#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_১১
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
” জ্যোতি তুই কি এই পরিস্থিতির জন্য আমাকেই দায়ী করিস কেবল?তোর জীবনটা কি আমিই নষ্ট করি দিয়েছি ভাবিস?নাকি তোর দমবন্ধ অনুভূতির কারণ এই বিয়েটা?বিয়েটা থেকে মুক্তি চাস কি তুই?আমায় সবটা জানাতে পারিস নির্দ্বিধায়।”
মেহেরাজ ভাইয়ের শীতল কন্ঠে আকস্মিক প্রশ্ন শুনে চোখ ঘুরিয়ে তাকালাম আমি।কালকের মতোই পানির বোতল হাতে নিয়ে দরজার দ্বারে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। রাত প্রায় একটা ছুঁইছুঁই।সামনে পরীক্ষা বলেই পড়ছিলাম।আজও মেহেরাজ ভাই এভাবে হাজির হবেন আমি ভাবিনি।কিয়ৎক্ষন তাকিয়েই পুনরায় দৃষ্টি সরাতেই মেহেরাজ ভাই আমার সামনে এলেন।চেয়ার টেনে বসে শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,
” সামান্তা যদি কিছু বলে থাকে তা সিরিয়াসলি নিস না।মেহু বলল ও তোকে ছাদে দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করেছে?তুই কি সিরিয়াসলি নিয়েছিস?আশা করি তোকে তা বলেও দিতে হবে না।তুই খুব ম্যাচিউরড জ্যোতি। এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে তোর।তাই না?”
আমি মনে মনে হাসলাম।তখন সামান্তা আপু যা বলেছিল তার জন্যই বুঝাতে এসেছেন উনি?কিন্তু বুঝানোর কি প্রয়োজন?আমি কষ্ট পেলে উনার কিংবা অন্য কারোর ও বিশেষ ক্ষতি হবে কি?হবে না।তবে বুঝানোর কি প্রয়োজন?মেহেরাজ ভাই আবারও বললেন,
” কালকে রাতে তোর বলা কথাগুলো আমি অনেকক্ষন ভেবেছি। ভেবে মাথার মধ্যে এই ভাবনা কাজ করছে যে, এই বিয়েটা বোধ হয় আমার দোষের জন্যই হয়েছে।কিন্তু এটা সত্যি যে, বিয়েতে আমারও মত ছিল না জ্যোতি।আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় আমি মাথায় নিয়ে সেদিন তোকে স্যরিও বলেছিলাম।আজ প্রয়োজন হলে আবারও বলছি।”
আমি এবার মাথা তুলে চাইলাম।মেহেরাজ ভাইয়ের দৃষ্টি শান্ত। কন্ঠ শীতল।যেন কোন রাগ নেই আজ।কেমন স্নিগ্ধ চাহনী।নির্বিকারভাবে দুয়েক পলক তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠলাম,
” স্যরি বলেছিলেন।মনে আছে আমার।এখন কি করা উচিত আমার মেহেরাজ ভাই?”
মেহেরাজ ভাই আগের মতোই তাকালেন শান্তভাবে।বললেন,
” তুই আমাকেই কেন শুধু দায়ী করছিস এই পরিস্থিতির জন্য?”
আমি একপলক তাকিয়ে শান্তভাবে বললাম,
” আচ্ছা, আপনি দায়ী নন।আর কিছু?”
মেহেরাজ ভাই এবার চুপ হয়ে গেলেন।আমি হালকা হেসে বললাম,
” আপনি ইনিয়ে বিনিয়ে এই বিয়েটা থেকে মুক্তি চাইছেন মেহেরাজ ভাই?আমি খুব ভালোভাবে জানি আমি আপনার আর সামান্তা আপুর মাঝখানে চলে এসেছি দুর্ভাগ্যবশত।কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমারও এতে দায় নেই।আমি কখনো আপনাদের সুখ কেড়ে নিতে চাই নি।শান্তি কেড়ে নিতে চাইনি।আপনি চাইলে সামান্তা আপুর সাথে সম্পর্কটা আগের মতোই চালিয়ে যেতে পারেন। আমি বাঁধা দিব না।তবে বিয়েটা থাকুক।হুহ?বিয়েটা ভাঙ্গবেন না।এমন নয় যে আমি আপনার সামনে বিয়ে নিয়ে কোন অধিকার দাবি করব।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি খুব শীঘ্রই চেষ্টা করব গ্রামের বাড়িতে দাদীর কাছে ফেরত যাওয়ার।আপনি চাইলে সামান্তা আপুকে বিয়ে করতে পারেন।এমন তো অনেকই হয় যে একজন পুরুষ দুই- তিনটে বিয়ে করে।তাই না?”
কথাগুলো একদমে বলে ফেলেই থামলাম।পরমুহুর্তে মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে একপলক তাকাতেই শিউরে উঠলাম।এতক্ষন যতোটা শান্ত, স্নিগ্ধ চাহনী ছিল এখন ঠিক ততোটাই রাগ মিশ্রিত হলো তার চাহনীতে।চেহারায় জ্বলজ্বল করল অদৃশ্য রাগ!চোখজোড়াও লালচে দেখাল।আমি তাকিয়ে রইলাম এক দৃষ্টিতে।মেহেরাজ ভাই শীতল অথচ শক্ত গলায় বলে উঠলেন,
” তোর কি আমাকে তেমন পুরুষ মনে হয় জ্যোতি?যে বিয়ে করেও পরকীয়ায় জড়াবো আমি?তোরা মেয়েরা পুরুষদের কি ভাবিস আসলেই জানা নেই।তোদের কি মনে হয় পুরুষরা মেয়ে বলতেই পাগল?যেখানেই মেয়ে দেখছে সেখানেই মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে?মেয়েদের বিয়ে করে নিচ্ছে?”
ছোট্টশ্বাস ফেলে উত্তর দিলাম,
” আপনি কথাগুলোকে নেগেটিভলি নিচ্ছেন মেহেরাজ ভাই।যেখানেই মেয়ে দেখছেন সেখানেই সম্পর্কে জড়াচ্ছেন কিংবা বিয়ে করছেন, এমন কোন কথা আমি উল্লেখ করিনি।আমি উল্লেখ করেছি আপনাদের ভালোবাসার কথা।দুইজন দুইজনকে ভালোবেসেছেন। বিয়ে করার, সংসার করার স্বপ্ন দেখেছেন।আমার জন্য কেন সেসব থেমে যাবে?”
মেহেরাজ লালভ দৃষ্টিতে তাকিয়েই বলে উঠলেন কঠোর গলায়,
” আমি যদি চাইতাম তবে সেদিনই বিয়েটা থেমে যেতে পারত জ্যোতি।আমি চাইলে তোকে বিয়ে না করে চলে আসতে পারতাম।পারতাম না?কেন করিনি?কারণ আমি অতোটাও মনুষ্যত্বহীন নই।অতোটাও অমানুষ নই। আমার জন্য তোকে এসবের দায় নিয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হবে মানতে পারতাম না।তাহলে নিজেই নিজের কাছে অনেক নিচু হয়ে যেতাম।তখন বিয়েটা অনেক ভেবেচিন্তেই করেছিলাম।পুরোরাত ভেবেছিলাম।ভালোবাসার কথা ভাবলে সেদিনই বিয়েটা করতাম না।আর একটা কথাও মাথায় রাখিস, আমি অন্যায় কাজে মত দিতে পারি না।না তো, দু নৌকায় পা দিয়ে চলতে পারি।”
তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।প্রশ্ন ছুড়লাম,
” দয়া করেছেন মেহেরাজ ভাই?আমার কি কৃতজ্ঞবোধ প্রকাশ করা উচিত আপনাকে?”
” সারারাত ভেবে চিন্তে যখন বিয়েটা করেছিলাম যেহেতু অবশ্যই যুক্তি নিয়ে করেছিলাম।দয়া হলে সেটা বিয়ে পর্যন্ত যেত না জ্যোতি।”
আবারও প্রশ্ন করলাম তাচ্ছিল্য নিয়ে,
” তবে?বিয়েটা করে দায়িত্ব পালন করেছেন?”
মেহেরাজ ভাই উঠে দাঁড়ালেন। টাউজারের পকেটে হাত গুঁটিয়ে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেললেন।তারপর বললেন,
” আমার দ্বারা অন্যায় কাজ হয় না সচারচর।তোকে বিয়ে না করলে বিষয়টা সেদিন চরম অন্যায় হতো।হয়তো বা নিজেকেই ক্ষমা করতে পারতাম না।আমি যেটা বলতে এসেছিলাম, সামান্তা হয়তো নিজের হুশে নেয়।আদরে, আহ্লাদে বেড়ে উঠেছে ও।বয়সে তোর থেকে বড় হলেও ও তোর থেকে বেশ ইমম্যাচিউরড জ্যোতি।পরবর্তীতেও যদি ও এমন কোন দোষারোপ করে বুঝে নিতে পারবি না নিজ থেকে?”
