#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৬
আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। থেমে থেমে বিদুৎ চমকাচ্ছে। এক একটা বজ্রপাত পৃথিবী কাপিয়ে তুলছে। তার সাথে বয়ছে ঝড় হাওয়া। আজ সারাদিন গরম যাওয়ার পর সন্ধ্যায় কাল বৈশাখী দেখা দিয়েছে। বৈশাখ না আসতেই কাল বৈশাখী হানা দিয়েছে। এইবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাথে শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। বিদুৎ নেয় অনেকক্ষণ। পূর্ণার একা একা রুমে বসে ভয় লাগছে। একিই সে ঝড় বজ্রপাতে ভয় পায়। তার মধ্যে অন্ধকার। পূর্ণা ভয়ে বিছানার এক কোনায় গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।তখন রাফায় ছাদে থেকে চলে আসলে পূর্ণাও চলে আসে। তার কিছুক্ষণ পরেই ঝড় উঠে। আবারও পৃথিবীর বুক কাপিয়ে বজ্রপাত হলো। মনে হচ্চে আসে পাশেই কোথাও পড়েছে। পূর্ণা ভয়ে এইবার মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। বনুলতা পূর্ণার ঘরে মোমবাতি দিতে এসেছিল। এসে দেখে পূর্ণা ভয়ে আটোশাটো হয়্র বসে আছে। বনুলতা মোম রেখে পূর্ণার কাছে যায়। পূর্ণা এইবার ভয়ে বনুলতাকে জড়িয়ে ধরে। বনুলতা বুঝতে পারে পূর্ণা ভয় পাচ্ছে। সে পূর্ণার মাথায় হাত রেখে বলে,
– কিচ্ছু হয়নি মা এই তো আমি। কোনো ভয় নেয়।
বনুলতা এমন করে কথাগুলো বলছে যেনো কোনো বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়েছে। আসলে পূর্ণা ভয় পেয়ে বাচ্চাদের মতোই করছে। বনুলতা পূর্ণাকে অনেকক্ষণ জরিয়ে ধরে রাখে। এক একটা বজ্রপাতের আওয়াজে পূর্ণা কেপে উঠে।
রিয়ান, রাফাত, কৌশিক তিন ভাই একসাথে বসে কথা বলছে। রিয়ান, রাফাত বিজ্ঞদের মতো কৌশিককে জ্ঞান দিচ্ছে। কৌশিক শুধু নাড়িয়ে হু হা জবাব দিচ্ছে। কৌশিক এসেছিল রাফাতের কাজে ফিজিক্সের একটা ম্যাথ বুঝতে। এসে দেখে রিয়ান আর রাফাতের বিজনেসের বিষয়ে কথা বলছে। তখন কৌশিকও জয়েন করে সেই কথায়। রাফাত, রিয়ান কৌশিককে বুঝিয়ে দেয় কীভাবে ব্যবসায় চালাতে হয়। রাফাতদের কাপড় আর জুয়েলারির ব্যবসায়। এই ব্যবসায় রাফাত একাই সামলায়। মূলত বিজনেস টা রাফাতের। রাফাত নিজে এই বিজনেস দাড় করিয়েছে। এখন তার শো-রুম গুলোর অনেক নাম ডাক। রাফাতকেও সবাই এক নামে চিনে। রিয়ান বড় হওয়ার পর রিয়ানও তাকে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডাক্তারি পড়ছে। আর কৌশিক ঘুরে ঘুরে খায়। রশীদ চৌধুরী ছোট খাটো একটা কোম্পানি তে চাকরি করতো। রাফাত যখন কলেজে তখন তার চাকরি চলে যায়। রাফাত তখন থেকেই বিজনেসে নেমে পড়ে। নিজের চেষ্টায় আজ সে এখানে। কৌশিক রাফাতকে বলে,
– দা ভাই আমি তোর মতো হতে চায়।
রাফাত হাসে। কৌশিকের গালটা টেনে দিয়ে বলে,
– হবি। আমার অনেক ইচ্ছে তুই অনেক বড় হবি। আমার এক ভাই ডাক্তার হবে আর এক ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের ঘরে কোনো কিছুর কমতি থাকবে না।
রিয়ান মজা করে বলে,
– দা ভাই তোমার বউ আনবো ফ্যাশন ডিজাইনার। তাহলে আমাদের আর টাকা খরচ করে ফ্যাশন ডিজাইনার আনতে হবে না।
কৌশিক হো হো করে হেসে উঠে। রাফাত দুজনের দিকে কড়া চোখে তাকায়। দুজনেই রাফাতের দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে যায়। পরক্ষণেই রাফাত হেসে দিয়ে বলে,
– ঠিকাছে খোজা শুরু কর।
রাফাতের কথা শুনে তিন ভাই একসাথে হেসে উঠে। পাশের ঘর থেকে বনুলতা ছেলেদের হাসি দেখে সেও প্রশান্তির হাসি দেয়। তার ঘর আজ সুখে শান্তিয়ে ভোরপূর। হঠাৎ রাফাত কৌশিককে বলে,
– পূর্ণাকে তুই কোথায় থেকে এনেছিস। ওর অতীত কি? ওহ কেন সুইসাইড করতে গিয়েছিল।
কৌশিক মুখটা ছোট করে বলে,
– দা ভাই আমি কিছু জানিনা। শুধু জানি ওর খুব দুঃখ ওর যাওয়ার জায়গা নেয়।
– কিন্তু তোর তো জানা উচিৎ ছিলো।
– ওহ বলতে ইচ্ছুক নয়।
– আচ্ছা ঠিকাছে।
গভীর রাত। বৃষ্টি নেয়। তবুও বাহিরে বয়ছে দমকা হাওয়া। পূর্ণা নিজের রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ পূর্ণার মনে হয় কেউ তার পায়ে হাত দিয়েছে। সে ভাবে স্বপ্ন দেখছে। হাতটা আস্তে আস্তে উপরে উঠছে।পূর্ণা ভয় পেয়ে যায়। সে সর্তকতার সাথে চোখ খোলে। কিন্তু রুমে আসা ব্যক্তি হয়তো আরও সর্তক ছিলো তাই পূর্ণার চোখ মেলে তাকানো দেখে চলে যায়। পূর্ণা দেখে তার রুম থেকে কেউ বেড়িয়ে যাচ্ছে। পূর্ণা বলে,
– কে কে যায়?
কোনো শব্দ নেয়। পূর্ণা বিছানা থেকে নেমে ঐ লোকের পেছনে যায়। লোকটি পূর্ণাকে তার পেছনে আসতে দেখে। সে দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামে। পূর্ণাও দ্রুত পায়ে ছুটে। কিন্তু লোকটির নাগাল পাওয়ার আগেই সে বেড়িয়ে যায়। পূর্ণা দৌড় লাগায়। দৌড়ে সে বাহিরে চলে যায়। গিয়ে দেখে কেউ নেয়। পূর্ণা অনেক খুজে কিন্তু কোথাও কেউ নেয়। হঠাৎ কাধে কারোও হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে পেছনে তাকায়। দেখে কৌশিক। কৌশিককে দেখে সে একটু সাহস পায়। কৌশিক বলে,
– পূর্ণা এত রাতে এখানে কি করিস তুই।
পূর্ণা এখনো খুজছে। অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
– কিছু না।
– এইভাবে কি খুচ্ছিস।
– কিছু না তো। আসলে আমার কেন জানি মনে হলো এইখানে কেউ ছিলো। আমি বেলকনি থেকে দেখলাম। তাই আর কি এখানে আসা।
– ওহ। কিন্তু পূর্ণা তোর এখানে একা আশা ঠিক হয়নি। কাউকে ডাকা উচিৎ ছিলো। চল উপরে চল।
পূর্ণা ঘরে চলে আসে। কৌশিক চলে যায়। পূর্ণা এখনো ঘামছে। খুব বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। আবার গভীর ঘুম থেকে উঠার কারণে শরীরের নার্ভ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। পূর্ণা টেবিল থেকে ওয়াটার বোতল নিয়ে একটু পানি খেয়ে নেয়। তারপর বেলকনিতে গিয়ে চৌধুরী বাড়ির গার্ডেন টা দেখে। চারদিকে এত এত গার্ড। তাও কীভাবে বাহিরের মানুষ ঘরে ঢুকলো। নাকি বাহির থেকে কেউ আসেইনি। ঘরেরই কেউ ছিলো। কিন্তু কে? এত তাড়াতাড়ি কি করে ভ্যানিস হয়ে গেলো। সর্তক থাকতে হবে। বাড়িটা মোটেও ভালো নয়। এত ভালো মানুষের ভিড়ে শয়তান ঘুরে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা আহির আসে নিতো। কিন্তু আহির আসলে তো সে জানতো। রাতে খাবার টেবিলে তো সে আহিরকে দেখলো না। ধ্যার আর ভাবা যাচ্ছে না।
পূর্ণা বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। সকাল হতেই বনুলতার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ছেলেদের কলেজ, ভার্সিটি, অফিস সব সকালে।একা হাতে তাদের জন্য নাস্তা বানাতে গিয়ে সে হিমশিম খাচ্ছে। পূর্ণা সকাল সকাল উঠে বনুলতাকে সাহায্য করতে যায়। কিন্তু বনুলতার এক কথা,
– এখনো রান্না ঘরে প্রবেশ করার বয়স তোমার হয়নি। ঐ হাতে এখন কলম ধরো। ঠিক বয়স হলে আমিই তোমার হাতে খুন্তি ধরিয়ে দিবো।
বনুলতার জেদের কাছে পূর্ণা হেরে যায়। সে রশীর চৌধুরীর সাথে বসে বসে গল্প করছিলো। তখন পূর্ণা রশীদ চৌধুরীকে জিঙ্গাসা করে,
– আচ্ছা বাবা রাতে কি মেইন ডোর লক করা থাকে না।
– হ্যা থাকে তো। কিন্তু কেন?
– নাহ এমনি। প্রতিদিন কে লক করে?
– রাফাত করে।
– চাবি কি উনার কাছেই থাকে?
– হ্যা।
– ডুপ্লিকেট চাবি নেয়?
– আছে তো তোর মামনির কাছে থাকে। কিন্তু তুই এইসব কথা কেন জিঙ্গাসা করছিস?
– এমনি।
সকালের নাস্তা শেষ করে যে যার কাজে বেড়িয়ে পড়ে। পূর্ণা স্কুলে আসে কৌশিকের সাথে। আসার সময় পূর্ণা কৌশিককে বলে,
– কৌশিক সাবার সাথে তোর সম্পর্ক কেমন?
– ভালো।
– আমি জানি ভালো। কিন্তু তুই ওকে কোন নজরে দেখিস।
– বোনের নজরে।
– হোয়াট। তুই জানিস সাবা তোকে কত ভালোবাসে। তাছাড়া তুই কেন ওর প্রতি এত কেয়ারিং।
– সো হোয়াট পূর্ণা এর মানে এইটা হয় না আমি ওকে ভালোবাসিহ। ওহ যদি ভুল ভেবে আমায় ভালোবেসে বসে তাহলে সেটা ওর দোষ আমার না।
কথাটা বলে কৌশিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।পূর্ণা কৌশিকের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওহ ও গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই ওর সামনে হাজির হয় সাবা, ইশানী। সাবা অনেকটা আশা নিয়ে জিঙ্গাসা করে,
– কৌশিক কি বললো?
পূর্ণার প্রথমে মন খারাপ হয় সাবার মুখটা দেখে। পড়ে বলে,
– সাবা কৌশিক যায়ই বলুক। কৌশিক শুধু তোর হবে।
– তারমানে কৌশিক বলছে ওহ আমায় ভালো বাসে না।
– তেমন কিছু না। আসলে কৌশিক ওর ভেতরে থাকা অনুভূতি টা বুঝতে পারছে না। যখন বুঝবে নিশ্চয় তার কাছে চলে আসবে। বিশ্বাস রাখ। এখন চল ক্লাসে যাওয়া যাক।
ওরা কেউ আর কথা বাড়ায় না ক্লাসে চলে যায়।
নিজের কেবিনে বসে নতুন মডেলের সাথে কথা বলছে রাফাত। আজ তাদের একটা শ্যুট আছে। যেখান ওদের নতুন ব্র্যান্ডের কয়েকটা শাড়ি আর জুয়েলারির ভিডিও করা হবে। সেগুলো পড়ে কীভাবে শ্যুট করবে। কত টাকার ডিল হবে তা নিয়েই মডেলের সাথে আলোচনা করছে রাফাত। হঠাৎ কথার এক পর্যায় মডেল করা মেয়েটি রাফাতের কাছে এসে বসে। যেটা রাফাতের ভালো লাগে না। সে মুখটা সরিয়ে বলে,
– দূরে গিয়ে বসুন তন্নী।
তন্নী কথা শুনে না সে রাফাতের আরও কাছে চলে আসে। রাফাতের কোলে বসে পড়ে। ওর ঘারে কপালে গালে চুমু খেয়ে থাকে। রাফাত উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সে নিজেকে অনেক সামলে তন্নীকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয়।তারপর চিৎকার করে বলে,
– আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে নোংরামি করার।
তন্নী একটু হেসে বলে,
– আমি জানি জান তোমাদের মতো ডেসিং ছেলেরা প্রথমে না করবেই পড়ে ঠিক হয়ে যাবে।
কথাটা বলে তন্নী রাফাতের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। রাফাত এইবার সহ্য করতে না পেরে কষিয়ে চড় মারে। তন্নী ছিটকে টেবিলের উপর পড়ে। রাফাত তন্নীকৈ উঠিয়ে আরও দুইটা চড় মেরে বলে,
– এতই যেহেতু দেহ বিলানোর শখ। তাহলে এই পেশায় না থেকে নষ্ট পল্লীতে যাহ।দেহ ব্যবসায় কর।মডেল না হয়ে প্রস্টেটিউট হো ভালো হবে।
তন্নী চিল্লিয়ে বলে,
– রাফাত চৌধুরী মুখ সামলে। আমি তন্নী চাইলে তোমার এত দিনের গড়ে তোলা সমার্জ্য ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারি।
– আরে আমি জানি তোর মতো মেয়ে কি কি করতে পারে। আজ থেকে চৌধুরীর গ্রুপের সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ। আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে কি দিয়ে তুই তোর এত নাম কামিয়েছিস। নাও গেট আউট ফ্রোম হেয়ার।
– রাফাত তুমি পচতাবে। তোমার নেওয়া ডিসিশনে তুমি পচতাবে। কাজটা তুমি ঠিক করলে না।
– আরে হাট। রাফাত চৌধুরী নিজের নেওয়া ডিসিশনের কারণে কখনো পচতাই নি আর পচতাবেও না। গার্ড।
রাফাত চিৎকার করে গার্ড ডেকে তন্নীকে অফিস থেকে বেড় করে দেয়। কিন্তু এতকিছুর মধ্যে রাফাত ভুলেই গিয়েছিল আজকের মধ্যে তার শ্যুট করতে হবে তাকে নাহলে বিরাট বড় লস হয়ে যাবে। জায়গায় জায়গায় নতুন শাড়ির বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সামনে ঈদ। এই সময় এত লস হলে চলবে না। রাফাতের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে তার এসেসটেন্টকে কল করে নতুন মডেলের খোজ করতে বলে। আগামী পাঁচ ছয় ঘন্টার মধ্যে মডেল চাই। কিন্তু এত কম সময়ে মডেল সে কোথায় পাবে। রাফাতের এক একটা রাম ধমক তাকে নাস্তা নাবুত করে দিচ্ছে। রাফাত কেবিনে বসে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠে একটা ছবি। সুন্দরী কোমল চেহারার এক মেয়ে কোমর অবধি তার চুল। হে সেই তো পারবে। তাকে দিয়েই কাজটা করাতে হবে। রাফাত চোখ মেলে তাকায়। পূর্ণা পূর্ণা খুব সুন্দর একটি মেয়ে। শুধু সুন্দর নয় মারাত্মক তার সৌন্দর্যতা। এই মেয়ে মডেল হিসেবে খারাপ না। কিন্তু হয়তো অভিজ্ঞ নয়। তবে সমস্যা নয় শিখিয়ে নিবে সে। এই মুহুর্তে পূর্ণায় ভরশা। রাফাত বাড়ির নাম্বারে কল করে। কলটা ধরে বনুলতা,
– হ্যালো।
– মম পূর্ণা কই।
– কেন পূর্ণা তো স্কুলে।
– কোন স্কুল।
– ঐ তো তোরা সবাই যেটা তে পড়েছিস।
– ওকে।
রাফাত কল কেটে। পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে ব্লেজার পড়ে দৌড়ে বাহিরে আসে। গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলে,
– গাড়ি স্টার্ড দাও।
– কোথাও যাব স্যার।
– কৌশিকের কলেজে।
– আচ্ছা স্যার।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ড দেয়। এক ঘন্টার রাস্তা তারা আধাঘন্টায় এসে পৌছায়। রাফাত গাড়ি থেকে নেমে দেখে পূর্ণা রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। সাথে সাবা, ইশানী আছে। রাফাত গাড়ি থেকে হুডি নিয়ে তা পড়ে পূর্ণার কাছে যায়। পূর্ণার হুডি ম্যানের দিকে তাকালে রাফাত ওর মুখে ক্লোরোফোম এসপ্রে করে দেয়। সে ঢুলে পড়ে রাফাতের কোলে। সাবা চিল্লিয়ে বলে,
– হে কে আপনি?
তখন রাফাত ওর মুখটা খুলে বলে,
– আমি। ওকে নিয়ে যাচ্ছি। একটু কাজ আছে।
– ওহ। কিন্তু এইভাবে কেন ভাইয়া।
– যদি ওহ জানতো আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি তাহলে কখনো যেত না। বোন তোর সাথে আমি পড়ে কথা বলবো। এখন ওকে নিয়ে যায়।
কথাটা বলে রাফাত পূর্ণাকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে বসে হুডি খুলে ফেলে। ড্রাইভার কে বলে,
– বাগান বাড়ি চল।
– ওকে স্যার
রাফাতের গাড়ি বাগান বাড়ি এসে থামলে রাফাত পূর্ণাকে নিয়ে ভেতরে আসে। পূর্ণাকে সোফায় শুয়িয়ে ওর মুখে পানি ছিটিয়ে মারে। পূর্ণা হকচকিয়ে উঠে। বড় বড় চোখ করে তাকায়। জোরে জোরে শ্বাস নেয়। নিজেকে শান্ত করে সামনে তাকিয়ে দেখে রাফাত হাতে পানির বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারে রাফাত তার মুখের উপরে পানি ঢেলে দিয়েছে। পূর্ণা সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছে। সে রাগ দেখিয়ে বলে;
– এইভাবে কেউ পানি মারে।
– তো কি করবো। মরার মতো ঘুমাচ্ছিলে যে।
তখনই পূর্ণার মনে পড়ে কেউ তাকে কিডন্যাপ করে এইখানে নিয়ে এসেছে। সে রাফাতের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে,
– আপনি আমায় কিডন্যাপ করেছেন।
রাফাত আয়েশী ভঙ্গিতে সোফায় বসে বলে,
– হ্যা করেছি।
– তাহলে তো আপনার জন্যাই আমি হুশে ছিলাম না। আবার আপনি আমায় বোকেন।
– ওহ স্টোপ পূর্ণা।
– নাহ নাহ আমি থামবো না। আমার জবাব চাই। আপনি কেন আমায় কিডন্যাপ করলেন। কেন মুখে পানি মারলেন। আপনার অসভ্যতা মির জন্য আমি ভিজে গেলাম। এখন যদি আমার ঠান্ডা লাগে জ্বর হয় তখন কি হবে। তখন আমি আবার জ্ঞান হারাবো। আমাকে আবার আপনার ঘরে যেতে হবে। আল্লাহ্ কি হবে এইবার। তুমি বাঁচাও।
রাফাত মুখ চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে,
– দুমিনিট চুপ থাকতে পারো না। এত চিল্লাচ্ছো কেন? তোমার মতো বাঁচাল মেয়ে আমি দুটো দেখিনি।
পূর্ণা এখনো অম অম করে যাচ্ছে। রাফাত এইবার রেগে পূর্ণাকে উঠিয়ে সোফায় ছুড়ে মারে। পূর্ণা ব্যথায় চোখ মুখ খিচে বলে,
– ওহ মাগো আমার কোমরটা গেলো রে। এই রাক্ষস আমায় মেরে ফেলবে কেউ বাঁচাও গো।
রাফাতের ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজের বাড়ি মারতে। কোন আক্কেলে এই মেয়েকে সে ভাবলো সে মডেল করতে পারবে। এর মতো বাচাল হবে মডেল। কান্ড বিলিভ। ইমপসিবল। রাফাত রাগে সামলাতে না পেরে পূর্ণাকে থামানোর জন্য ওর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ডুবিয় দেয়। এহেন কান্ডে পূর্ণার স্টেচুর মতো দাড়িয়ে থাকে। দুমিনিট পর রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে। পূর্ণার গায়ের ওরনা দিয়ে ওর মুখটা মুঝে সোফায় বসে পড়ে। পূর্ণা এখনো মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। কি হলো এটা। কি করলো সে। এতো দেখছি রাক্ষস থেকে লুচু হয়ে গেলো। রাফাত বলে,
– বসো পূর্ণাবতি কিছু কথা আছে তোমার সাথে।
পূর্ণা রাগে কটমট করে রাফাতের দিকে তাকায়। চিৎকার করে বলে,
– কি করলেন এইটা আপনি। আপনি মানুষ। একটা মেয়ের ইজ্জতে হাত দেন।মানলাম আপনার বোন নেয় বলে বোনের কদর জানেন না। কিন্তু মা তো আছে।
রাফাত পূর্ণাকে সোফায় বসিয়ে ওর বাহু চেপে বলে,
– আর একটা বাজে কথা বললে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। মাত্র কিস করছি এরপর আরও বাজে কিছু করবো সো চুপ।
পূর্ণা চুপ হয়ে যায়। তার আর ইচ্ছে নেয় আরও কিছু হওয়ার। রাফাত পূর্ণার পাশে বসে জোরে শ্বাস নেয়। নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে সব বলা শুরু করে,
– শোন পূর্ণা। আজকে আমাদের একটা নতুন শাড়ির ছবি তোলার কাজ ছিলো। এজন্য আমরা দেশের নামকরা মডেল হায়ের করি। কারণ এই শাড়ির বিজ্ঞাপন দেওয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মডেল চলে গিয়েছে। আই মিন আমি মডেলকে বের করে দিয়েছে। এখন আর মডেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু শ্যুট করাটা জরুরি। নাহলে অনেক টাকার লস হবে আমার। তাই আমার মনে হয় এর হাত থেকে তুমি আমাদের বাঁচাতে পার।
পূর্ণা অবাক হয়ে বলে,
– আমি।
– হ্যা তুমি।
– কিন্তু কীভাবে।
– তুমি মডেল সাজবে। তোমাকে পড়ানো হবে আমাদের নতুন শাড়ি গহনা। যেগুলো সামনে বাজারে আসবে। তুমি শ্যুট করবে।
পূর্ণা চোখের পাতা বার বার ফেলে বলে,
– আ আ আমি। আ আমি আর শ্যু শ্যু শ্যুট।সরি মিস্টার চৌধুরী আমার দাড়া সম্ভব না।
কথাটা বলে পূর্ণা দৌড় লাগায়।রাফাত চিল্লিয়ে বলে,
– পূর্ণা স্টোপ পূর্ণা। দাড়াও বলছি।
কে শুনে কার কথা পূর্ণা দৌড়ে বাহিরে চলে আসে। তবে রাফাতের নাগালের বাহিরে যেতে পারেনি। রাফাতের দুজন মহিলা গার্ড পূর্ণাকে ধরে ফেলে। পূর্ণা চিল্লিয়ে বলে,
– ছাড়ো আমায় ছাড়ো বলছি।
কিন্তু কেউ ছাড়ে না। রাফাত এলে রাফাতের কাছে ধাক্কা দিয়ে পূর্ণাকে ফেলে দেয়। রাফাত পূর্ণাকে উঠিয়ে বলে,
– রাফাত চৌধুরীর অনুমতি ছাড়া কেউ রাফাত চৌধুরীর বাগান বাড়ি থেকে বেড়ুতে পারেনি। আর সেখানে তো তুমি একটা পিচ্চি মেয়ে।
কথাটা বলে রাফাত পূর্ণাকে পুলের কাছে নিয়ে যায়। পূর্ণা পুল দেখে বলে,
– এইখানে কেন আমরা?
– যান পূর্ণা এখানে অনেক বড় বড় কুমির আছে। যারা মানুষ খায়। ধরো আমি যদি তোমাকে এখান থেকে ফেলে দেয় তাহলে কেমন হবে।
পূর্ণার হাতটা ছেড়ে দিয়ে আবার ধরে বললো কথাটা। পূর্ণা ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। একটু পা পিচ্ছিলে গেলে বা রাফাত হাত ছাড়লে হে খতম হয়ে যাবে।
#চলবে
#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ০৭
পূর্ণা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। তার লম্বা চুলের খোপা খুলে পানিতে পড়ে গিয়েছে। কিছু চুল মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে। রাফাত এক ধ্যানে পূর্ণাকে দেখছে। পূর্ণার ভয়মিশ্রিত মুখখানী তাকে কাবু করে দিচ্ছে। হৃদয়ে ভালো লাগার দোলা বয়ছে। মাংসের পেছনে লুকিয়ে থাকে হৃদপিণ্ডটি দ্বিগুন বেগে চলছে। রাফাত হাত আলগা হয়ে আসছে। পূর্ণা এইবার রাফাতে শার্ট খামচে ধরে।রাফাতের হুশ আসে। সে পূর্ণাকে শক্ত করে ধরে বলে,
– বলো এইবার কি করবে। কাজটা করবে?
পূর্ণা মাথা উপর নিচ করে বলে,
– হুম।
রাফাত পূর্ণাকে টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। একটা বিষস্ত মাথা রাখার জায়গা পেয়ে পূর্ণা ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। পূর্ণার কান্না রাফাতের বুকে গিয়ে লাগে। সে পূর্ণার মুখটা উঁচু করে গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,
– পূর্ণাবতি কেঁদো না প্লিজ। হুশ হুশ থামো থামো প্লিজ। আমি আর এমন করবো না থাম থাম প্লিজ। পূর্ণা পূর্ণা তুমি কাঁদলে কাঁদলে আমার।
কথাটা বলতে গিয়ে রাফাত আটকে যায়। পূর্ণা ছলছল চোখে রাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নাকটা টেনে বলে,
– আমি কাঁদলে কি বলেন থামলেন কেন?
রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
– কিছু না। অনন্যা পূর্ণাকে নিয়ে যাও। তৈরি করে নিয়ে আসো।
অনন্যা রাফাতের এসেসটেন্ট। পূর্ণা এখনো রাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেটা কেমন সে বুঝতে পারে না। সারাক্ষণ রাগী রাগী ভাব নিয়ে থাকে। কিন্তু মনটা অন্যরকম পূর্ণা বুঝে। অনন্যা এসে পূর্ণার হাত ধরে বলে,
– ম্যাম চলুন।
পূর্ণা অনন্যার সাথে চলে যায়। রাফাত পুলের সাইটে একটা চেয়ারে বসে মাথা চেপে ধরে। মনে মনে বিরবির করে বলে,
– তোমার মধ্যে কি আছে পূর্ণা। কেন নিজেকে সামলাতে আমি হিমশিম খায়। তুমি সত্যি আগুন সুন্দরী। মাথা খারাপ করার মতো।
অনন্যা পূর্ণাকে সুন্দর করে একটা শাড়ি পড়িয়ে সাথে কিছু গহনা পড়িয়ে পূর্ণাকে রেডি করে দেয়। পূর্ণা এখনো মূর্তির মতো সামনে তাকিয়ে আছে। পূর্ণার সাজ সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। কিন্তু কোথায় যেনো একটা কমতি আছে। অনন্যা পূর্ণাকে কীভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু পূর্ণা বার বার গুলিয়ে ফেলছে। কিছুতেই সবকিছু ঠিক মতো করতে পারছে না। অনন্যা এইবার বিরক্ত হয়ে যায়। সে রাগ করে পূর্ণাকে বলে,
– এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার কতক্ষণ ধরে একটা স্টেপ তোমাকে বোঝানোর ট্রাই করছি কিন্তু তুমি বুঝতে চায়ছো না। থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো তোমার।
অনন্যায় কথায় পূর্ণার চোখে পানি চলে আসে। ঐ সময় ঐখানে রাফাত উপস্থিত হয়।রাফাত এসে দেখে পূর্ণার চোখে পানি। পূর্ণাকে কাঁদতে দেখে রাফাত বলে,
– একি পূর্ণা তুমি কাঁদছো কেন? অনন্যা কি হয়েছে এখানে।
– স্যার আমি অনেকক্ষণ ধরে এই মেয়েটাকে বোঝাচ্ছি কীভাবে কি করতে হবে। কিন্তু সে বুঝতেই চায়ছে না। স্যার আমি বিরক্ত হচ্ছি। কোথা থেকে কি তুলে আনলেন।
অনন্যা ভেবেছিল রাফাত কিছু বলবে না। কিন্তু হলো তার উল্টো। রাফাত অনন্যাকে ধমকে বললো,
– সাট আপ অনন্যা। তুমি ভুলে যাচ্ছো ওহ কোনো প্রফেশনাল মডেল নয়। ওর একটু সমস্যা হবেই। কিন্তু তুমি কোন সাহসে পূর্ণাকে হার্ট করো। হাউ ডেয়ার ইউ। তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমার আর্টিস্টকে অপমান করো। নেক্সট টাইম নেক্সট টাইম তুমি যদি এমন করছো তাহলে আমার পিএ থাকা তো দূর আমার অফিসেই থাকা তোমার জন্য দুষ্কর হয়ে উঠবে। নাউ গেট লস।
– স্যার
রাফাত চিল্লিয়ে বলে,
– আউট।
অনন্যা মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে।রাফাত পূর্ণার কাছে আসে। পূর্ণা মাথা নিচু করে আছে। রাফাত ওর কাছে গিয়ে বলে,
– পূর্ণা তুমি অনন্যার কথায় কিছু মনে করো না। এসো আমি তোমায় দেখিয়ে দিচ্ছি কীভাবে ছবিগুলো তুলবে।
রাফাত পূর্ণাকে দেখিয়ে দেয় কীভাবে ছবি গুলো তুলতে হবে। পূর্ণাও মনোযোগ সহকারে সবকিছু শিখে। শেষে পূর্ণা বলে,
– ঠিকাছে আমি বুঝেছি। এখন চাইলে শ্যুট করা যেতে পারে।
– কনফিডেন্ট পাচ্ছো।
– হুম।
– তাহলে চলো।
______________________________________
পুরাতন একটা বাড়ি। বাড়ির ভেতরে নাচ গান হচ্ছে। বাদ্য যন্ত্র বাজছে। কেউ সেই গানের তালে নাচছে। আবার কেউ সেই নাচ দেখছে আর ড্রিংকস করছে। কখনো কখনো মেয়েদের নিজের বাহুডোরে আটকে ফেলছে। আবার পাশের ঘরে নিয়ে দেহের খায়েশ মেটাচ্ছে। ঠিকই ধরেছেন এইটা হচ্ছে একটা নষ্ট পল্লি। যেখানে থাকে কিছু প্রষ্টিটিউট মহিলা। তাদের একজন সর্দার আছে। ঝুমুর বাইজি। ঝুমুর বাইজি মুখে পান নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে পানের পিক ফেলছে। তার সামনে খোদ্দের বসে আছে। একজন খোদ্দের বিদেশ থেকে এসেছে। তার সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে চায়। কথাটা শোনার পর ঝুমুর বাইজি পানির পিক ফেলে লাল টুকটুকে ঠোটে দাঁত বের করে হেসে উঠে। সামনে বসে থাকা ব্যক্তি তার হাসি দেখে ভরকে যায়। সে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
– আমি শুনেছি ঝুমুর বাইজি সব পারে। তাই এত দূর থেকে আসা। আমি আপনাকে অনেক টাকা দিবো।
ঝুমুর বাইজি হাসি থামিয়ে বলে,
– স্টিফেন সাহেব নষ্ট পল্লিতে এসে ভার্জিন মেয়ে খুজছেন। কথাটা হাস্যকর।
স্টিফেন বলে,
– পাঁচ লাখ দিব।
কথাটা শোনা মাত্র ঝুমুর বাইজির চোখ লোভে চিকচিক করে উঠে। সে শোয়া থেকে উঠে বসে স্টিফেনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কাজ হইয়া যায়বো। শুধু একটু সময় লাগবো আর কি? আমগো হাতে বানানো মাইয়া। কিন্তু এহান থিকা ভাগছে। ওরে ধইরা আননের ব্যবস্থা করবার লাগছি।
– আচ্ছা যা করার করেন কিন্তু এক মাসের মধ্যে আমার চাই।
– হইয়া যাইবো। এডফান্স দিয়া যান।
– বলতে হবে না। আমি আপনার শিষ্যের কাছে দিয়ে দিয়েছি। এখন আমি আসি।
– আইচ্ছা।
স্টিফেন চলে গেলে ঘরে প্রবেশ করে আহির। ঝুমুর আহিরকে দেখে বলে,
– টাকা আনসস বাজান।
আহির হেসে বলে,
– জ্বি খালা টাকা এনেছি। কিন্তু তুমি এত টাকা রাখলে মেয়ে পাবে কোথায়?
– কেন তোর লগে যেডা পিড়িত করতো ঐ টি কয়। আমি যে তোরে কইলাম আমার ওরে লাগবো।
আহির ঝুমুরের পাশে বসে বলে,
– খালা তুমি বললা দেখেই তো আমি সেই কার্তিকপুরে গিয়ে ঐ মেয়ের সাথে প্রেম করলাম। কথার জালে ফাসাইলাম। কিন্তু মেয়ে যে বড্ড চালাক। ওহ কোথাও আসবে না খালা। ওহ হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে।
ঝুমুর রাগী কন্ঠে বলে,
– হাত ছাড়ন হয়ে গেছে মানে কি? শোন আহির আমি তোরে আগেই কইছিলাম ঐ মাইয়া আমার দোলের একজনের মাইয়া ছিলো। ছোড বেলান থেহা ওর উপরে সবার নজর আছিলো। কিন্তু ওর মাইয়া মহা চালাক আছিলো। তাই তো পলাই লো মাইয়াডারে লইয়া। আমার নাগালের বাহির চইলা গেল। তহন ঝুমুর বাইজির ওত নাম ডাক না থাহলেও এহন আছে। ঐ মাইয়ারে আমার চাই। আমার ঘরের পাখি আমার কাছে লইয়া আবি কইয়া দিলাম।
– খালা শান্ত হও। সোজা আঙুলে না আসলে আঙুল যে বেকাতে জানে তোমার এই ছেলে তুমি জান না। আমার পাতা ফাঁদে ঐ মেয়ে পা দিয়েছে। আমার এক আত্মীয়ার বাড়িতে ওহ আছে। তুমি চিন্তা করো না আমি ওরে নিয়ে আসবো।
– কবে আনবি।
– যত দ্রুত সম্ভব।
– আইচ্ছা। স্টিফেন সাহেব এক মাস সময় দিছে।
– আচ্ছা খালা হয়ে যাবে।
– ঐ শোন।
– কি খালা।
– ওর কোনো ক্ষতি হইলে চলবো না কিন্তু। তুই কিন্তু নিজের খায়েশ মিটাইবার যাইস না। ওরে পিউর ভাবে নিয়া আসবি। মনে থাহে যেন।
– থাকবে খালা।
____________________________________
পূর্ণার শ্যুট শুরু হয়। খুবই দক্ষতার সাথে ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে। পূর্ণাও প্রত্যেকটা স্টেপ ঠিক ঠিক ভাবে পালন করছে। ছবি তুলা শেষ হলে পূর্ণাকে রাফাত তার অফিসের রুমে নিয়ে আসে। পূর্ণা শাড়ি পড়ে হাপাচ্ছে এখন। রাফাত পূর্ণার নাজেহাল অবস্থা দেখে বলে,
– শাড়ি মেনেজ করতে কষ্ট হয়।
– খুব আই হেড শাড়ি।
রাফাত মুচকি হাসে। তারপর পূর্ণার কোমর জরিয়ে ধরে বলে,
– এতটুকু তেই এই অবস্থা। যদি তোমার বর শাড়ি পছন্দ করে তখন তুমি কি করবে পূর্ণাবতি।
লজ্জায় পূর্ণার মাটিতে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা বড্ড অসম্ভ। মুখে কিছু আটকায় না পূর্ণা নিচে তাকিয়ে আছে। পূর্ণার এমন লজ্জা মিশ্রিত মুখ দেখে রাফায় হু হু করে হেসে দিয়ে পূর্ণাকে ছেড়ে দেয়। পূর্ণা রাফাতের হাসির দিকে তাকিয়ে বলে,
– আহ কত সুন্দর হাসি। যদি লোকটা সব সময় এমন করে হাসতো। তাহলে হয়তো ঐ রাগী লুকটা দেখে কেউ ভয় পেতো না।
রাফাত হাসি থামিয়ে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি দেখছো?
পূর্ণা চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
– কই কিছু না তো।
– বললেই হলো আমি ঠিক দেখলাম তুমি আমায় দেখছিলে।
পূর্ণা কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
– আমি বাড়ি যাব।
– এইভাবেই যাবে। কেউ দেখলে ভাববে তোমায় বিয়ে করে ঘরে তুলছে।
এইবার তো পূর্ণার লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। শরীর মৃদু কাঁপছে। অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। রাফাত পূর্ণার অবস্থা দেখে বলে,
– থাক আর লজ্জা পেতে হবে না চলো।
চৌধুরী বাড়ি রাফাত পূর্ণা একসাথে বাড়ি ফিরেছে। বাড়ির সবাই এখন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। রাফাত ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেছে। পূর্ণা নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি চেন্স করে একটা নীল রঙের জামা পড়ে নেয়। রাফাত আর পূর্ণা দুজনেই বাহির থেকে খেয়ে এসেছে।। পূর্ণা বিছানায় গাটা এলিয়ে দিলে তার মনে হয় কোথাও যেনো একটা আওয়াজ হচ্ছে। খুব নিকটেই আওয়াজ টা হচ্ছে। পূর্ণা উঠে বসে। আশেপাশে সর্তকতার সাথে চোখ বুলিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা। কিন্তু না কেউ নেয়। পূর্ণা বেলকনিতে যায় গার্ডেন সাইটা দেখে না এইখানেও তো কেউ নেয়। তাহলে আওয়াজ টা কোথা থেকে আসছে। পূর্ণা চোখ বন্ধ করে আওয়াজ শোনার চেষ্টা করে। কোনদিক থেকে আসছে। হ্যা আওয়াজ টা কৌশিকের ঘরের দিক থেকে আসছে। পূর্ণা দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়। কৌশিকের ঘরের কাছে গিয়ে কৌশিককে ডাকে পূর্ণা। কিন্তু কোনো সাড়া নেয়। পূর্ণা অনেক বার কৌশিককে ডাকে কিন্তু কোনো সাড়া নেয়। পূর্ণা দরজাটা জোরে ধাক্কা দিতে গেলে দেখে দরজা খুলা। পূর্ণা ভেতরে প্রবেশ করে। কোথায় কৌশিক কোথায়। কোথাও তো কৌশিক নেয়। পূর্ণা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে নিলে সে বুঝতে পারে এই ঘরের কোথাও ই আওয়াজ টা হচ্ছে। পূর্ণা এইবার বেলকনির দিকে তাকায়। কিন্তু না এখন তো আওয়াজ টা হচ্ছে না। পূর্ণা ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেখে খাটের পেছনে ছোট একটা দরজা। খাট টা আপাদত সরানো আছে। পূর্ণা অবাক দৃষ্টিতে সেইখানে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলছে,
– গুপ্ত কক্ষ। পূর্ণা ঐদিকে যেতে নিলে সেইখান রাফাত উপস্থিত হয়। রাফাতকে দেখে পূর্ণা ভয় পেয়ে যায়। সে বলে,
– আপনি?
– হ্যা আমি। পূর্ণা আমার মনে হলো কোনো একটা আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু তুমি এইখানে কি করো।
– আমিও আওয়াজ শুনে এসেছি। ঐ দেখুন গোপন কক্ষ।
পূর্ণার হাত দেখানো ইশারা দেখে রাফাত ঐ দিকে তাকায় দেখে কৌশিকের বিছানার পেছনে একটা ছোট্ট দরজা। সেইখান দিয়ে নিচে সিড়ি গিয়েছে। রাফাত ভ্রু কুচকে নিজের বাড়িতে গোপন কক্ষ আছে আর সেটা সে নিজে জানে না। রাফাত পূর্ণাকে বলে,
– পূর্ণা ঘরে যাও। আমি দেখছি।
– কিন্তু আপনার যদি কিছু হয়।
– আমার কিছু হবে না। তুমি ঘরে যাও।
– নাহ আমি যাব না। আমি আপনার সাথে যাব।
– পূর্ণা কেন জেদ করছো। কেন বুঝতে চাইছো না ঐখানে কোনো বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে।
– আপনি যদি যান তাহলে তো আপনিও বিপদে পড়বেন তাই না। তাই আমি আপনাকে একা যেতে দিবো না।
– পূর্ণা তোমার কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাব। প্লিজ পূর্ণা পাগলামি করো না। তুমি ঘরে যাও।
– আমি তো ঘরেও সেভ না হতে পারি।
– ঠিকাছে আমি বুঝছি তুমি শুনবে না চলো।
কথাটা বলে দুজনে ঐ ছোট্ট দরজার ভেতরে ঢুকে পড়ে। রাফাত মোবাইলের লাইট টা জ্বালিয়ে নেয়। অনেক অন্ধকার চারদিকে।রাফাত পূর্ণা সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখে এইখানে কেউ নেয়। রাফাতের সন্দেহ হয়। সে আশে পাশে চোখ রাখতেই পেছন থেকে কেউ তার মাথায় জোরে কিছু দিয়ে বাড়ি মারে। পূর্ণা তা দেখে চিৎকার করে বলে,
– রাফাত।
রাফাত মাথায় হাত দিয়ে পেছনে তাকিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পূর্ণা এখনো চিৎকার করে কাঁদছে। মুখোশ ধারি কেউ পূর্ণার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রাফাত ঝাপসা চোখে সেটা দেখছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। সবকিছু কেমন দুর্বল লাগছে। মাথার পেছনে চিনচিন ব্যথা করছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি ব্যথা হচ্ছে বুকে। কলিজার পাখিটা যে কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাফাত আর তাকিয়ে থাকতে পারে না জ্ঞান হারায়। আর পূর্ণা বলছে,
– আমি যাব না ছাড় আমায় রাফাত। রাফায় উঠো। আমায় নিয়ে যাচ্ছে উঠো প্লিজ রাফাত রাফাত।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।