#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৬
কোনোমতে গায়ে শাড়ি পেঁচিয়ে রয়েছে মোহ। সবেমাত্র শাওয়ার নিয়েছে সে। কোঁকড়ানো চুল সোজা হয়ে পিঠে পড়ে রয়েছে। চুল থেকে একটু একটু করে পানি পড়ছে। বেশ বিরক্তিকর ভঙ্গিতে শাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছে মোহ। তবে হচ্ছে না। একহাতে কতই বা ভালো করে শাড়ি পড়া যায়? অন্যহাত তো ব্যান্ডেজ করে ঝুলিয়ে রাখা। বিরক্তির কারণে ‘চ’ এর ন্যায় শব্দ করে দরজার দিকে তাকায় সে। খিদে পেয়েছে তার। কিছু না খেলেই নয়। এভাবে বাহিরেও যেতে পারবে না বোধহয়। তার আগেই কপোকাত! আরো কিছুটা ঠিক করে পড়ার চেষ্টা করতেই বাহির থেকে স্বচ্ছের ডাক আসে।
“মোহ, তোমার ফোনে কল এসেছে।”
“কে কল করেছে?”
“ডোন্ট নো। বাট আয়মান নাম লিখা।”
শাড়ি ঠিক করা বন্ধ করে দেয় মোহ। থরথর করে কেঁপে ওঠে সে। অতীত কেন পিছু ছাড়ে না। কেন এগোতে দেয় না? দরজার দিকে চেয়ে ধীর গতিতে হেঁটে গিয়ে দরজাটা খুলে বেরিয়ে আসে মোহ। ফোনটা আসলেই বাজছে। ফোনটা পড়ে আছে বেডের এপ্রান্তে আর স্বচ্ছ নির্বিকার আকারে বসে আছে বেডের ওপ্রান্তে। মনে হচ্ছে ফোনটা হাত দিয়েও ছুঁয়ে দেখেনি সে। মোহ এগিয়ে এসে শুঁকনো ঢক গিলে ফোনটা হাতে তুলে নিতেই স্বচ্ছ বলে ওঠে,
“একটা বিষয় বুঝলাম না আয়মান বলতে আমাদের অফিসের আয়মান? বাট ও তোমাকে কেন কল করছে।”
মোহ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। দরদর করে ঘামতে শুরু করে। বুঝতে পারে না অতীতের এই আয়মান নামক মানুষটার কথা আদোও বলা উচিত হবে কি না! ভাবার মাঝেই আবার ফোন বেজে ওঠে। মোহ কাটতে গিয়েও কল ধরে ফেলে। ফ্যাকাশে চোখেমুখে ফোনটা কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকেই সেই কন্ঠ ভেসে ওঠে যা অতীতে শোনার জন্য যে অতি আগ্রহে বসে থাকত।
“হ্যালো মোহ! ভালো আছো?”
“তুমি কেন কল করেছো? আমার ভালো মন্দের খবর নিতে নিশ্চয় নয়।”
“আই এম সরি।”
বেশ অনুতপ্ত হয়ে ওপাশ থেকে বলল আয়মান। মোহ তিক্ততায় চোখমুখ খিঁচে ফেলল। একবার স্বচ্ছের দিকে তাকালো। সে একবারো আয়মানের জন্য ভাবছে না। সে ভাবছে স্বচ্ছের জন্য। স্বচ্ছ কি মনে করবে? মোহ বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
“সরি কেন?”
“তোমাকে ভুল বোঝা আমার জীবনের সব থেকে বড় ছিল। যখন তোমাদের ছবি বেরিয়েছিল তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি আমি। তারপর আস্তে আস্তে যখন বিষয়টার ঠিক তথ্য বেরিয়ে এলো তখন আমি কাজের চাপে ফেঁসে যাই। ভেবেছিলাম তোমার অভিমান আমি বাড়িতে ফিরে ভাঙাবো। কিন্তু আমি ঢাকায় ফিরতে ফিরতে সব বদলে গেল। তোমার জীবন বদলে গেল। বিয়ে করে ফেললে তুমি। এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত তুমি না নিলেও পারতে। আমার জন্য অপেক্ষা করলেও পারতে। তাহলে হয় সব ঠিক থাকত।”
মোহ কিছু বলল না। হুট করে ফোনটা কেটে দিল। টুক করে আয়মানের নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে দিল সে। মেসেজে লিখা ছিল,
“যে মানুষটা আমাকে বিশ্বাস করেনি সেই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় না। অন্তত এই মোহ আনবীর সেটা মনে করে না। এখন যে মোহ আনবীর নেই। আমি এখন মিসেস. আহিয়ান স্বচ্ছ হয়েছি। তার তাতে আমি সুখী। আমি যার কাছে #একটুখানি_সুখ নিবেদন করেছিলাম। সেই মানুষটা আমাকে সুখ রাজ্যের রানী বানিয়ে দিচ্ছেন। জীবনটা সুন্দর নয় কি?”
মেসেজটা সেন্ড করে মুচকি হাসল মোহ। স্বচ্ছের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে সরে গেল সে। স্বচ্ছ তার একদম কাছে এসে পড়েছে। ফট করে মোহের হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিল স্বচ্ছ। মোহ ফোনটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে ওঠে,
“আ…আপনি আপনি কি করছেন? ফোনটা দিন।”
“এতো তাড়া কীসের? লেট মি চেক! এতোক্ষণ তোমার কর্মকান্ড দেখছিলাম। এতো মিষ্টি হাসি কি দেখে দিলে তুমি? এতো সুন্দর হাসি তো আমাকে দেখেও দাও না।”
বলেই ফোনে চোখ রাখলো স্বচ্ছ। মোহের মেসেজটা দেখে অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো মোহের দিকে। তারপর মৃদু হেঁসে বলল,
“চলো! ছেড়ে দিলাম। সুন্দরীর হাসির কারণ যে আমি এর থেকে ভালো কি হতে পারে?”
ফোনটা মোহের হাতে তুলে দিল স্বচ্ছ। মোহ অবাক সুরে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি তো এটা জিজ্ঞেস করলেন না যে আয়মানকে কেন এই মেসেজটা পাঠালাম? এর কারণ কি?”
“করিনি কারণ তোমার দুটো চোখ। তোমার দুটো চোখ আমাকে আমাদের রিসেপশনের দিন বলে দিয়েছিল তোমাদের মাঝে তো কিছু একটা ছিল। যার প্রকাশ তুমি ঘৃণ্য দৃষ্টি দিয়ে দিয়েছিলে আয়মানের দিকে। এমন সুন্দর চোখ দিয়ে যখন এমন দৃষ্টি হয় তাহলে সেই মানুষটা খুব আনলাকি! আমি তো তার চোখে শুধুই ভালোবাসা দেখি। কেন যেন মনে হয় সে চুপি চুপি আমাকে ভালোবাসে।”
“চুপি চুপি, প্রকাশ্যে, সবার অগোচরে, লুকিয়ে, সবার সামনে একজনকে ভালোবাসি।”
কথাগুলো আপনমনে বলে নিজেই হতবিহ্বল হয়ে গেল মোহ। চোখ বড় বড় করে স্বচ্ছের দিকে চেয়ে রইল সে। স্বচ্ছও চোখ বড় করে তারই চোখে চোখ রেখে চেয়ে আছে। আচমকা মোহের বাহু ধরে স্বচ্ছ উৎকন্ঠা হয়ে বলে ওঠে,
“কি বললে? আবার বলো? বলো বলো?”
“বলছিলাম যে আমার শাড়িটা ঠিক করে দেবেন? আমি তো পরতে পারছি না। আমার হাতে সমস্যা হয়েছে কিনা!”
স্বচ্ছ একবার মোহের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে নেয়। তারপর বলে,
“আমি হেল্প করলে তোমার ভালো লাগবে?”
“মানে?”
“মানেটা খুব সিম্পল! তুমি যেভাবে শাড়ি পরেছো মনে হচ্ছে ঠিকঠাক করে পরিয়ে দিতে পুরো শাড়ি খুলে পরাতে হবে। আর ইউ রেডি ফর দিস?”
নিজেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল মোহ। আমতা আমতা করল সে। স্বচ্ছ বলল,
“নো প্রবলেম। সালোয়ার-কামিজ পড়লে নিলেই তে প্রবলেম সলভ!”
“সেটাই তো সমস্যা। আমি তো নিজে এতোকিছু গুছিয়ে নিতে পারিনি হাত ব্যাথা করছিল। শিউলি(সার্ভেন্ট) গুছিয়ে দিয়েছে। এসে দেখি সব শাড়ি।”
“তাহলে তো উপায় নেই। তাহলে শুভ কাজে দেরি কীসের? লেটস স্টার্ট।”
মোহ ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বলে,
“শুভ কাজ মানে?”
স্বচ্ছ জিহ্বা কেটে বলে,
“উপপস… সরি। চলো তোমাকে হেল্প করি। আমিও তো শাড়ি কি করে পরতে হয় জানি না। বাট তুমি বলে দিয়ে সেই অনুযায়ী পরিয়ে দিতে পারি।”
মোহ একটু দ্বিধাবোধ করলেও উপান্তর না পেয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে তৈরি হলো সে। স্বচ্ছ আঁচল ফেলে দিতেই পুরো শরীরে যেন বরফ সঞ্চারিত হলো। চোখ দুটো হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল সে। স্বচ্ছও ঢক গিলে মোহের সাহায্য নিয়ে অবশেষে ঠিকঠাক ভাবে শাড়ি পরিয়ে দিতে সক্ষম হলো সে।
“এইযে ম্যাডাম, হাত সরাতে পারেন। এখনো এমন কিছুই করিনি যে লজ্জায় কুঁকড়ে একেবারে ছোট্ট হয়ে যাচ্ছেন।”
“ধুর! আপনার এসব কথাবার্তা কোনোদিনই কি যাবে না?”
স্বচ্ছ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে মোহের দিকে নিচু হয়ে মোহের বাম গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বলে,
“উঁহু কখনোই না। বুড়ো বয়সেও না। কারণ আমি সবসময় এই লজ্জাবতী রাণীকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখতে চাই।”
মোহের উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা বেড়ে গেল। স্বচ্ছের লেমন রঙের শার্ট খামছে ধরল সে। আর কত লজ্জা পেতে হবে তাকে কে জানে!
গাল ফুলিয়ে বসে আছে মোহ। পাশে স্বচ্ছ। সব ঠিকঠাকই আছে শুধু একটা জিনিস ছাড়া। সেই বিষয়টাতেই মোহের ভারি ভারি অভিমান। স্বচ্ছের সামনের চেয়ারে বসে আছে রিয়ানা। ঠিক এখানেই সমস্যা মোহের। বসে বসে দাঁত কিড়মিড়িয়ে যাচ্ছে মোহ। তারা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। রেস্টুরেন্টটা তারা যেই রিসোর্টে উঠেছে সেখানকারই। বাঁশ দিয়ে করা রেস্টুরেন্ট। বাঁশের আসবাবপত্র সব। টেবিল থেকে বসার চেয়ার সবটা বাঁশের। মোহের দৃঢ় ইচ্ছা জাগল এর মধ্যে একটা বাঁশ দিয়ে যদি রিয়ানা নামক মেয়েটির মাথায় মেরে ফাটিয়ে দিতে পারত। তাহলে কত শান্তিটাই না হতো!
মোহ আর স্বচ্ছ এসেছিল রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট করতে। তার ঠিক একটু পরেই ঘটল রিয়ানার আগমন। স্বচ্ছকে দেখার মাত্রই স্নচ্ছকে হাই দিয়ে একেবারে সেই টেবিলেই এসে বসে পড়ছে রিয়ানা। আর জুড়ে দিয়েছে গল্প। মাঝে মাঝে হাসিঠাট্টার মাঝে স্বচ্ছের হাতটাও ধরে বসছে রিয়ানা। যাতে মোহ রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। অতঃপর স্বচ্ছ হাতটা মোহের হাতে রাখাতেই ক্ষ্যান্ত হয়েছে সে। তবুও যেন রাগটা কমেনি।
“আচ্ছা স্বচ্ছ তুমি বলো কি খাবে? সকালে তো তুমি হালকা খাবার খাও আমার জানামতে।”
হেঁসে জিজ্ঞেস করে রিয়ানা। স্বচ্ছও সৌজন্যমূলক হেঁসে উত্তর দেয়,
“আমি অর্ডার দিচ্ছি। তুমি কি খাবে বলো? আর মোহ, এখানে তো মেবি সালাদ পাওয়া যাবে না। কি খাবে?”
“আপনার যেটা ইচ্ছে অর্ডার দিন।”
ঝাঁঝালো কন্ঠে জবাব দেয় মোহ। স্বচ্ছের বুঝতে বাকি থাকে না মহারাণী বেশ ক্ষেপে আছে। সে কথা না বাড়িয়ে পরোটা, ডিম, ডাল অর্ডার দেয়। সকালে এর থেকে বেশি খাবার এখানে পাওয়া যাবে না।
খাবার টেবিলে আসতেই চুপচাপ নিজের খাবার নিয়ে ডান হাতে না পেরে বাম হাতেই খেতে প্রস্তুতি নিল মোহ। তৎক্ষনাৎ মোহের হাত ধরে স্বচ্ছ তার মুখে সামনে খাবার তুলে ধরে বলে,
“বাম হাতে কেউ খায়? নাও আমার হাতে খেয়ে নাও।”
“আমি একা খেতে পারব।”
“না পারবে না। জেদ করবে না আমার সাথে। খেয়ে নাও।”
চোখ গরম করে বলে স্বচ্ছ। কিছু একটা ভেবে দ্রুত খাবার মুখে নিয়ে চিবুতে থাকে মোহ। রিয়ানা বসে বসে পরোটা ছিঁড়ছে আর স্বচ্ছ ও মোহকে দেখছে। সে খেতে খেতে বলে,
“স্বচ্ছ, তুমিও দেখি এমন একটা মেয়ে পেয়েছো যে নিজহাতে খেতে পারছে না আবার তুমি খাইয়ে দিচ্ছো তাও খেয়ে চাচ্ছে না। মোহ তুমি ভালোবাসা বোঝো না?”
মোহ কিছু বলার আগেই স্বচ্ছই তার বদলে উত্তর দিয়ে বলে,
“রিয়ানা, তুমি ভাবছো। ওর হাতে সামান্য সমস্যা হয়েছে। ও সারাজীবনের জন্য এমন হয়েছে সেটা নয়। আর ভালোবাসা ও ঠিকই বোঝে। হয়ত তোমার থেকে বেশি বোঝে। কারণ তুমি বিদেশে বড় হয়েছো। আর বিদেশে তো এট্রাকশনকেও ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।”
রিয়ানা এবার কিছুটা অপমানে মুখটা থমথমে করে ফেলল। জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে খেতে শুরু করল সে। মোহ তো বেজায় খুশি। না চাওয়া সত্ত্বেও কেন যেন তার মনে পৈশাচিক আনন্দ কাজ করছে। খুশির চোটে স্বচ্ছের হাত ভালো করে চেপে ধরে খেতে শুরু করে সে। স্বচ্ছও মেয়েটার কান্ড দেখে না হেঁসে পারে না।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আকাশে নানান মেঘের খেলা। মাঝে মাঝে পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সুন্দর বাতাস বইছে। মোহ পা ঝুলিয়ে বেডের ওপর বসে আছে। স্বচ্ছ গিয়েছে মোমবাতি আনতে। রাতে কারেন্ট নাও থাকতে পারে সেজন্য। ভাবুক হয়ে জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে ফোন নিয়ে দেখে নাফিসা বেগমের নম্বর। ‘নানিমা’ নাম সেভ করা। সঙ্গে সঙ্গে কলটা ধরে মোহ সালাম দিয়ে বলে,
“কেমন আছো নানিমা? ভালো আছো তো? তোমার ঠিকঠাক যত্ন হচ্ছে?”
“আহা! প্রথমেই আমাকে নিয়ে চিন্তিত হস কেন? আমার ঠিকই সেবা করছে। স্বচ্ছ তো কড়া করে বলে গেছে আমাকে যেন ঠিকঠাক যত্ন নেয়। বাড়ির সব ভয়ে আছে। সময়মতো আমার সব কাজ করে দিচ্ছে।”
মোহ শান্তিতে শ্বাস ছেড়ে বলে,
“আচ্ছা? বাড়ির সবাই ভালো আছে?”
“সবাই ভালো আছে। তোরা কেমন আছিস সেটা বল। মধুচন্দ্রিমাই গেছিস। সব ঠিকঠাক কাটছে তো?”
মোহের কন্ঠ মিইয়ে যায়। কেননা এই মূহুর্তে রিয়ানার কথা মনে পড়ছে তার। মনটা আকুপাকু করছে নানিমাকে ওই মেয়েটার কথা বলতে। মোহের নিরবতা দেখে আবার নাফিসা বেগম বললেন,
“কিরে? কথা বলছিস না যে? নাকি তোদের বিরক্ত করলাম?”
“না সেটা না। আচ্ছা নানিমা তুমি একটু ফ্লাশব্যাক করে নিজের অতিতে যাও তো! ধরো তুমি আর নানাভাই ঘুরতে গেছো। সেখানে অন্য মেয়ে তোমার বরকে নিয়ে মাতামাতি করছে। বিষয়টা তোমার কেমন লাগবে?”
“কি বলিস? আমার বরকে নিয়ে মাতামাতি করবে? এতো বড় সাহস? আমি হলে তো উচিত শিক্ষা দিয়ে আসতাম! একটা কথা বল, তোর সাথেও কি এমন কিছু ঘটছে?”
মোহ আবারও মৌনতা অবলম্বন করে। এতেই নাফিসা বেগম যা বোঝার বুঝে যান।
“হিংসা হিংসা! আমাদের খুব হিংসা। তোরও হিংসা হচ্ছে তাই না? মনে চাইছে না বরকে নিজের কাছে ধরে রাখতে?”
মোহ তবুও চুপ। লজ্জায় মুখ খুলতে পারছে না। নাফিসা বেগম আবারও প্রশ্ন করে,
“কিরে? বরকে নিজের কাছে ধরে রাখতে চাস না?”
“চাই তো। কিন্তু… ”
“কিন্তু আবার কোত্থেকে আসে মাইয়া?”
“না কিছু না।”
“শোন! স্বামীকে ভালোবাসতে জানিস? বেশি করে ভালোবাসবি বুঝলি? তুই ওকে একটু ভালোবাসলে সেও তোকে ভালোবাসবে। দেখই না একবার ভালোবেসে। ওকে ভালোবেসেছিস কখনো?”
এসব কথায় মোহের হাত থেকে ফোনটাই পড়ে যেতে নেয়। কিন্তু ধরে ফেলে মোহ। মাথা থেকে পা পর্যন্ত অস্বস্তিতে কেঁপে চলেছে। মিনমিনিয়ে বলে,
“ইয়ে মানে নানিমা! এসব কথা থাক?”
“তোর ইচ্ছে। কিন্তু যেটা বললাম মাথায় রাখিস। সে কিন্তু পুরুষ মানুষ। ভালোবাসলে সব ঠিক! আমি ফোন রাখলাম।”
মোহের নানিমা ফোন কেটে দেওয়ার আগেই মোহই কল কেটে দেয়। আর জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। কানে একটাই কথা বাজছে, ‘ওকে ভালোবেসেছিস কখনো?’
চলবে….
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। সকলে রেসপন্স করবেন।]