#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_০৮
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
দাদীর সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে মিনার ভাইয়ের নাম্বারে দুই তিনবার লাগাতার কল দিলাম।ওপাশ থেকে কল তুলল না মিনার ভাই।আমি হতাশ হলাম।পুনরায় কল না দিয়ে মোবাইলটা টেবিলের এককোণে রেখে দিলাম।ঠিক কিয়ৎক্ষন পরই ওপাশ থেকে কল এল।নিঃসন্দেহে কলটা মিনার ভাইয়েরই হবে তা ভেবে খুশি হলাম।কল তুলে বললাম,
” তুমি কি ব্যস্ত আছো মিনার ভাই?কল দিলাম কয়েকবার।তুললে না কল।”
মিনার ভাই উত্তরে বললেন,
” বাজারে আসছিলাম।বন্ধুদের সাথে আছি।কিছু বলবি? ”
আমি হতাশ হলাম।মিনার ভাই বাজারে থাকলে দাদীর সাথে আর কথা বলবই বা কি করে।চোখ ছোট ছোট করে উত্তর দিলাম,
” না, তেমন কিছু নয়।ভেবেছিলাম দাদীর সাথে কথা বলব।তুমি কেমন আছো?বাড়ির সবাই ভালো আছে?”
মিনার ভাই ছোট করে উত্তর দিলেন,
” আছে।”
আমি আর কিছু বলার পেলাম না।মিনার ভাই কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে আবার প্রশ্ন ছুড়লেন,
” তুই ভালো আছিস জ্যোতি?”
এমন আহ্লাদী প্রশ্নে বুক ছিড়ে দীর্ঘশ্বাস এল।ইচ্ছে করল বলতে, ” আমি ভালো নেই মিনার ভাই।নিজেকে প্রতিমুহুর্তে সদ্য জম্মানো আগাছার ন্যায় উপলব্ধি করছি।বড্ড একা লাগছে এখানে এসে। দাদীর কথা মনে পড়ছে।দাদীর শূণ্যতা ভীষণভাবে অনুভব করছি।” কিন্তু বলা হলো না। নির্বিকার চাহনীতে বাটন ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।তারপর হঠাৎই মেহেরাজ ভাইয়ের গলা ঝাড়ার আওয়াজ আসল কানে।আমি ফিরে চাইলাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখচাহনী নিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলার প্রস্তুতি নিতেই উনি প্রশ্ন ছুড়লেন,
” তুই কি ফোনে কথা বলছিস?কার সাথে কথা বলছিস?”
মিনার ভাই তখনও কল কাঁটে নি।আমি একবার মোবাইলের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলাম,
” মিনার ভাইকে কল দিয়েছিলাম।আপনার কি কিছু বলার আছে মেহেরাজ ভাই?”
” হ্যাঁ। একটু দরকার ছিল।”
আমি একনজর তাকিয়ে মৃদু গলায় বললাম,
” একটু অপেক্ষা করুন মেহেরাজ ভাই।আমি মিনার ভাইয়ের সাথে কথা বলেই আসছি।”
আমার কথাটা বোধহয় মেহেরাজ ভাইয়ের মানে লাগল।সবসময় বুক উঁচিয়ে একঝুড়ি মান নিয়ে থাকা মেহেরাজ ভাই বোধ হয় মিনার ভাইয়ের পরে তার সাথে কথা বলার বিষয়টা মেনে নিতে পারলেন না। মুহুর্তেই মুখের ভাবমূর্তি বদলাল।চোখমুখ গম্ভীর থেকেও গম্ভীর করে ধুমধাম পা ফেলে চলে গেলেন।আমি একপলক চাইলাম সেদিক পানে।ছোট্ট শ্বাস ফেলে মোবাইল কানে নিয়ে আবারও বললাম,
” আমি ভালো আছি মিনার ভাই। তুমি বাড়ি পৌঁছাবে কখন?”
” বোধ হয় বিকাল হবে।কেন?”
” দাদীর সাথে কথা বলব।বাড়িতে গিয়ে একবার কল দিও মিনার ভাই।আমি অপেক্ষায় থাকব।”
মিনার ভাই চুপ থাকলেন।কিছুক্ষন পর কি বুঝে বললেন,
” এইজন্যই এতবার কল করলি?আচ্ছা, বাড়ি গিয়ে কল দিব।রাখলাম।”
কথাটা বলেই কল কেঁটে দিল। মিনার ভাইয়ের শেষের কথাটা কেমন যেন অন্যরকম শোনাল।গলাটাও অন্যরকম বোধ হলো।মিনার ভাই কি অভিমান দেখালেন?নাকি অভিযোগ করলেন?বুঝে উঠলাম না।মোবাইলটা আগের ন্যায় রেখে দিয়েই রুম ছেড়ে বের হলাম।ঘড়ির কাঁটায় তখন সবে সকাল নয়টা।মেহেরাজ ভাইকে বসার ঘরে দেখা গেল না।মেহু আপুর ঘরেও দেখা গেল না।বাধ্য হয়েই উনার ঘরে উঁকি দিলাম।চোখে পড়ল গোছাল, পরিপাটি ঘর।মেহেরাজ ভাই বরাবরই বেশ গোছাল।উনার চলন-বলন থেকে সবকিছুতেই একটা গোছাল পরিপাটি ভাব আছে।এমনকি উনার পা ফেলে ফেলে হাঁটাটাও বেশ গোছাল।এত পরিপাটি মানুষের ঘরটাও পরিপাটি হবে স্বাভাবিক।আমি এদিক ওদিক চাইলাম। মেহেরাজ ভাইকে দেখা গেল না।দুবার ডাকলামও। সাড়া এল না।অবশেষে পা ফেলে উনার ঘরে ডুকলাম।টেবিলের উপর একঝাঁক রং বেরংয়ের কাগজ।গাঢ় দৃষ্টিতে চাইতে বুঝলাম, এগুলোকে কাগজ বলা যায় না শুধু, বলা যায় সুন্দর হাতের লেখনীতে চিঠি। সঙ্গে সামান্তা আপুর হাজার খানেক ছবি।সব দুমড়ানো মোঁচড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে।আমি অবাক হয়ে আরো দু পা এগোলাম।হাজারটা চিঠি, হাজারটা ছবি, হাজারটা শুকনো ফুল। সবই বড্ড অযত্নেই যেন ফেলে রেখে গেলেন মেহেরাজ ভাই।কিন্তু কেন এভাবে রাখলেন? দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।মেহেরাজ ভাইকে না পেয়েই রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলাম দ্রুত।সঙ্গে সঙ্গে মেহু আপুর সম্মুখীন হলাম।আপু উৎসুক চাহনীতে চেয়েই প্রশ্ন ছুড়লেন,
” তুই কি ভাইয়াকে ডাকলি?ভাইয়াকেই খুঁজতে গেলি ও ঘরে?ভাইয়া তো বেরিয়ে গেল।যদিও আরো পরে বের হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু হঠাৎই কি হলো, বের হয়ে গেল দেখলাম।”
আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম।বেরিয়ে গেল কেন?উনার কি যেন দরকার ছিল আমার সাথে।তবে?মিনার ভাইয়ের সাথে কথা বলছি দেখেই কি দরকারটা না বলে চলে গেলেন?কিন্তু কেন?উনি কি রাগ করেছেন এতে?নিজের বোকা বোকা ভাবনায় পরমুহুর্তেই নিজেকে ধমক দিলাম।রাগ করবেন কেন?রাগ কি যার তার উপর করা যায়? আমি মেহু আপুর দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করলাম,
” কেন?”
মেহু আপু উত্তর দিলেন,
” ভাইয়ার ইন্টার্ভিউ আছে। হয়তো তাই।”
আমি মাথা নাড়ালাম।তারপর আবারও ঘরে এলাম।চোখ বুঝে ভাবলাম, এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি?আমি কি অনেকটা বোঝার মতোই হয়ে রইলাম না এই বাসায়?মেহেরাজ ভাই শুধু শুধু আমার দায়িত্ব কেন বহন করবেন?কেনই বা আমি আগাছার মতো পড়ে থাকব এইখানে?ভাবলাম অনেকক্ষন।তারপর মনকে বুঝালাম,টেস্ট পরীক্ষার আর দেড় মাস।তখন বাড়ি গেলে দাদীকে পড়ালেখার অযুহাত দেখিয়ে থেকে যেতে হবে।তবুও স্বস্তি মিলবে।দিনশেষে নিজেকে বোঝানো যাবে, আমি বোঝা হয়ে থাকছি না।
.
মেহু আপু তার ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন।শিমা আপাও রান্না করে রেখে চলে গেলেন দুপুরের আগে আগেই।বাকি থাকলাম আমি।সেই দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত একা একা বাসায় থেকে উদাস হলাম।কয়েক ঘন্টা বই খাতায় মনোনিবেশ করে কাঁটালেও এবার একা বোধ হলো।জানালার দ্বারে দাঁড়িয়ে বাইরের আকাশ দেখলাম।বিশাল নীল আকাশ।তার মাঝে শুভ্র মেঘের খেলা ভীষণ চমৎকার দেখাল।নির্বিকার ভাবে বেশ কিছুক্ষন সে চমৎকার দৃশ্যে তাকিয়ে থাকতেই কলিং বেল বাঁজল।আমি পা চালিয়ে দ্রুত দরজা খুললাম।মুহুর্তেই চোখে পড়ল শুভ্র রাঙ্গা শার্ট পরিহিত মেহেরাজ ভাইকে।চোখমুখ বরাবরের ন্যায় শান্ত,গম্ভীর। আমি একপলক তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লাম,
” কেমন হয়েছে আপনার ইন্টার্ভিউ?”
মেহেরাজ ভাইয়ের সোজাসাপ্টা উত্তর,
” হবে না চাকরীটা।”
আমি আর কিছু বললাম না।চুপচাপ নিজের ঘরে পা বাড়াতে নিতেই মেহেরাজ ভাই আবারও বলল,
” দাঁড়িয়ে যা।কথা আছে।”
আমি দাঁড়ালাম।পেছন ফিরে একবার তাকাতেই উনি বললেন,
” আনোয়ার চাচা কাল এবং আজ দুইদিনই কল দিয়েছেন।তোর সাথে কথা বলার জন্যই কল দিয়েছেন।তোর নাম্বার মিনারের কাছে আছে, অথচ তোর বাবার কাছে নেই?অদ্ভুত!”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।বাদবাকি বাবা-মেয়ের মতো যদি আব্বার সাথে আমার সম্পর্ক থাকত, তবে অবশ্যই আমার নাম্বার আব্বার কাছেও থাকত। কিন্তু আব্বার সাথে আমার সম্পর্কটা তো স্বাভাবিক নয়।আব্বা তো কোনকালেই আমায় ভালোবাসতে পারলেন না।তবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে হঠাৎ এত ভালোবাসা দেখানোর মানে কি?আমি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।উত্তরে বললাম,
” আব্বা আমার নাম্বার দিয়ে কিই বা করত? তাই উনার কাছে নেই।”
” মিনার তোর ফুফাত ভাই।ওর যদি তোর নাম্বারের প্রয়োজন থাকে, তবে তোর বাবারও আছে। নাহলে উনি দুইদিনে দুই তিনবার কল করে তোর খোঁজ নিত না।আর উনি তো তাও খোঁজ নিলেন।তুই কেমন?ফুফাত ভাইকে কল করে খোঁজ নিতে পারলি, বাবাকে কল করে খোঁজ নিতে পারলি না?”
মেহেরাজ ভাইয়ের কথা ভালো লাগল না আমার।আচমকাই বলে উঠলাম,
” আপনার মোবাইলে কল করাতে বিরক্ত হয়েছেন এটা বললেই তো হয়ে যায় মেহেরাজ ভাই।সমস্যা নেই।আমি আব্বার সাথে কথা বলে নিব।আর এটাও বলে দিব, আপনাকে যাতে কখনো কল না করে।তবে আব্বা যে আমার কথা খুব একটা মানেন এমন নয়।ভবিষ্যৎ এ আবার ও কল দিলে আমি দুঃখিত।”
মেহেরাজ ভাই চোয়াল শক্ত করলেন।মুখ টানটান করে আমার দিকে তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
” অসহ্যকর!তোর সাথে কথা বলাটাই বোকামো।”
আমি ঘনঘন শ্বাস নিলাম। রাগ হলো সামনের মানুষটার প্রতি। তীব্র জেদ জম্মাল ভেতরে ভেতরে।মেহেরাজ ভাই অবশ্য সে রাগ-জেদের কিছুই বুঝে উঠলেন না।উনি মোবাইল বের করে কল লাগালেন আব্বাকে।আমার দিকে শীতল চাহনীতে তাকিয়েই ঠান্ডা গলায় শুধালেন,
” চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি।চাচা কল রিসিভড করা মাত্রই কথা বলবি।এর অন্যথা আমি চাইছি না এই মুহুর্তে। ”
আমি আৎকে উঠলাম।এমন ঠান্ডা গলায়ও কেউ শাসাতে পারে?উনি পারেন।আমি স্থির পায়ে শান্ত হয়ে দাঁড়ালাম।মুহুর্তের মধ্যেই আব্বা কল ধরলেন।ওপাশ থেকে আব্বা ভরাট গলায় বলে উঠলেন,
” রাজ,বাসায় গেছো তুমি?”
আমি চোখ বড়বড় করে চাইলাম।মুহুর্তেই অনুভব করলাম আব্বার প্রতি আমার একরাশ অনীহা।মস্তিষ্ক ফাঁকা বোধ করলাম।কি বলব আব্বার সাথে?আধো আব্বার সাথে কি আমার কোন কথা বলার মতো আছে এখনো?আব্বার ঘাড় থেকে তো বোঝার ভার নেমেই গেল।তবুও?তবুও কেন কল করলেন আব্বা?দায়িত্ব দেখাচ্ছেন?নাকি লোক দেখানো ভালোবাসা?আমি বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ে থাকলাম। মেহেরাজ ভাই সালাম দিয়েই আব্বাকে বললেন,
” জ্যোতি আমার সামনেই আছে চাচা।কথা বলুন।”
কথাটা বলেই মেহেরাজ ভাই মোবাইল এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।কাঁপা হাতে মোবাইলটা এগিয়ে নিতেই আব্বা বলে উঠল,
” জ্যোতি?ভালো আছিস?”
আমি হতভম্ব হয়ে তাকালাম। একমাত্র মেয়ে হওয়া স্বত্ত্বেও আব্বা কোনদিন আমায় এভাবে বলে নি।কোনদিন এভাবে জানতে চাননি আমি ভালো আছি কিনা।তবে আজ হঠাৎ?ভেতরে ভেতরে আবেগে আপ্লুত হলেও বাইরে আমি কঠিন থাকলাম।গলা ঝেড়ে উত্তর দিলাম,
” খারাপ থাকার কথা কি আব্বা?আর ভালো আছি কি নেই এইসব জানার কি আপনার প্রয়োজন আছে?অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন না করাই তো ভালো।”
আব্বা বোধহয় রেগে গেলেন।চাপাস্বরে ক্রোধ নিয়ে বললেন,
” আমার আর কোন সন্তান নেই জ্যোতি। তুই আমার মেয়ে হোস। এক এবং একমাত্র সন্তান।ভালো আছে কিনা জানার প্রয়োজন নেই বলছিস আমার?”
আব্বার রাগ এখনও আগের মতোই আছে দেখে তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম। বাড়িতে থাকলে হয়তোবা আব্বার বলিষ্ঠ হাতের থাপ্পড়ের ভয়ে চুপ থাকতাম।কিন্তু সেই ভয় আর কাজ করল না।বুক চিড়ে আসল তীব্র তাচ্ছিল্য।বললাম,
” ভালো থাকার জন্য বিয়ে দিয়েছেন আপনারা বড়রা বুঝেশুনে।খারাপ থাকার জন্য তো দেননি।তাই না? ”
” তোর কথার ধরণ বদলেছে।”
” আব্বা,আগে তো বাড়িতে থাকাকালীন কোনদিন জানতে চাননি কেমন আছি।তখন তো আপনার চোখের সামনেই ছিলাম।এখন এতদূর আসার পর জানতে চাইছেন তাই হয়তোবা কথার ধরনও বদলেছে।”
আব্বা চুপ থাকলেন। পরমুহুর্তেই বললেন,
” রাজ বলল, তোর কাছে নাকি মোবাইল আছে?”
উত্তর দিলাম,
” দাদী দিয়েছিলেন সেদিন।আপনাকে কল করলে বিরক্ত হবেন কি হবেন না তাই আর কল দেওয়া হয়নি আব্বা।”
” আচ্ছা রাখলাম।ভালো থাকিস।”
আব্বার শেষ কথাটায় কান্না পেল আমার।”ভালো থাকিস” কথাটুকুও যেন আব্বার থেকে পাওয়া বড় কোন প্রাপ্তি আমার।আব্বার আদর-স্নেহ না পাওয়া মেয়েগুলো বোধহয় এভাবেই আব্বাদের এইটুকু কথার জন্য ছটফট করে। এইটুকু কথোপকোতনেই আবেগে আপ্লুত হয়।আমি অবশ্য কাঁদলাম না।দ্রুত প্রশ্ন ছুড়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি ভালো আছেন আব্বা?”
আব্বা চুপ থাকলেন।তারপর কি বুঝে গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলেন,
” হ্যাঁ।”
ব্যস এইটুকুই।তারপর আব্বা কল কেঁটে দিলেন।আমি নিষ্প্রভ হয়ে চেয়ে রইলাম।আব্বার থেকে এইটুকু কথাও আমার ভাবনার বাইরে ছিল।এইটুকু আগ্রহও আমার কাছে আসমান ছোঁয়া মনে হলো।কিন্তু সেই অনুভূতি দেখাতে পারলাম না কাউকেই।মোবাইলটা মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়েই স্পষ্ট গলায় বললাম,
” আপনার মোবাইল মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ ভাই হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিলেন।গম্ভীর স্বরে বললেন,
” বাবা মায়ের সাথে আরো নম্রভাবে কথা বলা উচিত জ্যোতি।যাদের বাবা মা নেই তারা দুইবেলা মনের মধ্যে ইচ্ছে পোষণ করেও কথা বলতে পারে না বাবা মায়র সাথে।বাবা মায়ের কন্ঠ শুনতে পায় না।সেদিক থেকে তোর বাবা আছে এইটা ভেবে সুখী হওয়া উচিত তোর।শত হোক, দিনশেষে উনি তোর বাবা।”
আমি চুপচাপ শুনে গেলাম সবটা।মেহেরাজ ভাই কি করে বুঝবে আমার এভাবে কথা বলার মানে?কিভাবে বুঝবে কেন এরকম ভাবে কথা বললাম?উনি তো আর দেখেননি আমার প্রতি আব্বার তীব্র রাগ, তীব্র ক্ষোভ।বলিষ্ঠ পুরুষালি হাতে সেই ছোট জ্যোতির গালে চড়!দেখেছেন কি? দেখেননি।তবে কি করে বুঝবে?কথাগুলো ভেবেই মুখচোখ টানটান করে ঠাঁই বসে রইলাম বসার ঘরে।আব্বার প্রতি রাগ, জেদ স্মরন হতেই তীব্র অভিমান জম্মাল আম্মার প্রতি।আম্মা এমনটা কেন করল?কেন?
.
মেহেরাজ ভাই নিজের ঘরে গেলেন।কিয়ৎক্ষন পর আবার বেরও হলেন ঘর ছেড়ে।তবে হাতে করে ছোট এক থলে নিয়ে।থলের এককোণায় বেরিয়ে আসা কাগজগুলো দেখে আমি নিশ্চিত হলাম এগুলা উনার টেবিলের উপর থাকা সেই রংবেরংয়ের চিঠিগুলোই।হয়তো সামান্তা আপুরই দেওয়া সবগুলো চিঠি।কিন্তু এগুলো নিয়ে যাচ্ছেন কোথায় মেহেরাজ ভাই?সামান্তা আপুকে ফেরত দিতে?
#চলবে….