#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_০৯
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
মেহেরাজ ভাই পুনরায় সেই থলেভর্তি চিঠিগুলো নিয়ে ফেরত আসলেন।এদিক সেদিক তাকিয়েই বসার ঘরে ঠাঁই বসে থাকা আমার দিকে চাইলেন একবার।গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
” জ্যোতি?লাইটার আছে না রান্নাঘরে?এনে দে তে।”
আমি সচেতন হয়ে চাইলাম।লাইটার চাইলেন কেন উনি?তবে কি সব চিঠিগুলো পুড়িয়ে দিবেন উনি? এতদিনের প্রেমপত্র, এতদিনের স্মৃতি পুড়িয়ে ছাঁই বানাবেন?বিস্মিত হলাম।উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
” কেন?”
মেহেরাজ ভাই নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে গম্ভীর গলায় শুধালেন,
” প্রয়োজন ছিল।দিতে পারবি না?”
আমি উত্তর দিলাম না।পা বাড়িয়ে রান্নাঘরে গেলাম।তারপর লাইটারটা এনে উনার হাতে দিতেই উনি ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলেন।আকস্মিক আমার কি হলো বুঝলাম না।কৌতুহল নিয়ে চাইলাম উনি কোথায় যাচ্ছে।তারপর কি বুঝেই উনার পিছু পিছু ছাদ অব্ধি গেলাম। মেহেরাজ ভাই আমাকে তার পিছু পিছু দেখে বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখাল না।নির্লিপ্ত চাহনীতে একবার তাকিয়েই ঝুঁকে গিয়ে ছাদের খসখসে ফ্লোরে থলেটা রাখলেন।তারপর হাঁটু গেড়ে বসলেন তার পাশে।একে একে থলেটা থেকে সমস্ত ছবি, সমস্ত চিঠি,সমস্ত চিরকুট আর হাজারখানেক শুকনো ফুল বের করে স্তূপ জমালেন।দেরি না করে মুহুর্তেই আগুনের কমলা শিখায় জ্বালিয়ে দিলেন সেই স্তূপ।আমি নির্বিকার হয়ে চেয়ে থেকে সমস্তটা পর্যবেক্ষন করছিলাম কেবল।চোখের সামনে তাদের এতবছরের প্রণয়ী স্মৃতির বিনাশ দেখে আৎকে উঠলাম।মেহেরাজ ভাই বরাবরই কঠিন। তাই বলে এতটাই কঠিন যে প্রেয়সীর প্রণয়ী স্মৃতি মুঁছে দিতেও দুবার ভাবলেন না?কই, আমি তো পারিনি।মেহেরাজ ভাইয়ের প্রতি তীব্র ঘৃণা রেখেও আমি মেহেরাজ ভাইকে নিয়ে লেখা ডায়েরীটা পুড়িয়ে ফেলতে পারিনি।মুঁছে দিতে পারিনি সেই প্রথম অনুভূতির অস্তিত্ব!আমি তাকালাম।বারকয়েক পলক ফেলে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম,
” পুড়িয়ে দিলেন ওসব?”
