#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#সমাপ্তি
চৌধুরী বাড়ির গার্ডেনে বিশাল বড় আয়োজন করা হয়েছে। চারপাশে ফুলের সমারহ। লাল নীল মরিচ বাতি জ্বলছে। মিহু পূর্ণাকে নিয়ে এসে স্টেজে বসায়। বিশাল বড় স্টেজ। পূর্ণা স্টেজে বসলে। সবাই ওর পাশে ভীড় করে। পূর্ণার অসস্থি হয়। সে ঘামছে। তখনই সবার পেছন থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
– কি হচ্ছে কি এখানে। মিহু তুমি কি দেখছো না পূর্ণা ঘামছে। ভীড় কমাও।
সবাই রাফাতে এত কেয়ার থেক মিটি মিটি হাসে। পূর্ণাও হাসে। মিহু সবাইকে একটু সরে যেতে বলে। রাফাত এসে পূর্ণার পাশে বসে। পূর্ণা মাথাটা নিচু করে ফেলে। তার লজ্জা লাগছে। বনুলতা এসে এক এক করে পূর্ণা আর রাফাতের গায়ে হলুদ লাগায়। বড় রা চলে গেলে। মিহু সাবা রিয়ান ওদের শরীরের হলুদ লাগায়। সাবা একটা গানে নাচ শুরু করে। পূর্ণা হাসছে আর সেই নাচ দেখছে। রাফাত মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ রাফাতের কি যেনো হয়। সে পূর্ণাকে হেচকা টান দেয়। পূর্ণা হুমরি খেয়ে রাফাতের বুকে পড়ে। সে পিটপিট চোখ করে রাফাতের দিকে তাকায়। রাফাত নিজের গাল পূর্ণার গালে ঘসে দেয়। নিজের শরীরের হলুদ পূর্ণার গায়ে লাগিয়ে দেয়। পূর্ণার ভেতরে ঝড় উঠে যায়। সে শীতের দিনের মতো থরথর করে কাঁপতে থাকে। একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায় তার মনে। তখন পাশে থেকে রিয়ান বলে উঠে,
– দারুন ছিলো স্টাইলটা।
মিহু সাবা হাসছে। রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দেয়। পূর্ণা একপাশে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকে। মিহু বুঝে পূর্ণা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সে রিয়ানের হাত ধরে টেনে অন্যদিকে নিয়ে যায়। সাবাও দৌড়ে পালায়। রাফাত পূর্ণার গা ঘেসে বসে। পূর্ণা লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে। রাফাত পূর্ণার কাধে মাথা রাখা। পূর্ণা চোখ মেলে তাকায়। রাফাতের দিকে ঘুরে মুচকি হাসি দেয়। তারপর ছুটে পালায়। আর বলে,
– আর একদিন অপেক্ষা করেন জনাব।
রাফাত পূর্ণার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে।
_______________________________________
গভীর রাত। নিজের ঘরে উবু হয়ে শুয়ে আছে পূর্ণা। বুক পিঠ নিঃশ্বাসের গতিতে নড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে। হঠাৎ তার মনে হয় কেউ তাকে গভীর ভাবে দেখছে। পূর্ণা ঘুমের জন্য চোখ মেলে তাকাতে সক্ষম হয় না। আগ্নুতুক ব্যক্তিটি তাকে জরিয়ে ধরলে। পূর্ণা চোখ মেলে তাকায়। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে কিছু হতে চলেছে। পূর্ণা লোকটিকে ধাক্কা দিতে নিলে। লোকটি পূর্ণার হাত শক্ত করে ধরে। মুখ বেধে দেয়। পূর্ণা ছটফট করছে ছোটার জন্য। মনে হয় কেউ তাকে বন্দি করে রেখেছে। পূর্ণা অন্ধকার রুমে লোকটির চেহারা স্পষ্ট দেখতে পারছে না। আগ্নুতুক ব্যক্তি পূর্ণাকে পাজা কোলে তুলে নেয়। পূর্ণা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে চায়। কিন্তু মুখ দিয়ে উমু উমু ছাড়া কোনো আওয়াজ আসছে না। লোকটি পূর্ণাকে নিয়ে বাহিরে চলে আসে। এইবার পূর্ণা ভয় পাচ্ছে মনে মনে বার বার রাফাতের কথা ভাবছে। কোথায় রাফাত।তার পূর্ণা যে বিপদে। লোকটি পূর্ণাকে একটি গাড়িতে উঠায়। পূর্ণা চোখ ভিজে উঠে। সে কি নিস্তার পাবে না। কোনো উপায় কি নেয়। পূর্ণা ভাবে হয়তো এইবার গাড়ির আলোতে লোকটির মুখশ্রী দেখা যাবে। কিন্তু না লোকটি হুডি পড়ে মুখটা মাস্ক দিয়ে ঢেকে রেখেছে।পূর্ণা রাগে কান্নায় ফেটে পড়ছে। সে তার বাধা হাত পা দিয়ে গাড়িতে জোরে জোরে আঘাত করছে। কিন্তু লোকটি গাড়ি থামাচ্ছে না। পূর্ণা এইবার জোরে নিজের মাথা গাড়িতে মারে। লোকটি জোরে ব্রেক কসে। পূর্ণার মাথা ফুলে উঠেছে। একপাশ লাল হয়ে আছে। লোকটি সাথে সাথে পূর্ণাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে। পূর্ণা এক ঝটকায় দূরে সরে যায়। লোকটি বুঝে পূর্ণাকে এইভাবে দমানো যাবে না। তাই সে পূর্ণা মুখে ক্লোরোফোম স্প্রে করে। পূর্ণা সাথে সাথে ঢলে পড়ে যায়। লোকটি পূর্ণাকে ধরে ফেলে। পূর্ণার কপালে চুমু খায় আর বলে,
– সরি জান।
তারপর পূর্ণার মাথা নিজের বুকে রেখে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে।
________________________________________
ভোর বেলা। নিভু নিভু চোখে পূর্ণা চোখ মেলে তাকায়। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সে লাফ দিয়ে উঠে বসে। এইটা কোথায়। কোথায় আছে সে। বাহিরে দেখে সো সো করে বাতাস ভেতরে ঢুকছে। পূর্ণা গায়ে ওরনা জরিয়ে বাহিরে আসে। এসে যা দেখে তা দেখে সে অবাক। সে এখন মাঝ সমুদ্রে। বিরাট বড় জাহাজে আছে সে। আশেপাশে ফুলে ফুলে সাজানো। বাতাসে তার চুল উরছে। পূর্ণা হা হয়ে সব দেখছে। এত বড় আয়োজন কে করেছে। এত ফুল বেলুন। কত্ত সুন্দর। পূর্ণা দৌড়ে সামনে যায়। এক এক করে সব জিনিস থাকে। আর হাসতে থাকে। লাফাতে থাকে। খুশিতে তার চোখ বেয়ে পানি পড়ে। তখনই কেউ গিটারে সুর তুলে। পূর্ণা পেছনে তাকিয়ে দেখে রাফাত গিটার হাতে গুনগুন করছে। পূর্ণা খুশিতে মুখ চেপে ধরে। উত্তেজনায় তার শরীর কাঁপছে। রাফাত গান ধরে,
থোরা ছা পেয়ার হুয়া হ্যা।
থোরা হ্যা বাকি।
থোরা ছা পেয়ার হুয়া হ্যা।
থোরা হ্যা বাকি
(বাকি গান নিজ দায়িত্বে শুনে নেন)
রাফাত গান গেয়ে পূর্ণার কাছে যায়। পূর্ণা রাফাত কে জরিয়ে ধরে। দুজনে সুখেদ সাগরে ভাসছে। দুজনের মুখেই গান। দুজনেই হাসছে। রাফাত পূর্ণার কপালে অঝস্র চুমু একে দেয়। পূর্ণা রাফাতকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। ভেতরে থেকে সবাই তালি দিতে দিতে বের হয়। পূর্ণা সবাইকে দেখে লজ্জায় রাফাতের বুকে মুখ লুকায়। সবাই হো হো করে হেসে দেয়। মিহু এসে পূর্ণা হাত ধরে নিয়ে যায়। আর বলে,
– চলো বিয়ের জন্য রেডি হয়ে নিবে।
পূর্ণা মিহু সাথে চলে যায়। রাফাত রিয়ান অন্য রুমে চলে যায়। রাফাত শেরওয়ানি পড়ে রেডি হয়। মিহু পূর্ণাকে বেনারসি পড়িয়ে দেয়। গহনা দিয়ে মুরিয়ে দেয়। চুল খোপা করে গোলাপ গেথে দেয়। মুখটা উরনা দিয়ে ঢেকে দেয়। পূর্ণার হাত ধরে মিহু স্টেজে নিয়ে যায়। স্টেজে পূর্ণা রাফাতকে মুখোমুখি বসায়। মাঝখানে পাতলা কাপড়ের আবরণ দেওয়া হয়। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে। পূর্ণাকে বলে,
– মা আপনি রাজী থাকলে আলহামদুলিল্লাহ্ বলেন।
পূর্ণা লজ্জা নিয়ে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্।
পূর্ণার সাথে সাথে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে। রাফাতও আলহামদুলিল্লাহ্ বলে। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়। পূর্ণা কেন জানি ভীষণ লজ্জা লাগছে। রাফাতকে ভয় লাগছে। বিয়ের সব কাজ শেষ করে। খাওয়া দাওয়া করা হয়। এত বড় জাহাজে সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে পূর্ণার বিয়ে হবে তা সে কখনো ভাবেনি। মিহু পূর্ণাকে জাহাজের ভেতরে একটা আলিসান কক্ষে নিয়ে যায়। যেখানে খুব সুন্দর করে ঘরটা বিভিন্ন ফুলে সাজানো হয়েছে। মিহু পূর্ণাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। পূর্ণা ভয়ে একদম শেষ। একদিকে ভয় অন্যদিকে লজ্জা। দুটোই তাকে ঘায়েল করে দিচ্ছে। হঠাৎ একটা খট করে আওয়াজ হয়। পূর্ণা বুঝে রাফাত এসেছে। সে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাফাত এসে পূর্ণার পাশে বসে। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। দুজনেই চুপ করে দুজনের নিঃশ্বাসের বেগ শুনছে। রাফাত বলে,
– পূর্ণাবতী।
রাফাতের কন্ঠে যেনো কি ছিলো। তার বুকের মধ্যে ধনুকের তীরের মতো বিধে। সে কাপে। তার সারা শরীর কাপে। অন্য রকম শিহরণ বয় তার শরীরে। রাফাত পূর্ণার হাত ধরে। পূর্ণা এইবার আর চোখ মেলে থাকতে পারে না। সে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাফাত বলে,
– যুগের পরে যুগ। সময়ের পর সময়। পার করার পর আজ তুমি আমার। আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে থাকা মানুষ টা আজ আমার সামনে আমারই অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বসে আছে। তার হাতে হাত রাখতে পারছি আমি। আমি ধন্য আমি গর্বিত তোমার মতো জীবন সঙ্গীনি পেয়ে। তুমি আমার শুধুই আমার। আমার জীবন তুমি। আমার প্রাণ তুমি। আমার জীবনের সুখ তুমি। শান্তি তুমি। ভালোবাসা তুমি। ভালোবাসি ভীষন ভালোবাসি তোমাকে।
পূর্ণার চোখ ভিজে উঠে। সে রাফাতকে জরিয়ে ধরে। কেঁদে দিয়ে বলে,
– তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য। তুমি সত্যি অপূর্ব। অপূর্ব তোমার চিন্তাশক্তি ভালোবাসা। তোমার মতো করে হয়তো কেউ আমায় ভালোবাসতে পারবে না।
দুজনেই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাফাত পূর্ণার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করে। আদরে আদরে পূর্ণাকে ভরিয়ে দিতে চায়। পূর্ণাও তার ডাকে সারা দেয়। দুজনেই শুরু করে নতুন জীবন। নতুন জগতে ডুব দেয় তারা। যেই জগতের সাথে দুজনের একজনেরও কখনো পরিচয় ছিলো না। এই রাত এই ফুল এই আকাশ তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকে।
#সমাপ্তি
বিঃদ্রঃভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।