আমি আনমনর হাসলাম।প্রিয় মানুষকে এতটাই ভালোবাসেন যে তারই প্রিয় মানুষের আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেয়ে ভুল বুঝুক এটাও চাননা।কত ভালো গুণ!মাঝেমাঝে আপসোস হয়!মেহেরাজ ভাই যদি এই ভালোবাসাটা আমায় দিতেন, ঠিক এভাবেই আমায় ভালোবাসতেন?খুব বেশি ক্ষতি হতো কি?হয়তো হতো।হয়তো এই কঠিন হৃদয়ের মানুষটির ভালোবাসা হারিয়ে সামান্তা আপুর মতোই পাগলপ্রায় অবস্থা হতো আমার।তার থেকে না হয় এই সর্বনাশা ভালোবাসা না পাওয়ায় শ্রেয়!
.
মেহু আপু আর মেহেরাজ ভাই বেরিয়ে যাওয়ার পরই শিমা আপা আসলেন।আমি হালকা হাসলাম।শিমা আপা বেশ অদ্ভুত মানুষ।কেমন জানি ক্ষ্যাপাটে স্বভাব।কথা বলার ক্ষেত্রে কি কিি বললে কেউ কষ্ট পাবে, আঘাত পাবে না ভেবেই কথা বলে যান।তবুও এই ক্ষ্যাপাটে মহিলার সাথে আমার দুই চারটা কথা হয় এই অনেক।শিমা আপাকে রান্না ঘরে টুকটাক সাহায্য করে রান্না প্রায় শেষ হয়ে আসতেই আমি গোসলের জন্য গেলাম।কিছুক্ষন পর বের হয়ে ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে মুঁছতে মুঁছতেই কানে এল শিমা আপার কন্ঠ,
“জ্যোতি মাইয়াডার মায় নাকি ছোডবেলায় মাইয়াডারে রাইখা অন্য পুরুষের লগে পালাইয়া গেছে।হায়রে!কেমন হের মা আর কেমনই বা হের মার চরিত্র!মাইয়ার দিকেও তাকাইল না ঐ মায়?নাজানি মাইয়াডার চরিত্র কেমন হয়।বড় ভাই তো বহুত ভালা মানুষ।ভালো মাইনষের কপালে ভালা জুটলেই ভালা।”
শিমা আপার বলা কথাগুলো শুনে পা থেমে গেল আমার।গ্রামের বাড়িতে মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা শুনতে শুনতে এখন এসবে আর বিশেষ অপমানিত বোধ করি না।বরং অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।কিন্তু এখানে এসেও যে সে একই অপমানের সম্মুখীন হতে হবে কখনো ভাবিনি আমি।শুকনো ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে থাকতেই এবার আরো একটা কন্ঠস্বর কানে এল।কন্ঠস্বরটা ফাতেমা আন্টির। শিমা আপার কথাগুলোকে বেশ গুরুত্ব দিয়েই উনি বলে উঠলেন,
” সে কি বলো শিমা।মেয়েটারে দেখতে তো নম্র ভদ্র পরিবারেরই লাগল।মেয়ের মা যে এমন ছিল তা তো শুনিনি।তুমি কার কাছে শুনলে এমন কথা?”
” আরে নাবিলা আপার আম্মাই কইছে আমারে।”
” সত্যি নাকি?মেহেরাজ প্রেম ট্রেম করে শেষ পর্যন্ত এমন মেয়ে বিয়েই বা করল কেন?হয়তো মেয়েটা ভালো।মেয়ের মা ছিল আরকি তেমন।নয়তো মেহেরাজের মতো বুদ্ধিমান ছেলে নিজ থেকে বিয়ে করত নাকি এমন মেয়েকে?”
” নিজ থেইকা বিয়া করল কে কইল?বিয়া তো ওগো জোর কইরা দিল। সে বহুত কাহিনী!আপনে আবার এডি কারোরে বইলেন না ফাতেমা আপা।”
ফাতেমা আন্টি মাথা নাড়ালেন।মুহুর্তেই বলে উঠলেন,
” আরেহ না না, বলব না।”
কথাটা বলে সামনে তাকাতেই আমাকে দেখে চমকে গেলেন।চোখ বড়বড় করে বলে উঠলেন,
” একি মা!তুমি গোসল সেরে বের হলে নাকি?একটু এসেছিলাম বাসায় একা একা কি করছো দেখতে।দেখি শিমা রান্না করছে তাই ওর সাথে কথা বলছিলাম।”
আমি সৌজন্যতা দেখিয়ে হাসলাম।মানুষজাতি অদ্ভুত!পেছনে পেছনে একটা মানুষের নামে চরম পর্যায়ের খারাপ কথা বলতে পারলেও সামনে এলেই প্রশংসার জুড়ি মেলে।বললাম,
” ভালো তো।বসুস আন্টি।”
আন্টি বসলেন না।হেসে বলে উঠলেন,
” না না, মা।কাজ আছে বাসায় অনেক।যেতে হবে যে।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না।আন্টি চলে যেতে নিয়েও থেমে গেলেন যেন।বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়েই পরখ করলেন কি যেন।আমি স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফাতেমা আন্টির দৃষ্টি দেখছিলাম।হঠাৎই চোখে চোখ পড়ল।চোখাচোখি হলো।সঙ্গে সঙ্গে আন্টি থমমত খেয়ে গেলেন।আমি হাসলাম।দু পা বাড়িয়ে কিছু বলব ঠিক তখনই কলিং বেল বাঁজল।ঘাড় ঘুরিয়ে একপলক দরজার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলাম।পরমুহুর্তেই দরজা খুলে চমকে গেলাম আমি।আব্বা আর মেহেরাজ ভাই দুইজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা চালালাম।মনে মনে ভাবলাম, আব্বা কেন আসল?এতদূর পাড়ি দিয়ে আব্বা কি আমাকেই দেখতে এল?আমি কেমন আছি তা দুচোখে দেখার জন্যই এলেন?কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই অনুভব করলাম কষ্ট হচ্ছে আমার।আজ যদি অন্যসব বাবা মেয়ের মতে আমার আর আব্বার সম্পর্কটাও স্বাভাবিক থাকত কত ভালো হতো।কি দোষ করেছি আমি?আমি কষ্টকে দমিয়ে নিলাম।আব্বাকে দেখে কেমন আছে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো।দেরিও করলাম না।দ্রুত সালাম দিয়ে বললাম,
” কেমন আছেন আব্বা?দাদী ভালো আছে?বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
আব্বা আমার দিকে তাকালেন।আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গলা ঝাড়লেন।তারপর কিছু বলতে নিতেই আকস্মিক এক ঘটনা ঘটল।নিচতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত ছুটে এলেন সামান্তা আপু।চোখমুখে কান্নার স্পষ্ট চিহ্ন।আমি নির্বিকার ভাবে উনার ছুটে আসার দিকেই তাকিয়ে থাকলাম।কিন্তু তার পরমুহুর্তেই আরো এক আকস্মিক ঘটনা ঘটালেন তিনি।হুট করেই এসে মেহেরাজ ভাইকে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।আব্বা বোধ হয় সেই দৃশ্য দেখে আমার থেকেও বেশি অবাক হলেন।চোখমুখে সে অবাক হওয়ার রেশ দ্রুতই জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠল তার।
#চলবে…
#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_১২
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
আব্বা বোধ হয় চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।মুখভঙ্গি বিদ্ঘুটে করে তাকালেন মেহেরাজ ভাইয়ের দিকেই।সামান্তা আপু দুই হাতে ঝাপটে জড়িয়ে আছেন মেহেরাজ ভাইকে।চোখজোড়া দিয়ে অঝোরে বইছে নোনা পানি।সেই নোনা পানি মুহুর্তেই ভিজিয়ে তুলল মেহেরাজ ভাইয়ের ছাঁইরাঙ্গা টিশার্টকে।নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে সেই দৃশ্য অবলোকন করে কান্না পেল আমারও।বুকের গহীনে কষ্টরা সুপ্তভাবে জানিয় গেল তাদের উপস্থিতি।তবে সেটা সামান্তা আপুর জন্য নয়।কষ্টটা নিজের অনুভূতির পুরুষকে অন্য কেউ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বলে।কান্নাটা নিজের সাধের পুরুষের বুকে অন্য কারো মুখ গোঁজা দেখে।শুধু আজ নয়, যখনই আমার চোখের সামনে সামান্তা আপু মেহেরাজ ভাইকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছেন তখনই আমি এই কষ্ট অনুভব করেছি। এই রুদ্ধশ্বাস অস্থিরতা আমি টের পেয়েছি।তবুও যে কান্না করা, কষ্ট পাওয়া বারণ আমার।কারণ যেখানে অধিকার নেই সেখানে এসব শুধুমাত্র তাচ্ছিল্যেরই চিহ্ন।আমি কষ্ট দমিয়ে স্বাভাবিক থাকলাম।তাকিয়ে রইলাম সেদিক পানেই। মেহেরাজ ভাই ক্রমশ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন।প্রথম ধপায় ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা করলেও পরের ধপায় আচমকায় বলিষ্ঠ হাত জোড়া দিয়ে সামান্তা আপুকে ঠেলে দূরে সরালেন। রক্তলাল চক্ষু নিয়ে কন্ঠ কঠিন করে বলে উঠলেন,
” সামান্তা, আগেও বলেছি। এখনও বলছি, এসব কোন ধরণের বেয়াদবি?একটা মেয়ে হয়ে তোমার নিজের কোন সম্মান নেই?এভাবে নিজের মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে বেহায়ার মতো একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরা কোন ধরণের সভ্যতার প্রকাশ?”
সামান্তা আপু ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলেন মেহেরাজ ভাইয়ের ধমকে।হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
” পুরুষটা তুমি বলেই জড়িয়ে ধরেছি।বিশ্বাস করো, রাজ ভাইয়া।আমি এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুমি বিয়ে করে নিয়েছো। তুমি আর আমার নেই এটা আমি মানতে পারছি না।তুমি কেমন ভালোবেসেছিলে আমায়? ভালোবাসলে তো অন্য কাউকে বিয়ে করতে না রাজ ভাইয়া।এতগুলো দিনের সম্পর্ক ভুলে গিয়ে এক মুহুর্তেই বিয়ে করে নিলে?আমায় তুমি ভালোবাসোনি রাজ ভাইয়া।কোনদিনই বাসোনি।ঠকিয়েছো।”
শেষের কথাগুলো খুব অভিমান নিয়েই বললেন সামান্তা আপু।মেহেরাজ ভাই তপ্ত শ্বাস ফেলে একবার সামান্তা আপুর মুখের দিকে চাইলেন।তারপর বলে উঠলেন,
” তোমার নিজেকে স্বাভাবিক করা উচিত সামান্তা।নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা উচিত।এসব পাগলামো করে কদিন কাঁটবে? কিই বা হবে?তার থেকে সব ভুলে যাওয়া বেটার।ভালো থাকবে। আর,আমি যদি ভালো নাই বেসে থাকি।তোমাকে যদি ঠকিয়েই থাকি তবে তোমার তো উচিত আমার কাছেপাশে আর না ঘেষা।আমাকে ঘৃণা করা উচিত।তাই না?”
সামান্তা আপু জড়ানো গলায় বলে উঠলেন,
” তুমি না বাসলেও আমি তো বেসেছিলাম। এখনও ভালোবাসি।শুধু এই কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে তোমার আর জ্যোতির বিয়ে হওয়াটা আমায় ভালো থাকতে দিচ্ছে না।কান্না পাচ্ছে, অসহ্য লাগছে সব।বুকের ভেতর অস্থির লাগছে।কিচ্ছু ভাল্লাগছে না আমার রাজ ভাইয়া।সব আবার আগের মতো ঠিক করে দাও না। প্লিজ। আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি নামক সর্বনাশা প্রেমিক আমার জীবন থেকে চলে গিয়েই বুঝিয়ে দিলে আমার জীবনে কি ভীষণ সর্বনাশ ঘটেছে। ”
মেহেরাজ ভাই পকেটে হাত গুঁটিয়ে লম্বা শ্বাস টানলেন।শান্ত গলায় বললেন,
” বিয়েটা হয়ে গিয়েছে।এটাই সত্য।মেনে নাও, নিজেকে মানিয়ে নাও। ভালো থাকবে। বাসায় যাও এখন।”
সামান্তা আপু অশ্রুভরা চোখে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন।তারপরই তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন।আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটুকুই দেখে গেলাম।একনজর আব্বার দিকে তাকাতেই দেখলাম আব্বার মুখাবয়ব কঠিন রূপ নিয়েছে।বোধ হয় দৃষ্টিটাও প্রখর।পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ফাতেমা আন্টি আর শিমা আপা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন।যেন কিছুক্ষন আগের দৃশ্যটা তাদের কাছে চমকপ্রদ কিছু।শিমা আপা কিছু না বললেও ফাতেমা আন্টি যেতে যেতেই মেহেরাজ ভাইকে বললেন,
” মেহেরাজ বিয়ে করেছো বললে সেদিন।বউ আছে বাসায়।বুঝলাম তোমার সাথে সামান্তার সম্পর্ক ছিল, তা বলে বিয়ের পর বউয়ের সামনেও প্রেমিকার সাথে প্রেম করাটা কেমন সভ্যতা?তোমার থেকে তো এটা আশা করা যায় না মেহেরাজ।”
কথাগুলো বলেই চলে গেলেন ফাতেমা আন্টি।মেহেরাজ ভাইয়ের মুখচোখ দেখে সুবিধার বোধ হলো না।বোধ হয় ভেতরে ভেতরে রাগে সমস্তটা জ্বলে যাচ্ছে তার।আমি ইতস্থত বোধ করে আব্বার উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম,
” আব্বা ভেতরে আসুন না।বসুন।”
আব্বা চুপচাপ হাতে থাকা ব্যাগগুলো নিয়ে ভেতরে আসলেন।বাদবাকি বাবাদের মতোই মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে আসতে ব্যাগভর্তি জিনিস আনা আধৌ কতটুকু যুক্তিযুক্ত বুঝলাম না।আব্বা থম মেরে সোফায় বসে নির্বিকার ভাবে চেয়ে থাকলেন মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে।ছোটবেলায় যখন আমার কিংবা চাচাতো ভাই বোনদের রেজাল্ট আব্বার আশানুযায়ী হতো না ঠিক তখনই আব্বা এমন করে তাকিয়ে থাকতেন। যেন অনেক আশার জিনিসই আজ তাকে অপমানে অপমানে রাঙ্গিয়ে তুলেছে।বুঝলাম বিষয়টা অবশ্যই মেহেরাজ ভাই।আব্বাসহ বাড়ির সবার কাছেই মেহেরাজ ভাই মহান।সে কারণেই বোধহয় আব্বা আশাহত হলেন।পরমুহুর্তেই আব্বা আমার দিকে তাকালেন।বরাবরের মতোই গম্ভীর গলায় বললেন,
” তুই ভালো আছিস এখানে?”
আব্বার প্রশ্নে কেন জানি না ভালো লাগা কাজ করল।বোধহয় আব্বা সচারচর এমন প্রশ্ন করেননি বলেই।মনে হলো, ইশশ!বিয়ে করলে যদি অন্যদের বাবাদের মতো আব্বাও খোঁজখবর নেয়, আমাকে অন্য বাবাদের মতোই ভালোবাসেন তবে বোধহয় আরো কয়েকবছর আগেই বিয়ে করে ফেলা উচিত ছিল।আর কিছু পাই বা না পাই, আব্বার স্নেহ তো পেতাম।নিজের অবুঝ ভাবনায় নিজেই হাসলাম আনমনে। স্বাভাবিক ভাবে বললাম,
” ভালো থাকব না কেন আব্বা?”
আব্বা আর কিছু বললেন না।থমথমে মুখ করে বসে রইলেন।আমি পা বাড়িয়ে রান্নাঘরে গেলাম।শিমা আপার রান্না শেষ। তাই আর দেরি করল না।আমি রান্নাঘরে ডুকা মাত্রই আমাকে বলে চলে গেলেন দ্রুত।আমি একপলক তাকিয়ে নাস্তার ট্রে নিয়ে নাস্তা সাঁজালাম।জানালা দিয়ে চোখে পড়ল দুপুরবেলার তীব্র রোদ। তবুও চুলায় চা বসালাম।কারণ আব্বার কাছে রোদ, বৃষ্টি লাগে না। আব্বা সবসময়ই চা খেতে পারেন। বলা যায় চা তার অত্যাধিক পছন্দ!ট্রের একপাশে চায়ের কাপ রাখতেই পেছন থেকে মেহেরাজ ভাই বললেন,
” এই দুপুরে চা করছিস? চাচা এখন চা খাবে?পাগল তুই?”
আমি ঘাড় বাকিয়ে তাকালাম।মেহেরাজ ভাই চলাফেরা করেন একদম নিঃশব্দে।কখন আসে, কখন যায় বুঝায় যায় না।এই যে এখনও উনি রান্নাঘরে কবে ডুকলেন আমি টের পাইনি।এতটা নিঃশব্দে চলা যায় কি?কে জানে!মৃদু গলায় বললাম,
” আব্বা খায়। জিজ্ঞেস করবেন আব্বাকে?”
মেহেরাজ ভাই টানটান মুখ স্বাভাবিক করে পাশে এসে দাঁড়ালেন।বললেন,
” জিজ্ঞেস করার প্রশ্নই আসে না।চাচার সামনে দাঁড়াতে পারছি না।”
” আব্বার সামনে দাঁড়াতে না পারার মতো কিছু করলে অবশ্যই দাঁড়াতে পারবেন না।আর যদি না করেন, তবে কেন… ”
বাকিটা আর বলা হলো না আমার।মেহেরাজ ভাই ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন,
” অপরাধবোধ হচ্ছে।”
আমি চোখ তুলে চাইলাম।চেহারা কি ভীষণ মলিন।কপালে ভাজ। মানুষটাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।হয়তো সবদিকের চাপ সহ্য করতে করতে ক্লান্তি এসে ভর করেছে সমস্ত শরীরজুড়ে।একমুহুর্তের জন্য মায়া হলো আমার।ইচ্ছে করল হাত ছুঁইয়ে কপালে রাখি।বলি,” এতোটা ক্লান্তি আপনাকে মানায় না মেহেরাজ ভাই।” কিন্তু বলা হলো না।চায়ের পাতিলে মনোযোগ দিয়ে স্পষ্ট গলায় বললাম,
” কোন অপরাধ করেছেন আপনি?”
উনি স্পষ্ট ভাবেই উত্তর দিলেন,
” না।”
আবারও প্রশ্ন ছুড়লাম,
” তবে? ”
মেহেরাজ ভাই মলিন গলায় শুধালেন,
” উনি আমার এককালের শিক্ষক ছিলেন।উনার সামনেই পরিস্থিতিটা তৈরি হবে কখনো ভাবিনি।”
আমি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।আব্বার কি আসলেই কিছু এসে যাবে?আব্বা কি আসলেই তার মেয়ের স্বামী অন্য কাউকে ভালোবেসে জেনে মেয়ের জীবনের জন্য অনুতপ্ত হবেন?হয়তো হবেন না।উনার কাছে আমি ছিলাম বোঝা।সে বোঝা যেখানেই যাক,যেভাবেই থাকুক, যার কাছেই যাক।উনি মুক্ত হলেই হলো।
বললাম,
” চিন্তা করবেন না মেহেরাজ ভাই।আব্বা কিছু বলবে না আপনাকে। আমার আব্বা বাকিসব আব্বাদের মতো নয় যে মেয়ের স্বামীকে অন্যকোন মেয়ের সাথে দেখে রেগে যাবে।মেয়ের সংসারের অধিকার চাইবে। আমার আব্বা ব্যাতিক্রম।দেখেননি? তখন সামান্তা আপুর সামনেও কিছু বলেননি। বললে তখনই বলে ফেলত। ”
মেহেরাজ ভাই এবার গাঢ় চাহনীতে তাকালেন আমার দিকে।বললেন,
” তোর কি অভিযোগ আছে সামান্তাকে নিয়ে?নাকি অভিমান?ও এমনই জ্যোতি।ছোটবেলায় খেলনা হারালেও নাকি এক সপ্তাহ এমন পাগলামি করত। অন্য কারো কাছে একই রকমের খেলনা দেখলেই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করত।তুই কি কষ্ট পাস এসবে?”
আকস্মিক এই প্রশ্নে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কষ্ট পাই কিনা?হ্যাঁ, কষ্ট তো পাই। আঘাত ও পাই।কিন্তু তা প্রকাশ করাটা কি যৌক্তিক?যৌক্তিক নয়।তাচ্ছিল্য নিয়ে হেসে বললাম,
” কষ্ট কেন পাব মেহেরাজ ভাই?প্রেমের সম্পর্ক আপনার আর সামান্তা আপুর ছিল। তাই আপনাদের কষ্ট হচ্ছে একে অপরকে ছাড়তে।আমার সাথে তো ছিল না যে অন্য একজনকে মানতে না পেরে কষ্ট পাব।”
মেহেরাজ ভাই পকেটে হাত গুঁটিয়ে বুক টানটান করে দাম্ভিক ভাব নিয়ে দাঁড়ালেন।চলে যেতে যেতে শান্তস্বরে বললেন,
” আমি তোর কন্ঠে কষ্টের আওয়াজ শুনেছি।তোর চোখে বিষাদের ছোঁয়া দেখেছি।”
তারপর চলে গেলেন।নিষ্পলকভাবে সেই চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকলাম আমি।বুকের গহীন থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতেই ঠোঁট নাড়িয়ে হালকা স্বরে বলে উঠলাম,
” কষ্ট যাদের সঙ্গী তাদের কন্ঠে স্বভাবতই কষ্ট থাকতে পরে মেহেরাজ ভাই। স্বভাবতই তাদের চোখে বিষাদ ছুঁতে পারে।এটা বিশেষ কিছু নয়। ”
.
আব্বা নাস্তা ছুঁয়েও দেখলেন না।এমনকি উনার পছন্দের চাও হাত বাড়িয়ে নিলেন না।শুধু গম্ভীর গলায় বললেন,
” এসব নিয়ে যা জ্যোতি।মনমেজাজ ভালো লাগছে না।”
আমি তবুও বললাম,
” চা টা নিতে পারেন আব্বা।চা তো আ…”
বাকি কথাটা আমি বলতে পারলাম না।আব্বা তার আগেই ধমক দিয়ে কঠিন কন্ঠে বলে উঠলেন,
” কথা কানে যায় না তোর জ্যোতি?বললাম তো নিয়ে যা।”
আব্বার ধমকে চুপ হয়ে গেলাম।আব্বাকে দেখামাত্রই যে আনন্দস্রোত হৃদয়ে অনুভূত হয়েছিল তা মুহুর্তেই পরিণত হলো বিষাদ অনুভূতিতে।আব্বা ঠিক আগের মতোই আছেন।আগের মতোই আমাকে অপছন্দ করেন।আমিই হয়তো বেশি আশা করে ফেলেছিলাম।আব্বা কেন আমার খোঁজ নিতে এতদূর ছুটে আসবেন?আমি মরি, বাঁচি আব্বার কি তাতে আধৌ কিছু এসে যায়?না।ভাবতে ভাবতেই নাস্তার ট্রে নিয়ে চলে যেতে নিতেই আব্বা ফের বললেন,
” জ্যোতি শোন।”
আমি দাঁড়ালাম।পেছন ঘুরে তাকাতেই আব্বা উঠে আমার সামনে এলেন।পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে আমার হাতে গুঁজে দিয়েই বললেন,
” এখানে হাজার দশ আছে।রাখ। তোর লাগবে।প্রতিমাসে এসে দিয়ে যাব আমি হাতখরচ।”
আমি অবাক হলাম না।আব্বা বরাবরই এই দায়িত্ব বেশ দক্ষভাবে পালন করে এসেছেন।গ্রামের বাড়িতে থাকাকালীনও পালন করেছেন।একমুহুর্তের জন্য মনে হলো টাকাগুলো আসলেই নেওয়া উচিত।অন্তত মেহেরাজ ভাইয়ের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকার থেকে আব্বার কাছ থেকে টাকা নেওয়া খারাপ কিছু নয়।আব্বার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক।আর মেহেরাজ ভাইয়ের সাথে স্বল্পদিনের একটা বাধ্যগত সম্পর্ক।দুদিনের সেই সম্পর্কের জেরে মেহেরাজ ভাইয়ের কাছে হাত পাতাটা ব্যাপক লজ্জ্বাজনক বিষয়।আমি টাকাগুলো নিলাম।জিজ্ঞেস করলাম,
” এইজন্যই এসেছিলেন আব্বা?”
আব্বা উত্তর দিলেন,
” হ্যাঁ। আবার চলে যাব। ”
আমি আর দাঁড়ালাম না। পা চালিয়ে ট্রে টা নিয়ে ফের রান্নাঘরে আসলাম। ভেবেছিলাম আব্বা আমার খোঁজ নিতে এসেছেন।আমি কেমন আছি তা দেখতে এসেছেন।আমার ভাবনা ভুল।আমি স্থির হয়ে স্বাভাবিক চাহনী ফেললাম জ্বলন্ত চুলায়। বসার ঘর থেকে মেহেরাজ ভাইয়ের গলা ঝাড়ার আওয়াজ পেলাম। মুহুর্তেই কান খাড়া হলো।মেহেরাজ ভাই বলতে লাগলেন,
” চাচা, আমার আর জ্যোতির বিয়েটা আকস্মিকভাবেই হয়েছিল। এটা তো আপনার জানাই ছিল। জ্যোতির সাথে যে আমার বিয়ের আগে থেকে সম্পর্ক ছিল এমন নয়।মিথ্যে বলব না, সামান্তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল।দীর্ঘ চারবছরের।জ্যোতির সাথে বিয়েটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতই হয়েছিল।আর সামান্তা সে বিয়েটাই বোধ হয় মেনে নিতে পারে নি।সেদিনের পর থেকেই ও এমনই হয়ে আছে।তখনকার আকস্মিক জড়িয়ে ধরাটাও ওর পাগলামো ব্যাতীত কিছু নয়।আমি ছোট চাচাকে জানিয়েছি বিষয়টা।আমার মনে হলো সত্য না লুকিয়ে আপনাকে বলে ফেলাটাই বেটার হবে। তাই বলে দিলাম চাচা।”
কথাগুলো শুনেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আব্বার দিকে চাইলাম।আব্বার চাহনী তখনও থমথমে।কি বুঝেই উঠে দাঁড়ালেন আব্বা।তারপর মেহেরাজ ভাই আর আমাকে বলেই বিদায় নিলেন। আমি আগ বাড়িয়ে কিছু না বললেও মেহেরাজ ভাই আটকালেন। তবুও আব্বা থাকলেন না।চলে গেলেন।
#চলবে….