#এক_চিলতে_ভালোবাসা
[দ্বিতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
আচমকা বুকের উপরে ভারী কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকালাম। চোখ খুলতেই আকি চমকে উঠলাম। কারণ আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে জয়া, বেশ অবাক হলাম, জয়া কি তাহলে সারারাত আমার বুকের উপরে শুয়ে ছিলো? কিন্তু রাতে তো সে খাটের উপরে ছিলো।
আমি জয়ার দিকে তাকালাম। মেয়েটা খুব শক্ত করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে। আমি এবার জয়াকে যখন সরাতে চেষ্টা করলাম তখনই মেয়েটার ঘুম ভেঙে যায়।
আমার তাকানো দেখে জয়া খুব লজ্জা পেয়ে যায়। সে উঠতে উঠতে বলল — আসলে একা শোয়ার অভ্যাস নেই তো। খুব ভয় পাইছিলাম।
— আচ্ছা ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে নেন।
জয়া আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। জয়া কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলো। আমি তো মুগ্ধ নয়নে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। খুব সুন্দর লাগছিলো। মেয়েটা কখন যে আমার সামনে চলে এলো আমি খেয়ালি করিনি।
— এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আমি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। তারপর বেরিয়ে এসে দু’জন নাস্তা করতে চলে গেলাম। দেখলাম আব্বু আম্মু আগে থেকেই বসে আছে। আমরা গিয়ে তাদের সামনে বসলাম।
হঠাৎ করে আব্বু বলল — সবুজ, তোর শ্বশুর ফোন দিয়েছে। উনি বলছে তোকে আর বউমাকে ওখান থেকে ঘুরে আসতে।
— আজকে?
— হুম। বউমা যাবে নাকি?
জয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করল আব্বু। জয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। কিন্তু আমার কেন জানি খুব ভয় করছে। সেখানে গিয়ে যদি কিছু হয়? আমার শরীর টাও খুব একটা ভালো দেখছিনা। আমি বললাম — আব্বু আমি না গেলে হয়না? আসলে আমার একটু কাজ ছিল।
— তোর এখন কিসের কাজ? অফিস তো অফ। আর তুই না গেলে বউমা কি একা যাবে নাকি? বাচ্চাদের মতো কথা বলিস কেন?
আমি আর কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। কি বলব? কিছুই তো বলার নাই। সবাইকে তো বলতেও পারছিনা আমার রোগের কথা। তারপর কোনো রকমে নাস্তা খেয়ে নিজের রুমে গেলাম। আমি রুমে একাই বসে আছি। তখন আম্মু আমার রুমে আসলেন।
— বাবা, তোকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে, তুই ঠিক আছিস তো?
মায়ের মন বলে কথা। সন্তানের কিছু হলে আগে খবর পায় মা। কিন্তু আমি তো সত্যি টা বলতে পারছিনা।
— না আম্মু কিছু হয়নি তো।
— ওহ, আমার মনে হচ্ছে তুই কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছিস আমার থেকে।
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম — আরে কি লুকাবো? কিছু হয়নি তুমি অহেতুক চিন্তা করছ।
আম্মু আর কিছু বলল না। তারপর উনি চলে গেলো। আমি রুমে বসে ডাক্তারকে কল দিলাম। ডাক্তার ফোন রিসিভ করল।
— আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়া আলাইকুম সালাম। এখন কি অবস্থা আপনার?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। গতকাল রাতে ব্লিডিং হইছিল আবার।
— আমার মনে হয় আপনার দ্রুত মেডিক্যাললে ভর্তি হওয়া উচিৎ। আগে থেকে চিকিৎসা করলে হয়তো ভালো হওয়ার চান্স আছে।
— আমি মনে হয় আর বেশি দিন বাঁচবোনা, যত দিন আছি পরিবারের সাথে সময় কাটাই। তাহলে মরে গেলেও আফসোস থাকবেনা।
— কি বলছেন এসব?
— ডাক্তার সাহেব, আমি তো জানি সব। আমাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে লাভ নেই।
— পরিবারকে জানিয়েছেন?
— নাহ। আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। ঘরে নতুন বউ।
— নতুন বউ মানে?
এবার ডাক্তারকে সব কিছুই বললাম। ডাক্তার কি বলবে সেও ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা।
— আচ্ছা কল রাখি এখন।
— আমার মনে হয় বিষয় টা বাসায় জানানো উচিৎ।
— তারা মেনে নিতে পারবেনা। সেই জন্য আমি কাওকে জানাতে চাইছিনা।
ডাক্তারের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলাম। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রী জয়া চলে আসছে।
— আপনি কি কোনো কারণে আমার উপরে রেগে আছেন?
মেয়েটার প্রশ্ন শুনে আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম — তোমার উপরে রাগ করব কেন?
— তাহলে আমাদের বাড়িতে যেতে চাইছেন না কেন?
— আসলে একটু কাজ ছিল সেই জন্য। সমস্যা নেই আমি যাবো। জামাকাপড় রেডি করে রেখে দাও।
— সত্যিই?
— হুম।
মেয়েটা আমার কথা শুনে অনেক খুশি হলো। মেয়েটা খুব অদ্ভুত। অল্পতেই খুশি হয়ে যায়।
দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে এলাম দুজনে। আম্মু আর আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম। একটা গাড়ি দাঁড় করিয়ে দু’জন উঠলাম। গাড়ি তার নিজ গতিতে চলছে।
গল্পের এতো দূর অব্দি চলে এলাম আর এখনও আমার পরিচয় দিলাম না! যাইহোক, আমি সবুজ। একটা কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে জব করছি। পরিবারে মা-বাবা আর আমি। আর আমার স্ত্রী জয়া। এবার নাইকার পরিচয় দিয়ে দেই। নাম জয়া, দেখতে প্রচুর কিউট। আর বেশি কিছু বললাম না। পোলাপান ক্রাশ খেতে পারে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আর আমার স্ত্রী শ্বশুর বাড়ির সামনে পৌছে গেলাম। গাড়ি থেকে নামতেই আমার শ্বাশুড়ি এসে জয়াকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আমরা বাসার ভিতরে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে নাস্তা দিয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি জয়ার রুমে চলে গেলাম। হঠাৎ একটা মেইলি কণ্ঠ শুনে আমি সামনের দিকে তাকালাম।
— কেমন আছেন ভাইয়া?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনাকে তো চিনলাম না! কে আপনি?
— আমি আপনার শালীকা।
— আমার যে শালী আছে সেটা তো জানতাম না!
— আমি জয়া আপুর খালাতো বোন।
— ওহ আচ্ছা।
— ভাইয়া আপনি কিন্তু অনেক কিউট। আর অনেক হ্যান্ডসাম।
— আপনি অনেক কিউট।
— কি আপনি আপনি করছেন? আমি আপনার ছোট হই। তুমি করে বলুন।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
এমন সময় জয়া রুমের ভিতরে চলে আসে। কিরে রিয়া তুই এখানে কি করিস?
— তোর জামাইয়ের সাথে পরিচিত হতে আসলাম। তুই তো পরিচয় করিয়ে দিলি না।
— পরিচয় হওয়া শেষ? এখন খেতে চল। আপ্নিও আসুন, রাত হয়েছে।
তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি ছাদের উপরে গিয়ে বসলাম। আমার শ্বশুর মশাই সিগারেটে টান দিতে দিতে আমার কাছে এসে বলল।
— কি ব্যাপার তুমি এতো রাতে ছাদের উপরে কেন? আমার মেয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?
— না বাবা।
— আমি বুঝতে পারছি, বলতে হবেনা। আসলে বাবা স্বামী মানেই অবহেলিত। আমার বউ মানে তোমার শ্বাশুড়ি ও আমার সাথে খুব ঝগড়া করে। যাইহোক সিগারেট খাও?
শ্বশুরের মুখে এমন প্রশ্ন শুনবো আমি ভাবতেও পারিনি।
— না আমি এসব খাইনা।
— গুড, সিগারেট খাওয়া ভালো না। এতে অনেক রোগ হয়।
শালা সিগারেট খেতে খেতে আমাকে উপদেশ দিতাছে। শ্বশুর কে শালা বলে ফেললাম। আপনারা আবার বলে দিয়েন না।
— স্ত্রীকে কীভাবে নিজের দখলে রাখতে হয় জানো তো নাকি?
— বাবা এটা তো আমার প্রথম বিয়ে তাই জানিনা।
শ্বশুর মশাই হাসতে হাসতে বলল — আরো বিয়ে করার পরিকল্পনা আছে নাকি?
— না বাবা।
— ওহ আচ্ছা। শোনো সব সময় বউকে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে হয়। আমার মতো। তোমার শ্বাশুড়ি আমাকে অনেক ভয় পায় বুচ্ছো।
হঠাৎ করে আমার শ্বাশুড়ির আগমন ঘটে।
— তোমাকে না কতবার বলছি রাতে ছাদের উপরে এসে এসব না খেতে।
আমার শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমার সাহসী শ্বশুর বলল — আসলে জামাইকে দেখলাম একা বসে আছে। তাই এসে একটু কথা বলছি।
— অনেক কথা বলছেন। এখন রুমে আসুন। বাবা তুমিও রুমে চলে যাও অনেক রাত হয়েছে।
আমার সাহসী শ্বশুর রুমে চলে গেলো। শ্বশুরের অবস্থা দেখে অনেক কষ্টে নিজের হাসি আঁটকে রেখেছি। বউকে কন্ট্রোল করা শেখাতে আসছিল আমায়। এসব ভাবতেই হাসি চলে আসলো। তারপর আমিও নিজের রুমে চলে গেলাম।
— এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি?
— ছাদের উপরে।
— আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত অনেক হয়েছে।
— আলাদা বিছানা নেই?
— কেন?
— আমি কোথায় ঘুমব?
— খাটে।
— আরে না। আচ্ছা আমাকে একটা বালিশ দাও। আমি সোফায় ঘুমতে পারবো।
— আচ্ছা একটা প্রশ্ন করতে পারি?
— হ্যাঁ।
— আমার সাথে ঘুমাতে কি সমস্যা আপনার? আমাকে কি আপনার পছন্দ না?
— আরে এমন কিছুই না। আমি তো বলছি আগে আমাদের মধ্যে চেনাজানা হোক। আমি চাইনা আপাতত আমাদের মধ্যে কিছু হোক।
— কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আমাকে আপনি পছন্দ করেন না।
— এমন কিছুই না।
— তাহলে আপনি আমার সাথে খাটের উপরে ঘুমবেন।
কি করব আর। আমি গিয়ে জয়ার পাশে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। আসলে চোখে ঘুম আসছেনা। খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। সবাই কতটা হাসিখুশি। এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে চলে যেতে হবে আমায়! নিজের অজান্তেই চোখের পানি পড়ছে। আমি এবার দেখলাম জয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি বালিশ নিয়ে চলে গেলাম সোফায়। কারণ কখন কি হয় বলা মুসকিল। আমি চাইনা জয়ার সাথে আমার কিছু হয়ে যাক। এমনিতেই মেয়েটার জীবন আমি নষ্ট করে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম। জয়ার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে আছে প্রচুর। রাগে মেয়েটার পুরো মুখ লাল হয়ে আছে। হঠাৎ করে দরজায় কে যেনো শব্দ করল। জয়া দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই আমি সামনের দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম।
চলবে?