#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ১৬
কালে ঘুম থেকে উঠে বনুলতা সবে মাত্র নাস্তা বানাতে কিচেনে গিয়েছে। এমন সময় লেন্ড লাইনের ফোনটা বেজে উঠে। সে উঠে এসে কলটা রিসিভ করতেই কেউ বাজখায় গলায় বলে উঠে,
– ছেলেকে শিক্ষা দিতে পারেন না। কি বেয়াদব ছেলে আপনার। অন্যের বাড়ি এসে মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করে।
বনুলতা ভরকে যায়। সে অবাক হয়ে বলে,
– কে? আমার ছেলের বেপাড়ে এইসব কেন বলছেন। কে আপনি?
– আমি মিসেস বনুলতা চৌধুরী ডা. মাহমুদ সুজন।
– ওহ রিয়ানের স্যার। তা কি করলো আমার ছেলে। এখন তো ওহ পাশ করে গিয়েছে ট্রেনিংয়ে আছে আপনার বাসায় তো যাওয়ার কথা না।
– আহ রাখুন আপনি আপনার ভদ্রতা। আপনি যানেন আপনার গুনধর ছেলে আমার বাসায় এসে কি করছে। আমার মেয়ের ইজ্জতে হাত দিয়েছে।
বনুলতার যেনো পৃথিবী থমকে গেলো। কি বলছে এই লোক তার ছেলে করবে এই কাজ সে যে কল্পনাতেও আনতে পারে না এইসব। কেমন বুকে ব্যথা করছে। ঘামছে সে। বনুলতা দুর্বল কন্ঠে বলে,
– কি বলছেন কি আপনি এইসব।
– হ্যা ঠিকই বলেছি। আপনার ছেলে আসলে জিঙ্গাসা করে নিবেন। ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম নয়তো আজ আমার মেয়েটার কী হতো শুনি। আর হ্যা ফারদার আপনার ছেলেকে যেনো আমি আমার বাড়িতে না দেখি তাহলে কিন্তু রেপ কেসে ফাসিয়ে দিবো কথাটা যেনো মাথায় থাকে।
বনুলতা কিছু বলার আগেই ডা. মাহমুদ কল কেটে দেয়। বনুলতা সোফার মধ্যে ধপ করে বসে পড়ে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। তার এমন অবস্থা দেখে একজন সার্ভেন্ট এগিয়ে আসে। সে বলে,
– ম্যাম কষ্ট হচ্ছে পানি দিবো। একটু পানি খাবেন।
তখনই বাড়িতে ঢুকে রিয়ান। বাড়ি ঢুকে মাকে এই অবস্থায় দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। দৌড়ে মার কাজে আসে। তার কাধে হাত রেখে বলে,
– মম কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার আমায় বলো। যান এখনি পানি নিয়ে আসুন।
বনুলতা রিয়ানের হাতটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
– ছাড় আমায়। ধরবি না তুই আমাকে তোর ঐ নোংরা হাত দিয়ে।
রিয়ান অবাক হয়ে বলে,
– মম।
বনুলতা কেঁদে দিয়ে বলে,
– কী মম। এই শিক্ষা আমি তোকে দিয়েছে। অন্যের বাড়ি গিয়ে মেয়েদের সাথে ছিঃ আমার বলতেও লজ্জা করছে। আর তুই এই কাজ আমার ছেলে হয়ে কি করে করলি।
রিয়ান থমকে যায়। সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ওহ বুঝেছি ডা. মাহমুদ তোমায় কল করেছিল তাই তো।
– হ্যা করেছিল। তুই ঐ বাসায় গিয়ে কেন অসভ্যতামি করেছিস।
রিয়ান বনুলতার হাত ধরে বলে,
– মম আমি মিহুর কাছে গিয়েছিলাম। আমি কোনো অন্যার করিনি। উনি ভুল বুঝছেন আমাদের। তুমি প্লিজ আমার কথাটা শুনো।
– কিচ্ছু শুনতে চায় না। আমার হাত ছাড় তুই। দূর হো। একজনে ভাইকে মারতে চাইলো। আর একজন খারাপ কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লো। এই সব দেখাথ আর শোনার আগে আমার মরণ হলো না কেন?
তখনই একটা গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
– মম। স্টোপেট মম এইসব কি কথা। কতদিন তোমায় বলেছি এইসব বলবে না। কি করেছে রিয়ান যার জন্য সকাল সকাল এতো কিছু।
বনুলতা রাফাতের দিকে তাকায়। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাদের চেচানোর আওয়াজ শুনেই সে সদ্য ঘুম থেকে উঠে এখানে এসেছে। বনুলতা রাফাতের কাছে গিয়ে বলে,
– তোর গুনধর ভাইকে জিঙ্গাসা কর। ওর স্যার ডা.মাহমুদ কর করছিলো। ওহ নাকি ঐ বাড়িতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। আমি আর বলতে পারবো না।
রাফাত তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রিয়ানের দিকে তাকায়। রাফাতের এই দৃষ্টি যেনো রিয়ানকে খুন করে দিবে। রিয়ান রাফাতের কাছে গিয়ে বলে,
– বিশ্বাস করো ভাই আমি এমন কিছু করিনি যার জন্য মমের এইভাবে কাঁদবে হবে।
রাফাত গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– আমাকে সব খুলে বল। কী হয়েছে। কোথায় গিয়েছিলি তুই।
তারপর রিয়ান মাথাটা নিচু করে অপরাধীর ন্যায় সব কথা রাফাতকে বলে। রাফাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তারপর বলে,
– কাজটা ঠিক হয়নি রিয়ান। যতই হোক মিহু তোর বিয়ে করা বউ নয়। আর বউ হলেই বা কি একটা প্রাইভেসি থাকা দরকার সবকিছুতে।
– আমি জানি ভাই। কিন্তু তখন যে কি হয়ে গেলো আমি বুঝতে পারিনি। মমকে বলো না আর যেনো না কাঁদে মমের কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার উপরে রাগ করে থাকতে নিষেধ করো। প্লিজ ভাই।
রাফাত গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– মমকে তুই রাগিয়েছিস তুই রাগ ভাঙাবি আমায় কেন বলছিস।
– এইবারের মতো ভাই প্লিজ। মম তোমার সব কথা শুনে।
বনুলতা রাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। একরাতে ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে। রাফাত বনুলতার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমার জন্য হলেও মাফ করে দাও। ঘটনাটা এক্সিডেন্টলি হয়েছে।
বনুলতা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
– যাহ মাফ করে দিলাম।
রিয়ান বনুলতাকে জরিয়ে ধরে বলে,
– আমার মম।
রাফাত হাসে। সে উপরে চলে যায়। বনুলতা রিয়ানকে ছাড়িয়ে বলে,
– যাহ বাদর ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
রিয়ান ঘরে চলে আসে। অনেক বার মিহুকে কল করে কিন্তু মোবাইল অফ। মোবাইল অফ কেন? রিয়ানের টেনশন হতে শুরু করে ওর খারুজ বাবা আবার কিছু করেনি তো। বনুলতা রিয়ানকে খেতে ডাকে। রিয়ান খেতে বসেও অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছে। তা দেখে বনুলতা রিয়ানের পিঠে থাপ্পর দেয়। রিয়ান আহ বলে উঠে। বনুলতা বলে,
– খাবার সামনে রেখে কি ভাবছিস।
– কিছু না মম।
– বল আমাকে।
– মম মিহুর মোবাইল বন্ধ। আর ওর বাবা যেমন তাতে আমার খুব টেনশন হচ্ছে।
– ওর বাবা কেমন?
– খুবই খারাপ একজন লোক। লোক সমাজে সবাই ওনাকে ভালো জানলেএ উনি ওত ভালো মানুষ না। যদি মিহুর কোনো ক্ষতি করে। যদি মারধর করে।
– এত টেনশন করিস না সব ঠিক থাকবে ইনশাআল্লাহ।
– হুম।
খাওয়া শেষ করে রিয়ান ঘরে চলে আসে। মা তো বুঝ দিলো ঠিকই কিন্তু তার মন তো মানতে চায়ছে না। কি করবে সে। কিছু ভালো লাগছে না ধ্যাত।
_______________________________________
মাহমুদ ভিলা,
মিহু ঘরে বসে রাগে ফুসছে। এই একটা লোক তাদের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। শুধু কি তার তার মায়েরও। কেন যে মা বুঝতে চায় না। এই লোকটা কোনোদিনও তাকে ভালোবাসতে পারে না। হঠাৎ মিহুর দরজায় কেউ ঢকঢক আওয়াজ করে। মিহু বলে,
– কে?
– দিদিভাই আমি। তোর দাদু।
– ওহ দাদু আসো।
মিহুর দাদু নুরজাহান বিবি এখনো এই বাড়ির কতৃত্ব ধরে রেখেছে। ডা. মাহমুদ তার খুব বাধ্য। কিন্তু মিহু তাকে সহ্য করতে পারে না। কারণ এই মহিলার জন্য তার মায়ের জীবন দূর্বিষয় হয়ে উঠেছে। নুরজাহান বিবি ঘরে এসে বলে,
– আমার দিদিভাই কি করছে?
মিহু বিছানা থেকে নেমে কাঠখোট্টা গলায় বলে,
– সোজাসুজি বলো কি বলতে চাও।
নুরজাহান বিবির ব্যক্তিত্বে লাগে। সে ধমকে বলে,
– এই মেয়ে এইগুলো কেমনে ব্যবহার।
মিহু কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
– তোমার কাছে শিখেছি। তুমি যেমন আমার মায়ের সাথে করো।
নুরজাহার খেপে উঠে,
– একদম থাপড়ে গাল লাল করে দিবো। বেয়াদব কোথাকার এই শিক্ষা দিয়েছি তোমায়।
– আরে রাখো তো কার সামনে কি বলো। তোমার এইসব হুমকি থামকিতে আমি ভয় পায় না। ভুলে যেও না আমার একজন পুলিশ অফিসার।
নুরজাহানের আর ধৈর্য্য শয় না। সে জোরে মিহুর গালে থাপ্পর মারে। মিহুও কম যায় না সে বাঘিনীদের মতো তেরে এসে বলে,
– এই বুড়ি তোর এই রাগ তুই অন্য কোথাও দেখাবি আমায় না। আমার গায়ে হাত তুললে না এই হাত আমি ভেঙে দিবো। এই হাত দিয়ে তুই অনেককে মেরেছিস। আমার মাকে তুই জ্বালিয়েছিস। আমি তোদের জ্বালিয়ে দিবো।
নুরজাহান রেগে তার ছেলেকে ডাকে,
– বাবু বাবু কোথায় তুই এইখানে আয় দেখে যা তোর মেয়ের কত বড় সাহস হয়েছে। কলিজাডা কত্ত বড় হয়ে গেছে।
মাহমুদ আর মাহমুদা মায়ের ডাকে মিহুর ঘরে আসে। আর এসে দেখে নুরজাহান মিহু দুজনেই রাগে ফুসছে। মাহমুদার বুঝতে বাকি হয় না এইখানে কি হয়েছে। মাহমুদ মাকে জিঙ্গাসা করে কি হয়েছে এইখানে। নুরজাহান সব কথা মাহমুদকে বলে। মাহমুদ সব শোনার পর মিহুকে জোরে থাপ্পর দেয়। লাথি দেয়। মাহমুদা মাহমুদকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে বৃথা। মিহু এর বাবাকে সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না। মাহমুদা আবারো গিয়ে মাহমুদের হাত ধরে মাহমুদ ধাক্কা দিয়ে মাহমুদাকে ফেলে দেয়। মাহমুদার পরে যায়। মাথা গিয়ে বারি খায় ড্রেসিং টেবিলের কোনার সাথে। সাথে সাথে মাহমুদা জ্ঞান হারায়। ব্লেডিং শুরু হয়। মিহু মাকে এইভাবে দেখে চিৎকার করে উঠে,
– আম্মু।
মিহু মাহমুদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। দৌড়ে মাহমুদার কাছে আসে। মাহমুদার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে কান্না করে দেয় মিহু। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আম্মু আম্মু চোখ খুলো আম্মু তাকাও আমার দিকে। আম্মু এই আম্মু চোখ খুলো না আম্মু।
নুরজাহান বেগম হা হয়ে দেখছে। সে বলে,
– হায় আল্লাহ্ কি সর্বনাশ হয়ে গেলো।
মাহমুদ নিজের কাজের জন্য এখন নিজেই ভয় পাচ্ছে। কারণ সে জানে মাহমুদার কিছু হলে মিহু তাদের ছাড়বে না। মাহমুদা কথা বলছে না। চোখ খুলছে না। মিহু ডেকেই চলেছে। অশ্রুতে তার চোখ বার বার ভিজে উঠছে। মিহু চিৎকার করে ডাকে,
– রমজান চাচা রমজান চাচা। ( রমজান এই বাড়ির ড্রাইভার প্লাস কাজের লোক।)
রমজান মিহুর ডাকে দৌড়ে উপরে আসে। এসে দেখে মাহমুদার এই অবস্থা। সে অস্থির হয়ে বলে,
– আল্লাহ্ গো আফার কি হইলো।
মিহু কান্না আটকে বলে,
– সুরমা কোথায় ওকে ডাকো। আম্মুকে হাসপাতালে নিতে হবে। আর তুমি গাড়ি বের করো।( সুরমা এই বাড়ির কাজের মেয়ে।)
রমজান দ্রুত নিচে যায়। সুরমাকে উপরে পাঠিয়ে দেয়। সুরমা আসলে মিহু বলে,
– সুরমা আম্মুকে ধর নিচে নিয়ে যেতে হবে।
সুরমাও ভয় পেয়ে যায়। মাহমুদার অবস্থা ভালো না। প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে। রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। মিহুর শরীর রক্তে ভিজে একাকার। মাহমুদ মাহমুদাকে ধরতে আসলে মিহু হুঙ্কার দিয়ে উঠে,
– খবরদার আমার মাকে স্পর্শ করবে না। পাপী খুনি আপনি। আমার মায়ের কিছু হলে আপনাকে আমি জানে মেরে দিবো। অনেক হয়েছে আর না। মিহু আর চুপ থাকবে না। সুরমা চল।
সুরমা আর মিহু মাহমুদাকে ধরে গাড়িতে বসায়। রমজান গাড়ি স্টার্ড দেয়। মিহু এখনো মাহমুদাকে ডেকে চলেছে কিন্তু কোনো রেসপন্স নেয়। মিহুর কি যেনো মনে হতে সে বলে,
– রমজান চাচা তোমার মোবাইল টা দাও তো একটু।
রমজান তার মোবাইল বের করে মিহুকে দেয়।মিহুকে একটা নাম্বার উঠিয়ে তাতে কল দেয়। দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হয়,
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
মিহু কেঁদে দেয়। ওপাশ থেকে আবার বলে,
– কে? কাঁদছেন কেন? মিহু।
মিহু ধরা গলায় বলে,
-হুম রিয়ান।
রিয়ান অস্থির হয়ে পড়ে। সে বিচলিত হয়ে বলে,
– কি হয়েছে মিহু কাঁদছো কেন? সব ঠিক ঠাক আমায় বলো। এই মিহু।
মিহু কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– কিচ্ছু ঠিক নেয় রিয়ান কিচ্ছু ঠিক নেয়। আম্মুকে ওরা মেরে দিয়েছে। আম্মুকে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাচ্ছি তুমি প্লিজ আসো।
– ইয়া ইয়া আমি আসছি। তুমি সাবধানে যাও। আর হ্যা ডোন্ড ওয়ারি। কিচ্ছু হবে না শান্ত থাকো। আল্লাহ্ আল্লাহ্ করো।
– হুম।
মিহু কল কেটে দেয়। রিয়ান কোনো রকমে রেডি হয়ে নিচে নামে। রিয়ানকে এমন তারাহুরো করতে দেখে বনুলতা বলে,
– কিরে কি হয়েছে এতো দৌড়ের উপরে আছিস যে?
– মম মিহুর মা অসুস্থ ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে মিহু আমিও সেখানে যাচ্ছি।
– সেকি অবস্থা কি খারাপ নাকি।
– হ্যা মম।
– তাহলে দাড়া আমিও যাবো।
– আচ্ছা আসো।
বনুলতা রিয়ান একসাথে হাসপাতালে যায়। গিয়ে দেখে মিহু দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে কাঁদছে। চোখ দুটো ফুলা ফুলা। মনে হয় খুব কেঁদেছে। সাহসী মিহুকে এইভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে রিয়ানের বুকটা কেপে উঠে। সে দৌড়ে মিহুর কাছে যায়। তার মাথায় হাত রাখে। কারো স্পর্শ টের পেয়ে মিহু বামে তাকায় দেখে রিয়ান। রিয়ানকে দেখে মিহু সহসা তাকে জরিয়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।,
– রিয়না আম্মু। আম্মু ছাড়া আমার আর কেউ নেয় রিয়ান।ওরা কেন এমন করলো। কেন আমার আম্মুকে বার বার আঘাত করে।
মিহুর কান্না রিয়ানের বুকে গিয়ে বিধছে। সে পাগল প্রায়। সে মিহু মাথাটা শক্ত করে তার বুকে চেপে ধরে। তারপর শান্তনা দিয়ে বলে,
– হুশ আন্টির কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে। এত ঘাবড়াচ্ছো কেন? আল্লাহ্ আছে আন্টির কিচ্ছু হবে না। দেখি আর কাঁদে না। আমি দেখছি তুমি আর কেঁদো না।
মিহু একটু শান্ত হয়। রিয়ান মিহুকে উঠিয়ে পাশের বেঞ্চে বসায়। তখন মিহু খেয়াল করে বনুলতা এসেছে। বনুলতাকে দেখে তার আরও কান্না পায়। বনুলতা মিহুর পাশে বসে। মিহুর মাথাটা নিজের কাধে নিয়ে বলে,
– ভয় পায় না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ্ কে ডাকো। ইনশাআল্লাহ উনি সব ঠিক করে দিবে। আল্লাহ্ রক্ষাকর্তা। তার দাড়া সব সম্ভব। আল্লাহ্ রক্ষা করবে মা। এত ভেবো না তো। এখন আপা কোথায় আছে।
– ওটি রুমে। ওটি চলছে। অনেক রক্ত লাগবে বলছে।
– রক্তের মেনেজ হয়েছে।
– হ্যা কিছুটা বাকিটা রমজান চাচা দেখছে।
রিয়ান বলে,
– আমি ব্লাড ব্যাংকে কল করছি। টেনশন করো না ব্লাড পাওয়া যাবে।
মিহু একটু শান্ত হয়। সে বনুলতার কাধে মাথা রেখে বসে আছে।
_______________________________________
রাফাত নিজের ঘরে বসে বসে পূর্ণার ছবি দেখছিলো আর হাসছিলো। মাঝে মাঝে আবার কিছু ভেবে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে। হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। রাফাত বলে,
– আসুন।
ঘরে আসে রশীদ চৌধুরী। রশীদ চৌধুরীকে দেখে রাফাত দাড়িয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে,
– আপনি?
– হ্যা আমি কিছু বলার ছীলো।
– জ্বি বলুন কি বলবেন?
– একটু কী বসতে পারি।
রশীদ চৌধুরীর চোখ মুখে অপরাধীর ছাপ দেখা যাচ্ছে সে অনুতপ্ত। রাফাত বলে,
– বসুন।এর জন্য পারমিশন নেওয়ার কি আছে।
রশীদ চৌধুরী বসলে রাফাতও বসে পড়ে। রশীদ চৌধুরী আমতা আমতা করতে থাকে। আসলে কিভাবে সে শুরু করবে সে নিজেও জানে না। রাফাত বিরক্ত হয়ে বলে,
– যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।
রশীদ চৌধুরী শুরু করে,
– আমায় মাফ করে দিস বাবা। আমার জন্য আজ তোর এই অবস্থা। পূর্ণার মতো এত ভালো একটা মেয়ৃ জেলে। আমার জন্য তোর জীবনে এত কষ্ট।
রাফাত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। সে বলে,
– আমার জন্য আপনাকে না ভাবলেও চলবে। আমি ঠিক আছি। আর বাকি রইলো ক্ষমার কথা। আগে আপনি আমার মায়ের কাছে ক্ষমা চান। আপনি আমার মায়ের সাথে যা করছেন সেগুলো শোনার পর কোনো সন্তান তার পিতাকে ক্ষমা করবে কিনা জানি না। তবে আমি পারছি না।
রশীদ চৌধুরী মাথাটা নিচু করে ফেলে। লজ্জায় এই মুহূর্তে তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রাফাত আরও বলে,
– আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিবো বাবা বলে ডাকবো সেইদিন। যেদিন আপনি আমার মায়ের ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবেন।সেইদিন যেদিন আপনি আমার মায়ের জীবনের হারিয়ে যাওয়া সুখ শান্তি ফিরিয়ে দিতে পারবেন।সেইদিন যেদিন আমার মা প্রাণ খুলে হাসবে। সেইদিন যেদিন আমার মা আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে। আপনি আছেন এই বাড়িতে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেয়। আপনি থাকুন আমার মা চায় তাই থাকুন। আমার মায়ের হয়তো আপনার প্রতি মহব্বত মায়া এইসব থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু আমার নেয়। ছয় বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে আপনার বাড়ি ছেড়েছি। মাকে শুধু রাস্তায় রাস্তায় কাঁদতে দেখেছি। একটু ঠাই পাওয়ার জন্য আমার মা কত জনের দুয়ারে গিয়েছে। কেউ রাখেনি আমার মাকে। সেদিন জবা মা না থাকলে হয়তো আমাদের শিয়াল কুকুরে খেতো। আপনার ভাগ্য ভালো এত কিছুর পরও এই বাসায় থাকতে পারছেন।তার জন্য শুকরিয়া জানান। আর এই ঘর থেকে বের হন। আপনার উপস্থিতি আমার শরীর জ্বালিয়ে দেয়। ঘেন্নার শরীর রি রি করে। নাও গেট লস।
ছেলের করা এত অপমানে রশীদ চৌধুরীর চোখে পানি চলে আসে। সে বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুঝতে মুঝতে ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে যায়। ভেতরটা তার পুড়ে যাচ্ছে। নিজের করা একটা পাপের শাস্তি তাকে তিলে তিলে মারছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। এইভাবে স্ত্রী সন্তানের কাছে বার বার অবহেলিত হওয়াটা তার পক্ষে আর মানা সম্ভব না। কষ্ট হচ্ছে খুব তার। কেউ তার সাথে ভালো করে মিশে না। আগে রিয়ান একটু মিশতো ইদানিং সেও কাছে আসছে না। রশীদ চৌধুরী সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যায়। চিৎকার করে উঠে সে। একজন সার্ভেন্ট দ্রুত এগিয়ে আসে। এইটা হচ্ছে রশীদের বিসস্ত সার্ভেন্ট মুক্তার। মুক্তার এসে রশীদ চৌধুরীকে ধরে উঠায়। পায়ে ব্যথা পেয়েছে সে অনেক। মুক্তার বলে,
– স্যার খুব ব্যথা পায়ছেন।একটু সাবধানে হাটবেন তো।
রশীদ বুকে হাত দিয়ে বলে,
– যেই ব্যথা এইখানে আছে তার থেকে এই ব্যথা অনেক সামান্য রে মুক্তার অনেক সামান্য।
কথাটা বলে রশীদ খুরাতে খুরাতে ঘরে চলে যায়।সিড়ির শেষ পর্যায় এসে পড়েছে বিধায় বেশি ব্যথা পায়নি। মুক্তার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
– আজ আসুক বনুলতা ম্যাডাম সব বলবো তাকে। রাফাত স্যারের এইভাবে বাপের সাথে ব্যবহার করা ঠিক হয় নাই। এতে আমার চাকরি থাকুক বা না থাকুক। আজ আমি বলুম ই বলুম।
#চলবে
#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ১৭
সময় রহে না কারো জন্য। পানির স্রোতের মতো সময় হারিয়ে যায় চিরদিনের জন্য। দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনবছর। এই তিনবছর কারো কেটেছে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে। আবার কারো কেটেছে নির্ঘমু রাত যেভাবে কাটে সেইভাবে। এই তিনবছরের চৌধুরী বাড়ির ছবি অনেকটা বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে সবার জীবন। কিন্তু একই জায়গায় আটকে আছে রাফাত পূর্ণা। দুজনেই দুজনের অপেক্ষায় তিনটি বছর পার করেছে। অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষই হতে যাচ্ছিলো না। তবে অবশেষে এসেছে সেই মাহান্দ্রেখণ। পূর্ণার মুক্তি পাওয়ার সময়। যেই দিনটার অপেক্ষায় রাফাত পূর্ণা বসে ছিলো। আজ পূর্ণার মুক্তি দিচ্ছে জেলকতৃপক্ষ। তার সাজা শেষ হয়েছে। বনুলতা সকাল থেকে পূর্ণার জন্য তার পছন্দের খাবার রান্নায় ব্যস্ত। রশীদ চৌধুরী বাজারে গিয়েছে পূর্ণার পছন্দের সব জিনিস কিনতে। ওহ হ্যা আগেই বলে নেয়। এই তিনবছরে অনেক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। সেইদিনের ঘটনা শোনার পর বনুলতা রাফাতের সাথে রাগ করে কথা বলেনি। ছেলের এমন ব্যবহারে সে অসুন্তুস্ট ছিলো। পড়ে রাফাত মায়ের জন্য সব সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছে। এখন রাফাত রশীদ চৌধুরী সম্পর্ক তেতো নয় স্রুতি মধূর। হ্যা আর এক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। রিয়ান, মিহু। রিয়ান আর মিহুর বিয়ে হয়েছে। সেইদিন ঐ দুঘটনার পর মিহু তার বাবাকে ছেড়ে দেয়নি। সে তার বাবা দাদীকে জেলে পাঠিয়েছে। একা মাকে নিয়ে সে এখন চৌধুরী বাড়িতেই থাকে। মিহু রিয়ানের বিয়ের তিনবছর চলে। রিয়ান আর মিহু পূর্ণা আশার সুখ সংবাদে বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত।বাড়ির প্রতিটি কোনা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলছে। মাঝে মাঝে খুনশুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। মিহুর মা মাহমুদা বনুলতাকে কিচেনে সাহায্য করছে। রাফাত ঘরে বসে কখনো এই শার্ট কখনো ঐ টি-শার্ট বা পাঞ্চাবি ট্রাই করছে। কোনটা পড়লে পূর্ণার সামনে তাকে সুন্দর লাগবে। পূর্ণা ঘোর লাগানো চাহনি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।সে কিছুতেই কোন জামা পড়বে তা ডিসাইট করতে পারছে না। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করে বনুলতা। সে ছেলের এমন হাল দেখে হেসে দেয়। তারপর গলা পরিষ্কার করে বলে,
– কী হচ্ছে?
রাফাত দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে বনুলতা। সে হাফ ছেড়ে যেনো বেঁচে যায়। সে বনুলতার হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে। তারপর বলে,
– মম বলো না কোনটা পড়বো। কোনটা পড়লে পূর্ণা সামনে আমায় সুন্দর লাগবে।
বনুলতা হাসে। সে বলে,
– তুই যা পড়বি তোকে তাতেই মানাবে। তবে আমার মনে হয় পূর্ণার পাঞ্জাবি বেশি পছন্দ। তুই এই কালো পাঞ্জাবি টা পড়তে পারিস।
রাফাত কালো পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে বনুলতার গালে চুমু খেয়ে বলে,
– থ্যাঙ্কস মম।
– আরে আরে হয়েছে হয়েছে। শোন তাড়াতাড়ি রেডি হো মিহুর হয়ে গিয়েছে। তুই রেডি হয়ে নিচে আয়। সময় হয়ে গেলো তো।
– জ্বী মম তুমি যাও আমি আসছি। জাস্ট দুই মিনিট লাগবে।
বনুলতা চলে যায়। রাফাত দ্রুত রেডি হয়ে নিচে নামে। মিহু তার জন্য অপেক্ষা করছে। মিহু আর রাফাত পূর্ণাকে আনতে যাবে। রাফাত নিচে এসে বলে,
– চলো মিহু আমি রেডি।
– জ্বি দা ভাই চলুন। মা আমরা আসছি।
বনুলতা বলে,
– এসো মা। আমার ঘরের মেয়েকে নিয়ে ঘরে ফিরো।
– ইনশাআল্লাহ মা।
রাফাত আর মিহু বেড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ড দেয়।
_______________________________________
জেলখানা। পূর্ণা আজ অনেক খুশী। আজ তার মুক্তি। সে আজ খোলা আকাশে মুক্ত পাখির ন্যায় নিঃশ্বাস নিতে পারবে। রাফাতের বুকে ঝাপিয়ে পড়তে পারবে। উফফ অপেক্ষার প্রহর যেনো আজ শেষই হতে চাচ্ছে না। এক একটি মিনিটকে তার এক ঘন্টার সমান মনে হচ্ছে। আসলে ভালোবাসা টাই মনে হয়।অদ্ভুত রকমের নেশা কাজ করে এই ভালোবাসায়। ভালোবাসা সত্য হলে মৃত মানুষের জন্যও অপেক্ষা করাতে শান্তি মিলে। ভালোবাসার মানুষের জন্য জীবনও বাজি রাখা যায়। কঠোর মুহূর্তেও তার বুকে মাথা রেখে শান্তির ঘুম দেওয়া যায়। পূর্ণা আনমনে হাসছে। আর একটু সময়। এইতো সে আসবে। বলবে চলো পূর্ণা। সময় শেষ হয়েছে। তোমার আমার মিলন এইবার আল্লাহ্ ছাড়া কেউ আটকাতে পারবে না। পূর্ণাকে এইভাবে হাসতে দেখে একটা মেয়ে বলে,
– পূর্ণা এইভাবে হাসছো কেন? তার জন্য বুঝি।
পূর্ণা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর যে সহে না আপু। মন যে আর মানে না।
মেয়েটা পূর্ণার কথায় হো হো করে হেসে দেয়। সে বলে,
– এই তিনবছরে তোমার অনেক পাগলামি দেখেছি পূর্ণা। তোমার অনেক চোখের জল দেখেছি। যেই মানুষটার জন্য তুমি এত পাগল।সে তোমার হোক। যানো পূর্ণা জেলার সাহেব আসছিলো। তোমার জন্য শাড়ি নিয়ে আসছে। আজ রাফাত ভাইয়ের সামনে যাবে না তাই। এই অবস্থায় কী যাবে নি তার সামনে। এই জেলের প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে মিস করবে পূর্ণা। সবার আমি তোমাকে হারানোর কষ্ট দেখেছি।
পূর্ণা হাসে। আসলে এই তিনবছরে এই জেলের প্রত্যেকটা মানুষের সাথে পূর্ণার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কেউ বোন, কেউ খালা, কেউ বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে। সবাই তার কাছে রাফাতের গল্প শুনেছে। আর পূর্ণা এতই গল্প করেছে যে তারা এখন সবাই জানে পূর্ণার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পারসন একজনই সে তার রাফাত। তবে এই তিনবছরে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। এইখানকার জেলার। পুলিশ অফিসার শুভ।সে পূর্ণাকে দেখার পর প্রত্যেক পুরুষের মতোই তার প্রেমে পড়েছে। তার ভালোবাসায় মত্ত্ব হয়েছে। তাকে দেখে বার বার মুগ্ধ হয়েছে। প্রেমের নিবেদন নিয়েও তার কাছে এসেছিল। কারণ সে জানতো পূর্ণা ইচ্ছে করে খুন করেনি। পুরো কেসটা সে ঘেটে দেখেছে। তাই কোনো বাধ কাজ করেনি। কিন্তু সে পূর্ণার কাছে আসলে। প্রেম নিবেদন করলে। পূর্ণা সহজ স্বীকারোক্তি দেয়, সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না। সে অলরেডি অন্যের হয়ে গিয়েছে। অন্যের প্রেমে সে মত্ব। এই মন এই প্রাণ এক জনকে ভালোবেসেই উজাড় করেছে। সে হচ্ছে রাফাত চৌধুরী। নামটা বলার পর শুভ অবাক হয়নি। কারণ রাফাতের মতো ছেলেকে যে কেউ ভালোবাসতে চায়বে। ওকে দেখে হালকা একটা বুকের মধ্যে ঝাকুনি দিবে। কিন্তু সেই ভালোবায় যে পূর্ণাও থাকবে সেটা ভাবেনি। তারপর কয়েদির কাছ থেকেই পূর্ণা রাফাতের প্রেম কাহিনি শুনতে পায়। যা শুনে শুভ আর এগোয়নি। সে যানে পূর্ণা আসবে না। একবার এই মন যার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে যায়।দ্বিতীয় বার আর সেটা হয় না। সে হাসে। অপূর্ণ ভালোবাসার জন্য হাসে। সে মানিয়েও নেওয়ার চেষ্টা করে। পূর্ণা বন্ধু হতে চায়। এই বেপাড়টায় পূর্ণা না করতে পারেনি। বন্ধু হয়েছে শুভর। কিন্তু বন্ধু হওয়ার সময় শত স্মৃতি মাথায় ঘুরেছে। কৌশিক নামের একটা ছেলেও একদিন তার দিকে বন্ধুর হাত বাড়িয়েছিল। সব কিছুই এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস।
পূর্ণাকে জেলখানার কয়েকটা মেয়ে মিলে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।সময় হয়েছে রাফাত আশার। আর তো মাত্র কিছু সময়। পূর্ণা কালো রঙের শাড়ি পড়েছে। শাড়িটাতে তাকে বেশ মানিয়েছে। একদম পরী লাগছে। যেনো পৃথিবীর বুকে আসমান থেকে পরি নেমে এসেছে। পূর্ণার সাথে জেলখানার মেয়েরা মজা করছে। রাফাত আসবে। কি কি হবে। এইসব নিয়ে। হঠাৎ একজন পুলিশ এসে বলে,
– মিস পূর্ণা আপনার যাওয়ার সময় হয়েছে। আপনার বাড়ি থেকে লোক এসেছে।
কথাটা শোনা মাত্র পূর্ণার চোখ খুশিতে চিকচিক করছে। একটা মেয়ে দূর থেকে পূর্ণার কাছে আসে। তাকে জরিয়ে ধরে বলে,
– খুব মিস করবো বোন তোমায়।
অনেকেই পূর্ণাকে জরিয়ে ধরে কাঁদে। কেউ কেউ পূর্ণাকে জেতে দিবে না বলে জেদ ধরে। আসলে ফুল নর্দমায় পড়লেও ফুলই থাকে। তাই হয়তো পূর্ণা পূর্ণার জায়গাই আছে। ওর সংস্পর্শে এসে প্রত্যেকটা মানুষ ভালো হয়েছে। পূর্ণা সবাইকে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে বের হয়। বেড়িয়ে দেখে রাফাত, মিহু দাড়িয়ে আছে। পূর্ণার চোখে জল স্পস্ট। রাফাত পূর্ণাকে দেখে তার হৃদয় থমকে গিয়েছে। সেই প্রথম দিনের মতো। চোখের তৃষ্ণা মিটেছ। অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। পূর্ণা এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। আর তার হৃদয়ের ধুকপুক আওয়াজ টা বারছে। মনে হচ্ছে হৃদয়ে কেউ হাতুড়ি পিটা করছে। চোখে জলের বন্যা হয়ে গিয়েছে। রাফাতেরও একি অবস্থা। সে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। দুজনের দৃষ্টি দুজনে তে স্থির। খুব কাছাকাছি পূর্ণা রাফাত। রাফাত পূর্ণার একটা হাত ধরে দেখতে থাকে। আসলেই কি সত্যি। নাকি আবার স্বপ্ন। সে পূর্ণার গালে হাত রাখে। পূর্ণা এখন হেচকি তুলে কাঁদছে। রাফাত বিশ্বাস করতে পারছে না পূর্ণা তার সামনে। পূর্ণা রাফাতকে জরিয়ে ধরে বলে,
– স্বপ্ন নয় সত্যি। হৃদয়ের স্পন্দন শুনে দেখো। এই নিঃশ্বাসের গতি বলে দিচ্ছে তুমি আমার কতটা আপন।
রাফাত ঘোর থেকে বের হয়। সে বুঝতে পারে সব সত্য। সে পূর্ণার দিকে তাকায়। অজস্র চুমু একে দেয় পূর্ণার মুখে। পাগলের মতো করতে থাকে। কখনো বুকে জরিয়ে নিচ্ছে তো কখনো চুমু খাচ্ছে। পূর্ণা কিচ্ছু বলছে না। সে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। এই কান্না দুখের না সুখের।এই কান্না ত্যাগের না প্রাপ্তি। ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার কান্না। মিহু পাশ থেকে শুধু রাফাতের পাগলামি দেখছে। একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতটা ভালোবাসলে সবকিছু ভুলে তার মধ্যে মত্ত্ব থাকে। একেই বোধয় বলে এক নারীতে আশক্ত পুরুষ। সত্যি ভালোবাসা বিচিত্র।
পূর্ণা লক্ষ করে আশেপাশের লোক তাদের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো পৃথিবীতে বুকে এলিয়েন নেমে এসেছ। পূর্ণার অসস্তি হয়। সে মিনমিনে গলায় রাফাতকে বলে,
– সবাই দেখছে ছাড়ো।
রাফাত বুঝতে পারে পূর্ণা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সে পূর্ণাকে ছেড়া দেয়। পূর্ণা লজ্জায় তাকাতে পারছে না। রাফাত পূর্ণার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে আসে। মিহুও আশে। পূর্ণা মিহুকে দেখে বলে,
– কেমন আছো আপু।
মিহু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্ বোন। তবে এখন বোধহয় আরো ভালো থাকবো মায়ের মেয়ে ভাইয়ের ভালোবাসা যে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
পূর্ণা হাসে। হাসে মিহুও। রাফাত গাড়ি স্টার্ড দেয়। পূর্ণা রাফাতের কাধে নিজের মাথা রাখে। রাফাত মুচকি হাসে। পূর্ণা রাফাতকে অভিমানি কন্ঠে বলে,
– তুমি এমন কেন?
– কেমন?
– এই যে এতদিন এতকিছু করছো?
– কি করছি?
– মেঝেতে কেন ঘুমাইছো। ডাল হাত এইসব কেন খায়ছো শুনি। রাফাত এইগুলো কেমন পাগলামি এইসব কেউ করে।
রাফাতের সোজা স্বীকারোক্তি,
– অন্য কেউ করে কিনা আমি জানি না। তবে আমি আমি করছি। আমার ভালোবাসা কষ্ট পাবে। আর আমি চুপ থাকবো। তা কি করে হয়।
পূর্ণা রাফাতের থেকে দূরে সরে এসে বলে,
– এইটা ভালোবাসা। রাফাত তুমি কেন আমার কথা শুনোনি। আমি যে মিহু আপুকে দিয়ে খবর পাঠালাম যে তুমি আর এইসব পাগলামি করবে না। তুমি কি আমার কথা শুনছো।
– দেখো পূর্ণা আমার পক্ষে এইসব শোনা সম্ভব না। তাই শুনিনি।
– তাই তুমি আমাকে অবজ্ঞা করে আমার ভালোবাসার অপমান করোনি।
রাফাত হো হো করে হাসে। তারপর বলে,
– তুমি অপমানিত হয়ছো।
পূর্ণা গাল ফুলিয়ে বলে,
– তুমি হাসছো। আমার কথাগুলো তোমার কাছে হাস্যকর লাগছে। ঠিকাছে হাসো তুমি। আমি তো হাস্যকর তাই না। আমি ছিলাম না সেটাই ভালো ছিল তাই না। আমি আবার চলে যাব। দেখি তুমি কত শান্তি পাও।
রাফাত জোরে ব্রেক কসে। সবাই সামনের দিকে ঝুকে পড়ে। সিটব্যাল্টের জন্য পূর্ণার মাথা বেঁচে যায়। রাফাত পূর্ণাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,
– ফারদার এমন কথা বলছো তো খবর আছে। কি করছি আমি যে এত রাগ করতে হবে। ফাইন আমি রাফাত কথা দিচ্ছি এরপর থেকে তোমার সব কথা শুনে চলবো। কিন্তু তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলতে পারবে না গট ইট।
– হুম।এখন ছাড়ো মিহো আপু দেখছে।
মিহু পড়ছে মহা মুশকিলে এরা দুইমিনিট দুরত্ব বজায় রাখতে পারছে না। মিহুর লজ্জা লাগছে। সে না আসলেই ভালো হতো। কিন্তু ফরমালিটির জন্য এসেছে। এইখানে অনেক কাজ ছিলো। মিহু বলে,
– দা ভাই আমি কি টেক্সি নিয়ে চলে যাবো।
রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
– কেন? আমি কি ভালো ড্রাইভ করতে পারিনা।
– না না তেমন কিছ না। আসলে।
– আসলে কিছু না। চুপ করে বসো। বাড়ি চলে এসেছে।
– জ্বি আচ্ছা।
রাফাত গাড়ি স্টার্ড দেয়। পূর্ণা লজ্জায় নুয়ে আছে। এই বজ্জাত লোকটার জন্য সে এখন মিহু আপুর সাথে কথা বলতে ইতস্ত বোধ করছে।
ধ্যাত।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।