এক বুক ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
1001

#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ০৯

ইশান কোনো মেঘ জমেছে। মনে হচ্ছে এইবার কালবৈশাখী ঝড় উঠবে। সোঁ সোঁ করে বাতাস বয়ছে। সেই বাতাসে পূর্ণার লম্বা চুল থেমে থেমে উড়ছে। বিছানার পাশে নিচে ফ্লোরে হাঁটুর মধ‍্যে মুখ গুজে কান্না করছে পূর্ণা। লম্বা চুলগুলো চারদিকে পড়ে আছে। আর তার কান্না আর তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার উপরে কোনো প্রেতাত্মা ভর করেছে। পরিবেশটা কেমন গা ঝমঝম। পূর্ণার হাতে রক্তাক্ত ভাঙা ফুলের টব। সামনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে স্টিফেনের নিথর দেহ। পূর্ণা একটু পর পর গুনগুন করে কাঁদছে। তার শরীর অশার হয়ে আসছে। মাথার মধ‍্যে ভো ভো আ‍ওয়াজ হচ্ছে। শরীর মৃত মানুষের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে।।ভয়ে পূর্ণার সারা দেহ থরথর করে কাঁপছে। মনে হয় পৌষের শীতেও কেউ এইভাবে কাঁপে না। পূর্ণা মুখ তুলে একবার স্টিফেনের হায় স্পর্শ করে দেখে। হাতটা ধরার পর পূর্ণা ছিটকে দূরে সরে যায়। কী ঠাণ্ডা। এমন ঠাণ্ডা জিনিস সে কখনো ধরেনি। পূর্ণা তাল সামলাতে পারছে না। সবকিছু কেমন ঘোলাটে। চোখের সামনে স্টিফেনের লাশ। পূর্ণা স্পষ্ট বুঝতে পারছে স্টিফেন মরেছে। তার দেহ ঠাণ্ডা বরফের ন‍্যার হয়ে গিয়েছে। পূর্ণার মাথা কাজ করে সে ঠাস হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। জ্ঞান হারায় পূর্ণা।
_______________________________________

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।
পূর্ণা মেঝেতে বসে কাঁদছে। স্টিফেন লোলুপ দৃষ্টি তে তাকিয়ে তার দিকে এগুচ্ছে। সব শেষ আর বাঁচার রাস্তা নেয়। স্টিফেন পূর্ণার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে। পূর্ণা গগন বিদারী এক চিৎকার দিয়ে উঠে। স্টিফেন পূর্ণার গালে হাত রাখলে পূর্ণার মনে পড়ে তার মায়ের কথা। শত শত পুরুষ তার মায়ের শরীরে আঘাত করেছে। তার দুর্বল মা অসহায় ছিলো তাই কিচ্ছু করতে পারেনি। কিন্তু তার মা তাকে তো দুর্বল করে বড় করেনি। তাহলে আজ কেন সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। নারী যেমন দুর্বল তেমন নারীই প্রলয় কারীণি। স্টিফেন পূর্ণার গাল ধরে নিজের কাছে আনলে। সে অগ্নিচোখে তার দিকে তাকায়। স্টিফেন হেসে দিয়ে বলে,

– ওমা ভয় পায়ছি।

পূর্ণা স্টিফেনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তবে এইবার স্টিফেন পড়ে যায়নি উল্টো সে আরও জোরে চেপে ধরে পূর্ণাকে। পূর্ণা মনে মনে আল্লাহকে স্বরণ করে। তারপর স্টিফেনে অন্ডকোষে জোরে এক লাথি দেয়। স্টিফেন চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়ে। পূর্ণা ভাঙা টপ স্টিফেনের দিকে ছুড়ে মারে। ভাঙা কাঁচের টুকরো স্টিফেনের গলায় গিয়ে লাগে। স্টিফেন গলা কাটা মুরগির মতো মাটিতে পড়ে দাপাচ্ছিল। স্টিফেন পূর্ণার হাত খামচে ধরে তারপর তাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে পেটে লাথি দেয়। পূর্ণা মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। স্টিফেন পকেট থেকে ছুড়ি বেড় করে। সেটা দেখে পূর্ণা ভয় পায়। তবে মুখে সেই ভাব আনেনি। সে স্টিফেনের পায়ে লাথি মারে স্টিফেন পড়ে যায়। পড়ে যায় তার হাতের ছুড়ি। পূর্ণা সুযোগ কাজে লাগায়। স্টিফেনের হাতের ছুড়ি নিয়ে স্টিফেনের গলায় বসিয়ে দেয়। বুকের মধ‍্যে গুনে গুনে দশবার আঘাত করে। স্টিফেনের চোখদুটো উল্টে যায়। মুখ দিয়ে রক্ত আসে। পূর্ণা এখনো উত্তেজনায় ঘামছে। লম্বা চুলগুলো হাওয়ায় উরছে। কিন্তু পরেক্ষণেই যখন সে বুঝতে পারে স্টিফেনের কোনো আওয়াজ নেয় সে ভয় পেয়ে যায়। মুখ চেপে ধরে কান্না করে। বার বার বমি করে। অবস্থা একদম নাজেহাল হয়ে যায়। সে ভাবতেও পারেনি তার দ্বারা কখনো মানুষ খুন হবে। পূর্ণা খুন করেছে। আপনারা ঠিকই বুঝেছেন পূর্ণা খুন করেছে। সে নিজেও মানতে পারছে না সে খুন করেছে। ঘরটা রক্তে একাকার হয়ে গিয়েছে। নিজের শরীরটাও দুর্বল লাগছে। স্টিফেনের আঘাতে সেও ব‍্যথিত।
________________________________________

বর্তমান।। ঝুমুর বাইজি, আহির আর কৌশিক বসে ড্রিংকস করছিলো। হঠাৎ আহির বলে,

– খালা প্রায় রাত শেষ হতে চললো। স্টিফেন সাহেব এখনো বের হলো না।

ঝুমুর বিশ্রি হাসি দিয়ে বলে,

– আরে টাটকা মাল পায়ছে ছাড়বার কি মনে চায় এত তাড়াতাড়ি। করুক যা করবার মন চায়।

কৌশিক বলে,

– খালা বেপারটা আমার কাছে অন‍্যরকম লাগছে। বেশকিছুক্ষণ ধরে ঐ ঘর থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না। সব ঠিক ঠাক আছে তো।

– তুই কি কয়বার চাস। ঐ বাচ্চা মায়ইয়া স্টিফেনরে মারবো।

– দেখো তেমন কিছু না। তবে আমার মনে হয় খোঁজ নেওয়া দরকার।

– আচ্ছা আমি দেখতাছি দাড়া। ঐ ময়না কই তুই এইখানে একবার আয় দেহি।

সতেরো আঠারো বছরের একটি মেয়ে কোমর ঢুলাতে ঢুলাতে এইদিকে আসে। বেনিটা নাড়তে নাড়তে বলে,

– আমারে ডাকছো খালা।

– হো ডাকছি পূর্ণার ঘরে গিয়া দেখতো। ওরা কি করে।

– আচ্ছা দেখবার লাগছি।

ময়না আবারো আগের মতো করে যেতে থাকে। পূর্ণার ঘরের সামনে এসে দরজা খুলে দেয়। তারপর যা দেখে সেটা দেখে সেই চিল্লিয়ে বলে,

– আল্লাহ গো খালা। স্টিফেন সাহেবরে মায়রা হালায়ছে।

কথাটা বলে ময়না দৌড়ে সেখান থেকে ঝুমুর বাইজির কাছে যায়। আর পূর্ণার কারো কন্ঠের আওয়াজে জ্ঞান ফিরে। সে দেখে দরজা খোলা।বাইরে চেচামেচি হচ্ছে। সে বুঝতে পারে ঘটনাটা জানাজানি হয়ে গিয়েছে। তাই সে ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ঝুমুর বাইজি সহ আহির কৌশিক সবাই ঘরে এসে দেখে পূর্ণা নেয়। স্টিফেন লাশ হয়ে পড়ে আছে। তার সারা শরীর রক্তে মাখা। যাওয়ার আগে পূর্ণা যেই ছুড়ি দিয়ে স্টিফেনকে মেরেছে সেই ছুড়িটা নিজের সাথে করে নিয়ে যায়। ঝুমুর চিল্লিয়ে বাইজি পাড়ার লোক একসাথে করে। সবাইকে বলে পূর্ণাকে খুজে বের করতে। একটি ছেলে উঁচু পাচিরে উঠে দেখে পূর্ণা কতদূর গেছে। সে দেখতে পায় পূর্ণা এখনো বাড়ির গেট পাড় করতে পারেনি। তাই সে চিৎকার করে বলে,

– খালা ঐ যে ছেড়ি। বড় গাছের বুগোলে। ঐ তোরা ওরে ধর।

পূর্ণা চিৎকার শুনে উপরে তাকায়। দেখে একটা ছেলে এইদিকে তাকিয়ে আছে। সে সাথে সাথে পিছে তাকায় দেখে কতগুলো ছেলে এইদিকে আসছে। পূর্ণা কামিজ খামচে ধরে। ওরনাটা বেধে নেয়। হাতের ছুড়িটা কোমরে ওরনার সাথে আড়াল করে রাখে। তারপর দৌড়ে মেইন রাস্তার দিকে যায়। আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে। বাতাসে বড় বড় গাছগুলো মাটিতে উপরে পড়তে চাচ্ছে। যেকোনো সময় বৃষ্টিও পড়তে শুরু করবে। পৃথিবীর মানুষের সাথে যেনো প্রকৃতিও খেলা শুরু করছে। পূর্ণা প্রাণপনে দৌড়ে পালাচ্ছে। আজ কোনো প্রাকৃতিক ঝড় মনে প্রভাব ফেলতে পারছে না। কিছুক্ষণের মধ‍্যে বৃষ্টি শুরু হয়। পূর্ণার ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। লম্বা চুল গুলো এখন আর উরছে না। পূর্ণার দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পিছনে বিপদ। পূর্ণা মেইন রোডে উঠে যায়। মেইন রোডে উঠার পর সে দেখে দুইটা বাইক তার পেছনে আসছে। সে বুঝতে পারে সব শেষ। বাইকের সাথে তো আর সে দৌড়ে পারবে না। একটা বাইক তার কাছাকাছি এসে হকিস্টিক দিয়ে পিঠে বাড়ি দেয়। পূর্ণা উপুর হয়ে রাস্তায় পড়ে। আকাশ ফুলে ফেপে উঠছে। যেনো তারাও বিরোদ জানাচ্ছে পূর্ণার সাথে যেনো কিছু না হয়। পিচ ঢালায় রাস্তাত পূর্ণা পড়া আছে। মা বলে চিৎকার করছে। পূর্ণা উঠার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। হঠাৎ জোরে বজ্রপাত হয়। পূর্ণা কেপে উঠে। বাইক থেকে দুটি ছেলে নেমে আসে। পূর্ণাকে ধরে বসায়। পূর্ণা বৃষ্টির ফোটার কারণে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। তবুও কষ্ট করে সামনে থাকা ব‍‍্যক্তির দিকে তাকায়। ছেলে দুটি আর কেউ নয় আহির আর কৌশিক। পূর্ণা এইবার হেসে উঠে। পিঠের যন্ত্রণা তাকে কাবু করতে পারছে না। তার থেকে বেশি কাবু করছে মনের যন্ত্রণা পূর্ণা। পূর্ণার এমন হাসি দেখে আহির পূর্ণার চুল খামচে ধরে বলে,

– এইভাবে হাসছিস কেন? জানিহ এখনি তোকে খুন করে গায়েব করে দিতে পারি।

পূর্ণা আহিরের মুখে থুতু দেয়। আহির রেগে পূর্ণার গালে চড় বসায়। পূর্ণা রাস্তায় পড়ে যায়। পাঁচ আগুনের দাগ বসে যায় গালে। ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়া শুরু করে। পূর্ণা আবার উঠে বসে। তারপর কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বলে,

– বিশ্বাসঘাতক। নিজের ভাইকেও ছাড়লি না।

কৌশিক হাসতে হাসতে বলে,

– আমার ভাই আমি কাটবো মারবো যা ইচ্ছে তাই করবো তোর কি?

পূর্ণা হুঙ্কার করে বলে,

– রাফাতের গায়ে একটা আচড় লাগুক। সব কয়টাকে খুন করবো আমি।

পূর্ণার এমন রূপে দুজনেই কেঁপে উঠে। এতদিন পূর্ণার বাচ্চা বাচ্চা মুখ দেখে এসেছে তার। আজ এমন প্রলয়কারী রূপ দেখে সত‍্যি একটু হলেও ভয় পেয়েছে। ভয়ঙ্কর হলেও সত‍্য পূর্ণা স্টিফেনকে খুন করেছে। কৌশিকে হকিস্টিক দিয়ে পূর্ণার পায়ে বাড়ি মেরে বলে,

– সুযোগ দিলে তো খুন করবি।

পূর্ণা বাড়ি খেয়ে পা ধরে চিৎকার করে উঠে। আবারো বজ্রপাত হয়। এইবার খুব কাছে কোথাও ই বজ্রপাত হয়েছে। পূর্ণা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

– প্রকৃতি প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমার মনে সাহস দিচ্ছে তোরা আমার কিচ্ছু করতে পারবি না। ইয়া আল্লাহ্।

কথাটা বলে পূর্ণা কোমরে গোজা ছুড়িটা বের করে আহিরের পিঠে বসিয়ে দেয়। অর্তকিত হামলার জন‍্য সে প্রস্তুত ছিলো না। তাই তার পিঠটা অনেকটা দেবে কেটে যায়। সে পিঠ ধরে বসে পড়ে। কৌশিক পূর্ণার হাতের ছুড়ি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। পূর্ণা প্রাণপনে সেটা আটকানোর চেষ্টা করছে। ছুড়ি কেড়ে নেওয়ার এক পর্যায় ছুড়িটা এসে লাগে পূর্ণার হাতে সে ব‍্যথায় মাগো বলে কেঁদে দেয়। কৌশিকে পূর্ণাকে তুলে নিয়ে যেতে চাইলে হঠাৎ বড় কোনো গাড়ির আলো তাদের চোখে পড়ে। আহির কৌশিক পূর্ণাকে ছেড়েই সেখান থেকে পালায়।পূর্ণা গাড়িটির দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়। তারপর রাস্তায় ঢুলে পড়ে।গাড়ি থেকে একটি ছেল বেড়িয়ে আসে। হাতে তার ছাতা। সে পূর্ণার কাছে এসে তার মুখে লাইট মারে। তারপর বলে,

– ও মাই গড পূর্ণা।

ছেলেটি আর কেউ নয় রিয়ান। সে পূর্ণাকে পাজা কোলে করে নেয়। নিজের গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করে হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। গাড়িতে রিয়ানের সাথে আরও একজন ছিলো রিয়ানের প্রেমিকা মিহু। মিহু পূর্ণার হাতের খতস্থান রুমাল দিয়ে চেপে ধরেছে। কিন্তু কিছুতেই ব্লেডিং থামছে না। আসলে রিয়ান বাড়ি থেকে দুদিনের জন‍্য মেডিকেলের কাজে চট্রগ্রাম গিয়েছিল।বাড়ি এসে শুনে রাফাত পূর্ণা নিখোঁজ। তার মায়ের সেকি কান্না। আমার ছেলে মেয়েকে এনে দে। তাই রিয়ান আর দেড়ি না করে মিহুর কাছে যায়।মিহু একজন পুলিশ অফিসার। মিহুকে সব ঘটনা খুলে বলে। সে রাফাতের ফোন ট্রেক করে। ট্রেক করার পর জানতে পারে রাফাতের ফোন তাদের বাড়ির কোথাওই দেখাচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেটা এখনো কেউ খুজে বেড় করতে পারেনি। এইদিকে অনেক রাত হওয়ায়। রিয়ান মিহুকে ড্রোপ করতে যাচ্ছিল। আর মাঝেই পূর্ণাকে পায়। বর্তমানে তারা এখনো হাসপাতালের করিডোরে আছে। রিয়ান পূর্ণাকে তার সিনিয়র একজন স‍্যারের কাছে এডমিট করিয়েছে। তিনি জানায় পূর্ণার শরীরের অনেক মারের দাগ। পিঠে পায়ে কেউ শক্ত কিছু দিয়ে বাড়ি দিয়েছে। গালেও চড়ের দাগ।কথাটা শোনার পর রিয়ান টেনশনে পড়ে যায়। সে স্পষ্ট দেখেছিলো ঐখানে আরও দুজন লোক ছিলো তাদের দেখে পালিয়েছে। মিহু সব শোনার পর বলে,

– রিয়ান পূর্ণার লাইফ রিস্ক আছে। কেউ ওকে খুন করতে চায়। তাই ওকে আমরা খুজে পেয়েছি এইটা আপাতত কাউকে বলার প্রয়োজন নেয়। আমার মনে হয় পূর্ণা বলতে পারবে রাফাত ভাই কোথায় আছে। আগে ওর জ্ঞান ফিরুক।

– তুমি বাড়ি যাবে না মিহু।

– না আগে কেসটা তো দেখি। এইখানে অনেক রহস‍্য আছে রিয়ান। যা আমরা খালি চোখে দেখতে পারছি না। আমার মনে হয় পূর্ণার জ্ঞান ফেরাটা জরুরি।

– হুম। তুমি কি পূর্ণার কাছে যাবে।

– চলো যাওয়া যাক।

ভোর বেলা। আকাশে এখনো মেঘরাশি দৌড়াদৌড়ি করছে। বাতাসের বেগটা একটু কমে এসেছে। কিন্তু বৃষ্টি নেয়। কাঁদার গন্ধে চারপাশ ঘিরে আছে। মিহু পূর্ণার পাশে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। রিয়ান সোফার শুয়ে আছে। পূর্ণা আস্তে আস্তে চোখ খুলছে। জানালা দিয়ে হালকা বাতাস কেবিনের মধ‍্যে ঢুকছে। সেই বাতাস পূর্ণার মুখে বাড়ি খাচ্ছে। পূর্ণা পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগে উঠে বসতে নিলে হাতে টান খায়। ব‍্যথায় আহ করে উঠে। সে বুঝতে পারে হাতে কেনলা লাগানো। সে হাসপাতালে আছে। হাতে ব‍্যান্ডেজ করা। শরীরটা কেমন ব‍্যথা করছে। পূর্ণার আহ করার আওয়াজে মিহুর ঘুম ভাঙে। সে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,

– উঠে গিয়েছো।

পূর্ণা চোখের সামনে সাদা শার্ট কালো জিন্দ পড়া একটি মেয়েকে দেখতে পায়। সে ভালোভাবে মেয়েটিকে দেখে মনে করার চেষ্টা করে সে কি মেয়েটাকে কখনো দেখেছে। মিহু পূর্ণার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

– কি ভাবছো।

– ভাবছি আমি কি আপনাকে চিনি।

– নাহ। তুমি আমায় চিনো না তবে আমি তোমাকে চিনি।

কথাটা বলার সাথে সাথে রিয়ান এসে পূর্ণার সামনে দাড়ায়। পূর্ণা রিয়ানকে দেখে বলে,

– রিয়ান ভাই।

– হ‍্যা আমি পূর্ণা। কাল রাতে আমি তোমাকে সেভ করেছি। কতগুলো ছেলে তোমাকে আঘাত করছিলো।

রিয়ানের কথায় পূর্ণার কালকের রাতের ঘটনা মনে পড়ে। মনে পড়ে রাফাতের কথা রাফাত বন্দি পড়ে আছে চৌধুরী বাড়িতে। সে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আমি ঠিক আছি। আপনি বাড়ি এসেছেন কবে?

– কাল আর আসার পর মমের মুখে থেকে সব শুনি। দা ভাই নিখোঁজ তুমি নিখোঁজ। তোমাকে তো পেলাম কিন্তু দা ভাই কোথায়।

পূর্ণা জোরে শ্বাস নেয়। উঠে বসার চেষ্টা করে। মিহু তাকে সাহায্য করে। মিহু পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,

– পূর্ণা আমি একজন পুলিশ অফিসার। কাল রাতে যখন তোমাকে হাসপাতালে আনা হয়।তখন ডাক্তার বলে তোমার শরীরে থাকা আঘাতের কথা। তোমাকে এইভাবে আঘাত করেছে পূর্ণা সত্যি বলো। কোনো ভয় নেয় আমি তোমাকে সাহায্য করবো।

পূর্ণা মনে করে সে খুন করেছে। পুলিশ যদি জানে সে খুন করেছে তাহলে সে বাহিরে ঘুরতে পারবে না। সে তার রাফাতকে উদ্ধার করতে পারবে না। তারমধ‍্যে কোনো প্রমাণ নেয় এইসবের।কৌশিক রিয়ানের আপন ভাই আদরের ভাই এইসব কোনো কিছু সে বিশ্বাস করবে না। তাই সে বলে,

– ওরা আমায় রেপ করতে চেয়েছিলো। বাধা দিয়েছি বলে মেরেছে। কিন্তু আমি জানি না রাফাত ভাই কোথাও।

মিহুর তীক্ষ্ম দৃষ্টি বুঝে যায় পূর্ণা মিথ‍্যে বলছে কিন্তু কেন? রিয়ানের জন‍্য। হয়তো এমন কিছু কথা আছে যেটা সে রিয়ানের সামনে বলতে চাইছে না। মিহু রিয়ানকে বলে,

– রিয়ান নিচে গিয়ে আমাদের জন‍্য কিছু খাবার নিয়ে আসো। পূর্ণা তো বললো সে কিছু জানে না। তাহলে আর সময় লস করে কি লাভ যাও।

রিয়ান মিহুর কথায় চলে যায়। মিহু পূর্ণার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

– মিস পূর্ণা এইবার সত্যি টা বলুন। কোন কথা আপনি চেপে যাচ্ছেন। আপনি যদি সত‍্যি না বলেন তাহলে আমরা ধরে নিবো আপনি শত্রুপক্ষের সাথে আছেন।

পূর্ণা ভাবে সে পাপ করেছে শাস্তি তার প্রাপ‍্য। আবার তার একার পক্ষেও রাফাতকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কারো সাহায্য দরকার। তাই সে মিহুর হাত ধরে বলে,

– আপনি যদি আমাকে সাহায্য করেন তাহলে আমি সব বলবো।

– কেন সাহায্য করবো না। অবশ্যই করবো। তুমি নির্ভয়ে বলো পূর্ণা।

পূর্ণা গলাটা ঝেড়ে বলে,

– রাফাতে ছোট ভাই কৌশিক রাফাতকে আটকে রেখেছে।

মিহু চমকে বলে,

– হোয়াট আমি বিশ্বাস করি না।

– আমি জানি আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। তবে কথাটা সত‍্য। ওহ আর রিয়ান ভাইয়ের বন্ধু আহির ওরা দুজনে আমাকে আর রাফাতকে আটকে রেখেছিলো।

– খোলোসা করা বলে।

তখন পূর্ণা সব কথা মিহুকে খুলে বলে। মিহু শোনার পর অবাক হয়ে বলে,

– তোমার মতো একটা বাচ্চা কাউকে খুন করছে।

পূর্ণা চোখ বন্ধ করে পানি ফেলে বলে,

– দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে নারী রুখে দাড়ায়। আমিও তাই করেছি। ঐ ঝুমুর বাইজিকে না ধরলে অনেক মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। আপু আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি রাফাতকে উদ্ধার করার পর আমি নিজে আপনার কাছে আত্মসমাপণ করবো। আমাকে শুধু কিছু দিনের সময় দিন।

– তোমার লাইফ রিস্ক আছে পূর্ণা। ওরা তোমাকে পেলে খুন করবে। আমি তোমাকে একা ছাড়তে পারিনা।

– আমি একা যাচ্ছিও না। আপনি আমার সাথে থাকবেন। আজ রাতে আমরা ঐ বাড়ি যাব। কৌশিকের ঘর দেখবো।

– আচ্ছা যাব।

– কিন্তু আমি বেঁচে আছি কাউকে বলবেন না। আর রিয়ান ভাইকে এখনোই কিছু বলতে যাবেন না।

– ঠিকাছে বলবো না। কারণ রিয়ান কিছুই বিশ্বাস করত চাইবে না। তাই না বলেও বুদ্ধিমানের কাজ।

– আচ্ছা। তাহলে এই কথাই রইলো।

– হুম।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে