#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ০৬
অক্টোবর মাস। মনোমুগ্ধকর একটি মাস। এই মাসেই শীতের সূচনা হয়। ঘাসে জমা বিন্দু বিন্দু পানির কণা জানান দেয়, শীতের আগমনী বাতা হিসেবে। সকালের মিষ্টি সূচনা হয় পাখিদের শ্রুতি মধু কাকলীর মাধ্যমে। আজ পিউদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। প্রতিবছর এই সময়টায় ওদের স্কুলে, সংস্কৃতি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। যেখানে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ হয়। যেমন- নৃত্যানুষ্ঠান, সংগিত পরিবেশন, কবিতা আবৃতি সহ বিভিন্ন ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। পিউ ভিষণ ভালো নাচ জানে। প্রতি বছরই পিউ নৃত্য পরিবেশন করবে। এবারও করবে। কিন্তু অনুষ্ঠানে একটু ভিন্নতা আনতে বলা হয়েছে, এবার জোড়ায় পারফরমেন্স করতে হবে। অর্থাৎ যারা যারা পারফর্ম করবে তাদের সাথে, পরিবারের একজন সদস্যকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। বিষয়টা শুনে সবার মাঝে উত্তেজনা কয়েক গুন বেরে যায়। পিউ তো ঠিক করে প্রত্যাশার সাথে নাচ করবে। সেই অনুযায়ী এতদিন দুবোন প্রস্তুতিও নিয়েছে। ওদিকে নিহান ঠিক করেছে নাওয়াসকে সঙ্গে নিয়ে পারফর্ম করবে। নাওয়াস খুব ভালো গান করতে আর গিটার বাজাতে জানে। নিহান নাওয়াসকে না জানিয়েই ওর সাথে নাম এন্ট্রি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় ম্যাচিং পাঞ্জাবিও আনিয়েছে। কিন্তু এই সব কিছু নাওয়াস জানে না। নিহান নাওয়াসের রুমে উঁকিঝুঁকি করছে। নাওয়াস বিষয়টা দেখে বলল,
“কিছু বলবে?”
অকস্মাৎ আওয়াজে নিহান চমকে যায়। বুকে থুথু দিয়ে ভাবে।
“ভাইয়া আমায় দেখল কী ভাবে?”
“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। আয়নায় তোমার প্রতিবিম্ব দেখা যায়।”
নাওয়াসের নিরেট কণ্ঠে আওড়ানো শব্দে নিহান বোকা হাসে। ভিতরে ঢুকে বলে,
“ওহ তাই বলো। আমি আবার ভাবলাম তোমার পিছেও চোখ আছে নাকি?হে হে!”
“কী বলবে বলো।”
নিহান শুকনো ঢোক গিলে বলে,
“তোমার একটা হেল্প লাগত।”
নাওয়াসের ভাবলেশহীন উত্তর,
“কীহ হেল্প?”
নিহান মনে মনে কথা গুছিয়ে নিলো। নাওয়াসের মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
“আমার স্কুলে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। সেখানে পরিবারের সদস্যর সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে। তুমি তো ভালো গান জানো। তাই আমি আমার সাথে তোমার নাম এন্ট্রিন করে দিয়েছি।”
নিহান এক নিঃশ্বাস গড়গড় করে কথা শেষ করে। নাওয়াস বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। এতক্ষণ নিহানকে তেমন পাত্তা না দিলেও, এবার ঘুরে দাঁড়ায়। নিহানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চায়। ছেলেটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। নিহান সেভাবেই ফের বলল,
“তুমি চাইলে আমায় একটা চ’ট’কানা মা’রতে পারো। কিন্তু তবুও না বলো না।”
নিহান গাল বাড়িয়ে দিয়ে উক্ত বাক্যটি বলে। নাওয়াস বুকে হাত গুজে নিহানের দিকে ছোটো ছোটো চোখে তাকিয়ে থাকল। নাওয়াসের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে নিহান ধীরে চোখ খুলল। নাওয়াসকে এমন সূচালো দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে শুষ্ক ঢোক গিলল। নাওয়াস চিরপরিচিত গুরুগম্ভীর স্বরে বলল,
“কার অনুমতিতে তুমি আমার নাম এন্ট্রি করিয়েছো?”
নাওয়াসে নিঃসৃত বাক্যে নিহানের মুখটা চুপসে যায়। সাফায় দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“আসলে ভাইয়া তুমি তো ভালো গিটার বাজাও। সাথে তোমার গানের ভয়েসও অনেক সুন্দর। তার জন্যই…”
“তার জন্য তুমি আমার অনুমতি ব্যতিত আমার নাম দিয়ে দিবে? আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে হয়নি তোমার? আমি আদৌ অংশগ্রহণ করতে চাই কি-না?”
নাওয়াস কিছুটা ধমকে ওঠে। নিহান মাথা নিচু করে নিলো। অপরাধি কণ্ঠে বলল,
“আই অ্যা’ম স্যরি ভাইয়া। আমি বুঝতে পারিনি।”
“কী বুঝতে পারোনি? অন্য সময় তো সবই বুঝো, এত টুকু বুঝতে পারোনি?”
“আমি ভেবে ছিলাম, ছোটো ভাই হিসেবে, তোমার ওপর এতটুকু অধিকার আমার আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি, আমার ভাবনাটা ভুল ছিলো।
আমি অনেক স্যরি। আর কখনও এমন কিছু হবে না।”
নিহান দাঁড়ায় না। সেখান থেকে প্রন্থান করে। নাওয়াস নিহানের যাওয়ার দিকে নিষ্পলক চেয়ে রয়। ছেলেটার আঁখিযুগল ভেজা মনে হলো… ও-কী একটু বেশিই বলে ফেলল?
“নিহান তোমার ছোটো ভাই হয়। ওর সাথে এমন বিহেভ না করলেও পারতে।”
হঠাৎ মোটা কণ্ঠে নাওয়াসের ভাবনায় ছেদ পড়ে। সামনে কামাল মাহমুদকে দেখে নাওয়াসের ভ্রু গুটিয়ে আসে। নাওয়াস নিজ ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিল যে, কামাল মাহমুদকে খেয়ালই করেনি। এতক্ষণ যদিও বা একটু অনুতাপ হচ্ছিল। কামাল মাহমুদকে দেখা মাত্র তা হাওয়াই মিলিয়ে গেল। নিরেট বদনে বলল,
“ও আমায় না জানিয়ে আমার নাম এন্ট্রি করে অন্যায় করেছে। এটা ওর প্রাপ্য ছিলো।”
“ও তোমায় ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। তাই ছোটো ভাই হিসেবে একটু অধিকার দেখিয়ে ছিলো। কিন্তু তুমি? তুমি কী ওকে ভালোবাস? যে শাসন করলে? শাসন করা তাকেই মানায় যে ভালোবাসতে জানে।”
কামাল মাহমুদ থামেন বড়ো করে শ্বাস নিয়ে বলেন,
“আমি জানি না তোমার আমার প্রতি কীসের রাগ। কেন তুমি এমন বিপথে গেছো। কোন কারণে তুমি আমাদের থেকে দূরে থাকো। আমি সত্যিই জানি না। কিন্তু নিহান? ও তো তোমার ভাই হয়। ছোটো ভাই। তোমার থেকে এতটুকু স্নেহও কী চাইতে পারে না? তোমার রাগ তো আমার প্রতি,আমার ওপরেই প্রকাশ করো। নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো?
কেন সকলের থেকে দূরে থাকতে চাইছো? এভাবে একা একা বাঁচা যায় না। মানুষ কখনও একা বাঁচতে পারেনা।”
নাওয়াস কোনো প্রত্যুত্তর করে না। কামাল মাহমুদ বুঝেন নাওয়াস ওনার কথা শুনতে আগ্রহী নয়। তিনি দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে কক্ষ হতে বেরিয়ে যান। নাওয়াসের মানসপটে নিহানের ভেজা চোখ জোড়া ভেসে উঠছে। আর কানের কাছে বারবার প্রতিধ্বনিত হয় ওর বলা শেষ বাক্য গুচ্ছ…
___________
পিউ আর প্রত্যাশা লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়েছে। পিউয়ের চুলে বেনী করে বেলী ফুলের মালা পেঁচিয়েছে। আর প্রত্যাশা নিজের কাধ সমান চুল গুলো খোলা রেখেছে। প্রত্যাশার চুলের তুলনায় পিউয়ের চুল লম্বা আর ঘন। দুজনকে দেখতে ভিষণ মিষ্টি লাগছে। পিউকে ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে প্রত্যাশা পানি কেনার জন্য দোকানে যায়। পিউ ভিতরে এসে দেখে নিহান একটা চেয়ারে বসে আছে। পিউ হাসি মুখে নিহানের দিকে এগিয়ে যায়। নিহানের নিকটে পৌঁছাতেই পিউ খেয়াল করল,নিহান উদাস মনে বসে আছে। নিহানকে এমন মনম’রা দেখে পিউয়ের হাসি মিলিয়ে যায়।
“নিহান!”
পরিচিত মেয়েলি ডাকে নিহান মাথা তুলে পিউকে দেখে যথা সম্ভব ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
“আরে তুই। কখন এলি?”
“একটু আগে। কিন্তু তোর কী হয়েছে? এমন বিষণ্ন দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
নিহান হাসি আরেকটু চওড়া করে বলল,
“বিষণ্ণ? বিষণ্ণ কেন দেখাবে? তুই কী যে বলিস।”
“একদম মিথ্যে বলবি না। সত্যি করে বল কী হয়েছে তোর?”
“বিশ্বাস কর কিছু হয়নি।”
“আমরা না বেস্ট ফ্রেন্ড হয়? বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকে কিছু লুকাতে নেই। বল না কী হয়েছে? না-কি তুই আমাকে ফ্রেন্ড মনে করিস না? তাই বলতে চাইছিস না?”
নিহান গাল ভরে শ্বাস নিলো। বুঝলো লুকিয়ে আর কোনো লাভ নেই। সব না শুনে পিউ ওকে ছাড়বে না। উপায়ান্ত না পেয়ে পিউকে সব খুলে বলে। সব শুনে পিউয়েরও মন খারাপ হয়ে যায়। নিহান উদাস কণ্ঠে বলল,
“কত ইচ্ছে ছিলো ভাইয়ার সাথে গলা মিলিয়ে গান করার। আমার সেই ইচ্ছে বোধহয় কখনও পূরণ হবে না…”
হঠাৎ পিউয়ের ওষ্ঠধারে হাসি ফোঁটে। নিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“আল্লাহ তোর ইচ্ছে নিশ্চয়ই পূরণ করবে। সেটাও আজকেই করবে।”
নিহান অবাক হয়। পিউয়ের কথার অর্থ বোঝে না। আর না হাসার অবাক স্বরে শুধায়,
“মানে?”
“ওদিকে দেখ!”
পিউ ইশারায় নিহানকে পিছে তাকাতে বলে। নিহান ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে ফেরে। নাওয়াস বাইক স্ট্যান্ড করছে। নাওয়াসের সাথে ওর বন্ধুরাও আছে। নাওয়াসের পরনে নীল পাঞ্জাবি। নিহান ভালো করে খেয়াল করতেই চমকে গেলো। এটাতো সেই পাঞ্জাবিটা, যেটা অনুষ্ঠানের জন্য নিহানই বানিয়েছিলো। নাওয়াস নিহানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। নিহানের বিস্ময় ভাব এখনও কাটেনি। নাওয়াস নিহানকে এমন বড়ো বড়ো চোখে তাকাতে দেখে হালকা কাঁশে। তৎক্ষণাৎ নিহানের ধ্যান ভাঙ্গে। বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
“ভাইয়া তুমি? এখানে, এভাবে?”
নাওয়াস গলা ঝেড়ে নিহানের দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তাড়াতাড়ি চেন্জ করে আসো। একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।”
“এতে কী আছে?”
“পাঞ্জাবি!”
“পাঞ্জাবি?”
“হুম পারফর্ম করবে না? ম্যাচিং না হলে টিম মনে হবে না।”
নিহান কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়ে যায়। বিমূর্ত কণ্ঠে আওড়াই,
“তুমি পারফর্ম করবে?”
“হ্যাঁ!”
মুহূর্তে নিহান খুশি হয়ে যায়। নাওয়াসকে ঝাপটে ধরে বলে,
“থ্যাঙ্ক ইয়্যু সো মাচ ভাইয়া! আই লাভ ইয়্যু!”
নাওয়াস ভিষণ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। পিউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। নাওয়াস দ্বিধা-দ্বন্দ্বিত ভাবে নিহানের মাথা হাত বুলিয়ে বলল,
“চেন্জ করে আসো। নয়তো লেট হয়ে যাবে।”
নিহান নাওয়াসকে ছেড়ে বলল,
“হ্যাঁ এখুনি যাচ্ছি।”
নিহান উৎফুল্লতার সহিত চেন্জ করতে গেল। নিহানের মুখে হাসি দেখে নাওয়াস মনে মনে খুশি হলো। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ করল না। পিউ নাওয়াসের সামনে এগিয়ে এসে বলল,
“মাশাহআল্লাহ ভাইয়া আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
নাওয়াস পিউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“তোমাকেও ভিষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে।”
“ধন্যবাদ!”
“আমাদের কেমন লাগছে?”
পিয়াশ,তন্ময় আর মিন্টু এক সাথে শুধায়। পিউ হেসে বলল,
“আপনাদেরকেও সুন্দর লাগছে।”
পিউকে ম্যাম ডাকায় পিউ ভিতরে চলে যায়। নাওয়াস আর ওর বন্ধুরা ওখানেই অপেক্ষা করে। সেই সময় প্রত্যাশা ভিতরে আসে। নাওয়াস আশেপাশে তাকিয়ে স্কুলের ডেকোরেশন দেখছিল। সেই সময় নাওয়াসের চোখ মেইন গেটের সামনে আটকে যায়। এক মুহূর্তের জন্য নাওয়াসের হার্টবিট মিস হয়। সাদা শাড়ি পরিহত
প্রত্যাশা ব্যস্ত পায়ে এদিকেই আসছে। দ্রুত হাঁটার দরুন প্রত্যাশার কাধসম খোলা লালচে বাদামি চুল হাওয়াতে দুলচ্ছে। হাতে চুড়ি আর পায়ের নূপুরের রিনঝিন রিনঝিন শব্দ, শুনে মনে হচ্ছে এযেন কোনো শ্রুতিমধুর সংগিতের ধ্বনি। কথায় বলে শাড়িতেই নারী। রুফাইজের আজ মনে হলো কথাটা যে বলেছে সে একশ শতাংশ সঠিক বলেছে। নাওয়াস প্রত্যাশাকে এতদিন সেভাবে খেয়াল করেনি। মেয়েটা চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের অধিকারী। শাড়িতে যেন আজ মেয়েটার সেই রূপ আরও ভালো মতো প্রকাশপাচ্ছে… নিজের দিকে কারো গভীর দৃষ্টি অনুভব করে,প্রত্যাশা আশেপাশে চাইল। নাওয়াসের স্থির দৃষ্টিতে দৃষ্টি পড়তে প্রত্যাশাও থমকে গেল। প্রথমে একটি বিবর্তবোধ করে। পরক্ষণে প্রত্যাশা নাওয়াসকে ভালো করে খেয়াল করতেই বিমোহিত হলো। একপলক নাওয়াসকে সম্পূর্ণ দেখে নিলো। শ্যামবর্ণের এই মানবকে পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুদর্শন লাগছে। নীল রঙের কারুকাজ সম্পূর্ণ পাঞ্জাবি বেশ ভালোই মানিয়েছে। শক্তপোক্ত দেহে আঁটসাঁট হয়ে লেপ্টে আছে পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ওপরের দুটো বোতামও খোলা আছে। সাথে হাতাও গুটিয়ে রাখা। বরাবরের ন্যায় ঝাঁকরা অগোছালো চুল। এতে যেন ছেলেটার সৌন্দর্যবর্ধন করছে বহুগুন। অদ্ভূত বিষয়।প্রত্যাশার নীল রং ভিষণ প্রিয়। কাঁকতালিয় ভাবে নাওয়াসেরও প্রিয় রং নীল। সেকারণেই নিহান নীল পাঞ্জাবি বানিয়েছে।
নিহান পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে আসে। প্রত্যাশাকে দেখে বলল,
“আরে আপু কেমন আছো?”
নিহানের বাক্যে দুজনেরই হুঁশ আসে। মিন্টু এতক্ষণ প্রত্যাশাকে খেয়াল করেনি। প্রত্যাশাকে দেখা মাত্রই নাওয়াসের পিছে লুকায়।
“আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি। তোমাকে কিন্তু শাড়িতে দারুণ লাগছে আপু। পুরো বিদেশী বঙ্গ ললোনা।”
নিহানের ফাজলামোতে প্রত্যাশা ঠোঁট প্রসারিত হয়। নিহানের চুল এলোমেলো করে বলল,
“তোমাকেও কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম লাগছে। পুরো শাহরুখ খান।”
উত্তরে নিহানও বিস্তর হাসে। বলে,
“আচ্ছা আমি ওদিকে যায়। ম্যাম ডাকছে।”
“ভাইয়া তুমি কিন্তু আশেপাশেই থেকো।”
প্রত্যাশা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। নাওয়াস আড়চোখে প্রত্যাশাকে দেখছিলো। মেয়েটা অন্যেদের থেকে আলাদা। স্ট্রোং ব্যক্তিতের। আত্মনির্ভর, স্পষ্টভাষী। দিনকে দিন রাতকে রাত বলতে জানে। প্রত্যাশা ওদের দিকে তাকাতে মিন্টুর কাচুমাচু মুখ দেখতে পেলো। মিন্টু যে ওকে দেখেই এমন লুকিয়েছে বুঝতে পেরে বলল,
“এমন কাজ করো কেন? যার জন্য অন্যে পিছে মুখ লোকাতে হয়?”
মিন্টু থতমত খেয়ে যায়। প্রত্যাশা চলে যায়। নাওয়াস কঠিন দৃষ্টি মিন্টুর ওপর নিক্ষেপ করে। কিন্তু কিছু বলে না। বরং নাওয়াসও চলে যায়।
চলবে…
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)