#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৪
কাক ভোর। সূর্যমামা উঠতে দেড়ি করলেও পাখিরা উঠতে দেড়ি করিনি। তারা সকাল সকাল তাদের ডাকের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে ভোর হয়েছে। পাখির ডাকে পূর্ণার ঘুম ভাঙে। পূর্ণা পিটপিট করে আশেপাশে তাকায়। আশেপাশে তাকিয়ে সে ধরভরিয়ে বিছানা থেকে উঠে। মনে মনে বলে,
– একি এইটা আমি কোথায়?
পরক্ষণেই সোফায় তাকিয়ে দেখে রাফাত ঘুমিয়ে আছে। পূর্ণা নিজের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে বুকে দুহাত জরিয়ে ধরে। তার ওরনা কোথায়। কারো চিল্লানোর আওয়াজ শুনে। রাফাত দ্রুত উঠে বসে। সামনে তাকিয়ে দেখে পূর্ণা বুকে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। রাফাত ধমক দিয়ে বলে,
– এই মেয়ে সমস্যা কি? সকাল সকাল এই ভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?
পূর্ণা মিনমিন করে বলে,
– আমি এইখানে কি করছি।
রাফাত সোজাসাপ্টা উত্তর দেয়,
– আমি নিয়ে এসেছি।
রাফাত নিয়ে এসেছে শুনে পূর্ণা এইবার কেঁদে দেয়। সে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
– আমার সাথে কি কি হয়েছে।
রাফাত এইবার ভ্রু কুচকে পূর্ণার দিকে তাকায়। তারপর একটু মজা করে বলে,
– যা যা হওয়ার কথা ছিলো তাই তাই হয়েছে। নিজেকে দেখে বুঝো নি।
পূর্ণা এইবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আল্লাহ গো আমার সব শেষ। এই নিরহ মানুষটার সব কেড়ে নিলো গো আল্লাহ্। এর বিচার তুমি করো। শালা লুচো আমার সাথেই এমনটা করতে হলো। এই বজ্জাত লোকের তুমি শাস্তি দাও আল্লাহ্। ভ্যা ভ্যা।
রাফাতের এইবার মেজাজ বিগড়ে যায়। সে পূর্ণার কাছে এসে ধমক দিয়ে বলে,
– সাট আপ। একদম চুপ।
পূর্ণা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এরপর এক চোখ খুলে রাফাতের দিকে তাকায়।রাফাত এখনো অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। যা দেখে পূর্ণার গলা শুকিয়ে যায়। তবে সে দমে যায় না। সে আবারো চিল্লানো শুরু করে,
– এইটা কোন ভদ্রতা। একটা মেয়ের ইজ্জত লুফে নিয়ে এখন আবার তাকে ধমকানো হচ্ছে। আপনি আপনি একটা রাক্ষস।
রাফাত বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে বলে,
– হোয়াট। এই মেয়ে তুমি কি এতটাই বাচ্চা যে কিছু বুঝো না। আমি তোমার সাথে কিছু করিনি। করলে তুমি সেটা নিজেই বুঝতে পারতে। আর বাকি রইলো তুমি এখানে কি করে। কাল রাতে তুমি সিড়ির কাছে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলে। তোমাকে ডাকতে গিয়ে দেখি গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আরা আমি তো জানি না তুমি কোন ঘরে থাক। তাই আমার ঘরে নিয়ে এসে জ্বরের ওষুধ খায়িয়ে শুয়িয়ে দিয়েছে গট ইট। নাও লিভ।
পূর্ণা কিছু বুঝতে না পেরে বলে,
– এ্যা।
রাফাতের এইবার আরও রাগ হয়। তাই সে রেগে গিয়ে পূর্ণার বাহু চেপে ধরে বলে,
– হোয়াট এ্যা। আই সে লিভ ডেমেট।
পূর্ণা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। কিছু বলছে না। রাফাত ওর হাত ধরে টেনে খাটে থেকে নামায়। তারপর ছুড়ে মেরে ঘর থেকে বেড় করে দেয়। পূর্ণা অবাক নয়নে রাফাতকে দেখে। শেষে যেই কয়টা শক্ত কথাতে শোনাতে উদ্দত হবে। অমনি রাফাত মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। পূর্ণা অনেক কষ্টে উঠে দাড়ায়। সে কোনোকিছু না দেখে হাঁটতে থাকে। তাই সে খেয়াল করেনি সে কি নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে না অন্য কোথায়। পূর্ণার ঘর রাফাতের ঘরের ডান দিকে। কিন্তু পূর্ণা সোজা হাঁটছে। হঠাৎ পূর্ণাকে কেউ দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। পূর্ণা হকচকিয়ে যায়। সে দ্রুত সামনের মানুষটিকে দেখে নেয়। সামনের মানুষ টিকে দেখে পূর্ণার যেনো শ্বাস আটকে যায়। আবার সে। এখানে কি করছে। এত সকালে।পূর্ণা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ছেলেটি এখনো তাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে রেখেছে। পূর্ণার ব্যথায় এইবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সাথে মনের দহনও শুরু হয়েছে। হঠাৎ ছেলেটি পূর্ণার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে,
– পূর্ণা এখানে তুমি কি করো?
পূর্ণা ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় চিৎকার দিয়ে বলে,
– ডোন্ড টাচ আহির ডোন্ড টাচ। একদম আমাকে ছুবে না। তুমি আমাকে ছোয়ার অধিকার হারিয়েছো। তাই দূরে থাক।
আকস্মিক থাক্কার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আহির। তাই সে দুকদম পিছিয়ে যায়। তারপর পূর্ণার কথাগুলো শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আই এম সরি পূর্ণা। সেদিনের করা আমার কাজের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। বিশ্বাস করো আমি তোমায় হার্ট করতে চায়নি।
পূর্ণা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
– আহির তুমি আমায় যেই অবস্থায় রেখে এসেছিলে। সেইখান থেকে আজ আমি আর তোমার নেয় অন্য কারো। তাই আমাকে ছোয়ার অধিকার তুমি দেখাবে না।
আহির পূর্ণার কাছে এসে বলে,
– পূর্ণা আমি তোমায় অনেক খুজেছি বিশ্বাস করো।
– বিশ্বাস করি না।
আহির পূর্ণার আরও কাছে এসে ওর গালে হাত রেখে বলে,
– আই লাভ ইউ পূর্ণা।
এই কথা আহির পূর্ণার ওষ্ঠযুগলের দিকে এগিয়ে গেলে। পূর্ণা আহিরের গালে কষিয়ে থাপ্পর মারে। তারপর চেচিয়ে বলে,
– দ্বিতীয় বারের মতো প্রমাণ করে দিলে তুমি আমায় নয় আমার দেহকে ভালোবাস।
আহির রাগী দৃষ্টিতে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো সে চোখ দিয়ে পূর্ণাকে গিলে খাবে। তবে পূর্ণার মধ্যে কোনো ভয় নেয়। সে আহিরকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে। আহির পূর্ণার হাত পিঠের সাথে উল্টো করে চেপে ধরে। পূর্ণা ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠে,
– আহ।
আহির রাগে ফুসফুসতে বলে,
– তোর এত দেমাগ তাই না। সব যদি আমি গুড়িয়ে না দিয়েছে তাহলে আমিও আহির নয়। তুই ঠিক ভেবেছিস আমি তোকে নয় তোর দেহটাকেই ভালোবাসি। তোর দেহে মুখ ডুবাতে চায়। কিন্তু তুই সবসময় এইসব এড়িয়ে যাস। অনেক হয়েছে ভালোবাসার নাটক। এইবার যা হবে জোরজবরদস্তিই হবে।
এই কথা আহির পূর্ণাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– কি হচ্ছে কি এখানে?
আহির পেছনে তাকিয়ে দেখে রাফাত। রাফাতকে দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
– রাফাত ভাই নাথিং। কিছু তো হচ্ছে না। আসলে এই মেয়েটি পড়ে গিয়েছো তো তাই আমি সাহায্য করছিলাম।
রাফাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পূর্ণাকে দেখে। পূর্ণা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। চোখে পানি। শরীর মৃদ কাপছে। বার বার বাম হাতটা ডান হাতের তালু দিয়ে ডলছে। মনে হচ্ছে সেখানে খুব ব্যথা পেয়েছে। রাফাত আহিরের দিকে দুকদম এগিয়ে এসে বলে,
– তুই কালকে এই বাসায় ছিলি।
– হ্যা রাফাত ভাই। রাতে তো রিয়ান এসেছে। তাই আমি আর যায়নি। কিন্তু রাফাত ভাই এই মেয়ে কে?
– ওহ কৌশিকের বন্ধু। এই বাসায় থাকে।
– কিন্তু রাফাত ভাই অপরিচিত কাউকে বাসায় জায়গা দেওয়া টা কি ঠিক হবে।
– মম চাই তাই থাকবে। উচিৎ অনুচিক পড়ে দেখা যাবে।
আহির একটু সাহস করে বলে,
– তুমি এইসব বলছো ভাই।
রাফাত রাগী দৃষ্টিতে তাকায় আহিরের দিকে। তারপর বলে,
– তুই রিয়ানের ঘরে যা।
– কিন্তু ভাই।
রাফাত আরও রেগে যায়। কিন্তু গলায় শান্ত ভাব
– ঘরে যা বলছি।
– ওকে ভাই।
আহির রিয়ানের ঘরে চলে যায়। রিয়ান রাফাতের আরেক ভাই। বনুলতার মেজো ছেলে। এতদিন সে ব্যবসায়ের একটা কাজে সিলেট ছিলো। গতকাল বাসায় ফিরেছে। আর আহির রিয়ানের বন্ধু খুব কাছের বন্ধু। আবার আহির বনুলতার বোনের ছেলে। তাই মাঝে মধ্যে এই বাড়িতে আসে। তবে রিয়ান থাকলে বেশি আসে। আহির চলে গেলে রাফাত পূর্ণার দিকে তাকায়। পূর্ণা এখনো ফ্লোরে বসে আছে। রাফাত বলে,
– তখন না রুমে যেতে বললাম।
পূর্ণা কিছু বলে না। সে উঠে দাড়ায়। তারপর চোখের পানি মুঝে বলে,
– কখনো চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না। যেমন আপনার বলা সত্ত্বেও আমি ঘর অবধি যেতে পারিনি।
কথাটা বলে পূর্ণা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায়। আর রাফাত সে পূর্ণার যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে। পূর্ণার কথায় যেনো কিছু একটা ছিলো। যা রাফাতকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। এখানে যে খুব ভালো কিছু হচ্ছিলো না সেটা রাফাত বুঝতে পেরেছে।কারণ রাফাত দেখেছে আহির পূর্ণাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু কেন? এই বাড়ির সবাই আহিরকে ভালো চোখে দেখলেও রাফাত জানে আহির খুব একটা ভালো মানুষ না। তাই সে বেপাড়টা নিয়ে চিন্তিত। এই বাড়িতে এতদিন মেয়ে মানুষ ছিলো না। কিন্তু এখন আছে। আর আহিরের নজর ভালো না। তাই পূর্ণাকে সেভ জনে রাখার জন্য হলেও আহিরের এই বাসায় আশাটা কমাতে হবে। কোনো নারী এই বাড়ি থেকে অপমানিত হয়ে যেতে পারে না। কথাগুলো ভেবে রাফাত নিজের ঘরে চলে যায়। পূর্ণা ঘরে এসে মেঝেতে বসে পড়ে। তার কানে বারবার একটা কথায় বাজতে থাকে। অনেক হয়েছে ভালোবাসার নাটক এখন যা হবে জোরজবরদস্তিই হবে। আহির কেন এমনটা করলো। সে তো আহিরকে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছিল। এখন পূর্ণা বুঝতে পেরেছে। কিশোরী বয়সে সে জীবনের সবথেকে বড় ভুলটাই করে ফেলেছে। একজন ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু এই ভালোবাসা যে তার জীবনে কাল হবে সেটা কে জানতো। পূর্ণা মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। সে হেচকি তুলে কাঁদছে। এতটুকু বুঝতে পেরেছে এই বাড়িতে সে সেভ নয়। এই বাড়ির মানুষ আহিরকে খুব ভালো করে জানে। চলে যেতে হবে খুব দূরে কোথাও চলে যেতে হবে। আর এখানে থাকা যাবে না। পূর্ণা উঠে দাড়ায়। চোখের পানি মুঝে একটা নোটপ্যাড আর কলম নিয়ে বসে। তারপর সেখানে কিছু লেখার জন্য উদ্দত হতেই কেউ তার দরজায় নক করে। পূর্ণা ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে আহির এসেছে। তাই সে মনে মনে পন করে দরজা খুলবে না। কিন্তু পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে সস্তি পায়। কৌশিক এসেছে। তাই সে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। কৌশিক এসে বলে,
– কিরে পূর্ণা ঘুম কেমন হলো। সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো তো। রাতে কোনো সমস্যা হয়নি তো।
কথাগুলো বলতে বলতে কৌশিক ভেতরে ঢুকে। পূর্ণা সোফায় বসে হাতে কুশন নিয়ে বলে,
– নারে দোস্ত। আই এম ফাইন।
– বাড়ি কেমন লাগছে তোর।
– খুব ভালো।
কথাটা বলতে গিয়ে পূর্ণার গলা ধরে আসে। হঠাৎ কৌশিক টেবিলের উপর নোটপ্যাড দেখে বলে,
– পূর্ণা সকাল সকাল কি লিখছিলি তুই দেখি।
কৌশিক দেখতে চাইলে পূর্ণা নোটপ্যাড টা সরিয়ে ফেলে। যা কৌশিকের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। তাই সে বলে,
– এনি প্রবলেম পূর্ণা। কাল পার্টিতে কি কিছু হয়েছে। যার জন্য তুই পার্টি ছেড়ে রুমে চলে এসেছিস।
– আরে না সব ঠিক ছিলো। আমার তো ঘুম পাচ্ছিলো তাই চলে এসেছি।
– সত্যি।
– আরে বাবা হ্যা সত্যি।
কৌশিক পূর্ণার কাছে বসে বলে,
– জানিস পূর্ণা আমার আম্মুর খুব শখ ছিলো তার ঘরে ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান আসবে। যাকে সে খুব আদর করবে সাজিয়ে দিবো বেড়াতে নিয়ে যাবে। নিজ হাতে চুল বেধে দিবে। কিন্তু রাফাত ভাই তারপর রিয়ান ভাই হওয়ার পর আমার মার খুব মন খারাপ হয়। পরপর দুটি ছেলে সন্তান মেয়ে সন্তানের দেখা নেয়। তাই সে মন খারাপ করে বসে থাকত। পড়ে আবার আমি হয়। তখন আম্মুর মন আরও খারাপ হয়ে যায়। আম্মু নাকি আমার মুখটা পযর্ন্ত দেখিনি। কিন্তু যখন আব্বু আম্মুকে বোঝালো। আল্লাহর উপর ভরশা রাখতে বলল। তখন আম্মু একটু বুঝ নিলো। তারপর নাকি আমি অনেক দুষ্টুমি করতাম। তাই আম্মু আমার উপরে আর রাগ করে থাকতে পারিনি। খুব খুব ভালোবাসতো আমায়। তারপর রাফাত ভাই সেও আমায় খুব ভালোবাসে। আমার রিয়ান ভাইও খুব ভালো। জানিস পূর্ণা কাল রাতে আমার আম্মু তার ঘরে আমাকে নিয়ে গিয়েছে। তার কোলে শুয়িয়ে অনেক আদর করেছে। অনেক চুমু খেয়েছে আমার কপালে গালে। আম্মু আমায় কাল অনেক আদর করেছে পূর্ণা। যেটা আম্মু আগে কখনো করেনি। কেন জানিস কারণ তুই। আমি নাকি তাকে মেয়ে এনে দিয়েছি। আমার কাছে সে কৃতজ্ঞ। সে এই মেয়ে পেয়ে চিরসুখী। আসলে কি জানিস পূর্ণা। সবাই জানে আমার মা আমায় খুব ভালোবাসে। কিন্তু আম্মু কখনোই আমাকে মন থেকে ভালোবাসতে পারিনি। জোর করে ভালোবাসার চেষ্টা করেছে। আমি বুঝেছি। কিন্তু কাল আম্মু আমায় মন থেকে আদর করেছে। খুব ভালোবেসেছে। বুকের মধ্যে আগলে রেখেছে। তাই বলছি পূর্ণা আমার আম্মুকে ছেড়ে তুই চলে যাসনে। আমার আম্মু খুব ভালো। সে তোকে খুব ভালোবাসবে। প্লিজ পূর্ণা প্লিজ।
শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে কৌশিক কেঁদে দেয়। এই প্রথম পূর্ণা কোনো ছেলেকে এইভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে দেখলো। সে ভেবেছিল চলে যাবে। কিন্তু কৌশিকের এই কান্না তাকে আটকে দিলো। সে কৌশিকের হাতে হাত রেখে বলে,
– আমি তোদের ছেড়ে কোথাও যাব না কৌশিক। তুই তো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর বেষ্ট ফ্রেন্ডকে রেখে কি দূরে দূরে থাকা যায়।
কৌশিক নিজের আরেক হাত পূর্ণার হাতের উপর রেখে বলে,
– থ্যাঙ্কস দোস্ত।
ডাইনিং টেবিলে বাড়ির সবাই একসাথে বসে সকালের খাবার খাচ্ছে। বনুলতা চৌধুরী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। এমন সময় পূর্ণা সেখানে আসে। পূর্ণাকে দেখে বনুলতা এগিয়ে যায়। কপালে চুমু দিয়ে বলে,
– ঘুম কেমন হলো মা।
পূর্ণা মুচকি হেসে বলে,
– খুব ভালো মামনি।
বনুলতা পূর্ণাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দেয়। ডাইনিং টেবিলে কৌশিক, রশীদ চৌধুরী, রাফাত, রিয়ান আর আহির ছিলো। সবার উদ্দেশ্য বনুলতা বলে,
– সবাই শুনো এইটা আমার মেয়ে পূর্ণা। আর পূর্ণা এইসব আমার ছেলে। কৌশিকে তো তুই চিনিস। আর রাফাতের সাথেও তোর অলরেডি পরিচয় হয়ে গিয়েছে। এখন আমি তোকে আমার মেজো ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই যে রিয়ান রিয়ান হচ্ছে আমার মেজো ছেলে। ওহ ডাক্তারি পড়ছে।
পূর্ণা ভেবেছিল আহিরের নাম বলবে কিন্তু না আহির না রিয়ান বনুলতার মেজো ছেলে। পূর্ণা সস্তির নিঃশ্বাস নেয়। তার মানে আহির এই বাসায় সব সময় থাকবে না। বনুলতা আবার বলে,
– পূর্ণা। এইটা আহির আমার বোনের ছেলে আমার ও ছেলে বলতে পারিস। খুব ভালো ছেলে। ওহ আবার রিয়ানের ভালো বন্ধু। আহিরও ডাক্তারি পড়ছে।
পূর্ণা শুধু এতটুকু বলে,
– ওহ আচ্ছা।
আর আহির সে হাত এগিয়ে দেয় পূর্ণার কাছে,
– হাই মিস পূর্ণা।
পূর্ণা শুধু মুখে হ্যালো বলে। যেটা আহিরের খুব খারাপ লাগে। সবাইও পূর্ণার এই ব্যবহার ভালো ভাবে নেয়নি। বনুলতা বলে,
– পূর্ণা আহির খুব ভালো। ওর সাথে তো তুই হাতটা মেলাতেই পারতি।
রাফাত খাবার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,
– মম আহির তোমাদের কাছে ভালো ছেলে পূর্ণার কাছে তো নাও হতে পারে। পূর্ণা তো আহিরকে আজই দেখলো তাই না। হয়তো পূর্ণা এইসবে অভস্ত নয়।
কথাটা বলে রাফাত বড় বড় পা ফেলে সেই স্থান ত্যাগ করে। আর পূর্ণা সে রাফাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
– যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটাএ খারাপ না।
বনুলতা পূর্ণার প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়। পূর্ণা বনুলতার দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুমি খাবে না মামনি।
বনুলতা হেসে বলে,
– তুই বলেছিস তাতেই আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন তুই খা।
কৌশিক হেসে বলে,
– আম্মু এতদিনে তোমার খেয়াল রাখার মতো কেউ এলো বলো।
বনুলতা রেগে বলে,
– মায়ের সাথে মজা না দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
কৌশিক রিয়ানের পেছনে লুকিয়ে বলে,
– ভাইয়া বাচা।
রিয়ান ওর মায়ের হাতের লাঠিটা ধরে বলে,
– কি আম্মু তুমি তো জান ঐ একটু ছেলেমানুষ ছেড়ে দাও না।
– এই হচ্ছে এক জ্বালা তুই আর রাফাত মিলে আমাকে তো ওকে শাষনই করতে দিস না।
– কি করবো বলো একটা মাত্র ছোট ভাই আমার।
কথাটি বলে রিয়ান কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি যায়। আম্মুকে আর রাগাবি না।
– ওকে ভাইয়া।
রিয়ান আহিরকে নিয়ে চলে যায়। বনুলতা কৌশিককে বলে,
– আজ যে কলেজ খুলা মনে আছে তো।
– জ্বি আম্মু।
– তাহলে যান। ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে কলেজে যান।
– যো হুকুম মাদার ইন্ডিয়া।
– তবে রে।
কৌশিক আর এক মুহুর্তও দাড়ায় না। সে দৌড়ে সেখান থেকে পালায়। আর পূর্ণা খিলখিল করে হাসতে থাকে। বনুলতা পূর্ণার হাসির দিকে তাকিয়ে বলে,
– কারো নজর না লাগে।
পূর্ণা বনুলতার এমন চাহনি দেখে লজ্জা পায়। বনুলতা হেসে পূর্ণার গাল টেনে বলে,
– ওরে আমার লজ্জাবতী।
পূর্ণাও এইবার বনুলতাকে বলে,
– মামনি আমি তোমাকে খায়িয়ে দেয়।
বনুলতার চোখে পানি ছলছল করছে। মা মরার পর এই প্রথম তাকে কেউ খায়িয়ে দিতে চাইলো। এই নাহলে মেয়ে। যে কিনা মা হয়ে পাশে থাকে। বনুলতা পূর্ণার পাশের চেয়ারে বসে হা করে। পূর্ণা একটু রুটি ছিড়ে বনুলতাকে খায়িয়ে দেয়। রশীর চৌধুরী এই মুহূর্তে একটা ছবি টুপ করে তুলে ফেলে। পূর্ণা আর বনুলতা দুজনেই রশীর চৌধুরীর দিকে তাকায়। রশীর চৌধুরী উঠে এসে পূর্ণার মাথায় হাত রেখে বলে,
– এই একটা জিনিসেরই কমতি ছিলো এই বাড়িতে এখন তা পূরণ হলো। কখনো এই বুড়ো বাবা মাকে ছেড়ে যাসনা মা।
পূর্ণাও এইবার কাঁদছে। এত আদর যত্ন তার ভাগ্যে আছে সে কখনো ভাবেনি। সে রশীদ চৌধুরীকে জরিয়ে ধরে বলে,
– কখনো যাব না বাবা।
পূর্ণা জিহ্বা কেটে বলে,
– এই যা বাবা বলে ফেললাম।মাফ করবেন আমায়।
রশীর চৌধুরী বলে,
– বেশ করেছিস বাবা বলেছিস। এখন থেকে শুধু বাবা বলবি বুঝলি। লতা আমার মেয়েকে রেডি করে দাও। ওকে তো স্কুলে ভর্তি করাতে হবে।
বনুলতা চোখের পানি মুঝে বলে,
– ঠিক বলেছো। এই পূর্ণা তুই কতদূর পড়েছিস।
পূর্ণা মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে,
– মামনি অষ্টম শ্রেণি পাড় করার পর আর পড়া হয়নি।
– পড়ালেখা ছেড়েছিস কতদিন।
– একবছর।
– আচ্ছা তোকে যদি একদম দশম শ্রেনিতে ভর্তি করে দেয়। তুই পারবি কাভার করতে।
– ইনশাআল্লাহ।
– ঠিকাছে তাহলে তুই ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে আয়। তোর বাবা তোকে স্কুলে নিয়ে যাবে। শুনছো রাফাতের আব্বু ওরে কিন্তু আমার ছেলেরা যেই স্কুলে পড়ছে সেই স্কুলে ভর্তি করাবে। ঐ স্কুল অনেক ভালো।
– আচ্ছা ম্যাডাম। আপনি যা বলবেন।
– কি সব বলছো মেয়েটার সামনে। লজ্জা শরম সব বিসর্জন দিলা নাকি।
পূর্ণা ওনাদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে উপরে চলে যায়। এদের লাগতেও সময় লাগে না আবার ভাব হতেও সময় লাগে না।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।