এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৮

0
461

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৮

হতভম্ব হয়ে পিছনে তাকালো আদ্রিতা। সামনেই মুখে মাস্ক পড়ে, চুল এলেমেলো করে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে। আদ্রিতা খানিকটা থমকালো। বললো,“কে আপনি?”

ছেলেটি উত্তর দিলো,“কেউ না। তা মাঝরাতে এমন একা একা হেঁটে যাচ্ছেন কোথায়? অসভ্য ছেলে পেলে তুলে নিয়ে গেলে কি করবেন?”

আদ্রিতার রাগ উঠলো। তাও নিজেকে দমালো। বললো,
“আমি মাঝরাতে হাঁটবো না দিনে হাঁটবো আপনার পারমিশন নেয়া লাগবে।”
“তা লাগবে না। কিন্তু সাবধান, অঘটন ঘটতে তো সময় লাগে না।”

কথাটা বলে ছেলেটা এগোলো। আদ্রিতা তড়িৎ তার ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে বললো,“আর এক পা এগোলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।”

ছেলেটি দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,
“বাহ্ সেফটির যন্ত্রটা তো দারুণ।”
“ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে বেশি কথা বললে এক্ষুণি ঢুকিয়ে দিবো ঘাড়ে।”

বলেই যেই না আদ্রিতা এগোতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক পড়া ছেলেটি তার মুখের মাস্ক খুলে থর থর করে বললো,“আপু দাঁড়া আমি সিফাত।”

সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লো আদ্রিতা। এতক্ষণে কণ্ঠটা যেন চেনা চেনা লাগলো। আদ্রিতা তাকালো সিফাতের দিকে। অবাক হয়ে বললো,
“তুই এই সময় এখানে?”

সিফাত হেঁসে ফেললো। বললো,“হুম আমি। চাচাতো ভাইকে তো ভুলেই গেছো।”

আদ্রিতা আচমকা কান ধরে বসলো সিফাতের। সিফাত ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো। বললো,
“আপু লাগছে কিন্তু।”
“মাঝরাতে বড় আপুর সাথে কণ্ঠ পাল্টে ফাজলামো করার আগে মনে ছিল না।”
“ওটা তো একটু মজা ছিল।”
“এটা একটু মজা। আমি যদি ইনজেকশনটা দিয়ে বসতাম তখন।”
“দেও নি তো।”
“দিলে কি হতো জানিস?”
“কি আর হতো জ্ঞান হারিয়ে এখানে পড়ে থাকতাম।”

আদ্রিতা চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো সিফাতের দিকে। সিফাত বললো,
“রাগ করো না আপু। সেই সন্ধ্যায় আসলাম তোমাদের বাসায় জানতাম তুমি থাকবে না। অপেক্ষায় ছিলাম এখনও খাই নি জানো। তোমার অপেক্ষা করতে করতে বেজে গেলো বারোটা তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার চেম্বারে এসে সারপ্রাইজ দিবো। বাসা দিয়ে বের হলাম একটায় চাচি কিছুতেই আসতে দিতে চায় নি। তাও এসেছি। এসে দেখি তুমি নাই মাথাটাই খারাপ হয়ে গেল। গাড়ি নিয়ে আবার ব্যাক করি এখানে এসে দেখি তুমি একা একা হাঁটছো ব্যস শয়তানে লাড়া দিল। মাস্ক পড়ে, চুল এলেমেলো করে সোজা তোমার পিছনে। কেমন দিলাম ভয় পেয়েছিলে নিশ্চয়ই।”
“ভয় পাই নি। তবে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।”

হাসে সিফাত। ততক্ষণে আদ্রিতা কান ছেড়ে দিয়েছে সিফাতের। সিফাত আর আদ্রিতা হাঁটছে। সিফাত বললো,
“আপু হাঁটছিস কেন আমার কাছে গাড়ি আছে তো। আর তুমিও বা মাঝরাতে এভাবে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছো কেন? তোমার তো গাড়ি আছে গাড়ি কই?”
“আসলে আজ দু’দিন হলো গাড়িটা নষ্ট হয়েছে। ড্রাইভারকে বলেছি সারাতে। কাল চলে আসবে।”
“তাই বলে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাবে।”
“আরে বিষয়টা তা না আমার আবার এই রাতের বেলা জোৎস্না দেখে দেখে বাড়ি ফিরতে দারুণ লাগে। ভেবেছিলাম আর একটু সামনে গিয়ে গাড়ি ধরবো কিন্তু তার আগেই তো তুই,

আদ্রিতার কথার মাঝেই বলে উঠল সিফাত,
“না আপু এটা তুমি ঠিক করো নি। এভাবে একা একা রাতের বেলা চলাফেরা করা ঠিক হয় নি তোমার। যতই হোক তুমি তো মেয়ে আপু, সবই তো জানো।”
“আরে চিন্তা নিচ্ছিস কেন দেখলি না সেফটির জন্য সঙ্গে ইনজেকশন নিয়ে ঘুরি। আরও একটা জিনিস আছে আমার। দেখবি?”

এই বলে ব্যাগ থেকে একটা স্প্রের বোতল বের করলো আদ্রিতা। সিফাতকে দেখিয়ে বললো,“এটা কারো মুখে স্প্রে করলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে।”

আদ্রিতা আর সিফাত উল্টোদিকে হাঁটা দিল। সিফাত বললো,“সবই ঠিক আছে তাও আপু এভাবে একা একা বের হবে না। ধরো তুমি হাঁটছো আচমকা পিছন একটা গাড়ি এসে তোমার সামনে দাঁড়ালো তুমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। তখন এইসব জিনিস কি তোমার কোনো কাজে আসবে বলো।”

সিফাতের কথায় টনক নড়লো আদ্রিতার। তার মনে পড়লো কাল রাতের ঘটনা ফারিশের তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মুহুর্ত। সত্যিই তো তখনও এসব তার কাছে ছিল। কিন্তু সে কিছু করতে পারে নি। আদ্রিতার ভাবনার মাঝেই সিফাত আবার বললো,“আর কিন্তু এভাবে একা একা হাঁটবে না আপু।”

আদ্রিতা মৃদু হাসলো। সিফাতের গাল চেপে বললো,“ আচ্ছা ছোট ভাই আর হাঁটবো না।”

সিফাত খুশি হলো। অতঃপর আদ্রিতা আর সিফাত উঠে বসলো গাড়িতে। সিফাত গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদ্রিতা প্রশ্ন করলো,“তা বাসায় কি তুই একাই এসেছিস নাকি লায়লা’কেও এনেছিস।”

সিফাত গাড়ি চালাতে চালাতে বললো,
“ধুর ওর কথা বাদই দেও আপু লায়লা আপুকে আসতে বলে ছিলাম। সে বলে কি জানো?”
“কি?”
“তার নাকি তোমাদের বাড়িতে আসতে লজ্জা লাগে। রাফিন ভাইয়ের সাথে প্রেম করার সময় লজ্জা পেল না ওদিকে তোমাদের বাড়িতে আসতে নাকি লজ্জা লাগে। ফাউল মাইয়া বুঝলে আপু।”

আদ্রিতা হেঁসে ফেললো। সিফাত ইন্টার শেষ করে কেবল অর্নাসে ভর্তি হয়েছে। রাফিনের চেয়ে দু’বছরের ছোট। তবে আদ্রিতার সাথে খুব মিশুক টাইপ সে। আদ্রিতার হাসির মাঝে সিফাত আবার বললো,“আমি ভেবে পাই না আপু লায়লা আপুর মতো ওমন অলস টাইপ মাইয়াডারে রাফিন ভাই কি দেখে পছন্দ করলো। তুমি দেখে নিও আপু বিয়ের পর রাফিন ভাইয়ার জীবন পুরো তেজ পাতা করে দিবে।”

আদ্রিতার হাসি থামলো না। সে হাসতে হাসতে বললো,
“এভাবে বলিস না দেখবি বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে গেছে।”
“হইলে ভালো না হলে রাফিন ভাইর জীবন গেছে আপু।”

আবারও হাসে আদ্রিতা। এক্ষেত্রে তার কিছু বলার নেই। এটা পুরোপুরিই রাফিনের সিদ্ধান্ত।”
—–
রাত প্রায় তিনটে। নিজের বিছানার পাশের চেয়ারে বসে আছে ফারিশ। হাতে সিগারেট আর পাশের টেবিলের ওপর মদের গ্লাস। তার খুব রাগ লাগছে। বার বার না চাইতেই ওই মেয়েটার সাথে তার দেখা হচ্ছে। আর দেখা হতে দেয়া যাবে না। এক সপ্তাহ পর যে যাওয়ার কথা বলেছে তা সে যাবে না। লাগলে নিজে নিজেই সেলাই কাটবে তাও মেয়েটার কাছে আর যাবে না। রুমের দরজায় নক করলো কেউ। ফারিশ মদের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বললো,
“তুমি এখনো ঘুমাও নি আদিব?”

আদিব দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। ফারিশের সামনে গিয়ে বললো,
“একটা কথা ছিল ভাই খবরটা মাত্রই পেয়েছি।”

ফারিশ সিগারেটের টান দিয়ে ধুঁয়া উড়ালো। আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিছানায় বসো।”

আদিব বসলো। ফারিশ বললো,
“এখন বলো কিসের খবর?”
“ভাই সেই পালিয়ে যাওয়া নতুন যুক্ত হওয়া ছেলেটার হদিস পেয়েছি ছেলেটা কক্সবাজার আছে। কাল সকালের মধ্যেই ধরে ফেলতে পারবো।”
“খুব ভালো।”

আদিব কিছুটা দোনামনা হয়ে বললো,
“ভাই আর একটা খবর ছিল?”
“কি? বলো।”
“ভাই কক্সবাজারের গাছগুলোর নাকি হঠাৎই পচন ধরছে।”

সঙ্গে সঙ্গে ফারিশের মুখভঙ্গি পাল্টে গেল। সে বললো,
“হঠাৎ এমনটা হচ্ছে কেন?”
“বুঝতে পারছি না ভাই। একবার কি যাবেন কক্সবাজার?”

ফারিশ তিন সেকেন্ডের মতো চুপ থেকে বললো,“হুম যাবো।”

আদিব বললো,
“তবে কি কক্সবাজার গিয়েই নতুন ছেলেটার সাথে কথা বলবেন ভাই নাকি এখানে নিয়ে আসবো।”
“ওখানের গোডাউনে আঁটকে রাখতে বলো আমরাই যাবো।”
“ঠিক আছে ভাই। এখন তাহলে ঘুমান।”
“হুম তুমিও যাও।”
“আচ্ছা।”

আদিব চলে গেল। ফারিশ মদের গ্লাসে চুমুক দিলো। কেউ তো আছে যে চাইছে ফারিশকে মেয়ে পাচারে জড়িত করতে তাকে ফাঁসাতে কিন্তু কে সে? ফারিশ তাকে ছাড়বে না কিছুতেই ছাড়বে না। ফারিশকে মিথ্যে কাজে ফাঁসানোর পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা সে হারে হারে বুঝাবে। ফারিশের সাথে গান্দারির ফলও দেখিয়ে ছাড়বে। ফারিশকে চিনতে ভুল করেছে তারা। ভয়ংকর ভুল! আর ফারিশের কাছে ভুলের একটাই শাস্তি ভয়ংকর মৃত্যু!’
—-
তুমুল উত্তেজিত হয়ে আদ্রিতার কেভিনে ঢুকছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। সবাইকে একসাথে ঢুকতে দেখে আদ্রিতা হতভম্ব হয়ে বললো,“কি ব্যাপার তোরা একসাথে এভাবে এখানে? কি হয়েছে?”

তখনই মৃদুল উচ্চ স্বরে চেঁচিয়ে বললো,“দোস্ত কক্সবাজার যামু?”

আদ্রিতা তড়িৎ চমকে উঠলো। বললো,“হঠাৎ কক্সবাজার। কেন?”

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

#TanjiL_Mim♥️.গল্পের

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে