#একাকী_বিকেল
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৪
আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন ছিলো ওইসময় গুলো। নির্বোধের মতো কাজকর্ম করে বসেছিলাম। মা-বাবা এবং রিনি আপু পাশে ছিলো বলেই বোধহয় বড় কোনো ভুলের ফাঁদে পা বাড়াইনি। আসলে, তখন যদি আমি ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করতাম তাহলে এসব কিছুই ঘটতো না। ইমোশনের কাছে হার মেনে পরপর দুটো ভুল করেছিলাম। যাইহোক, ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম এরপর। পরদিন মিথিলা আপুকে ফোন করলাম। কিন্তু পরপর বেশ কয়েকবার ফোন বেজে যাওয়ার পরেও সে রিসিভ করেনি। একপর্যায়ে ‘সুইচড অফ’ করে দিলো। বুঝতে পারলাম সে ইচ্ছে করেই আমার ফোন ধরে নি। আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বাবাকে জোর করলাম গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রিনি আপুর ধমকে তা আর কার্যকর হয়ে উঠেনি কারণ আমি তখনও অসুস্থ ছিলাম। অবশ্য বাড়িতে বড়চাচার কাছে ফোন করে মাফ চেয়ে নিয়েছিলাম। তিনি অবশ্য আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন, তাই তেমন রাগারাগি করেন নি। কিন্তু এরপর মিথিলা আপুকে যতবারই ফোন দিতাম সে তা রিসিভ করতো না বা ফোন বন্ধ করে দিতো, বাবা-মা’য়ের ফোন দিয়ে ট্রাই করেও কাজ হলো না। আমার গলা শুনেই সে কেটে দিতো। এভাবেই বিষন্নতার সাথে দিনগুলো কাটছিলো। ততদিনে আমি পড়াশোনায় বেশ ভালোই মনোযোগ দিয়েছি। তৌহিদের সাথে দেখা করা বা ঘুরতে যাওয়ার যে-সমস্ত স্মৃতি ছিলো সেগুলো মোবাইল এবং মন দু-জায়গা থেকেই ডিলিট করলাম। নাম্বার ফেললাম ব্ল্যাকলিস্টে। আজেবাজে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ ত্যাগ করলাম, নিয়মিত ভার্সিটির ক্লাসে যোগদান করতে লাগলাম। সর্বপোরি, আমি আর আমার পড়াশোনা। এই দুটো জিনিস ছাড়া দ্বিতীয় কোনোদিকেই আমি নজর দিলাম না। এরমধ্যে অবশ্য কোনো অকেশনে যোগ দেওয়ার জন্য দু-একবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া পড়েছে। কিন্তু সেগুলোতে মিথিলা আপু এ্যাটেন্ড করতো না। সে থাকতো শ্বশুরবাড়ি। অগত্যা আপুর বিয়ের পর ওর সাথে আমার আর দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বললেই চলে। আমি বুঝতাম, যে সে আমার সাথে রাগ করেই এমনটা করছে। আমার তখন সেগুলো দেখা ছাড়া কোনোকিছু করার ছিলো না। ফুফু-চাচীদের কাছে শুনেছিলাম তৌহিদের সাথে সে নাকি বেশ সুখেই আছে। থাকুক, সুখে থাকলেই ভালো। আমি তো এটাই চাই যে, তৌহিদ যাতে আমার মতো আপুকে কষ্ট না দেয়!
মাস ছ’য়েক পেরিয়ে গেছে। অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা একমাস পরেই। আমি পড়াশোনায় ডুবে আছি। রাত-দিন দেখার টাইম নেই। রিলাক্স হওয়ার জন্য পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে একটু বাইরের দিকে দৃষ্টি মেললাম। তমসাচ্ছন্ন রাতের আকাশ। তার সাথে নির্মল ঠান্ডা হাওয়া। কৃষ্ণাভ আকাশের এক কোণ জুড়ে অর্ধবাঁকা চাঁদ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে। দূরের মাঠঘাট, উঁচুনিচু বিল্ডিং দেখতে দেখতে ঝাপসা হয়ে আসা চশমার কাচ’টা ওড়না দিয়ে মুছে আবার চোখে পরলাম। তখনি ভাইব্রেট মুডে দিয়ে রাখা আমার ফোনটা ভূমিকম্পের ন্যায় কম্পিত হতে লাগলো। আমি ফোন হাতের কাছে খুঁজে না পেয়ে মোটা এক বইয়ের ভাঁজ থেকে উদ্ধার করলাম ফোনটিকে। সচরাচর আমার মোবাইলে দরকার ছাড়া ফোন আসে না। এখন আবার কে ফোন দিলো? চোখ ডলে ভালো করে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই আমার ভ্রু জোড়া আপনাআপনি কুঞ্চিত হয়ে উঠলো। মিথিলা আপুর নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। এতদিন পর! কেন? তৌহিদের সাথে কোনোকিছু হয় নি তো? একরাশ ভয় আর অস্বস্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে আস্তে করে বললাম, ‘হ্যালো..’
ওপাশ থেকে উত্তর এলো, ‘নুহা বলছিস?’
‘হ্যাঁ, মিথিলা আপু তুমি! এতদিন পর?’
আপু ভার গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন আছিস?’
‘ভালো আছি। তুমি?’
আপু আমার কথা এড়িয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলো, ‘তো? পড়াশোনা ঠিকঠাক চলছে তো?’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘হুম। পড়াশোনা ভালোই চলছে, সামনে এক্সাম। দোয়া করিও আপু।’
‘সবসময় দোয়া করবো, তুই অনেকদূর এগিয়ে যা।’
বলে আপু খানিকটা সময় চুপ করে রইলো। এদিকে আমি বুঝতে পারছিলাম না কী বলবো। অস্বস্তি আর ভয় দানা বাঁধছিলো বুকের ভেতর। আপু সুখী আছে তো? কিন্তু সংশয়কে মনে প্রশ্রয় না দিয়ে একসময় বলেই ফেললাম, ‘আপু তুমি কেমন আছো?’
ওপাশ থেকে উত্তর এলো আরো কয়েক সেকেন্ড পর, ‘আমরা জাপানে চলে যাচ্ছি।’
আমি হতভম্ব গলায় বললাম, ‘কীহ? জাপান? আমরা মানে? কী বলছো আপু বুঝতে পারছি না, মিথি আপু এ্যাই?’
‘আমরা মানে আমি আর আমার হাজব্যান্ড। তোর প্রাক্তন প্রেমিক আর আমার বর্তমান স্বামী।’
আমি অস্ফুটস্বরে বললাম, ‘ত ত তৌহিদ!’
‘হুম।’
আমি একটু নিভে যাওয়া গলায় বললাম, ‘মিথি আপু তুমি কেমন আছো ওর কাছে? তোমার সাথে মিসবিহেভ করে সে? আমার কাছে প্লিজ লুকিও না তুমি। আমি ওকে চার’টে বছর ধরে দেখছি। কোনোরকম সমস্যা হলে প্লিজ প্লিজ আমাকে জানাও আপু।’
এবার মিথিলা আপু হেসে ওঠলো। তারপর বলল, ‘রিলাক্স। আমি ঠিক আছি, ভালো আছি।’
আমার যেন এবার কান্না পেয়ে গেলো। ব্যতিব্যস্ত কন্ঠখানি একনাগাড়ে সব কথা বের করে আনছিলো, মিথি আপু? ‘আমার সাথে এতদিন কথা বলো নি কেন তুমি? ফোন করেছি কতবার। শুধু বলবো আমায় মাফ করে দিও। আমি এমনটা করতে চাই নি৷ শুধু তোমার বিয়ে যাতে না ভাঙ্গে তা-ই কাউকে কিছু বলার সাহস করি নি। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে কাজটা আমি ঠিক করি নি। আমি খুব অনুতপ্ত আপু, খুব গিল্টি ফিল হয় আজো আমার।’
মিথিলা আপু এবার তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘এরকম ফিল হওয়ার কারণ নেই। তবে এটা সত্য, আমি প্রথমে মানতে পারি নি তোদের সম্পর্কটা। প্রচন্ড রাগ ছিলো আমার তোর ওপর, মুখটাও দেখতে চাই নি তোর। পরে অবশ্য তোর জায়গায় নিজেকে রেখে চিন্তা করলাম। বুঝতে পেরেছিলাম দোষ তোর বা আমার নয়, তৌহিদের-ই দোষ। সে প্রতারণা করেছে তোর সাথে। এই নিয়ে ওর আর আমার মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। নুহা, তৌহিদ কী ক্ষমা চেয়েছিল তোর কাছে?’
আপুর কথা শুনে ভয় ভয় ভাবটা উবে গেল। অবাক গলায় বললাম, ‘না। তোমাদের বিয়ের পর ওর সাথে আমার আর কথাই হয় নি। আর জীবনে হবেও না। কিছু মনে করো না আপু, আমি ওর মুখটাও দেখতে চাই না। আমি তোমাদের সংসারে অশান্তির কারণ হতে চাই না। তুমি ওর সাথে ভালো থাকো। আর পারলে রাগ রেখো না আমার ওপর।’
মিথিলা আপু গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘হুম।’
‘তো জাপানে যাচ্ছো কখন?’
‘পরবর্তী সপ্তাহেই ফ্লাইট। কীসের জন্য যাচ্ছি জানতে চাইবি না?’
আমি ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘ব্যবস্থা করলো কে?’
‘তৌহিদের বড় ভাই জাপানে থাকে, তিনিই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন আমরা ওখানেই স্যাটেল হবো। তবে এর পেছনেও একটা কারণ আছে।’
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী কারণ আপু?’
মিথিলা আপু ধীর কন্ঠে বলতে লাগলেন, ‘দু-মাস আগে অফিস থেকে ফেরার পথে ছোটখাটো একটা এক্সিডেন্ট হয় তৌহিদের৷ গুরুতর শারীরিক আঘাত না পেলেও মাথার পেছনে প্রচন্ড আঘাত পায়। আমরা ডাক্তার দেখিয়ে এক সপ্তাহ হসপিটালে রেখেও আনি৷ কিন্তু ইদানীং তৌহিদের মানসিক একটা প্রবলেম দেখা দিয়েছে। সে হুট করেই কাউকে চিনতে পারছে না। পরিবারের লোকজন ব্যতীত অন্য কোনো স্মৃতি ওর মনে নেই। সারাক্ষণ নির্বাক হয়ে থাকে, কেমন একটা উদ্ভ্রান্ত ভাব। অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলে। ডাক্তার বলেছে এক্সিডেন্টের কারণে ওর মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেজন্য ও হঠাৎ হঠাৎ কাউকে চিনতে পারছে না। আর সমাজে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের একটা আলাদা মর্যাদা আছে, তাই সবাইকে জানিয়েছে আমরা জাপানে চলে যাচ্ছি। আসলে যাচ্ছি তো তাঁদের অস্বাভাবিক অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে। মূলত ওর চিকিৎসার জন্যই যাওয়া।’
বিস্ময়ে বিমূঢ় আমি কোনো জবাব দেওয়ার ভাষা পেলাম না। চুপ করে বসে থেকে সব শুনে যাচ্ছি। আপু উদাস কন্ঠে আবার বলল, ‘মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানিস? এটা তৌহিদের কর্মফল। শত হলেও মানুষটা তো আমার স্বামী, তাই ছেড়ে যেতে পারছি না। বিয়ে যখন হয়েই গেছে সবটা মেনেও নিয়েছি। কিন্তু আমার সাথেই কেন এরকম হলো বলতে পারিস নুহা?’
ধরে আসা গলাটা কোনো শব্দ ব্যয় করতে রাজি হলো না। আমি ঢোক গিললাম পরপর দুইবার। অতঃপর বললাম, ‘তুমি ভালো নেই আপু, তাহলে বাড়ির সবাই কেন বলছে তুমি সুখে আছো?’
আপু মৃদু হেসে বলল, ‘কারণ আমি সবাইকে বলেছি যে ভালো আছি। আর সত্যিই তো আমি সুখে আছি। তৌহিদের ব্যাপারটা ছাড়া অন্য সবদিক থেকে সুখী আমি। কিন্তু স্বামী-ই তো আসল তাই না? এসব টাকাপয়সা দিয়ে আমি কী করবো!’
‘আমার খুব খারাপ লাগছে আপু।’
‘সেটাই স্বাভাবিক। তবে ডাক্তার বলেছে চিকিৎসা করালে ও ঠিক হয়ে যেতে পারে। অনেকদিন পর তোর সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পেরে নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। শান্তি লাগছে অনেক। রাগ পুষে রাখিস না আমাদের ওপর নুহা, পারলে ক্ষমা করে দিস।’
আমি হতচকিত কন্ঠে বললাম, ‘একথা আসছে কেন?’
‘অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও আমি তোর জায়গা কেড়ে নিয়েছি। তৌহিদ তো মাফ চায় নি তোর কাছে, সে পরিস্থিতিতেই তো ও নেই। ওর হয়ে আমিই না হয় ক্ষমা চেয়ে নিলাম। ভালো থাকিস নুহা।’
আমি ধরে আসা গলায় বললাম, ‘তুমি অনেক ম্যাচিউর কথা বলা শিখেছো আপু। ভালো থেকো, আর মাঝেমধ্যে ফোন দিও আমাকে।’
আপু হাসলো, ‘হুম, রাখি।’
‘আল্লাহ হাফেজ।’
সেদিনের সেই তমসাচ্ছন্ন রাতে মিথিলা আপুর সাথে কথা বলতে পেরে খুব শান্তি লাগছিলো আমার। তবে তৌহিদের ভুলে যাওয়া রোগ এবং মিথিলা আপুর বিষন্নতা দেখে খারাপও লেগেছিল। সেই রাতে আমি দু’চোখের পাতা এক করে ঘুমাতে পারি নি। একলা ঘরে কেঁদেছিলাম অনেক, এতে মনটা খুব হালকা হয়েছিল। জাপান যাওয়ার আগে একদিন মিথিলা আপু ভিডিয়ো কলে কথা বলেছিল। ওটুকুই দেখা আমাদের। তারপর আপু চলে গিয়েছিল আমাদের ছেড়ে, নিজে দেশ ছেড়ে ভিনদেশে। আর আমি নিজের পরীক্ষার টেনশনে একসময় এসব কথা ভুলেই গেলাম। খুব ভালো পরীক্ষা হয়েছিলো সেবার, জিপিএ পয়েন্ট বেশ ভালো হয়েছিলো। স্যাররাও আমার ওপর খুব খুশি। বাবা-মা’য়ের দোয়া ভালোবাসা নিয়েই দারুণ রেজাল্ট নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করলাম। ভুলেও নতুন কোনো সম্পর্কে জড়াইনি। অতঃপর চাকুরির প্রস্তুতি। এটাতেও ভাগ্যক্রমে টিকে গেলাম। অনেক জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে অবশেষে একটা কলেজে চাকুরি হলো আমার। নিজের সাফল্যে পরিবারের সবার সাথে সাথে আমিও খুশি। তবে সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গে তখন আমি বুঝতে পারলাম মেয়েদের বয়সটা কোনো ব্যাপার না। যে-কোনো পরিস্থিতিতে, যে-কোনো বয়সে ইচ্ছে করলে তাঁরা সব পারে, তাহলে কেন বয়স নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা? আর পড়াশোনার তো কোনো বয়সই হয় না।
এরইমধ্যে রিনি আপুর বিয়ে খেয়ে আসার পর বাবা এবার বেশ তোড়জোড় করেই ঘটকের মাধ্যমে আমার জন্য পাত্রের খোঁজ লাগালেন। তিনি একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছেলে দেখতে চান। বাবার এ প্রস্তাবে আমার বেশ রাগ হলো। আমাকে দেখে এখনো যে কেউ ভাবে আমি বুঝি ইন্টারমিডিয়েটে পড়া বাচ্চা মেয়ে, আর বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে জামাই দেখতে চায়, হুহ! তাঁর বুঝি মায়া হয় না একমাত্র মেয়ের জন্য! একপ্রকার ক্ষেপে গিয়েই একরাতে বাবাকে গিয়ে বললাম, ‘বাবা আমি বিয়ে করবো না, চিরকুমারী থাকবো।’
বাবা আমার অভিমান বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি তো মরার আগে দেখতে চাই, আমার মেয়ের পাশে একজন কেউ আছে। যে তাঁকে আগলে আগলে রাখছে।’
‘তার কোনো প্রয়োজন নেই, আমি একাই নিজেকে সামলাতে পারবো।’
বাবা আবারও হাসলেন। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন, ‘তা যে পারবি আমি জানি। কিন্তু আমারও তো মন চায় ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিতে, নাতি-নাতনির মুখ দেখতে। অনেক তো হলো পড়াশোনা, চাকরি। এবার তো সংসারটাও করতে হবে মা।’
বাবার আহ্লাদী কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো আমার। কতকিছু ভেবে রেখেছে সে তাঁর মেয়েকে নিয়ে! আর বাবা আমার কাছে কোনো আবদার করেছে আর তা আমি রাখবো না সেটা কখনোই হবে না। বাবার বুকে মাথা রেখে নাক টেনে ক্যাটকেটে গলায় বললাম, ‘আমি বিয়ে করবো কাকে জানো? শাহরুখ খানের মতো ছেলেকে। এরকম ছেলে পেলেই করবো। খুঁজে পেলে তবেই এনো। নয় তো বিয়ের চিন্তা বাদ দাও।’
বাবা হেসে বলেছিলেন, ‘তুই তো রাজকন্যা, আমিতো রাজপুত্র খুঁজে আনবো তোর জন্য। শাহরুখ তো বুড়ো বনে গেছে, তাঁর নিজেরও স্ত্রী-সন্তান আছে। ওর মতো কারো কাছে তো আমি মেয়ে তুলে দিতে পারি না। হাজার কথার এক কথা, তুই আমার একমাত্র মেয়ে!’
বাবার মুখে শাহরুখ খানের নামে নিন্দে শুনে আমি মুখ ভেঙচি কেটে বলেছিলাম, ‘তবে তোমার রাজপুত্রকে-ই এনো। দেখি সে কোন রাজ্যের, কেমন ডালিমকুমার!’
চলবে…