এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-৪৬+৪৭

0
439

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৬

নিস্তব্ধ নীরবতায় ভরপুর চারপাশ। আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে এখনো বসে আছে ফারিশ। আদ্রিতা নিশ্চুপ। সে ধরতে পারছে না আচমকা ফারিশের হলো টা কি! আদ্রিতা ফারিশের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। নির্জীব কণ্ঠে বললো,“আমাকে ছাড়বেন না?”

ফারিশের উত্তর এলো না। সে চুপ রইলো। আদ্রিতা আবার বললো,“কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

ফারিশ নিরাশ স্বরে বললো,
“কিছু বলতে ভালো লাগছে না।”
“এমন কেন করছেন? কি হয়েছে? বলুন আমায়।”
“কি হবে, কিছু হয় নি তো।”
“আমরা কিন্তু একভাবে অনেকক্ষণ বসে আছি।”
“তো।”

আদ্রিতা নিরাশ হলো। নিজের মাথাটা ফারিশের কাঁধ থেকে সরিয়ে বললো,“আপনার কি মন খারাপ?”

ফারিশের তক্ষৎনাৎ উত্তর,“না তো।”
ফোস করে শ্বাস ফেললো আদ্রিতা। উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,
“আমায় ছাড়ুন।”
“যদি না ছাড়ি।”
“দরজা খোলা। একটু বুঝুন যখন তখন চাঁদনী ওরা চলে আসবে।”
“আসুক। সমস্যা কি? তুমি আমার বউ ভুলে যাচ্ছো কেন?”
“আপনি একটা যাচ্ছে তাই লোক।”
“জানি তো।”

চোখ বাকিয়ে চাইলো আদ্রিতা। আর কি বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ ফারিশ ছেড়ে দিলো আদ্রিতাকে। ফারিশ ছাড়তেই আদ্রিতা হুড়মুড় করে নেমে পড়লো ফারিশের কোল থেকে। ফারিশ শুঁকনো হেঁসে মলিন মুখে বলে,“আমার থেকে পালানোর এত তাড়া।”

আদ্রিতা দাঁড়ানো ছিল। খানিকটা ঝুকলো ফারিশের দিকে। শীতল স্বরে বললো,“আপনার থেকে পালানোর থাকলে দু’মাস আগে ঘটা করে বিয়ে করতাম না আপনায়।”

ফারিশ কিছু বলে না। আদ্রিতা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে।”
—-
অন্ধকার ভরা রাত। ছাঁদের উপর ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করার তোড়জোড় চলছে খুব। আদিব আর চাঁদনী ফিরেছে সন্ধ্যার পরেই। ফারিশকে বাসায় দেখে খানিকটা অবাক হয়েছিল আদিব। তবে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। ছাঁদের পাতানো সেই চেয়ার টেবিলটা সাজাতে ব্যস্ত হচ্ছে আদিব আর ফারিশ। ফারিশকে খানিকটা চিন্তিত দেখাচ্ছে। কিছু একটা নিয়ে সে চিন্তিত। আদিব বললো,“ভাই,

ফারিশ টেবিলের উপর কাঁচের প্লেট রাখছিল। আদিবের কথা শুনে ফারিশ তাকালো। বললো,“হুম বলো,
আদিব কিছু সময় চুপ থেকে প্রশ্ন করলো,“ভাই তুমি ঠিক আছো তো?”

ফারিশ প্রশ্ন শুনে অবাক হলো। ভড়কানো গলায় বললো,
“আমার আবার কি হবে?”
“রাতের ঘুমাও না ঠিক মতো চোখ লাল কেন?”
“ওসব কোনো ব্যাপার নেই। তুমি ভুল ভাবছো।”
“কিছু কি হয়েছে?”

ফারিশ আদিবের কাঁধে হাত দিলো। মৃদু হেসে মিহি কণ্ঠে বললো,“আমার কিছু হয় নি আদিব।”

আদিব বিনিময়ে কিছু বললো না। তবে কথাটা বিশ্বাসও করলো না। হাতে মুরগীর রোস্টের বাটি নিয়ে ছাঁদে হাজির হলো চাঁদনী আর আদ্রিতা। একগাল হেঁসে বললো,“গরম গরম মুরগীর রোস্ট হাজির।”

ওদের কথা শুনে ফারিশ,আদিব দুজনেই তাকালো। বিপুল হাসি তামাশা। আর জমজমাট পরিবেশে ডিনার শেষ হলো। চারজনের ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। আদিব বললো,“ভাই আমরা কোথাও একসাথে ঘুরতে যাই নি একদিন ঘুরতে গেলে কেমন হয়।”

ফারিশ সঙ্গে সঙ্গে বলে,“খুব বাজে।”
চোখ কুঁচকালো আদিব। বললো,“বাজে কেন?”
সে কথার জবাব দেয় না ফারিশ। আদ্রিতা বলে,“ওনার কথা বাদ দিন তো দুলাভাই। কবে যাবেন? কোথায় যাবেন? ঠিক করুন আমরা যাবো।”

ফারিশ ফোস করে নিশ্বাস ফেললো। শান্ত স্বরে বললো,“ঢাকার শহরে সবচেয়ে ভালো মুরগীর খামার কোথায় আছে আদিব?”

আদিব হতভম্ব হয়ে বললো,“মুরগীর খামার দিয়ে কি হবে ভাই?”

ফারিশ কোকের বোতলে চুমুক দিলো। দ্বিধাহীন কণ্ঠে বললো,“ঘুরতে যাবো।”

চাঁদনী বিষম খেল ফারিশের কথা শুনে। থতমত খেয়ে বললো,“কি বলেন দুলাভাই মুরগীর খামারে ঘুরতে যাবো।”

ফারিশের ভাবনাহীন উত্তর,“সমস্যা কি?”
আদ্রিতা বিস্মিত কণ্ঠে বলে,“মুরগীর খামারে দেখবো কি?”

ফারিশ চমৎকার হেঁসে বললো,“কেন সারি সারি মুরগী।”

ফারিশের কথা শুনে আচমকা অট্টহাসিতে লুটে পড়লো সবাই। ফারিশ হাসলো না। সিরিয়াস কণ্ঠে বললো,“আশ্চর্য তোমরা হাসছো কেন?”

আদিব বলে,“ভাই আমার মুরগীর চেয়ে খাসি বেশি পছন্দ। খাসিরটায় গেলে কেমন হয়?”

ফারিশ চমৎকার হেঁসে বলে,“দারুন।”
আদিবের মুখ মলিন হলো। সে হতভাগ হলো ফারিশের উত্তর শুনে।
—–
রাত বেজে তিনটে। প্রকৃতি ছুয়ে সুন্দর বাতাস হচ্ছে। চাঁদটা দেখা যাচ্ছে দূরে। ফারিশ আদ্রিতা পাশাপাশি বসে ছাঁদে। চাঁদনী আর আদিব কতক্ষণ আগেই গেল রুমে। আদ্রিতা হাই তুলে বললো,“ঘুমোতে যাবেন না মিস্টার বখাটে?”

ফারিশ উদাসীন ভঙ্গিতে শুয়ে পড়লো নিচে। মাথা রাখলো আদ্রিতার কোলে। আহ্লাদী স্বরে বললো,
“এক রাত না ঘুমালে কি শরীর খারাপ করে ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা ফারিশের চুলে বিলি কাটে। বলে,
“একটু আকটু করে।”
“তাইলে আমরা না হয় আজ একটু আকটু শরীর খারাপ করি।”
“সারারাত কি ছাঁদেই থাকবো?”
“তোমার কি ভয় হচ্ছে?”
“আপনি থাকলে কিসের ভয়!”

ফারিশ আচমকাই শোয়া থেকে উঠে বসলো। আদ্রিতার চোখে দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো। শীতল স্বরে শুধালো,“তোমার কি একটুও খারাপ লাগছে না বেলীপ্রিয়া?”

আদ্রিতা আচমকা অবাক। এ কেমন প্রশ্ন! আদ্রিতা ফারিশের দিকে চেয়ে। বিলম্বিত চোখে তাকালো। জিজ্ঞাসাসূচক কণ্ঠে বলে,
“খারাপ লাগবে কেন?”
“আমি মাফিয়া তাই।”

আদ্রিতা নিরাশ হলো। ভয়ংকর নিরাশ হলো। এই সুন্দর মুহূর্তে এটা শুনতে চায় নি। আদ্রিতা করুন গলায় বলে,“এই সুন্দর মুহুর্তে মাফিয়া আসলো কোথা থেকে?”

ফারিশ বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো,“তোমার কি সত্যি খারাপ লাগে না? তোমার স্বামী একজন মাফিয়া। দেশ বিরোধী মাফিয়া। সে মাদকব্যবসায়ী, বেআইনি অস্ত্র পাচারের কারবারে জড়িত। তোমার খারাপ লাগে না দুঃখ হয় না। তুমি তো ডাক্তার কিভাবে এত সহজে সবটা মেনে নিলে। তোমার কি ঘৃণা আসে না আমার ওপর?”

ফারিশের গলা জড়িয়ে ধরে আদ্রিতা। বার কয়েক চুমু খায় ফারিশের গালে,কপালে, অধরে। ফারিশ হতভম্ব। আদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে,
“আপনি কি জানেন মিস্টার বখাটে? যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণা করা যায় না। আমি আপনায় ঘৃনা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরিশেষে দারুণ ব্যর্থ হয়েছি।”

ফারিশ ভড়কালো,চমকলো,অবাক হলো দারুণ। এই মেয়ে তার কথাই তাকে ফিরিয়ে দিলো। কি সাংঘাতিক কান্ড! ফারিশ পলকহীন আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে। আর আদ্রিতা সেই চাহনী দেখে মিষ্টি হাসে।’
—-
পরেরদিন খুব ভোরেই মুরগীর খামারে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো আদিব,ফারিশ, আদ্রিতা আর চাঁদনী। আদিবের সে কি মন খারাপ! সে বুঝে না মুরগীর খামারে ঘুরতে যাওয়ার মতো কি আছে? তাও আবার বউকে নিয়ে। আদিবের বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলানো কান্ডে ফারিশ হাসে। আদিব আর চাঁদনী পিছনে বসেছে। ফারিশ আর আদ্রিতা সামনে। ফারিশ গাড়ি ড্রাইভ করছে।’

আদ্রিতা আর চাঁদনী হসপিটাল বান দিয়েছে আজ। প্রায় দু’মাস পর আজ একদিনের ছুটি নিয়েছে তারা। আদ্রিতা চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“আমরা কি সত্যিই মুরগী খামারে ঘুরতে যাবো?”

ফারিশের তড়িৎ উত্তর,“হা।”
ফারিশের কথা শুনে নিরাশ আদ্রিতা,চাঁদনী আর আদিব।’

প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে ফারিশ গাড়ি থামালো। কেউ গাড়ি থেকে নামলো না। সবাই মুখ ফুলিয়ে বসে। ফারিশ হেঁসে বলে,“তোমরা এমন বাচ্চাদের মতো রাগ করছো কেন? দেখো মুরগীর খামার খুবই সুন্দর একটা জায়গা। এখানে নানাবিদ মুরগীরা বাস করে। একেক মুরগীর একেক ওজন, কোনোটা এক কেজি, কোনোটা চার কেজি। কোনোটার রঙ লাল, কোনোটার রঙ হয় সাদা। বোঝো এগুলা!’

ফারিশের কথায় ভ্রু-কুচকে তাকালো সবাই। ফারিশ হেঁসে বললো,“নামবে তোমরা।”

কেউ নামলো না। ফারিশ তীক্ষ্ণ স্বরে আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আদিব…”

আদিব হুড়মুড় করে নেমে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে। সামনে তাকাতেই সে অবাক। কারণ জায়গাটা কোনো মুরগীর খামার নয়। এক বিপুল সৌন্দর্যে ঘেরা নয়ন জুড়ানো প্রকৃতি। আদিব সবাইকে তাড়া দিয়ে বললো,“এই তোমরা নামো,

আদ্রিতা, চাঁদনী দুজনেই বিরক্ত নিয়ে নামলো। সামনে তাকাতেই দুজনেই অবাক। বিশাল সবুজে ঘেরা এক উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের পাশে ছোট্ট টিনের কুঁড়েঘর। চারপাশে শাঁ শাঁ শব্দ করে বাতাস বইছে। মাথার উপর ধবধবে সাদা আকাশ। কি নিদারুণ সুন্দর প্রকৃতি। আদিব বিস্ময় নজরে চেয়ে। সে বলে,“এটাই কি মুরগীর খামার ভাই?”

ফারিশের বিস্ময়কর হাসি। মলিন মুখের কণ্ঠস্ব। সে বলে,“আমার ছোট ভাই মুরগীর খামারের কথা শুনে মুখ ফুলায়। রাগ করে। সেখানে আমি কি করে যাই আদিব?”

আদিবের চোখে পানি চলে আসলো মুহূর্তেই। সে ফারিশের দিকে তাকিয়ে। ফারিশের মুখ হাসি হাসি। চোখের চাহনি ভিন্ন। আদিব ফারিশকে দেখে মনে মনে ভাবে,“তার ফারিশ ভাই তাকে এত ভালোবাসে কেন? এই ভালোবাসায় কারো নজর না লাগুক। থু থু!’

#চলবে…

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৭

নিঝুম বিকেল। সারাদিন তোড়জোড় আর হৈ-হুল্লোড় করে নিচে মাদুর পেতে বসে ফারিশ আর আদিব। তাদের সামনেই আদ্রিতা আর চাঁদনী ঘুরে ঘুরে সেলফি তুলছে। এই মেয়েদুটোর আর কোনো কাজ নেই বোধহয়। সেই আসার পর থেকেই শুধু সেলফি আর সেলফি। ফারিশরা খাবার বানালো এখানে এসে। ওই যে ছোট্ট কুটির ঘর ছিল সেখানে বসে। ফারিশ আগে থেকেই সব বন্দোবস্তো করে রেখেছিল। দুপুরের লান্স হিসেবে ছিল গরম গরম ভাত, সিদ্ধ আলুর ভর্তা আর ফারিশের হাতের ডিম ভাজা। এই প্রথম ফারিশ নিজ হাতে রান্না করেছে। আদিব তো তা দেখে দারুণ অবাক। খাবার দাবার খুব সাদামাটা থাকলেও আনন্দের রেশ ছিল বেশ। সে কি উৎসবমুখর পরিবেশ! তবে এত উৎসবের মাঝেও আদিব লক্ষ্য করেছে ফারিশ ভাই হঠাৎ হঠাৎ চুপ হয়ে যান। গভীর ভাবনায় মগ্ন হন। যেমন এখন হচ্ছে। ফারিশ ভাই তাকিয়ে তো আছে ডাক্তার ভাবির দিকে তবুও চোখে মুখে কোথাও গিয়ে বিষণ্ণতা। আদিব নড়েচড়ে বসলো। মাদুরের মধ্যখানে রাখা জুসের বোতলটা নিলো। জুস ঢাললো গ্লাসে। এরপর ফারিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ভাই তুমি হঠাৎ হঠাৎ নেতিয়ে যাচ্ছো কেন? ডাক্তার ভাবি কি খুব পীড়া দিচ্ছে?”

ফারিশের হুস হাসে। সে তাকায় আদিবের দিকে। জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে মলিন মুখে বলে,“তেমনটাই।”

আদিব অবাক হয়। বিস্মিত কণ্ঠে আওড়ায়,“মানে?”
ফারিশের ঠোঁটে জড়নো তখনও মলিন হাসি। আদিব সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। কিছু একটা বুঝে। অতঃপর আচমকা ফারিশের হাত চেপে বলে,“কিছু কি হয়েছে ভাই?”

ফারিশ জুসের গ্লাসের চুমুক দেয়। বিষণ্ণ চোখে তাকায়। আগের সেই এক উত্তর তার,“কি হবে?”
আদিবের হঠাৎ বিতৃষ্ণা লাগলো। বারে বারে ফারিশ ভাইয়ের ভণিতা করা এক উত্তরে বিরক্ত বোধ করলো। আদিব কপট রাগ নিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে শুধাল,“আমার সাথে বার বার মিথ্যে বলছো কেন?”

আদিবের রাগ দেখে ফারিশের হাসি আরো চওড়া হয়। চোখ ছলছল করে। দৃষ্টি নত করে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
“তুমি আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছো আদিব?”

ফারিশ মলিনের কণ্ঠস্বরে আদিব রাগের পানি হয়ে গেল। মন ছটফট করলো। খানিকটা আঘাত রাখলো বুকে। সে বলল,
“আমি রাগ দেখাতে চাই নি ভাই।”

ফারিশ সরাসরি তাকালো আদিবের দিকে। মলিন মুখে বিতৃষ্ণার ছোয়া এঁটে বলে,“আমার কিছু ভালো লাগে না আদিব। সব কিছু থেকেও কোথাও যেন সুখ নেই।”

আদিব বিস্মিত কণ্ঠে বলে,“এমনটা কেন হচ্ছে ভাই?”
ফারিশ মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,“জানি না।”
আদিব মাথা নুইয়ে খানিকটা দ্বিধা নিয়ে বলে “বিয়েটা করে কি সুখ হও নি ভাই?”

ফারিশ একঝলক তাকালো আদ্রিতার দিকে। মেয়েটা সেই সূদুরে ছুটে ছুটে ছবি তুলছে। সবুজ ঘাসে পা ডুবিয়ে বসছে। নানানভাবে ভণিতা করে মুঠোফোনে আবদ্ধ করছে নিজের ছবি। গায়ে জড়ানো শুভ্র কামিজে কি নিদারুণ সুন্দরী না দেখাচ্ছে তাকে। ফারিশ পলকবিহীন তার দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিল,“তেমন কোনো ব্যাপার নেই।”

সস্থি পেল আদিব। নিশ্চিতের শ্বাস টেনে বলল,
“তাহলে সমস্যা কি?”
এবার ফারিশ সহজ হলো। নিজের কঠিন হৃদয়টাকে আঁটকে রেখে লাগামহীন বলতে লাগল,
“আমার কেন যেন কিছু ঠিক লাগছে না আদিব। এই ডাক্তার ম্যাডামের আচরণও আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকছে। মেয়েটা জানে আমি একজন মাফিয়া। মাদকের ব্যবসা করি। তাও কিছু বলছে না। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করছে না। এমন আচরণ করছে যেন কিছুই জানে না। ওর তো উচিত আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া। ও তো ডাক্তার, কি করে মেনে নিচ্ছে মানুষের ক্ষতি করা এই মানুষটাকে। আমি যে ওর এই অস্বাভাবিক আচরণে আঘাত পাচ্ছি। ও কেন বুঝচ্ছে না। আমি ভিতর থেকে সস্থি পাচ্ছি না। প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছি না। মাথার উপর পাপের ভাড়ি বোঝাটা আমাকে ভিতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমি ছিন্ন ভিন্ন হচ্ছি। আমার হৃদয় পুড়ে ছারখার হচ্ছে। হাতুড়ি পেটার মতো বুকটা হঠাৎ হঠাৎ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আমি কাতরাচ্ছি। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি কি করবো? বুঝচ্ছি না। পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে দিবো আদিব। আচ্ছা একজন দেশবিরোধী মাফিয়ার শাস্তি কি খুব ভয়ংকর হয়?”আমার শাস্তি কি হবে মৃতুদন্ড। নাকি সারাজীবনের জেল! আমার জেল হলে আমার প্রেয়সী কি ভালো থাকবে? তুমি ভালো থাকবে আদিব? আমিহীনা নিজেকে মেলাতে পারবে তো সমাজের সাথে?”

আদিব থমকে গেল। স্তব্ধ লাগলো চারপাশ। হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো ফারিশের মুখপানে। এসব কি বলছে ফারিশ ভাই? আদিবের আচমকা চোখ ভেসে আসলো। বাচ্চাদের মতো করে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,“তুমি কোথাও যাবে না ভাই?”

ফারিশ হাসলো। সে জানতো তার ছোট ভাইর উত্তর এমনটাই হবে। আদিবের মাথায় হাত বুলালো ফারিশ। আশ্বাস দিয়ে বললো,“ভয় পেও না যাবো না।”

আদিব তাও শান্ত হতে পারলো না। ফারিশ ভাই ছাড়া তার জীবন যে শূন্য। সেই ছোট বেলা থেকে ফারিশ আদিবকে আগলে রেখেছে। নিজে না খেয়ে আদিবকে খাইয়েছে। অস্ত্র হাতে আদিবকে বাঁচাতে খুন করেছে। এই যে এখনকার পরিস্থিতি, ফারিশের নামের পাশে ট্যাগ আসে মাফিয়ার এটার দায়ও অধিকাংশ আদিবের। আদিবের সব এলেমেলো লাগলো হঠাৎ। মাথায় তীব্র জ্বালা পোড়া শুরু হলো। ফারিশ বুঝি আদিবের পরিস্থিতি বুঝলো। সে আলতো হাতে আদিবকে বুঝালো,“আমি এসব কিছু করবো না আদিব।”

আদিব মলিন মুখে আওড়ায়,“সত্যি করবা না তো ভাই?”
ফারিশ চোখের ইশারায় বুঝায়। যার অর্থ,“ভয় নেই করবো না।”

আদিব অত্যাধিক ভীতু একটা ছেলে। বিশেষ করে যখন তার ফারিশ ভাই তার আশেপাশে থাকে না। চারপাশ কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। বিষণ্ণ জাগে মনে,ভয় হতে থাকা এই সুন্দর ধরণীকে। সেই বর্ষণের রাতে ভয়ানক ঘটনা চোখে ভাসে। আদিব আগে নিজের রুমের লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতো। কিন্তু জীবনে চাঁদনী আসার পর সেই ভয় খানিকটা হলেও কমেছে আদিবের। তবুও ফারিশ ভাইহীনা আদিব অচল। আদিব জানে না ভবিষ্যতে কি হবে? যদি সত্যিই সত্যিই ফারিশ ভাই পুলিশের কাছে আত্নসমর্পণ করে দেয় তখন কি হবে? আদিব কিভাবে বাঁচাবে ফারিশকে? আদিবের হঠাৎ ভয় লাগলো। তার সর্বাঙ্গ কাঁপতে শুরু করলো। ফারিশের গম্ভীর আওয়াজ ফের আসলো তখন। তীক্ষ্ণ স্বরে শুধালো ফারিশ,“আমি ভয় পেতে বারণ করেছি। এত সহজে তোমার জীবন থেকে ফারিশের ছায়া সরবে না আদিব। তুমি নিশ্চিত থাকো!”

আদিবের চোখ জ্বলে উঠলো। প্রাণপণ দিয়ে চেষ্টা চালালো। বোঝাতে চাইলো,“ফারিশ ভাই বিশ্বাস করুন আমি ভয় পাচ্ছি না।”

ফারিশ চেয়ে চেয়ে দেখে সেই অসহায় ছেলেটির কান্ড। ক্ষণে ক্ষণে উপলব্ধি করে ছেলেটির ব্যর্থতার মুহুর্ত। মনে মনে হাসে আর বলে,“হচ্ছে না আদিব। হচ্ছে না।”
—–
নিকষকালো অন্ধকারে ভরপুর চারপাশ। ফারিশ নিজ কক্ষে আসে তখন। তারা বাড়ি ফিরে এসেছিল সেই সন্ধ্যায়। এরপর ফারিশ যায় কাজে। ফিরে মাত্র। আদিব নিশ্চয়ই এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফারিশ রুমে ঢুকতেই অবাক। কারণ তার পুরো রুম মোম আর ফুল দিয়ে সাজানো। ফারিশ পুরো রুমে চোখ বুলায়। দেখে জানালার ধারে জর্জেটের লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা। ঘনকালো লম্বা কেশ কোমড় পর্যন্ত ছড়ানো। চোখেমুখে হাল্কা সাজ। বাহিরের চাঁদের আলো এসে লাগছে অাদ্রিতার মুখে। ফারিশ বিস্ময়ের ন্যায় এগিয়ে যায় সেদিকে। পিছন থেকে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে। ছোট্ট প্রশ্ন করে,“এসব কি করেছো বেলীপ্রিয়া?”

ফারিশের বেলীপ্রিয়া চমকে ওঠে তখন। বুকের ধুকপুকানি ক্ষণে ক্ষণে বাড়ে প্রায়। লজ্জায় সর্বাঙ্গ বুঝি ছুঁয়ে যায়। ফারিশ শীতল স্বরে আওড়ায়,
“এত সেজেছো কেন, আমার ধ্বংস চাই?”

আদ্রিতা কোনোরকম ‘না’বোধক মাথা নাড়ায়। লজ্জামিশ্রীত কণ্ঠে শুধায়,“আপনাতে বিলীন হতে চাই।”

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে