একদিন তুমিও ভালোবাসবে পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
1793

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আদিত্য হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রাজ গিয়ে বেডে বসে পিছন দিকে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, তখনই….কোয়েল ঘরে ঢোকে। রাজকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে একটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,

কোয়েল: তুমি ঘুমাওনি? এভাবে বসে আছো যে?

রাজ: না মাথাটা একটু ধরেছে তাই। আদি এসেছিলো ঘরে তখনই ঘুমটা ভেঙে গেছে।

কোয়েল: কিছু বলেছে তোমাকে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা সম্পর্কে?

রাজ: হম। আপসেট ছিলো খুব। বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছি বউদির কাছে।

কোয়েল: তোমার মাথা ধরেছে যখন আমি কফি আনবো?

রাজ: না, না কফি খেয়েই ঘুমিয়েছি আর খাবো না।

কোয়েল: তাহলে মৌয়ের কাছ থেকে বাম নিয়ে আসি?

রাজ: এমনি মাথাটা একটু টিপে দাও তাহলেই হবে।

কোয়েল রাজের কথা শুনে বেডের পিছনে গিয়ে রাজের মাথাটা ম্যাসাজ করে দিতে থাকে। কিছু সময় বাদে রাজ কোয়েলের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কোয়েল সেটা দেখে বিড়বিড় করে বললো,

কোয়েল: এমন ভাব করছে জানো আমি ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নিয়েছি, হুহ!

রাজ: করে নিয়েছই তো! শুধু স্বীকার করছো না। ব্যাপার না সময়ের সাথে সাথে ঠিক স্বীকার করে নেবে। ভালো করে ম্যাসাজ করো আপাতত।

কোয়েল মনে মনে কিছুক্ষণ রাজকে বকে নিলো। তারপর রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলো আর আস্তে আস্তে চুলগুলো টেনে দিতে লাগলো।

অন্যদিকে,

ডক্টর আসায় কোয়েল চলে যায় আদিত্যকে ডাকতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিত্য ঘরে আসলে আমি ওনাকে একঝলক দেখেই মাথা নামিয়েনি ডক্টর আমার ক্ষত স্থানগুলো দেখে নিয়ে বললেন,

ডক্টর: চিন্তার বিষয় নেই, দুদিনে ফিট হয়ে যাবেন। শুধু আজকের রাতটা একটু কষ্টদায়ক হবে। আমি পেইনকিলার দিয়ে দিচ্ছি খাওয়া-দাওয়ার পর ওটা খেয়ে শুয়ে পরবেন আর এই মলমগুলো লাগাবেন।

ডক্টর প্রেসক্রিপশনটা আমার দিকে এগোতেই আদিত্য পিছন থেকে এসে ওটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নেয়। আদিত্যকে দেখে ডক্টর জিজ্ঞেস করেন,

ডক্টর: আপনিই কি কল করতে বলেছিলেন?

আদিত্য: হ্যাঁ।

ডক্টর: আপনি ওনার..

আদিত্য: হাজবেন্ড।

আমি ডক্টরের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই আদিত্য উত্তর দিয়ে দিলেন। আমি কি উত্তর দিতাম? ডক্টরকেই তো উনি প্রশ্ন শেষ করতে দিলেন না। ডক্টরের কাছে উনি নিজেকে আমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দিলেন? কিন্তু কেন? এভাবে তো সবটা জানাজানি হয়ে যেতে পারে। ডক্টর ওনাকে আরেকবার সবটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলে উনি প্রেসক্রিপশনটা ভালো ভাবে দেখতে থাকেন। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করি,

মৌমিতা: এটা কি ঠিক হলো?

আদিত্য: ডক্টর বাইরে গিয়ে কিছু বলবেন না। তোমাকে এই নিয়ে না ভাবলেও চলবে। চিন্তা করো না কেউ জানবে না তুমি বিবাহিত তাই অনেক প্রপোজাল পাবে। আমি ওষুধগুলো আনতে পাঠাচ্ছি।

কথাটা বলেই উনি বেরিয়ে গেলে আমার ভীষণ রাগ ওঠে। বদ লোকটা বলে কি এসব? আমি? আমি প্রপোজাল পাওয়ার জন্য চাই না কেউ জানুক আমাদের বিয়ে সম্পর্কে? নাকি উনি নিজে বারণ করে দিয়েছিলো আমাকে কাওকে আমাদের বিয়ে সম্পর্কে না জানাতে। বেমালুম আমার উপর দোষ চাপিয়ে চলে গেলো? আসুক, একটা কথা বলবো না আমি। হুহ!

আদিত্য: কি হয়েছে? এভাবে রাগে ফুঁসছো কেন? (ঘরে ঢুকে)

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলে আদিত্য এসে আমার সামনে বসেন আর গাল ধরে টেনে নিজের দিকে আমার চোখ ফেরান। আমি ভ্রু কুঁচকে, নাক ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলে উনি হেসে ফেলেন।

আদিত্য: (গাল ছেড়ে দিয়ে) ডক্টর যতই বলুক দুদিনে সেরে যাবে, আমি তোমাকে কোথাও বেরোতে দেবো না। একবারে ফেরার দিন বেরোবে।

ওনার কথা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আমি কেঁদে উঠতেই উনি আমাকে হালকা ধমকের সুরে বললেন,

আদিত্য: একদম কাঁদবে না আমার সামনে। এত ব্যাথা পেয়েও ঘুরতে যাওয়ার শখ ষোলো আনা হুহ!

মৌমিতা: আমি একা একা কেন থাকবো? আমিও যাবো। (বাচ্চাদের মতো করে)

আদিত্য: আগে আমি দেখব তোমার ব্যথা সেরেছে তারপর। নাও এখন রেস্ট নাও, আমি আরেকটু পরে এসে ওষুধ গুলো দিয়ে যাচ্ছি।

আদিত্য আমার আরেক পাশের গাল টেনে দিয়ে বেরিয়ে গেলে আমি আমার গালে হাত দিয়ে বসে থাকি ঠোঁট উল্টে। বেশ কিছুটা সময় পর কোয়েল ঘরে আসে।

কোয়েল: কি রে ব্যাথা করছে নাকি? এরকম মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? (চিন্তিত সুরে)

মৌমিতা: তোকে কে বলেছিলো ওনাকে ডাকতে যেতে? ভালো লাগে না ব্যাঙ! (বিরক্তি নিয়ে)

কোয়েল: আমি ডাকার আগেই আদিত্যদা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলো।

মৌমিতা: তারমানে উনি নিজে থেকে এসেছিলেন?

কোয়েল: হ্যাঁ। কিন্তু হয়েছে টা কি? তোর মন খারাপ কেন?

আমি কোয়েলকে সব বললে কোয়েল ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকে। সেই সময় দরজার টোকা পরতেই কোয়েল দরজা খুলতে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে প্যাকেট থেকে ওষুধ বার করে নিয়ে আমার হাতে প্যাকেটটা দিয়ে দেয়। আমি প্যাকেটটা ধরে কিছু বলবো তার আগেই অনুভব করি প্যাকেটটা ভর্তি, কিছু একটা তো আছে। প্যাকেটের ভিতরে দেখতেই দেখলাম দুটো বড়ো বড়ো চকলেট। সেটা দেখে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল হেসে বললো,

কোয়েল: আদিত্যদা এটা দিয়ে গেলো। বললো, ওষুধ বার করে নিয়ে প্যাকেটটা তোকে দিতে।

মৌমিতা: দুটোই কি..?

কোয়েল: হ্যাঁ রে বাবা দুটোই তোর। আমি একটু আসছি, অঙ্কিত ডেকেছিল আমায়। তুই কিন্তু একদম পাকামী করে নিজে নিজে নামবি না। আজকের রাতটা পুরো রেস্ট নে দেখবি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেছিস। (হেসে)

কোয়েল চলে গেলে আমি দুটো চকলেট বার করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেলি।

মৌমিতা: বসেই তো আছি, একটা বরং খাই হিহিহি।

৬৮.
আদিত্য রাতে ব্যালকনিতে পায়চারি করছে। আজকে আর কেউ ঘুরতে বের হয়নি। সবাই কালকে সকাল সকাল বেরোবে আর ঠান্ডাটাও বেশ ভালো পরেছে তাই ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আদিত্যের ঘুম আসছে না কিছুতেই। রাজ ঘরে কম্বলের ভিতর থেকে মুখ বার করে জোরে হাঁক দিয়ে বললো,

রাজ: ঘুমাবি না নাকি?

আদিত্য রাজের হাঁক শুনে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে আসে। আদিত্যের মুখভঙ্গি দেখে রাজ বুঝলো আদিত্য কিছু নিয়ে চিন্তিত। তাই জিজ্ঞেস করলো,

রাজ: এই ঠান্ডার মধ্যে বাইরে কি করছিলিস, ঠান্ডা লেগে যাবে তো? এমনিতেই বৌদির এই অবস্থা তাঁর মধ্যে তুই শরীর খারাপ করলে হয়ে গেলো ট্যুরের দফারফা।

আদিত্য: ডক্টর বলেছিলো রাতে ব্যথা বাড়বে। মৌমিতা ব্যথার ওষুধটা খেয়েছে তো? কথা হয়নি আমার। এখন হয়তো ঘুমোচ্ছে তাই আর ফোন করতে চাইছি না। কিন্তু যদি ব্যথার জন্য ঘুম না আসে? তখন? (অতিরিক্তিচিন্তিত সুরে)

আদিত্যকে এরকম ভাবে দেখে রাজ একপ্রকার টাস্কি খেলো। মাথাটা একটু ঝাঁকিয়ে নিয়ে বললো,

রাজ: তুই ওদের ঘরে গিয়ে একবার দেখে আয়। এখন সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।

আদিত্য: ওরা ওদের ঘরের দরজা খোলা রেখেছে নাকি? আমি এখন গিয়ে ডাকলে হয়তো ওকে নামতে হবে দরজা খুলতে। কোয়েল তো ঘুমিয়ে পরেছে। (মন খারাপ করে)

রাজ: আমি কোয়েলকে বলেছি শোয়ার আগে দরজাটা ভেজিয়ে রাখতে। ও কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে, তুই যা।

আদিত্য: তো তুই এটা আরো আগে বলবি না? ননসেন্স একটা। শুধু শুধু আমি এতক্ষণ চিন্তা করছিলাম, ডিসগাস্টিং!

আদিত্য হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে আর রাজ আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে,

রাজ: যাহ বাবা! তুই আমাকে না বললে বলতাম কীভাবে?

আদিত্য কোনো পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেলে রাজ কিছুটা বিরক্ত হয়ে নিজে নিজে বলে,

রাজ: এই ছেলেটা বউয়ের জন্য পুরোই পাগল হয়ে গেছে। আগে যেমন ছিলো ভালোবাসায় অবিশ্বাসী, এখন হয়ে গেছে ভালোবাসায় পাগল। ধুর! আমি ঘুমাই, আমারটা তো আমাকে পাত্তাই দেয় না।

কথাটা বলেই রাজ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে।🤣 ওদিকে আদিত্য পা টিপে টিপে মৌমিতাদের ঘরে আস্তে করে ঢুকে দরজাটা শব্দ না করে ভেজিয়ে দেয়। তারপর কোয়েলকে ঘুমাতে দেখে আস্তে আস্তে মৌমিতার পাশে গিয়ে বসে। মৌমিতা একটু একটু কোঁকাচ্ছে ব্যাথায় সেটা দেখে আদিত্যর চোখ ছলছল করে ওঠে। আস্তে করে হাঁটু গেড়ে বসে মৌমিতার ক্ষত স্থানের চারিপাশে আঙুল ঘোরাতে থাকে। এমন কিছুক্ষণ করাতেই মৌমিতা শান্ত হয়ে যায় আর আদিত্য সেটা দেখে মৌমিতার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়। এরপর আদিত্য উঠে আসতে নিলেও উঠে আসতে পারে না। হাতে টান পরায় পিছনে তাকিয়ে দেখে মৌমিতা আদিত্যের একটা আঙুল ধরে রেখেছে। আদিত্য সেটা ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা না করেই আবার নিজের জায়গায় বসে পরে। বসে বসে মৌমিতাকে দেখতে দেখতেই আদিত্য বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে,

কোয়েলের ঘুমটা হঠাৎ করেই ভেঙে গেলে কোয়েল চারিদিকটা দেখে নিয়ে সোজা হয়ে শোয়। কোয়েলের চোখ ডানদিকে যেতেই কোয়েল তৎক্ষণাৎ উঠে বসে।

কোয়েল: রাজ বলেছিলো আদিত্যদা আসতে পারে কিন্তু আদিত্যদা এখনও যায়নি? রাতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল নাকি? আদিত্যদাকে কি আমি ডেকে দেবো? তাই করি, মৌ তো ঘুমাচ্ছে।

কোয়েল আস্তে করে বেড থেকে নেমে আদিত্যের পাশে বসে খুব ধীরে ধীরে আদিত্যকে ডাকতে শুরু করে। একটু ডাকতেই আদিত্যের ঘুম ভেঙে যায়। সাথে সাথে কোয়েল বলে,

কোয়েল: আদিত্যদা আমি! তুমি তাড়াতাড়ি ঘরে চলে যাও সবাই উঠে পরবে নাহলে, সকাল হয়ে গেছে।

আদিত্য: হ..হম।

কোয়েল: তুমি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো, আমি মৌয়ের খেয়াল রাখবো ঘুমাবো না আর।

আদিত্য: আচ্ছা। তুই ওকে জানাবি না যে আমি এসেছিলাম।

আদিত্য উঠে দাঁড়ায়, একভাবে বসে থাকায় অনেকক্ষন একটু কষ্ট হয় কিন্তু ম্যানেজ করে ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। গিয়ে রাজের পাশে শুয়ে পরে আর নিমিষেই ঘুমিয়ে যায় আবার। গতকালের ধকলের পর সারারাত ঠিকভাবে না ঘুমালে যা হয় আর কি।

সকাল ১০টা,

কোয়েল আমাকে ধরতে নিলে আমি ওকে আটকে বলি,

মৌমিতা: আরে আমি পারবো। ব্যাথাটা অনেক কম, নেই বললেই চলে। একটু চেষ্টা তো করতে দে আগে?

কোয়েল: ঘটনাটা গতকাল ঘটেছে, আজকের দিনটা রেস্ট নিয়ে আগামীকাল থেকে চেষ্টা করিস।

মৌমিতা: আচ্ছা তুই পাশে দাঁড়া আমি নিজেই দাঁড়াচ্ছি পরে গেলে ধরবি। এমনও কিছু ব্যাথা পাইনি যে নিজে দাঁড়াতে পারবো না। হুহ!

আমি সাহস নিয়ে আস্তে আস্তে দাঁড়ালাম, কষ্ট একটু হলো কিন্তু দাঁড়াতে পেরেছি। হাঁটুতে কেটে যাওয়ার ফলেই দাঁড়াতে, বসতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু ওষুধগুলোর জোর আছে বটে, একদিনেই অনেকটা ব্যাথা সারিয়ে দিয়েছে।

মৌমিতা: দেখলি দাঁড়াতে পারলাম? চল এবার আমার হাতটা একটু ধর তাহলেই হবে।

কোয়েল আমার হাতটা ধরতেই আমি বেশ ভালোই হাঁটতে পারলাম। নীচে নামার সময় সিঁড়ি বাইতে একটু কষ্ট হলেও হাঁটতে কোনো অসুবিধা হয়নি। নীচে আসতেই স্যার ম্যাডাম এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছি আর কেন আসতে গেলাম। আমি সেসবের উত্তর দিয়ে এদিক ওদিক ওনাকে খুঁজছি, কোথায় উনি? বেশ কিছুক্ষণ পর আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম, সিঁড়ির দিকে তাকাতে। জ্যাকেটের স্লীভস কুনুই অবধি টানতে টানতে নামছেন। পিছন পিছন রাজদাও আসছেন পকেটে হাত গুঁজে। আমি ভালো ভাবেই জানি এসে আমাকে দেখলেই রেগে যাবেন তাই বলে কি আমি ফিট হবার চেষ্টা করবো না নাকি? হুহ! উনি বললেই হলো আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন না? আমি ঠিক যাবো, আজকে না যাই আগামীকাল থেকে সকল, দুপুর, বিকেল, রাত প্রত্যেকবেলায় বেড়াবো আর উসুল করবো দুদিনের না ঘোরা।

আদিত্য: ফিট হয়ে গেছো বলো ঘুরতে যাওয়ার জন্যে?

উনি জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে খোঁচা মেরে কথাটা বললে আমি ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নি।

আদিত্য: চকলেটগুলো খাওয়া হয়েছে?

মৌমিতা: উম, একটা বাকি আছে।

আদিত্য: বাহবা! আমি তো ভাবলাম চকলেট শেষ হয়ে প্যাকেটগুলোও খেয়ে হজম করে ফেলেছো। (মুখ টিপে হেসে)

মৌমিতা: বদ ব্যাটা! মজা নিচ্ছে।😒

আদিত্য জোরে হেসে ফেললে আমিও হালকা হাসি। সেদিন সবাই ঘুরতে গেলে আমি যাই না। আমার জন্য কোয়েলও যাবে না বললে আদিত্য বলেন উনি আমার সাথে থাকবেন আর কোয়েলকে জোর করে রাজদার সাথে পাঠিয়ে দেন, রাজদাকে সব দায়িত্ব দিয়ে। ওনার সাথে সেই সময়টুকু গল্প, খুনসুটি আর হাসাহাসি করতে করতেই কেটে যায়।

পরেরদিন,

ডক্টরের কথামতো দুদিনেই আমি ফিট। হাঁটা চলা করতে আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তাই ঘুরতে যাবো বলে সকাল থেকেই আনন্দ করছি। এই দেখে আদিত্য কয়েকবার এসে আমাকে রাগিয়ে গেছে এই বলে যে, আমাকে নিয়ে যাবে না। হুহ! আমি তো যাবোই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা সকলে টাইগার হিল দেখার উদ্দেশ্য রওনা দেই। টাইগার হিলে উঠবো এমন সময় আদিত্য আমাকে বলেন,

আদিত্য: না উঠলে হয় না? রাতে যদি ব্যাথা বাড়ে?

মৌমিতা: কিচ্ছু হবে না। আপনি এতো চিন্তা করবেন না। চলুন।

আমি আদিত্যের কথা আর না শুনেই এগিয়ে আসি। এই অবধি প্রতিটা মূহূর্তে উনি আমাকে চোখে চোখে রেখেছেন, আমার কেয়ার করেছেন যে সবাই দেখেছে। আমি আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারিনি। জানি না উনি কেন এমন করছেন। উনি কি সকলকে জানিয়ে দিতে চান আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা? কথাটা মনে আসতেই আমি হাসলাম। হঠাৎই চোখ গেলো আমার জিয়ার দিকে ও খাদের অনেকটা ধারে রয়েছে। আমাদের বাকি বন্ধুরা সব এগিয়ে গেছে। ও কি করতে চাইছে? কোনো উল্টো পাল্টা কিছু না তো?

কথাটা মাথায় আসতেই আমি জিয়া বলে চিৎকার করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। ও কোনো কর্ণপাত করলো না আমার কথার। ও খাদের দিকে আরো এগিয়ে গেলে আমি দ্রুত ওর কাছে যাই আর ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দি ফলে ও হুমড়ি খেয়ে পরে।। সাথে সাথে পিছন থেকে আমাকে কেউ সজোরে ধাক্কা মারে আর আমিও হুমড়ি খেয়ে পরে যায় সামনের দিকে। পিছনে তাকাতেই দেখি, আদিত্য নীচে পরে যায় মাটি ধসে।

মৌমিতা: আদিত্যওও!!

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

হঠাৎই চোখ গেলো আমার জিয়ার দিকে ও খাদের অনেকটা ধারে রয়েছে। আমাদের বাকি বন্ধুরা সব এগিয়ে গেছে। ও কি করতে চাইছে? কোনো উল্টো পাল্টা কিছু না তো?

কথাটা মাথায় আসতেই আমি জিয়া বলে চিৎকার করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। ও কোনো কর্ণপাত করলো না আমার কথার। ও খাদের দিকে আরো এগিয়ে গেলে আমি দ্রুত ওর কাছে যাই আর ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দি ফলে ও হুমড়ি খেয়ে পরে।। সাথে সাথে পিছন থেকে আমাকে কেউ সজোরে ধাক্কা মারে আর আমিও হুমড়ি খেয়ে পরে যায় সামনের দিকে। পিছনে তাকাতেই দেখি, আদিত্য নীচে পরে যায় মাটি ধসে।

মৌমিতা: আদিত্যওও!!

উপস্থিত সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো এক মুহূর্তের জন্য। হঠাৎ করেই কোয়েল এসে মৌমিতার পাশে এসে বসলে মৌমিতা হতভম্ব হয়ে কোয়েলের দিকে তাকায় একবার, আরেকবার পাহাড়ের খাদের দিকে তাকায়। রাজ দৌঁড়ে গিয়ে একটু ঝুঁকে আদিত্যের নাম ধরে চিৎকার করে।

রাজ: আদি, তুই ঠিক আছিস?

আদিত্য: কতক্ষন থাকবো বুঝতে পারছি না।

রাজ সাথে সাথে নিজের জ্যাকেটটা খুলে ফেলে আর শুয়ে পরে হাত বাড়িয়ে অনেকটা ঝুঁকে। কারণ আদিত্য বেশি নীচে যাওয়ার আগেই পাহাড়ের খাঁজ ধরে নিয়েছে এবং কিছুটা উঠে এসেছে। রাজকে অতটা নীচের দিকে ঝুঁকে যেতে দেখলে অঙ্কিত পিছন থেকে বলে,

অঙ্কিত: রাজ, অতটা ঝুঁকিস না। বিপদ হতে পারে।

ততক্ষণে রাজ আদিত্যের হাত ধরে ফেলেছে। রাজ বেশি জোর বা চাপ জায়গাটার উপর দেয় না কারণ এই জায়গাটাও ধসে যেতেই পারে। আদিত্য প্রায় অনেকটা উঠে এলে অঙ্কিত অপরদিকে গিয়ে হাত ধরে নেয় যাতে রাজের উপর চাপ না পরে। এরপর অঙ্কিত আর রাজ দুজন মিলেই আদিত্যকে টেনে উপরে তুলে নিয়ে আসে। এদিকে কোয়েল মৌমিতাকে শক্ত করে ধরে থাকলেও মৌমিতার চোখ আদিত্যের দিকে। আদিত্য উঠতেই রাজ আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে।

রাজ: ঠিক আছিস তো?

আদিত্য: হ্যাঁ, ঠিক আছি আমি।

রাজ ছাড়তেই হুট করে জিয়া এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে।

জিয়া: তুমি ঠিক আছো আদি?

আদিত্য: ঠিক আর থাকতে দিচ্ছো কই?

জিয়া: (আদিত্যকে ছেড়ে) ম..মানে?

আদিত্য: এই যে, আমি সদ্য উপরে এলাম আর তুমি আমাকে আবার নীচে পাঠিয়ে ডাইরেক্ট উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছিলে, এতো জোরে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে।

জিয়া মাথা নীচু করে পিছিয়ে গেলে আদিত্য, অঙ্কিত আর রাজ চলে আসে। আদিত্য আসতেই স্যার ম্যাডামরা ওকে জিজ্ঞেস করে ও ঠিক আছে কি না। আদিত্য সবাইকে উত্তর দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু ওর চোখ মৌমিতার দিকে কারণ মৌমিতা এখনও স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

স্যার: কি যে হচ্ছে এসব। একবার মৌমিতার সাথে তো একবার তোমার সাথে। (চিন্তিত সুরে)

আদিত্য: স্যার যা হওয়ার হয়ে গেছে, চিন্তা করবেন না। আপনারা এগোন আমি আসছি।

স্যার ম্যাডামরা সব স্টুডেন্টদের নিয়ে এগিয়ে গেলে আদিত্য মৌমিতার দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। সে কিছু বলবে তাঁর আগেই মৌমিতা তাঁর বুকে ঝাঁপিয়ে পরে তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদিত্য নিজেও হতবাক ঘটনাক্রমে। কোয়েল মিটিমিটি হাসতে থাকলে ওর চোখ রাজের দিকে যায়। রাজ ইশারায় কোয়েলকে ওখান থেকে সরে আসতে বললে কোয়েল চুপচাপ সরে আসে।

কোয়েল: ওই দেখো, জিয়া কীভাবে দেখছে দেখো ওদেরকে। কুনজর দিচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

রাজ: দেওয়াচ্ছি।

বলেই রাজ জিয়ার কাছে গিয়ে ওকে বলে,

রাজ: রাস্তা এদিকে নয় ওদিকে। যাওয়া যাক?

রাজের কথার উত্তর না দিয়ে জিয়া মাথা নীচু করে সামনে এগিয়ে যায়। কোয়েল এসে রাজের পাশে দাঁড়ালে, দুজনেই একবার আদিত্য, মৌমিতার দিকে তাকায়। এখনও একভাবেই রয়েছে ওরা, তাই সেটা দেখে হেসে এগিয়ে যায় সামনে। এগোতে এগোতে রাজ কোয়েলকে জিজ্ঞেস করে,

রাজ: তুমি আমাকে এভাবে কবে জড়িয়ে ধরবে?

কোয়েল: (ভ্রু কুঁচকে) কি জন্য তোমাকে জড়িয়ে ধরতে যাবো?

রাজ: জড়িয়ে ধরার কারণ লাগে নাকি? ভালোবেসে জড়িয়ে ধরবে। (হেসে)

কোয়েল: শখ দেখলে বাঁচি না। হুর! ভাগো এখান থেকে। (ভেংচি কেটে, বিরক্তি নিয়ে)

রাজ: আচ্ছা তাহলে আমি আদির মতো পাহাড় থেকে পরে গেলে জড়িয়ে ধরবে?

রাজের কথা শুনে কোয়েল দাঁড়িয়ে যায়। কারণ কোয়েল জানে রাজের দ্বারা সব সম্ভব। কিছুক্ষন চুপ থেকে ঠোঁট চেপে হেসে বললো,

কোয়েল: তোমাকে কষ্ট করতে হবে না, আমিই ধাক্কা মেরে দিচ্ছি আসো?

রাজ: না থাক, মরে গেলে যাও ভালোবাসা পাওয়ার আশা আছে সেটাও চলে যাবে। কপালে ভালোবাসার বড্ড অভাব আমার। হে ঠাকুর একটু ভালোবাসা লিখলে কি খুব ক্ষতি হতো? (উপরে দিকে তাকিয়ে দু হাত তুলে) চলো।

রাজ এগিয়ে গেলে কোয়েল মাথা নীচু করে নেয়। মজা করে বললেও রাজ যে অন্তরের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট থেকেই কথাটা বলেছে তা কোয়েল বুঝতে পেরেছে। সত্যি ছেলেটা ভালোবাসার কাঙাল। কি হয় তাঁকে একটু ভালোবাসলে? হয়তো একটু ভালোবাসলেই সে খুশি হয়ে যাবে কারণ ভালোবাসার স্বাদ যে কোনোদিন পায়নি তাঁর কাছে একটু ভালোবাসাই অনেক। ভাবছে কোয়েল।

রাজ: কি হলো, চলো? (পিছন থেকে)

কোয়েল: হম, চলো।

৬৯.
আদিত্য: মৌ, আমি ঠিক আছি। রিল্যাক্স! দেখো আমার দিকে?

আমার চোখের সামনে শুধু আদিত্যের পরে যাওয়ার দৃশ্যটাই ভেসে উঠছে। মনের ভিতরে ভয়টা জানো জেঁকে বসেছে, কীভাবে কাটাবো এটা বুঝতে পারছি না।

আদিত্য: (মৌমিতাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে) আমি একদম ঠিক আছি, দেখো আমাকে। এতটা ভয় পাওয়ার কিচ্ছু হয়নি।

মৌমিতা: আচ্ছা? আপনি যদি সত্যি খাদে পরে যেতেন তাহলে? (ছলছল চোখে, কাঁপা কণ্ঠে)

আদিত্য: পরিনি তো? তাহলে কেন ভয় পাচ্ছো এত?

মৌমিতা: কে বলেছিল আপনাকে ওখানে আসতে? না আসলেই তো পারতেন।

আদিত্য: আচ্ছা? কে বলেছিলো তোমাকে জিয়াকে বাঁচাতে যেতে? আমি না আসলে তুমি পরে যেতে। আমি তাও কিছু একটা ধরে নিয়েছি, তুমি হলে পারতে?

মৌমিতা: জিয়া পরে যেতো আর আমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম নাকি?

আদিত্য: জিয়া পরতো না। ও তোমাকে ফেলে দেওয়ার জন্যেই কাজটা করেছে। জায়গাটায় জল ফেলে দিয়ে বেশি করে চাপ প্রয়োগ করে নরম করে রেখেছিলো জায়গাটা যাতে তুমি দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেই পরে যাও। আমি পিছন থেকে সবটা ফলো করেছি।

মৌমিতা: তাঁর মানে জিয়া ইচ্ছা করে…?

আদিত্য: তা নয় তো কি? চলো এখন। সাবধানে থাকতে হবে আমাদের।

মৌমিতা: দাঁড়ান। আপনার কোথাও লাগ…আপনার হাত থেকে তো রক্ত গড়াচ্ছে? (অবাক হয়ে)

আদিত্য: কোথায়…ওহ, আমি তো খেয়ালই করিনি।

আমার কথা শুনে আদিত্য নিজেও অবাক হয়ে নিজের ডান হাতের দিকে তাকায়। হয়তো কুনুইয়ের দিকটা কেটে গিয়ে রক্ত আঙুল বেয়ে পরছে। সেটা দেখে আমি ওনাকে বললাম,

মৌমিতা: জ্যাকেটটা খুলুন, জায়গাটা দেখি।

আদিত্য: আরে ঠিক আছে, গেস্ট হাউসে গিয়ে দেখে নেবো।

মৌমিতা: একদম বেশি কথা বলবেন না, চুপচাপ দেখান।

আদিত্যকে জোর করে জ্যাকেটটা খুলিয়ে দেখি হাতের কুনুইয়ের নীচে আমার মতই কিছুটা জায়গা জুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক রক্ত পরছে দেখে আমি আমার কাছে থাকা ছোট্ট স্কার্ফ টা নিয়ে প্রথমে রক্তটা আস্তে আস্তে একটু মুছিয়ে দিয়ে সাথে সাথে ওটা বেঁধে দিলাম ওনার ক্ষতস্থানে।

মৌমিতা: আর কোথায় লেগেছে?

আদিত্য: আর কটা স্কার্ফ এনেছো তুমি? (হেসে)

মৌমিতা: উফ, আপনি এখনও মজা করছেন?

আদিত্য: (হেসে) চলো, আর কোথাও লাগেনি আমার।

মৌমিতা: সত্যি তো?

এইবার আদিত্য বিরক্তি নিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে সামনে হাঁটা দিলো। জিয়া যে এরকম সাংঘাতিক হয়ে উঠবে ভাবিনি আমি। মানুষের ক্ষতি করা ঠিক আছে কিন্তু একবারে মেরে ফেলা? না জানি আর কি কি ভেবে রেখেছে ও।

গেস্ট হাউসে,

টাইগার হিল ভিসিট করে গেস্ট হাউসে ফিরে আসার পর সবাই মিলে ঠিক করলো রাতে বনফায়ার হবে। আমি সেসবে মাথা না ঘামিয়ে আগে আদিত্যকে ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললাম। আমিও ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম আর ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আদিত্যের রুমে চলে এলাম। দেখলাম উনি বসে বসে বাঁ হাত দিয়ে ফোন ঘাটছেন। আমি ওনার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বললাম,

মৌমিতা: ফোনটা রাখুন।

আদিত্য: (নিশ্চুপ)

মৌমিতা: কি হলো? ফোনটা রাখুন?

আদিত্য এইবারও আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না দেখে মাথা গরম হলো। আমি ওনার সামনে বসতেই উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি রাগী দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালে উনি আমার দিকে তাকিয়েই কান থেকে কিছু একটা খুললেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম।

মৌমিতা: আপনার কানে এয়ারপডস ছিলো?

আদিত্য: (হেসে) হ্যাঁ। তাই জন্যেই টের পাইনি তুমি কখন এসেছো। আসলে এইটাই একমাত্র আমার বাঁচার উপায় যখন আমি জিয়ার সাথে থাকি।

মৌমিতা: মানে? (আশ্চর্য হয়ে)

আদিত্য: মানে, ওর ওই সারাক্ষণ আজেবাজে বকা দ্যান একটা টাইম অলওয়েজ তোমাকে ইনসাল্ট করা ওগুলো না শোনার জন্য এটা। ও বুঝতেও পারতো না কখন আমি কানে এয়ারপডস লাগিয়ে নিতাম ওর কথা বলা শুরু করার পর। ও তো নিজের মনে নিজে বকে যেতো। ওর বাবার কারণে তোমাকে কিছু বললে আমি না কিছু বলতে পারতাম আর না’ই কিছু করতে পারতাম তাই না শোনাটাই বেটার ছিল। কারণ না আমি শুনবো আর না আমার রাগ হবে। তাছাড়া এটার কালার টাও এমন যে বোঝা যায় না। সিম্পল!

মৌমিতা: (মনে মনে– সত্যি তো, এটা তো কোনোদিন ভালোভাবে লক্ষ্য করিনি আমি। তারমানে সেদিন যখন আদিত্যকে পাশে নিয়ে জিয়া আমাকে অপমান করেছিলো, সেদিন আদিত্য কিছু শোনেনইনি? (পর্ব ১৯) হে ভগবান! আমি এতো কানা কবে হলাম? আমার সাথেসাথে ওই কোয়েল আর অঙ্কিতটাও কানামদন। ধুর, ধুর! খালি খালি ভুল বুঝেছিলাম ওনাকে।)

আদিত্য: কোথায় হারিয়ে গেলে? (চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে)

মৌমিতা: না না কিছু না। দিন হাত দিন ব্যান্ডেজ করে দেই।

উনি আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলে আমি একটু শিউরে উঠলাম হাতটা দেখে। হাতের চামড়াটা পুরোই উঠে গিয়ে মাংস দেখা যায় যায়। ওনার হাতটা ব্যান্ডেজ করতে করতে বললাম,

মৌমিতা: কি দরকার ছিলো বলুন তো এমন করার? আমাকে ডাকলেই পারতেন। কতটা কেটে গেছে দেখুন তো, কষ্ট হচ্ছে নিশ্চই? (অসহায় ভাবে)

আদিত্য: তোমাকে বললে জানো তুমি দাঁড়িয়ে যেতে? তোমার মত মহান মানুষ আর আছে নাকি পৃথিবীতে?

মৌমিতা: হুহ!

আদিত্য: একদিকে ভালোই হয়েছে এটা হয়ে। (মুচকি হেসে)

মৌমিতা: কি? (অবাক হয়ে)

আদিত্য: হ্যাঁ, কিছুদিন আগে তুমি কষ্ট পাচ্ছিলে একা একা এখন আমিও তোমার দলে যোগ দিলাম। তোমাকে একা দেখতে ভালো লাগে নাকি আমার? তাই আর কি, কষ্টটা ভাগাভাগি করার চেষ্টা। (হেসে)

আমি ওনার কথা শুনে চোখ সরিয়ে নিলাম। কি আজব কথাবার্তা! ধুর, পুরোই মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই ছেলেটার যা বুঝছি। তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ করে বেরিয়ে এলাম আমি। বেরিয়ে আসার পর খুশিতে একটু নেচে উঠলাম। আমি ভাবিইনি এমন কোনোদিন আসবে যেদিন উনি আমাকে নিয়ে এতটা ভাববেন। হয়তো সময় এসে গেছে ওনাকে মেনে নেওয়ার।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৭০.
রাতে,
আমি আর কোয়েল ঘরে ছিলাম সেই সময় অঙ্কিত এসে নীচে বাগানে যেতে বললো। আমরা কিছুক্ষণ আগেই সবার সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে চলে এসেছিলাম।

কোয়েল: আবার কেন? সবে তো বনফায়ার শেষ হলো মনে হয়।

অঙ্কিত: শেষ হওয়ার আগেই তো তোরা চলে এলো। আর এসেছিস তিরিশ মিনিট হয়ে গেছে, চল একটু ফিনিশিং টাচ দেওয়া বাকি এখনও।

অঙ্কিত চলে গেলে আমি কোয়েলকে বললাম,

মৌমিতা: ফিনিশিং টাচ বলতে কি বোঝাতে চাইলো?

কোয়েল: সেটা তো বাগানে গেলেই বোঝা যাবে। চল দেখি।

আমি আর কোয়েল ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে চলে এলাম। কিন্তু বাগানের দিকে যতো এগোচ্ছি সব কেমন জানো শান্ত লাগছে। বাগানে আস্তেই দেখলাম আগুনটা এখনও জ্বলছে কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।

মৌমিতা: এই কোয়েল এখানে তো কেউই…কোয়েল!

আমি পাশ ফিরে কোয়েলকে ডাকতে গেলাম কিন্তু কোয়েল নেই। একি? কোয়েল কোথায় গেল? এক্ষুনি তো এখানে ছিলো তাহলে…

__কাওকে খুঁজছো?

আমি আদিত্যের গলার আওয়াজ পেয়ে পিছন ফিরলাম, দেখলাম উনি দু-হাত পিছনে করে দাঁড়িয়ে আছেন।

মৌমিতা: অঙ্কিত বললো যে বাগানে আসতে। কিন্তু সবাই কোথায়? আর কি সব ফিনিশিং টাচের কথা বলছিলো ও। কোনো স্পেশাল কিছু আছে কি?

আদিত্য: (দুষ্টু হেসে) আছে তো। দেখতে চাও তুমি?

মৌমিতা: (কিছু না বুঝেই) হ্যাঁ।

আদিত্য: ওই তো পিছনে দেখো।

আদিত্যের কথা আর ইশারায় আমি পিছনে তাকালাম কিন্তু কই? কিছুই তো নেই। তাই আবার ওনার দিকে ফিরলে আমি এক কদম পিছিয়ে যাই ওনাকে দেখে। উনি হাঁটু গেড়ে আমার দিকে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে আমার সামনে বসে আছে। আমি ওনার চোখে চোখ রাখতেই উনি বলতে শুরু করলেন,

আদিত্য: আমি জানি আমার থেকে এসব কোনো কিছুই এক্সপেক্টেড না ইভেন আমি নিজেও কোনোদিন ভাবিনি আমার সাথে এমন কিছু হবে। ভাবিনি, ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হবো। ভাবিনি, কোনো মেয়েকে এতোটা ভালোবাসবো যে, যে না থাকলে আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারবো না। জীবনে প্রথম আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি আর শেষ পর্যন্ত তোমাকেই ভালোবাসবো। আই লাভ ইউ মৌ! আই নো আমি ভুল করেছি তাই একটা সুযোগ চাইছি সবটা ঠিক করার। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।

আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলাম আশপাশ থেকে সবাই “ইয়েস” বলতে বলছে। অঙ্কিত, কোয়েল আর রাজদাও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে সবার সাথে। আদিত্যও ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আমার দিকে তাকালেন।

আদিত্য: আমি তোমাকে….

আমি ওনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।সিধে ঘরে চলে এসেছি, পিছনে তাকাবার প্রয়োজনও মনে করিনি।

আদিত্য: মৌ! মৌ আমার কথাটা তো শুনে যাও! (জোরে)

আদিত্য উঠে দাঁড়ায় অসহায় মুখ করে। মাথা নীচু করে নিলে রাজ এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। বেশ অপমানজনক হলেও আদিত্য সেই নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। সে ভাবছে মৌমিতা এইভাবে কেন রিয়াক্ট করলো? এখন কি ওর কাছে যাওয়াটা ঠিক? নাকি মৌমিতা চায়ই না সুযোগ দিতে তাই চলে গেলো? মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে আদিত্যের। এই সময় কোয়েলপাশ দিয়ে গেয়ে ওঠে,

কোয়েল: আভি তো ইয়ে পেহলি মনজিল হেইন, তুম তো আভি সে শারমা গায়ে। উঁহু, উঁহু! নাহ মানে গানটা গাইতে খুব ইচ্ছা হলো আর কি। যাই হোক, আমিও বরং যাই। বায় দ্য ওয়ে, সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে সারপ্রাইজ পেতে কেমন লাগলো? (হেসে)

রাজ: লাইক সিরিয়াসলি? তোর হাসি পাচ্ছে? এখানে একজন হার্ট হলো আর তোর হাসি পাচ্ছে? (রেগে)

কোয়েল: আদিত্যদা যদি ভুল স্টাইলে প্রপোজ করে তাহলে হার্ট তো হবেই তাই না?

আদিত্য: আমাকে তো ও আর কিছু বলতেই দিলো না তো কি করবো? (অসহায় ভাবে)

কোয়েল: কি আবার করবে? পরে বুঝিয়ে বলে দেবে। যাই দেখি, কই গেলো। মৌ রে, কই গেলি রে?

কোয়েল মৌমিতা যেদিকে গেছে সেদিকে চলে গেলে আদিত্য করুনভাবে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।

আদিত্য: আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো আর যদি না ভালোবেসে থাকো তাহলে বলবো, “একদিন তুমিও ভালোবাসবে”।

আদিত্য চলে যায় সেই জায়গা ছেড়ে। রাজ আর অঙ্কিত ও চলে যায় আদিত্যের পিছন পিছন। এদিকে কোয়েল এসে দেখে মৌমিতা বেডের উপর চুপচাপ বসে আছে অন্যদিকে তাকিয়ে। কোয়েল গিয়ে মৌমিতার পাশে বসতেই মৌমিতা বলে ওঠে,

মৌমিতা: তুই সবটা জানতিস তাই না?

কোয়েল: একদমই না। বাগানে পা রাখতেই রাজ পিছন থেকে আমার মুখ চেপে আমাকে ওদের দিকে টেনে নিয়ে যায়। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে বলতে হবে না সব দেখতেই পাবো চোখের সামনে।

মৌমিতা: উনি এটা ঠিক করলেন না।

কোয়েল: তুই কি ঠিক করলি?

মৌমিতা: (অবাক হয়ে) তুই বলছিস কথাটা? সিরিয়াসলি কোয়েল? আমি ওনার স্ত্রী হই, প্রেমিকা না। এতে এটাই প্রমান হলো যে উনি এখনও আমাদের বিয়েটা মেনে নিতে চান না।

কোয়েল: তুই না বড্ড হড়বড় করিস জানিস তো? তুই আদিত্যদার পুরো কথাটা শুনেছিস আদৌ? ও তো বলতেই যাচ্ছিলো ও তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে। তুই “আমি তোমাকে…” এতটুকু শুনেই লাফাতে লাফাতে চলে এলি।

মৌমিতা: অ্যাঁ? উনি এমন বলতেন? (অসহায় ভাবে)

কোয়েল: আজ্ঞে। এটাই তো বললো আমাকে। গাধী একটা! কতো বড়ো অপমান হলো বল তো আদিত্যদার। তাও আদিত্যদা সেসব না ভেবে তুই রিপ্লাই না করে ওরোম ভাবে চলে এলি দেখে মন খারাপ করে আছে।

মৌমিতা: উনি কোথায়?

কোয়েল: জানি না। চল রাতের খাবার খেয়ে নিবি, ওখানেই পেয়ে যাবো আশা করছি।

আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পারার পর খুব খারাপ লাগছে। হুট করে এভাবে পুরো কথা না শুনে চলে আশাটা ঠিক হলো না। কোয়েলের কথা মতো নীচে চলে গেলাম খেতে কিন্তু আদিত্যকে কোথাও দেখলাম না। কোথায় উনি? কোনোরকম একটু খেয়ে নিয়ে উঠে পড়লাম।

কোয়েল: মনে হয় বাগানের ওদিকেই আছে। মন খারাপ করে খেতেই এলো না বেচারা। বায় দ্য ওয়ে, তুই দেখা হলে আদিত্যদা কে কি বলবি? মানে হ্যাঁ নাকি না? (মুচকি হেসে)

মৌমিতা: আব, ক..কি আবার বলবো?

কোয়েল: ইশ, ঢং করছে দেখো। হ্যাঁ বলবি তো? বল, বল।

আমি শুধু লাজুক হেসে মাথা নাড়লাম আর তাতেই কোয়েল এক লাফ দিলো। আমি হেসে ওখান থেকে বাগানের দিকে চলে এলাম। একটু এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম কিন্তু কেউ নেই। হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলে কেউ হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে পিছন থেকে হ্যাঁচকা টান মারলে আমি ব্যক্তিটির বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। মাথাটা তুলতেই দেখলাম, আদিত্য।

মৌমিতা: আপনি? এভাবে কেউ টানে নাকি? ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি।

আদিত্য: আমি ছাড়া তোমাকে ছোঁয়ার অন্যকাওর সাহস আছে বলে আমার মনে হয় না।

মৌমিতা: আ..আপনি নেশা করেছেন?

আদিত্য কথা বলতেই আমি অ্যালকোহলের সুবাস পেলাম ওনার মুখ থেকে। সাথে সাথেই আমি মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলে উনি আমাকে আরো শক্ত করে ধরে বললেন,

আদিত্য: মৌ প্লিজ! আর আমাকে দূরে সরিয়ে রেখো না। আমি আর পারছি না তোমার থেকে দূরে থাকতে। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।

মৌমিতা: (নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে) আদিত্য প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। এখন আপনি হুঁশে নেই।

আদিত্য: আমি হুঁশেই আছি লাভ। প্লিজ একটাবার আমার কথাটা শোনো।

আদিত্য আমার মুখ নিজেরদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে, ওনার কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়ে বললেন,

আদিত্য: আমি জানি আমি ভুল করেছি বাট সেই একটা রাতের জন্য তুমি আর কতদিন আমাকে শাস্তি দেবে বলো? জিয়ার ব্যাপারটাও তো তুমি সব জানো এখন। সত্যি বলছি আমি, তুমি ছাড়া আমার লাইফে আগে কেউ আসেনি আর না পরে আসবে। আমি তোমার সাথেই আমার হোল লাইফ স্পেন্ড করতে চাই। একটা চান্স দাও, প্লিজ…

আদিত্য হঠাৎ করেই আমার মুখের দিকে এগিয়ে আসলে আমি বুঝতে পারি উনি কি চাইছেন। সাথে সাথে চোখ বুজে নিলেই কেন জানো আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। মনে পরে যায় ওনার কথাগুলো যখন উনি অস্বীকার করেছিলেন। চোখ খুলে ফেলি আমি! আর নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেই আদিত্যকে। ওনার বুকে বেশ জোরেই ধাক্কাটা মারি ফলে উনি অনেকটা পিছিয়ে যান।

মৌমিতা: আর কতবার বললে আপনি বুঝতেন যে আমি চাইছি না এই মুহূর্তে আপনার কাছে আসতে? আপনি কি মনে করেন বলুন তো নিজেকে? যখন যেটা ইচ্ছা সেটা করবেন আর আমি সেটা মেনে নেবো? বিয়ের রাতে ঠিক এভাবেই আমাকে শক্ত করে ধরে বলেছিলেন যে আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানেন না, কোনোরকম সম্পর্ক রাখতে চান না। এরপরে আপনি কি আপনার এই কথা রাখতে পেরেছেন? আজ কয়েকমাস পর ঠিক একইভাবে আমাকে বলছেন আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চান। কি সিওরিটি আছে আপনি এই কথার দাম দেবেন? শুভদৃষ্টির সময় ওই যে একবার তাকিয়ে ছিলেন তারপর আর ফিরেও তাকাননি আমার দিকে। এদিকে এখন চোখে চোখে রাখছেন। কীভাবে বিশ্বাস করবো যে আপনি আবার বদলে যাবেন না? কীভাবে বিশ্বাস করবো আপনাকে? বলতে পারেন?

আদিত্যর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পরতে দেখলে আমি চুপ করে যাই।আমি কি একটু বেশি বলে ফেললাম? যখনই আমি ওনাকে মেনে নেবো ভাবছি তখনই এই প্রশ্নগুলো যে আমার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এইভাবে বলাটা ঠিক হলো না, আমি তো ভালো ভাবেও বলতে পারতাম।

আদিত্য: তু..তুমি যেটা বলেছো একদম ঠিকই বলেছো। কিন্তু কি বলো তো, আমি নিজেও জানতাম না আমি এইভাবে বদলে যাবো। এইসব ভালোবাসা সম্পর্কে না ছিলো বিশ্বাস আর না ছিলো কোনো ধারণা। বিশ্বাস করতাম না দেখেই ধারণা রাখতে চাইনি কোনোদিন। কিন্তু তোমাকে দেখলে কেন জানো তোমার প্রতি আমার একটা টান অনুভব হতো। তুমি অন্যকোনো ছেলের সাথে কথা বললে একটা ভয় হতো হারিয়ে ফেলার। তোমাকে কেউ বাজে কথা বললে আমার খারাপ লাগতো আর, আর তোমার কষ্ট হলে আমারও কষ্ট হতো। এই অনুভূতিগুলোর কারণ বুঝতে পারছিলাম না তখন রাজ বললো এটাই নাকি ভালোবাসা। জানি না কীভাবে কি হয়ে গেছে, ভুল হয়ে গেছে আমার। স্যরি! সবকিছুর জন্য স্যরি! পারলে ক্ষমা করে দিও। শুধু শেষে এটুকুই বলবো, একবার ভালোবেসে ফেললে, সত্যিকারের ভালোবেসে ফেললে মানুষ হয়তো সেটা জীবনেও ভুলতে পারে না। সবারটা জানিনা, আমি তো পারবো না। আগেইন স্যরি, আজকের জন্য এবং আগে যা যা করেছি সব কিছুর জন্য।

আদিত্য চলে গেলে আমি মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে আসি। এদিকে আদিত্যকে চোখ মুছতে মুছতে আসতে দেখলে রাজ ঘাবড়ে যায়। আদিত্যের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আদিত্য রাজকে দেখে, ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। রাজ বুঝতে পারে সাংঘাতিক কিছু হয়েছে কিন্তু কিছু বলে না সেই মুহূর্তে। আদিত্যকে এভাবে কাঁদতে আজ অবধি দেখেনি রাজ। বাবার সাথে কথা কাটাকাটি হলে হয়তো সামান্য চোখের জল ফেলতো কিন্তু এভাবে মন খুলে কাঁদবে আদিত্য ব্যানার্জী? অবাক লাগছে রাজের সাথে ভয়ও হচ্ছে। আদিত্য কিছুক্ষণ পর সরে এসে অন্যদিকে ঘুরে বললো,

আদিত্য: আমাকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দে।

কথাটা বলেই আদিত্য বেরিয়ে গেলো গেস্ট রুম থেকে। গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে রোডে উঠে গেলো সোজা।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে