আমি আর অতীতের স্মৃতি মনে করতে পারিনা। পারিনা নাকি চাইনা তাও জানিনা। এগুলো নিশ্চয়ই মূল্যহীন স্মৃতি আমার ব্রেনের কাছে। যে কারনে সে মেমোরি থেকে ফেলে দিয়েছে আমার অগোচরে।
আগে অবসর পেলেই অতীতের হিসেব মেলাতে বসতাম। এখন আর কোনো প্রশ্ন করিনা নিজেকে।
অতীত টা সত্য না মিথ্যে ভিতের ওপর দাড়িয়ে আছে তা আমাকে আর ভাবায় না ।
বহু দিন তোমাকে চিঠি লিখিনা। লেখার সূযোগও পাইনা। আগে তোমাকে পাতার পর পাতা চিঠি লিখেছি। অপেক্ষায় থেকেছি তোমার আঙ্গুলের স্পর্শে লেখা অক্ষর গুলোকে ছুঁয়ে দেখবার। তখন চিঠিতেই সব মান অভিমান প্রকাশ পেত। অপেক্ষার আনন্দ যেমন ছিল তেমনি আনন্দ মিশ্রিত কষ্টও ছিল ।
অথচ বিজ্ঞানের এমন অগ্রযাত্রা যে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও এখন আমরা একে অপরের সাথে সব সময়ই কানেকটেড থাকছি। এতো কাছে থেকেও কিভাবে আমরা মন থেকে সহস্র মাইল দূরে চলে গেলে তুমি !
আসলে আজকেও লিখতাম না। তুমি দেশের বাইরে থাকায় আর একটা বিশেষ প্রয়োজনে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। যে সত্য এতোদিন আমি লালন করেছি ঘৃণা ভরে সেই সত্যই আজকে বাধ্য হচ্ছি বলতে।
এতো দিন জানতাম আমাদের সম্পর্কটা এমন মজবুত ভিতের ওপর দাড়িয়ে আছে যে একমাত্র মৃত্যু আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে। অথচ এমন একটা ঘটনা সেই বিশ্বাস আর অহংকারকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে । যদিও দৃশ্যত এখনও আমার সব কিছুই আছে।থাকবেও। সবই আগের নিয়মে চলবে।একমাত্র মৃত্যুই আমাদের কে আলাদা করবে।কিন্তু! আমরা কি একে অপরের আছি? কোনো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান নেই আমার তোমার প্রতি। শ্রদ্ধা, ভালোবাসাও নেই।
সম্পর্কের মূল ভীতটাই তো চুরমার হয়ে গেছে। শুধু টিকে আছে পরিবার নামের একটা প্রতিষ্ঠান। এখানে সকালে নিয়ম মাফিক উননে হাড়ি চাপে। বেলা শেষে চায়ের টেবিলে হাসি ঠাট্টা হয় । বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে খেতে যাওয়া হয়। সবই তো চলছে আগের নিয়মে। শুধু হারিয়ে গেছ তুমি আমার জীবনে।
কোনোদিন তুমি আমার কোনো কাজে বাধা দাওনি।আমরা দুজনই দুজনকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেছি। চাকরির সুবাদে আমাকে প্রায়ই দেশের বাইরে যেতে হতো। তুমি সবসময়ই আমাকে ইন্সপায়ার করেছ। আমার কেরিয়ারে সফলতা পেছনে তুমিই ছিলে মূল চালিকাশক্তি। আমি গর্বসহকারে সবাইকে তোমার কথা বলতাম যে তোমার মতো স্বামী যার আছে সেই মেয়ের জীবনে আর কিছুর দরকার নেই। অথচ তোমার এক মাইগ্রেনের পেইন আর বমি আমার অস্তিত্বকে নরবরে করে দিল।
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা বলছি। এ ঘটনা যে আমি জানি তা তোমরা জানোনা। সেবার মাস ছয়েকের জন্য কানাডাতে একটা কোর্সে অংশগ্রহণ করার সূযোগ পেয়েছিলাম। আমি প্রথমে যেতেই চাইনি। তুমি উৎসাহ নিয়ে বললে বাচ্চাদের নিয়ে যাও। ওরা বড় খালার বাড়িতে বেড়াক কিছুদিন। আমি ওদেরও টিকেট করে দিচ্ছি। স্কুলে এ্যপলিকেশন করে ছুটি নিলাম অনেক ঝক্কি ঝামেলা শেষে। তুমি যাবার দিন কতো মন খারাপ করলে।
সেখানে গিয়ে আমরা তো সবসময় কানেকটেড থেকেছি অনলাইনে । আমি যাবার আগে তোমার জন্য সব রান্না করে বক্সে ভরে উপরে ডেট দিয়ে গিয়ছিলাম। কোন তারিখে কি খাবে তাও লিস্টে লিখে দিয়েছিলাম। তুমি শুধু ভাত রান্না করে খাবে। সবই তো ঠিক ঠাক চলছিল।
হঠাৎ একদিন তুমি প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে ভিডিও কল দিয়ে বললে তোমার সারাদিন বমি হয়েছে। প্রেসার আপ ডাউন করছে। আমি বার বার বলেছিলাম হসপিটালে ভর্তি হতে। কতো টেনশন হচ্ছিলো জানো! কতো কি মানত করেছিলাম তুমি জানো নাই। ভয়ে আতঙ্কে আমাদের কমন ফ্রেন্ড শাপলাকে বললাম তোমার খোঁজ খবর নিতে।
প্রতিদিনের খবর নিতাম তোমার, শাপলার কাছ থেকে। ওরা স্বামী স্ত্রী মিলে তোমাকে যত্ন করেছে। শাপলার বরও তো আমাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড আতিক। ও অফিসে যাবার সময় শাপলাকে রেখে যেতো আর ফেরার সময় নিয়ে যেতো। ওদের সন্তান নেই। কাজেই শাপলা যথেষ্ট সময় দিতে পেরেছে তোমাকে। আমি অনেক কৃতজ্ঞ ছিলাম ওদের প্রতি। দেশে ফেরার সময় অনেক উপহার এনেছিলাম ওদের জন্য। দেশে এসে কর্মব্যস্ত জীবন শুরু হয় আমাদের। পুরোনো তাল লয়ে ছন্দে ফিরে এসেছিলাম আমরা।
ফোনে একদিন আতিক জানালো ওদের সুখবর। সুখখরটা শুনে আমার খুশীতে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। মনে হলো স্বয়ং আল্লাহ আমাকে সন্তান দিয়েছেন। আমি অন্তর থেকে ওদের জন্য দোয়া করেছিলাম তোমার অসুখের সময়। ওরা যে সাপোর্ট দিয়েছিল তা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়রাও দেয়নি। ওদের এই সুখবর শোনার পর আমি দুইরাকাত শোকরানা নামাজও পরেছিলাম। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে রান্নার সময় একটু বেশি তরকারি রান্না করতাম। ড্রাইভারকে দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই শাপলার প্রিয় খাবার রান্না করে পাঠিয়েছি।
নিদৃষ্ট দিনে একটা ফুটফুটে মেয়ে হলো আতিক শাপলার। আমি বাচ্চার সব কিছু কিনেছিলাম। কতো আনন্দের বন্যা বইছিল ওদের বাড়ি। ওদের মেয়ের প্রথম জন্মদিনে আতিক আমার অফিসে এসেছিলো দাওয়াত দিতে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি এই দাওয়াতটা আমার অফিসে এসে দেবার কি আছে?
যাইহোক আমি ওর জন্য সময় রেখেছিলাম। খুব বিদ্ধস্ত লাগছিলো আতিক কে। কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না ও । অনেকক্ষন ধরেই বসেছিলো।
শুরু করেছিল এভাবে,’ দেখো আমাদের পূন্য একদম তোমাদের লাবিবার মতো হয়েছে। ‘ হাসতে হাসতে বলেছিলাম প্রেগনেন্সির সময় তো সারাক্ষনই ও লাবিবাকে নাড়াচাড়া করেছে। সে কারনেই বোধহয়।
“প্রেগনেন্সির আগে মনে হয় রনিকেও বেশ নাড়াচাড়া করেছিল, না হলে ব্লাড গ্রুপও তো পূন্যর আর রনি এক। বি পজেটিভ। আমার ব্লাড গ্রুপ ও নেগেটিভ আর শাপলার এ পজেটিভ। কোনোভাবেই পূন্যর বি পজেটিভ হবার কথা না। এছাড়া রনির মতোই ওর ডান হাতে একই জায়গার জরুল! ”
আমি ধমকে উঠেছিলাম । বলেছিলাম,’বাজে কথা নিয়ে আমাদের সংসারে আগুন লাগাতে এসোনা। তোমার মন এতো সংকীর্ণ! কন্যা সন্তান বলে তুমি তাকে অস্মীকার করছো?’
আতিক বলেছিল, পূন্য আমার জীবনের আর্শীবাদ। ওর জন্যই আমি বাবা ডাক শুনেছি। সমাজে মাথা উচূ করে হাটতে পারছি। ও আমাকে অসম্মানের হাত থেকে বাচিয়েছে। যদিও আমার পূন্য শাপলা আর রনির পাপেরই ফসল। ‘
আমি কোনোদিন যে কথা কাউকে বলিনাই সে কথা আজকে তোমাকে বলছি । ল্যাব এইডে তখন এক ইনফারটিলিটি স্পেশালিস্টের আন্ডারে আমরা চিকিৎসাধীন ছিলাম। শাপলার সব কিছু ঠিক ছিল। কোনো প্রবলেম ধরা পরেনি। তখন ঐ ডাক্তার আমাকে পাশের চেম্বারে একজন মেল ইনফারটিলিটি স্পেশালিস্টের কাছে রেফার করেন।
আমি বেশ ভয়ে ছিলাম টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে । আফিস থেকে সোজা রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম। ভদ্রলোক এমন চাছাছোলা ভাবে আমার রিপোর্ট ব্যাখ্যা করলেন যে ওনার সামনেই আমি কেদেঁ ফেলি। ভাগ্যিস সেদিন শাপলা আমার সাথে যায়নি। আমি ওনাকে অনুরোধ করেছিলাম যে আমার স্ত্রী কে যেদিন নিয়ে আসবো উনি যেন ওর সামনে আমার সমস্যার কথা না বলেন। ভদ্রলোক সম্মতি দিয়েছিলেন।
নির্দিষ্ট দিনে শাপলাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার সাহেব আমার অনুরোধ রেখেছিল। উনি শাপলার সামনে এমন ভাবে রিপোর্ট দেখছিলেন যেন মনে হচ্ছিলো এই প্রথম উনি রিপোর্টটা দেখছেন। বললেন আপাতদৃষ্টিতে কোনো সমস্যা চোখে পরছেনা। কিছু ভিটামিন লিখে দিচ্ছি। রেগুলার খাবেন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখবেন। আপনারা চেষ্টা করুন বাকিটুকু আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লার ইচ্ছা কি না জানিনা তবে রনির ইচ্ছায় আমার ঘরে পূন্য এসেছে।
পূন্য কে আমি ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু যখন মনে হয় ও রনি আর শাপলার কামনার ফসল তখন ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে মেয়েটাকে । আমি জানি শাপলা এই কাজটা সন্তান নেবার উদ্দেশ্যে করেনি। কখনও কখনও মনে হয় শাপলা রনি দুজনকেই খুন করে ফেলি। আচ্ছা ওরা কি একে অপরকে ভালোবেসে স্পর্শ করেছিল নাকি কামার্ত হয়ে শুধু জৈবিক চাহিদা মেটাতে একে অপরকে স্পর্শ করেছিল ? ‘ প্রশ্নটা করেই আমার দিকে উদভ্রান্তের মতো তাকিয়ে ছিল আতিক।
ঐ মুহূর্তে আমার কেমন লেগেছিল তা প্রকাশ করার জন্য এ্যপ্রুপিয়েট কোনো শব্দ পৃথিবীর কোনো ভাষায় নেই রনি। আমি ধীরে ধীরে ওদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে ফেলেছিলাম। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে ওদের সুন্দর মুহূর্তের অনেক ফটো দেখতাম প্রায়ই।
গতকাল রাতে ফেসবুকে দেখলাম আতিক পোস্ট দিয়েছে, ” আমার মেয়েটাকে বোধহয় আর বাচাতে পারবো না ওর বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। আপনাদের মধ্যে যাদের শরীর সুস্থ এবং ব্লাড গ্রুপ বি পজেটিভ প্লিজ দয়া করে আমার মেয়ের জন্য এগিয়ে আসুন।’
তোমার পূন্যর ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। ও হয়তো মারা যাচ্ছে। ওর বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। ওর প্লাটিলেট কোনোভাবেই বাড়ছেনা। তুমি কি কয়দিনের জন্য ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসবে রনি ?
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.