#একাকী_বিকেল
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৩
কখনো যে আমার জীবনে এমন দিন আসতে পারে, তা আমার ছোট মস্তিষ্ক ভাবতেই পারে নি। আমিও যে বোকা এবং স্বার্থপরের মতো নিজের রাগ আর ইগো বজায় রাখতে কাউকে ব্যবহার করবো ভাবি নি। তৌহিদের জন্য নিজের পরিবারকে তো কষ্ট দিলাম-ই আবার মিথিলা আপুকেও ওই প্রতারকের জীবনের সাথে জুড়িয়ে দিলাম। নিজেকে যেন কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলাম মা। আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার পর বাবার চোখের কোণে আমি জলধারা দেখতে পেয়েছিলাম। কান্না চেপে তিনি গম্ভীর গলায় আমাকে বলছিলেন, ‘তোর কাছে আমরা পর হয়ে গেছিলাম, তাই না নুহা? তুইতো এখন অনেক বড় হয়ে গেছিস, নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছিস। এখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারিস। আমাদের আর কোনো দরকার নেই তোর জীবনে!’
আমি নত মস্তকে তাকিয়ে রইলাম কার্পেটের দিকে। কি উত্তর দেব, মাথায় আসছে না। মা আর রিনি আপু চুপ। বাবা বললেন, ‘তুই আমার একটামাত্র মেয়ে। আত্মহত্যা করতে যাওয়ার আগে একবারও আমাদের চেহারা তোর মনে পড়েনি?’
আমি নিষ্প্রভ কন্ঠে এবার বললাম, ‘আমি আসলে বুঝতে পারি নি বাবা, আমার যে তখন কি হয়েছিলো নিজেই ঠাহর করতে পারছিলাম না।’
রিনি আপু তেজদীপ্ত কন্ঠে বললেন, ‘তাই বলে নদীতে ঝাঁপ দিবি? ওই কুলাঙ্গারটার জন্য?’
বাবা-মা’য়ের সামনে তৌহিদকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাটা শুনে আমি বড় বড় চোখ করে তাকালাম আপুর দিকে। আঁখিদুটি কাঁপছে অনবরত। বুকের ভেতর হৃদযন্ত্রটা অনবরত ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে, এই বুঝি বেরিয়ে এলো। ভয়ে-আতঙ্কে শুষ্ক ঠোঁটজোড়া জিভ দিয়ে ভিজে নিলাম। বাবা কী রিয়্যাক্ট করবে আমি দেখার অপেক্ষায় আছি। আমাকে কি আবার মারবে? নাকি তুলকালাম কান্ড ঘটাবে? শান্তশিষ্ট মানুষকে নাকি রাগাতে নেই, তাহলে নাকি তাঁদের ভয়ানক রুপে দেখতে হয়। আমিও বাবার সেই রুক্ষমূর্তি দেখার অপেক্ষায় আছি! আমাকে কাঁচুমাচু অবস্থায় দেখে বাবা উঁচু গলায় কথা ছুঁড়লেন, ‘রিনি যা জিজ্ঞেস করেছে তার উত্তর দাও, চুপ করে আছো কেন এভাবে?’
বাবার কথা শুনে আমি আড়চোখে রিনি আপুর দিকে তাকালাম। তার মানে আপু সবাইকে সব বলে দিয়েছে। ইশ, বড়চাচার কাছে আমি ছোট হয়ে গেলাম। না জানি তিনি আমাকে কতটা দোষারোপ করছেন। আর মিথিলা আপু? সে তো কখনোই আমাকে ক্ষমা করবে না। আমি মাথা তুলে একটা ঢোক গিললাম। বুকভরে শ্বাস নিয়ে বললাম, ‘আ আসলে আমি বুঝতে পারি নি। ঘোরের মধ্যে ছিলাম হয়তো এই ভুলটা করে ফেলেছি!’
রিনি আপু ক্যাটক্যাটে গলায় বলল, ‘ঘোরে ছিলি মানলাম। তাই বলে এই গভীর নদীতে ঝাঁপ দিবি, যেখানে সাঁতার জানিস না। বাংলা সিনেমা পাইছিস ডাফার? তুই কী ভাবছিলি তৌহিদ এসে বাঁচাবে তোকে?’
আমি কাতর কন্ঠে বললাম, ‘তা নয় আপু।’
রিনি আপু ধমকের সুরে বললেন, ‘আমার তো ইচ্ছে করছে তোকে চড়াইড়া গাল লাল করে ফেলতে। এত্ত বোকা তুই কবে হলি নুহা? ইউ আর মেকিং ওয়ান মিস্টেক আফটার এনাদার!’
বাবা এবার আমার পাশে বসলেন। আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিলো। এই মানুষগুলোর সাথে সত্যিই অন্যায় করেছি আমি। বাবা বসতেই আমি তার হাতদুটো আঁকড়ে ধরে বললাম, ‘ক্ষমা করে দাও বাবা, এমন করা আমার উচিৎ হয় নি।’
বাবা আমাকে শক্ত কন্ঠে বললেন, ‘এটাই শেষবার। আর কোনো ভুল করলে ক্ষমা পাবি না। এমন একটা কথা শুনেছিস তো, ‘শক্তের ভক্ত, নরমের যম!’ এখন থেকে আমার এই রুপটাই দেখবি। বেশি ছাড় দিতে দিতে তুই ওমন মাথায় উঠে গেছিস যে, আত্মহত্যার চিন্তা করতে তোর একবারও বিবেক বাঁধা দিলো না। এখন থেকে আমি যা বলবো তা-ই শুনবি তো?’
বাবার কথা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, ‘হ্যাঁ, তোমরা যা বলবে তা-ই শুনবো আমি। একবার ঠকেছি, আর ঠকতে চাইনা।’
বাবা উগ্র মেজাজে বললেন, ‘তুই তৌহিদের ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুলে বলিস নি কেন? আমরা কী তোকে মেরে-কেটে ফেলতাম?’
‘ভেবেছিলাম অনার্স শেষ করে চাকরি পেয়ে তবেই জানাবো। কিন্তু ও আমায় এভাবে ঠকাবে ভাবি নি আমি।’
‘মানুষের মন বলে কথা। কখন যে পালটে যায়, বোঝা মুশকিল। তোর বড়চাচা শুনে খুব ক্ষেপে গেছে, কী করবে বুঝতে পারছে না। ডিফেন্সে চাকুরী করা ছেলে দেখে ওরা ভাবেনি ছেলের কোনো এফেয়ার থাকতে পারে। তাছাড়া তৌহিদকে দেখে সবার খুব পছন্দ হয়েছিলো। তার ওপর মিথিলার বয়স নিয়ে পড়শীরা যা শুরু করেছিল এতে করে বরপক্ষের কাছ থেকে পজেটিভ সাইন পেয়ে ওরা ছেলের ক্যারেক্টার সম্বন্ধে কোনো খোঁজখবর নেয় নি। অথচ তৌহিদকে দেখ, সে তোর সাথে তখনো সম্পর্ক নষ্ট করেনি। অসুস্থতার মিথ্যা ভান করে বিয়ের দিনও তোকে জানায়নি যে ও আর তোকে চায় না। এতেই বোঝা যায়, এই ছেলে বিয়ের পরেও তোর সাথে সম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলো। এক নৌকায় দুই পা রেখে চলতে চেয়েছিলো। কতটা অসৎ চিন্তা ছিলো ওর মনে ভাবতেই আমার রাগ উঠে যাচ্ছে। ওরকম ছেলের প্রেমে কীভাবে পড়লি তুই নুহা? ইচ্ছা করছে চাপকিয়ে তোর পিঠের ছাল তুলে ফেলতে! তোর জীবনের মস্ত বড় ভুল এটা!’
এভাবেই বাবা আমাকে আরো কিছু কথাবার্তা শুনিয়ে বকাঝকা করে উঠে গেলেন। তবে তৌহিদের সত্যটা যে অবশেষে সবাই জানতে পেরেছে এটাই আমার কাছে স্বস্তিকর বলে মনে হলো। এখন আফসোস হচ্ছে, প্রথমেই জানিয়ে দিলে সবকিছু আজ ঠিক থাকতো। বাবা-মা’য়ের চেয়ে পরম বন্ধু যে দুনিয়াতে আর কেউ নয়, হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলাম। অথচ তাঁদেরই এতদিন ভয় পেয়ে তৌহিদের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্কটা গোপন করে বসেছিলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম শুধু৷ মা আমার কাছে বসেছিলেন। তিনি ওই ব্যাপার নিয়ে ভালোমন্দ কিছুই বললেন না। শুধু জিজ্ঞেস করলেন, ‘পায়ের ব্যথা কমেছে রে নুহা? ক’টা ভাত আনবো? ইশ, শরীরটা কেমন শুকিয়ে গেছে তোর। এত ধকল গেলে এরকম তো হবেই।’
প্রায় একদিন, আমার পেটে কিছুই পড়েনি। তাই মা’য়ের কাছে ভাতের কথা শুনে পেটের ক্ষিধেটা যেন নতুন উদ্দীপনায় জেগে ওঠলো। আমি বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসতে বসতে মৃদুস্বরে বললাম, ‘হুম আনো। বড্ড ক্ষিধে পেয়েছে।’
আমার কথা শুনে মা হন্তদন্ত হয়ে উঠে চলে গেলেন খাবার আনতে। প্লেটে করে ভাত আর মুরগীর তরকারি নিয়ে এলেন। অতঃপর ভাত-তরকারি মেখে নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দিলেন আমায়। ভাবলাম, মরে গেলে কী মায়ের হাতে আর কখনো খাবার খেতে পারতাম? কী ভুলটাই না করতে গেছিলাম আমি। আমাকে খাইয়ে দিয়ে মা থালা-বাটি হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ভেজা মুখটা তোয়ালে দিয়ে মুছে নড়েচড়ে বসলাম। পায়ের ব্যথাটা এখন হালকা কমেছে। দুটো বালিশ পায়ের নিচে দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালাম ডানপাশে। এখন ঘরে শুধু রিনি আপু আর আমি। আপু একমনে ফোন ঘাঁটছেন। ঘরে বিরাজ করছে ঘূর্ণায়মান পাখাটির মৃদুশব্দ। ড্রেসিং টেবিলের এটাচড টুলটাতে বসে থাকা রিনি আপু এবার ফোন রেখে আমার কাছে এসে বসলো। আমার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো, ‘ঠিকঠাক আছিস তুই? এরকম ভুল আর কখনো করবি না। বাবা-মায়ের চেয়ে আপন আর কে আছে জগতে? শুধু শুধু একটা ছেলের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেওয়াটা বোকামি। ধর, তোর যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে তৌহিদের কোনো ক্ষতি হতো? না, বরং সে ঠিকই নিজের ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। তোর জন্য ভেবে দু’দন্ড সময়ও নষ্ট করতো না। ভাবতো আপদ বিদেয় হয়েছে। আর মাঝখান থেকে তোর বাবা-মা সন্তান হারিয়ে সারাজীবন চোখের জল ফেলতো। আর পরকালেও শান্তি পেতি না। তাই বলছি, জীবনে যা-ই করিস না কেন, ভুলেও আত্মহত্যার কথা মাথায় আনবি না। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই জীবন। নিশ্চয়ই তোর জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে নুহা।’
আমি রিনি আপুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি। আপু সবাইকে খুব সুন্দর উপদেশ দিতে পারে আর গুছিয়ে কথাও বলতে পারে। সেজন্যই ওকে আমি এত পছন্দ করি। ওর কাছে কোনো কথা লুকিয়ে রাখতে পারি না। আমাদের ধারণা, রিনি আপু কারো’র চোখের দিকে তাকালেই মনের ভেতরটা অবধি পড়ে ফেলতে পারে যেন৷ তাই ওর কাছ থেকে কিছু লুকানো দায় হয়ে পড়ে আমার। আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘আর কখনোই এরকম চিন্তাভাবনা করবো না আমি।’
‘নুহা, জীবনটা মোটেও সিনেমা নয়,বরং এর চেয়েও বেশি সিনেমাটিক। তাই কষ্ট হলেও বাস্তবতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবি। যখন তুই অনেকদূর এগিয়ে যাবি তখন এসব কষ্ট-যন্ত্রণা হালকা মনে হবে। কষ্টকে একদম প্রশ্রয় দিবি না, তাহলেই সে আঁকড়ে ধরবে। তিলে তিলে শেষ করে দিবে।’
‘হুম।’
‘প্রেম-ভালোবাসাকে প্রশয় না দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দে৷ ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ!’
আমি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি যে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছি তোমরা জানলে কীভাবে? তখন তো ওখানে কেউ ছিল না। বাঁচালো কে আমায়? আর বাসায়ই বা এলাম কখন?’
রিনি আপু নির্লিপ্ত কণ্ঠে খুলে বললেন পুরো ঘটনা, ‘শোন নুহা! তুই যখন পানিতে ঝাঁপ দিলি তখন আমি রান্নাঘরে। ঘরে যে কাজ করতো বুয়া, তার ছোট একটা ছেলে আছে না? নাম বোধহয় ইভান। ও এসে কাঁদতে কাঁদতে জানালো খয়েরি রঙের শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে নাকি পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে আর উঠেনি। খয়েরি শাড়ি শুনে প্রথমেই তোর কথা মনে হলো। যা ডিপ্রেসড ছিলি মিথি’র ব্যাপারটাতে, তখন তুই ছাড়া আর কারোর কথা মাথায় আসে নি আমার। কারণ আমি ছাদ থেকে দেখেছিলাম তুই-ই নদীর ঘাট’টাতে বসে ছিলি। এরপর সবাইকে নিয়ে ঘাটে ছুটে যাই, মাহাদ ভাই আর পাশের বাড়ির দুই চাচা পানিতে নামে। অনেকক্ষণ খুঁজাখুঁজির পর বের করে তোকে।, খুব বেশিদূর ভেসে যাসনি, এটাই বাঁচোয়া। সেন্স ছিলো না তোর। বাড়ির সবাই তো অবাক, হতভম্ব! মা-চাচীরা মিলে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি তুই সুসাইড এ্যাটেম্প করতেই এটা করেছিলি। তখন আমার মাথায় আসছিলো কী করবো। পানি থেকে তোলার পর দেখা যায় তোর পেটে অনেক পানি ঢুকেছে, হাত-পা ঠান্ডা বরফের মতোন হয়েছিল। অবস্থা খারাপ দেখে উপায় না পেয়ে তোকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তোর বাবার বন্ধুর পরামর্শ মতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসি তোকে। কাল রাত এবং আজ সারাদিন পর তোর সেন্স ফিরলো। কাল রাতেই অবশ্য সিচুয়েশন দেখে আমি সবাইকে সবটা খুলে বলি। কিছুই লুকাইনি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘সবাই কে? মিথিলা আপুকে ও?’
‘হ্যাঁ। বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে তৌহিদ আর মিথি ‘কে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপর সময়-সুযোগ বুঝে বড়চাচা মিথি ‘কে সবটা জানিয়েছে।’
আমি চিন্তিতমুখে বললাম, ‘আপু কী বলেছে?’
রিনি আপু হতাশ গলায় বললেন, ‘কী আর বলবে? কান্নাকাটি করে অবস্থা বেহাল। সে কিছুতেই মানতে পারছে না ব্যাপারটা।’
কথাটা শুনে আমার বেশ খারাপই লাগলো। ইশ, আপু না জানি কতশত স্বপ্ন বুনেছিলো নতুন সংসারটার জন্য। বিয়ের দ্বিতীয় দিন স্বামীর নামে এসব কথা শুনে তার মনের অবস্থাটা ঠিক কেমন হতে পারে আমি অল্প হলেও আঁচ করতে পারলাম। শুষ্ক গলায় রিনি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কী একবার মিথিলা আপুকে ফোন করবো? বুঝিয়ে বললে হয়তো বুঝবে আমার কথা!’
‘কী বলবি তুই?’
‘এটাই যে, তৌহিদের সাথে আমি আর কখনো যোগাযোগ করবো না। ওরা ওদের সংসার করুক।’
রিনি আপু হেসে বলল, ‘পাগল? মিথি রিয়্যাক্ট করতে পারে। বিয়ের পরপরই কথাটা শুনেছে তো, মানতে পারছে না।’
‘সে যা-ই হোক, একবার কথা বলতে হবে আমায়। আপুর কাছে আমি মাফ চেয়ে নেব।’
রিনি আপু হতবাক গলায় বলল, ‘কেন?’
আমি উদ্বিগ্ন স্বরে জবাব দিলাম, ‘আপু তো জিজ্ঞেস করবে, আমি কেন সব জেনেশুনে ওর সাথে এই কাজটা করলাম। নিজের ভুলটা স্বীকার করে মাফ চাইবো আপুর কাছে। নয়তো নিজেকে বারবার অপরাধী মনে হচ্ছে।’
রিনি আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ঠিক আছে। তবে এখন এসব কথা বাদ দিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতো তুই। উলটাপালটা চিন্তা বাদ দিয়ে আরামসে ঘুম দে। যা ধকল গেছে দু’টো দিন। মানুষ ঠিক থাকবে কীভাবে! তোর ওই বাস্টার্ড প্রেমিক তৌহিদের কথা মাথায় এবং মুখে দ্বিতীয়বার আনিস না।’
আমি আপুর কথা শুনে বললাম, ‘ওই বাস্টার্ডটা এখন আমার প্রেমিক নয়, কাজিন সিস্টারের স্বামী।’
রিনি আপু ফ্যাকাসে মুখ করে বলল, ‘হ্যাঁ, পোড়া কপাল আমার।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখন ফোন লাগাবো মিথিলা আপুকে?’
‘না। রাত কত হয়েছে খেয়াল আছে তোর? কাল দিস।’
আমি শুকনো কন্ঠে বললাম, ‘কিন্তু..’
আমাকে চুপ করিয়ে দিয়ে রিনি আপু ক্যাটক্যাটে গলায় বলল, ‘বেশি কথা শিখে গেছস নুহা। চুপচাপ ঘুম দে। কালকের বিষয় কাল ভাবা যাবে। আপাতত নো চিন্তা ডু ফুর্তি মনে করে চক্ষুমুদিত কর।’
রিনি আপুর কথাকে সায় জানিয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বালিশে মাথা রাখলাম। রিনি আপু আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আমি গায়ের ওপর কাঁথা টেনে দিয়ে ভাবতে লাগলাম, কালকে মিথিলা আপুকে কীভাবে সবটা বুঝিয়ে বলবো। সব শুনে আপু কী আমাকে খারাপ ভাববে? নাকি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে? মনে মনে নিশ্চয়ই ভাববে ওর ভাগ্য খারাপ।
তবে সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এবার নিজের এবং পরিবারের কথা মাথায় রেখে আমার পড়াশোনার দিকে ফোকাস করতে হবে! সবকিছু নিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরে দ্বন্দ্ব চলছে আমার। এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে এবং মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এসেছিল বুঝতেই পারি নি।
চলবে…