মেহেরাজ ভাইয়ের মুখ আগের মতোই টানটান।জ্বলন্ত অগ্নিশিখার দিকে স্থির চোখে চেয়ে থাকলেন।ঠোঁট নাড়িয়ে শান্ত স্বরে উত্তর দিলেন,
” স্মৃতি মানুষকে পোড়ায় জ্যোতি।যে স্মৃতি বহন করে সুখ কুড়ানো যায়না সেই বিষাদ স্মৃতি ধ্বংস করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
আমি ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকালাম।মেহেরাজ ভাই কঠিন এটা আমার জানা ছিল।জীবনের এই পর্যন্ত কখনো উনাকে আবেগে গা ভাসাতে দেখিনি।অনুভূতিতে পা পিঁছলে যেতে দেখিনি।কিন্তু তাই বলে এতটা স্বার্থপর হওয়া আসলেই উচিত?যে মেয়েটা তার সমস্তটা দিয়ে ভালোবাসল উনাকে সে আজ কেবল উনার কাছে এক বিষাদের স্মৃতি?কেবলই?সেটুকু হলেও বোধহয় ঠিক ছিল।কিন্তু উনি তো সেই মেয়েটার সমস্ত পাগলামো, সমস্ত ভালোবাসাময় স্মৃতি একমুহুর্তে পুড়িয়ে দিতেও দুবার ভাবলেন না।এতটা কঠোর তার হৃদয়?অবশ্য উনার হৃদয়ে যদি আবেগ অনুভূতির মূল্য থাকতোই তবে কি ষোড়শী এক কিশোরীর পায়ে কাঁচের টুকোরোর আঘাত হেনে রক্তরাঙ্গা করতে পারত পুকুরের সিঁড়ি?যদি উনার হৃদয় কঠোরই না হতো তবে কি এক যুবতী মেয়েকে তার চরিত্রের অপমানে ডুবিয়ে একঝাক লোকের মাঝে রেখে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারতেন?কথাগুলো ভেবেই উনার প্রতি একরাশ তাচ্ছিল্য এসে ভর করল ক্ষনিকে।সত্যিই উনি স্বার্থপর!আমার দেখা সবথেকে সার্থপর মানুষ!ঠোঁট চেপে বলেও ফেললাম কথাটা,
” আপনি অনেকটা স্বার্থপর মেহেরাজ ভাই।সুখ কুড়ানোর আশায় মুহুর্তেই ভুলে গেলেন সব স্মৃতি?আপনার কাছে কেবল নিজের ভালো থাকার মূল্যটাই সব?”
মেহেরাজ ভাই একদম শান্ত চাহনীতে চাইলেন আমার দিকে।আমি চমকে গেলাম সেই চাহনীতে চোখ রেখে।কি ভীষণ লাল টকটকে চোখজোড়া।আর কি ভীষণ শান্ত, স্থির চাহনী।উনি বললেন,
” তুই বোকা জ্যোতি।স্মৃতির আড়ালেও স্মৃতি থাকে।ভালোবাসার আড়ালেও ভালোবাসা থাকে।সব যে প্রকাশ করা যায় তেমন নয়।আমি প্রকাশ্যের স্মৃতিগুলো মুঁছে দিলাম জীবন থেকে, গোপণ রাখা স্মৃতিগুলো মন থেকে মুঁছে ফেলা কি এত সহজ?কেউ কি পারে মনের স্মৃতি নিজ থেকে মুঁছতে?”
আমি নির্বিকার তাকিয়েই থেকে স্পষ্ট গলায় বলে উঠলাম মুহুর্তে,
” যে স্মৃতি মন থেকে মোঁছা যায় না, সেই স্মৃতি বাস্তবে মুঁছে দিয়ে আপনি সুখের আশা রাখছেন। এটা বোকামো নয়?যদি মনের মধ্যে সেই স্মৃতি না থাকত তবে বোধ হয় পারতেন।”
মেহেরাজ ভাই দৃষ্টি সরালেন।ভরাট গলায় শুধালেন,
” আমি কখনো কোনকিছু নিয়ে আশা রাখি না।এখনও আশা নেই কোন কিছু নিয়ে।স্মৃতিগুলো পুড়িয়ে দিয়েছি কারণ এসবের এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই।অস্তিত্বহীন জিনিস আবর্জনা ব্যাতীত আর কিছুই নয় আমার কাছে।”
“সামান্তা আপুও আপনার কাছে আবর্জনা? উনার তো কোন দোষ নেই মেহেরাজ ভাই।এমনিতেই কষ্ট পাচ্ছে, আরো পাবে।”
” পাওয়া উচিত।ভালোবাসলে বিশ্বাস থাকতে হয়।যেখানে বিশ্বাস থাকে না সেখানে ভালোবাসা ঠুনকো।ও আমাকে পুরোপুরি না জেনেই ভালোবেসেছে।আরনপুরোপুরি না জেনেই ভালোবাসা হারিয়েছে। সবটা ওর জন্যই।সেক্ষেত্রে কষ্ট পাওয়া দোষের কিছু নয়।”
প্রিয় মানুষের কষ্ট দেখে ও কিছুই যায় আসে না উনার?আধো কি এতটা কঠিন উনি ভালোবাসার দিক দিয়ে?নাকি সবটা উগড়ানো কথা?আমি বুঝে উঠলাম না।তাচ্ছিল্য নিয়ে আবারও বললাম,
” আপনি সত্যিই ভীষণ স্বার্থপর মানুষ মেহেরাজ ভাই।”
” জীবনে কখনো কাউকে কঠিনভাবে ভালোবেসেছিস জ্যোতি?কঠিনভাবে ভালোবাসলে বুঝবি , সে মানুষটাকে পাওয়াটাই মুখ্য নয়।সে মানুষটা ভালো থাকুক এটাই মুখ্য।আর তার জন্য যদি স্বার্থপরও হতে হয় তবে স্বার্থপর হওয়াটা অনুচিত নয়।”
আকস্মিক উত্তরে আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।জীবনে কঠিনভাবে ভালোবেসেছি কিনা কাউকে প্রশ্নটা মস্তিষ্কে ছুড়ে দিতেই উত্তর এল, হ্যাঁ।ভালোবেসেছি। ভালোবেসেছি বলেই তাকে ঘৃণায় বেঁধেছি।ভালোবেসেছি বলেই শ্রদ্ধা করেছিলাম ।ভালোবেসেছি বলেই তার স্বার্থপরতা মানতেও আমার হৃদয়ে বাঁধল।কিন্তু আমার ভালোবাসা কি কঠিন ভালোবাসা?হয়তো না।আমার ভালোবাসা বরাবরই সীমিত।আমি কখনো চাইনি উনি আমার হোক।কিংবা উনাকে আমার পেতেই হবে।তবুও আড়াল হতে তাকে অনুসরন করেছি, শ্রদ্ধা করেছি।ঠিক তেমনই আড়াল হতে ঘৃণাও করেছি।
আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটল।সমাপ্তি ঘটল ছাদের উপর জ্বলতে থাকা কমলা রাঙ্গা আগুনের শিখারও।ক্ষনিকের মধ্যে সব ছবি, সব চিঠি, সব চিরকুট পুঁড়ে পরিণত হলো কালচে ছাঁইয়ে। মেহেরাজ ভাই তখনও নিশ্চুপ হয়ে সেখানেই বসে রইল।আমি আর দাঁড়ালাম না।ঘুরে পেছন ফিরলাম দ্রুত।তারপর পা বাড়িয়ে ছাদের দরজার কাছে যেতেই অবাক হলাম। সামান্তা আপুর টলমল চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেরি করল না।ফর্সা ধবধবে শরীর যেন সে অশ্রুর সাথে তাল মেলাতেই কেঁপে কেঁপে উঠল।আমি হতবাক হয়ে চেয়ে থাকতেই উনি বলে উঠলেন,
” এমনটা কেন হলো জ্যোতি?কেন হলো এমনটা?আমি পারছি না সহ্য করতে কিছু। আমি বাঁচতে পারছি না।”
সামান্তা আপুর কথায় আমি নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয় রইলাম।সত্যিই কি প্রিয় মানুষকে অন্য কারো সাথে সহ্য করা কোন নারীর পক্ষে সম্ভব? সম্ভব নয় বোধ হয়।হয়তো আমিও পারতাম না।হ্যাঁ, সামান্তা আপুর মতো কাঁদতে পারতাম না বোধহয়।দুঃখ প্রকাশও করা হয়ে উঠত না হয়তে। আহ্লাদী কন্ঠে বোধহয় বলতেও পারতাম না, আমি বাঁচতে পারছি না।তবে এইটুকু জানি, আমার হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হতো।আমারও কষ্ট হতো।সেখানে নরম মনের সামান্তা আপুর তো কষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।যে স্থানে উনি নিজে থাকবেন এই স্বপ্নটাই দিনের পর দিন বুনে এসেছেন, সে স্থানে আমাকে মেনে নেওয়া কঠিনই হওয়ার কথা।আমি ছোট্টশ্বাস ফেলেই বললাম,
” যে পুরুষটাকে ভালোবেসেছেন সে নিষ্ঠুর পুরুষ।তার হৃদয় কঠোর।সেই কঠোর পুরুষের সান্নিধ্যে থাকার জন্য এতটা ভেঙ্গে পড়লে চলবে আপু?কাঁদবেন না।”
আপু ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলেন।কিন্তু পারলেন না।পরমুহুর্তেই ডুকরে কেঁদে ওঠে বলে উঠলেন,
” ছোটবেলা থেকে আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি জ্যোতি।কখনো নিজের কোন জিনিসে অন্য কারো ছোঁয়া পেতে দিইনি।এমনকি নিজের বাবা মাকেও কখনো কারো সাথে ভাগ করিনি। এইজন্যই আমার কোন ভাইবোনও নেই।কিন্তু জীবনের আসল খেলাটায় এসে আমি হেরে গিয়েছি।আসল জিনিসটাই আমি হারিয়ে ফেলেছি।আসল মানুষটাই অন্য কারো হয়ে গিয়েছে।তোমার হয়ে গিয়েছে।চোখের সামনে এই নির্মম সত্যটা আমায় বাঁচতে দিচ্ছে না।আমি মরে যাচ্ছি।মরে যাচ্ছি আমি জ্যোতি।কাল রাতে ভীষণ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি।কিন্তু সাহস হয়ে উঠেনি আমার জ্যোতি।আমি খুব ভীতু।নিজেকে শেষ করতে পারিনি।”
আমি বিস্মিত হলাম।পৃথিবীটা সত্যিই অদ্ভুত।কত মানুষের জীবনে কত সমস্যা, কত দুঃখ।তবুও বেঁচে থাকে প্রতিনিয়ত সেসব দুঃখ হৃদয়ে নিয়ে।আর সে পৃথিবীতেই কেউ কেউ আবার অন্য এক মানুষের জন্য জীবন বিসর্জন দেয়।জানি দুঃখ হয়, কষ্ট হয়, সে মানুষটাকে ছাড়া দমবন্ধ লাগে।কিন্তু তাই বলে অন্য একজনের জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করবে?নিজের বাবা মা কিংবা আপন মানুষদের কথা না ভেবে শুধুমাত্র একটা মানুষের অভাবে তারা বাঁচতে পারে না?কি অদ্ভুত!আর যাদের জীবনে প্রতি বাঁকে বাঁকে দুঃখ?প্রতি বাঁকে বাঁকেই সমস্যা?তাদের কি করা উচিত তবে?সামান্তা আপু বোধহয় বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছেন কম।তাই এই একটা দুঃখকেই নিজের জীবনের বেঁচে না থাকার একমাত্র কারণ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অথচ পৃথিবীতে শতসহস্র মানুষ প্রতিনিয়ত হাজার হাজার দুঃখ, হাজার হাজার সমস্যার সম্মুখীন হয়েও দিন শেষে বেঁচে থাকার জন্য একটু আলো খুঁজছে।বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কথাগুলো ভেবেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। বিপরীতে উত্তর দেওয়ার মতো কি আসলেই আমার কাছে কোন কথা আছে?নেই।দৃষ্টি সরিয়ে ছাদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ঠাঁই বসে থাকা মেহেরাজ ভাই নড়েচড়ে উঠলেন।সদ্য নিভে যাওয়া আগুনের উত্তপ্ত ছাঁই গুলো নির্বিকারভাবে মুঠোয় ছেঁপে ধরলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ছাদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে ছুড়ে দিলেন নিচে। একে একে পুরো ছাঁই ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করলেন জায়গাটা।তারপর আর দাঁড়ালেন না।পা বাড়িয়ে আমাদের দিকেই এগিয়ে এলেন।সামান্তা আপু নড়েচড়ে দাঁড়ালেন।কান্নার বাঁধ ভেঙ্গে জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” ছাঁই গুলোর মতো কি আমাকেও তুমি নিজের জীবন থেকে ছুড়ে ফেলে দিলে রাজ ভাইয়া?আমায় কি আধৌ তুমি কোনদিন এতটুকু ভালোবেসেছিলে?বেসেছিলে ভালো?”
মেহেরাজ ভাই নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়ালেন একমুহুর্ত।প্রিয় মানুষের অভিমানে, অভিযোগে করা এতগুলো প্রশ্নের একটার ও জবাব না দিয়ে রক্তরাঙ্গা চোখে কেবল শীতল চাহনী ফেললেন সামান্তা আপুর মুখে।তারপর আর দাঁড়ালেন না।সিঁড়িতে পা ফেলে দ্রুত নিচে চলে গেলেন।আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকলাম কেবল দুইজনার পানে। এই দুইজন মানুষের মাঝে কতখানি ভালোবাসা, কতখানি অনুভূতি।তবুও বিচ্ছেদ?দায়ী কি আমিই?
.
সাঈদ ভাইয়া আজ দেরি করেই এলেন।চেয়ারে আরাম করে বসেই আমার দিকে চাইলেন। তারপর একটা সুন্দর হাসি উপহার দিলেন। বিনিময়ে আমিও সৌজন্যতার সাথে হাসলাম।পরচিয়ের দুদিনের মাথাতেই বুঝতে পারলাম, এই মানুষটা খুব মিশুক প্রকৃতির।ফ্লাটিংয়ে দুর্দান্ত দক্ষ। সঙ্গে চঞ্চল প্রকৃতির। তবে উনার হাসিখুশি কথাবার্তা নিমিষেই কোন মানুষের মন ভালো করতে যথেষ্ট।আমি পড়ায় মনোযোগ দিলাম।মাঝপথেই মেহু আপু নাস্তাসমেত হাজির হলো।টেবিলের এককোণে নাস্তা রাখতেই সাঈদ ভাই বলে উঠলেন,
” কি আশ্চর্য!তুমি কি টিপিক্যাল বউ বউ ভাব শুরু করেছো মেহু? জানোই তোমায় ভালোবাসি, এখন এমন করে খাবার টাবার আনলে তো ভালোবাসা আরো বেড়ে যাবে প্রিয়।”
আমি অবাক হলাম।কি বলে এই লোক?মুহুর্তেই চোখ উঁচু করে চাইলাম মেহু আপুর দিকে।মেহু আপুর মুখে বিশেষ প্রতিক্রিয়া নেই।শুধু একবার সাঈদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলেন,
” সাঈদ ভাই, আপনি প্লেবয় টাইপ ছেলে তা ভাইয়া থেকে আপনাদের বন্ধুমহল এমনকি আমাদের কাজিনমহল সবাই জানে।এসবকিছু নাবিলা, নাফিসা, সামান্তা উপভোগ করলেও আমি উপভোগ করতে পারি না।পর থেকে ভালো ভাবে কথা বললে বলবেন।”
আপুর কথা শুনে আবারও অবাক হলাম।সাঈদ ভাই প্লেবয়?হ্যাঁ হতেই পারে।সাঈদ ভাইয়ের ফ্লার্টিং লেভেল ভয়ানা।কথায় ও কেমন জানি একটা ভাব আছে। যেন মেয়েদের সাথে উনার বহু বছরের কথোপকোতনের অভ্যাস।হতেই পারে এই লোক চরম লেভেলের মেয়েবাজ।মেহেরাজ ভাই আমার টিউটর হিসেবে রাখার জন্য তার আর কোন বন্ধুকে পাননি?আশ্চর্য!আমি সাঈদ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম।সাঈদ ভাই তখনও মেহু আপুর দিকেই তাকানো।ঠোঁট চওড়া করে হেসে বলে উঠলেন,
” তুমি আমায় প্লেবয় বললে মেহু?নাহয় নাবিলাকে একটু পছন্দ করি, বন্ধুর প্রেমিকা হিসেবে সামান্তাকে একটু ভালোবাসি। আর নাফিসা তো আমার কলিজা।তাই বলে প্লেবয়?মানায় এই উপাধি?”
মেহু আপু আগের মতোই নির্বিকার থেকে উত্তর দিলেন,
” পড়াতে এসেছেন।সামনে আপনার ছাত্রী আছে।ছাত্রীর সামনে একজন টিচার হিসেবে নিজের কতটুকু সম্মান রাখছেন?যায় হোক পড়াবেন, তারপর চলে যাবেন।আর হ্যাঁ, জ্যোতির সাথে এসব কিছুর চেষ্টা করবেন না বলে দিলাম সাঈদ ভাইয়া।ও এসব পছন্দ করে না।চেষ্টা করবেন ওর সাথে এজ এ স্টুডেন্ট হিসেবেই বিহেভ করতে।”
কথাগুলো বলেই মেহু আপু চলে গেল।আমি বোকা বোকা চোখ করে চেয়ে থাকলাম।এদের মধ্যে কি চলছে কিছুই বোধগম্য হলো না পুরোপুরি ভাবে।একপলক সাঈদ ভাই তো একপলক মেহু আপুর যাওয়ার দিকে তাকিয়েই বইয়ে মনোযোগ দিলাম পুনরায়।
#চলবে….