একেই বলে লোক দেখানো ভালোবাসা

0
2811

মেয়ে মানুষদের বাইরে কাজ করতে নেই।আমার ঘরে কি কোন কিছুর অভাব আছে?খাবার তিনবেলা খেয়েও হচ্ছে না?
বাপের বাড়ি তো তাও জুটতো না শুনলাম।রূপ দেখে এনেছি তোমাকে।পড়াশোনা হাবিজাবি এসব ডিগ্রি-ফিগ্রি আমাকে দেখাইও না।যা বলবো তার উপরে যেন উ শব্দটা না শুনি।
এক নাগাড়ে জাহেদ কথাগুলো বললো আসমাকে।জাহেদ একটা প্রাইভেট এজেন্সিতে চাকরি করে।বেতন ভালোই।চল্লিশ হাজার টাকা।তার উঠাবসা সব উঁচু শ্রেণির মানুষের সাথে।সেদিন রাতে একটা কনভেনশন সেন্টারে জাহেদের ফ্রেন্ডের বিয়ে ছিলো।আসমা অসুস্থ ছিলো সেদিন।কিন্তু না,জাহেদের এক কথা যেতে হবে।সেখানে যাওয়ার পর আসলা লক্ষ করলো,জাহেদের আচরণে সম্পূর্ণ পরিবর্তন লক্ষণীয়।জাহেদ আসমাকে লোক দেখানো এক্সট্রা কেয়ার নিচ্ছে।খাবার খাওয়ার সময় আসমার পাশে এসে তার প্লেইটে খাবার তুলে দিচ্ছে।বিয়ে বাড়িতে আসমার সাথে হাস্যজ্জ্বোল মুখে সেলফি তুললো জাহেদ। মনে মনে আসমা ভাবছিলো,এগুলা ভ্রম নয়তো?হয়তো এখনই ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর আসমা দেখবে,সবকিছুই স্বপ্নে ঘটেছে।নিজেকে একটা চিমটি কাটলো আসমা।নাহ! ভ্রম নয়। যা ঘটছে সবই বাস্তব।
বাসায় ফিরতেই শুরু হলো মূল কাহিনী।কোন কথা না বলে জাহেদ উপর্যুপরি থাপ্পড় লাগাতো লাগলো আসমানে।আসমা কিচ্ছু বুঝতে পারলো না।মুখ ফুটে শুধু বললো,কি করেছি আমি?আমাকে এভাবে মারছো কেনো?
ফকিন্নির মাইয়া।পোলা দেখলে দরদ উলটাইয়া বাহির হয়?
মানে কী?কি এসব আবোল তাবোল বলছো জাহেদ?
আবোল তাবোল?মানে বুঝো না?
এই বলে আবার বেধড়ক মার শুরু।শেষে জাহেদ বললো,আমার বন্ধু অনিন্দ্যের সাথে কি এতো হেসে হেসে কথা হচ্ছিলো শুনি?তাকে খুব মনে ধরেছে না?

আরও দুয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে জাহেদ ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।দেয়ালে হেলান দিয়ে কান্না করছে আসমা।রাতে ঘুমানোর আগে জাহেদ ফেসবুকে ফটো পোস্ট করলো।ক্যাপশন দিলো,”সুন্দরী বউয়ের সাথে বন্ধুর বিয়েতে”
তারপর আসমার মোবাইল থেকে একই ফটো ছাড়লো।ক্যাপশন দিলো,
“আমি এবং আমার বর,বরের বন্ধুর বিয়েতে।মনে হচ্ছে এইতো সেদিনই আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমরা দুজন একসাথে এভাবেই থাকতে চাই আজীবন”

মিনিট দুয়েক পর একটা কমেন্ট এলো।জাহেদের এক ফ্রেন্ড কমেন্ট করেছে।লিখেছে,এভাবেই হাসি খুশী কাটুক ভাই ভাবীর জীবন।

একদিকে কান্না,অন্যদিকে মিথ্যে অভিনয়।

এরকমই হাজার হাজার আসমা,মানুষের চোখের অন্তরালে একটা বেস্ট কাপলের স্বীকৃতি পায়।অথচ কেউ জানেই না এই আসমাদের রোজ রাতের চোখের জল।শরীরে আঘাতের চিহ্নকে এরা আড়াল করতে জানে।নিজের প্যাশনকে বিসর্জন দিয়ে,সমাজের চোখে আসমারা লক্ষ্মীমন্ত বৌমা।
এদের অনেকের ফেসবুক ঘাটলে মনে হবে,এদের মতো কাপল আর হয় না।বিয়ে অনুষ্ঠানে এদের মতো ভালোবাসার ফটো আর কেউ তুলেই না।
অথচ এরা এক একটা কমেন্টের রিপ্লাইয়ে যখন বলে,আলহামদুলিল্লাহ দোয়া রাখবেন,তখন এরা মনে মনে বলে,সত্যি যদি আলহামদুলিল্লাহ মন থেকে বলার ফুরসত পেতাম!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে