এক মুঠো প্রণয় পর্ব-১৯+২০

0
769

#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_১৯
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

রাত অনেক হলো। আমি তখনও সেভাবেই বসা থাকলাম মাটিতে। মেহু আপু নিজেদের বাড়িতে না গিয়ে আমার পাশেই বসে থাকল এতটা সময়৷মাথায় আলতোভাবে হাত বুলিয়ে কত কিছু বলে চলেছে অনেক্ষন ধরে।আমি শুনছি ঠিক সেসব কথা, তবে মস্তিষ্কে বোধগম্য হচ্ছে না তার কিছুই৷ একদৃষ্টিতে নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে থাকলাম একইভাবে। এভাবেই বোধ হয় অনেকটা সময় গেল। হঠাৎ মেহেরাজ ভাই এলেন।মেহু আপু বলে উঠলেন সঙ্গে সঙ্গে,

” দেখো না ভাইয়া, রাত একটা বাঁজতে চলল।ও একইভাবেই মাটিতে বসে আছে।কিছু খাচ্ছে না। এমনকি ঘুমাচ্ছেও না।”

মেহেরাজ ভাই কিয়ৎক্ষন চুপ থাকলেন।তারপর হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসলেন। গম্ভীর স্বরে মুখ টানটান করে বলে উঠলেন,

” এভাবে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কাটালে দাদী ফিরে আসবে না জ্যোতি।”

আমি জানি দাদী ফিরে আসবে না।না খেলেও বকবে না আগের মতো।না ঘুমালেও আগের মতো শাসন করে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে বলবে না।দাদী আর কিছুই করবেন না আমার সাথে।কখনোই ফিরে আসবে না আমার কাছে।জ্যোতি বলে ডাকও দিবে না।সবটা জেনেই স্পষ্ট কন্ঠে বললাম,

” জানি আমি।”

মেহেরাজ ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।নিভু নিভু ক্লান্তিমাখা চাহনিতে কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে।পরমুহুর্তেই চোখমুখ টানটান করে দৃঢ় গলায় বলে উঠলেন,

” জানলে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে এভাবে মূর্তির মতো বসে আছিস কেন?কাল পরীক্ষা আছে তোর, ভুলে গিয়েছিস? পরীক্ষা দিতে গিয়ে ওখানে অসুস্থ হয়ে গেলে কি করে পরীক্ষা দিবি?এভাবে চললে তো শরীর অসুস্থ হবেই এটুকু সেন্স নেই তোর?”

আমি চোখ তুলে তাকালাম। মেহেরাজ ভাই ভ্রু উঁচিয়ে আবার প্রশ্নময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।আমি নড়েচড়ে বসলাম। উত্তরে বললাম,

” অসুস্থ হবো না আমি।এটুকু মানানোর অভ্যাস আছে আমার মেহেরাজ ভাই।”

মেহেরাজ ভাই সে উত্তরে দমে গেলেন না।বরং দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে দৃঢ় গলায় বললেন,

” তুই বাচ্চা না জ্যোতি।আমি তোকে যথেষ্ট ম্যাচিউরড ভাবতাম এতকাল।অথচ ইমম্যাচিউরডদের মতে বিহেভিয়ার করছিস। এভাবে কাটালে অসুস্থ হবি না তো সুস্থ থাকবি?এখন রাত সাড়ে বারোটা।সকাল থেকে কিছু খাস নি।ঘুমাস নি।এসবের পরও অসুস্থ হবি না?”

স্থিরভাবে একইরকম বসে থেকে দৃঢ় গলায় উত্তর দিলাম,

” সমস্যা হবে না।”

মেহেরাজ ভাই উঠে দাঁড়ালেন।পাঞ্জাবির হাতা গুঁটিয়ে বুক টানটান করে দাঁড়ালেন আমার সম্মুখেই।দাম্ভিক গলায় বললেন,

“সকালে কি বলেছিলি? নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারিস। এই নমুনা নিজের খেয়াল নিজে রাখার?”

আমি কপাল কুঁচকে তাকালাম।কিঞ্চিৎ বিরক্তিবোধও কাজ করল। জীবনে কিছু কিছু সময় আসে যখন কারোর সঙ্গই আর ভালো লাগে না।কাউকেই আর জবাবদিহি করতে মন চায় না।কারোরই সম্মুখীন হতে মন চায় না। শুধু একটা বিষয় মনে হয় তখন, একা থাকা শান্তির।চরম শান্তির!এই মুহুর্তটাও বোধহয় তেমনই। মৃদু গলায় বললাম,

” আপনি শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছেন মেহেরাজ ভাই।এসবে আমার কিছুই হবে না।আমার শরীর অতোটা আহ্লাদী নয় যে একটু থেকে একটু হলেই অসুস্থ হয়ে মূর্ছা যাব।”

মেহু আপু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।আহ্লাদী গলায় বলে উঠলেন,

” আর জেদ করিস না বোন।খেয়ে নে প্লিজ।আমি মানলাম তুই অসুস্থ হবি না। তবুও সাবধানতা বজায় রাখলে ক্ষতি কি?এটা তো যে সে পরীক্ষা নয়।বোর্ড পরীক্ষা জ্যোতি।নিজের খেয়াল রাখা উচিত নয়? নিজের অসুস্থতার জন্য পরীক্ষায় খারাপ করলে তখন তো তোর নিজেরই ক্ষতি হবে।বুঝার চেষ্টা কর প্লিজ।”

আমার প্রতি সবার উদ্বিগ্নতা দেখে তাচ্ছিল্য জমল মনের ভেতর।কত কত চিন্তা আমার জন্য।কতজন এসে বুঝিয়ে যাচ্ছে।অথচ এই আমিটার এই মুহুর্তে বাঁচার ইচ্ছেটাই নেই।ক্রমশ টের পেলাম আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে ক্ষীণ হয়ে আসছে।মেহেরাজ ভাই বোধ হয় ঠিকই বলেছিলেন, মানুষ একা বেঁচে থাকতে পারে না।আসলে পারে না।আপন মানুষের অভাবে ছটফট করে।এই মুহুর্তে আমিও ছটফট করছি।বোধ হলো, আমার আপন মানুষরা সবাই আমায় একে একে ছেড়ে গিয়েছে।সবাই!আর কেউ নেই অবশিষ্ট।মিনার ভাইও আজকাল বদলে গিয়েছে বেশ।আগের মতো আর সে মিনার ভাই নেই। আজকাল নিয়ম করে আমায় এড়িয়েও চলে।তবে আপন মানুষ আর কে?আপন বলতে বাকি যারা ছিল সবাই পৃথিবী ছেড়ে, আমায় ছেড়ে, সবাইকেই ছেড়ে চলে গিয়েছে।বাকিটা জীবন আমি এভাবে একা একা বাঁচতে পারব?আপনমানুষ বিহীন একটা পুরো জীবন! ভাবতেই শ্বাসরুদধ হয়ে আসল।অসহনীয় বোধ হলো দাদীর মৃত্যুযন্ত্রনা। দাদীর এমনটা করা উচিত হয়নি।আমাকে ছেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি।দাদী কেন করল এমনটা?কেন?সবটা জেনে আমায় এভাবে মাঝপথে ছেড়ে গেল কেন দাদী?

ভাবনা ছেড়ে বেরিয়েই অস্ফুট স্বরে উত্তর দিলাম,

” রেখেছি তো মেহু আপু।”

মেহু আপু ফের নরম গলায় প্রশ্ন করলেন,

” কিভাবে রেখেছিস?সকাল থেকে তো কিছু মুখে তুলিসনি।”

” খাবার খাওয়াকেই কি কেবল খেয়াল রাখা বলে মেহু আপু? ”

মেহু আপু বোধ হয় হতাশ হলেন।মলিন মুখে একবার আমার দিকে তো একবার মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে তাকালেন।তৎক্ষনাৎ মেহেরাজ ভাই পকেটে হাত গুঁজে বলে উঠলেন,

” মেহু, ওকে বল খেয়ে তারপর ঘুমাতে।খাবার পাঠাতে বলছি। খাবার খেয়ে যাতে ঘুম দেয়।”

মেহেরাজ ভাইয়ের কন্ঠে রাগের আভাস স্পষ্ট।আমি চোখ তুলে তাকালাম। বললাম,

” লাভ নেই মেহেরাজ ভাই।খাব না আমি।ঘুমও হবে না।আপনি চলে যান। রাত তো অনেক হয়েছে।আমার জন্য না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ুন।”

মেহেরাজ ভাইয়ের রাগটা বোধহয় এবার কিঞ্চিৎ বাড়ল।চোখমুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকালেন সেই রাগের আভাস দেখাতেই।শীতল কন্ঠে রাগ মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

” এভাবে কয়দিন অনশন করবি?কয়দিন চলবে এভাবে?পরে অসুস্থ হলে?”

প্রশ্নগুলো শুনে ছোটশ্বাস ফেললাম।স্পষ্ট কন্ঠে বললাম,

” চিন্তা নেই মেহেরাজ ভাই। আমি অসুস্থ হয়ে কাউকে ঝামেলায় ফেলব না।সে মানসিকতা নিয়ে আহার -নিদ্রা বাদ দিয়েছি এমনটা ভাববেন না।না খাওয়া, না ঘুমানো এগুলো কিন্তু কোনটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়। ক্ষিধে নেই তাই খাচ্ছি না, ঘুম পাচ্ছে না তাই ঘুমাচ্ছি না।আমার ক্ষিধে পেলে খেয়ে নিব, ঘুম পেলে ঘুমিয়ে যাব।”

মেহেরাজ ভাই বোধ হয় এবার চরমভাবে রেগে গেলেন।ধুপধাপ পা ফেলে আবারও সকালের মতোই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।মেহু আপু সেদিক পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।মলিন মুখে বসে থাকল পুরোটা সময় আমার পাশেই।

.

একটা নির্ঘুম রাত কাঁটল। প্রতিদিনের মতো আজ সকালে দাদী ঘুম ছেড়ে উঠে আমাকে ডাকল না। প্রতিদিনের মতো দাদীর সকাল বেলার চা খাওয়ার অভ্যাসের তাড়া দেখিয়ে চা বসাতে বলল না।ছোটবেলা থেকে ” দাদীর ঘর ” বলে জেনে আসা পরিচিত ঘরটায় আজ দাদী নেই।কোথাও নেই!আমার বুক ভার হয়ে আসল। নিঃশ্বাস আটকে আসল।বসা ছেড়ে উঠে মেহু আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।খারাপ লাগল।আমার জন্য শুধু শুধু উনি সারারাত এখানে বসে থাকলেন।পাশে বসে আগলে রাখলেন পুরোটা সময়। মৃদু গলায় ডাক দিলাম মেহু আপুকে,

” আপু?উঠে বিছানায় ঘুমাও। ঘাড়ে ব্যাথা করবে।”

মেহু আপু চোখ মেলে চাইল।ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,

” সকাল হয়ে গিয়েছে জ্যোতি?”

উত্তরে বললাম,

” হ্যাঁ।তুমি উঠে বিছানায় ঘুমাও। ”

কথাটা বলেই বের হলাম ঘর ছেড়ে।শান্ত দৃষ্টিতে চারপাশের নিরব পরিবেশ একবার খেয়াল করেই পুকুর পাড়ে গেলাম।পুকুর পাড়ের রাস্তার ওপাশে কিছুটা দূরে কবরস্থানে চোখে পড়ল সদ্য মাটি চাপা কবরটা। চোখ টলমল করল আমার।অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম,

” কেন করলে এমনটা দাদী?আমায় ছেড়ে যাওয়াটা কি খুব জরুরী ছিল?তোমাকে ছাড়া কি করে কাটাব পুরো একটা জীবন? কি করে?”

কথাগুলো বলতে বলতেই চোখ বেয়ে গাল গড়িয়ে পড়ল নোনতা পানি। নিচের ঠোঁট কামড়ে সেই নোনতা পানির স্রোত থামানোর চেষ্টা চালালাম।মৃদু আওয়াজে বললাম,

” এটা তুমি ঠিক করলে না দাদী।একদমই না।তুমি খুব স্বার্থপর!খুব বেশি স্বার্থপর তুমি।তোমরা সবাই স্বার্থপর। তুমি, মিথি সবাই।আমার কথা একবারও ভাবোনি। একবারও না।আমি কি করে থাকব? কাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচব আমি?আমি যে পারছি না এ কষ্…”

বাকিটুকু বলা হলো না আমার।তার আগেই শুকনো পাতার মড়মড়ে আওয়াজে কারোর পায়ের আওয়াজ শুনলাম।মুহুর্তেই চোখের পানি মুঁছে নিলাম ওড়নার কোণায়।চোখমুখ আগের ন্যায় স্বাভাবিক রেখে স্থির হয়ে দাঁড়ালাম।কানে আসল পুরুষালি কন্ঠ,

” নানীর জন্য কষ্ট হচ্ছে না তোর জ্যোতি?”

মিনার ভাইয়ের কন্ঠ শুনেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।বিধ্বস্ত চাহনী। চুল গুলো অগোছাল।চোখমুখ শুকনো। আমি একনজর তাকিয়েই উত্তরে বললাম,

” তোমার কি মনে হয় মিনার ভাই?”

মিনার ভাই বলে উঠলেন,

” আমি জানি তোর অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে।হয়তো বা নিঃশ্বাসও বন্ধ হয়ে আসছে ক্ষনে ক্ষনে।তবুও এতটা স্বাভাবিক হয়ে কেন আছিস?গুমড়ে না মরে কষ্টগুলো প্রকাশ করছিস না কেন?”

হৃদয়ে তাচ্ছিল্য উপচে পড়ল মিনার ভাইয়ের কথা শুনে।সবার কি আর কষ্ট প্রকাশ করার অধিকার থাকে?কষ্ট পেলেই কি আর সবাইকে সামলানোর জন্য আপন মানুষ থাকে? থাকে না তো।যাদের কষ্ট সামলানোর মানুষ থাকে না তাদেরকে নিজের কষ্ট নিজেকেই সামলাতরে হয়।নিজের ব্যাথা নিজেকেই হজম করতে হয়। কাঁতরাতে হয় নিঃশব্দে। ক্রমশ গুঁড়ে মরতে হয়।তুও কষ্ট প্রকাশ করা যায় না।বলা যা না হৃদয়ের গোপণ ব্যাথার গল্প।উত্তরে বললাম,

” স্বাভাবিক না থেকে অন্যদের মতো বিলাপ ধরে কান্না করলে তুমি সামলাবে মিনার ভাই?দুঃখ মনে করে ঘন্টায় ঘন্টায় মূর্ছা গেলে তুমি আগলে নিবে? যাদের দুঃখ সামলানোর কেউ থাকে না তাদেরকে দুঃখ চাপিয়ে রাখতে হয় মিনার ভাই।ব্যাথা লুকাতে হয় হৃদয়ের গহীনে।”

মিনার ভাই বুকে হাত গুঁজে বললেন,

” আমার সামনে তো তুই আগে এভাবে সব লুকিয়ে রাখতি না জ্যোতি।বদলে গেছিস অনেকটা।”

তাচ্ছিল্য নিয়ে বললাম,

” তুমিও বদলে গেছো অনেক মিনার ভাই। আগে আমায় এড়িয়ে চলতে না।এখন তো এড়িয়ে চলো। ঠিকঠাক কথাও বলো না।”

মিনার ভাই কিয়ৎক্ষন চুপ থাকলেন।তারপর কি বুঝেই বলে উঠলেন,

” ওসবের পেছনে কারণ আছে কিছু।”

মৃদু গলা জিজ্ঞেস করলাম আমি,

” কি কারণ?”

” থাক না সেসব কারণ তোর অজানা।জানলে হয়তো ভুল বুঝবি। ”

আমি আর কথা বাড়ালাম না।পুকুর পাড়ের একপাশটায় গিয়ে বসলাম।তাকালাম পুকুরের স্থির হালকা সুবজ রাঙ্গা পানিগুলোর দিকে।ততক্ষনে মিনার ভাইও অপর পাশে আমার সামনাসামনি হয়ে বসলেন।নিশ্চুপ থেকে বোধ হয় দাদীর কথাই মনে করছিল আমার মতো।আমি কিছুটা সময় বসে থেকে উঠে দাঁড়ালাম।পুকুর পাড় ছেড়ে হেঁটে আসতেই চোখে পড়ল উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা মেহেরাজ ভাইয়ের উপর।চোখমুখ টানটান করে এদিকটায় তাকিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন উনি।কেমন যেন থমথমে চাহনী।অস্পষ্ট রাগ রাগ ভাব।আমি তাকানো মাত্রই উঠোন ছেড়ে হেঁটে অন্যদিকে চলে গেলেন দ্রুত।সে চলে যাওয়াতে কি ছিল জানা নেই। তবে দৃষ্টিতে ভেসে উঠল মেহেরাজ ভাইয়ের মুখচোখে রাগ রাগ ভাব।বোধ হয় রাতে না খাওয়ার বিষয়টা নিয়েই এই রাগ। আমি সে রাগ আমলে নিলাম না।মৃদু পায়ে হেঁটে বাড়িতে যেতে লাগলাম আবারও।

#চলবে…

#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_২০
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

কাটল আরো দুই সপ্তাহ। এই কয়েকটাদিন প্রত্যেকটা রাত আমার নির্ঘুমই কাটল। অসহনীয় যন্ত্রনায় তপ্ত হৃদয় যেন দগ্ধ হয়ে আছে।জীবন্ত প্রাণ এখন আর জীবন্ত বোধ হয় না আমার কাছে।নির্জীব!নিজেকে কোন এক নির্জীব, অনুভূতিহীন, যন্ত্রমানবী বোধ হয়।যার ব্যাথা নেই, দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। আছে শুধু নিঃশ্বাস!যে নিঃশ্বাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমি বাদবাকি সকল মানুষের কাছে তাদের মতোই জীবন্ত মানুষ, জীবন্ত প্রাণী!আসলেই কি আমি জীবন্ত?মনের ভেতর উদ্ভট প্রশ্নটা জেগে উঠতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।টিনের জানালাটা মেলে দিতেই চোখে পড়ল কি ভীষণ ঘনকালো অন্ধকার।ওপাশ থেকে ঝি ঝি পোকার আওয়াজও ভেসে আসছে।সেদিক পানে তাকিয়েই আমি নিশ্চুপে কাঁদলাম। এই সময়টা আমার কান্না করার উপযুক্ত সময়।আশপাশে কেউ নেই, কোন কোলহল নেই, কোন প্রশ্নও নেই।নেই দুঃখ প্রকাশ পাওয়ার ভয়ও।আমি নিশ্চিন্তে কাঁদতে পারি এ সময়টায়।কিয়ৎক্ষন সেভাবেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে অশ্রুতে চোখ ভিজালাম।পরমুহুর্তেই দরজার আওয়াজ হলো। এই সময়টায় অন্যদিন সাধারণত মেহেরাজ ভাই খাবার নিয়ে আসেন।কিন্তু যতদূর জানা উনি আজ আসবেন না।

মেহেরাজ ভাই বা মেহু আপু কেউই আর শহরে ফিরেননি। মেহু আপু সারাদিন এখানে কাঁটালেও রাতে উনাদের বাড়িতে ঘুমানোর বিষয়টা অনেক কষ্টেই বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু মেহেরাজ ভাইকে বুঝানো দায়!এই দুই সপ্তাহে প্রত্যেকটা দিন নিজেদের বাড়িতে রান্না করে রোজ রোজ খাবার দিয়ে যাওয়া হতে নির্ঘুম রাত্রিতে আমায় সঙ্গ দেওয়া কোনটাই বাদ দেননি। মাঝে মাঝে অবাক হই মেহেরাজ ভাইয়ের অস্পষ্ট যত্নে অথবা দায়িত্বে৷ মাঝে মাঝে ভাবি, আসলেই কি সবটা কেবল মেহেরাজ ভাইয়ের দায়িত্ব? দায়িত্বের জন্য কেউ এতটুকু করে?আবার দায়িত্বের থেকে বেশিকিছু ভাবার ও সম্ভাবনা নেই। হতে পারে সহানুভূতি। কিংবা হতে পারে শুধুই দায়িত্ব। ছোটশ্বাস ফেলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।অন্যদিন খাবার নিয়ে এই সময়টায় মেহেরাজ ভাই আসলেও আজ তার সম্ভাবনা ক্ষীণ।দুপুরে মেহেরাজ ভাইয়ের পরিবর্তে আজ মেহু আপু খাবার নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন মেহেরাজ ভাই আজ সকালেই বাসায় ফিরে গিয়েছেন।মেহেরাজ ভাই নেই দেখে রান্নাটাও নাকি চাচীই করেছিলেন আজ।তাই মনে মনে ধরেই নিয়েছিলাম মেহেরাজ ভাই আজ রাতে আসবেন না খাবার নিয়ে।চোখের জল মুঁছে ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুললাম।সঙ্গে সঙ্গে মেহেরাজ ভাইকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলাম।সকালে বাসায় গিয়ে আবার আজই গ্রামে ফিরে এসেছেন?অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন ছুড়লাম,

” আপনি?”

মেহেরাজ ভাই টিফিন বক্স হাতে করে ঘরে ডুকলেন।একপাশে কাঠের চেয়ার টেনে বসে বললেন,

” কেন? অন্য কেউ আসার কথা ছিল? ”

আমি ছোট ছোট চোখে তাকালাম।মৃদু গলায় বললাম,

” না, আপনার তো আজ এই সময়ে আসার কথা ছিল না। ”

মেহেরাজ ভাই ভ্রু কুঁচকালেন।বললেন,

” প্রতিদিনই তো এই সময়ে আসি।আজ কথা নয় কেন তাহলে?”

” বাসায় ফিরে গিয়েছেন বলেছিল মেহু আপু। তাই আপনাকে এই সময়ে আশা করিনি।”

মেহেরাজ ভাই মাথা নাড়ালেন। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

” এত দেরিতে দরজা খুললি কেন?”

আমি মুহুর্তেই একটা মিথ্যে বলে বসলাম,

” ঘুমাচ্ছিলাম।খেয়াল করিনি তাই। ”

মেহেরাজ ভাই এবারও মাথা নাড়ালেন।জিজ্ঞেস করলেন,

” কাল শেষ না পরীক্ষা?”

” হ্যাঁ।”

” দুপুরে খেয়েছিস?”

” খেয়েছি। মেহু আপু খাবার দিয়ে গিয়েছিল।”

মেহেরাজ ভাই হাতের টিফিন বক্সটা এগিয়ে ধরলেন আমার দিকে।বলে উঠলেন,

” গুড। এখনও খেয়ে নে দ্রুত।”

আমি এগিয়ে নিলাম না উনার হাতের টিফিন বক্সটা।কিয়ৎক্ষন উনার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকলাম।উনার চোখেমুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট। চুলের একাংশ কপালে ঝুঁকে আছে।স্থির চাহনীতে আরো কিছুক্ষন সেভাবে তাকিয়ে থাকাতেই মেহেরাজ ভাই ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্নময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।আকস্মিক আমি সেই দৃষ্টির বিনিময়ে বলে উঠলাম,

” আমার জন্য এতকিছু কেন করছেন মেহেরাজ ভাই?এই যে আজ বাসায় গেলেন, আবার ফিরে এলেন।এতোটা জার্নি করে ফিরে আসার তো দরকার ছিল না আজ।আমার জন্য রোজ রোজ কষ্ট করে খাবার রান্না করে খাবার আনার ও তো দরকার নেই৷ এত কষ্ট করে নিজেদের বাসা ছেড়ে এখানে থাকারও কি দরকার আছে?নেই।তবুও বাসায় না ফিরে আমার জন্য আপনারা ভাইবোন দুইজনই গ্রামে পড়ে আছেন, রান্না করে দিয়ে যাচ্ছেন, জোর করে খাওয়াচ্ছেন।কেন করছেন এতসব?”

মেহেরাজ ভাই গম্ভীর চাহনীতে চাইলেন। বললেন,

” তুই হলে কি কি করতি?পাশে না থেকে ছেড়ে চলে যেতি এমন একটা সময়ে?”

শান্ত গলায় উত্তর দিলাম,

” জানা নেই।”

মেহেরাজ ভাই গলা ঝাড়লেন।একদম শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে লাগলেন,

” হিসেব মতো তোর আর আমার বিয়েটা হয়েছে।চাই বা না চাই আমরা একটা বন্ধনে জড়িয়েছিলাম জ্যোতি।এটা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতই হোক,তবুও দিনশেষে এটা সত্য।একজন স্বামী কখনো তার স্ত্রীকে এমন দুর্দশায় ছেড়ে যায় না।স্ত্রীর পাশে থাকাটা স্বামীর দায়িত্ব, রাইট?দ্বিতীয়ত স্বামী না হলেও, একজন মানুষ হিসেবে হলেও আমার মনে হয়েছে এটা আমার দায়িত্ব জ্যোতি।একজন মানুষ হিসেবেই হোক কিংবা একজন স্বামী হিসেবেই হোক, তোকে এই মুুহুর্তে এভাবে একা রেখে ছেড়ে গেলে নিজেকে মনুষ্যত্বহীন বোধ হবে।আমি অতোটা মনুষ্যত্বহীন নই।”

মেহেরাজ ভাইয়ের উত্তরে আবারও দায়িত্ব শব্দটাই উঠে আসল দৃঢ় ভাবে৷ উত্তরটা হয়তো আমার জানাই ছিল।তবুও কেন জানি না মেনে নিতে পারলাম না।ভেতরে ভেতরে কষ্ট অনুভব করলাম।এতগুলো দিনের যত্ন, শাসনে একটু হলেও বোধহয় আমার মন অন্য ধারণা পুষে নিয়েছিল। যদিও মস্তিষ্ক জানত এই ধারণা মিথ্যে। তবুও কেন জানি না আমি সহ্য করতে পারলাম না কথাগুলো।থম মেরে চুপ করে থাকলাম আরো কিছুক্ষন।তারপর স্বাভাবিক হয়ে মেহেরাজ ভাইয়ের হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে স্পষ্ট কন্ঠে বললাম,

” একটা অনুরোধ রাখবেন মেহেরাজ ভাই?দায়িত্বের জন্য আমায় মায়া দেখাবেন না। আমার জীবনে বহুবার মায়া ভেঙ্গেছে। বহুবার আমি মানুষ হারিয়েছি।বহুবার আমি একা অনুভব করেছি। তাই এখন আর মানুষের মায়া জড়াতে চাই না।আসলে মানুষের মায়ায় জড়াতে ভয় পাই।ভয় পাই কাউকে অভ্যাসে পরিণত করতে।এই ধরুন, দাদী।দাদী তো আমার সকাল হতে রাত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা মুহুর্তের সঙ্গী ছিল, অভ্যাস ছিল।দিনশেষে সেই অভ্যাসও ভেঙ্গেছে।তাই আজকাল নতুন করে কাউকে পাশে পেলে ভয় হয়। তাই অনুরোধটা রাখবেন দয়া করে। মিথ্যে মায়ায় জড়াতে চাই না। পুনরায় এই মায়া ভাঙ্গার কষ্ট কিংবা মানুষ হারানোর কষ্ট সইতে চাওয়াটা আমার জন্য বেমানান।আমি সে কষ্টটা পুনরায় চাই না।কখনোই না।আপনি বরং ফিরে যান। ”

মেহেরাজ ভাই শুনলেন সবগুলো কথা।তারপর শান্তস্বরে বললেন,

” তোর পরীক্ষা শেষ হলে পরশুই ফিরব। তুই, মেহু, আমি তিনজনই।”

” আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাও তো আপনার দায়িত্ব।”

মেহেরাজ ভাই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়লেন,

” মানে?”

ছোট শ্বাস ফেললাম।উত্তরে বললাম,

” আমার ফেরাটা জরুরী নয়।কিন্তু আপনাদের ফেরাটা জরুরী মেহেরাজ ভাই।মেহু আপুর ভার্সিটি। আপনার চাকরীর ইন্টার্ভিউ, পড়া সবকিছুতেই আমার জন্য ব্যাঘাত ঘটছে।আমার জন্য অতোটা ভাববেন না।আমি এই ঘরে থাকতে সে ছোটকাল থেকেই অভ্যস্ত। এই বাড়িটাও আমার ছোটকাল থেকে চেনা। এখানে আমার একা থাকাটা খুব বেশি ভয়ানক কিছু নয়। আমি ছোটকাল থেকে রান্নাও করতে পারি মেহেরাজ ভাই।দাদীর আর আমার রান্নাটা কিন্তু আমিই করতাম এতকাল।তাই খাবার নিয়েও চিন্তা করবেন না।আমি ভালো থাকব। আপনি ফিরে যেতে পারেন।”

মেহেরাজ ভাই বোধ হয় বিরক্ত হলেন।কপাল কুঁচকে নিলেন। ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,

” তোর সব কথা শুনব এমনটাই বা ভাবছিস কেন?”

” মানে?”

মেহেরাজ ভাই কন্ঠে শীতল রাগ মিশিয়ে বলে উঠলেন,

” মানে পরশু ফিরব। তুইও ফিরবি সাথে। ”

” আপনি খুব দায়িত্ববান পুরুষ মেহেরাজ ভাই। এটা আমি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করি।আমি নই শুধু, সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু তার জন্য…”

আমি বাকিটা বলতে পারলাম না। তার আগেই মেহেরাজ ভাই বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,

” তুই খুব বেশি কথা বলিস জ্যোতি।বিরক্তিকর লাগে। চুপচাপ খেয়ে নে। আমি আসছি বাইরে থেকে।”

কথাটা বলেই মেহেরাজ ভাই বসা ছেড়ে উঠে বুক টানটান করে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।পা বাড়িয়ে টিনের দরজাট পেরিয়ে বাইরে চলে গেলেন খুব কম সময়ে। আমি একনজর তাকিয়েই টিফিন বক্স খুলে খাবার নিলাম থালায়। কিয়ৎক্ষন পর খেয়ে হাত ধুঁয়ে উঠতেই মেহেরাজ ভাই হাজির হলেন আবারো। ভ্রু কুঁচকে টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

” প্রতিদিন খাবার থেকে যায় কেন? ”

” মানে?”

মেহেরাজ ভাই মুখটা গম্ভীর করে তাকালেন। ভরাট কন্ঠে রাগসমেত বলে উঠলেন,

” কষ্ট করে রান্না করি। তুই খাবার এভাবে রেখে দিস কেন বক্সে?পুরোটা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসিনি?”

উত্তরে কি বলব বুঝে উঠলাম না আমি।মেহেরাজ ভাই আগের মতোই গম্ভীর স্বরে বললেন,

” কাল থেকে খাবার রেখে দিলে খাবারই আনব না বলে দিলাম।”

মৃদু স্বরে বললাম,

” আমি তো আপনাকে খাবার আনার জন্য জোর করিনি মেহেরাজ ভাই।”

মেহেরাজ ভাই থমথমে চাহনীতে তাকালেন। কিছু না বলে সোজা হেঁটে চলে গেলে খাটের সামনে। মুহুর্তেই সটান হয়ে খাটের একপাশে গা এলিয়ে দিলেন। কপালে হাত রেখে চোখ ও বুঝে নিলেন। আমি কেবল তাকিয়ে থাকলাম।

.

পরীক্ষা দিয়ে যখন ফিরলাম তখন ফুফু ডেকেছিলেন।গোসল সেরে তাই ফুফুদের ঘরে গিয়েছিলাম ফুফুকে খুঁজতে।না পেয়ে আরমান ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন ফুফু মিনার ভাইয়ের ঘরে আছেন।আমিও কথামতো মিনার ভাইয়ের ঘরে গেলাম।দেখলাম ফুফু মিনার ভাইয়ের আলমারির কাপড়চোপড় গুলো গুঁছিয়ে রাখছে।খাটের এককোণায় বসে সেই দৃশ্যই পর্যবেক্ষন করতে লাগলাম আমি। কিছুক্ষন পর ফুফুর সাথে অল্প কথা বলে চলে আসতে নিতেই মিনার ভাইয়ের টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলাম ভয়ানকভাবে।মুহুর্তেই মিনার ভাইয়ের টেবিলের কিনারা ঘেষা বইগুলো সব মাটিতে পড়ে গেল।সঙ্গে পড়ল একটা সাদা কাগজ আর কলম।ধাক্কা খাওয়ার কারণে ব্যাথায় পা টনটন করে উঠাতে হাত দিয়ে পা চেপে ধরলাম সঙ্গে সঙ্গেই।অন্য হাতে কাগজটা সামনে নিতেই চোখে পড়ল কাগজটার উপর দিকে আমার নাম।আমি ভ্রু কুঁচকালাম।মিনার ভাই কি আমার নামেই চিঠি লিখেছেন বা লিখছিলেন?কিন্তু কেন?আগ্রহ নিয়ে কাগজটা ওড়নার এককোণায় লুকিয়েই বইগুলো টেবিলের উপরে আগের মতোই তুলে রাখলাম। পরমুহুর্তেই দ্রুত পা চালিয়ে নিজের ঘরে গেলাম।কাগজখানা মেলে ধরলাম চোখের সামনে। মুহুর্তেই চোখে পড়ল গুঁটি গুঁটি অক্ষরে লেখা,

জ্যোতি,

তোকে সম্বোধন করার মতো নির্দিষ্ট কোন শব্দ আমার কাছে নেই জ্যোতি।থাকলেও এখন আর সেসব সম্বোধন তোর সাথে দেওয়া যায় না।বড্ড বেমানান ঠেকবে যে তাহলে।তোর প্রতি আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা কবে তৈরি হয়েছিল আমার সত্যিই জানা নেই।শুধু জানতাম আমি তোকে আগলে রাখার চেষ্টা করতাম।তুই যাতে কষ্ট না পাস সে চেষ্টা করতাম। একটা সময় পর উপলব্ধি করলাম সে আগলে রাখার নাম ভালোবাসা।এই ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করার সাহস কোনকালেই আমার মাঝে ছিল না।সেই সাহস না থাকার কারণেই বোধহয় তোকে নিরবে অন্যের হয়ে যেতে দেখতে হলো।চোখের সামনে থেকে দূরে যেতে দেখতে হলো।তোকে এড়িয়ে চলতে শুরু করাটা মূলত তখন থেকেই।সেদিন যখন বললি আমি বদলে গেছি?আমি এখন এড়িয়ে যাই তোকে? অপরাধবোধে জর্জরিত হচ্ছিলাম কেবল। তবুও এর পেছনে কারণটা আর বলা হলো না।বলতে পারলাম না।পারলাম না দাদীর চলে যাওয়ার কারণে কষ্টে জমে থাকা তোকে আগের মতো ভাঙ্গতে,আগলে নিতে।পারলাম না আগের মতো তোর দুঃ

এরপর আর কিছু লেখা নেই।বোধহয় ব্যস্ততায় আর লিখেনি।কিংবা কোন কারণে লেখাটা থামাতে হয়েছিল। আমি লেখাগুলোর দিকে আরো একবার তাকালাম। স্পষ্ট বোধ হলো এগুলো মিনার ভাইয়েরই লেখা ।অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকলাম আরে অনেকক্ষন।মিনার ভাই আমায় ভালোবাসতেন?যাকে ছোট থেকে ভাই হিসেবে দেখে এসেছি, এত এত আপন ভেবেছি সে আমায় অন্য নজরে দেখতেন এমনটা ভাবতেই পারলাম না।কপাল কুঁচকে এল।ঠিক সে সময়েই চোখের সামনে মেহেরাজ ভাইকে ঘরে ডুকতে দেখলাম।কাগজটা দ্রুত টেবিলের ড্রয়ারে লুকাতে গিয়েই সম্মুখীন হলাম মেহেরাজ ভাইয়ের কড়া প্রশ্নের,

” এতোটা তাড়াহুড়ো করে কি লুকোচ্ছিস তুই?”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে