#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৩
একি রাফাত ওকে এইভাবে ধরে দাড়িয়ে আছিস কেন? মেয়েটি ব্যথা পাচ্ছে তো।
রাফাত বনুলতার কন্ঠস্বর পেয়ে মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
– মম হোয়াট এজ দিস। এইসফ কি মম। বাড়িতে এইসব মানুষ কি করে ঢুকে। হাউ।
শেষের কথাটা রাফাত জোরে চিল্লিয়ে বলে। জোরে মিউজিক বাজার কারণে রাফাতের চিল্লানোর আওয়াজ টা ড্রয়িং রুম অবধি পৌছালো না। কিন্তু রাফাতের চিৎকারের পূর্ণাসহ বনুলতা কৌশিক কেঁপে উঠে। কৌশিক দৌড়ে গিয়ে পূর্ণাকে দাড় করায়। যেটা দেখে রাফাতের মেজাজ আরও বিগড়ে যায়। সে কৌশিককে ধমক দিয়ে বলে,
– এইসব ময়লা আবর্জনা থেকে দূরে থাকবি। রাস্তার কীট একটা।
এইবার পূর্ণা কেঁদে দেয়। এত অপমান তার আর সহ্য হচ্ছে না। রাফাতের মুখে মম ডাক শুনে সে বুঝে গিয়েছে রাফাত এই বাড়ির ছেলে। যাকে কিনা সে অপমান করছে। আর রাফাত চৌধুরী নিশ্চয় তাকে ছেড়ে দিবে না। বনুলতা রাফাতের পাশে গিয়ে দাড়ায় তারপর বলে,
– রাফাত শান্ত হও। রাগারাগি করো না। বাড়ি ভর্তি গেষ্ট তুমি ভুলে যাচ্ছো।
– নো মম। আমি কিচ্ছু ভুলিনি। আই নিড এ্যানসার। বলো মম। হু আর ইউ। এই মেয়ে কে? কি করে এই বাড়িতে। আর আমি তো ভেবে পায় না রাফাত চৌধুরী বাসায় এসে সে কিনা রাফাত চৌধুরীকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
কৌশিকের এইবার দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকতে ইচ্ছে করছে। এই মেয়ে এইটা কি করছে। দাভাইকে রাগিয়ে দিছে। এখন সামাল দেয় কি করে। বনুলতা পূর্ণার দিকে একটু তাকিয়ে তারপর রাফাতকে বলে,
– নিশ্চয় তুই কোনো অন্যায় করেছিস তাই বেড় করে দিতে চেয়েছে। তাছাড়া ওহ তো জানে না তুই এই বাড়ির মালিক তাই না।
– মম স্টোপ। বন্ধ করো তোমার বকবাজ। আমাকে আর রাগিও না। নাহলে এই মুহূর্তে এই মেয়েকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এই বাসা থেকে বেড় করে দিব।
কৌশিক দৌড়ে আসে রাফাতের কাছে। তারপর রাফাতের হাত ধরে অনুনয় করে বলে,
– প্লিজ দাভাই এমনটা করিস না। ওহ আমার বন্ধু। ওর কেউ নেয় এই পৃথিবীতে তাই আমি এই বাসায় নিয়ে এসেছি। প্লিজ দাভাই ওকে বেড় করে দিস না। আজ তো আমার জন্মদিন। আমার জন্মদিনে এত বড় কষ্ট টা আমায় দিস না প্লিজ। আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে ওকে এইখানে থাকতে দে।
রাফাত ছোট ভাইয়ের কথা ফেলতে পারে না। তাই বলে,
– ওকে থাকবে সে। বাট ফারদার যদি আমার সামনে এসে কোনো খারাপ আচরণ করছে তো আমার থেকে বাজে কেউ হবে না। ওকে কিন্তু তখন কেউ আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না গট ইট। কথাটা তোর ঐ পিচ্চি বন্ধুর মাথায় ঢুকিয়ে দিস।
কথাটা বলে রাফাত সিড়ি বেয়ে নিচে চলে যায়। এইদিকে পূর্ণা এখনো কাঁদছে। পূর্ণার কান্না দেখে বনুলতার খুব কষ্ট হয় সে পূর্ণার কাছে গিয়ে তার চোখের পানি মুঝে দিয়ে বলে,
– কিছু মনে করিস না মা। আমার বড় ছেলেটা এমনই কারো কথা শুনে না। যাকে তাকে কথা শুনিয়ে দেয়। আসলে ওর মাথাটা একটু গরম তো তাই। তবে ওর মনটা অনেক ভালো। এই বাসায় এসেছিস নিশ্চয় আমার ছেলেকে তুই বুঝবি। এখন কান্না থামা দেখি।
পূর্ণা আচমকা বনুলতাকে জরিয়ে ধরে বলে,
– আমি এসে কি তোমাদের বিপদে ফেলে দিলাম মামনি। যদি তাই হয় তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
– এই না। তুই কোথাও যাবি না। তুই আসার পর আমার মনে হয় আমি আমার মেয়েকে পেয়েছি। আর কখনো এইসব কথা মুখে আনবি না। কৌশিক ওকে নিয়ে নিচে আয় আমি গেলাম।
বনুলতা চলে গেলে কৌশিক পূর্ণার কাছে আসে। পূর্ণা রাগ দেখিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। যা দেখে কৌশিক হেসে দিয়ে পূর্ণার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
– রাগ করছিস। দেখ পূর্ণা আমি বুঝিনি। আমার এতটুকু অনুপস্থিতিতে এতকিছু হয়ে যাবে। আই এম সরি। আসলে আমার দাভাই টা না এমনই। কিন্তু আম্মু বললো না ওর মন ভালো এইটা সত্যি তুই তার প্রুভ পাবি দেখেনিস।
পূর্ণা এইবার কৌশিকে পেটে একটা কিল বসিয়ে দেয়। কৌশিক পেট ধরে বরে,
– আহ পূর্ণারে আমার পেট গেলো রে। তুই এইটা কি করলি রে। এখন তো আমার পেট অপারেশন করতে হবে। আল্লাহ্ কত রক্ত লাগবো। ইনজেকশন ভাই আমি ইনজেকশন দিমু না। আল্লাহ্ বাঁচাও। আহও।
সবগুলো কথা কৌশিক অভিনয় করে বললো। আর পূর্ণা তার এমন অভিনয় দেখে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। তার এমন মুক্তোছড়া হাসির দিকে কৌশিক মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো। কৌশিকের এমন চাহনি দেখে পূর্ণা হাতের তুড়ি বাজিয়ে বলে,
– কিরে তুই কি আমার প্রেমে পড়ে গেলি নাকি।
কৌশিক ব্যঙ্গ করে বলে,
– আমি তোর মতো পেত্নির প্রেমে। ছে তাহলেই হয়ছে। আমার মাথায় কয়টা মন্ডু আছে যে তোকে ভালোবাসতে যাব।
পূর্ণা এইবার আরো উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। কৌশিক বলে,
– এইবার চল নাহলে দেড়ি হয়ে যাব।
পূর্ণা কিছ বলে না। সে কৌশিকের পেছন পেছন নিচে যায়। গিয়ে দেখে এখন আরও মানুষের ভিড়। বনুলতা আর রশীর মেহেমানের দেখভাল করছে। আর রাফাত চৌধুরী সে সোফায় বসে কিছু লোকের সাথে কথা বলছে। হাতে সবারই ওয়াইনের গ্লাস। তবে রাফাতের হাতে লেমন জুস। পূর্ণা একবার সেইদিকে চোখ দিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। কৌশিক পূর্ণাকে তার বন্ধুমহলের সামনে নিয়ে যায়। কৌশিকের বন্ধুরা কৌশিকের সাথে একটা মেয়ে দেখে একজন বলে উঠে,
– কৌশিক এইটাই কী পূর্ণা।
কৌশিক হেসে বলে,
– হ্যা। গাইস এইটা হলো পূর্ণা। আমার বন্ধু। আর পূর্ণা এইটা হলো কায়েস। এইটা হলো মিতা। এইটা হলো ঐশী। এইটা হলো রাফি।
পূর্ণা সবাইকে হাই বলে। পূর্ণাকেও সবাই হাই বলে। রাফি একটু মজা করে বলে,
– কিরে কৌশিক শুধুই বন্ধু নাকি আবার।
কথাটা বলে সবাই হাসতে শুরু করে। আর কৌশিক ধমক দিয়ে বলে,
– আরে থাম তো তোরা। পূর্ণা জাস্ট মাই ফ্রেন্ড নাথিং ইলস ওকে।
ঐশী বলে,
– ওকে বাবা ওকে বুঝেছি। পূর্ণা এইদিকে আসো। আমাদের সাথে বসবে এসো।
পূর্ণা গিয়ে ঐশীর পাশে বসে। ঐশী পূর্ণার সাথে রাজ্যের গল্প বলা শুরু করে দেয়। মাঝে মাঝে পূর্ণাও কিছু বলছে আর হাসছে। তখনই কৌশিকের ডাক পড়ে। কৌশিক গিয়ে কেক কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কৌশিকের বন্ধুরাও সেদিকে চলে যায়। প্রথমে পূর্ণা গেলেও পড়ে ভিড়ের মধ্যে অসস্তি বোধ করলে। সে একটু দূরে এসে দাড়ায়। যেখান থেকে কৌশিককে স্পষ্ট দেখা যায়। কৌশিক যখন কেক কাটে তখন তার পাশে বনুলতা চৌধুরী, রশীর চৌধুরী, রাফাত চৌধুরী দাড়িয়ে ছিলো। কিন্তু আরও একজনকে পূর্ণা খেয়াল করে যাকে কৌশিক প্রথমে জরিয়ে ধরে তারপর হাতে কাটা কেক মুখে তুলে দেয়। ছেলেটিও কৌশিককে কেক খায়িয়ে দেয়। পূর্ণার এইবার আরও বেশি অসস্তি হচ্ছে। চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখছে। শরীরের কোষগুলো মনে হয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এসির মধ্যেও পূর্ণা ঘামছে। পায়ের নিচে সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মাথাটা ভো ভো করছে। মনে হচ্ছে কানের কাছ দিয়ে বলতা জাতীয় কিছু উড়ে যাচ্ছে। পূর্ণার শরীরে কোনো শক্তি নেয়। নিঃশ্বাস নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে। মনের মধ্যে শুধু একটা কথায় বাজছে। ওহ এখানে কি করছে। কি হয় কৌশিক ওর। খুব কি কাছের কেউ। আমার জীবন নরক করে দিয়ে এখানে কি করছে ওহ। পূর্ণা আর দাড়ানোর শক্তি পায় না। সে সোফায় ধপ করে বসে পড়ে। তখনই ওর পাশে আসে ঐশী। ঐশী পূর্ণাকে এমন অস্থির হতে দেখে বলে,
– পূর্ণা কষ্ট হচ্ছে। এমন খামছো কেন? পূর্ণা কৌশিককে ডাকবো। একটু পানি খাবে।
পূর্ণা কোনো রকমে মুখ দিয়ে আওয়াজ করে বলে,
– পা পা পানি পানি খা খা খাব।
ঐশী ছুটে গিয়ে পূর্ণার জন্য পানি নিয়ে আসে। পূর্ণার পানি খাওয়ার পর একটু ভালো লাগে। আগের থেকে অসস্তিবোধ টা একটু কমেছে। তাই সে ঐশীকে বলে,
– ঐশী আপু। তুমি একটু কৌশিককে বলে দিও আমার ভালো লাগছিলো না। তাই উপরে গিয়ে রেস্ট নিচ্ছি। আমায় যেনো বিরক্ত না করে।
– আচ্ছা বলে দিব। আমি কি তোমায় ঘর অবধি দিয়ে আসবো।
– নাহ আমি পাড়বো।
পূর্ণা আস্তে আস্তে হেটে নিজের রুমে আসে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে। তারপর জোরে শব্দ করে কেঁদে দেয়। চিৎকার করে কাঁদে পূর্ণা। হাটুর মধ্যে মুখ গুজে পূর্ণা কাঁদছে। আর বিধাদার কাছে বলছে,
– কেন কেন আল্লাহ্ বার বার তুমি আমাকে তার মুখোমুখি করছো। আমি তো দূরে চলে যেতে চায়। চাই না আমি ওর কাছে আসতে। যে আমায় সম্মান দেয়নি। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে আমি তার কাছে আর কখনো আসতে চায়না। তাহলে নিয়তি কেন বার বার তার কাছেই আমাকে আনছে। কিশোরী মন ছোট্ট একটা ভুল করে ফেলেছে জীবনে। তার শাস্তি কেন তুমি এইভাবে দিচ্ছছো আল্লাহ্। আমি যে আর পারিনা। আমার ধৈর্য্য শক্তি যে আর পেরে উঠে না। পূর্ণাবতি যে হেরে যাচ্ছে। মরে গিয়ে সব কিছু থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটাও হলো না। কৌশিকের ছায়াতলে থেকে একটু বাঁচার স্বপ্নদেখছিলো আমার এই নিষ্পাপ মন। কিন্তু আজ সেইখানেও সে এসে হাজির। কি হয় কৌশিকের সে। খুব কি কাছের কেউ। যদি তাই হয় তাহলে পূর্ণা আর এই বাসায় থাকবে না। চলে যাবে সে। ঐ মানুষ রূপী অমানুষটার মুখোমুখি হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেয় আমার।
পৃর্ণা নিজের ভারি শরীরটা টানতে টানতে ওয়াশরুমে যায়। দামী পোশাকটা নিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে পড়ে। চোখ মুখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার কোলে। পূর্ণা হাটুর মধ্যে মুখ গুজে শাওয়ারের নিচে বসে আছে। কোথায় কি হচ্ছে সেইদিকে তার কোনো খেয়াল নেয়। শত চেষ্টা করে নিজের মধ্যে থাকা কষ্টটাকে মুছতে চায়ছে। কিন্তু পারছে না। রাজ্যের সব বিষন্নতা যেনো তার মনে এসে ভিড় করেছে। পূর্ণার মনের অবস্থা খুবই খারাপ।
এইদিকে কৌশিক কেক কাটা শেষ করে হাতে এক টুকরো কেক নিয়ে পূর্ণাকে খুজছে কিন্তু পূর্ণা কোথায়। হঠাৎ ঐশীর সাথে দেখা হলে। ঐশী বলে,
– কৌশিক পূর্ণাকে খুজছিস।
– হ্যা পূর্ণা কই?
– ওহ ঘরে গিয়েছে। বললো শরীরটা ভালো লাগছে না তাই রেষ্ট নিতে চায়। জানিস কৌশিক পূর্ণা না এত ঠান্ডার মধ্যেও ঘামছিলো। দেখে মনে হচ্ছিলো ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে।
কৌশিক চিন্তিত হয়ে বলে,
– কি বলিস আমাকে আগে বলবি না।
– বলতে তো চেয়েছিলাম কিন্তু তুই তো বিজি ছিলি।
কৌশিক আর এক মুহুর্তও দাড়ায় না। দৌড়ে পূর্ণার রুমের কাছে যায়। গিয়ে দেখে দরজা লোক। কৌশিক অনেক বার ডাকে,
– পূর্ণা পূর্ণা এই পূর্ণা। শুনতে পাচ্ছিস। পূর্ণা পূর্ণা এই পূর্ণা দরজা খোল পূর্ণা। পূর্ণা এই পূর্ণা।
কৌশিকের এইবার টেনশনে হাত পা কাপছে। মেয়েটা আবারও সুইসাইড করতে যায়নি তো। কৌশিক আর ভাবতে পারে না। সে আবারও পূর্ণাকে ডাকে,
– পূর্ণা দোস্ত দরজা খোল। পূ।
ঠিক তখনই পূর্ণা সাড়া দেয়। অনেক কষ্টে গলার টোনটা ঠিক করে বলে,
– কৌশিক আমি ঠিক আছি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তুই নিচে যা। গেষ্টদের এটেন্ট কর।
কৌশিক হাতের কেকের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি যে তোর জন্য কেক আনলাম।
– কাল খাব। আজ খুব টাইয়ার্ড লাগছে রে।
– তুই ঠিক আছিস তো পূর্ণা। গলাটা এমন লাগছে কেন?
– আসলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তো তাই।
কথাটা বলতে গিয়ে পূর্ণা কেঁদে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– তুই এত ভালো কেন রে কৌশিক। ঠিক আমার মনের কথাটা বুঝে যাস।
কৌশিক আর কথা বাড়ায় না। সে বলে,
– আচ্ছা তুই ঘুমা। আমি গেলাম। কিছু লাগলে আমায় ডাকিস বা আম্মুকে বলিস।
পূর্ণা শুধু হুম উচ্চারণ করে। আর কিছু বলে না।
নিশুতি রাত। চৌধুরী বাড়ির সবাই যার যার মতো করে ঘুমিয়ে পড়েছে। মেহেমানরা সবাই চলে গিয়েছে। পূর্ণাও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেলে সে বুঝতে পারে তার শরীরে জ্বর উঠেছে। তাপমাত্রাটা খুব বেশি। একটু ঠাণ্ডা পানির প্রয়োজন। গলাটা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছে। পূর্ণা উঠে বসতে নিলে পড়ে যায়। মাথাটা ঘুরছে। কিন্তু পানির তো অনেক প্রয়োজন। পূর্ণা আবারো কষ্ট করে উঠে বসে। এইবার আর পড়ে যায়নি। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেখে টেবিলের উপরে রাখা ওয়াটার বোতল টায় কোনো পানি নেয়। কিন্তু তৃষ্ণাই পূর্ণা মরে যাচ্ছে। জ্বরের মধ্যেও চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। শরীর টা ঝিমঝিম করছে। মাথাটা ভো ভো করছে। সবকিছু ঝাপসা লাগছে। তাও পূর্ণা অন্ধ লোকের মতো। টেবিলে থাকা বোতলটা নিয়ে নিচে যায় পানি আনতে। কিন্তু অর্ধেক রাস্তা যেতেই সে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। অজ্ঞান হয়ে যায়। রাফাত নিজের ঘর থেকে একটু দূরে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনতে পেয়ে সোজা হয়ে বসে। রাফাত ল্যাপটপে বিজনেসের কাজ করছিলো। রাফাতের মনে হচ্ছে খুব কাছেই কিছু একটা পড়েছে। তাই সে ল্যাপটপ টা অফ করে স্টাডি টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বের হয়। বেড়িয়ে সিড়ির কাছে আসতেই দেখে পূর্ণা অজ্ঞান হয়ে সিড়ির কাছে পড়ে আছে। রাফাত হাটু মেরে পূর্ণার কাছে বসে। তারপর ডাকে,
– হ্যালো মিস শুনতে পাচ্ছেন।
পূর্ণার কোনো হুশ নেয়। রাফাত এইবার পূর্ণার একটা হাত ধরে আবারো সরিয়ে নিয়ে এসে বলে,
– ওহ মাই গড। এতো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। হাত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেয়। ইমিডিয়েটলি চিকিৎসার প্রয়োজন।
রাফাত পূর্ণাকে কোলে তুলে নিজের ঘরে নিয়ে আসে। তারপর একবার ভাবে মমকে ডাকবে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবে সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে মমের উপর দিয়ে এখন আর ডাকতে হবে না। তাই সে নিজেই পূর্ণাকে কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। তারপর মাথায় অনেকক্ষণ পানি ঢালে। পানি ঢালার পর তাপমাত্রাটা একটু কমে। রাফাত পূর্ণাকে রুমে নিয়ে এসে নিজের বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। তারপর শরীরটাকে ব্লাংকেট দিয়ে ঢেকে দেয়। পূর্ণা জ্বরে কাঁপছে। রক্তজবার মতো ঠোট জোরা জোরে শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে। রাফাত এতক্ষণ পূর্ণাকে খেয়াল না করলেও এখন বেস করছে। পূর্ণা জ্বরের ঘরে বার বার কেঁপে উঠছে। সাদা মুখটা লাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। মুখটা মায়াবি লাগছে। রাফাতের মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ের মধ্যে জাদু আছে। সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে তার। রাফাত আর এক মুহুর্তও সেখানে দাড়ায় না। বেলকনিতে চলে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে রাফাত। আর একটু হলে দম আটকে যেতো তার। কোন রূপে আচ্ছাদন এই নারী। একদম পাগল করে দেওয়ার মতো রূপ। রাফাত চোখ বুজে জোরে একটা শ্বাস নেয়। নিজের মাইন্ড সেট করে আবারো রুমে আসে। তারপর দুটো মেডিসিন পূর্ণাকে খায়িয়ে দিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে।
#চলবে