এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#অন্তিম_পর্ব (প্রথমাংশ)
এরপরের সময় বেশ দ্রুতই কাটলো। চোখের পলকে দু-মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। প্রত্যাশা আর নাওয়াস এখন চুটিয়ে প্রেম করছে। নাওয়াস আগের থেকেও দায়িত্ববান হয়ে উঠেচ্ছে। উঠবে না-ই-বা কেন। প্রত্যাশার কড়া শাসনে থাকে। দায়িত্ববান না হয়ে উপায় আছে? এদিকে প্রত্যাশার বিয়ে দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন পূর্ব ইমাম। আপাত্ত নিজের সকল দুশ্চিন্তাকে পাশে রেখে তিনি উৎফুল্ল চিত্তে ঘরে বসে আছেন। কেননা আজ ওনার ছোটো বেলার বন্ধু এসেছেন। যার সাথে এক যুগ পর সাক্ষাৎ হয়েছে। বিশ বছর আগে ওনার প্রিয় বন্ধু বিদেশ চলে গেছিলেন। প্রথম দিকে যোগাযোগ হলেও। কালের পরিক্রমায় পরবর্তীতে আর হয়নি। কয়দিন আগেই ওনার বন্ধু দেশে ফিরেছেন। এবং দেশে ফিরেই পূর্ব ইমামকে খুঁজে ওনার বাড়িতে এসেছেন। এখন দুই বন্ধু মিলে স্মৃতিচারণ করছে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই মিনা এসে ওনাদের নাস্তা পানি দিয়ে গেছেন। হুট করে আসায় তেমন আহামরি কিছু করতে না পারলেও কয়েক পদের মুখোরচক নাস্তা বানিয়েছেন মিনা।
“ভাবি এত সব কিছুর কী দরকার ছিলো?”
মিনা হালকা হেসে বলেন,
“এতো সামান্য ভাইয়া। আপনি কত বছরপর এলেন।”
উত্তরে পূর্ব ইমামের বন্ধু জামাল খান হাসলেন। মিনা নাস্তা করতে বলে চলে যায়। পূর্ব ইমামকে একটু চিন্তিত লাগে। তাই জামাল খান শুধান,
“কী ব্যাপার পূর্ব তোকে এমন চিন্তিত দেখাছে কেন? কত বছর পর আমাদের দেখা। সেই তুলনায়ই তোর চোখ মুখে উচ্ছ্বাস কম দেখছি। আমার আসাই কি তুই খুশি হসনি?”
বন্ধুর প্রশ্নে পূর্ব ইমাম তড়িৎ বললেন,
“কি যে বলিস না তুই? তোকে দেখে আমি খুশি হবো না?”
“তাহলে?”
“আসলে আমার মেয়েটাকে নিয়ে বড্ড দুশ্চিন্তায় আছি।”
“কেন?”
পূর্ব ইমাম বুক ভরে ভারী শ্বাস ছেড়ে বললেন,
“মেয়ের বাবাদের যা চিন্তা হয়। বুঝছিস তো… মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না।”
“তুই তোর মেয়ের বিয়ে দিতে চাইচ্ছিস?”
“হুম!”
জামাল খান আগ্রহর সহিত বলেন,
“আমার ছেলের কথা তোর মনে আছে?”
“হুম আছে।”
“আমিও আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাইছি। কিন্তু মন মতো কোনো মেয়ে পাচ্ছি না। তুই যদি রাজি থাকিস,তাহলে তোর মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিতে পারি। এতে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কও গাঢ় হবে।”
জামাল খানের নিঃসৃত বাক্যে পূর্ব ইমামের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পরক্ষণে মুখশ্রী আঁধার হয়ে আছে। নিভে যাওয়া কণ্ঠে বললেন,
“আমার মেয়ে একটু অন্য রকম। মানে স্বাধীন চিন্তা ধারার। নিজের একটা ছোটো খাটো ব্যবসাও চালাই। আমার সাহায্য ছাড়ায় করেছে। ও চাই ওর এই স্বপ্ন নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে। তোর ছেলেকে এমন কাউকে বিয়ে করতে চাইবে?”
জামাল খান এক গাল হেসে বলেন,
“আরে আমার ছেলে তো এমন মেয়েকেই বিয়ে করতে চাই। সে কারণেই তো ওর কাউকে পছন্দ হচ্ছে না।”
এবার যেন পূর্ব ইমাম আগ্রহ পেলেন। আগ্রহের সাথে প্রত্যাশার ব্যাপারে অনেক কিছু জানালেন বন্ধুকে। মোটা-মুটি ভাবে বিয়ে পাক্কা করে ফেললেন। আর ঠিক করলেন। এবার আগেই কাউকে কিছু বলবে না। তিনি খোলা খুলি ছেলের সাথে কথা বলবেন। পরে প্রত্যাশাকে জানাবেন। কেননা এর আগের যত সম্বোন্ধ ভেঙেছে। তার পিছে নিশ্চয়ই কারো হাত আছে। হয়তো কেউ চাই না প্রত্যাশার বিয়ে হোক। কেউ হিংসে করেই পাত্রপক্ষকে ভুল-ভাল বুঝিয়েছে। তাই এবার তিনি বিষয়টা গোপনে করার সিদ্ধান্ত নেন।
.
.
.
দিনটা শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। নাওয়াস আর প্রত্যাশার বিষয়ে নাওয়াসের বাড়ির সবাই জানে। কামাল মাহমুদ প্রত্যাশাকে দেখতে চেয়েছেন। তাই আজ প্রত্যাশাকে নাওয়াস নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। মনে মনে প্রত্যাশা ভিষণ নার্ভাস। প্রত্যাশা বাড়িতে বলেছে,আজ ও এক বন্ধুর বাড়ি যাবে। প্রত্যাশা রেডি হচ্ছিলো। সেই সময় পিউ আসে। ঘুরে ঘুরে তিক্ষ্ণ নজরে প্রত্যাশাকে অবলোকন করে একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছো না-কি শ্বশুড় বাড়ি?”
পিউয়ের নিঃসৃত বাক্যে প্রত্যাশা থতমত খায়। আমতা আমতা করে বলে,
“ককী সব বলছিস? ততুই কিন্তু বেশি বুঝে গেছিস।”
“না মানে তুমি তো কখনও এমন করে সাজগোজ করো না। তাই বলাম আর-কি!”
“সাজি না। আজ সাজতে ইচ্ছে হয়েছে সেজেছি।”
“হুম! সাজো ভালো করে সাজো। যাতে এক দেখাতেই তোমার শ্বশুড় রাজি হয়ে যায়।”
প্রত্যাশা চমকে ওঠে। বলে,
“কী তখন থেকে শ্বশুড় শ্বশুড় করছিস? ততুই যা তো এখান থেকে…”
“তুমি নাওয়াস ভাইয়ার সাথে প্রেম করছো তাই না?”
পিউয়ের বাক্যে প্রত্যাশা হতবিহ্বল হয়। পিউয়ের দিকে বিস্মিত লচোনে চায়। প্রত্যাশার এহেন দৃষ্টিতে পিউ ফিক করে হেসে ফেলে। বলে,
“ভয় পেলে আপু? আমি কিন্তু জানি তুমি আর নাওয়াস ভাইয়া প্রেম করছো। নিহান বলেছে আমাকে।”
বিস্ময়ে প্রত্যাশার মুখ হা হয়ে যায়। পরক্ষণে পিউয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
“তুই কিন্তু দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস।”
পিউ হাসা থামিয়ে বলে,
“তুমি যায় বলো, নাওয়াস ভাইয়া আর তোমার জুটি কিন্তু পুরো হিট জুটি।”
“পিউ আস্তে! কেউ শুনলে কী হবে বুঝতে পারচ্ছিস?”
পিউ সতর্ক দৃষ্টিতে আশেপাশে দেখলো। প্রত্যাশা রেডি হয়ে কাধে ব্যাগ তুলে নিলো। তারপর পিউকে এখনই বিষয়টা কাউকে জানাতে বারণ করে বেরিয়ে গেলো।
প্রত্যাশা নাওয়াসদের বাড়ির সামনে নামল। এর আগে একবার এই বাড়িতে এসেছিলো। তবে সেটা সাহায্য করতে। কিন্তু আজ… প্রত্যাশা জ্বিভের সাহায্যে নিজের শুষ্ক ওষ্ঠ জোড়া ভিজিয়ে নিলো। প্রত্যাশার প্রচুর নার্ভাস লাগছে। ধীরুজ কদমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। কলিং বেল চাপতে নিয়েও চাপলো না। বরং উল্টো ঘুরে চলে যেতে নেয়। সেই সময় কট করে দরজা খুলে যায়। প্রত্যাশা চমকিত পিছে ফিরে। নজরে আসে নাওয়াসকে। যার পরনে সাদা টি-শার্ট আর টাওজার। এমন নরমাল লুকে প্রত্যাশা নাওয়াসকে আগে দেখেনি। ছেলেটার ওষ্ঠ ধারে লেপ্টে রয়েছে হাসি। প্রত্যাশা থমকায় কয়েক মুহূর্তের জন্য। নাওয়াস ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“আমাকে দেখা হলে ভিতরে এসো।”
নাওয়াসের কথায় প্রত্যাশা ধ্যান ছোটে। একেই নার্ভাস ছিলো। তার ওপর এরূপ বাক্য। প্রত্যাশা অপ্রস্তুত হয়। নাওয়াস বলে,
“কী হলো আসবে না? এক মিনিট তুমি কী ঘুরে যাচ্ছিলে?”
নাওয়াস কথা বলতে বলতে বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রত্যাশা এদিক ওদিক চোখ ঘুরায়। নাওয়াসের কপালে ভাঁজ পড়ে।
“ঘুরে কেন যাবো? একটু বাইরে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম নিহানের জন্য কিছু নিয়ে আসি তাই…”
প্রত্যাশার অগোচ্ছালো উত্তর। নাওয়াসের ভ্রু আরও গুটিয়ে আসে। বলে,
“আর ইয়্যু নার্ভাস!”
প্রত্যাশা নাওয়াস মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে চাইল। প্রত্যাশার দৃষ্টিতেই নাওয়াসের যা বোঝার বুঝে যায়। হেসে বলে,
“নার্ভাস হওয়ার কী আছে? তোমার সাথে নার্ভাস বিষয়টা যায় না।”
“আমি তো আঙ্কেলের সাথে আগে কখনও দেখা করিনি। উনি যদি আমাকে পছন্দ না করেন?”
“আরে রিলেক্স! তোমাকে পছন্দ কেন করবে না? তুমি কী খারাপ না-কি?”
“সেটা না কিন্তু…”
“আমি আছি তো এতো চিন্তা করো না।”
নাওয়াসের নিঃসৃত বাক্যে প্রত্যাশা নাওয়াসের চিত্ত পানে চাইল। নাওয়াসের এই একটা বাক্যে প্রত্যাশার মাঝের সকল ভয় দ্বিধা মুহূর্তেই কেটে যায়। প্রত্যাশা শুধায়,
“তুমি কী করে জানলে দরজার বাইরে আমি আছি?”
“ব্যালকুনি থেকে দেখতে পেয়েছিলাম। তাই তো আগে আগে দরজা খুললাম। তোমায় চমকে দিতে।”
প্রত্যাশা হাসে। নাওয়াস প্রত্যাশাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়। প্রত্যাশাকে দেখে রিনা আর নিহান হাসি মুখে এগিয়ে আসে।
“কেমন আছো আপু উফসসস্ স্যরি ভাবি…”
নিহানের কথায় প্রত্যাশা বিবর্তবোধ করে। রিনা বিষয়টা বুঝে হেসে বলে,
“আসো! সেই সকাল থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। অবশেষে তুমি আসলে।”
প্রত্যাশা হাসে। বলে,
“আপনি কেমন আছেন আন্টি?”
“আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো আছি। দেখেছো তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে কথা বলছি।”
রিনা প্রত্যাশাকে হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসায়। নাওয়াস প্রত্যাশার মুখো মুখি সোফায় বসে। নিহান, রিনা আর প্রত্যাশা গল্প করে। নাওয়াস ওদের গল্প শোনে। নিহান উঠে গিয়ে নাওয়াসের পাশে বসে বলে,
“ভাই ভাবিকে পেয়ে মা তো আর আমাদের পাত্তায় দিচ্ছে না।”
নিহানের কথায় নাওয়াস হাসে। সেই সময় বাড়িতে কামাল মাহমুদ প্রবেশ করেন। সদর দরজা খোলায় ছিলো। বসার ঘর থেকে কথার আওয়াজও পান। তিনি সরাসরি বসার ঘরেই যান। কামাল মাহমুদকে প্রথমে নিহান খেয়াল করে। বলে,
“বাবা! তুমি কখন এলে? আমরা তোমার অপেক্ষায় করছিলাম।”
নিহানের বাক্যে সবাই কামাল মাহমুদের দিকে তাকায়। প্রত্যাশাও চাইল। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। কামাল মাহমুদ সালামের জবাব দিয়ে এগিয়ে আসেন। কামাল মাহমুদের গুরুগম্ভীর মুখশ্রী দেখে প্রত্যাশার নার্ভাসনেস ফিরে আসে। ভারিক্কি স্বরে কামাল মাহমুদ প্রশ্ন করেন।
“তোমার সাথে নাওয়াসের সম্পর্ক আছে?”
প্রত্যাশার মাঝে একরাশ অস্বস্তি চলে আসে। মাথা নামিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে,
“জ্বি!”
“তোমার নাম?”
“জ্বি প্রত্যাশা ইমাম!”
“তোমার বাবার নাম?”
প্রত্যাশা নার্ভাস বুঝে নাওয়াস বলে,
“বাবা তোমাকে আমি কাল রাতে বললাম না? ও ঔষধ ব্যবসায়ী পূর্ব ইমামের মেয়ে…”
নাওয়াসের কথায় কামাল মাহমুদ বললেন,
“আমি তোমার সাথে কথা বলছি না।”
নাওয়াস কিছু বলতে নিলেই রিনা ইশারায় চুপ করিয়ে দেন। প্রত্যাশা মাঝে এবার কিঞ্চিৎ ভয় কাজ করে। পূর্ব ইমাম নিজের কণ্ঠে আরও গাম্ভীর্য এনে প্রশ্ন করেন।
“তুমিই সেই মেয়ে যে আমার ছেলে কে থা’প্প’ড় মে’রে ছিলে?”
নাওয়াসের বাবার কথায় প্রত্যাশা হকচকায়। একরাশ অস্বস্তি, ভয় আর লজ্জা ওকে জেকে ধরে। এদিক ওদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। নতজানু হয়ে কোনো মতে কণ্ঠ হতে শব্দ বার করে, ধীম স্বরে বলে,
“জ্বি!”
“তোমার থা’প্প’ড়ে যদি ওর বখাটেগিরি দূর হয়। তাহলে নিয়ম করে রোজ দু-চারটে থা’প্প’ড় দেবে।”
প্রত্যাশা হতভম্ব হয়ে কামাল মাহমুদের আনন পানে চাইলো। নিহান তো শব্দ করে হেসে ওঠে। রিনাও মুখ টিপে হাসে। নাওয়াস নিজের বাবার এহেন বাক্য কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়। প্রত্যাশা এখনও বিস্ময় ভাব কাটাতে পারেনি। তখন নাওয়াস বলে,
“তুমি কেমন বাবা? নিজের ছেলের বউকে শিখিয়ে দিচ্ছো ছেলেকে নিয়ম করে থা’প্প’ড় মা’রতে?”
অকস্মাৎ নাওয়াসের নিঃসরণকৃত বাক্যে প্রত্যাশার ধ্যান ভাঙে। সবার সামনে বউ বলায় প্রত্যাশা ঈষৎ লজ্জা পায়। কামাল মাহমুদ বলে,
“ওর থা’প্প’ড়েই তো তুমি সিধে হয়েছো। আমি তো তোমায় শাসণ করতে পারিনি। তাই শুরুতেই ওকে দায়িত্ব দিয়ে দিলাম। যাতে ভবিষ্যৎ আর তুমি বখে না যাও।”
কামাল মাহমুদের এই কথায় এবার প্রত্যাশার হাসি পায়। মুখ টিপে হাসেও। কামাল মাহমুদ প্রত্যাশার উদ্দেশ্যে বলল,
“তুমি আমার এই বাউণ্ডুলে ছেলেটার দায়িত্ব নিবে? আমাদের মেয়ে হয়ে আসবে? এই বাড়িতে না একটা মেয়ের বড্ড অভাব।”
প্রত্যাশার এতক্ষণের সকল নার্ভাসনেস কেটে যায়। কামাল মাহমুদ নিজেই ওকে নাওয়াসকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলেন। সেটাও বুঝতে পারে। বলল,
“আসবো আঙ্কেল!”
কামাল মাহমুদের কপালে ভাঁজ পড়ে। আবারও গম্ভীর স্বরে বলেন,
“আঙ্কেল কী? বাবা বলো মেয়ে। আজ থেকে আমিও তোমার বাবা হয়। ওই সব আঙ্কেল টাঙ্কেল চলবে না।”
এবার প্রত্যাশা গাল ভরে হাসে। বলে,
“তাহলে তোমারও আমাকে তুই করে বলতে হবে বাবা!”
উত্তরে কামাল মাহমুদ হাসেন। বলেন,
“ঠিক আছে বলবো!”
“বাহ্! ভাইয়ার বিয়ে না হতেই হবু ভাবি মেয়ে হয়ে গেলো। আর আমরা দুই ভাই পর। আমাদের চাঁন্দে চিনে না,সূর্যেও চিনে না। আমাদের তো দেখছি কানো কদরই নাই।”
নিহানের রঙ্গাত্মাক কণ্ঠ। সকলে উচ্চ শব্দে হাসে। প্রত্যাশার পুরোটা দিন নাওয়াসের পরিবারের সাথে দারুণ কাটে। বিশেষ করে নাওয়াসের বাবার সাথে। মানুষটা অনেক ফ্রি মাইন্ডের। প্রত্যাশা একটা জিনিস আবিষ্কার করে। কামাল মাহমুদ মেয়েদের অত্যন্ত ভালোবাসেন। এই কয়েক ঘণ্টা যতটা স্নেহ প্রত্যাশা কামাল মাহমুদের থেকে পেলো। তার এক শতাংশও পূর্ব ইমামের থেকে পাননি। পূর্ব ইমামের মাঝে কন্যা সন্তান নিয়ে কেমন একটা বিদ্বেষ কাজ করে। এই সব কথা ভেবে, প্রত্যাশার বুক থেকে ভারী শ্বাস নিগত হয়। বিকেলের নাওয়াস আর প্রত্যাশা এক সাথে আরও কিছুটা সময় কাটায়। বাইকে করে ঘুরে বেড়ায়। আর এই দৃশ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পূর্ব ইমামের নজরে পড়ে।
চলবে…
এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#অন্তিম_পর্ব (শেষাংশ)
প্রত্যাশাকে সেই দিন নাওয়াসের সাথে দেখে পূর্ব ইমামের সন্দেহ হয়। তিনি লোক লাগিয়ে খবর নেন। বিগত এক সপ্তাহ ফলো করার পর, ওনার লোক জানান প্রত্যাশা আর নাওয়াস সম্পর্কে আছে। বিষয়টা জানার পর পূর্ব ইমাম প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে যান। এটাও বুঝে যান প্রত্যাশার এতদিন ঠিক কী কারণে বিয়ে হয়নি। প্রত্যাশাই যে ইচ্ছাকৃত বিয়ে ভেঙেছে। সেটা বুঝতে পারেন। তাই তিনি মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। প্রত্যাশা এমনকি সবার অগোচরে প্রত্যাশার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তবে মিনা স্বামীর এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সবটা জানেন। কিন্তু কিছু বলেন না। কিই বা বলবে, প্রত্যাশার এই সম্পর্কে যাওয়ার দায় যে ওনার ওপর এসে পড়েছে। বলার মতো কিছুই পান না। এমন না বোঝাতে চাননি। বোঝাতে নিয়ে স্বামীর তিক্ত কটূক্তির স্বীকার হয়েছে। তাই চুপ চাপ সব মেনে নিয়েছে। আজ প্রত্যাশার বিয়ে সকাল থেকেই সব তোরজোড় শুরু হয়েছে। প্রত্যাশা সন্ধ্যের কিছু সময় আগে বাড়ি ফেরে। বাড়ি এরকম সাজানো দেখে প্রত্যাশার কপালে ভাঁজ পড়ে। মনে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরে প্রবেশ মাত্র যা শোনে, তাতে প্রত্যাশার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে আসে।
“বাবা!আজ আপু বিয়ে আপু কী সেটা জানে?”
পূর্ব ইমাম পিউকে ধমক দিয়ে বলেন,
“তা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। যাও গিয়ে মায়ের সাহায্য করো।”
প্রত্যাশা হতবুদ্ধির ন্যায় সব শোনে। পরপর চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
“ও-কে না-হয় ধমকে চুপ করিয়ে দিলে… কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর তো তোমাকে দিতে হবে।”
পূর্ব ইমাম পিছনে ফিরে চাইল। একপলক প্রত্যাশাকে দেখল। তারপর আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রত্যাশা এগিয়ে এসে বলল,
“এসব কিছুর মানে কী বাবা? তুমি সত্যিই আমার বিয়ে ঠিক করেছো?”
“হ্যাঁ করেছি।”
পূর্ব ইমামের গা ছাড়া উত্তর। প্রত্যাশা অবাক হয়। বলে,
“আমাকে না জানিয়ে তুমি এমনটা কী করে করতে পারো?”
“আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম, আমি তোমার বিয়ে দেবো।”
“তুমি আমায় বিয়ের জন্য সম্বোন্ধ দেখার কথা বলেছিলে। এখানে তো তুমি পুরো বিয়ের দিনক্ষণ পাক্কা করে তোরজোড় করে ফেলেছো…”
“বিষয়টা একই! তাছাড়া ছেলে ভালো। আমার বন্ধুর ছেলে। তুমি যেমন বলেছিলে,তোমার স্বপ্ন মেনেই ছেলে তোমাকে বিয়ে করবে। তাই মনে হয় না এই বিয়েতে তোমার কোনো আপত্তি থাকার কথা।”
প্রত্যাশা বলে,
“আমি এই বিয়ে করবো না!”
পূর্ব ইমাম ঠাণ্ডা কণ্ঠে প্রশ্ন করেন,
“কেন?”
“কারণ আমি একজন কে ভালোবাসি! বিয়ে করলে তাকেই করবো।”
“সেই ছেলে কী বখাটে নাওয়াস আফফান?”
পূর্ব ইমামের প্রশ্নে প্রত্যাশা চমকায়। চমকিত স্বরে বলে,
“তুমি কী করে জানলে?”
পূর্ব ইমাম চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
“কী ভেবে ছিলে? আমি কিছু জানতে পারবো না?”
প্রত্যাশা নিজেকে সামলে নিলো। বলল,
“তুমি যখন আগে থেকেই সবটা জানো। তখন আমার বিয়ে কেন ঠিক করেছো?”
প্রত্যাশার ঠাণ্ড কণ্ঠে পূর্ব ইমাম অবাক হোন। বলেন,
“তো তুমি কী চাও? সব জেনে শুনে আমি ওই বখাটের সাথে তোমার বিয়ে দেবো?”
“বাবা ওকে বখাটে বলবে না। ও এখন শুধরে গেছে।”
“চুপ করো তুমি!”
পূর্ব ইমামের হুংকারে মিনা আর পিউ বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রত্যাশা আর পূর্ব ইমামের মুখ দেখে বুঝে যায়। এখানে কী ঘটেছে।
“লজ্জা করে না তোমার? একটা বখাটের সাথে সম্পর্কে জড়াতে? তুমি না খুব আত্মসন্মান দেখাও? এই তোমার আত্মসন্মানবোধ? শেষে কি-না একটা বখাটের সাথে… ছিহ্ আমার বলতেও ঘৃণা লাগছে। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এভাবে আমার মান-সন্মান নষ্ট করবে। মুখে চুনকালি মাখাবে।”
“হ্যাঁ সব জেনে শুনেই আমি নাওয়াসকে ভালোবাসি। আর বিয়ে করলে নাওয়াসকেই করবো।”
রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পূর্ব ইমাম প্রত্যাশাকে থা’প্প’ড় মেয়ে বসেন। মিনা চমকে ওঠেন। এগিয়ে আসতে চাইলে পূর্ব ইমাম হুংকার করে ওঠেন,
“খবরদার! আজ কেউ আসবে ওর আর আমার মাঝে।”
পূর্ব ইমামের হুংকারে মিনা থেমে যান। পূর্ব ইমাম রাগে হিসহিসিয়ে বলেন,
“ওই বখাটের সাথে তোমার বিয়ে আমি কখনো দেবো না। বিয়ে তোমাকে আমার দেখা পাত্রের সাথেই করতে হবে।”
পূর্ব ইমাম চলে যেতে নেয়। প্রত্যাশা বলে,
“তুমি আমার ওপর নিজের জোর খাটাতে পারবে না বাবা। আমি তোমার দেখা পাত্রের সাথে কখনই বিয়ে করবো না। প্রয়োজন পড়লে আমি এই বাড়ি ছেড়ে দেবো।”
প্রত্যাশা নিজের কথা শেষ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পূর্ব ইমামের মুখ দেখে মনে হয় উনি যেন বিষয়টা আগেই আন্দাজ করে ছিলেন। সেকারণেই অত্যন্ত শীতল স্বরে বলে,
“যে মুহূর্তে তুমি এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুবে। সেই মুহূর্তে আমি তোমার মা আর বোন কেউ এই বাড়ি থেকে বের করে দেবো।”
পূর্ব ইমামের নিঃসৃত বাক্য প্রত্যাশার পা থেমে যায়। বিস্ময়ে কিংকতর্ব্যবিমুঢ় বনে যায়। পিছে ফিরে অবিশ্বাস্য স্বরে বলে,
“বাবা…”
“সিদ্ধান্ত তোমার বিয়ে করবে নাকি করবে না।”
পূর্ব ইমাম দাড়ান না। চলে যান। প্রত্যাশা এখনও বিহ্বল বনে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ব ইমামের এরূপ বাক্যে মিনাও পাথর বনে যান। ওনাদের দুজনের ধ্যান ভাঙে পিউয়ের কান্নায়।
“বা..বাবা এমন একটা কথা বলতে পারলো? বাবা আমাদের একটুও ভালোবাসে না। একটুও না। স্বার্থপর লোক একটা।”
“পিউ! ভুলে যাবি না। উনি তোর বাবা হয়।”
মিনার ধমককে পিউয়ের কান্নার মাত্রা বাড়ে। প্রত্যাশা অবাক হয়ে বলে,
“মা এখনও তুমি বাবার সাপোর্ট নিয়ে কথা বলছো? এতকিছুর পরও?”
“হ্যাঁ বলছি। কারণ উনি ঠিক। ওনার নেওয়া সিদ্ধান্তও ঠিক। কথা না বাড়িয়ে তৈরি হয়ে নে। তোর ঘরে তোর পোশাক রাখা আছে।”
মিনা চলে যেতে নিয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে বলে,
“আশা করি তুই এমন কিছু করবি না। যার জন্য আমাদের মান-সন্মান ধূলিসাৎ হয়।”
মিনাও চলে যায়। মায়ের এরূপ ব্যবহারে পিউ প্রত্যাশা দুজনেই অবাক হয়। পিউ এগিয়ে এসে বলে,
“আপু এখন কী হবে? তুই কী স্যতিই এই বিয়েটা করবি?”
পিউয়ের প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যাশা বলে,
“করবো!”
পিউ বিস্ফোরিত নেত্রে চায়। প্রত্যাশা মনে মনে বলে,
“আমিও তোমার মেয়ে বাবা। আমার জেদ সম্পর্কে তুমি জানো না। তুমি বললে না,এই বাড়ির বাইরে না বের হতে। হবো না বের। বিয়ে করেই এই বাড়ি ছাড়বো আমি।”
_____
কনে বেসে সোফায় বসে আছে প্রত্যাশা। সামনেই তার বাবা, মা, পিউ আর অপরিচিত আরও কিছু মুখ। তাদের মধ্যে একজন হুজুর আর একজন কাজী। প্রত্যাশা লাল টুকটুকে বউ সেজেছে। দেখতে ভারী মিষ্টি লাগচ্ছে। কাজী কাবিন নামা লিখছেন। কাবিন নামা লেখা শেষ হতে প্রত্যাশার উদ্দেশ্যে বলেন,
“পিতা:জামাল খান এবং মাতা:খাদিজা বেগমের একমাত্র পুত্র জাহিদ খানের সাথে বিবাহে আপনি কী রাজি? যদি রাজি থাকেন তাহলে বলুন কবুল!”
প্রত্যাশা চুপ রয়। কাজী আবারও কবুল বলতে বলে। সকলের উৎসুক দৃষ্টি প্রত্যাশার দিকে। প্রত্যাশা কাঠ পুতুলের ন্যায় বসে আছে। সেই সময় একটি আওয়াজ ভেসে আসে।
“বন্ধ করুন এই বিয়ে!”
আওয়াজের উৎস ধরে সকলে দরজার দিকে চাই। দরজার দিকে চাইতে পূর্ব ইমামের মুখের আদল বদলে যায়। নিরেট চোয়ালে গার্ডের ইশারা করেন। ওদের আটকাতে। গার্ডরা নাওয়াসের সামনে গিয়ে ওকে আটকায়। নাওয়াস একপলক গার্ডকে দেখে নিয়ে নাক বরাবর ঘুষি মা’রে। লোকটা ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়। আরও কয়েকজন এগিয়ে যায়। নাওয়াস তাদের চ’ড় থা’প্প’ড় মা’রে। পিয়াশ,তন্ময় আর মিন্টুকে ইশারা করে। নাওয়াস ইশারা করতে ওরা বাকিদের মা’রে। পিয়াশ বলে,
“ওকে চিনিস ও কে? ও হচ্ছে নাওয়াস আফফান।”
নাওয়াস আফফান নাম শোনা মাত্রই গার্ডরা বিস্মিত হয়। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয়। বিয়ের সময় একটা অচেনা-অজানা ছেলের এভাবে বাধা দেওয়ায়। সবার অবাক হওয়ার কথা হলেও,কেউ অবাক হয় না। কেননা পূর্ব ইমাম আগেই এই বিষয়ে আন্দাজ করেছিলেন। এবং বন্ধুকেও জানিয়ে ছিলেন। তার বন্ধু তাকে পূর্ণসমর্থন করেছেন। উনিও মানেন মেয়ে ভুল করলে, বাবা মা তো আর তাকে ভুল করতে দিতে পারে না। সে কারণেই সব কিছুর জন্য উনি প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। নাওয়াস এগিয়ে আসে। একপলক প্রত্যাশার দিকে তাকায়। বধূবেশে প্রত্যাশাকে অসাধারণ লাগছে। নাওয়াস হালকা হাসে। সবাই কে এক লহমায় দেখে নিলো। পূর্ব ইমামের শক্ত চোয়ালের দিকে তাকাতে,নাওয়াসের চোয়ালও শক্ত হয়ে আসে। নাওয়াস বলে,
“সিংহ শিকার করা ছেড়ে দিয়েছে মানে এই না, শিকার করতে ভুলে গেছে। নাওয়াস আফফান ভালো হয়ে গেছে, তার মানে এটা না যে খারাপ হতে পারবে না। আপনি যে ক্ষমতা আমাকে দেখাতে চেয়ে ছিলেন।সেই ক্ষমতা আমি আমার ব্যাক পকেটে রাখি।”
পূর্ব ইমাম কোনো উত্তর করে না। চোখ মুখ শক্ত করে কাজীর উদ্দেশ্যে বলেন,
“কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।”
কাজী বিয়ে পড়াতে নিলে নাওয়াস বলে,
“আরে এতো তাড়া কিসের শ্বশুড় মশাই? মেয়ের এই বিয়েতে মত আছে না-কি সেটা তো আগে শুনুন।”
“ওর মত থাক বা না থাক এই বিয়ে হবে। কারণ এটা আমার সিদ্ধান্ত!”
“কাজী সাহেব মেয়ের অমতে ইসলামে কী বিয়ে জায়েজ আছে?”
“জ্বি না! নেই!”
নাওয়াস বাঁকা হাসে। নাওয়াসের বাবা কামাল মাহমুদ বলে,
“কন্যা সন্তান ঘরের রানী হয়। তাদের সাথে এমন রুক্ষ আচারণ করতে নেই। তাদের অমতে, জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপাতে নেই।”
পূর্ব ইমাম ক্ষেপে গেলো। বলল,
“একদম জ্ঞান দেবেন না। নিজের ছেলেকে তো মানুষ করতে পারেননি। আপনার সামনে,আমার বাড়িতে এসে, আমার সামনেই বখাটেগিরি করছে। মা’রপিট করছে। বাবা হয়ে আপনি তাকে থামানোর বদলে উসকানি দিচ্ছেন? লজ্জা করে না আপনার?”
নাওয়াসের রাগ হয়। তবে নিজের রাগ গিলে বলে,
“মানলাম আমার বাবা আমাকে মানুষ করতে পারেনি। আমাকে উসকানি দিচ্ছে। তা আঙ্কেল আপনার প্রাণের বন্ধু তার ছেলেকে মানুষ করতে পেরেছে তো?”
জামাল খান বলে,
“অ্যাই ছেলে! কি বলতে চাও তুমি?”
নাওয়াস বাঁকা হাসে। বলে,
“কেন আপনার গুণধর ছেলের গুনকীর্তন করতে চাই।”
জামাল খান ঘামতে শুরু করেন। নাওয়াস তা দেখে বলে,
“হবু শ্বশুড় আব্বা, আপনার বন্ধু কী আপনাকে জানিয়েছে? তার ছেলে বিবাহিত? বিদেশে থাকালীন সে বখে গেছিলো। একটা মেয়েকে টিজ করেছিলো। তার পরিবার কেস করাই, আপনার প্রাণের বন্ধু কেস তুলতে। সেই মেয়ের সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দিয়ে ছিলো। আপনি কী জানেন এগুলো?”
পূর্ব ইমাম তাচ্ছিল্য করে বলেন,
“তোমার কী মনে হয়? তুমি বলবে আর আমি মেনে নিবো? আমি তোমার মতো বখাটেদের বিশ্বাস করি না। তোমরা হলে এই সমাজের নোংরা।”
“আমার ছেলের সম্পর্কে ভদ্র ভাবে কথা বলবেন।”
রিনা রেগে বলল। মিনা বলল,
“তাহলে আপনার ছেলেকে তামাশা করতে মানা করুন। এটা একটা ভদ্র পরিবার। আপনার ছেলেকে নিয়ে
আমার মেয়ের জীবন থেকে আর এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।”
রিনা কিছু বলতে নিলেই নাওয়াস থামিয়ে দেয়। কামাল মাহমুদও ইশারায় শান্ত হতে বলে।
“আমি জানি আপনি আমায় বিশ্বাস করবেন না। তন্ময়!”
তন্ময় এগিয়ে আসে। নাওয়াসকে একটা খাম দেয়। নাওয়াস সেগুলো পূর্ব ইমামকে দিলো।
“এটা আপনার বন্ধুর ছেলের কাবিনের কপি! আর কেস কপিও আছে।”
পূর্ব ইমাম কাগজ গুলো দেখলেন। কাগজ গুলো আসল।সেটা বোঝা যাচ্ছে। পূর্ব ইমাম চমকিত চাইল বন্ধুর চিত্ত পানে। জামাল ধরা পড়েছে বুঝে বলেন,
“এগুলো মিথ্যে! আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছিলো। আমি বাধ্য হয়েই এই বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়েটা টাকার লোভে পড়ে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে ছিলো। ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। মেয়েটা একদম ভালো ছিলো না…”
জামাল খান উত্তেজনায় নিজের মুখেই সব স্বীকার করলেন। সব শুনে পূর্ব ইমাম স্তব্ধ হয়ে যান। প্রিয় বন্ধুর থেকে এমন ধোঁকা তিনে মানতে না পেরে পাথর বনে দাঁড়িয়ে থাকেন। নাওয়াস তা দেখে হাসে।
দৃষ্টি ঘুরিয়ে বধূরূপে সোফায় বসা প্রত্যাশা দিকে চাইল। যার ঠোঁটে লেপ্টে আছে সূক্ষ্ম হাসি। নাওয়াস এগিয়ে যায়, একপাশে হেসে প্রত্যাশার পাশে বসে বলল,
“কাজী সাহেব নতুন কাবিন নামা লিখুন। বরের নামের জায়গার লিখুন নাওয়াস আফফান। মাতা: মৃত নাসরিন এবং
পিতা:কামাল মাহমুদ।”
“কিন্তু কন্যার বাবা…”
“চিন্তা করবেন না। উনি আর কিছু বলবেন না।”
জামাল বলে,
“পূর্ব তুই বিয়ে আটকাবি না? দেখ তোর মেয়ের সাথে একটা বখাটের বিয়ে হচ্ছে। ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।”
“ওর সাথে বিয়ে হলে কতটা জীবন নষ্ট হবে আমি জানি না। তবে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে হলে অবশ্যই ওর জীবন নষ্ট হবে।”
রিনার কথায় জামাল অবাক হয়ে বলেন,
“ভাবি!”
“হ্যাঁ! আমার মেয়ের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। ওর প্রতিটা সিদ্ধান্ত অর্থবহ এবং সঠিক হয়। ও মানুষ চিনতে জানে। নিজের জেদ বজায় রাখতে কিছু করে না…”
শেষোক্ত কথাটা যে পূর্ব ইমামের উদ্দেশ্যে ছিলো। সেটা পূর্ব ইমামের বুঝতে কষ্ট হয় না। যে আজ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তের বাইরে যায়নি। সেই স্ত্রীই আজ চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো। তিনি ভুল। মিনা ফের বললেন,
“কাজী সাহেব আমি মেয়ের মা। আমি হুকুম দিচ্ছি আপনি বিয়ে পড়ান। মেয়ের পক্ষে আমি সাক্ষী দেবো।”
প্রত্যাশা নিজের মায়ের দিকে তাকায়। মায়ের সাথে চোখা-চোখি হতে আলতো হাসে। মিনা ইশারায় ভরসা জোগায়। কাজী নতুন করে কাবিন নামা লেখে। তারপর কাজী বিয়ে পড়ায়। প্রত্যাশা এবার বিলম্বহীন কবুল বলে। নাওয়াস আর প্রত্যাশার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই নাওয়াস প্রত্যাশার হাত নিজের শক্ত হাতের মুঠোই বন্দি করে নিলো। উঠে দাঁড়িয়ে পূর্ব ইমামের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“এই যে পূর্ণ অধিকার নিয়ে ওর হাত ধরলাম। মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত আর এই হাত ছাড়বো না। আপনি নিঃশ্চিন্তে থাকতে পারেন। ওকে আমার পরিবার, আমার বাবা-মা মাথায় করে রাখবে।”
প্রত্যাশা এক দৃষ্টিতে নাওয়াসের দিকে তাকিয়ে থাকে। কামাল মাহমুদ এগিয়ে আসে। প্রত্যাশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“চল মা! বাড়ি চল।”
প্রত্যুত্তরে প্রত্যাশা মুচকি হাসে। মিনা মুগ্ধ হয়ে দেখেন। পূর্ব ইমাম এক দৃষ্টিতে প্রত্যাশার দিকে চেয়ে থাকে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি। কামাল মাহমুদের চোখে প্রত্যাশার জন্য স্নেহ, আর ওনার প্রতি প্রত্যাশার শ্রদ্ধা দুটোই অনুভব করেন। এই মুহূর্তে যেনো তিনি উপলব্ধ করতে পারেন। তিনি বাবা হিসেবে ব্যর্থ। প্রত্যাশা পূর্ব ইমামের সামনে এসে দাঁড়ায়। শান্ত অথচ দৃঢ় স্বরে বলে,
“নাওয়াসকে বখাটে বলে, একটু আগে ওকে সমাজের নোংরা বলেছিলে না? ওকে এই সমাজের নোংরা কারা বানিয়েছে জানো? তোমরা মতো কিছু নিম্ন মানুসিকতার মানুষ। যারা নিজেকে ছাড়া কিছু বোঝে না। এমন কি সন্তান কেউ না… ওর মতো বখাটেরা এই সমাজে আছে বলেই রাস্তায় মেয়েরা এখনও নিরাপদ। আর এমন একজনকে ভালোবেসে আমি কোনো ভুল করিনি।”
প্রত্যাশা থামে। চুপ থেকে পুনরায় বলে,
“তুমি বলেছিলে বিয়ে ব্যতিত আমি এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুলে,মা আর পিউকে বার করে দিবে। এই যে আমি বিয়ে করে এই চৌকাঠ পেরুবো। আর কখনও এই চৌকাঠ পেরিয়ে এই বাড়িতে আসবো না।”
প্রত্যাশা আর দাঁড়ায় না। পিউয়ের কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মাকে জড়িয়ে ধরে। নাওয়াস আর ওর পরিবারের সাথে এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুল। এবং সেটা হাসি মুখে। এই দৃশ্য পূর্ব ইমাম এক দৃষ্টিতে দেখলেন। পিউ মিনাও প্রত্যাশার হাস্যজ্জ্বল আননের দিকে চেয়ে রইল।
.
.
.
নাওয়াস বাইক চালাচ্ছে প্রত্যাশা নাওয়াসের কোমড় জড়িয়ে পিছে বসে আছে। পরনে এখনও বিয়ের পোশাক। সবাই বাড়ি চলো গেলেও প্রত্যাশা নাওয়াসের বাইকে করে শহর ঘুরতে চাইল। অর্ধাঙ্গিনীর ইচ্ছে পূরণে নাওয়াস দ্বিমত করে না। ওকে নিয়ে শহর ঘুরতে বেরিয়ে পরে। রাতের শহর শুনশান রাস্তা। সাথে হিমেলা মৃদু বাতাবয়ান। সাথে প্রিয় রমনী। ব্যাপারটা খারাপ না। নাওয়াস বাইক একটা লেকের পাড়ে থামাল। প্রত্যাশা নেমে দাঁড়ায়। নাওয়াসও বাইক পার করে নামে। প্রত্যাশার ঠোঁটের কোণে লেপ্টে আছে হাসি। চোখ জোড়া নাওয়াসে নিবদ্ধ। নাওয়াস ভ্রু নাঁচিয়ে শুধাল,
“হাসছো কেন?”
“এমনি!”
“এমনি আবার কেউ হাসে?”
“আমি হাসি!”
নাওয়াস প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে থাকল। কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হলো। নাওয়াস কিছু একটা ভাবল। বাঁকা হেসে আকাশের দিকে চেয়ে দুঃখী ভাবে বলল,
“কেউ আমাকে ভালোবেসে অন্যের জন্য বউ সেজে বসে ছিলো। এই না-কি সে আমায় ভালোবাসে।”
প্রত্যাশার কপালে ভাঁজ পড়ে। ভ্রু বাকিয়ে নাওয়াসকে অবলোকন করে। ভাবলেশহীন হয়ে বলে,
“কারণ সেই কেউ জানতো, তার বিয়ে হবে না। একটা বখাটে তার বিয়ে হতে দেবে না। সময় মতো এসে তাকে নিয়ে যাবে।”
নাওয়াস ঠোঁট টিপে হাসল।
“তাই? যদি আসতে দেরী করতাম?”
প্রত্যাশা নাওয়াসের চোখে দিকে তাকাল। মন্থর স্বরে বলল,
“অপেক্ষা করতাম!”
“যদি কখনোই না আসতাম?”
“আসতে…”
নাওয়াস ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে। বলে,
“এত বিশ্বাস?”
“হুম!”
প্রত্যাশা ছোট্ট উত্তর। কিন্তু নাওয়াসের মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। মেয়ে তাকে শুধু ভালোই বাসে না। বিশ্বাসও করে। তাই তো বিয়ে আগে তাকে কল করে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে বলেছিলো,
“বাবা আমাদের বিষয়ে জেনে গেছে। আমাকে না জানিয়ে তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। আমি চাইলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারি। কিন্তু আমি চাই তুমি এসে,সবার সামনে দিয়ে পূর্ণ অধিকারে আমাকে নিয়ে যাও।”
নাওয়াসকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রত্যাশা কল কেটে দিলো। প্রত্যাশার নিঃসৃত বাক্যে নাওয়াস হতবিহ্বল বনে যায়। পরপর মস্তিষ্কে প্রত্যাশা বলা কথা পৌঁছাতে রাগে মাথার তালু জ্বলে ওঠে। পরক্ষণে নিজেকে শান্ত করে। তন্ময়,পিয়াশ,মিন্টুকে ছেলের বিষয়ে খোঁজ নিতে পাঠায়। এই ভেবে যে ছেলেকে বিয়ের আগে গু’ম করে দিবে। তার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়ানোর জন্য একটু শাস্তিও দেবো। কিন্তু খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে ছেলের আগেও বিয়ে হয়েছে। এবং পুলিশের খাতায় নামও আছে। ব্যস নাওয়াসের বেশি কষ্ট করতে হলো না। সব প্ল্যান বাদ দিয়ে ছেলের কাবিন নামা জোগাড় করে। অল্প সময়ের মধ্যে এগুলো করতে পারতো না। যদি না তার বাবার হাত লম্বা হতো। ভাগিস্য তার বাবার বড়ো বড়ো রাঘব বোয়ালদের সাথে ওঠা বসা ছিলো।
“তুমি তো বউ সেজে বিয়ে করলে। কিন্তু আমি তো করতে পারলাম না।”
নাওয়াসের কথা কর্ণপাত হতে প্রত্যাশা নাওয়াসের দিকে চাইলো। পা থেকে মাথা অব্দি অবলোকন করল। পরনে ফর্মাল ড্রেস আপ। ছেলেটা যে অফিস থেকে ছুটে ছিলো তা বুঝতে পেরে প্রত্যাশা হাসল। বলল,
“সমস্যা কী? সবার মতো তোমার হতে হবে কেন? এমনিতেও তুমি সবার থেকে আলদা। বখাটে হয়েও খারাপ কাজ করো না। তেমনই বর না সেজেই বর হলে… ব্যাপারটা ইউনিক।”
নাওয়াস ছোটো ছোটো চোখে চাইল। বলল,
“তোমার মতো নির্লজ্জ কনে আমি একটাও দেখিনি।”
সহসাই প্রত্যাশা ভ্রু কু্চকায়।
“আমি নির্লোজ্জ?”
“তা নয়তো কী? তোমার বিয়ে হলো, কোথায় তুমি লজ্জায় রাঙা হয়ে চোখ নামিয়ে রাখবা। তা না তুমি বড়ো বড়ো চোখ করে ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকাছো। আবার আমার থেকেও ফাস্ট কবুল বলেছো। বিদায়ের সময় কান্নাটা অব্দি করোনি…”
“কান্না কেন করবো? আমি তো আমার প্রিয় পুরুষকেই বিয়ে করেছি। তাকে নিজের স্বামী রূপে পেয়েছি। এটা কোনো কান্না করার বিষয়?”
“আরে তুমি তো নিজের বাড়ি ছেড়ে আসলে। এই দুঃখেও তো কান্না করতে পারতে তাই না?”
“আমি এক বাড়ি ছেড়ে আমার আজীবনের বাড়িতে এসেছি। এতে দুঃখের কিছু নেই। হ্যাঁ মা আর পিউয়ের জন্য একটু খারাপ লেগেছে। তবে সেটা কান্না করার জন্য কম।”
নাওয়াস হতভম্ব হয়ে যায়। এই মেয়ে বলে কী?
“এই তুমি মানুষ তো? মানে এত স্বাভাবিক কেউ কী করে থাকে? তুমি যে পরিস্থিতির মধ্যে ছিলে। সেই পরিস্থিতির জন্যে হলেও তো কান্না করতে পারতে। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করতো।”
“আমি কাঁদলে তোমার ভালো লাগতো?”
প্রত্যাশার কঠিন প্রশ্ন নাওয়াস থতমত খায় বলে,
“আরে না। কিন্তু তোমার এই ব্যক্তিত্ব আমাকে ভিষণ বিস্মিত করেছে। একটা মেয়ে এত শক্ত কী করে হয়?”
“শক্ত না হলে আজ তোমার সাথে আমার বিয়ে হতো না। শক্ত না হলে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম না। আমি শক্ত বলেই আমি সফল। আমার জীবনে অপ্রাপ্তির সংখ্যা কম…”
প্রত্যাশার উত্তরে নাওয়াস হাসে। মেয়েটার এই চিন্তা ধারায় ওকে সবার থেকে আলাদা করে। আর নাওয়াসকে ওর দিকে টানে। এই অসাধারণ রমনীটি আজ থেকে তার বউ। বউ শব্দটা আওড়াতেই নাওয়াসের শরীর ঝঁংকার দেয়। মনে এক ঝাঁক রঙিন প্রজাপ্রতি উঁড়ে। নাওয়াস প্রত্যাশার মুখশ্রী হাতের আঁজালে নিলো। প্রত্যাশার কপালে কপাল ঠেকিয়ে প্রেমময় স্বরে বলল,
“তুমি আমার জীবনে এক ঝড়ো হাওয়ার মতো। ঝড় এসে যেমন ঝড়ো হাওয়ায় সব তচ্ছনচ্ছ করে দেয়। তুমি তেমন চিরাচরিত আমি টাকে তচ্ছনচ্ছ করে দিলে। ধ্বংস করে নতুন আমিকে গড়লে। তুমি আমার জীবনের এক সুখকর ঝড়,যার ঝড়ো হাওয়ায় আমার অগোচ্ছালো জীবনের ছন্দপত ঘটে। বখাটে নাওয়াস আফফান থেকে জেন্টলম্যান নাওয়াস আফফান জন্ম নেয়…”
“আমার কিন্তু বখাটে, বাউণ্ডুলে নাওয়াস আফফানকেই বেশি পছন্দ।”
নাওয়াস দুষ্টুমি স্বরে বলে,
“বখাটে নাওয়াস কিন্তু ভালো না। সে কিন্তু নিজের বউয়ের পূর্ণ সুযোগ নেবে…”
নাওয়াসের কথার ইঙ্গিত ধরতে পেরে প্রত্যাশা গণ্ডযুগল র’ক্তিম আভা ধারণ করে। প্রত্যাশাকে লজ্জা পেতে দেখে নাওয়াস বলে,
“বাবাহ্! তোমার লজ্জাও আছে?”
“নাওয়াস!”
প্রত্যাশা মেকি রাগ দেখিয়ে,আলতো হাতে নাওয়াসের বুকে কিল মা’রে। নাওয়াস হেসে প্রত্যাশাকে বুকে আগলে নিলো। প্রত্যাশাও পেলব দু-হাতে প্রিয় পুরুষের পিঠ পেঁচিয়ে ধরল।
পূর্ণতা পেলো আরও এক জোড়া ভালোবাসা। যাদের ভালোবাসা প্রমাণ করল। ঝড় সব সময় ধ্বংসী হয় না। আপাত দৃষ্টিতে ধ্বংস মনে হলেও, সেই ধ্বংসের পিছনে থাকে আল্লাহর পরিকল্পিত কোনো মঙ্গল। ঠিক যেমন প্রত্যাশা নামক #এক_ঝড়ো_হাওয়ায় নাওয়াসের মতো বখাটে,বাউণ্ডুলে ছেলে ধ্বংস হয়ে, নতুন এক নাওয়াসের জন্ম হয়। যে ভালোবাসতে জানে,ভালোবাসা প্রকাশ করতে জানে,প্রিয়জনদের আগলে রাখতে জানে…
____________________★সমাপ্ত★________________