#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ১৮
চৌধুরী বাড়ি,
পূর্ণা বাড়ি এসেছে প্রায় এক ঘন্টা। পূর্ণা আশার পর বনুলতা এই যে তাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করেছে। আর ছাড়েনি। পূর্ণাও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছে অনেকক্ষণ। এত কষ্টের পর বনুলতা তার মেয়েকে তার বুকে ফিরে পেয়েছে। বনুলতা একটু পর পর পূর্ণার কপালে চুমু খাচ্ছে। রিয়ান বিরক্ত হচ্ছে। সে বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ওহ মম এই বার তো পূর্ণাকে ছাড়ো। মেয়েটা হাপিয়ে উঠছে। একটু ফ্রেশ হয়ে আসতে দাও অকে।
বনুলতা বুঝে পূর্ণার এখন রেস্টের প্রয়োজন। তাই সে পূর্ণাকে ছেড়ে দেয়। তারপর হেসে বলে,
– যাহ মা ঘরে যা। একটু ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোর পছন্দের খাবার বানিয়েছি। মিহু ওকে ওর ঘরে নিয়ে যাও।
রাফাত অবাক হয়ে বলে,
– পূর্ণা ওর ঘরে যাবে মানে। পূর্ণার আমার ঘরে থাকবে মম। ওকে আমি আমার ঘরে নিয়ে যায়।
পূর্ণা লজ্জায় শেষ। এই ঠোট কাটা মানুষ টা কি শুরু করেছে। বুদ্ধি কি লোপ পেলো নাকি। বনুলতা রাফাতের কান টেনে বলে,
– এখনো বিয়ে করলি না আর এক সাথে থাকতে চাচ্ছিস। এইটা কেমন মেনারস। শোন বিকেলে তোদের হলুদ ফাংশন রেখেছি। কাল বিয়ে তারপর একসাথে থাকার কথা ভাববি বুঝলি। এখন যা।
বনুলতা কাঁন ছেড়ে দিলে রাফাত কান ডলতে ডলতে বলে,
– মম। ঠিকাছে মেনে নিলাম।
রিয়ান হাসতে হাসতে বলে,
– মম আমার মনে হয় ভাই এই চব্বিশ ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারবে না। তুমি বরং আজই বিয়ের আয়োজন করো।
রাফাত রেগে বলে,
– তবে রে দাড়া।
রিয়ান দৌড় লাগায়। তার পেছন পেছন রাফাতও দৌড় দেয়। মিহু, পূর্ণা, বনুলতা, মাহমুদা, রশীদ চৌধুরী পারে তো হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। রশীদ চৌধুরী পূর্ণার মাথায় হাত রেখে বলে,
– কেমন আছিস মা।
পূর্ণা হেসে বলে,
– ভালো বাবা। তুমি কেমন আছো? একদম শুকিয়ে গেছো।
– আর আমার অবস্থা। তোকে ছাড়া কি আমি ভালো থাকতে পারি। তুই এসেছিস আমাদের ঘরে শান্তি ফিরে এসেছে। মা রে অনেক বড় হো তুই। আমার ছেলের পাশে থাক সারাজীবন।
– দোয়া করবেন বাবা। আমি যেনো আপনাদের খেয়াল রাখতে পারি।
– দোয়া করি না। তুই হবি চৌধুরী বাড়ির বড় বউ। যার কোমরে থাকবে এই বাড়ির চাবির গুছা। খুব সাহস নিয়ে কাজ করতে হবে তোকে। অনেক সাহসী হো।
– জ্বি বাবা।
পূর্ণা মাহমুদার দিকে এগিয়ে যায়। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলে,
– কেমন আছেন আন্টি।
– থাক মা থাক পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হবে না। আছি আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক ভালো। তুমি কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।
মিহু এসে পূর্ণাকে বলে,
– চলো এইবার ঘরে যায়।
– চলো।
দুজনে একসাথে উপরে চলে যায়। বনুলতা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আল্লাহ্ আমার সংসারে কারো যেনো নজর না লাগে। কি সুন্দর লাগছে দুজনকে। মাশাল্লাহ্।
মাহমুদা হেসে বলে,
– জ্বি আপা ওরা যেনো দু জ্বা না বোন।
পূর্ণা রুমে এসে বসে পড়ে। মিহু আলমারি থেকে ওর জন্য একটা ড্রেস বের করে দিয়ে বলে,
– যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
– হুম যাচ্ছি।
পূর্ণা ওয়াশরুমে চলে যায়। মিহু নিচে চলে আসে। অনেকক্ষণ পর পূর্ণা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। দেখে বনুলতা টেবিলে খাবার রাখছে। সবাই খাওয়ার জন্য বসে আছে। সাবা এসেছে। সাবা পূর্ণাকে দেখে দৌড়ে আসে। ওকে জরিয়ে ধরে বলে,
– হে পূর্ণা কেমন আছিস।
পূর্ণা হাসে। সে মিষ্টি করে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোর কি খবর?
– আলহামদুলিল্লাহ্। চল খাবার খায়।
– চল।
পূর্ণা খাবার টেবিলে বসলে। বনুলতা একের পর এক ডিস ওর প্লেটে তুলে দেয়। পূর্ণা চোখ দুটো বড় বড় করে বলে,
– মেরে ফেলার প্ল্যান করছো নাকি।
– কি বলিস মারবো কেন? ( বনুলতা )
– তাহলে এত খাবার কেন দিচ্ছো। এত খাবার আমি কবে খেয়েছি শুনি।
– খাস নি। তবে এখন থেকে খাবি। না খেয়ে শরীরের কি হাল করছিস দেখছোস। আচ্ছা হা কর আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।
বাড়ির সবাই হা হয়ে বনুলতাকে দেখছে। রাফাত একটু অভিমান করে বলে,
– আমাদের তো কখনো এত আদর করে খায়িয়ে দাও না।
রিয়ানও তাতে তাল মেলালো। বনুলতা হেসে বলে,
– ঠিকাছে আজ সবাইকে খায়িয়ে দিবো।
সবাই হৈ হৈ করে উঠে। বনুলতা বড় প্লেটে খাবার বাড়ে। তারপর সবাইকে খায়িয়ে দেয়। পূর্ণা আজ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। কখনো খাওয়ার মাঝখানে কেঁদে দিচ্ছে। বনুলতা সেই চোখের পানি মুঝে দিয়ে বলে,
– কাঁদিশ না মা। এখন থেকে আমিই তোর মা।
– আই মিস ইউ মামনি। আমি তোমাকে খুব মিস করছি।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে পূর্ণা ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলে চোখ বুজে আসে। পারি জমায় ঘুমের রাজ্যে। রাফাত এসে দেখে পূর্ণা ঘুমিয়ে আছে। রাফাত একটা সস্তির নিঃশ্বাস নেয়। কতদিন পর মেয়েটা একটু ভালো করে ঘুমাচ্ছে। রাফাত এগিয়ে আসে। খুবই সাবধানতার সাথে পূর্ণার কপালে চুমু খায়। কপালের চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দেয়।পূর্ণা নড়েচড়ে উঠে। রাফাত সরে আসে। কিন্তু আবারো পূর্ণা গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। রাফাত রুম ত্যাগ করে। নিচে গিয়ে বলে,
– কেউ যেনো পূর্ণাকে না বিরক্ত করে। ওহ ঘুমাচ্ছে।
________________________________________
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পূর্ণা এখনো ঘুমাচ্ছে। বাইরে হলুদের আয়োজন খুব বড় করে করা হয়েছে। গার্ডেনের সাইট টায় লাল নীল মরিচ বাতি জ্বলছে। ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে চৌধুরী বাড়ি। মিহু রেডি হয়ে পূর্ণার ঘরে আসে। পূর্ণা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। মিহু আর সাবা গিয়ে পূর্ণাকে আলতো করে ডাকে। প্রথমে পূর্ণা সাড়া দেয় না। পড়ে অনেক ডাকার পর পূর্ণা হাই তুলে উঠে। উঠে বসে বলে,
– খুব লেট করে ফেলছি না।
মিহু হেসে বলে,
– কোনো বেপাড় না। মেহমান চলে এসেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আর সাবা মিলে তোমাকে হলুদের সাজে সাজাতে এসেছি।
পূর্ণা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছে। আজ যে হলুদ ফাংশন আছে। আচ্ছা আপু দুমিনিট দাও। আমি আসছি।
কথাটা বলে পূর্ণা দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে আসে। পূর্ণা বাহিরে আসলে। সাবা বলে,
– খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো। যেনো ভাই আজ বেহুশ হয়ে যায়।
পূর্ণা হাসে। হাসে মিহু। মিহু পূর্ণা বসিয়ে দেয়। তারপর হলুদ রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়িয়ে দেয়। চুলগুলো খোপা করে ফুল গেধে দেয়। হাতে কানে গহনা পড়িয়ে দেয়।। মিহু পূর্ণার থুতনিতে হাত রেখে বলে,
– মাশাল্লাহ্ কারো নজর না লাগে।
পূর্ণা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সাবা হেসে বলে,
– ওহ হো নতুন বউ লজ্জা পেয়েছে।
রাফাত ঘরে বসে রেডি হচ্ছে। হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে রাফাত। সে আজ ভীষন খুশি সে। খুশিতে আত্মহারা হতে ইচ্ছে করছে তার। রাফাত ড্রয়ার খুলে একটা বক্স বের করে। বক্সের ভেতরে একটা রিং। রিং টা হাতে নিয়ে রাফাত বলে,
– এই রিং পড়িয়ে তোমাকে নিজের করে নিবো। খুব শীঘ্রই।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।