একদিন তুমিও ভালোবাসবে পর্ব-৫৮+৫৯+৬০

0
1473

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৫৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৮৬.
কোয়েল সমানে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সৌভিকের হাতের থেকে কিন্তু সৌভিক এত শক্ত করে ওর হাত ধরে রেখেছে যে ও শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। কোয়েলের ব্যাথা তো লাগছেই সাথে সৌভিকের স্পর্শে এবং শয়তানি হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে।

কোয়েল: সৌভিকদা হাত ছাড়ো আমার। তুমি এখানে কেন? কি চাই তোমার?

সৌভিক: এত ছটফট করে কোনো লাভ নেই কোয়েল পাখি। এত সহজে যে তুমি আমার হাত থেকে ছাড় পাবে না। আমার যে এবার তোমাকে চাই’ই চাই।

সৌভিক কথাগুলো বলে কোয়েলের হাত ধরে হ্যাঁচকা টেনে সামনে নিজের সামনে নিয়ে এসে কোয়েলের আরেকটা হাতের কব্জি করে ধরে। কোয়েল এবার চোয়াল শক্ত করে সৌভিকের দিকে তাকায়। তা দেখে সৌভিক হেসে বলে,

সৌভিক: বাহবা! কোয়েল পাখির রাগ হয়েছে দেখছি? কিন্তু আমি তো ভয় পাচ্ছি না সোনা। বিয়ের পর তোমাকে না হয় ভয় পাবো।

কোয়েল: বিয়ে? আর তোমাকে? মরে গেলেও করবো না আমি। ছাড়ো আমাকে নাহলে ফল ভালো হবে না।

সৌভিক: তাই নাকি? কি করবে তুমি আমার? এই যে রাজ তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে বেরিয়ে গেলো তুমি কিছু করতে পেরেছো? পারোনি তো? তাহলে আমার কি ক্ষতি করবে? আচ্ছা তোমার আমাকে বিয়ে করতে প্রবলেম কোথায়? তুমি যাকে ভালোবাসো সে নিজেও তো মেয়েদের সাথে ফুর্তি করে তাও আবার একসাথে দুটো। আমি তো একসময় একটাতেই খুশি থাকি।

কোয়েল: ওহ, তো আমি ঠিকই ছিলাম? এসব তোমাদের কাজ, ষড়যন্ত্র। কি ভেবেছো এসব করে আমাদের সম্পর্ক ভাঙতে পারবে? এতোটাও সহজ নয় একটা সম্পর্ক ভাঙা জানো তো? আমাদের সম্পর্ক এতোটাও ঠুনকো নয় যে তোমাদের সস্তার প্ল্যানে আমাদের সম্পর্ক ভাঙবে, হয়তো সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে কিন্তু ভাঙবে না। আর কোন সাহসে তুমি নিজেকে রাজের সাথে তুলনা করো? নখের যোগ্য না তুমি ওর আর আমি তোমাকে বিয়ে করবো ভাবছো? দিবাস্বপ্ন দেখা ছেড়ে দাও সৌভিকদা, আমাকে তুমি কোনোদিন পাবে না। ছাড়ো আমায়!

কোয়েল নিজের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে সৌভিকের বুকে ধাক্কা মারলে সৌভিক কিছুটা পিছিয়ে যায়। কোয়েল চলে যেতে নিলেই সৌভিক পিছন থেকে আবারও কোয়েলের হাত ধরে নিজের সামনে আনলে কোয়েল হাত ছাড়তে নেয় কিন্তু পারে না। সৌভিক কোয়েলের হাতটা মুছড়িয়ে ধরে ওকে সামনে ঘুরিয়ে দেয় ফলে কোয়েলের পিঠ সৌভিকের বুকের সাথে ঠেকে। তারপর কোয়েলের কানের কাছে মুখ এনে বলে,

সৌভিক: দেখি তোকে আজকে কে বাঁচায়। ভেবেছিলাম বিয়েটা ভালো ভাবে তোর ইচ্ছাতে করবো কিন্তু নাহ! আমাকে বাধ্য করলি তুই খারাপ হতে।

সৌভিক ওর হাতটা কোমরে ধরে রাখার ফলে কোয়েলের ভীষণ ব্যাথা লাগছে, ব্যাথায় চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গেছে।

সৌভিক: এইটুকুতে কেঁদে দিলে হবে কোয়েল পাখি? লড়াই করবে না আমার সাথে? এতক্ষণ তো খুব ছটফট করছিলে, এখন কি হলো?

সৌভিক বোঝে কোয়েল নিস্তেজ হয়ে পরেছে তাই কথাটা বলেই কোয়েলের হাতটা ছেড়ে ওকে সামনে ঠেলে দেয়। ধাক্কাটা জোরেই ছিল বেশ তাই কোয়েল শরীরের ভারসাম্য না রাখতে পেরে পরে যায়। কিন্তু সেটা মাটিতে না, একজনের বুকের উপর। কোয়েল বুঝতে পারে তাঁকে কেউ ধরে নিয়েছে। মানুষটার শরীরের সুবাস নাকে আসতেই কোয়েল তাঁর শার্ট আঁকড়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে মিশে যায় মানুষটার সাথে। পিছন থেকে আওয়াজ আসে,

সৌভিক: ওহ! তো তুই এসে পড়েছিস? তোর অপেক্ষাতেই তো ছিলাম আমি। তোর প্রেমিকা তোর অপেক্ষা না করলেও আমি অধীর আগ্রহে তোর অপেক্ষা করছিলাম, “রাজ”।

কোয়েল সৌভিকের কথা শুনে রাজের বুক থেকে মাথা তুলে সৌভিকের দিকে তাঁকায়। দেখে ওর পিছনে আরো বেশ কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে কোয়েল রাজের দিকে তাকালেদেখে কোয়েলের কানটা লাল হয়ে এসেছে এদিকে চোয়াল শক্ত। কোয়েল ঘাবড়ে যায় এটা দেখে।

রাজ: ভার্সিটিতে ফিরে যাও।

কোয়েল: তোমাকে এখানে একা রেখে আমি চলে যাবো?

রাজ: আমার এই রূপটা দেখতে তুমি অভ্যস্ত নও।

কথাটুকু বলেই রাজ কোয়েলকে ছেড়ে সৌভিকের দিকে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে গেলো। এক মিনিট সময়ও ব্যয় করলোনা রাজ, সৌভিকের সামনে দাঁড়িয়েই একটা ঘুষি মেরে দিলো গালে। সৌভিকসহ ওর সাথে থাকা ছেলেগুলোও একটু ভয় পেয়ে গেলো। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজ সৌভিককে এলোপাথারি মারতে শুরু করে। সৌভিক ওর সহকারী ছেলেগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার মতো অবসর পাচ্ছে না, দম বন্ধ হয়ে আসছে জানো। কিন্তু একটা ছেলে তাদের মধ্যে ছুরি হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে রাজকে মারার জন্য তখন রাজ ছুরিটা একহাত দিয়ে ধরে একবার তাঁকায় ছেলেটার দিকে। ছুরিটা ছেড়ে দিতেই ওই ছেলেটা পিছিয়ে যায়। আর সাহস পায়না এগানোর কারণ ইতিমধ্যে সৌভিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এমন সময় ওরা দেখে আদিত্যকে এসে দাঁড়াতে, ব্যাস! ওদের আর পায় কে? সবাই নিমিষেই সরে যায় ওখান থেকে।

৮৭.
আমি রাজদার পথ অনুসরণ করে বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক রাজদাকে খুঁজতে শুরু করলে আদি এসে আমাকে বলে, “পার্কে চলো।” পার্কে আসতেই যে এমন দৃশ্য দেখবো ভাবিনি। কোয়েলকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ভয়ে গুঁটিশুঁটি হয়ে আছে। আর রাজদা বীভৎস ভাবে সৌভিকদাকে মারছে। রাজদার এমন রূপ দেখতে হবে ভাবিনি আমি। আর কিছুক্ষণ যদি এভাবে মার খায় তাহলে মনে হয় মারাই যাবে সৌভিক তাই আমি আদি কে যাওয়ার জন্য ইশারা করলাম। ও রাজদার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমি কোয়েলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু এ কি? আদি ওনাকে আটকাচ্ছে না কেন?

কোয়েল: ও’কে আটকা, আ..আমার ভীষণ ভ..ভয় লাগছে এবার।

কোয়েলের কথা শুনে আমি ওনাদের দিকে তাকালে দেখলাম রাজদা থেমে গেছেন। রাজদাকে থামতে দেখে আদি সৌভিকদার কাছে দু-হাঁটু ভাঁজ করে বসে আর বলে,

আদিত্য: তুই কি ভেবেছিলি? কান টানলে মাথা আসবে? মানে আমার বোনকে দিয়ে তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবি কি? এত সহজ মনে করলি কীভাবে সবটা তুই? এই জন্যেই হয়তো তোর বেঁচে থাকাটা এবার কঠিন হয়ে উঠবে। সো স্যাড! (দুঃখ করে)

আদিত্য উঠে দাঁড়াতেই সৌভিক আর্তনাদ করে উঠলো। আমি আর কোয়েল কেঁপে উঠলাম কারণ রাজদা সৌভিকের একটা হাত ভেঙ্গে দিয়েছেন। এতে আদির কোনো ফারাক পরলো না ও শুধু একবার চোখটা বন্ধ করলো তারপর একটা নিশ্বাস ছাড়লো, জানো জানতো এটাই হতে চলেছে।

আদিত্য: অঙ্কিত! একবার এই পার্কের সাইডে আয় তো। একটাকে হসপিটালে চালান করতে হবে।

আদি অঙ্কিতকে কল করে আসার কথা বললে রাজদা ওখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পার্কের অন্যদিকে পিছন ফিরে হনহনিয়ে চলে যান। আদি এসে কোয়েলের কাছে দাঁড়াতেই কোয়েল আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে।

আদিত্য: তুই এখন শান্ত না থাকলে, ঠিক না থাকলে রাজকে সামলাবে কে? বুঝতে পারছিস তো ও কতটা রেগে আছে? ছোটো থেকে নিয়ে যা রাগ ছিলো আজ অবধি সৌভিকের উপর তা তো মিটিয়েছেই সাথে আমার আর তোর রাগটাও মিলিয়ে সব মিটিয়ে নিয়েছে একবারে। যা নিজের পাগলের কাছে গিয়ে ওকে সামলা। আপাতত দুদিন ওর সামনে যাচ্ছি না আমি, আমাকেও হসপিটালে ভরে দেবে কেলিয়ে।

কোয়েল আদির কথা শুনে ছুটে চলে যায় রাজদা যেদিকে গেছে সেদিকে। এরপর আদি আমার দিকে তাকালে আমিও মুখ ফিরিয়েনি অন্যদিকে।

এদিকে,
পার্কটা বেশ বড় হওয়ায় পার্কে প্রবেশ করার দুটো গেট আছে। রাজ দ্বিতীয় গেটের কাছে একটা বেঞ্চে চুপচাপ নীচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তা দেখে কোয়েল গুটিগুটি পায়ে রাজের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে। সাহস পাচ্ছে না কোয়েল রাজের কাঁধে হাত রাখার, হাত কাঁপছে ওর। তবুও অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে রাজের কাঁধে হাত রাখতে নিলেই রাজ বলে ওঠে,

রাজ: দুপুর হয়ে গেছে হস্টেলে ফিরে যাও।

রাজের কন্ঠস্বর বেশ ঠান্ডা যা দেখে কোয়েল ভীষণ অবাক হলো। রাজের স্বর শুনে মনেই হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগে এত বড় একটা ঘটনা ঘটেছে।

কোয়েল: তুমি কি বলতে চাইছিলে আজকে সকালে?

রাজ: (এক গালে নীরব হেসে) সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে, এখন শুনতে চাইছো?

কোয়েল: ওই মুহূর্তে আমার কিছু শোনার অবস্থা ছিলো না। মাথা কি শুধু তোমার গরম হতে পারে? আমার পারে না? আর মাথা গরম থাকা অবস্থায় আমি অনেক কিছু উল্টো পাল্টা বলে ফেলি তাই শুনিনি। (মাথা নীচু করে)

রাজ: উল্টো পাল্টা কিছু বলোনি?

কোয়েল: সেটাই তো। আরো কিছু বলে ফেলতাম যদি তোমার সামনে থাকতাম। ওই সকালবেলায় একটা নির্জন গলিতে তোমাদের ওই অবস্থায় দেখে আমার মাথা ঠিক থাকার কথা ছিলো রাজ?

রাজ: এখন মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই এসেছো? নাহলে তুমি তো আমার মুখ দেখতেও চাওনি।

কোয়েল উত্তরে চুপ করে থাকলে রাজ বলে ওঠে,

রাজ: হস্টেলে ফিরে যাও।

কোয়েল: তুমি কিছু ভেবেই নিশ্চই করেছো এসব তাই না?

রাজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলতে শুরু করে,

রাজ: আমি তোমার হস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে কল করবো ঠিক সেই সময় পাশের গলি থেকে একটা মেয়ের চিৎকার আসে। আমি সেদিকে এগিয়ে গেলে দেখি ওই গলির মধ্যে দুটো ছেলে টিনাকে ধরে রেখেছিলো। আমি যেতেই ওরা পালিয়ে যায়, আমি টিনার কাছে এগিয়ে গেলে ও বলে ওরা নাকি ওর সাথে খারাপ বিহেভ করার চেষ্টা করছিল। আমি ওকে দূর থেকেই শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকি আর ও শান্তও হয়ে যায়। তারপর আমি যেই না ওই ছেলেগুলো কোথায় গেলো সেটা দেখার জন্য এগোই তখনই ও আমাকে বাঁধা দিয়ে জড়িয়ে ধরে।

কোয়েল: আমি সেই সময়েই তো গেছিলাম। কিন্তু তুমি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলে…

রাজ: ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে টিনার ফ্ল্যাটের ছেলে ছিলো, ওর খুব ভালো ফ্রেন্ড। আমি দেখেই চিনে নিয়েছিলাম ছেলেটাকে তাই ছেলেটা নার্ভাস হয়ে তাড়াতাড়ি সরে যায় ওখান থেকে। টিনা আমাকে ওদের ধরতে যেতেও দেয়না। আর, আমি কালকে রাতেই টিনাকে একটা কাজের জন্যে কলকাতার বাইরে পাঠিয়েছিলাম…

কোয়েল: (উঠে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে) তার মানে তুমি সব জেনে বুঝে টিনাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে? তোমার কথার মানে তো এটাই দাঁড়াচ্ছে যে ওই ছেলেটা টিনার খুব ভালো ফ্রেন্ড সো ও কেন টিনার সাথে এরকম করতে যাবে? আর তুমি কালকে রাতে টিনাকে বাইরে পাঠালে আজকে সকালে ও এলো কীভাবে?

রাজ: (হেসে) টিনা এইখানের একটা রাস্তাও ঠিকভাবে চেনে না।

কোয়েল ধপ করে বেঞ্চে বসে পড়ে। ওর সকালের ভাবনাই ঠিক! রাজ ইচ্ছা করেই করেছে এই জন্যেই ও বলেছিলো একে অপরকে প্রতি বিশ্বাস রাখতে। রাজ কোয়েলের পাশে বসে বলে,

রাজ: কিছু সময় নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে হয়। আজ আমি যদি ওদের ফাঁদে পা না দিতাম তাহলে সৌভিক এই স্টেপটা নিত না। আসলে এতদিন ধরে ওরা অনেকরকম চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই করতে পারেনি কারণ আমরা খুব সতর্ক ছিলাম। এরকম চলতে থাকলে সৌভিককে বা পরেশবাবুকে কাওকেই হাজতে পুরতে পারতাম না তাই ওই মুহূর্তে দাঁড়িয়েই আমি প্ল্যান করে নিয়েছিলাম যে আমাকে কি করতে হবে। ওরা যেমন চাইছে তেমন করতে হবে আমায়।

কোয়েল: কি চাইছিলো ওরা? তখন দাভাই যেটা বললো সেটাই কি..??

রাজ: হ্যাঁ। ওদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি করানোর উপায় ছিলো না তাই তোমার আর আমার মধ্যে ঝামেলা হলে তোমাকে একা পাওয়া যাবে আর সেই সুযোগে সৌভিক তোমাকে কিডন্যাপ করে আদিত্যকে ব্ল্যাকমেইল করবে যাতে বউদিকে ছেড়ে জিয়াকে মেনে নেয় ও। একদম পাতি প্ল্যান যাকে বলে। খুব ইজি ছিল ব্যাপারটা বোঝা আমার কাছে। আমাদের চারজনকে ভাঙ্গার একটাই উপায় ছিলো আর সেটা হলো ভুল বোঝাবুঝি। আজ অবধি টিনা কোনোদিনও আমাকে টাচ করার সাহস পায়নি। তোমার হস্টেলের সামনে করার কারণ তোমাকে দেখানো তাই আমি নিজেই ইচ্ছা করে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম নাহলে তুমি আমাকে ভুল বুঝতে না।

কোয়েল: স্যরি! (কান্নামিশ্রিত গলায়)

রাজ: কি জন্যে? তুমি তো কোনো ভুল করোনি। তুমি যদি আমাকে আজকে ভুল না বুঝতে তাহলে তো প্ল্যান সাকসেসফুল হতো না। ভাগ্যিস তখন তুমি আমার কথা শোনোনি নাহলে তখনই আমি তোমায় সবটা বুঝিয়ে দিতাম আর বুঝতে পারতাম না আমার নিজের লোকেরা আমার প্রতি কি মনোভাব পোষণ করে নিজেদের মনে। (তাচ্ছিল্য হেসে)

কোয়েল রাজের কথার মানে বুঝতে পেরে চুপ করে থাকে। চোখ যায় রাজের হাতের দিকে, সাদা রুমালটা লাল হয়ে গেছে যেটা হয়তো রাজ পেঁচিয়ে নিয়েছিলো।

কোয়েল: রাজ তোমার হাত!

রাজ: এটা তো হওয়ারই ছিল। আমাকে আর নিজেকে শাস্তি দিতে হলো না। (তাচ্ছিল্য হেসে) আমি আসছি, তুমি চলে যাও।

রাজ উঠে চলে গেলো পার্কের বাইরে। কোয়েল রাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। এতটা ভুল না বুঝলেও পারতো সে। রাজ কেমন সেটা তো তাঁর থেকে ভালো কেউ চেনে না তাও এমন ব্যবহার কীভাবে করতে পারলো। ভীষণ অপরাধী লাগছে নিজেকে কোয়েলের কিন্তু কোয়েল জানেনা শুধু ও না, ওর থেকেও বেশি আঘাত আদিত্য রাজকে দিয়েছে।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৫৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৮৮.
টিনা অফিসে নিজের জন্য কফি আনতে গেছিলো। কফি নিয়ে এসে নিজের কেবিনে ঢুকতেই বেশ চমকে উঠলো। একটা শুকনো ঢোঁক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে প্রশ্ন করলো,

টিনা: র..রাজ তুমি এখানে? এখন?

টিনার প্রশ্ন শুনে রাজ হাতে থাকা মার্বেলের বলটা ডেস্কে রেখে টিনার দিকে তাকালো। হেসে উঠে দাঁড়িয়ে টিনাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো,

রাজ: আমার অফিসে আমার থাকার কথা নয়?

টিনা: না সেটা না। আমি ভাবলাম তুমি হয়তো কোয়েলের সাথে আছো ত..তাই। সকালে তো ও তোমাকে ভুল বুঝেছিলো আমায় নিয়ে, তা ওকে মানাতে পেরেছো? (ডেস্কে কফি রেখে)

রাজ টিনার কথা শুনে টিনার দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে বললো,

রাজ: আমার কাছে সেটার থেকেও এখন বেশি ইম্পরট্যান্ট তোমার খেয়াল রাখা। সকালে যাকে আগলে রাখার দায়িত্ব নিলাম তার ঠিক করে খোঁজ খবর না রাখলে চলে? সকালের ঘটনার পর তুমি ঠিক আছো কি না জানতেই তো ছুটে চলে এলাম অফিসে।

রাজের কথায় টিনা অত্যাধিক মাত্রায় খুশি হয়ে গেলো কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট পরিমাণে সংযত রেখে মৃদু হেসে রাজকে প্রশ্ন করলো,

টিনা: সত্যি? তুমি আমার জন্যে এসেছো?

রাজ: অবভিয়াসলি।

কথাটা শেষ করে রাজ হেসে টিনার আরো কাছে চলে গেলো। রাজকে নিজের দিকে এগোতে দেখে টিনা ঠোঁটে সামান্য হাসি রেখে চোখ বুজে নিলো। রাজ আস্তে করে টিনার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে হালকা করে ফুঁ দিলো যার ফলে টিনা কেঁপে উঠলো।

রাজ: কার কথায় কাজটা করেছো টিনা?

টিনা ঝট করে চোখ খুলে এক ঝটকায় রাজের থেকে দূরে সরে গিয়ে আমতা আমতা করতে শুরু করলো। রাজ হাসলো টিনার অবস্থা দেখে তারপর আবারও জিজ্ঞেস করলো,

রাজ: তোমাকে একটা জরুরী কাজে কলকাতার বাইরে পাঠিয়েছিলাম আমি। যাওনি কেন? এতো টাকার প্রয়োজন তোমার? আমাকে বলতে পারতে, আমি হেল্প করতাম।

টিনা: র..রাজ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কীভাবে বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আসলে মায়ের অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তুমি একেই আমাকে এত হেল্প করেছো তারপর যদি আরো…

রাজ: তাই আমার পিঠেই ছুরি মারলে?

টিনা: না, না। আমার বিশ্বাস ছিলো কোয়েল হয়তো তোমাকে ভুল বুঝবে না।

রাজ: (হেসে) আচ্ছা তাই? কিছুক্ষণ আগে আন্টি আমাকে বললেন উনি হায়দ্রাবাদে নিজের বোনের বাড়ি আছেন। ডাক্তার ওনাকে বলেছেন ওনার কোনো শারীরিক অসুখ নেই, মনের অসুখ। যা হাওয়া বদল করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

রাজের কথা শুনে টিনার আত্মা শুকিয়ে গেছে। সে ভাবেনি রাজ তাকে অবিশ্বাস করে ওর মাকে ফোন করবে। তাছাড়া সে তো নিজের মাকে অন্য সিম লাগিয়ে নিতে বলেছিল তাহলে? তাহলে কীভাবে জানলো রাজ?

রাজ: আমি না, তোমার মা আমাকে ফোন করেছিলো টিনা। তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমাকে ফোন করেছিলো। কীভাবে জানলাম এটাই ভাবছিলে তো? তাই বলে দিলাম। আসলে কি বলো তো? আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি দেখে তুমি সেটার সুযোগ নিয়ে গেছো শুধু। আমি ভেবেছিলাম তুমিও আমার মতই গরীব ঘরের মেয়ে, নিজেকে প্রমাণ করতে চাও। কিন্তু তুমি আমাকে ভুল প্রমাণিত করলে। টাকার লোভী হয়ে গেলে।

টিনা: রাজ আমি…

রাজ: তুমি জানতে আমি কোয়েলকে কতটা ভালোবাসি। ভেবেছিলে কোয়েল হয়তো আমার লাইফে ফিরবে না তাই তুমিই আমার লাইফে জায়গা করে নিয়ে রাজত্ব করবে। কিন্তু যখন দেখলে কোয়েল ফিরে এসেছে তখন আমাদের আলাদা করতে পারবেনা জেনেও সুযোগের সৎ ব্যবহার করলে। একটা চেষ্টা করে দেখলে, ভাঙা যায় কি না। ভাঙা গেলে তো কেল্লাফতে আর না ভাঙলে টাকা তো পেয়েছো সেটাই সান্তনা। ভুল বললাম?

টিনা: আমাকে ক্ষমা করে দাও রাজ। আমার অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে। আর এমন হবেনা।

টিনা রাজের পা ধরতে নিলে রাজ সরে যায়। টিনা উঠে দাঁড়ালে রাজ নিজের ফোনে একজনের ছবি দেখায় টিনাকে আর জিজ্ঞেস করে,

রাজ: এই সেই ব্যক্তি কি?

টিনা ছবিটা দেখে মাথা নামিয়ে নিলে রাজ বুঝে যায় উত্তরটা “হ্যাঁ।” রাজ আর কথা না বাড়িয়ে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে টিনার উদ্দেশ্যে বললো,

রাজ: এই মুহূর্তের পর থেকে তোমাকে জানো আর চোখের সামনে না দেখি আমি। আশা করছি, যা টাকা পেয়েছো তাতে আরামসে চলে যাবে তোমার যতদিন না অন্য চাকরী পাচ্ছো। ভুলেও দ্বিতীয়বার আমার সামনে এসো না, পরিণাম কি হবে আমি নিজেও জানি না।

রাজ নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলে টিনা নিজের কপালে হাত দিয়ে বসে পরে। রাজ নিজের কেবিনে গিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ, শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে,

কোয়েলকে বেঞ্চে বসে কাঁদতে দেখে আমি ওর পাশে এসে বসি। আদি এসে কোয়েলের সামনে বসে কোয়েলের দু-হাত ধরে জিজ্ঞেস করে,

আদিত্য: কোথায় গেলো ও?

কোয়েল: (না বোধক মাথা নাড়লো।)

আদিত্য: রাগ কমেনি?

কোয়েল: রাগ? রাজ ভীষণ শান্ত ছিলো দাভাই যা রেগে থাকলে কখনোই থাকে না। একমাত্র ওর মন খারাপ থাকলেই ও খুব শান্ত থাকে। ও অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার ব্যবহারে, আমার ওকে এতোটা অবিশ্বাস করা উচিত হয়নি।

রাজ যা যা বলেছে প্রথম থেকে সবটা আমাকে আর আদিকে বললো কোয়েল। আমি কোয়েলকে কিচ্ছু না বলে আদির দিকে তাকালে আদি উঠে একটু দূরে চলে গিয়ে পিছন ফিরে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। আমি কোয়েলকে বলি,

মৌমিতা: কাঁদিস না। রাজদা যে কষ্ট পেয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে সঠিক। কিন্তু তার জন্য তুই পুরোপুরি দায়ী নস।

কোয়েল: ম..মানে?

মৌমিতা: মানে তোকে নিজের কথা বোঝাতে না পেরে তোর দাভাইয়ের কাছে এসেছিলেন রাজদা। পরিবর্তে আদির লাইফে ওনার জায়গাটা আসলে কি, সেটা বুঝে গেছেন।

আমি কোয়েলকে এক এক করে সবটা বললাম যে আদি রাজদাকে বলেছে। কোয়েল সেসব শুনে অবাক হয়ে আদির দিকে তাকিয়ে বললো,

কোয়েল: এই জন্যেই প্রথমবারের মতো আমি রাজের মুখে “আদিত্য” নামটা শুনলাম?

কোয়েলের কথা শুনে আদি নিজের হাত মুঠ করে নিলো। তৎক্ষণাৎ ওখান থেকে সরে নিজের গাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো আদি। আমি সেটা দেখে কোয়েলকে বললাম,

মৌমিতা: চল এখন। নিজেকে সামলিয়ে তোকেই রাজদাকে মানাতে হবে কোয়েল। অনেক কষ্ট পেয়েছেন উনি। আমি জানি তুই বা আদি কেউ ভালো থাকবি না যতক্ষণ না আবার সবটা স্বাভাবিক হচ্ছে।

কোয়েল: আদৌ সবটা স্বাভাবিক হবে মৌ? আমরা যেই ব্যবহারটা করেছি ওর সাথে তারপর ও আমাদের ক্ষমা করে দেবে? ছোটো থেকে ওকে এই চিনেছি আমরা? এই প্রশ্নটার যে কোনো উত্তর নেই আমাদের কাছে।

মৌমিতা: তোর ওরকম ব্যবহার করাটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয় কোয়েল। তুই ওনাকে ভালোবাসিস, তোর পক্ষে ওনাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখাটা সম্ভব নয়। নিজের চোখে ওসব দেখার পর কাওর মাথাই ঠিক থাকবে না কিন্তু আদি? ও কি পারতো না সবটা ঠান্ডা মাথায় শুনতে যখন রাজদা নিজে এসেছিলেন বলতে? যাই হোক, এখন এসব বাদ দে।

আমি কোয়েলকে নিয়ে হস্টেলে চলে এলাম। ওকে অনেকবার বলার পরেও রাজি হলো না আদির বাংলোতে যাওয়ার জন্যে। অগ্যতা ওকে হস্টেলে রেখে আমরা ফিরে আসার জন্য রওনা হলাম। আসার পথে আদি আমার সাথে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও আমি কোনো কথাই কানে নেইনি।

৮৯.
কোয়েল নিজের বিছানায় বালিশের উপর মাথা রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। বারবার নিজের চোখের জল মুছছে আর নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখছে রাজের কোনো রিপ্লাই বা ফোন আসে কি না। আসার পর থেকে কোয়েল অনেকবার ফোন করেছে, ফোনে না পেয়ে অনেকগুলো মেসেজ করেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো উত্তর আসেনি সেসবের।

বেশ কিছুক্ষণ পর,

কাঁদতে কাঁদতে কখন যে কোয়েলের চোখ লেগে গেছে কোয়েল টের পায়নি। কোয়েল ফোন হাতে নিয়ে দেখে ১০টা বাজে। কি একটা মনে হতেই কোয়েল বেড থেকে নেমে দৌঁড়ে জানলার বাইরে চলে যায়। জানলার বাইরে রাজের গাড়িটা দেখতে পেতেই কোয়েল জানো স্বস্তি ফিরে পায়। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে কোয়েল দৌঁড়ে নিজের হস্টেল থেকে বেরিয়ে গিয়ে হস্টেলের গেটের সামনে দাঁড়ায়। রাজ সদ্য গাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে একটু দাঁড়িয়ে ফোন দেখছিলো এমন সময় কোয়েলকে দাঁড়াতে দেখলো। কোয়েল নিজেকে শান্ত করে, চোখের জল মুছে রাজের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

কোয়েল: কখন এসেছো?

রাজ: আধ ঘন্টা মতো হয়েছে।

কোয়েল: আমাকে জানাওনি কেন? আমার ফোন, মেসেজ কোনো কিছুর রিপ্লাই করোনি তুমি।

রাজ: কাজ করছিলাম তাই খেয়াল করিনি।

কোয়েল: এখানে এসে তো জানাতে পারতে?

রাজ: কি হবে জানিয়ে? আমি তো চাইনি তোমাকে আমার মুখ দেখতে হোক। (তাচ্ছিল্য হেসে)

কোয়েল: (কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে) রাজ প্লিজ! আমি তখন ওসব রাগের মাথায় বলে ফেলেছিলাম। তোমাকে ওভাবে টিনার সাথে দেখে আমি মেনে নিতে পারিনি কারণ ওই জায়গাটা শুধু আমার। তাছাড়া তুমি তো জানো আমি কেন অতটা রিয়াক্ট করেছি?

রাজ: ফাইন! চুপ করো আর এখন হস্টেলে যাও।

কোয়েল রাজের কথা শুনেও ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে ভেজা চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে। এতক্ষণ রাজ নীচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেও কোয়েল ওর কথা শুনে না যাওয়ায় ওর দিকে তাকালো। কোয়েলের দিকে একঝলক তাকাতেই রাজ নিজের চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কোয়েল আরো এক-পা রাজের দিকে এগিয়ে গিয়ে করুন ভাবে রাজকে অনুরোধ করলো,

কোয়েল: একটাবার আমাকে ক্ষমা করা যায়না? ভুল হয়ে গেছে আমার, আর কখনও এমন হবে না। স্যরি!

রাজ কোয়েলের কান্নামিশ্রিত গলার স্বর উপেক্ষাও করতে পারছে না আবার কাছে টেনেও নিতে পারছে না তাই হাসিমুখে কোয়েলকে বললো,

রাজ: আমি তো বললাম ঠিক আছে কুহু! আমি রেগে নেই তোমার উপর। তোমার তেমন কোনো ভুল ছিলোই না যে তোমাকে ক্ষমা করতে হবে আমায়। অনেকটা রাত হয়েছে, এখন যাও হস্টেলে যাও। আমি এখানেই আছি, ওকেই?

কোয়েল কোনো কিছু না বলেই হুট করেই রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর সাথে সাথে রাজ চোখটা খিঁচে বন্ধ করে নিলো জানো এই জিনিসটাই সে চাইছিলো না। রাজ কোনো রিয়াক্ট করবে তার আগেই কোয়েল সোজা হয়ে দাঁড়ালে রাজ এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে আমতা আমতা করতে শুরু করে।

রাজ: ই..ইয়ে মানে….আহ! লাগছে তো কুহু! আস্তে আস্তে…

কোয়েল এলোপাথারি রাজের বাহুতে মারতে শুরু করে। সে জানতো এরকম কিছুই হতে চলেছে আর এরপর কোয়েলকি বলবে সেটাও রাজ ভালো ভাবে জানে।

কোয়েল: তুমি পাগল রাজ? তোমার গায়ে জ্বর এসেছে আর তুমি এখানে এসে পড়েছো? একবার আমাকে বলো পর্যন্তনি? এতটাই পর করে দিয়েছো তুমি আমায়? আমাকে অঙ্কিতের সাথে দেখে তোমার খারাপ লাগেনি? তুমি কিছু বলতে পারোনি কারণ তখন তুমি আমাকে জানাতে পারোনি তোমার ভালোবাসার কথা, আমাদের মধ্যে সেই সম্পর্ক ছিল না তাই তোমার অধিকারও ছিল না। কিন্তু আমি যখন দেখেছি তখনের ঘটনা তো সম্পূর্ণ বিপরীত তাই না? ওই মুহুর্তে আমার মাথা ঠান্ডা রাখার মতো অবস্থা ছিল না। তুমি তো ভালোভাবেই জানো আমি ঠকে যাওয়াটা কতটা ভয় পাই? তারউপর তুমি আমার গায়ে হাত তুললে। যেই জিনিসগুলো অতীতে…

কোয়েলকে আর কিছু বলতে না দিয়েই রাজ কোয়েলকে বুকে জড়িয়ে নিলো। কোয়েল সমানে ফোঁপাচ্ছে রাজের বুকে মুখ গুঁজে। রাজ কোয়েলকে আস্তে আস্তে বোঝাতে লাগলো,

রাজ: আমি সেই দুপুর থেকে তোমাকে বলছি তোমার ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। তুমি কোনো ভুল করোনি, তোমার জায়গায় আমি থাকলেও সেইম রিয়াক্ট করতাম। আমরা কখনোই নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকাওর সাথে দেখতে পারি না কুহু। আর তোমার গায়ে হাত তুলেছি কারণ তুমি নিজেকে খারাপ কথা বলেছো তাই।

কোয়েল: তুমি রেগে নেই মানলাম কিন্তু কষ্ট তো পেয়েছো তাই না?

রাজ: হম, কিন্তু তোমার কথায় না।

রাজ চুপ করে মাথা নামিয়ে নিলে কোয়েল রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,

কোয়েল: দাভাইয়ের কথায় কষ্ট পেয়েছো তাই না?

রাজ কোনো উত্তর না দিলে কোয়েল আবার রাজের বুকে মাথা রাখে। কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

কোয়েল: সৌভিককে তো শায়েস্তা করে ফেলেছো তাও কিসের ভয় যে জ্বর গায়ে নিয়ে চলে এলে?

রাজ: তোমাকে হারানোর।

কোয়েল রাজের কথাটা শুনে চোখ বন্ধ করে রাজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে রাজ বলে,

রাজ: সৌভিক না হয় নেই কিন্তু ওর সঙ্গসাথীরা তো আছে তাই না? তোমার ধারণা আছে পরেশবাবু আর জিয়া এখন কতটা ক্ষেপে আছে? সৌভিক, জিয়া আর পরেশবাবু এদের সবার লক্ষ্য তো একটাই তাই ক্ষতি করবে না কেন? যখনই সুযোগ পাবে তখনই ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। আর আমি সেই সুযোগটাই দিতে চাই না।

কোয়েল: তাই বলে জ্বর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি এখানে?

রাজ: গাড়িতে থাকবো আমি আর তুমি হস্টেলে যাবে।

কোয়েল হাজারবার ফিরে যাওয়ার কথা বললেও রাজ নাছোড়বান্দা! কিছুতেই সে ফিরবে না। জোর করে কোয়েলকে হস্টেলে ঢুকিয়ে রাজ নিজে গাড়িতে গিয়ে বসল।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৬০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৯০.
আমি ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই দেখি আদি আমার ঘরে এসে বসে আছে। আমি জানতাম ও আসবে কারণ আমি আমাদের ঘরে যাইনি, নিজের ঘরে এসেছি। ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি সেটা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেতে নিলে ও আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি ওর চোখে চোখ রাখলে বলে ওঠে,

আদিত্য: তুমিও রেগে থাকবে আমার উপর? আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্তত আমাকে বুঝবে।

মৌমিতা: ঠিক যেমন রাজদা ভেবেছিলেন তুমি অন্তত ওনাকে বুঝবে তাই না?

আদি আমার প্রশ্নের উত্তরে মাথা নামিয়ে নিলো। আমি ইচ্ছা করেই খোঁটা দিয়ে কথাটা বলেছি যাতে ও নিজের “শর্ট টেম্পারের” উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে। নিজের এই বদমেজাজি স্বভাবের জন্য অপরজনের থেকেও নিজে বেশি কষ্ট পায় মানুষ।

আদিত্য: আমি ভুল করেছি জানি কিন্তু অকারণে কথাগুলো বলিনি। যথেষ্ট কারণ ছিলো সেগুলোর পিছনে। সেটাই বলতে চাই তোমাকে।

মৌমিতা: রাজদাও যা কিছু করেছিল অকারণে করেনি। সেই কারণটাই তোমাকে জানাতে এসেছিল।

আদি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে, কিছুক্ষণের জন্য চোখ মুখ খিঁচে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কারণ একটাই, ও ভুল করেছে। কিন্তু আমি তো আর ওর মতো এক ভুল করতে পারি না। আমাকে জানতে হবে আদি কেন এমন বলেছে। আশা করছি ওর উত্তরেই কোয়েলের এমন ব্যবহার করার উত্তরটাও পেয়ে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজের ওড়নাটা নিয়ে আমি আমাদের ঘরে চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ও সোফায় চুপচাপ বসে আছে। ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখতেই বললো,

আদিত্য: ছুটি ছোটোবেলায় নিজের মাকে ঠকতে দেখেছে মৌ! নিজের মাকে মার খেতে দেখেছে। এর ফলে মানসিক ভাবে অত্যাচারিত হয়ে অনেক রাতে চোখের জল ফেলতে দেখেছে। তাই পুরুষ জাতিটার উপর ওর বিশ্বাস ছিলো না কখনোই। কিন্তু সবাই এক হয় না, এটা হয়তো ও প্রথমে আমাকে আর তারপরে রাজকে দেখে বুঝেছিল। আমাকে দেখতো আর বলতো, “তুমি কীভাবে সব ছেলের থেকে এতো আলাদা? মেয়েদের ধারে কাছেও যাও না, আর কয়েকজনকে দেখো! কত সুন্দর ঠকাচ্ছে দিনের পর দিন।” সেইম রাজের ক্ষেত্রেও ছিল। তাই রাজের থেকে এরকম কোন কিছু ছুটি কখনো আশা করেনি। পুরো ব্যাপারটা সত্যি হলে ও নিজের ক্ষতি করতে দুমিনিট সময় নিতো না। রাজ চলে যাওয়ার পর ও যদি অসুস্থ হয়ে পরতে পারে তাহলে এখন নিজেকে শেষ করতে ভাবার জন্য সময় নেবে বলে মনে হয়?

মৌমিতা: রাজদা চলে যাওয়ার পর কোয়েল সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল? (আতঙ্কিত কণ্ঠে)

আদিত্য: ইন্ডাইরেক্টলি। খাওয়ার কথা ছেড়েই দাও, ঘুমকাতুরে মেয়েটা ঠিকঠাক ঘুমাতো না। তারউপর এইসব ফ্যামিলি প্রব্লেমস, মাধ্যমিকের প্রেসার সবকিছু জানো ওকে একসাথে আক্রমণ করেছিলো। কাম্মা জানতো না কোয়েল সবটা জানে। ইভেন মম ড্যাড তো এখনও জানে না কিছুই।

মৌমিতা: তার মানে এটাই সবথেকে বড় কারণ কোয়েলের, ওর বাবাকে এড়িয়ে যাওয়ার?

আদিত্য: ঘৃণা করার বলো। সত্যি মিথ্যা কখনো যাচাই করে দেখিনি আমি। ছুটিকে জোর করে, অনেক কষ্টে বার করেছিলাম কথাটা যখন ও রাজি হয়নি এ বাড়িতে থাকতে আর আমাদের পরিচয় সবাইকে জানাতে।

মৌমিতা: তুমি কিছুদিন আগে জেনেছো ব্যাপারটা? যখন কোয়েল ভার্সিটিতে ভর্তি হলো?

আদিত্য: হম। আমি কখনো চাইনি ছুটিকে এই জিনিসগুলোর সম্মুখীন হতে হোক। তাই জন্য হয়তো কোনো কিছু না ভেবেই এতো কিছু বলে ফেলেছিলাম রাজকে। আসলে ভাবিনি আমি এমন কিছুও কখনো হতে পারে। আমার কাছে আমার বোন যেমন প্রিয়, আমার বন্ধুও তেমন প্রিয়। আমি ওকে জেনে বুঝে আঘাত করতে চাইনি, ও পরিস্থিতির স্বীকার হলে আমিও তারই স্বীকার।

মৌমিতা: রাজদা জানেন এই সব বিষয়ে?

আদিত্য: হম। আমার আগে থেকেই জানে যখন থেকে কোয়েল জেনেছে। রাজ কোয়েল নাইনে যখন পড়তো তখন চলে গেছিলো আর এইসব বিষয়ে জানতে পেরেছিলো ক্লাস এইটে কোয়েল। হয়তো রাজ যাওয়ার পরেও আরো কিছু হয়েছে, মাধ্যমিকের সময়ে যেটা ছুটি আমায় বলেনি। যাই হোক, দোষ যখন করেছি তখন শাস্তি তো পেতেই হবে।

আদি কথা শেষ করে উঠে যেতে নিলে আমি ওর হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলাম। আমি নীচের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু আড় চোখে বুঝতে পারছি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে বললাম,

মৌমিতা: তোমার রাজদাকে বলা উচিত এই কথাগুলো, যখনই সুযোগ পাবে। আসলে কি বলো তো? আমাদের মনে কিছু কথা চলে যেগুলো সবসময় আমরা বলতে পারি না সেগুলোই রাগের মাথায় আমরা বলি। ফলে সেগুলো সত্যি কথাই হয়, তাই হয়তো রাজদার খারাপ লাগছে যে তুমি এসব ভাবতে ওনাকে নিয়ে। উনি ঠিক, তুমি সত্যি কথাই বলেছো কারণ তুমি তোমার বোনকে নিয়ে চিন্তিত। এটা বুঝলেই হয়তো রাজদার অভিমানটা আস্তে আস্তে কেটে যাবে।

আদি আমার কথা শুনে হ্যাঁবোধক মাথা নাড়লো। আর কিছু বলার আগেই আদির ফোন বেজে উঠলো। দেখলাম কোয়েল ফোন করেছে।

আদিত্য: এত রাতে কল করলি? কোনো সমস্যা হয়েছে?

কোয়েল: আব, না। বলছি, আমি আসছি তোদের বাংলোতে দাভাই।

আদিত্য: সিরিয়াসলি? (উঠে দাঁড়িয়ে) আগে বলিসনি কেন আমি নিয়ে আসতাম, একা আসবি নাকি তুই এতো রাতে।

কোয়েল: রাজ ড্রপ করে দিচ্ছে।

আদিত্য: গ্রেট!

আদি ফোন রেখে আমায় বললো কোয়েল আসছে আর ওকে রাজদাই নিয়ে আসছেন। কথাটা শুনে আমি আদিকে বললাম,

মৌমিতা: কোয়েল রাজদাকে মানিয়ে নিয়েছে। আমি জানতাম ও পারবে কারণ ওর দোষ প্রায় ছিলো না বললেই চলে। এইবার তোমার পালা।

আদি মাথা নীচু করে থাকলে আমি একটু এগিয়ে গিয়ে আলতো ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে, ওর বুকে মাথা রেখে বললাম।

মৌমিতা: চিন্তা করো না। সবটা ঠিক হয়ে যাবে সময়ের সাথে সাথে।

৯১.
আদিত্যের বাংলোর, গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কোয়েল একবার পিছনে রাজের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার কলিংবেলের দিকে। সেটা দেখে রাজ বললো,

রাজ: তাড়াতাড়ি করো, আমার শরীর অনেক খারাপ লাগছে।

কোয়েল: হ্যাঁ, হ্যাঁ।

কোয়েল রাজের কথা শুনে চটজলদি কলিংবেল বাজালো যা দেখে রাজ মুখ টিপে হাসলো যেটা কোয়েল দেখতে পেলো না। আদিত্য প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলে কোয়েল একটু ইতস্তত বোধ করতে শুরু করে। আদিত্য কোয়েলকে দেখে নিয়ে রাজের দিকে তাকালে রাজ কোয়েলের হাতটা ছেড়ে ওকে আরেকটু সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,

রাজ: আসছি আমি। সাবধানে থাকার কথা বলার প্রয়োজন নেই এখন। তুমি এখন তাঁর দায়িত্বে আছো যে তোমাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে। এমন কাওর দায়িত্বে না যে তোমার অযোগ্য।

রাজ কথাটা বলেই বেরিয়ে হাঁটা ধরে নিজের গাড়ির দিকে। কোয়েল বুঝতে পারে রাজের কথাটা বলার কারণ। তাই আদিত্য রাজের দিকে এগোতে নিলেই কোয়েল আদিত্যের সামনে হাত লম্বা করে রেখে বাঁধা দেয়। তা দেখে আদিত্যের মনে হয়, তাঁর বোনও তাঁকে ভুল বুঝলো?

কোয়েল: যেও না দাভাই। ওকে একটু ওর মতো একা ছেড়ে দাও। ও অনেকটা কষ্ট পেয়েছে। আমরা কষ্ট পেলে আমাদের নিজেদেরই মানাতে হয়, কেউ কিছু বললেও তা কাজ করে না। তাই ওকে এখন একটু একা থাকতে দাও।

আদিত্য: ওর কষ্ট কমাতে পারবো না জানি কারণ যেটা বলে ফেলেছি তা ফিরিয়ে নিতে পারবো না। কিন্তু বলার কারণটা জানালে হয়তো ওর সুবিধা হবে নিজেকে মানাতে। চেষ্টা তো করতেই পারি ওর কষ্টটা কম করার, তাই না?

আদিত্য চলে গেলো রাজের পিছনে। কোয়েল সামনে তাকিয়ে দেখলো মৌমিতা দাঁড়িয়ে আছে তাই হেসে ভিতরে ঢুকে গেলো। এদিকে রাজকে নিজের গাড়ির সামনে নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিত্য ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

আদিত্য: আমি জানি আমি তোকে আজকে সকালে অনেক আঘাত করেছি।

রাজ: (তাচ্ছিল্য হেসে) সত্যি কথা মানুষকে আঘাতই করে। তুই তো সত্যি কথা বলেছিস, যেটা আমার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে সেটা বলেছিস।

আদিত্য: হ্যাঁ। মানুস রেগে থাকলে নিজের মনের কথাই বলে রাজ। যেটা সেইসময় তার মনে চলে, সেটা বলে। অন্যসময় তাঁর মনোভাব অন্যরকম হয় কারণ পরিস্থিতি অন্যরকম হয়। পরিস্থিতি বুঝে মনোভাব তৈরী হয় আর মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া।

রাজ আদিত্যের কথা শুনে আদিত্যের দিকে তাকায় কারণ সে সঠিক বলেছে। দেখতে পায় আদিত্যের চোখটা ছলছল করছে।

আদিত্য: তুই যতটুকু বলেছিলি সেটা শুনেই আমি রিয়াক্ট করেছিলাম তাঁর সবথেকে বড় কারণ ছিলো, তুই বলেছিলি ছুটি তোর কোনো কথা না শুনেই চলে গেছে। এর আগে তুই যখন চলে গিয়ে ওকে আঘাত দিয়েছিলি তখন ও জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে ছিলো। আর এইবার তুই ওর মনের সুপ্ত ভয়টাকে জাগিয়ে তুলেছিলি হোক সেটা জেনে বা নিজের অজান্তে। ও তো নিজের ক্ষতি করতেই পারতো তাই না?

আদিত্যের কথা শুনে রাজ নিজের হাত মুঠ করে নিলে আদিত্য বলে,

আদিত্য: তোর কোনো ধারণা নেই ওর কি অবস্থা হয়েছিল সেই সময়টা যখন একসাথে ও তোকে হারিয়েছিলো। এরপর সেটা থেকে কোনোমতে একটু হালকা হতেই আবার ফ্যামিলি প্রবলেমস, পরীক্ষার প্রেসার। ভালো থাকার অভিনয় করে গেছিলো নিজের ভিতর সবটা চেপে রেখে। শুধুমাত্র আমার বোনের কষ্টের কথা ভেবেই আমি তোকে কথাগুলো বলে ফেলেছি। জানি এতে আমার ভুলটা ঠিক হয়ে যায় না, আমি এগুলো বললাম তার কারণ তুই যেমন কষ্ট পেয়েছিস, ও’ও কষ্ট পেয়েছে। আমার ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই তোর কাছে, তাই ক্ষমা চাইবনা।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আদিত্য নিজের চোখের জল আড়াল করে হালকা নাকটা টানলো। রাজকে চোখ বন্ধ করে চুপ থাকতে দেখে আর কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে নিলে রাজ বলে উঠলো,

রাজ: সত্যি তো ক্ষমা চাইবি কেন তুই? তুই তো আমাকে বন্ধু ভাবিসনা। তাই তো আমি যখন চলে গেছিলাম তখনও তোর যায় আসেনি আর এখনও কথা না বললে তোর যায় আসে না। অবশ্য আসবে কীভাবে আমি তো এসবের যোগ্যই…

রাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য ঝড়ের বেগে রাজকে জড়িয়ে ধরে। রাজ হেসে দেয় আদিত্যের এহেনো আচরণ দেখে।

আদিত্য: স্যরি! বিশ্বাস কর, তোর কথাটা পুরোটা শুনলে আমি হয়তো এসব কিছুই বলতাম না কিন্তু যতটুকু শুনেছিলাম তাতে যখনই বুঝলাম ছুটি কষ্ট পেয়েছে তাও আবার নিজের ভয়ের জন্য তখন আমার মাথা কাজ করছিল না। কারণ আমি জানতাম তুই কখনো ওকে এই নিয়ে কষ্ট দিতেই পারিস না। তুই এমনটা করেছিস এটা আমি জাস্ট ভাবতেই পারিনি। স্যরি ভাই! প্লিজ ক্ষমা করে দে, তুই ছাড়া আমার কে আছে বল?

রাজ: দাঁড়া, বউদিকে বলছি আমাকে মানানোর জন্য তুই এসব বলছিস।

আদিত্য বুঝতে পারে রাজ মজা করছে তাই সোজা হয়ে বলে,

আদিত্য: আরে ও তো বউ, তুই তো বন্ধু। তুই তো আগে আমার লাইফে, তুই না বোঝালে কি আর ওকে বলতে পারতাম…বায় দ্য ওয়ে! তোর গা টা এতো গরম কেন ভাই? জ্বর এসেছে?

রাজ: ভাগ্যিস জ্বরটা এসেছে নাহলে তোর বোনকে এখানে আনতে পারতাম না। ও বাড়ি যাওয়ার জন্য জোর করছিলো, আমি বললাম তুমি আদিত্যের বাড়িতে গেলেই আমি বাড়ি যাবো নাহলে আজকে সারারাত এখানেই থাকছি। ব্যাস, বাধ্য মেয়ের মতো জামাকাপড় গুছিয়ে চলে এসেছে।

আদিত্য: সে ঠিক আছে কিন্তু তুই ওষুধ খেয়েছিস? আমি নিয়ে আসবো?

রাজ: তোর বোন জোর করে খাইয়েছে কিছুক্ষণ আগে। আমি আসছি এখন। খুব কেয়ারফুল থাকিস, ধামাকা একটা করবেই পরেশবাবু।

আদিত্য: সেটার অপেক্ষায় আছি আমি। এটাই ওনার শেষ সুযোগ কারণ সব কিছু আমার হাতে, শুধু একটা সাক্ষী!

রাজ: পেয়ে যাবি। চাপ নিস না।

আদিত্য: রাজ!

রাজ চলে যেতে নিলে আদিত্য রাজকে ডেকে আরেকবার জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। আস্তে করে বলে,

আদিত্য: আমার বোনকে তুই ছাড়া কেউ ভালো রাখতে পারবে না। আমার এই ধারণা যে সত্যি তার প্রমাণ আমি তো পেয়েছি, এবার এরপরের দায়িত্ব তোর। ও’কে পেতে হলে আমি শুধু সাহায্য করতে পারবো এর থেকে বেশি কিছুই নয়, মাথায় রাখিস।

আদিত্য রাজকে ছেড়ে দিলে রাজ আদিত্যের কথার মানে বুঝে হেসে ও’কে মাথা নাড়িয়ে আশ্বাস দেয়। “সাবধানে থাকবি” কথাটুকু একে অপরকে বলে আদিত্য বাড়ির ভিতরে চলে আসে আর রাজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে