‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘🌸❤️
||পর্ব~৫২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
রাজ কোয়েলকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজে রয়েছে। যেহেতু অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে তাই কোয়েল আস্তে করে নিজের মাথাটা রাজের কাঁধ থেকে তুলে সামনে এসে আলতো করে রাজের গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে বলে,
কোয়েল: অনেকটা সময় হয়ে গেছে আমরা এদিকে এসেছি। চলো এবার।
রাজ কোয়েলের কথা শুনে কোয়েলকে ছেড়ে সোজা হয়ে কোয়েলের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,
রাজ: এক মুহূর্তের জন্যেও একা কোথাও যাবে না। মনে থাকবে তো?
কোয়েল: আজ্ঞে। চলুন এবার।
রাজ আর কোয়েল হেসে সবাই যেখানে আছে সেদিকে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতেই কোয়েল হঠাৎ করে পিছন ফিরে তাঁকায়, কাওকে দেখতে পায় না শুধু পাতার “খচখচ” একটা শব্দ পায়।
কোয়েল: (মনে মনে– তার মানে আমাদের কেউ ফলো করছিলো। এটা সৌভিকদা ছাড়া আর কেই বা হবে?)
রাজ: কি ভাবছো?
কোয়েল: হম? নাহ কিছু না।
৭৮.
সূর্য অস্ত গিয়ে আকাশটা হুট করেই মেঘলা করেছে, বেশ সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। এমন সময় আমরা গেস্ট হাউসে ফিরে এসে বাগানে বসি। বাগানে এসে আড্ডা দিতে দিতেই অনেকে বলে ওঠে,
__আচ্ছা গান তো আমরা শুনেছি ট্রেনেই। এইবার একটু নাচ দেখলে কেমন হয়?
অঙ্কিত: হ্যাঁ, ভালোই হবে। আমাদের ভার্সিটির কম্পিটিশনের উইনার তো আমাদের সাথেই আছে।
মৌমিতা: এই রে, কোয়েল! এই অঙ্কিত আবার আমাকে ফাঁসাবে জানিস তো? আমি নাচ…এ কি? কোয়েল কোথায় গেলো? (বিড়বিড় করে)
আদিত্য: আরে অঙ্কিত! এটা তুই একদম ঠিক বলেছিস কিন্তু আরেক জনের কথা ভুলে যাচ্ছিস কেন?
অঙ্কিত: তুই কি..??
আদিত্য হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
আদিত্য: মৌ, কোয়েল কোথায়?
মৌমিতা: আমিও খুঁজে পাচ্ছি না। এখানেই তো ছিলো কিন্তু ওকে কেন…
আদিত্য: ওই তো, তবে রে দাঁড়া।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য ঝট করে উঠে ছুট দিলেন ভিতরের দিকে। সেই দিকে আমরা সবাই তাকালে দেখি কোয়েল জোর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ভিতরের দিকে। আদি যেহেতু দৌঁড়ে গেছে তাই কোয়েলকে ধরে ফেলতে পারবে কিন্তু সেই মুহূর্তে কোয়েল একবার পিছন ফিরে তাকালেই আদিকে দেখতে পেয়ে যায় আর দৌঁড় শুরু করে। আমরা সবাই অবাক হয়ে দেখছি কোয়েল আর আদি ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে।
কোয়েল: আমার পিছনে কেন পড়েছো? আমাকে ঘরে যেতে দাও প্লিজ? আমি ঘরে যাবো।
আদিত্য: আচ্ছা তাই নাকি? এতো সহজে তুই আমার হাত থেকে ছাড় দাবি ভাবলি কি করে?
কোয়েল: দ..দেখো আমার খুব টায়ার্ড লাগছে। আমাকে যেতে দাও।
ওরা ঘুরতে বাগানের এদিকেই চলে এসেছে। বাগানের মাঝে একটা সেন্টার টেবিলকে কেন্দ্র করে চারটে সোফা রাখছিলো। কোয়েল সেটার একপ্রান্তে এসে দাঁড়ালে আদি অপরপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়। কোয়েলকে এতক্ষন ধরে একবার এদিক আর একবার ওদিক করছিলো।
আদিত্য: দেখ ছুটি, ভালোয় ভালোয় বলছি এদিকে যায় নাহলে একটামার বাইরে পড়বে না।
কোয়েল: না, না, না। প্লিজ যেতে দাও আমাকে।
আদিত্য: শুনবি না তুই আমার কথা তাই তো? ফাইন, যা।
আদি বেশ রেগে কথাটা বলেছে সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। কোয়েল আস্তে আস্তে পিছিয়ে গিয়ে দৌঁড় দিতে নিলেই আদি সঙ্গে সঙ্গে কোয়েলকে পিছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে কোয়েলকে হালকা করে তুলে ধরে। কোয়েল সমানে ছুটোছুটি করতে করতে বলে,
কোয়েল: দাভাই প্লিজ! প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে আমি যাবো না ওখানে। তুমি এটা একদম ঠিক করছো না।
আদি কোয়েলের কোনো কথা না শুনেই কোয়েলকে আমাদের সবার মাঝে নিয়ে এসে দাঁড় করালো। আমি এখনও কিছুই বুঝতে পারছি না। একবার আদির দিকে তাকাচ্ছি তো একবার রাজদা আর অঙ্কিতের দিকে। ওরাও হাসছে আদি আর কোয়েলের কান্ড দেখে। কিন্তু কোয়েল চলে গেছিলো কেন আর ওকে ধরেই বা আনলো কেন? এক মিনিট! নাচের কথা উঠতেই কোয়েল পালিয়ে গেছিলো না? কিন্তু কেন?
আদিত্য: আমি ভাবিনি তুই কোয়েলের নাম নিতে ভুলে যাবো অঙ্কিত। কোয়েল তোর ডান্স পার্টনার আর তুই ওকেই ভুলে গেলি?
আমার মাথায় একটা বাছ পড়লো তৎক্ষণাৎ। কোয়েল অঙ্কিতের ডান্স পার্টনার? এটা আমাকে দুজনের কেউই বলেনি এতদিন? আমি রেগে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল কাঁচুমাচু মুখ করে আদির দিকে তাকিয়ে বললো,
কোয়েল: কেন আমাকে বাঁশ খাওয়ালে এভাবে? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোমার? (কাঁদো কাঁদো গলায়)
আদিত্য: ওলে বাবা লে, এখনও তো কিছুই করিনি আমি।
কোয়েল কথাটা বলে আমার দিকে একবার তাকালো আরেকবার রাজদার দিকে তাকালো। সেই অনুযায়ী আমি রাজদার দিকে তাকালেদেখলাম রাজদাও কটমট করে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষন তো হাসছিলো তার মানে রাজদাও জানতেন না আমার মতো এই বিষয়ে।
অঙ্কিত: আমার কি দোষ? কোয়েল পাখিই তো বারণ করেছিল আমাকে এই বিষয়ে কাওকে জানাতে নাহলে আমি আমার ওয়ান এন্ড অনলি পার্টনারের কথা কখনো ভুলতে পারি? (মুখ টিপে হেসে)
কোয়েল প্রথমে চোখ বড় বড় করে অঙ্কিতের দিকে তাকিয়ে তারপর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বাচ্চাদের মতো করে বলে,
কোয়েল: কেন এমন করছো তোমরা আমার সাথে? কি ক্ষতি করেছি আমি সবার? এই বাচ্চা মেয়েটার উপর দয়া মায়া হয় না কাওর?
আদিত্য: চুপ! এই মৌ। ওঠো, ওঠো। আজকে তোমাদের ডুও দেখবো সবাই।
আদিত্য একহাতে কোয়েলের হাত ধরে আমাকে আরেকহাতে টেনে তুলে দাঁড় করালে আমি কোয়েলের দিকে একবার তাকিয়ে রাগ নিয়ে বলি,
মৌমিতা: আমার ওর সাথে কোনো নাচ তোলা নেই। জানবো ওর সম্পর্কে তারপর তো এইসব কথা আসবে। জানতামই তো না।
কোয়েল: হ..হ..হ্যাঁ তাই তো। তাই তো! আমি বরং ঘরে যাই, অনেকদিন হয়ে গেছে নাচ ছেড়ে দিয়েছি মনেও নেই কিছু।
কোয়েল চলে যেতে নিলে আদি আবার ওর হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। অঙ্কিত পিছন থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
অঙ্কিত: মৌ তোর “তাল সে তাল মিলা” নাচটা প্র্যাকটিস আছে না?
মৌমিতা: হ্যাঁ, কেন?
অঙ্কিত: কোয়েলেরও ওটা খুব ভালো ভাবে প্র্যাকটিস করা আছে। কিছুদিন আগেই তো প্রোগ্রাম করলে, থাকবে নাই বা কেন?
আমি আরেকদফা অবাক হয়ে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল প্রায় কেঁদে দেয় এমন অবস্থা।
কোয়েল: (কপালে এক হাত দিয়ে চাপড় মেরে) হে বিষ্ণু! কাওর ভালো হবে না। সবাই মিলে আমাকে ফাঁসালো। (মনে মনে– কিছুক্ষণ আগেই জমরাজের রাগ ভাঙালাম এখন আবার বোম্ব হয়ে গেলো। এইবার মনে হয় আমি সামনে গেলেই ব্লাস্ট হয়ে যাবে আর রাগ ভাঙাবো কি?)
আদিত্য: চল, চল শুরু কর।
অঙ্কিত: আমি ব্লুটুথ স্পিকারটা নিয়ে আসছি।
অঙ্কিত দৌঁড়ে স্পিকার আনতে গেলে আমি যেখানে নাচবো সেখানে চলে যাই। গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি কোয়েল হাত কচলাতে কচলাতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ও কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নেই আর অঙ্কিতও চলে আসে। কোয়েল সেটা দেখে নিজের পজিশন নিয়ে নেয়।
গানের প্রথমাংশ শুরু হয় নাচের তালের বোল দিয়ে। সেটা শুরু হতে মৌমিতা নিজের মতো আর কোয়েল নিজের মতো নিজেদের স্টেপ শুরু করলো। নিজের নাচের মধ্যেই মৌমিতা কোয়েলকে দেখছে কিন্তু কোয়েল দেখছে না।
🎶”দিল ইয়ে বেচ্যান ভে, রাস্তে পে নেইন ভে🎶
🎶দিল ইয়ে বেচ্যান ভে, রাস্তে পে নেইন ভে🎶
🎶জিন্দারি বেহাল হ্যা, সুর হ্যা না তাল হ্যা🎶
🎶আজা সাভারিয়া, আ আ আ আ🎶
🎶তাল সে তাল মিলা, ওও, তাল সে তাল মিলা”🎶
ওদের দুজনের স্টেপের কোনো অমিল নেই, ভুল হওয়া তো দূরের কথা। দুজনের টাইমিং একদম পারফেক্ট যার কারণে দুজনের স্টেপ, হাতের মুদ্রা, মুখের ভঙ্গিমা সব একরকম হচ্ছে। কিন্তু ওরা একসাথে কখনও প্র্যাকটিসই করেনি কারণ মৌমিতা তো জানতোই না কোয়েল নাচ করে। অবাক হয়ে সবাই এইটাই দেখছে এছাড়া মৌমিতা নাচের শুরুতেই যে জায়গাটা সব থেকে কঠিন ছিলো সেই জায়গাটায় কোয়েলকে ফলো করেছে বেশ ভালো ভাবেই। সেটা দেখার পর মৌমিতার বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি যে কোয়েল অনেকদিন ধরেই নাচ করে সুতরাং কোয়েল কিছুক্ষণ আগেও মিথ্যে কথা বলেছে যে সে, নাচ ছেড়ে দিয়েছে অনেকদিন হয়েছে। এরফলে মৌমিতার মাথাটা আরো গরম হয়ে গেছে। প্রথম দু-মিনিটই নাচের অংশ ছিলো। নাচ শেষ করতেই সবাই জোরে হাততালি দিতে শুরু করে। আদিত্য তো সিটি বাজাচ্ছে, সেটা দেখে মৌমিতা সামান্য হাসলেও পরক্ষণে কোয়েলের কথা মনে পড়তেই হাসিটা মলিন হয়ে গেল।
এমন সময় হাওয়ার বেগ তীব্র হয়ে গেলো। আদিত্য সবাইকে বললো,
আদিত্য: (হেসে) এদের নাচ দেখে স্বয়ং বরুনদেবও আপ্লুত হয়ে পড়েছে। চল, চল জলদি ভিতরে চল। এই ঠান্ডার মধ্যে ভিজলে হয়ে গেছে।
আমি কোয়েলের দিকে তাকাতেই দেখলাম ভয়ে ভয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ও যেদিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তাকাতেই দেখলাম রাজদা চুপচাপ চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠ করে বসে আছে। তা দেখে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েলের সাথে চোখে চোখ পড়ে গেলো। আমি এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ভিতরে চলে এলাম। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠছি সেইসময় খেয়াল করলাম রাজদা আমাকে পাশ কাটিয়ে উঠে গেলেন।
★
আদিত্য: কি রে, একা দাঁড়িয়ে আছিস যে? ভিতরে চল, বৃষ্টি আসবে তো?
আদিত্য কোয়েলের পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করলে কোয়েল মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়। আদিত্য বুঝতে পারে কোয়েলের রাগ হয়েছে। তাই কোয়েলের দু-বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে,
আদিত্য: রাগ হয়েছে?
কোয়েল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে এখনও। আদিত্য গেসে কোয়েলের দু-গালে হাত রেখে বললো,
আদিত্য: কতটা রাগ হয়েছে শুনি? একটুখানি নাকি অনেএএকখানি? (হাত দিয়ে দেখিয়ে)
আদিত্যের প্রতিক্রিয়া দেখে কোয়েল হেসে ফেললে আদিত্যও হেসে নিজে থেকেই কোয়েলকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। কোয়েল আদিত্যের বুকের মাঝে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠলে আদিত্য কোয়েলকে সোজা করে চোখ মুছিয়ে ইশারায় কাঁদতে বারণ করে আবারও বুকে টেনে নেয়। আদিত্যের বুকে মাথা রাখতেই কোয়েলকে চোখ যায় মৌমিতার দিকে।
আমি রাজদাকে ওরকমভাবে উপরে উঠে যেতে দেখে আবার বাগানের দিকে ফিরে যাই কারণ আদিও এখনও আসেনি। সিঁড়ি থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে একটু এগিয়ে যেতে দেখলাম আদি কোয়েলকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখেছে। আমি দেখতেই কোয়েল আদির থেকে দূরে সরে গেলে আদি অবাক হয়ে কোয়েলের দিকে তাকায়। কোয়েলের চাহুনি অনুসরণ করে আমার দিকে তাকালেই আমি ওখান থেকে পিছন ফিরে সোজা ঘরে চলে আসি।
‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৫৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
আমি রাজদাকে ওরকমভাবে উপরে উঠে যেতে দেখে আবার বাগানের দিকে ফিরে যাই কারণ আদিও এখনও আসেনি। সিঁড়ি থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে একটু এগিয়ে যেতে দেখলাম আদি কোয়েলকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখেছে। আমি দেখতেই কোয়েল আদির থেকে দূরে সরে গেলে আদি অবাক হয়ে কোয়েলের দিকে তাকায়। কোয়েলের চাহুনি অনুসরণ করে আমার দিকে তাকালেই আমি ওখান থেকে পিছন ফিরে সোজা ঘরে চলে আসি।
আদিত্য: তুই আমাদের ঘরে যা, রাজ আছে হয়তো ওখানে। আমি মৌকে বিষয়টা বোঝাচ্ছি।
কোয়েল: সবটা জানানো কি খুব দরকার? না জানালেই নয়?
আদিত্য: (দু-গালে হাত রেখে) সত্যি কখনো চেপে রাখা যায় না ছুটি। এখন যদি না জানাস তাহলে পরে যদি ও জানতে পারে ওর আরো খারাপ লাগবে। আমি ওকে বোঝাচ্ছি, তুই চিন্তা করিস না।
আদিত্যকে চলে যেতে দেখে কোয়েল চুপচাপ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। ইতিমধ্যে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কোয়েল আদিত্যদের ঘরে না গিয়ে গেস্ট হাউসের পিছনের দিকে চলে যায় যেখানে একটা বসার জায়গা আছে। বেশ সুন্দর লাগছে বাইরের দৃশ্যটা। কোয়েল সেখানে দাঁড়িয়েই চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
৭৯.
আদিত্য ঘরে এসে দেখে মৌমিতা বেডে দু-হাত রেখে চুপচাপ বসে আছে। দরজাটা বন্ধ করার আওয়াজ মৌমিতার কানে আসতেই মৌমিতা আদিত্যের দিকে তাকায়। আদিত্যকে দেখতেই মৌমিতা উঠে ব্যালকনিতে চলে যায়। সেই দেখে আদিত্যও মৌমিতার পিছু পিছু যায় আর পিছন থেকে মৌমিতাকে জড়িয়ে ধরে।
মৌমিতা: আদি প্লিজ, ছাড়ো আমাকে আমার ভালো লাগছে না।
আদিত্য: এই ঠান্ডার মধ্যেও এতো গরম হয়ে আছো কি করে তুমি? (মজা করে)
আদিত্যের কথার উত্তর দিতে মন চাইলো না তাই চুপ করে রইলাম। এতদিন কোয়েলের সাথে আছি আমি কোয়েল একটাবারের জন্য আমায় বলেনি ও একজন ডান্সার। বরং আমি যখন কম্পিটিশনের সময় জিজ্ঞেস করেছি তখন আমাকে মিথ্যে বলেছে। কথাগুলো মাথায় আসতেই মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে এইসব ব্যাপারে আদিও জানতো, অঙ্কিতও জানতো কিন্তু আমাকে কেউ কিছু বলেনি। কারণটা কি? কোয়েল বারণ করেছে। এতই যদি সব লুকানোর ছিলো তাহলে বন্ধুত্ব কি জন্য করেছিলো?
আদিত্য: এই বউ! এতো কেন রাগ করছো? আচ্ছা আমার সাথে তো একটু ভালো ভাবে কথা বলো?
আদি আমাকে ওর নিজের দিকে ফেরালে আমি মুখ নীচের দিকে নামিয়ে রাখি। তবুও ও আমার চোখের জল দেখতে পেয়ে যায় আর উত্তেজিত হয়ে আমার গালে দু-হাত রেখে বলে,
আদিত্য: মৌ প্লিজ, কাঁদছো কেন তুমি? তুমি কি কোনোভাবে কিছুক্ষণ আগে আমাকে আর কোয়েলকে ওভাবে দেখে ভুল ভাবছো? (ঘাবড়ে গিয়ে)
মৌমিতা: (বিরক্ত হয়ে) কি আজে বাজে কথা বলছো আদি। আমি কেন তোমাদেরকে ভুল বুঝতে যাবো? আমি খুব ভালো ভাবেই জানি তোমাদের সম্পর্কটা দাদা আর বোনের। কোয়েলের ব্যাপারে জানার পর থেকে আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না আদি, প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দাও। (চোখের জল মুছে)
আদিত্য: এরকম করো না জান। তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখলে আমার ভালো লাগে না।
মৌমিতা: তোমার কষ্ট হয়নি যখন রাজদা তোমাকে কোনো কিছু না জানিয়েই হঠাৎ করে চলে গেছিলো? নিজেকে একা মনে হয়নি? আমারও আজ নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে আদি। এখানে আসার পর প্রথম দিন থেকে কোয়েলের আমার প্রতি যত্ন, ভালোবাসা সবকিছু মনে পরলেই আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি ওকে নিজের বন্ধু মনে করেছি কিন্তু ও মনে করেন, তাই তো সবটা লুকিয়ে গেছে আমার থেকে। এদিকে আমি প্রথম দিনই ওকে আমার জীবনে কি ঘটেছে না ঘটেছে সবটা বলেছিলাম। বন্ধু যখন মনেই করে না তাহলে কি দরকার ছিলো এভাবে প্রত্যেক মুহূর্তে ঢাল হয়ে পাশে থাকার, বোনের মতো ভালোবাসার?
আদিত্য: আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার যেমন কোয়েল ছাড়া কোনো বন্ধু নেই। তুমি ওকে যেমন বোনের মতো ভালোবাসো তেমন কোয়েলেরও ক্ষেত্রেও তাই।
মৌমিতা: তাহলে ও কেন বললো না আমায় কিছু? কেন আমাকে এতটা পর মনে করলো?
আমি শব্দ করে কেঁদে উঠলে আদি আমাকে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়। আমি ওর বুকে মাথা রেখেই ফোঁপাতে থাকি। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে আদি আমাকে সোজা করে, চোখের জল মুছিয়ে দেয়। কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,
আদিত্য: কোয়েলের কোনো দোষ নেই মৌ। তুমি এখনও অনেক কিছুই জানো না ওর সম্পর্কে। শুধু ওর কেন, আমার সম্পর্কেও অনেক কিছু জানো না তুমি।
আমি কিরকম ভাবে বিষয়টা নিয়ে প্রতিক্রিয়া করবো বুঝতে পারছি না। কোয়েলের সাথে সাথে আদির সম্পর্কেও অনেক কিছু জানি না মানে? কি বলতে চাইছে ও? আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আদির দিকে চেয়ে রইলে ও আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে দোলনায় বসিয়ে দেয়। তারপর নিজে বসে আমার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বললো,
আদিত্য: মৌ, কোয়েল…কোয়েল আমার সম্পর্কে নিজের খুড়তুতো বোন হয়।
মৌমিতা: কি? (অবাক হয়ে)
আদিত্য: হম। ও আমার কাকাই মানে কাকার মেয়ে হয়। আমার কাকার নাম আশীষ ব্যানার্জী। আমার ড্যাড আর কাকাইয়ের বর্তমানে কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই মানে প্রয়োজন নাহলে কেউ কাওর সাথে কথা বলে না। ছোটো থেকে আমি বা কোয়েল এরকম কিছুই দেখিনি, একসাথে মানুষ হয়েছি দুজনেই। কিন্তু কোয়েল যখন উচ্চমাধ্যমিক দিলো তখন কাকাই ওকে বাইরে পড়াশোনার করতে যাওয়ার জন্য প্রেসার দিতে লাগলো। কাকাইয়ের মতে, কোয়েল যদি বাইরে গিয়ে পড়ে ওখানকার কালচার জানে তাহলে ওর অনেক স্ট্যাটাস, স্ট্যান্ডার্ড বাড়বে। ইনডাইরেক্টলি ইন্ডিয়ান কালচারকে অপমান করায় ড্যাড একটু রেগে গিয়ে কাকাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে। এদিকে কোয়েলও বলে দেয় যে ও কিছুতেই বাইরে যাবে না। ছোটো থেকেই কাকাইয়ের সাথে কোয়েলের মতের বিরোধ লেগেই থাকতো। বলতে গেলে কাকাই যেটা বলতো সেটা কোয়েল শুনতো না কিংবা শোনার প্রয়োজন মনে করতো না। কাকাই কোনো সময় জোর করতো না কোয়েলকে কিন্তু বাইরে পড়তে যাওয়ার সময় কাকাই জোর করা শুরু করে। তবে কোয়েল নাছোড়বান্দা, কিছুতেই যাবে না। আসলে, ব্যাপারটা হলো শুরু থেকেই কাকাইয়ের মধ্যে বড়লোক হওয়ার একটা দম্ভ আছে। যারা গরীব তাঁদের তো মানুষ বলেই গণ্য করে না আর যাঁরা মধ্যবিত্ত তাঁদেরকেও হেয় করে চলে। এটাই ছিলো কোয়েলের সাথে কাকাইয়ের আলাদা হওয়ার মূল কারণ।
মৌমিতা: আলাদা হওয়ার কারণ? মানে?
আদিত্য: সেই ঘটনার পর কোয়েল বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। কেউ না জানলেও আমি জানতাম সবটাই। আমিই ওর অ্যাডমিশন যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে করিয়ে দেই আর হোস্টেল ঠিক করেদি। ও আমাকে বলেই দিয়েছিল কাওকে জানাতে না ভার্সিটিতে আমি ওর দাদা হই, যে কয়জন জানে শুধু তাঁদের মধ্যেই থাকুক ব্যাপারটা। কোয়েল নিজের একটা আইডেন্টিটি বানাতে চায়। চায় না কেউ ওকে কাকাইয়ের নামে চিনুক। নিজের সম্পর্কে সবকিছুই ও আগাগোড়া গোপন করে এসেছে এটার কারণ আমি জানি না। হাতে গুনে কয়েকজন ওর সম্পর্কে জানে। আমি, রাজ আর অঙ্কিত এতদিন জানতাম এখন তুমি অ্যাড হলে।
মৌমিতা: মানে বাবা মা কেউ জানেন না ওর নাচ সম্পর্কে?
আদিত্য: না। আর আমার যা মনে হয় সেই কারণেই ও তোমাকে কিছু জানায়নি কম্পিটিশনের টাইমে। তোমাকে জানালে তুমি নাম দিতে বলতে কিন্তু ও তো জানতো মম, ড্যাড আসবে কম্পিটিশনে। তাই হয়তো ব্যাপারটা হাইড করেছে।
মৌমিতা: শুধু কি কাকাইয়ের দম্ভের কারণে কোয়েলের রাগ কাকাইয়ের উপর?
আদিত্য: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) সেটা কোয়েলের থেকে জেনে নিয়ো। ও তোমাকে ভালো ভাবে বলতে পারবে। ও কাওকে জানাতে না করেছে দেখে আমি ওকে ছুটি বলে ডাকতে পারিনা আর ও আমাকে দাভাই। মাঝেমধ্যে কেউ না থাকলে ডাকি।
মৌমিতা: তখন যে অঙ্কিত বললো কোয়েলের নাচটা প্র্যাকটিস আছে প্রোগ্রাম করেছে দেখে। কোথায় প্রোগ্রাম করেছে আর কবেই বা করলো? ও তো আমার সাথেই থাকতো সারাক্ষন তাহলে?
আদিত্য: এখানে আসার আগে যে এক সপ্তাহ ছুটি পেয়েছিলাম আমরা। সেই সময় ও মুম্বাই গেছিলো অঙ্কিতের সাথে, কম্পিটিশন ছিলো একটা।
মৌমিতা: আমার মনে আছে, তুমি এড়িয়ে গেছিলে কোয়েলের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই।
আদিত্য: (হেসে) হম। কোয়েল আগাগোড়াই খুব একা জানো তো মৌ। ছোটবেলায় বন্ধু ছিলো না,ওর সবটা জুড়ে শুধু ওর দাভাই মানে আমি ছিলাম। তারপর একদিন রাজকে আমার বাড়িতে নিয়ে গেলে সেদিন রাজের সাথে খুব ঝগড়া করে। কারণ কি ছিলো জানো ঝগড়ার?
মৌমিতা: কি?
আদিত্য: (হেসে) রাজ নাকি ইর দাভাইকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নেবে। সেই কি কান্না বাপ রে বাপ! ওর আদো গলায় দাভাই ডাকটা ভীষণ মিস করি। আজ যখনও দাভাই বলে ডাকলো না? আমার এত ভালো লেগেছিল আমি বলে বোঝাতে পারব না তোমাকে।
মৌমিতা: (আদির কাঁধে হাত রেখে) তারপর রাজদার সাথে বন্ধুত্ব কীভাবে হলো?
আদিত্য: (চোখের জল আড়াল করে) কীভাবে আবার? আমি গিয়ে ওকে মানালাম আর রাজকে দু-চারটে থাপ্পর দিলাম। রাজও বললো যে, ও আমার সাথে বেশি কথা বলবে না। আর তারপরেই পাশা উল্টে গেলো। রাজ কোয়েলের থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার বদলে আমার থেকেই কোয়েলকে কেড়ে নিল একপ্রকার। বোন আমার রাজ ছাড়া আর কিছু বোঝেই না। রাজের সাথেই পড়বে, রাজের সাথেই খেলবে সারাক্ষণ শুধু রাজ আর রাজ। আমাকে তো পাত্তাই দিতো না। এখনই দেখো না, যেই রাজ এসে গেছে আমাকে আর পাত্তাই দিচ্ছে না। (গাল ফুলিয়ে)
মৌমিতা: (হেসে দিয়ে) হিংসুটে।
আদিত্য: (হেসে) উহুম। আমি খুব খুশি রাজের ফিরে আসাতে। ওর চলে যাওয়ার আমার যতটা না কষ্ট হয়েছিলো আমার বোনের তাঁর থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিলো। একদিকে বাবার সাথে ঝগড়া অন্যদিকে নিজের সবথেকে কাছের মানুষটার হুট করে চলে যাওয়া। আমি চেষ্টা করছিলাম কীভাবে ওকে ঠিক করবো আর ঠিক সেই সময় তুমি এলে। ইউ নো মৌ, কোয়েলকে যখন তোমার সাথে খুব হাসিখুশি দেখেছিলাম তখন প্রথম মনে হয়েছিলো হয়তো সত্যি তুমি খুব স্পেশাল।
আদি আমার চোখে চোখ রেখে কথাটা বললে আমি লাজুক হাসলাম চোখ নামিয়ে নিয়ে। ও আমাকে বললো,
আদিত্য: ওর উপর আর রাগ করে থেকো না। এতে তুমিও কষ্ট পাবে আর ও নিজেও।
মৌমিতা: কি বলছো টা কি? এতো সহজে সব ভুলে যাবো? (উঠে দাঁড়িয়ে)
আদিত্য: মৌ প্লিজ…
মৌমিতা: অসম্ভব! আমার একমাত্র ননদ বলে কথা, ঝগড়া করব না এমনটা হয় নাকি? (রেলিং ধরে হেসে)
আদি আমার কথা শুনে হেসে ফেলে। বেচারা আমার আগের কথাটা শুনে খুব নার্ভাস হয়ে গেছিলো।
আদিত্য: তোমাদের ননদ- বৌদির মধ্যে আমি নেই।
মৌমিতা: হুহ, থাকতে কে বলেছে? এখন যাও নিজের ঘরে যাও। (বাইরের দিকে তাকিয়ে)
আদিত্য ধীর পায়ে মৌমিতার খুব কাছে চলে গেলো। মৌমিতা সেটা টের পেয়ে আদিত্যের দিকে মুখ ঘোরালেই আদিত্যের উষ্ণ নিশ্বাস নিজের মুখের উপর অনুভব করলো। আদিত্য মৌমিতার চুল কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,
আদিত্য: এত সুন্দর ওয়েদারে বউকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে নাকি? নো ওয়ে! এখন তো রোম্যান্স করার সময়। (গালে ঠোঁট ছুঁয়ে)
আদিত্য মৌমিতার খুব কাছে থাকায় মৌমিতা কেমন জানো জমে গেছে। চেয়েও আদিত্যকে দূরে সরাতে পারছে না। লজ্জায় মৌমিতার মুখ লাল হয়ে গেছে, আদিত্যের দিকে তাকাতে সে নারাজ। আদিত্য তা বুঝতে পেরে নিজেই মৌমিতার হাতদুটো ধরে নিজের মুখের কাছে এনে অপর পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ায়। মৌমিতা চোখ বুজে নিলে আদিত্য মৌমিতার কোমর একহাতে পেঁচিয়ে নিয়ে একহাত মৌমিতার কানের নীচে রেখে মৌমিতার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়। মৌমিতা আলতো ভাবে চোখ মেলে তাকাতেই আদিত্য নিজের ঠোঁটের ভাঁজে মৌমিতার ঠোঁটজোড়া নিয়ে নেয়।
‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৫৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৮০.
ঝড়ো বৃষ্টির সাথে হালকা হাওয়া চলার দরুন কোয়েলের মুখে বৃষ্টির একটা ছাঁট আসছে যেটা কোয়েল চোখ বুজে অনুভব করছে। এমন সময় কোয়েল নিজের পাশে কাওর উপস্থিতি টের পায়। পাশ ফিরে তাকালে দেখে রাজ এসে, পকেটে হাত গুঁজে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছে। কোয়েল তা দেখে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজেও সামনের দিকে তাকায়। কোয়েলের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রাজ এইবার কোয়েলের দিকে তাকালো। কোয়েলের দিকে এক-পা এগিয়ে রাজ কোয়েলের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথে কোয়েল নিজের দু-হাত দ্বারা রাজকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। রাজ কোয়েলের মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে কোয়েলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় কিছুক্ষণ।
কোয়েল: তুমি রাগ করে নেই আমার উপর?
রাজ: উহুম! প্রথমে একটু রাগ হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু এখন আর রাগ নেই।
কোয়েল একটু অবাক হয়ে রাজের বুক থেকে মাথা তুলে, রাজের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে,
কোয়েল: কেন? আমি তো তোমার রাগ ভাঙাইনি। তাহলে কীভাবে রাগ বলছো রাগ নেই?
রাজ: (হেসে) আমার রাগের কারণ ছিলো অঙ্কিত তোমার ডান্স পার্টনার, তুমি প্রোগ্রাম করছো এগুলো আমাকে না জানানো। পরে মাথাটা একটু ঠান্ডা হতেই মনে পরলো, আমার কুহুজান তো কাওকে নিজের সম্পর্কে জানাতে পছন্দ করে না। তাই রাগটা হুঁশ! করে উড়ে গেলো।
রাজের কথায় কোয়েল হেসে ফেললো। রাজের বুকে আবারও মাথা রেখে বললো,
কোয়েল: তোমার মত মৌও আমাকে বুঝবে তো রাজ? আমি ওকে হারাতে চাইনা। আমি যখন ভীষণ একা ছিলাম তখন ওকে আমার জীবনে পেয়েছি শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবে নয়, বোন হিসেবে।
রাজ কোয়েলের দু-গালে হাত রেখে ওকে সোজা করে বললো,
রাজ: বুঝবে। বউদি এতোটাও অবুঝ নয় যে তোমাকে বুঝবে না। বউদি তোমাকে ভালোবাসে দেখেই তো কষ্ট পেয়েছে, সত্যিটা জেনে গেলে দেখবে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
কোয়েল রাজের কথায় চুপচাপ মাথা নেড়ে সায় দিলে রাজ হেসে কোয়েলের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় আর বলে,
রাজ: এবার ঘরে যাও নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
কোয়েল: যাবো? দাভাই আমাদের ঘরে আছে। মৌকে আমার আর দাভাইয়ের ব্যাপারে সব বলে দিয়েছে হয়তো এতক্ষণে। (চিন্তিত সুরে)
রাজ: আদি মৌকে তোমার আর ওর রিলেশন কি এইগুলো বলতে গেছে?
কোয়েল: হমম। বললো এখন না জানালে পরে যদি মৌ অন্যকাওর থেকে জানতে পারে তাহলে আরো কষ্ট পাবে তাই এখনই জানিয়ে দেওয়াটা ভালো।
রাজ: ঠিকই তো বলেছে। একটা বিষয়ে যখন জানতে পেরেছে তখন পুরো বিষয়টা জেনে নেওয়াই ভালো। কারণ পরে যদি জানে তাহলে আবার একটা কষ্ট পাবে।
কোয়েল: হম। আচ্ছা, তুমি তো দূরে থেকেও আমার খোঁজ নিতে তাহলে এই বিষয়টা জানলে না কেন?
রাজ: আর কি বলবো, তোমার প্রশ্নের উত্তরটা মাথায় আসতেই তো আমার রাগ গলে জল হয়ে গেলো।
কোয়েল: বুঝলাম না?
রাজ: আমি যার কাছ থেকে তোমার খবর নিতাম তাঁকে তোমার দাভাই মানে আদিই খবর দিতো। ও জানতো আমি তোমার খবর নিচ্ছি মানে একদিন ঠিক ফিরবো এদিকে তুমিও বারণ করেছিলে এই বিষয়টা যাতে কেউ না জানে তাই ওই ছেলেটাকে বলে দিয়েছিলো যাতে আমায় এই বিষয়ে না জানায়। এটা মাথায় আসতেই বুঝলাম তোমার তো কোনো দোষ নেই, তাই আমি ছুটে ছুটে আমার কুহুজানের কাছে চলে এলাম!
রাজ কথাটা একটু ঝাঁকি দিয়ে শেষ করেই কোয়েলের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে সরে এলো। কোয়েল বাচ্চাদের মতো হেসে ফেললে রাজ কোয়েলের নাক ধরে টেনে দেয়।
রাজ: ওই তো আদি আসছে। যাও ঘরে যাও।
আদিত্য: ঘরে যা, আছে আজকে তোর কপালে।
আদিত্যের কথা শুনে কোয়েল কাঁদো কাঁদো মুখে করে ফেললে রাজ হেসে আদিত্যকে বলে,
রাজ: বাচ্চা মেয়েটাকে ভয় দেখাস না ভাই। এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে।
কোয়েল ঠোঁট উল্টে গাল, নাক ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো রাজের দিকে তাকালে আদিত্য জোরে হেসে ফেলে। সেই দেখে কোয়েল আদিত্যের দিকে ওভাবে তাঁকায়।
আদিত্য: তোকে এখন পুরো আমার ছোটবেলার ছুটির মতো লাগছে। ঠিক যখন তুই বায়না করতিস খেলার জন্য আর আমি না করে দিতাম। তাই না রাজ?
রাজ: একদম ঠিক। শুধু ওই বিষয়ে? কোনো কিছুতে মহারানীকে নাক করলেই এরকম রিয়াকশন দিতো।
কোয়েল: ধুর! থাকবোই না আমি এখানে। যাচ্ছি আমি হুহ! (বাচ্চাদের মতো গলা করে)
কোয়েল চলে গেলেও আদিত্য আর রাজ হাসাহাসি করতে থাকে। কোয়েল সেটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে একটু দাঁড়াতেই দেখতে পেলো। নিজেও হাসলো কোয়েল তারপর ঘরে চলে গেলো। ঘরে ঢুকতেই কোয়েল দেখলো মৌমিতা একটা বই নিয়ে বেডে বসে আছে। কোয়েল দরজাটা বন্ধ করে মৌমিতার পাশে গিয়ে বসে একটু কাশে।
কোয়েল: উঁহু, উঁহু! বলছি যে শোন না।
মৌমিতা: হম। (গম্ভীর ভাবে)
কোয়েল আমার উত্তর দেওয়ার ধরণ দেখে চুপ করে গেল। বেশ হাসি পাচ্ছে কোয়েলের অবস্থা দেখে কিন্তু এখন তো হাসলে হবে না। তাই চুপ করে রইলাম। কোয়েল বসা থেকে উঠে আমার সামনে এসে বসলো।
কোয়েল: রাগ করে আছিস আমার উপরে?
মৌমিতা: নাহ। তুই কি এমন কিছু করেছিস নাকি যে তোর উপর রাগ করে থাকবো?
কোয়েল: আমি মানছি আমি ভুল করেছি কিন্তু আমি এমনটা ইচ্ছা করে করিনি মৌ। রাজও জানতো না এই বিষয়ে।
মৌমিতা: (বই রেখে উঠে বসে) আচ্ছা মেনে নিলাম তুই নিজের সম্পর্কে জানাতে ভালোবাসিস না। তাই বলে তোর আর আদির সম্পর্কে কেন কিছু জানালি না আমাকে? আমি যদি তোর আর আদির সম্পর্কে জানতাম তাহলে কি খুব ক্ষতি হতো?
কোয়েল: তোর সাথে আদিত্যদা যেটা করেছিলো সেটা জানার পরে কোন মুখে আমি বলতাম যে, আমি সম্পর্কে তোর ননদ হই? আমি যদি এটা তোকে জানিয়ে দিতাম তাহলে তুই কখনোই আমার সামনে আদিত্যদার প্রতি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতিস না। ফলে আমিও তোদের সম্পর্ক ঠিক করার ক্ষেত্রে কোনো হেল্প করতে পারতাম না। সবটা ঠিক হয়ে গেলে এই বিষয়টা জানাজানি হতোই তাই আর বলিনি।
আমি কোয়েলকে জড়িয়ে ধরি ওর কথা শুনে। আদির থেকে সবটা জানার পরেই আমার রাগ চলে গেছে আর এখন কোয়েলের মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনে আরো বেশি ভালো লাগছে। সত্যি, বোন খুঁজে পেয়েছি বন্ধু নয়। এদিকে, কোয়েলও মৌমিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। জানো প্রাণ ফিরে পেলো শরীরে।
মৌমিতা: তুই কম্পিটিশনে নাম দিসনি কেন? বাবা-মা আসবে দেখে?
কোয়েল: হম। কিন্তু মৌ, তোর বাবা-মাকে কিন্তু আমি ডাকিনি সেদিন। আদিত্যদা অনেক আগে থেকেই বলে রেখেছিলো। হঠাৎ আসেননি ওনারা সেদিন।
মৌমিতা: কি? কই, ও তো আমাকে বললো না সেটা?
কোয়েল: হুর পাগলী! নিজের ঢ্যাঁড়া কেউ নিজে পেটায় নাকি? (হেসে) আদিত্যদা….
মৌমিতা: (কোয়েলকে থামিয়ে) দাভাই! দাভাই বলে ডাকবি এবার থেকে আমার সামনে। জানিস তোর দাভাই কতোটা কষ্ট পায় তুই ওকে এখন আর তেমন এই নামে ডাকিস না দেখে? আজকে আমাকে তোর সম্পর্কে, তোর ছোটবেলার সম্পর্কে সবকিছু বলেছে। সেই সময় এই সম্বোধনের ব্যাপারটা এলে ওর চোখে জল দেখেছি আমি।
আমার কথা শুনে কোয়েলের চোখটা ছলছল করে ওঠে। সামান্য হেসে বলে,
কোয়েল: আমার কাছেও দাভাইয়ের দেওয়া “ছুটি” নামটা খুব প্রিয়। আজকে যখন দাভাই আমাকে ঐ নামে ডাকলো, তখন কিছুক্ষণের জন্য দমে গেছিলাম আমি।
মৌমিতা: তাহলে কেন বারণ করেছিস ওকে এই নামে ডাকতে? দুজনেই তো কষ্ট পাচ্ছিস।
কোয়েল: (উঠে দাঁড়িয়ে) আসলে আমি চাইতাম না কেউ জানুক আমি আশীষ ব্যানার্জীর মেয়ে।
মৌমিতা: কেন কোয়েল? শুধুই কি মতের বিরোধ নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
কোয়েল: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) উনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসে জানিস তো মৌ। আমি বুঝি সেটা।
মৌমিতা: তাহলে?
কোয়েল: উনি উনার মত করে আমাকে ভালোবাসে, আমার মতো করে নয়। সবসময় দামী দামী জিনিস, ভালো ভালো খাওয়ার, নতুন নতুন জামাকাপড়, টাকা পয়সা এইসব দিয়েছে। সময়, স্নেহ এগুলো না। উনি আমাকে ভালোবেসেছেন ওনার কথা রাখার জন্য, ওনার স্বপ্ন পূরণের জন্য। আমার কি স্বপ্ন, আমার কি ইচ্ছা সেটা জানার কোনোদিন চেষ্টাটুকু করেনি। নিজের ইচ্ছাগুলো আমার উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন।
মৌমিতা: আর?
কোয়েল: এগুলো যেমন জানতে পেরেছিস। সময় আসলে হয়তো আরো কিছু জানতে পারবি। এখন প্লিজ এইসব নিয়ে কথা বারাস না।
মৌমিতা: কিন্তু…
কোয়েল: প্লিজ, মৌ!
মৌমিতা: ফ্রেশ হয়ে আয় যা।
কোয়েল হেসে ফ্রেশ হতে চলে যায়। একদিনে এতো কিছু জানাটা ঠিক নয়, ধীরে সুস্থে সবটা বাড় করতে হবে আমায়। সেদিন রাতে এবিষয়ে আর কোনো কথা বলিনি। তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে পড়েছি কারণ পরেরদিন সকালে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছিলো।
৮১.
দার্জিলিং থেকে ফিরে এসেছি এক-দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। পরীক্ষা এখন দোরগোড়ায়। আমাদের অনার্স ফাস্ট সেমিস্টার আর আদিদের এম.বি.এ. থার্ড সেমিস্টার। ভার্সিটিতে আজকে গিয়ে বেশ কয়েকটা সাজেশন নিয়ে এসেছি। আদি আমাকে হস্টেলের সামনে গাড়ি থামালে আমি নেমে যাই।
মৌমিতা: কি হলো দাঁড়িয়ে আছো যে? যাও।
আদিত্য: তুমি উপরে উঠে যাও আগে, আমি চলে যাবো।
আমি আদির কথা শুনে হস্টেলে ঢুকে পড়লাম। কোয়েল ঘরে একা কারণ একদিন আমি ভার্সিটি যাই আরেকদিন ও। এভাবেই পড়া কমপ্লিট করছি। আমি ঘরে ঢুকতেই দেখলাম কোয়েল লাগেজ প্যাক করছে। কোথায় যাচ্ছে ও এই পরীক্ষার সময়, এই ভেবে এগোতেই দেখলাম জামাকাপড়গুলো আমার।
মৌমিতা: আমার জামাকাপড় গোছাচ্ছিস কেন? মাথা খারাপ হলো নাকি তোর?
কোয়েল: আজ্ঞে না, আমার মাথা খারাপ হয়নি। আপনার বরের হুকুম ছিলো আপনি আসার আগে লাগেজ গুছিয়ে রাখতে। তাই আমি আমার পড়া বাদ দিয়ে এই করছি।
মৌমিতা: আদি?
আদিত্য: ইয়েস ম্যাডাম! আমি। (পিছন থেকে)
মৌমিতা: তুমি উপরে এসেছো কেন? আর এসব কি আদি?
আদিত্য: তুমি এখন আমার সাথে আমার বাংলোতে যাচ্ছো। কোয়েল, লাগেজ প্যাক করেছিস?
কোয়েল: হ্যাঁ, কমপ্লিট।
আদিত্য: গুড গার্ল। মৌ, চলো।
আদি ট্রলি নিয়ে আমার হাত ধরে এগোতে নিলেও আমি এগোই না। চুপচাপ নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি। সেই দেখে আদি বলে,
আদিত্য: কি হলো মৌ? চলো, দেরী হয়ে যাচ্ছে।
মৌমিতা: আমি কোথাও যাবো না আদি। এখানেই থাকবো আমি।
আদিত্য: আমি যখন যেতে বলেছি তখন তুমি যাবে।
মৌমিতা: কেন এমন করছো? আমি তোমার সাথে একসাথে থাকলে লোকে কি ভাববে? (বুঝিয়ে)
আদিত্য: কে কি ভাবলো না ভাবলো আমার তাতে কোনো যায় আসে না। আমি জানি তুমি আমার ওয়াইফ আর তোমার উপর আমার সবরকম অধিকার আছে। সো, তুমি এখন আমার সাথে যাচ্ছো এন্ড ইটস মাই অর্ডার। (জোর দিয়ে)
আমি আর ওর মুখের উপর কথা বলতে পারলাম না। কোয়েলের দিকে তাকালে ও চোখ দিয়ে সম্মতি দিলো যাওয়ার জন্য। আমি মাথা নীচু করে নিলে আদি আমাকে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে। বাংলোতে আসার পর শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম। এখানে আসার বিষয়টা নিয়ে ভাবছিলাম এমন সময় আদি আমার ঘরে এলো। আমি উঠে বসতেই ও কোনো রকম কথা না বলে আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো।
মৌমিতা: কি করছো টা কি আদি? কোথায় যাচ্ছো?
আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা আমাকে নিজের ঘরে এসে বেডে বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দিলে আমি রেগে বলে উঠি,
মৌমিতা: কি হচ্ছে টা কি আদি? তখন থেকে নিজের যা ইচ্ছা হচ্ছে তাই করে যাচ্ছো। একটাবার আমি কি চাইছি সেটা জানার প্রয়োজনও মনে করছো না। নিজের ইচ্ছাটা আমার উপর কেন চাপাচ্ছো তুমি? (একনাগাড়ে)
আদিত্য: ওহ, তো তুমি চাও না আমার সাথে থাকতে? (শান্ত ভাবে)
মৌমিতা: না চাই না। প্রথম থেকে যখন এটা হয়নি তখন আমি এখন হঠাৎ করে এসব চাইনা আদি।
আদিত্য: তারমানে তুমি এখনও আমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারোনি তাই তো? (ভাঙা গলায়)
ওর গলার স্বর বুঝে আমি নরম হয়ে গেলাম। ওর কাছে গিয়ে ওকে বোঝাতে শুরু করলাম,
মৌমিতা: এমনটা নয় আদি। দেখো, কেউ জানে না আমি আর তুমি হাজবেন্ড,ওয়াইফ। এখন কেউ যদি টের পায় তুমি আর আমি একই বাড়িতে আছি সেটা খারাপ দেখাবে। লোকে খারাপ কথা বলবে আদি। আমি এজন্যই বলছি এটা ঠিক হচ্ছে না।
আদিত্য: আমি লোকে কি বললো না বললো সেটা নিয়ে ভাবিনা মৌ। আমার কাছে তোমার সেফ থাকাটা ইম্পরট্যান্ট। জিয়া অনেকদিন যাবৎ আমাদেরকে একসাথে দেখছে, তাও চুপ করে আছে। হতেই পারে এই এক্সাম টাইমে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চাইলো, তখন? নো ওয়ে, তোমাকে নিয়ে আমি একদম কোনো রিস্ক নিতে রাজি নই।
আমিও আদির কথাটা ভেবে দেখলাম কিন্তু তবুও এভাবে একসাথে থাকাটা কি ঠিক হচ্ছে? এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছে এমন সময় আদি আমার চিন্তিত মুখ দেখে মলিন হেসে বললো,
আদিত্য: চিন্তা করো না একঘরে আছি দেখে তোমার কাছে আসার চেষ্টা করবো না। তোমাকে তোমার অনিচ্ছাতে নিয়ে এসেছি ঠিকই কিন্তু তোমার অনিচ্ছায় তোমার কাছে আসবো না আমি। আমি রাতের স্টাডি করবো বাট এটা ভেবো না যে, তুমি ঘুমিয়ে থাকলে তাঁর সুযোগ নেবো।
মৌমিতা: আদি! (ধমক দিয়ে) কি বলছো এসব তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? এসব চিন্তা আমার মাথায় কখনও আসতেই পারে না।
আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই আদি গিয়ে ওর স্টাডি টেবিলে বসে পড়লো। আমি মাথা গরম না করে ওর কাছে গিয়ে পিছন থেকে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
মৌমিতা: এতো অভিমান হয়েছে থাকতে চাইনা বলেছি দেখে?
আদিত্য: (নিশ্চুপ)
মৌমিতা: আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে। শুধু তুমি না আমিও রাতে স্টাডি করবো, হেল্প করবে তো আমাকে? হম? (গালে ঠোঁট ছুঁয়ে)
আদি হালকা হেসে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে আমাকে ওর কোলে বসিয়ে, আমার কোমর জড়িয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিলো। আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম। ও ধীরজ কণ্ঠে আমার কানের কাছে বলল,
আদিত্য: তোমাকে ছাড়া আর এক মুহূর্ত থাকতে রাজি না আমি। আয় লাভ ইউ!
মৌমিতা: (হেসে) আই লাভ ইউ টু!
আদি মাথা উঠিয়ে আমার ঠোঁটে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালে আমি ওর হাত আকড়ে ধরি। ও সরে যাওয়ার পরও আমি চোখ বন্ধ করে থাকলে ও আমার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে এসে বলে,
আদিত্য: সবটা তোলা থাকবে। খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে সারাজীবনের মতো নিজের করবো, নিজের কাছে রাখার ব্যবস্থা করবো।
ও কথা শেষ করে আমার কানে ঠোঁট ছোঁয়ালে আমি লজ্জায় ওকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুঁজি। ও আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
চলবে।