এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-৫৪

0
482

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৫৪

নিকষকালো অন্ধকারে ভরপুর রুমখানা। চাঁদের আলো জানালার কার্নিশ ছুঁইয়ে ঢুকছে ঘরে। নিজ কক্ষের বেলকনিতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে আদিব। হাতে জলন্ত সিগারেট। আদিব তার এত বছরের জীবনে আজই প্রথম বোধহয় সিগারেট ফুঁকছে। ফারিশ ভাই সবসময় তাকে সিগারেট, মদসহ নানাবিধ মাদকদ্রব্য থেকে দূরে রেখেছে। তাকে নিষেধ করেছে এসব খেতে। অথচ নিজেই ছিল আফিম ব্যবসায়ী। ফোশ করে শ্বাস ফেললো আদিব। বেলকনির দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে বসেছে আদিব। এক হাঁটুর ভাজ করা। অন্য হাঁটুর ওপর হাত। হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের ধুঁয়া উড়ছে।
আদিব কিছুটা ফারিশ বেসে বসেছে। সঙ্গে চিন্তা করছে তার জায়গায় যদি ফারিশ ভাই থাকতো আর ফারিশ ভাইর জায়গায় সে। তবে কি ফারিশ ভাইও তার মতো এভাবেই বসে থাকতো। নাকি তার জন্য কিছু করতো। আদিবের মনে হচ্ছে ফারিশ ভাই থাকলে ঠিক তার জন্য কিছু একটা করে তাকে রক্ষা করতো। শাস্তি থেকে তাকে দূরে রাখতো। দেখা যেত জেল ভেঙেই তাকে নিয়ে পালাচ্ছে। আদিন হয়তো পালানোর জন্য রাজি হতো কিন্তু ফারিশ ভাই কি পালাতে রাজি হবে। অবশ্যই হবে না। ফারিশ ভাই কখনোই আদিবের মতো হতো না। আদিব শুনেছে ফারিশ ভাই আজ আদালতে কি কি বলেছে? কিভাবে আফিম ব্যবসায়ে ঢুকেছে। তার জীবন তাকে কোথায় কিভাবে নিয়ে গিয়েছে সবটাই বলেছে। অথচ ফারিশ ভাই তাকে কোনো জায়গায় উল্লেখ করে নি। ফারিশ ভাই সেই বর্ষার রাতে তাকে বাঁচাতেই অস্ত্র নিয়ে খুন করেছিল তা উল্লেখ করে নি। আদিবকে কতটা ভালোবাসে ফারিশ তা উল্লেখ করে নি। সম্পূর্ণ ঘটনাটাকেই নিজের মধ্যে দিয়ে ঘুরিয়ে বলেছে। অথচ সেই সকল ঘটনায় আদিব ফারিশের সঙ্গে ছিল। আদিব সিগারেটে ঠোঁট ছোঁয়ালো। শুরুতে কাশি আসলেও এখন আর আসছে না। সেই সন্ধ্যা থেকে আদিব একস্থানে বসা। পরপর পনেরটা সিগারেট শেষ তার। আদিবের মনে হচ্ছে ফারিশ ভাই একটা স্বার্থপর মানুষ। না হলে আদালতে তার কথা উল্লেখ করবে না কেন? আদিব এবার বুঝেছে ফারিশ কেন তাকে আদালতে যেতে বারণ করেছিল। যাতে তার মিথ্যে কথাগুলোর মাঝে আদিব প্রতিবাদ জানাতে না পারে। আদিবের নিজের ওপর রাগ হচ্ছে, রাগ হচ্ছে ফারিশ ভাইয়ের ওপর। আদিবের পাশেই কুঁচি কুঁচি করে পড়ে আছে কতগুলো কাগজের টুকরা। আদিব ছিঁড়েছে। জেদের বসে কাগজ ছিঁড়েছে। আদিব আকাশ পানে চাইলো। তার কিছু ভালো লাগছে না।’

হঠাৎ আদিবের ফোনে একটা মেসেজ আসলো। আদিব দেখলো। কিছুক্ষণ নির্বিকার ভঙ্গিতে চেয়ে থেকে বলল,“তুমি খুব খারাপ ভাই। খুব খারাপ।”


কারাগারে বন্দী আরশাদ তাচ্ছিল্যে হাসছে ফারিশের অবস্থা দেখে। মানুষ ঠিক কতটা আহাম্মক হলে এমন একটা কাজ করে। আরশাদের মজা লাগছে। একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে সে একা কেন জেল খাটবে! ফারিশও খাটবে। কম করে হলেও ফারিশের শাস্তি পনের বিশ বছরের জেল নিশ্চিত। আর যদি মৃত্যুদন্ড হয় তবে তো, ভেবেই খিলখিলিয়ে হাসে আরশাদ। তার পরিকল্পনা ছিল জেল থেকে বের হলেই সবার আগে ফারিশকে খুন করবে। অবশ্য এখনও সে পরিকল্পনা পুরোপুরি ঘুচে যায় নি। হিসাব করলে ফারিশের আগেই আরশাদের মুক্তি হবে। আরশাদ খুন একটা করবে। তার ইচ্ছে করছে এখনও গিয়ে ফারিশকে খুন করতে। আরশাদ শুনেছে আদালতে নাকি ফারিশ অনুরোধ করেছে তাকে বাঁচিয়ে রাখার। আরশাদ ভেবেছে আদালত ফারিশকে বাঁচিয়ে দিলেও আরশাদ দিবে না। সাজা তো হবেই সাজার পর মৃত্যু। কথা ভেবে আবারও বিচ্ছিরি ভাবে হাসলো আরশাদ। আরশাদ এও জানে সে যদি ফারিশকে মারায় ব্যর্থ হয় তবুও ফারিশের আরো শত্রু আছে তারাও মেরে দিতে পারে। ফারিশের অবস্থা এখন চোরাবালিতে আটকে পড়ার মতো। ডাল ধরে আছে ঠিকই তবে সে ডাল বেয়ে না উঠতে পারছে আর না ডাল ছেড়ে দিয়ে ডুবতে। আরশাদের মজা লাগছে ফারিশের করুণ অবস্থার কথা ভেবেই। ‘ভালোবাসা’–ছাহ্! হেতির ভালোবাসারে স্যালুট।’

হাত উঠিয়ে স্যালুট ভঙ্গিটা করলো আরশাদ। ঠোঁট জড়ানো হাসি তো আছেই। আরশাদের সামনের জেলে থাকা এক আসামি তার কার্যকলাপের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে, ‘সামনের হারামজাদার মাথা খারাপ হইছে। নইলে এল্লা এল্লা হাসবে ক্যান?’


জেল বন্দী ফারিশ নিরালায় বসে আছে একা। জেলখানা থেকে দিয়ে যাওয়া শুঁকনো রুটি পড়ে আছে প্লেটে। ফারিশ আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে খানিকটা। খাওয়া দাওয়া করছে না। সারাদিনে শুধু পানি ছাড়া তেমন কিছুই খাচ্ছে না। পরশু তার পাপের রায় দেবে। আচ্ছা যদি জজ সাহেবের রায় হয় তাকে পনের বছর জেল খাটতে হবে তাহলে কেমন হবে। আজ থেকে পনের বছর পর ফারিশকে কেমন দেখাবে? বয়স তার প্রায় পয়তাল্লিশ ছেচল্লিশ পেরোবে। আচ্ছা পনের বছর পর ফারিশের ছেলে বা মেয়ের বয়স কত হবে। কম হলেও চোদ্দ। চোদ্দ বছর পর যদি কোনো সন্তান তার বাবাকে দেখে তাহলে তার রিয়েকশন কেমন হবে? তাকে দরজার মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার সন্তানের প্রথম প্রশ্ন কি হতে পারে?”
“তুমি কেমন আছো বাবা? নাকি আপনি কে?’

দেখা গেল ফারিশ যখন বাড়ি গেল তখন আদ্রিতা বাসায় নেই। তার ছেলে বা মেয়ে তাকে দেখে ভিখারী ভেবে বলল,“মা বাসায় নেই আপনি পড়ে আসুন।”

ফারিশ চমকাল। কি আশ্চর্য! এসব কি ভাবছে ফারিশ। জেলে থেকে থেকে তার মাথা নষ্ট হলো নাকি। তবে যত যাইহোক ব্যাপারটা কিন্তু খুব অদ্ভুত আর ইন্টারেস্টিং লাগছে। পনের বছর পর বাবার সাথে সন্তানের দেখা। আচ্ছা আদ্রিতার কি রিয়েকশন হবে? তার জীবনের পনেরটি বছর যাবে বৃথা। একটা আসামীর ফিরে আসার অপেক্ষা করতে করতে। আদিব কি তাকে ভুলে যাবে? অবশ্যই ভুলবে না। ফারিশ কি ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ নাকি। আদিবও ততদিনে দু’তিন বাচ্চার বাবা হয়ে যাবে। না আদিবের দু’তিন বাচ্চার বাবা হলে চলবে না তাকে হতে হবে চার পাঁচ বাচ্চার বাবা। ইস, ভুল হয়ে গেছে আদিবকে আসার সময় বলে আসা উচিত ছিল, ‘আদিব আমি যেন ফিরে এসে দেখি তুমি চার পাঁচ বাচ্চার বাবা হয়ে গেছো।”

আচ্ছা ঢাকার শহর কি পনের বছরে অনেকটা বদলে যাবে। যাবে নিশ্চয়ই। ফারিশ আর ভাবলো না। জীবনটা ঠিক কোথায় যাবে ফারিশ ধরতে পারছে না। নয়নতারার পদধ্বনি শোনা গেল। আজ তার নাইট ডিউটি পড়েছে। কিশোর কিছু কাজে খুলনা গেছে। সন্ধ্যায় গিয়েছে। ফিরবে পরশু সকালে। তাই এই দুইদিন নয়নতারাই নাইট ডিউটি করবে বলেছে। আশরাফের সাথে নয়নতারার মনমালিন্য চলছে। আশরাফ তার সাথে কথা বলে না। ঝগড়াও করে না। নয়নতারা এতবার বোঝালো ফারিশ ভাই বারণ করেছিল তাও আশরাফ মানতে চাইলো না। নয়নতারা ফারিশের জেলের সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,“ফারিশ ভাইয়া।”

ফারিশ চকিত তাকালো। অবাক হলো দারুণ। নয়নতারাকে দেখে এগিয়েও আসলো। বলল,
“এত রাতে তুমি এখানে?”

নয়নতারা বলল,
“আজ আমার নাইট ডিউটি ছিল ভাইয়া। আচ্ছা শুনুন আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”

ফারিশ বোধহয় আচ করলো কে এসেছে। তবুও প্রশ্ন করলো না। শুধু বলল,
“রাত কয়টা বাজে নয়নতারা?”

নয়নতারা তার হাত ঘড়িটা দেখে বলল,
“দুটো।”
“তাকে ফিরে যেতে বলো।”
“আপনি দেখা করতে চান না ভাইয়া।”
“সে কি জানে না এতরাতে কারো সাথে দেখা করতে নেই।”
“আমি বারণ করেছিলাম কিন্তু শুনতে চায় নি। খুব পাগলামী করছে।”
“মায়া ছাড়তে এখনও শিখলো না।”
“পাঠিয়ে দেই?”
“দেও।”

নয়নতারা চলে গেল। জেলখানায় মানুষ নেই তেমন। নয়নতারা জানে সে যে কাজটা করছে তা অন্যায়। তবুও আদ্রিতার মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারলো না। নয়নতারা আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,“আসো।”

আদ্রিতা মলিন মুখে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে ভিতরে ঢুকলো। ফারিশ জেলের ভিতর যথাসম্ভব চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা। আজ কেমন যেন নিজেকে ভাঙা ভাঙা লাগছে। আদ্রিতা ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো। হাত রাখলো জেলের শিকে। ফারিশ উল্টোদিক ঘুরে দাড়ানো। বুকের ভিতর টিপটিপ করে শব্দ হচ্ছে। আদ্রিতা মলিন কণ্ঠে ডাকলো,“মিস্টার বখাটে।”

ছ্যাঁত করে উঠলো বুকখানা। এই নামটা আজ কতদিন পর শুনলো ফারিশ। ফারিশ সঙ্গে সঙ্গেই পিছন ঘুরলো। আদ্রিতার মলিন মুখ দারুণ পীড়া দিল। তবুও প্রকাশ করলো না। আদ্রিতা প্রশ্ন করলো,“কেমন আছো?”

ফারিশ মৃদু হাসে। বলে,
“ভালো। তুমি?”
“আমিও ভালো।”
“এখানে আসলে কেন?”
“ইচ্ছে হলো তাই।”
“সব ইচ্ছে যে পূরণ করতে নেই জানো না।”
“স্বার্থপর মানুষদের জন্য তাই।”

ফারিশ কথা বলে না। চুপ করে যায়। তার গলা ধরে আসছে। ফারিশ ফোশ করে শ্বাস ফেলে বলল,
“চলে যাও আদ্রি।”

আদ্রিতা গেল না। জেলের শিকে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ল। ফারিশও বসলো। পিঠে পিঠ লাগলো একটু। ফারিশের স্পর্শে ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো আদ্রিতার। ফারিশ বলল,
“আমি কি ভুলে করেছি?”

আদ্রিতা অনেকক্ষণ পর জবাব দেয়,
“না।”
“আমার উপর রেগে আছো?”
“রাগ থাকলে আসতাম বুঝি।”
“আদিব বলেছিল কেউ আসছে।”
“তাহলে জেনেছো?”
“তুমি তো জানালে না।”
“অভিমানের দেয়াল এত ভাড়ি ছিল আমি বলতেই পারলাম না।”
“সে কেমন আছে?”
“ভালো।”
“আমিহীনা তাকে বড় করতে পারবে না আদ্রি?”
“বাবার ভালোবাসা কি মা দিতে পারে?”
“তুমি চেষ্টা করলে ঠিক পারবে।”
“ফিরে আসবে তো ফারিশ?”
“তুমি অপেক্ষায় রাখতে পারলে ঠিক আসবো।”
“আমার কষ্ট হয়।”
“আমারও হচ্ছে।”
“জীবনটা সহজ’সরল কেন হলো না?”
“মাফিয়াদের প্রেমে পড়লে জীবন সহজ’সরল হয় বুঝি।”

আদ্রিতা প্রসঙ্গ পাল্টালো। বলল,
“খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে না তাই না?”

জবাব দেয় না ফারিশ। উল্টো বলে,
“তুমি এত রাতে এখানে এসে ভুল করেছো?”
“তোমার কাছে আসায় কোনো ভুল নেই মাফিয়া স্বামী।”

নীরবতা চলে আসলো। এত কথা বললো যে আর কথাই খুঁজে পাচ্ছে না। আদ্রিতা ফারিশের দিকে ঘুরে তাকালো। অনুরোধের স্বরে বলল,
“একটু তাকাও না আমার দিকে?”

ফারিশের হৃদয়টা কেঁপে উঠলো। কি যন্ত্রণা হলো বা’দিকের বুকখানায়। ফারিশ তাও ঘুরলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিতা হাত জড়িয়ে ধরলো ফারিশের। চোখে পানি চলে এসেছে তার। ফারিশ চোখের পানি মুছলো আদ্রিতার। বলল,
“কাঁদবে না বেলীপ্রিয়া, তুমি কাঁদলে আমি ভালো থাকবো না।”
“কষ্ট দিয়ে ভালো থাকতে বলছো।”
“রায়ের দিন তুমি আসবে বেলীপ্রিয়া?”
“তুমি চাও আমি আসি?”
“এসো। কালো শাড়ি পড়ে এসো।”
“কালো শাড়ি কেন?”
“শোকে শোকে কাটাকাটি হবে তুমি ভালো থাকবে।”

আদ্রিতা মৃদু হেসে বলে,
“তুমি একটা অদ্ভুত মানুষ।”
“জানি তো।”
“কচু জানো।”

অভিমানী স্বরে বলে আদ্রিতা। কথা শুনে হাসে ফারিশ। নিরাশ কণ্ঠে শুধায়,“আমার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।”

আদ্রিতাও চোখ বন্ধ করে শীতল স্বরে জানায়,
“আমারও।”

কিন্তু জড়িয়ে ধরা গেল না। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বসে রইলো দুজন। নয়নতারা দূর থেকে সে দৃশ্য দেখে মোহনীয় চোখে চেয়ে রইলো। ‘ভালোবাসা এত সুন্দর’– তার আঁখিপল্লব ভেসে উঠলো।’


মাঝে কাটলো একদিন। আজ বুধবার। আজ দুপুর বারোটায় ফারিশের মামলার রায় দিবে। আদ্রিতা কালো রঙের শাড়ি পড়েছে। চুলগুলো বাঁধা। মুখে হাল্কা একটু পাউডার। ব্যস আদ্রিতা তৈরি।’

সেদিনের মতোই সবাই হাজির হলো কোর্টে। কালো শাড়ি পরিধিত আদ্রিতা চুপটি করে বসা। ফারিশের দৃষ্টি তার দিকেই। জজ সাহেব আসলেন। কিছু সময় চুপ থাকলেন। এরপর বললেন,
“আসামী ফারিশ। তিনি নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। ওনার এই কাজটাকে আমি হৃদয় থেকে সম্মান জানাই। পৃথিবীতে কোনো মানুষই জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে পাপী হয় না। পরিস্থিতি তাদের পাপী বানায়। কিন্তু পাপ তো পাপই হয়। তাই সব দিক বিবেচনা করে এই আদালত ফারিশ মাহমুদকে পনের বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করল। আশা রাখি আমার এই সিদ্ধান্তে আমার আশপাশের মানুষেরা সম্মান জানাবে। দা কোর্ট ইজ ডিস মিস।”

বলেই হাতুড়ির মতো একটা বস্তু দিয়ে টেবিলের উপর বারি মেরে জজ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তার দেখাদেখি সবাই উঠে দাঁড়ালো। ফারিশের রায় শুনে বিন্দুমাত্র ভয় বা সংকোচতা নেই। কারণ এটা সে জানতো। কিশোর এগিয়ে আসলো ফারিশের কাছে। ফারিশ চুপচাপ তার মুখোমুখি দাড়িয়ে মলিন হাসলো। বলল,
“ভালো থাকবেন অফিসার।”

কিশোরও বলল,“আপনিও।”
আদালতের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ফারিশ। তার থেকে একটু দূরেই কিছু পুলিশ। আদ্রিতা ফারিশ মুখোমুখি দাঁড়ানো। ফারিশ কিশোরের থেকে পাঁচ মিনিট সময় নিয়েছে। একটু আদ্রিতার সাথে কথা বলার জন্য। কিশোর দিয়েছে। আদ্রিতা, চাঁদনী, মুনমুন,আশরাফ, মৃদুল, রনি, মৃদুলের বউ, নয়নতারা, আদ্রিতার বাবা-মা, ভাই সবাই দাঁড়ানো। ফারিশ আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তবে গেলাম বেলীপ্রিয়া। ফিরে আসার অপেক্ষায় থেকো। কথা দিচ্ছি এবার ফিরে আসলে ফারিশ আর ভুল করবে না।”

উত্তরে শুধু মৃদু হাসে আদ্রিতা। ফারিশ বলে,
“যে আসছে তার যত্ন নিও বেলীপ্রিয়া, আর নিজেরও যত্ন রেখো। আমার ভাইটাকেও দেখো।কেমন।”

আদ্রিতা উপর নিচ মাথা নাড়ায়। ফারিশ সবাইকে বিদায় জানায়। আদ্রিতার বাবা মার কাছে ক্ষমা চায়। শেষে গিয়ে আশরাফকে বলে,“নয়নতারাকে ক্ষমা করো আশরাফ ওর কোনো দোষ নেই।”

আশরাফ কিছু বলে না শুধু তাকায় নয়নতারার দিকে। অতঃপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে ফারিশ আবার তাকায় আদ্রিতার দিকে। বলে,
“আমিহীন ভালো থেকো বেলীপ্রিয়া।”

.
ফারিশদের থেকে খানিক দূরে উঁচু একটা বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংয়ের ছাঁদে কালো জ্যাকেট, মুখে মাস্ক, মাথায় কালো ক্যাপ আর হাতে গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। তার উদ্দেশ্য ফারিশের বুক বরাবর গুলি করা। যুবকটি ফারিশের বুক সমান নিশানা ঠিক করলো।’

ফারিশ আশেপাশে তাকালো এত মানুষের ভিড়েও ফারিশ আদিবকে দেখলো না। তবে ফারিশ জানেন আদিব আশেপাশেই আছে শুধু তার সামনে আসছে না। ফারিশ স্বল্প আওয়াজে বলল,“ভালো থেকো আ..

পুরোটা বলার আগেই ঘটে গেল এক বিস্মিত ঘটনা। বিকট শব্দ হলো একটা। হঠাৎ ফারিশ উপলব্ধি করল তার বুক বেয়ে রক্ত পড়ছে। উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেল আচমকা এই ঘটনায়। কারণ কেউ একজন ফারিশের বুক বরাবর গুলি করেছে। আদ্রিতা ফারিশ বলে চেঁচিয়ে উঠলো। ফারিশ লুটিয়ে পড়ল নিচে। আদ্রিতা তাকে ধরলো। গালে হাত চেপে ডাকল,
“মিস্টার বখাটে কথা বলুন?”

ফারিশ টিপটিপ চোখে থাকায়। বলে,
“আমার অপেক্ষা তোমায় নিঃস্ব করেই দম নিল বেলীপ্রিয়া। ভালো থেকো বউ।”

কথাটা বলেই চোখ বুজিয়ে নিল ফারিশ। আদ্রিতা ফারিশকে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। তার চিৎকারে আশপাশের দেয়ালও বুঝি ভাড়ি হলো। মৃদুল ফারিশের হাতের পার্লস চেক করল। আদ্রিতার আশাপূর্ণ চাহণী। মৃদুল মাথা নুইয়ে ফেললো। মলিন মুখে জানালো,
“He is no more.”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে