এক বুক ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
1002

#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৫

মাথার উপরের সূর্যটা আজ মনে হয় বেশিই তেজ দেখাচ্ছে। পিচঢালা রাস্তায় সূর্যের আলো চিকচিক করছে। গাছের পাতা একটুও নড়ছে না। চারদিকে গরম হাওয়া। পূর্ণা রশীদ চৌধুরীর সাথে স্কুলে এসেছে। সেখানে এসেই ঘেমে নেয়ে সে একাকার হয়ে গিয়েছে। রশীদ চৌধুরী পূর্ণাকে প্রথমে অফিস রুমে নিয়ে যায়। তারপর হেডমাস্টরের সাথে পূর্ণার পরিচয় করিয়ে দেয়। পূর্ণা সালাম দেয়। রশীদ চৌধুরী ফরম ফিলাপ করে টাকা জমা দেয়। হেডমাস্টার পূর্ণাকে নিয়ে তার ক্লাস রুমে যায়। তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ক্লাসের শিক্ষক পূর্ণাকে সামনের একটা বেঞ্চে বসিয়ে দেয়। তারপর ক্লাস শুরু হয়। রশীদ চৌধুরী পূর্ণাকে রেখে চলে আসে। শিক্ষক ক্লাস নেওয়াতে ব‍্যস্ত। পূর্ণার পাশে বসা একটা মেয়ে পূর্ণাকে বলে,

– তোমার নাম কি?

পূর্ণা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

– আমার নাম পূর্ণা। তোমার নাম কি?

– আমি সাবা। তুমি রশীদ মামর কি হও?

পূর্ণা একটু ভেবে বলে,

– আমি ওনার মেয়ে।

সাবা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে,

– মিথ‍্যে উনি আমার আপন মামা। আমি জানি উনার কোনো মেয়ে নেয়। সত‍্যি বলো।

পূর্ণা একটু থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে। তখন ক্লাসের বের পড়ে যায়। ক্লাস শেষ সবাই শ্রেণি কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যায়। ক্লাসে প্রবেশ করে কৌশিক। কৌশিককে দেখে পূর্ণা হাসে। কৌশিক পূর্ণার কাছে এসে সাবার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

– কিরে পূর্ণা এখানে কি করিস। চল বাহিরে চল।

সাবা বিরক্তি হয়ে বলে,

– কৌশিক ভাই আমায় মারলে কেন?

কৌশিক একটু ভাব নিয়ে বলে,

– তোকে মেরেছি। সরি রে আমি তোকে মারতে চায়নি। আমি তো আমার বোনকে মারতে চেয়েছিলাম পূর্ণাকে।

– মিথ‍্যে বলছো কেন তোমরা। তোমাদের যে বোন নেয় তা কিন্তু আমরা সবাই জানি।

কৌশিক পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,

– মায়ের পেটের বোনই বোন হয় না। অনেক সময় আত্মার সম্পর্ক থেকেও অনেক কিছু হয়। পূর্ণার সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক বুঝলি।

সাবা ঠোট টা গোল করে বলে,

– ও।

– তুই কি মজা নিচ্ছিস।

– না কৌশিক ভাই মজা নিবো কেন? আমি আহির ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছি ওহ তোমার বন্ধু। ওকে তুমি নিয়ে এসেছো।

– তাহলে তো সবই জানিস। আবার জিঙ্গাসা করছিস কেন? এখন সর আমাদের যেতে দে।

কথাটি বলে কৌশিক পূর্ণার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়। আর সাবা রাগ করে বলে,

– আমি কি বুঝি না। তোমার সাথে ওর কিসের সম্পর্ক। আমি যদি কোনোদিন শুনি ওহ তোমার। তাহলে কিন্তু আমি তোকে খুন করবো কৌশিক।

সাবাকে এইভাবে ফুসতে দেখে ওর বন্ধু ইশানী বলে,

– কিরে সাবু এই ভাবে ফুসছিস কেন?

সাবা ইশানী ধমক দিয়ে বলে,

– ইশানী কতদিন বলছি আমায় সাবু বলবি না। আমার নাম সাবা।

– আচ্ছা ঠিকাছে কুল বেপস। এত রেগে আছিস কেন?

সাবা বাঘীনিদের মতো বলে,

– কৌশিক এমন টা কেন করলো। আমায় উপেক্ষা করলো। চলে গেলো ঐ পূর্ণা নামের মেয়েটার সাথে।

ইশানী একটা চিপসের প‍্যাকেট ছিড়ে বলে,

– তোর কি মনে হয় সাবা। কৌশিক ভাই প্রেমে পড়ছে ঐ পূর্ণার।

– জানি না শুধু জানি ওহ ঐ মেয়েকে ওদের বাসার নিয়ে আসছে। আর মামী মনি ওকে নিয়ে নাচছে। আমার ভালো লাগে না।

– দেখ সাবা কৌশিক ভাই যদি ঐ মেয়ের প্রেমে পড়ে তাহলে আমি ঘটনাটা স্বাভাবিক ভাবে নিব। আর যদি প্রেমে না পড়ে তাহলে আমি বেশ অবাক হব।

– মানে।

– মানে খুব সহজ। পূর্ণা আগুন সুন্দরী ওর প্রেমে যেই ছেলে পড়বে না সে তো ছেলের কাতারেই নেয়। শোন সাবা আমি মেয়ে হয়ে ওর রূপে মুগ্ধ।

সাবা বিরক্ত হয়ে বলে,

– ফালতু কথা বাদ দে। আমি যদি জানি ওহ আমায় ভালোবাসেনা। তাহলে ওর খবর আছে। খুন করবো আমি ওকে।

ইশানী সাবার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

– বোকার মতো কেন কথা বলছিস সাবা। কৌশিক ভাই কি তোকে কখনো বলছে সে তোকে ভালোবাসে। তাহলে তুই কেন মনে মনে মন কলা খাচ্ছিস।

– কেন খাব না কেন খাব না শুনি। কৌশিকের আমায় প্রতি কেয়ার। আমার কিছু হলে ওর অস্থিরপনা। কলেজে কেউ কিছু বললে তাকে মারা। সব কিছু কি শুধু এমনি এমনিই ছিলো বল। ও যে আমায় চোখে হারাতো।

– জানি না হয়তো বোন হিসেবে কেয়ার করছে।

– বোন হিসেবে কেয়ার কই রাফাত ভাই, রিয়ান ভাই, আহির ভাই ওরা তো এমন করে না। তাহলে কৌশিক ভাইই কেন বল।

– থাম সাবা তোর প্রশ্নের জবাব এক মাত্র কৌশিক ভাইই দিতে পারবে।

সাবা আর কিছু বলে না। সে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে মাঠে চলে যায়। তার পেছন পেছন ইশানীও আসে। কিন্তু সাবা ইশানীকে ধাক্কা মেরে অন‍্য কোথাও ফেলে দেয়। ইশানীও বিরক্তি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। সাবা মাঠে একা একা বসে আছে। মনের মধ‍্যে উঠেছে ঝড়। এই ঝড় যেসে ঝড় নয়। এই ঝড় ভালোবাসা হারানো ঝড়। ভয় হচ্ছে সাবার যদি কৌশিককে হারিয়ে ফেলে। যেদিন থেকে ভালোবাসা বুঝে সেদিন থেকে কৌশিকেই ভালোবেসে এসছে। কৌশিক তার অভ‍্যাস। কৌশিক তার নিত‍্যদিনের সঙ্গী। কৌশিক তার প্রেম। গান যেমন তাল ছাড়া শূন্য তেমনি সাবাও কৌশিক ছাড়া শূণ্য। কথাগুলো ভেবে সাবার কান্না পাচ্ছে। সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। হ‍্যা সে পূর্ণার মতো সুন্দর নয়। তাই বলে সে তো অসুন্দর ও নয়। সে মানে পূর্ণা রূপবতী। কিন্তু সেও তো কম না। তাহলে কেন পূর্ণা। সে নয়। সাবা এইবার হাটুর মধ‍্যে মুখ গুজে কান্না করছে। দূর থেকে ইশানী সবটা দেখে তারও খুব কষ্ট হয়। তার বেষ্টুটা যে কৌশিক ভাইকে খুব ভালোবাসে। কাকে বলে সবকিছু ঠিক করবে সে। হ‍্যা পেয়েছি পূর্ণা। পূর্ণার চোখে সে কৌশিক ভাইয়ের জন‍্য ভালোবাসা দেখেনি। যদিও সে শিউর না কৌশিক ভাই পূর্ণাকে ভালোবাসে। সম্পূর্ণ ঘটনা পূর্ণার কাছে জানতে হবে। ইশানী পূর্ণাকে খুজতে খুজতে ক‍‍্যান্টিনে চলে আসে। যেখানে পূর্ণা, কৌশিক, ঐশী,রাফি, মিতা, কায়েস। সবার হাতেই ফুচকার প্লেট। ওরা সবাই হাসাহাসি করছে আর আড্ডা দিচ্ছে। ইশানী গিয়ে ওদের পাশে দাড়ায়। তখন ঐশী ওকে খেয়াল করে বলে,

– ইশানী কিছু বলবে?

ইশানী একটু হেসে বলে,

– কৌশিক ভাই আমি কি একটু পূর্ণাকে নিয়ে যেতে পারি।

কৌশিক ভ্রু কুচকে বলে,

– কেন?

পূর্ণা কৌশিককে ধমক দিয়ে বলে,

– তুই কেন মাথা ঘামাচ্ছিস। আমার ক্লাসমেট যেহেতু আমায় ডাকছে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। তুই বস আমি আসছি। চলো।

কৌশিক পূর্ণার হাত ধরে বলে,

– পূর্ণা কোনো সমস্যা হলে আমায় বলিস।

পূর্ণা হেসে বলে,

– অবশ্যই।

পূর্ণা ইশানীর সাথে চলে আসলে। ইশানী পূর্ণাকে বলে,

– তুমি পূর্ণা।

– হ‍্যা। কিন্তু তোমার নাম কি?

– আমার নাম ইশানী। আচ্ছা তুমি কি করে জানলে আমি তোমার ক্লাসমেট।

– ওহ। তখন আমি তোমাকে আমার ক্লাসে দেখলাম তো তাই ভাবলাম।

– ওহ। তুমি তো জিঙ্গাসা করলে না আমি তোমার নাম জানলাম কি করে?

– তখন তো স‍্যারই আমার নাম বলে দিলো।

– ওহ হ‍্যা। আচ্ছা চলো ঐ বটতলায় আমরা বসি।

পূর্ণা আর ইশানী বট গাছের নিচে বসে পড়ে। ইশানী পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,

– পূর্ণা তখন তোমাকে আমার বন্ধু সাবা একটা প্রশ্ন করেছিল?

– তোমার বন্ধু সাবা কে?

– ঐ যে কৌশিক ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করলো।

– ওহ। ওর নাম সাবা।

– হ‍্যা ওহ কৌশিক ভাইয়ের ফুপাতো বোন।

– আর তুমি ওর বন্ধু।

– হ‍্যা। পূর্ণা আমি তোমাকে কিছু বলতে চায়। তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে কথাগুলো। এরপর যদি মনে হয় সত‍্যিটা বলার তাহলে বলবে অন‍্যথায় তোমার ইচ্ছে।

– বন্ধু ভেবে বলো।

– বন্ধু বললে বলে সাহস পেলাম। পূর্ণা তাহলে তোমাকে আমি তুই করে বলি। সুবিধা হবে আর কি?

– ঠিকাছে বলো।

– না না তুই আমাকে তুই করে বল। নাহলে আমার অসস্তি হবে।

– আচ্ছা বল।

ইশানী পূর্ণার হাত ধরে বলে,

– আমার বন্ধু সাবা। ছোট বেলা থেকে কৌশিক ভাইকে পছন্দ করে। কৌশিক ভাইও সাবার অনেক কেয়ার করে। আগলে রাখে। তার ছোট ছোট যত্ন সাবার মনের মধ‍্যে দোলা দিয়েছে। সেই দোলা এখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কৌশিক ভাই কখনো সাবাকে বলেনি সে সাবাকে ভালোবাসে। কিন্তু ওর ছোট হৃদয় তার আগলে রাখাগুলোকে ভালোবাসা ভেবে নিয়েছে। আজ সকালে কৌশিক ভাইয়ের খালাতো ভাই আহির ভাই এসেছিল কলেজে। এসে বলে গিয়েছে কৌশিক ভাই নাকি একটা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। যার সাথে কৌশিক ভাইয়ের অনেক সখ‍্যতা। যা কিনা সাবার মনের কষ্টের কারণ। সে খুব রেগে যায়। মনে অভিমান যানে। তার মধ‍্যে আজ নিজে থেকে দেখলো কৌশিক ভাইয়ের তোমার প্রতি এত টান। যা কিনা ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। ঐ দেখো( হাত দিয়ে দেখিয়ে ) আমার বন্ধুটা মাঠে বসে মুখ গুজে কান্না করছে। ওর মনে কৌশিক ভাইকে হারানোর ভয় জেগেছে। এইবার তুমি আমায় বলো তোমার সাথে কৌশিক ভাইয়ের সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছে।

ইশানীর কথা শুনে পূর্ণা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। যা দেখে ইশানী ভরকে যায়। এখানে হাসার কি হলো। পূর্ণা হাসি কিছুতেই থামছে না। সে কোনো রকমে হাসি আটকে বলে,

– তোমার বন্ধু খুব বোকা। বোন কখনো প্রেমিকা হতে পারে। সরি তুমি বলে ফেললাম।

– সমস্যা নেয় কথার মাঝে আমিও তোমাকে তুমি বলেছি। যাই হোক তুই আমার বন্ধুকে বোকা বললি কেন?

পূর্ণা উঠে দাড়ায়। বলে,

– চল সাবার কাছে যায়।

কথাটা বলে পূর্ণা সাবার কাছে আসে। সাবা এক ধ‍্যানে আকাশ দেখছে। পূর্ণা সাবার পাশে বসে বলে,

– সাবা।

কারো ডাকে সাবা তার পাশে তাকায়। পূর্ণাকে দেখে তার মাথাটা গরম হয়ে যায়। সে চিৎকার করে বলে,

– তুমি এখানে কি চাও?

পূর্ণা সাবার হাতটা ধরে বলে,

– কুল। আমি তোমায় কিছু বলতে এসেছি। আমার কথাগুলো আগে শুনো। পড়ে নাহয় রিয়েক্ট করবে।

সাবা কিছু বলে না। শুধু পূর্ণার কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। পূর্ণা মুচকি হাসে। সে বলতে শুরু করে,

– ইশানীর কাছ থেকে শুনলাম কৌশিককে ভালোবাস কথাটা সত‍্যি।

– তোমায় বলবো কেন?

– আমায় বলেই দেখো। শোন সাবা কৌশিক আর আমার সম্পর্কে তুমি যা শুনেছো তা ভুল নয়। তবে ওর আর আমার সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বে আটকে আছে। তাছাড়া আমি ওর বোন। ওহ আমায় বোনের নজরেই দেখে। যদি আমি কোনোদিন বুঝতে পারি এর থেকে বেশি কিছু ওহ আমার কাছে আশা করে। তাহলে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। সেদিন চৌধুরী বাড়িতে আমার শেষ দিন হবে। আমি চলে যাব কৌশিক ওহ তার পরিবার থেকে অনেক দূরে।

সাবা পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,

– সত‍্যি বলছো।

– সত‍্যি আমার কৌশিকের প্রতি কোনো অনুভূতি কাজ করে না। শোন সাবা আর একটা কথা বলি তোমায় যা আমি কখনো কৌশিককেও বলিনি। সাবা আমিও কাউকে ভালোবাসতাম সে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই আমি জানি ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু। তাই আমি বলছি স্বজ্ঞানে থাকতে আমি তোমায় কখনো কষ্ট দিবো না। তোমার ভালোবাসা তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিবো না।

সাবা এইবার আবেগে আপ্লুত হয়ে পূর্ণাকে জরিয়ে ধরে। কান্না করে বলে,

– আই এম সরি পূর্ণা। আমি তোমায় ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু তুমি অন‍্যরকম। একদম আলাদা সবার থেকে। বন্ধু হবে আমার।

পূর্ণা হেসে বলে,

– অবশ্যই।

দুপুর অবধি ক্লাস করে ক্লান্ত শরীরের পূর্ণা বাড়ি ফিরে। পূর্ণাকে দেখে বনুলতা এগিয়ে আসে। তারপর আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিয়ে বলে,

– প্রথম দিন কেমন ছিলো মা।

পূর্ণা হেসে সোফায় বসে বলে,

– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ছিলো। জানো মামনি। আমার স্কুলে সাবার সাথে পরিচয় হয়েছে।

– তাই হবেই তো সাবা তো তোর সাথেই পড়ে। কৌশিকের সাথে দেখা হয়েছে।

– হ‍্যা হয়েছে। আমি প্রথমে কৌশিকের সাথে পড়ে সাবার সাথে ছিলাম। সাবা এখন থেকে আমার বন্ধু।

– যাক ভালো। তুই বস আমি তোর জন‍্য লেবুর শরবত নিয়ে আসি। গরমে একদম ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিস।

বনুলতা শরবত নিয়ে আসলে। পূর্ণা শরবত শেষ করে। তারপর বনুলতা বলে,

– স্কুল বাসে এসেছিস তো।

– হ‍্যা স্কুল বাসেই এসেছি।

– আচ্ছা যা ফ্রেশ হো গিয়ে। আমি খাবার দিচ্ছি।

– আচ্ছা মামনি।

পূর্ণা ধুপধাপ পা ফেলে উপরে চলে যায়। বনুলতা হেসে দিয়ে বলে,

– পাগলি মেয়ে।

পূর্ণার আজ অনেক শান্তি লাগছে। কত সুন্দর জীবন তার। থাক না কিছু ব‍্যথা সেগুলো নাহয় সে নাই আর খুচালো। এত সুন্দর পরিবার যেখানে সে পেয়েছে সেইখানে ঐসব কথা বাদ দেওয়াই ভালো। পূর্ণা ছাদে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো। পূর্ণা দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে আছরের নামাজ পড়ে আচারের বোয়াম নিয়ে ছাদে এসেছে। এখন সে আচার খাচ্ছে আর টোকে চোখ মুখ কুচকে ফেলছে। তার চোখ কুচকানোর ভাব দেখলে যেই কেউ তার প্রেমে পড়ে যাবে। হঠাৎ ছাদে প্রবেশ করে রাফাত। ছাদে সে এসেছে তার ফুলগাছের যত্ন নিতে। কিন্তু এসে দেখে পূর্ণা গোলাপ গাছের দুটো ফুল ছিড়ে তার লম্বা চুলে গাথার চেষ্টা করছে। যা দেখে রাফাতে মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। সে গম্ভীর কন্ঠে পূর্ণাকে বলে,

– ফুল গাছেই সুন্দর মাথায় নয়।

কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে পূর্ণা পেছনে তাকায় দেখে রাফাত। রাফাতকে দেখে তার ভয় হয়। তবুও সাহস নিয়ে বলে,

– ভুল ফুল গাছেই সুন্দর হাতে নয় এইটা হবে। বলতে জানেন না বলেন কেন?

রাফাতের এইবার আরও রেগে যায়। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে। সে হাতে থাকা কাঁচিটা ছুড়ে মারে পূর্ণার দিকে। পূর্ণা ভয়ে চোখ মুখ খিচে ফেলে। কিন্তু কাঁচিটা পূর্ণার লাগে নি। পূর্ণার বাপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে। যা দেখে পূর্ণার সস্তির নিঃশ্বাস নেয়। রাফাত চিল্লিয়ে বলে,

– কি ভাবছো। টার্গেট মিস করছি একদম না। ইচ্ছে করে সাইট কাটিয়েছি। শুনো পূর্ণাবতি আমার কাজেকর্মে ইন্টারফেয়ার করবে না। নাহলে কিন্তু খুব বাজে হবে।

পূর্ণা একটু এগিয়ে এসে বলে,

– আমার নাম পূর্ণা পূর্ণাবতি না। আর আমি আপনার কাজে হস্তক্ষেপ করি নি।

রাফাত রেগে গিয়ে পূর্ণার দিকে দুকদম এগিয়ে গেলে পূর্ণা দুকদম পিছিয়ে যায়। রাফাত ধমকে বলে,

– বাচাল মেয়ে। একদম বেশি কথা বলবে না। তুমি আমার কাজে হস্তক্ষেপ করোনি তো কি করছো। এইখানে কেন আসছো। এই ছাদ আমার আন্ডারে থাকে। তুমি ছাদে কি করো। আর আমার গাছের ফুল তোমার হাতে কেন?

পূর্ণা তুতলিয়ে বলে,

– কো কো কই। আর আমি কি জা জানতাম নাকি এই গাছ আপনার। জানলে কখনো ফুল নিতাম না। রাক্ষস একটা।

রাফাত পূর্ণার বাহু চেপে বলে,

– কি বললে তুমি আমি রাক্ষস। তোমাকে আমি।

কথাটা বলে রাফাত পূর্ণাকে ছাদে থেকে ধাক্কা দেয়। পূর্ণা ছাদ থেকে পড়ে যেতে নিলে রাফাত আবার ধরে ফেলে। পূর্ণার সারা শরীর নিচে ঝুলে আছে। আর রাফাত তার হাত ধরে আছে। পূর্ণা ভয়ে চোখ বুজে আছে। মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাহ পড়ছে। রাফাত একটু ভাব নিয়ে বলে,

– আর রাফাত চৌধুরীকে রাগাবা।

পূর্ণা দ্রুত বলে,

– কখনোই না।

– এখান থেকে ফেলে দেয়।

– এই না আমি মরে যাব। প্লিজ আমাকে উঠান।আমাকে মারবেন না। আমায় মারলে আপনি জেলে যাবেন। তখন আপনার বউ আপনাকে বিয়ে করতে না পেরে খুজবে। আপনার অনাগত সন্তান আমায় অভিশাপ দিবে। দোয়া করে এমন অনর্থ করবেন না।

রাফাতের এইবার হাসি পাচ্ছে। এমন সিরিয়াস মোমেন্টে কেউ এইসব বলে। মেয়েটা সত‍্যিই পাগল। রাফাত বলে,

– ঠিকাছে বাঁচাতে পারি। তবে বলো আমার সাথে আর কখনো লাগতে আসবে।

– প্রশ্নই উঠে না।

– তাহলে সরি বলো।

– সরি সরি সরি হাজার বার সরি।

রাফাত পূর্ণাকে উঠিয়ে আনে। পূর্ণা ছাদের রেলিং ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আর একটু হলে তার দম বন্ধ হয়ে যেতো। আর রাফাত সে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণার ভয় পাওয়া মুখটা দেখছে। এই মুখে জাদু আছে। রাফাতের কি যেনো হয়। সে মোহের মধ‍্যে আটকে যায়। সে পূর্ণার দিকে এগিয়ে যায়। পূর্ণায তখনও এইদিকে খেয়াল নেয়। রাফাত গিয়ে পূর্ণাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। পূর্ণা ভয় পেয়ে বলে,

– বললাম তো আর করবো না এইবার যেতে দিন।

কিন্তু পূর্ণার কথাগুলো যেনো তার কান অবধি এলো না। সে এক ধ‍্যানে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফাতের এই দৃষ্টি পূর্ণার ভালো লাগছে না। সে রাফাতকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। রাফাত ধীরে ধীরে পূর্ণার ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পূর্ণা ভয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের মধ‍্যে দুরত্ব খুব কম। দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস উঠানামা করছে। রাফাতের নিঃশ্বার পূর্ণার মুখে বাড়ি খাচ্ছে। রাফাত পূর্ণার খুব কাছে। হঠাৎ মাগরিবের আযানের ধ্বনি বেজে উঠে চারদিকে। রাফাতের হুশ আসে। সে পূর্ণার থেকে ছিটকে দূরে সরে আসে। জোরে জোরে শ্বাস নেয়। পূর্ণাও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রাফাত পূর্ণার দিকে একবার তাকিয়ে ছাদ থেকে নিচে চলে যায়। আর পূর্ণা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়। শেষ মুহুর্তে আল্লাহ্ বাচিয়ে দিয়েছে। পূর্ণা এতটুকু বুঝেছে রাফাত সেচ্ছায় কিছু করেনি। যা ছিলো শুধুই খনিকের মোহ আর কিছু না।

#চলবে

বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন‍্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে