এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-১২

0
6

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ১২

প্রত্যাশা বুটিক যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। আজ একটু সকাল সকাল যাবে। কয়েকদিন বুটিকে যাওয়া হয়নি। সেদিন পূর্ব ইমামের সাথে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর, প্রত্যাশার মন মেজাজ ভালো ছিলো না। মন আর মস্তিষ্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো। মস্তিষ্ক বলছিলো, মা ঠিক বলেছে। বাবার কথা মেনে বিয়ে করা উচিত। আর মন বলছিলো, এখন বিয়ে না করতে। মন আর মস্তিষ্কের এই যুক্তি তর্কে। প্রত্যাশা মস্তিষ্কের কথায় শুনলো। মনস্থির করল, এবার সে আর বাবার অবাধ্য হবে না। এতদিন তো মনের কথায় শুনেছে। এই একটা কথা না হয় বাবার শুনুক। এটা তো ঠিক এক না একদিন, ওকে সত্যিই বিয়ে করতে হবে। বাবা যখন এখন চাইছে। এখনই করুক। তাদের মাঝে কম বিবাধ হয়নি। প্রত্যাশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। হ্যান্ড ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘর থেকে বিরিয়ে আসল।

“মা আসছি!”

প্রত্যাশা সদর দরজা খুলতে নিবেন তখন পূর্ব ইমাম বললেন,

“কোথায় যাচ্ছো?”

পূর্ব ইমামের প্রশ্নে প্রত্যাশা পিছে ফিরলো। ছোটো করে বলল,

“বুটিকে!”

“আজকে বিকেলের মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবে।”

প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবে শুধায়,

“কেন?”

“তোমাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে। এর আগের বার জানায়নি, বলে অভিযোগ করেছিলে। এবার জানিয়ে দিলাম। আশা করি এবার আর আগের মতো দেরী করে ফিরবে না।”

পূর্ব ইমাম নিজ কথা সম্পূর্ণ করে যেমন এসেছিলেন,তেমনই চলে গেলেন। প্রত্যাশা মুখ গোল করে ভারি শ্বাস ছাড়লো। দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। প্রত্যাশা বিষণ্ণ মনে বুটিকে আসল। কাজ করতে লাগল। তবে কাজে বিশেষ মনোযোগ নেই। বুটিকে প্রত্যাশার একজন সহকারী আছে। নাম দিয়া। প্রত্যাশার অবর্তমানে ওই সব দেখে। প্রত্যাশা যখন কাজ করছিলো তখন দিয়া এসে বলে,

“আপু আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে। আমি কী তাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিবো?”

প্রত্যাশা আনমনে উত্তর করে,

“হুম!”

দিয়া চলে যায়। কিয়ৎক্ষণ পর একজন ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরে প্রবেশ করতেই মানবটি দেখে, প্রত্যাশা বিষণ্ণ চিত্তে পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। মানবটি নিজের উপস্থিত জানান দিতে, হালকা কাশে। প্রত্যাশার ধ্যান ছুটে। কে এসছে দেখার জন্য মাথা তুলে। মাথা তুলতেই বড়ো সড়ো একটা ঝটকা খায়। সামনে দণ্ডায়মান নাওয়াসকে দেখে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,

“নাওয়াস তুমি?”

নাওয়াস এগিয়ে আসে। প্রত্যাশার অবাকতায় নাওয়াস কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হয়। তবে তা প্রকাশ করে না। নিজের অপ্রস্তুত ভাব সযত্নে লুকিয়ে বলল,

“হুম! একটু কথা ছিলো। সময় হবে?”

প্রত্যাশার বিস্ময় ভাব এখনো কাটেনি। সেভাবেই বলল,

“শিওর!”

“বসে কথা বলি?”

এবার প্রত্যাশার ধ্যান ছোটে। হাসার চেষ্টা করে বলল,

“ইয়াহ! বসো!”

নাওয়াস বসলো। ইশারায় প্রত্যাশাকেও বসতে বলল। প্রত্যাশা বসল। নাওয়াস এসে তো পরেছে। কিন্তু কীভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারে না। প্রত্যাশা একপলক নাওয়াসকে অবলোকন করলো। হয়তো বুঝলো। নিজেই বলল,

“কী নিবে চা না কফি?”

পরপর প্রত্যাশা নিজেই বলল,

“চা বলি?”

প্রত্যাশা দিয়া কে ডাকলো। দু কাপ চা দিতে বলে গেলো। প্রত্যাশার কথা মতো দিয়া চা আনতে চলে গেলো। প্রত্যাশা শুধাল,

“আঙ্কেল এখন কেমন আছেন?”

নাওয়াস ছোটো করে বলল,

“ভালো!”

“আমি হসপিটালে গেছিলাম। কিন্তু হসপিটালে গিয়ে জানতে পারি, আঙ্কেল কে ডিসচার্জ করে দিয়েছে। তাই আর দেখা হয়নি।”

“হুম বাবার সেন্স আসার পর আর হসপিটালে থাকতে চাইনি। তাই আর কি…”

“ওহ আচ্ছা!”

ওদের কথার মধ্যে দিয়া চা দিয়ে যায়। চায়ের এক চুমুক দিয়ে প্রত্যাশা বলল,

“তুমি কী আমায় কিছু বলতে চাও?”

নাওয়াস চমকায়। চমকিত দৃষ্টিতে প্রত্যাশার পানে চায়। প্রত্যাশা নাওয়াসকে চমকাতে দেখে ঈষৎ হাসে। প্রত্যাশার চতুরতায় নাওয়াস অবাক হয়।

“হুম! আমার তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিলো। সেদিন যদি তুমি সময় মতো বাবাকে হসপিটালে না নিতে…”

“এর জন্য তোমার আমাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে না। আমি তোমার ধন্যবাদের জন্য কিছু করিনি।”

“তাহলে কীসের জন্য করেছো?”

“সাহায্য করতে কি কোনো কারণ লাগে?”

“সেটা না…”

নাওয়াস কিছু বলবে তার আগেই প্রত্যাশা বলে ওঠে,

“তুমি পিউকে কারণ ছাড়া একাধিকবার সাহায্য করেছো।”

নাওয়াস সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করল,

“তুমি কী তার ঋণ শোধ করলে?”

“সেটা কেনো হবে? তুমি তো আমাকেও সাহায্য করেছিলে। যেখানে তুমি আমায় বিশেষ পছন্দ করো না।”

সহসাই নাওয়াসের ভ্রু কুঁচকে আসে। বলল,

“আমি তোমায় পছন্দ করি না, এটা তোমায় কে বলেছে? আমি?”

“উম্ম্ তা বলোনি!”

“তাহলে?”

“প্রথম সাক্ষাৎ কাউকে থা’প্প’ড় মা’রার পর, সে নিশ্চয়ই আমাকে পছন্দ করবে না। তাই না?”

নাওয়াস হকচকায়। প্রথম দিনের কথা মনে পরে। প্রত্যাশা পুনরায় বলে। এবং তাও অত্যন্ত নমনীয় স্বরে,

“সেদিনের জন্য আমি মন থেকে স্যরি নাওয়াস! রাগের মাথায় আমার তোমাকে হুট করে থা’প্প’ড় মা’রা উচিত হয়নি। আসলে সেদিন ওরা এত বাজে কথা বলেছিলো। তুমি যখন তোমার বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাইতে বললে। আমার মনে হয়েছিলো, তুমিও ওই রকম। তাই রাগের মাথায়…”

“ইট’স ওকে প্রত্যাশা! আমি কিছু মনে করিনি। সত্যি বলতে প্রথমে আমারও তোমার ওপর রাগ হয়। পরে বিষয়টা ভালো করে জানার পর বুঝি। এতে তোমার কোনো দোষ ছিলো না। তোমার রিয়াক্ট করাটা স্বাভাবিক।”

নাওয়াসের মুখে এই প্রথম নিজের নাম শুনলো প্রত্যাশা। এর আগে যতবার দেখা হয়েছে ততবার এই মেয়ে নয়তো তুমি। এর বাইরে কখনও অন্য কোনো সম্বোধন করেনি। নাওয়াস ফের বলল,

“বাট একটা কথা না বললেই না। তুমি খুব সাহসী। তোমার জায়গা অন্য কোনো মেয়ে হলে, লোক লজ্জার ভয়ে চুপচাপ সব মেনে নিতো। আর ঘরে দরজা দিয়ে কান্না-কাটি করতো। কিন্তু তুমি সেটা না করে প্রতিবাদ করেছিলে। এটা সবাই পারে না।”

প্রত্যাশা যেন আজ দফায় দফায় অবাক হচ্ছে। নাওয়াসের সাথে এপর্যন্ত যতবার সাক্ষাৎ হয়েছে। নাওয়াস খুব কম কথা বলেছে। প্রত্যাশা বুঝেই নিয়েছিলো নাওয়াস স্বল্পভাষী। কিন্তু আজ যেন অন্য নাওয়াসকে দেখছে। বলাবাহূল্য নাওয়াস অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলছে। প্রত্যাশা মুগ্ধ হয় নাওয়াসের কথা বলার ভঙ্গিমায়।

“আমি নিজেকে নিজে সাহায্য করাই বিশ্বাস করি। এবং সেভাবেই নিজেকে তৈরি করেছি।”

প্রতাশার উত্তর নাওয়াস স্মিত হাসলো। এই প্রথম নাওয়াসকে হাসতে দেখে প্রত্যাশা বিস্মিত হলো। শ্যামবর্ণের এই পুরুষটার হাসি মারাত্মক সুন্দর। নাওয়াস বলল,

“নাইস থ্রট! তোমার চিন্তা ধারা বাকিদের থেকে আলাদা। আমার মনে হয়,প্রতিটা মেয়ের তোমার মতো হওয়া উচিত। আত্মনির্ভশীল, আত্মবিশ্বাসী, সাহসী। যারা নির্দ্বিধায় নিজের জন্য স্ট্যান্ড করতে পারবে। নিজের মত প্রকাশ করতে পারবে। সাবলম্বী হবে।”

প্রত্যুত্তরে হালকা হাসে প্রত্যাশা। পরক্ষণে ভাবনায় মত হয়।এবার নাওয়াস উঠে দাঁড়ায়। বলে,

“আজ আসি তাহলে।”

নাওয়াস চলে যেতে নিয়েও ফিরে আসে। প্রত্যাশার ললাটের চিন্তার রেখা দৃশ্যমান না হলেও। নাওয়াস সেরেখা দেখতে পায়। শুধায়,

“তুমি কী কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?”

প্রত্যাশা ভরকায়। নাওয়াসের দিকে বিস্মিত লোচনে চায়। নাওয়াস আবার চেয়ারে বসে। কণ্ঠে নমনীয়তা এনে ভরসার সহিত বলে,

“তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।”

প্রত্যাশা নড়েচড়ে বসে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,

“তেমন কিছু না। একটু কাজের প্রেশার আর-কি..”

নাওয়াসের নিকট প্রত্যাশার উত্তর এলোমেলো মনে হলো। নাওয়াস বলল,

“বন্ধুদের সাথে সমস্যা শেয়ার করলে। অনেক সময় সমাধান পাওয়া যায়।”

প্রত্যাশা বিহ্বল নেত্রে নাওয়াসের আনন পানে চাইল। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে আওড়ায়,

“বন্ধু?”

নাওয়াস খুব সাবলম্বী কণ্ঠে বলল,

“হ্যাঁ! তুমি সেদিন আমাকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলে। কিন্তু আমি গ্রহণ করিনি। আর আজ আমি তোমায় নিজে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি।”

নাওয়াস ডান হাত এগিয়ে দিয়ে শেষক্ত কথা বলল। প্রত্যাশার চোখে বিস্ময়। নাওয়াস আবার বলল,

“আমরা বন্ধু না হয়েও একে অপরের বিপদে পাশে থেকেচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত বন্ধু সেই হয়। যে বিপদের সময় পাশে থাকে। পথ হারালে, পথ দেখায়। যেটা তুমি করেছো। তুমি শুধু আমার বিপদে এগিয়ে আসোনি। বরং আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছো। এতবছর ধরে যে ভুল পথে আমি হেঁটেছি। সেই পথ থেকে সঠিক সময় তুমি আমায় ফিরিয়ে এনেছো।”

নাওয়াসের নিঃসৃত বাক্যে প্রত্যাশা থমকায়। পরক্ষণে একরাশ ভালো লাগায় মন ভরে যায়। গাল ভরে হেসে নাওয়াসের বাড়িয়ে রাখা হাতে হাত মিলিয়ে, বন্ধুত্বের সূচনা করে। গ্রহণ করে নাওয়াসের বন্ধুত্ব। শুরু হয় দুই মেরুর মানুষের একত্রে পথ চলা। এই সূচনা কী বন্ধুত্বের না-কি অন্য কিছুর? ওদের বন্ধুত্বের পরিনতি কী হবে? তা আদৌও অজানা।
________

নাওয়াস আর প্রত্যাশা হাঁটছে। প্রত্যাশা নাওয়াসকে টুকিটাকি অনেক কথায় শেয়ার করলো। সাথে এটাও বলল আজ ওকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।

“এর মানে শীঘ্রই তোমার বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি?”

নাওয়াস রসিকতা করেই বলে। উত্তরে প্রত্যাশা বলে,

“আমার বিয়ে শুনে তুমি খুব খুশি মনে হচ্ছে।”

“কেন খুশি না হওয়ার কী আছে?”

“ধুর! আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।”

“তাহলে করো না।”

“বাবা মানে না তো।”

“তোমার বাবাকে কেন মানাতে হবে? বিয়ে না করার জন্য পাত্রকে মানাও।”

“হ্যাঁ আমি বলবো আর পাত্র নাঁচতে নাঁচতে মেনে যাবে তাই না?”

“সোজা-সুজি না মানলে, বাঁকা করে মানাও।”

প্রত্যাশা থেমে যায়। দাঁড়িয়ে বলে, “মানে?”

“মানেটা সহজ এমন কিছু করো যাতে পাত্রই না বলে।”

নাওয়াস প্রত্যাশাকে বিয়ে ভাঙার আইডিয়া দেয়। প্রত্যাশা তো খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

“দারুণ আইডিয়া। এতে বিয়েও ভেঙে যাবে আমারও নাম হবে না…”

“হুম!”

বিকেলে প্রত্যাশাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসে। প্রত্যাশা ভদ্র মেয়ের মতো ওদের সামনে আসে। আলাদা কথা বলার জন্য ছাঁদে যায়। ছাঁদে যাওয়ার সময় প্রত্যাশা পিউকে ইশারা করে। ওরা ছাঁদে যেতেই পিউ কাজ শুরু করে। পাত্রকে ভয় দেখায়। পাত্ররা যে পুরোনো চিন্তা ধারার সে সম্পর্কে প্রত্যাশা অবজ্ঞাত ছিলো। আর তাই পাত্রের পরিবারকে জিনের ভয় দেখায়। ব্যস ওরা বিয়ে ভেঙে দেয়।
নাওয়াস আগেই পাত্রের পরিবার সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করে। সেটা প্রত্যাশাকে জানায়। সেই অনুযায়ী প্রত্যাশা বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করে। এতে করে বিয়েও ভেঙে যায়। প্রত্যাশারও কোনো নাম হয় না। পূর্ব ইমাম হতাশ হয়। তিনি খুঁজে পাননা কেন এভাবে একের পর এক বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রত্যাশা মহা খুশি। নাওয়াস আর প্রত্যাশার সম্পর্ক অনেক মজবুত হয়েছে। নিঃসন্দেহ ওদের দেখলে যে কেউ বলবে, ওরা জন্মগত বেস্ট ফ্রেন্ড। পিয়াশ,তন্ময়,মিন্টু প্রথমে নাওয়াস আর প্রত্যাশার বন্ধুত্বর বিষয়টা বিশ্বাস করেনি। প্রত্যাশার মিন্টুর কাছেও ক্ষমা চাই। মিন্টু এখন আর প্রত্যাশাকে ভয় পায়না। এভাবেই কেটে যায় দুমাস। প্রত্যাশার সাথে বন্ধুত্ব করার পর থেকে নাওয়াসের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। নাওয়াস এখন অনেক দায়িত্ববান হয়ে উঠেছে। বাবার সাথে যেই মনোমালিন্য ছিলো তাও মিটিয়ে নিয়েছে। সপ্তাহখানেক হলো নাওয়াস অফিসের কাজে হাত লাগিয়েছে। নিজের সাথে নিজের বন্ধুদের কেউ দায়িত্ববান করে তুলেছে। নিজেদের কম্পানিতে ওদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দিয়েছে। অবশ্য এই বুদ্ধিটা প্রত্যাশার মস্তিষ্ক অভিভূত। নাওয়াসের এরূপ পরিবর্তনে সবাই অনেক অবাক হয়, সাথে খুশিও হয়। সব থেকে বেশি খুশি হয় নিহান। নাওয়াস অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। নিহান এসে বলে,

“ভাইয়া একটা কথা বলবো?”

“হুম বলো!”

“অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিবে?”

নাওয়াস ছোটো করে বলল,

“রেডি হয়ে এসো।”

নিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নাওয়াস প্রশ্ন করল,

“কিছু বলবে?”

নিহান হ্যাঁ বোধক মাথা নাঁড়ায়।

“বলো!”

“আমি তোমার থেকে একটা জিনিস চাইবো দেবে?”

নাওয়াসের কপালে ভাঁজের সৃষ্টি হয়। সহসাই শুধাল,

“কী জিনিস?”

“আমাকে তুই করে ডাকবে? তুমি ডাকটা কেমন দূরের শোনায়। পর পর লাগে…”

নাওয়াস কিয়ৎক্ষণ নিহানের আনন পানে রয়। ছেলেটা সারাক্ষণ তার সানিধ্য পেতে চেষ্টা করে। নাওয়াসের উত্তর না পেয়ে নিহানের মুখটা মলিন হয়ে আসে। নিহানের ম্লান চেহারা দেখে নাওয়াসের বক্ষ ধ্বক করে ওঠে। নিহান চলে যেতে নিলে নাওয়াস নিঃসৃত বাক্যে থমকে যায়।

“আমার সাথে যেতে চাইলে, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আয়। আমার অফিসে জরুরি কাজ আছে। একমিনিট দেরী হলে,তোকে না নিয়েই চলে যাবো…”

নাওয়াসের মুখ নিঃসৃত ‘তুই’ সম্বোধন কর্ণপাত হতে, নিহান স্তব্ধ হয়। ঘোর কাটতেই ছুটে গিয়ে নাওয়াসকে জড়িয়ে ধরে। কান্না করে বলে,

“আই লাভ ইয়্যু ভাইয়া!”

নাওয়াস আলতো হেসে নিহানের মাথায় বুলিয়ে দিলো। এতে নিহান নাওয়াসকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দূর হতে দু-ভাইয়ের মিলন মেলায় আঁচলে চোখ মুছেন রিনা। ওনার কাধে ভরসার হাত রেখে কামাল মাহমুদ বলেন,

“এভাবেই একদিন নাওয়াস, তোমাকেও আগলে নিবে…”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে