহুর্তে শান্ত করতে পারে। নারীর জন্য সত্যিই পুরুষ মানুষ যাদুকর।
#চলবে…
#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_২৮
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
রাত হলো বেশ।বিছানায় হেলান দিয়ে পা সোজা করেই ক্লান্ত চাহনী নিয়ে বসে রইল জ্যোতি।খাটের পাশেই জানালা খুলে রাখা। সে জানালা দিয়েই শীতল বাতাস ছুুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে শরীর। মেহেরাজদের নতুন বাসাটায় আসবাব পত্র বলতে দু রুমে দুটো খাট, দুটো আলমারি,টেবিল-চেয়ার আর বসার ঘরে একটা সোফা৷সাদামাটা গোছানো পরিপাটি বাসা। এই সাদামাটা বাসার ডানপাশের ঘরটাই কেবল চোখ ঘুরিয়ে দেখার সুযোগ পেল জ্যোতি। ঘরটা মেহেরাজের। আসার পর থেকে এ ঘরেই জ্যোতির অবস্থান। পায়ের বেহাল দশার কারণে উঠাও হলো না আর। এতক্ষন মেহু, নাবিলা, নাফিসা সবাই এ ঘরে থাকলেও এখন রুমটা শূণ্য। পায়ের তীক্ষ্ণ ব্যাথায় চোখ খিঁচে তপ্ত শ্বাস ফেলল জ্যোতি। চোখজোড়া বুঝে নিয়ে কিয়ৎক্ষন ঠোঁট চেপে বসে রইল। পরমুহুর্তে চোখ খুলতেই চোখে পড়ল মেহেরাজকে।বুকে হাত গুঁজে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখজোড়া খুলতেই চোখাচোখি হলো। মেহেরাজ নজর সরাল না। আগের মতোই স্থির দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
” কয় রাত ঘুমাস না? ”
আকস্মিক প্রশ্নে চোখ তুলে তাকাল জ্যোতি। উত্তর দিল না। মেহেরাজ ফের দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
” চোখের নিচে এমন কালি ফেলেছিস কেন? কার বিরহে দিন কাঁটিয়ে এমন এক্সিডেন্ট করে শহীদ হয়ে যেতে চাইছিলি?”
জ্যোতির কপাল কুঁচকাল এবার। প্রশ্নময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই জিজ্ঞেস করল,
” মানে?”
মেহেরাজ জ্যোতির প্রশ্নের উত্তর দিল না।গম্ভীর কন্ঠে শুধাল,
“হাত অক্ষত আছে তোর? নাকি নিজে হাতে খাওয়ার অবস্থাও নেই?”
জ্যোতির মুখ থমথমে হয়ে এল। উত্তরে ভরাট গলায় বলল,
” হাত ঠিক আছে।”
” মেহু খাবার আনছে। চুপচাপ খেয়ে নিস। ”
শান্ত গলায় কথাটা বলেই মেহেরাজ ফের চলে গেল। মাঝখানে মেহু খাবার আনল। খাবার খাইয়ে, ঔষুধ খাইয়ে আবার প্লেট নিয়ে চলেও গেল। তারপর আরো অনেকক্ষন কেঁটে গেল। জ্যোতির চোখজোড়ায় ঘুম নামল না। তবে ক্লান্তি ভর করল ঠিক। সারা শরীর দুর্বল বোধ হলো। চোখজোড়া বুঝে নিয়ে হাত ভাজ করে খাটে হেলান দিয়ে রইল অনেকটা সময়। তারপর হঠাৎ দরজার আওয়াজ আসল কানে৷মুহুর্তেই চোখজোড়া মেলে তাকাতেই দেখল মেহেরাজ দরজা লাগিয়ে পা বাড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল। মুখচোখে জল দিয়ে ফিরে এসে বিছানার এক পাশে সটান শুঁয়ে পড়ে জ্যোতির দিকে তাকাল। বলল,
” তোর বান্ধবীকে তখন কি বলছিলি তুই? আমি রোমান্টিক নই এটা বলেছিস?”
এমন একটা প্রশ্নে জ্যোতি অবাক হলো। কখন কোন বান্ধবীকে এমন কথা বলল স্মরনেও এল না৷ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“কখন? কোন বান্ধবীকে বলেছি? ”
” তখন তোর বান্ধবী অবাক হয়ে তোকে জিজ্ঞেস করল কেন, ‘উনি রোমান্টিক নয় বলছিস? ‘ তার মানে তুই এমনটা বলেছিস ওদের?”
কথাটা বলেই মেহেরাজ ভ্রু উঁচু করল।সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতির উত্তর না পেয়ে ফের মুখচোখ কুঁচকে বলল,
” ছিঃ জ্যোতি,তুই আমাকে নিয়ে তোর বান্ধবীদের সাথে এসব শেয়ার করিস? ”
জ্যোতির মনে পড়ল তখনকার কথাগুলো।ইতস্থত গলায় বলল,
“আমি ঠিক এভাবে বলিনি। ”
মেহেরাজ সে উত্তরে দমে গেল না। রাগ রাগ গলায় বলে উঠল,
” তাহলে কিভাবে বলেছিস?”
জ্যোতি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজাল। তারপর নরম গলায় বলল,
” আমি আপনাকে নিয়ে কোনদিনই কিচ্ছু বলিনি ওদের মেহেরাজ ভাই। এমনকি আমার যে বিয়ে হয়েছে এটাও ওরা জানত না মেহেরাজ ভাই। আগের বার আপনি নিতে আসাতেই জেনেছিল। আর আজ কথার কথাতে ওদের কথার উত্তরে বলে ফেলেছিলাম।তবে এভাবে বলিনি যে আপনি রোমান্টিক নন। ”
” তাহলে কি রোমান্টিক বলেছিস?”
জ্যোতি উত্তর দিল না।ইতস্থত বোধ করে চুপ করে থাকল। অপরদিকে মেহেরাজ মনে মনে হাসল।তবে সে হাসির প্রকাশ বাইরে এল না। বরাবরের মতো মুখ টানটান করে চেয়ে থাকল জ্যোতির পানে। পরমুহুর্তেই কিছু একটা ভেবে আবার ভরাট কন্ঠে বলল,
“এক মিনিট, তুই বিবাহিত এটা মানিস বলেছিস অথচ বিবাহিত এটা মানুষকে জানাতে তোর লজ্জ্বা লাগছে?”
জ্যোতি এতক্ষন ইতস্থত হয়ে চুপ করে থাকলেও এবার স্পষ্ট চাহনীতে তাকাল। বলল,
” লজ্জ্বা লাগবে কেন? ”
” তাহলে জানাসনি কেন? ”
জ্যোতি ছোট্ট শ্বাস ছাড়ল। বলতে লাগল,
” ওরা সবকিছুতেই বেশি বেশি কৌতুহলি মেহেরাজ ভাই। যদি জিজ্ঞেস করত আপনার সাথে আমার সম্পর্ক কেমন? এতদূর আমি একা কেন থাকি?বিবাহিত হয়েও আর বাকি দশটা বউয়ের মতো মাখোমাখো ফোনালাপ কিংবা প্রেমালাপে দেখা যায় না কেন আমাকে?এসবের উত্তর দিতে গিয়ে আমি অপ্রস্তুত হতাম।এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চাইনি তাই বলিনি। ”
মেহেরাজ চুপচাপ কথা গুলো শুনল। নিরব হয়ে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল জ্যোতির দিকে। তারপর একদম ঠান্ডা গলায় বলে উঠল,
“এরপর থেকে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না৷ ”
কথাটা বলেই মেহেরাজ অন্যদিকে মুখ করে ফিরে শুঁয়ে পড়ল। মনে মনে জ্যোতির কাছে নতুন সকালে নতুন মেহেরাজকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিল৷
.
জ্যোতির চোখে ঘুম এসেছিল মধ্যরাতের দিকে। তাও বিছানায় হেলান দিয়ে সেভাবে বসে থাকা অবস্থাতেই। ঘাড়টা হালকা বাঁকা হতেই হঠাৎ ঘুম ছুটে গেল। কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব হলো ঘাড়ে।সাথে পায়ের সূক্ষ্ম ব্যাথা যেন চওড়া হয়ে উঠল।নিভু নিভু চোখে ঘড়িতে তাকাতেই বুঝল সকাল হয়েছে। হাত বাড়িয়ে খাটের পাশে থাকা জানালাটা খুলতে নিতেই কোমড়ে কিছুর বাঁধন টের পেতেই ঘুমঘুম চোখে দৃষ্টি নামিয়ে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেল। মেহেরাজের বলিষ্ঠ হাত জোড়ার বন্ধন আঁকড়ে আছে তার কোমড়। মুহুর্তেই ঘুমঘুম ভাব কেঁটে গেল। শিরদাঁড়া বেয়ে শিরশিরে অনুভূতি বয়ে গেল সর্বাঙ্গ জুড়ে। তুমুল অস্থিরতায় নড়েচড়ে বসল জ্যোতি। অস্বস্তিতে হাতে হাত ঘষতে লাগল অনবরত।ভাবতে লাগল, মেহেরাজ তো ঘুমের ঘোরে এমনটা করার মতো লোক নয়। এর আগেও একবার মেহেরাজ আর সে এক বিছানায় ঘুমিয়েছে গ্রামের বাড়িতে। সেই রাতে মেহেরাজ যে দিকে ফিরে,যেভাবে ঘুমিয়েছিল ঠিক সেভাবেই সকাল পর্যন্ত স্থির ছিল। এমনকি হাত পায়ের অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়নি তার মনে আছে এখনও। তবে আজ?এই কয়বছরে মেহেরাজের অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে নাকি সবটা ইচ্ছাকৃত? ইচ্ছাকৃত ভাবেই কি হাত দিয়ে আঁকড়ে আছে?প্রশ্নগুলো মনের ভেতর উঁকি দিতেই হৃদস্পন্দনের হার ক্রমশ বাড়ল। কাঁপা হাতে মেহেরাজের হাত জোড়া ছাড়াতে চেষ্টা করল। মেহেরাজ বোধ হয় সবটাই টের পেল। চোখ বুঝে রেখেই ঘুম জড়ানো গলায় বলে উঠল,
” উহ জ্যোতি,এমন হাসফাঁস করছিস কেন তুই? ”
মেহেরাজে কন্ঠে কি ছিল কে জানে জ্যোতির হাসফাঁস করা যেন দ্বিগুণ হলো। অস্বস্তি ক্রমশ বাড়তে লাগল। বুঝতে পারল সমস্তটাই মেহেরাজের ইচ্ছাকৃত কর্মকান্ড। মৃদু আওয়াজে অস্বস্তি কাঁটিয়ে স্পষ্ট গলায় বলল,
” হাতগুলো সরান মেহেরাজ ভাই। অস্বস্তি হচ্ছে।”
মেহেরাজ হাত সরাল না। হাতের বাঁধন শক্ত করে কোমড় চেপে ধরল। ঘুমঘুম কন্ঠে জবাব দিল,
” অস্বস্তি হলে হোক।”
” ছেড়ে দিন, পায়ে ব্যাথা করছে আমার। ”
মেহেরাজ এবার চোখজোড়া মেলে ধরল কিঞ্চিৎ। একনজর নিজের দিকে তাকিয়ে জ্যোতির দিকে তাকাল। বলল,
” কি আশ্চর্য ! আমি তো তোর পায়ের আশপাশেও গেলাম না।কাল রাতে যেখানটায় ঘুমেয়েছি সেখানটাতেই পড়ে আছি।ইভেন এখনো ভালো কর তাকিয়ে দেখ তোর আর আমার মধ্যে বেশখনিকটা দূরত্ব আছে।হাত বাড়িয়ে ধরলাম তোর কোমড়, আর ব্যাথা করছে পা?”
জ্যোতির চাহনী সূক্ষ্ম হলো। বলল,
” আমি কখন বললাম যে আপনার কারণে পায়ে ব্যাথা করছে?”
মেহেরাজ হাতজোড়া দিয়ে সেভাবেই আঁকড়ে রইল জ্যোতির কোমড়। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” তাহলে পায়ে ব্যাথার সাথে আমার হাত সরানোর কি সম্পর্ক? ”
জ্যোতি হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। চোখজোড়া চাহনি কেমন ধারালো আর জ্বলন্ত হয়ে উঠল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” কিছুদিন পর দ্বিতীয় বিয়ে করবেন অথচ অন্য একটা নারীর কোমড় আঁকড়ে রেখেছেন।বিষয়টা বিশ্রী দেখায় না?”
মেহেরাজের শক্ত জবাব,
” দেখালে দেখাক৷ ”
জ্যোতি ফের প্রশ্ন ছুড়ল,
” সামান্তা আপু ভুল বুঝবে না? ”
ভ্রু কুঁচকে নিল মেহেরাজ। শুধাল,
” সামান্তা কেন ভুল বুঝবে?”
” আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী হবে সে, স্যরি আপনার ভালোবাসার মানুষ ও তো উনি।স্বাভাবিক ভাবেই ভুল বোঝার কথা।”
মেহেরাজ তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
” তো তোর কি কষ্ট হচ্ছে এই জন্য? ”
জ্যোতির কষ্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। স্বামীর পাশে অন্য নারীকে সইতে কষ্ট কার না হবে?জ্যোতিরও হবে।তবুও তা স্বীকার করল না জ্যোতি।বলল,
” আমার কেন কষ্ট হবে ? ”
” সেটা তো তোর ভালো জানার কথা। তাই না?”
শেষের কথাটা ভ্রু নাচিয়েই বলল মেহেরাজ।পরমুহুর্তেই আর শুয়ে না থেকে উঠে বসল । আড়ালে মুচকি হাসল। তারপর জ্যোতির কানের কাছে মুখ নিয়েই অদ্ভুত স্বরে বলল,
” কষ্ট হলে বলে ফেল।হতেও পারে আমি তোর কষ্ট লাঘব করতে মরিয়া হয়ে উঠব?”
কথাটা বলেই মেহেরাজ উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। জ্যোতি স্থির তাকিয়ে থাকল। কথাটায় কিংবা কন্ঠটায় কিছু তো একটা ছিল। যা তার সমস্ত শরীরে শিহরণ জাগাল। মনে মনে ভাবল,”আসলেই কি বলে ফেললে কষ্ট লাঘব করে দিবে মেহেরাজ ভাই?”
.
সকাল সকালই মেহুর নামে একটা পার্সেল দিয়ে গেল এক লোক। মেহু সে পার্সেলটা হাতে নিয়েই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল। সঙ্গে তাকিয়ে রইল নাবিলা আর নাফিসাও। অনেক্ষন যাবৎ এই পার্সলের প্রেরকের নাম জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। অবশেষে নাবিলা আর ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে পারল না। অধৈর্য্য গলায় বলে উঠল,
” আপু?পার্সেলটা খুলেই দেখি না?তাহলে সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে হয়তো।”
মেহু চোখ ছোট ছোট করে তাকাল।সে জানে পার্সেলটা সাঈদই পাঠিয়েছে৷ ম্যাসেজেই এমন কিছু বলেছিল সাঈদ। বিনিময়ে কোন রিপ্লাই না দিলেও এভাবে আজ সকালেই পার্সেলটা এসে হাজির হবে ভাবে নি সে। এদিকে নাবিলা নাফিসার সামনেও এ সত্যটা বলে উঠা যুক্তিযুক্ত বোধ হলো না। ইতস্থত বোধ অবশেষে একটা মিথ্যে বলল,
” কে পাঠিয়েছে তার নামই তো জানি না।পার্সেলের ভেতর কি না কি আছে তাও তো জানি না। পার্সেলটা খোলা উচিত হবে না। তার চেয়ে এভাবেই থাক।”
নাবিলার মুখটা চুপসে গেল মুহুর্তেই। ছোট্ট শ্বাস ফেলেই বলল,
” এই ব্যাক্তিটা কে তা জানার জন্য মনটা ছটফট করছে গো।কি যে করি!তোমার কোন প্রেমিক ট্রেমিক নয় তো আপু?”
মেহু চোখ গরম করল। বলল,
” প্রেমিক ট্রেমিক মানে?আমি কি প্রেম করে বেড়াচ্ছি?”
নাবিলা ঠোঁট চওড়া করে হাসল। ফিচেল গলায় বলল,
” তুমি কি আর ছোট আছো?প্রেম করতেই পারো।তাও আবার একটা না, তোমার যতোটা ইচ্ছে ততোটা প্রেম করতে পারো।কিন্তু তুমি মানুষটা কেমন জানি।প্রেম করার বয়স পার হয়ে বিয়ে করার বয়সও পার হয়ে যাচ্ছো, সে খেয়াল আছে তোমার?”
” তোর মাথা।তেমন কিছু নয়।আমি আসছি ”
কথাটা বলেই পার্সেলটা নিজের ঘরে নিয়ে এল। চুপচাপ দরজাটা বন্ধ করে পার্সেলটা খুলতেই চোখে পড়ল সর্বপ্রথম কালো রংয়ের শাড়ি।তার উপর ছোট্ট চিরকুট। যেখানে গুঁটিগুঁটি অক্ষরে লেখা,
” এই যে, হবু বউ শুনছো? জম্মদিনের উপহার গ্রহণের অনুরোধ রইল। তৈরি থেকো নতুন কিছুর জন্য৷আশা করি সে নতুন কিছু তোমার সম্মুখে পরের মাসেই হাজির হবে।খুব শীঘ্রই আমি তোমার আর তুমি আমার হবে।ভালোবাসায়-বাসায় রাঙ্গিয়ে দিব। সকল অভিযোগ মুঁছে দিব তখন।
ইতি
তোমার অপ্রিয় ব্যাক্তি!”
মেহু চোখ বন্ধ করল চিরকুটের লেখা গুলো পড়ে।লেখাগুলোর অর্থ বুঝেই এবার নিভে এল চাহনী। চুপ হয়ে বসে থাকল অনেকক্ষন। তারপর হঠাৎই শুনল মোবাইল বাঁজছে। চোখ ফেরাতেই মোবাইল স্ক্রিনে সাঈদের নাম্বারটায় দেখতে পেল। কল ধরল না মেহু। আগের ন্যায় চুপচাপ বসে থাকল কেবল।
#চলবে…