এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৭

0
445

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৭

“আপনার যদি আমাকে দেখা শেষ হয়ে থাকে তাহলে বলবেন প্লিজ। এভাবে কতক্ষণ আপনায় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো?”

আচমকাই এক পুরুষালির কণ্ঠে এহেম কথা শুনে চমকে উঠলো চাঁদনী। দ্রুত আদিবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো,“আই এক্সট্রিমলি সরি আমি বুঝতে পারি নি।”

আদিব তিন সেকেন্ড সময় নিয়ে বললো,“ইট’স ওকে। কিন্তু কাল থেকে একটু খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিবেন এভাবে হুটহাট কোনো ছেলের গায়ে গিয়ে পড়লে সে তো আলুভর্তা হয়ে যাবে।”

আদিবের কথা শুনে চোখ মুখের ভাব পাল্টে গেল চাঁদনীর। রাগী রাগী কণ্ঠে বললো,
“আপনি কি আমায় অপমান করছেন?”
“মোটেও না।”
“আপনি তো ভাড়ি পাঁজি মানুষ।”

আদিব হাসে। কেন যেন মেয়েটাকে রাগাতে তার দারুণ লাগছে। প্রথম দেখায় এমনটা করা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত ধরতে পারছে না আদিব। কিন্তু চাঁদনীর চোখ দুটোর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না আদিব। কিছু একটা চলছে তার মাঝে।”
—–
“আচ্ছা আপনার কি সত্যি ব্যাথা ট্যাথা করছে না? নাকি আমার সাথে ভাব নিচ্ছেন?”

ফারিশ বিরক্ত হলো আদ্রিতার কথা শুনে। সে বিরক্ত নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাব নেয়াটা ফারিশের পারসোনালিটির সাথে যায় না তাই বাজে না বকে নিজের কাজ করুন।”

আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তুলো দিয়ে ফারিশের পিঠটা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হলো। নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে শান্ত স্বরে বললো,
“একটা কথা ছিল মিস্টার বখাটে?”

ফারিশ চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
“আমি বখাটে নই।”
“আচ্ছা শুনন কাল রাতের আমার ব্যবহারের জন্য আমি খুব দুঃখিত আসলে আমি খুব ঘাবড়ে গিয়ে ভুলভাল বলে ফেলি। আমি সত্যি জানি না কাল রাতে আমার ঠিক কি হয়েছিল আমি খুব অনুতপ্ত।”

ফারিশ হাসে। বলে,
“বাহ্ দারুণ তো। কাল আপনি ভয়ে ভুলভাল বকছিলেন আর ভাবটা এমন নিচ্ছিলেন যেন সাহসের বস্তা নিয়ে ঘুরেন।”
“দেখুন এভাবে বলবেন না আপনায় আমার সত্যি ভয় লাগে আপনি সত্যি মাফিয়া নন তো।”
“আমায় দেখে তা মনে হয়।”
“ঘরে বন্ধুক রাখেন, আবার মানুষ খুন করার হুমকিও দেন তাহলে মনে না হওয়ার কারণ তো দেখি না।”
“আমি কি তা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।”

আদ্রিতা চুপ হয়ে গেল। ফারিশের কথাটা খানিকটা গায়ে লাগলো তার যদিও গায়ে লাগার মতো কথা নয়। একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কেনই বা ফারিশ তার নিজ কাজ বা পেশা সম্পর্কে বলবে।’

নীরবতা চললো দুজনের মাঝে। আদ্রিতা ফারিশের পিঠ সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দিল। বললো,
“এবার উঠতে পারেন। সাতদিন পর আবার আসবেন। সেলাই কাটার জন্য।”

ফারিশ উঠলো আস্তে আস্তে তার শার্টটা গায়ে জড়ালো। বললো,
“না আসলে হবে না।”
আদ্রিতা তার চেয়ারে বসতে বসতে বললো,“আপনি যদি একা একা সেলাই কাটতে পারেন তাহলে আসতে হবে না।”

ফারিশ কিছু বলে না। আদ্রিতা প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষধের নাম লিখতে লিখতে বললো,“নিজের যত্ন নিবেন। যে ঔষধগুলোর নাম লিখছি তা রেগুলার ব্যবহার করবেন। নিজের প্রতি যত্নশীল হবেন। আপনায় দেখে মনে হয় না আপনি নিজের একটুও যত্ন করেন।”

ফারিশ আদ্রিতার সামনের চেয়ারে বসলো। মৃদু হেসে বললো,
“নিজের যত্ন নেই আমি।”
“কিন্তু আপনায় দেখে তা মনে হয় না। আপনার প্রিয় মানুষদের বলবেন আপনার যত্ন নিতে।”

ফারিশ কিছু বলে না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে আচমকা একটা প্রশ্ন করে বসে আদ্রিতাকে। সে বলে,
“আমাকে কি ভালোবাসা যায় ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা তড়িৎ চমকে উঠলো ফারিশের এহেম প্রশ্নে। সে থতমত খেয়ে বললো,
“কেনো যাবে না?”
“না আমার কেন যেন মনে হয় আমাকে ভালোবাসা যায় না।”
“এমনটা মনে হওয়ার কারণ।”
“কারণ জানা নেই শুধু মনে হয় আমাকে ভালোবাসা যায় না।”
“পৃথিবীর সব মানুষকেই ভালোবাসা যায় শুধু সেই মানুষটাকে ভালোবাসার মর্মতা বুঝতে হয়।”
“ভালোবাসা নিয়ে আপনার মনে হয় অনেক জ্ঞান আছে।”

আদ্রিতা হাসে। বলে,“না তেমন কোনো ব্যাপার নেই।”

ফারিশ উঠে দাঁড়ায়। কেমন একটু করে যেন বলে,
“আমার সামনে আর আসবেন না। আপনাকে কেন যেন আমার ভালো লাগে না।”

আদ্রিতা আবার থমকে যায়৷ এই ছেলেটা বার বার তাকে সামনে যেতে বারণ করে অথচ সে নিজেই গত তিনদিন যাবৎ তার কাছে আসছে। তাকে তুলেও নিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত! আদ্রিতার কড়া কণ্ঠে বলতে ইচ্ছে করলো,“শুনুন মিস্টার বখাটে আমি একবারও আপনার কাছে যায় নি উল্টো আপনি নিয়ে গেছিলেন।”

কিন্তু কথাটা আর বলা হলো না। আদ্রিতার খারাপ লাগলো ফারিশের শেষ কথাটার জন্য। সে কি সত্যি ভালো লাগার মতো একজন মানুষ নয়। অনেকেই তো বলে, তাকে তাদের ভালো লাগে। কত পেশেন্ট আদ্রিতার অপেক্ষায় থাকে। তার সাথে কথা বলতে চায়। অথচ এই ছেলেটা বললো তাকে ভালো লাগে না। কি এমন করলো সে ফারিশের সাথে যে তাকে খারাপ লাগছে ফারিশের কাছে। তার মতে ফারিশের তাকে ভালো খারাপ কোনোটাই লাগা উচিত না। তাহলে কেন বললো ভালো লাগে না?” আদ্রিতা ঠায় বসে রইলো। গভীর ভাবনায় মগ্ন।

আদ্রিতার রুমের দরজাটা খুলতেই ফারিশ দেখলো আদিব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করছে। মেয়েটা বলছে,
“শুনুন মিস্টার খবিশ আমি মটেও মোটা নই আপনার গায়ে শক্তি নেই তা বলতে পারেন না।”
“হা কত যে মোটা নন তা তো দেখতেই পাচ্ছি আর দশ মিনিট অভাবে থাকলে আমি তো নাই হয়ে যেতাম।”

চাঁদনী রাগে ফুসলো ছেলেটা পদে পদে তাকে অপমান করছে। চাঁদনী জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো,“আমার মতো ছিলিম বডি ফিগারের মেয়েটাকে ধরতেই আপনার হাওয়া বেরিয়ে গেল। আপনি জানেন পুরুষ মানুষদের গায়ে কত শক্তি থাকে। তারা চাইলে আমার মতো দু’চারটে মেয়েকে তুড়ি মেরে কোলে তুলে নিতে পারে আর সেখানে আপনি সামান্য আমাকে ধরতেই এত কথা বলছেন। আপনাকে পুরুষ বলতেও লজ্জ লাগছে।”

এবার আদিবের রাগ উঠলো। তার পুরুষত্ব নিয়ে কথা বলছে মেয়েটা। আদিব কিছু বলবে তখনই ভাড়ি কণ্ঠে বললো ফারিশ,“আদিব।”

আদিব চমকে উঠলো। মুহুর্তের মধ্যে সে পাল্টে গেল। সে প্রায় ভুলতেই বসে ছিল এখানে সে কেন এসেছে। আদিব দ্রুত এগিয়ে আসলো। থরথর করে বললো,“আপনার হয়ে গেছে ভাই?”

ফারিশ মাথা নাড়িয়ে বললো,“হ্যাঁ চলো।”

এমন সময় দরজার কাছে আসলো আদ্রিতা। কারণ ফারিশ প্রেসক্রিপশন না নিয়েই চলে যাচ্ছিল। আদ্রিতা বললো,“আপনি প্রেসক্রিপশন না নিয়েই চলে যাচ্ছেন কেন?”

ফারিশ বিরক্ত নিয়ে পিছন ঘুরলো। মেয়েটাকে একদমই তার সহ্য হচ্ছে না। ফারিশ একবার আদ্রিতার মুখ আর একবার আদ্রিতার হাতে থাকা প্রেসক্রিপশনটা দেখে আদিবকে বললো,“নিয়ে আসো দ্রুত।”

ফারিশ বড় বড় পা ফেলে চলে গেল। আদিব আদ্রিতার রোগী দেখার ফি দিয়ে আর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে চলে গেল। চাঁদনী থ মেরে দাঁড়িয়ে ছিল সামনে। ফারিশকে কে সে দেখেছে। অবাক হয়েছে প্রচুর এই ছেলে এখানে কি করছিল?”

আদ্রিতা তাকালো চাঁদনীর দিকে। বললো,“তুই ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিল এদিকে আয়।”

চাঁদনী ঢুকলো। বললো,
“তোকে নিতে আসছিলাম কিন্তু ওই ছেলেটা এখানে কেন?”
“আহত ছিল চিকিৎসা করলাম।”

উত্তরে এতটুকু বললো চাঁদনী, “ওহ।”
—-
হসপিটাল থেকে বের হতেই একটা এম্বুলেন্সের সাথে সাক্ষাৎ হলো ফারিশ আর আদিবের। তাদের পাশ কাটিয়েই চলে গেল এম্বুলেন্সটি।

মৃদুলের ডাক পড়লো। একটা মৃত মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে হসপিটাল। জঙ্গলের মধ্যে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে তাকে। এমনিতেই আজকের আড্ডায় আদ্রিতা না আসায় খুব একটা জমে নি তার ওপর চাঁদনী আদ্রিতাকে ডাকতে গিয়েও লাপাত্তা। মৃদুল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো,“আজকের আড্ডা তবে এই পর্যন্তই কাল আবার দেখা হবে।”

বাকি সবাইও হাসলো। রনি বললো, “হুম যা এখন। মাইয়া মানুষের মৃত্যুর খবরাখবর নে।”

মৃদুল আফসোসের স্বরে বললো,“হ আমার জীবনে খালি মরা মাইয়াই আছে জেতা মাইয়া একটাও আইলো না।”

আশরাফ বলে,“আসবে আসবে অপেক্ষা কর।”
মৃদুল যেতে বললো,“হ আসতে আসতে আমিই না বুড়া হইয়া যাই। গেলাম।”

বলতে বলতে চলে গেল মৃদুল। এরপর একে একে সবাই বের হলো। আদ্রিতা আর আসলো না। সবাইকে মেসেজে সরি বললো আসতে না পারার জন্য। তারাও কিছু মনে করলো না। যতই হোক মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজটা আগে বাকি সব পড়ে।”
—-
রাত প্রায় দু’টো। নিরিবিলি রাস্তায় একা একা হাঁটছে আদ্রিতা। আজ তার কিছু ভালো লাগছে না। এই মুহূর্তে ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। তবুও আদ্রিতা বুঝচ্ছে তার কিছু ভালো লাগছে না। পুরো রাস্তাঘাট নীরব কেউ নেই আশেপাশে। আদ্রিতা হাঁটছে একটা ব্রিজের ওপর দিয়ে। হঠাৎই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল,“হেই সুন্দরী কোথায় যাচ্ছো একা একা?”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে