একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৫

0
2476

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

নাস্তা করে রুশান আর মৌ বেরিয়ে পড়লো যাওয়ার জন্য।শিরিনের মায়ের বাড়ি বেশি দূরে নয়।এখান থেকে রিকশায় দশ টাকা ভাড়া লাগে।আর হেটে দশ বা পনেরো মিনিট লাগবে।তবে আজ রিকশায় যাবে ওরা।মৌ এর ভিষণ বিরক্ত লাগছে এই বেয়াদব গোছের ছেলেটার সাথে বসতে।সাথে রাগও লাগছে। এতো বড় হওয়ার পর আক্কেল আন্দাজ সব পানিতে গুলিয়ে পেটে চালান করে দিয়েছে তা নাহলে সামান্য ‘হাগু’ কথাটা সবাইকে ধেই ধেই করে বলার কি আছে।এমন করছে যেনো ওদের গোষ্ঠীতে কেউ হাগে না।এই প্রথম হাগুর নাম শুনলো বলে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বলে বেড়াতে হচ্ছে।অতিমাত্রায় অসভ্য হলে যা হয় আর কি!

এদিকে মৌ এর বিরক্ত মুখটায় নজর পড়তেই রুশান একটু ভ্রু কুঁচকালো।বিরক্ত হওয়ার মতো কোনো কাজ করেছে বলে তো মনে পড়ছে না তাহলে বিরক্তিটা ঠিক কোন কারণে?নাকি ওর মুখটাই এমন!একবার কি জিগ্যেস করা উচিত।না থাক যেচে জিগ্যেস করতে গেলে পরে গায়ে পড়া ভাববে।কেনো জানি ফার্স্ট ইম্প্রেশনেই কোনো মেয়ের যদি কোনো ছেলেকে অসভ্য,বেয়াদব মনে হয় তাহলে সারাজীবন তপস্যা করেও সেই মেয়েটির কাছে ছেলেটি ভালো হতে পারে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা চলে এসেছে শিরিন আপুর বাবার বাড়ি।রুশান ভাড়া মিটিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা ধরলো।পিছনে পিছনে মৌ ও আসছে।বাড়ির গেট একবারে খোলা।দুতলা ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির গোলাপী রঙের বাড়ি।সামনে ছোটোখাটো একটা ফুলের বাগান আছে।ভেতরে যেতে যেতে এতটুকুই ঠাহর হলো মৌ এর।একতলার একটা ফ্ল্যাটের সামনে রুশান দাঁড়িয়ে পড়লো।দরজার পাশের কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পরই একটা মেয়ে দরজা খুলে দিলো।রুশান মেয়েটাকে দেখে সহাস্যে বলল,’কি খবর বেয়াইন সাহেব?’

‘এই তো ভালো বেয়াই সাহেব।’
মেয়েটা কথা শেষ করতে না করতেই মধ্যবয়সী এক মহিলা এসে বলল,’এসো ভেতরে এসো।’
রুশান বলার আগেই ভেতরে চলে গেছে তারপর আয়েশ করে একটা সোফায় বসে পড়েছে। আর মৌ সঙ্কোচে ধীর পায়ে ভেতরে আসলো।রুশানের সাথে কথা বলা মেয়েটা মৌ কে দেখে বলল,’তুমিই মাহমুদা আন্টির মেয়ে?জানো তো আমরা সমবয়সী।আমিও এবার এডমিশন পরীক্ষা দিবো।’
মৌ সৌজন্যমূলক একটু হাসলো।আসলে মৌ মেয়েটার চেয়ে একবছরের বড় ও গতবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে।তারপর ওই রাক্ষুসে ফ্যামিলি আর রাশেদের অত্যাচারে আর পড়তে পারে নি।ভেবেছিলো পড়া বোধহয় শেষ।না নিয়তি আরেকবার সুযোগ দিয়েছে ওকে।

মেয়েটা বকবক করতে করতেই ওকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো।তারপর হেসে রুশানকে বলল,’আজকে কিন্তু থাকতে হবে বেয়াই সাহেব।’

‘না বেয়াইন সাহেবা আজকে কাজ আছে।আমি একটু পরই চলে যাবো।’

‘তা হচ্ছে না।’
এটা বলতে বলতেই মেয়েটা ভেতরে চলে গেলো।এই রুমে এখন মৌ আর রুশান বসে আছে তাও একবারে মুখোমুখি সোফায়।তাই মাঝেমধ্যেই না চাইতেও চোখাচোখি হচ্ছে আর দুজনই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।এই চোখাচোখি চলতে চলতেই সিনথিয়া খালা নাস্তা নিয়ে চলে এসেছে।আর ওনার পেছনে ওই মেয়েটা জুসের ট্রে নিয়ে এসে হাজির।রুশান বিনীত ভঙ্গিতে বলল,’এতো কিছুর দরকার ছিলো না কিন্তু মাওই।’

‘আরে না বাবা।তুমি তো আসোই না।তাও আজকে এতোদিন পর এলে।আজ কিন্তু থাকতে হবে।’

‘না মাওই।আজ না।আজকে জরুরি কাজ আছে।অন্য একদিন থাকবো।’

সিনথিয়া খালা মন খারাপের গলায় বললেন,’তুমি সবসময়ই বাহানা দিয়ে চলে যাও।’

রুশান একটু লজ্জমিশ্রিত হাসি দিলো।এটা সত্যিই।এই বাড়িতে আরো কয়েকবার আসা হলেও থাকা হয় নি।নানারকম ছুতোয় কেটে পড়েছিলো।নাস্তা খেতে খেতে কিছুক্ষণ গল্প করে চলে যাওয়ার জন্য উঠতেই শিরিনের বোন শারমিন টেনে টেনে বলল,’থেকে গেলেই পারতেন।’
রুশান বলতেই যাচ্ছিলো অন্য একদিন থাকবে কিন্তু মৌ এর মুখটা দেখে মত পাল্টা বলল,’আচ্ছা ঠিকাছে এতো করে যখন বললেন তখন থাকতেই হয়।’
রুশানের কথা শুন শারমিন খুশী হয়ে বলল,’যাক এতোদিন বেয়াই সাহেব কথা শুনলো।’
আর এদিকে রুশানের না থাকার কথা শুনে মৌ যতোটা খুশী হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি দুঃখী হয়েছে এখন।না থাকলেই পারতো সয়তান টা।ধ্যাত!

মৌ এর একশো ওয়াট বাল্বের মতো জ্বলে ওঠা মুখটা টুপ করে শূন্য ওয়াটে নেমে আসতে দেখে রুশানের ভিষণ আনন্দ হচ্ছে।তবে অদ্ভুত কারণেই মেয়েটাকে জ্বালিয়ে রুশানের মজা লাগছে।

শারমিন মৌ’কে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।ওর হাত থেকে ব্যাগটা বিছানার ওপর রেখে বলল,’এটা আমার ঘর।আমরা এখানেই থাকবো একসঙ্গে।অনেক মজা হবে।’

মৌ কিছু বলল না।সে ঘুরে ঘুরে ঘর দেখতে ব্যস্ত।বেশ ছিমছাম আর পরিপাটি ঘর।উত্তরে একটা জানালা আছে।ওখান দিয়ে খোলা মাঠ দেখা যায়।শারমিন মৌ’কে ড্রইং রুমে আসতে বলে চলে গেলো।এই মেয়েটা প্রচুর মিশুকে!মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই এতোটা ফ্রী হয়ে কথা বলছে। মৌ হলে কখনোই পারতো না।বেশ ইন্ট্রোভার্ট টাইপের সে।

বেশ খানিকক্ষণ পর মৌ ড্রইং রুমে গেলো।শারমিন ওকে দেখে বলল,’এতো দেরি তে এলে তুমি!আসো বসো।’
মৌ কে নিজের পাশে বসতে বলে সে আবারও বকবক শুরু করলো।আলোচনার সারবস্তু হলো কোনো মুভির কাহিনি।মৌ জীবনে বোধহয় দুইবার না তিনবার তাও অল্প একটু করে দেখেছে মুভির।প্রথম বার রাস্তায় চায়ের দোকানের এরপরে কলেজে একদিব বান্ধবীর ফোনে।এইতো এরপর আর মনে পড়ছে না।তাই মৌ এর এই আলোচনা ইন্টারেস্টিং লাগছে না।প্রচন্ড বোর হচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ বসে মৌ পাশ থেকে উঠে দাড়াতেই শারমিন বলল,’কি হলো?’

‘কিছু না।আমি একটু রান্নাঘরে যাবো।আন্টির সাথে একটু কথা বলে আসি।’

‘আচ্ছা যাও।’
যাওয়ার সময় মৌ এর চোখ রুশানের দিকে পড়তেই দেখলো সেও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ চোখ ফিরিয়ে মনে মনে বলল,’আপদ!’

দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় শারমিন হঠাৎ বলে উঠলো,’বেয়াই সাহেব আজ তো আপনি থাকছেন তাই না!চলুন আমরা চারজান কোথাও ঘুরে আসি।’

‘হ্যাঁ যাওয়া যায়।’রুশান খেতে খেতেই বলল।

‘না না বাবা তোমরা তিনজন যাও ঘুরে আসো।আমি যাবো না।’সিনথিয়া বেগম আপত্তি করে বসলেন।

‘কেনো মা?’শারমিন মন খারাপ করে বলল।

‘খালি বাড়ি রেখে যেতে মন চায় না।তোরা যা।তোদের মতো বয়সে আমি কতো ঘুরে বেড়িয়েছি।এখন আর মন চায় না।’

মায়ের না যাওয়ার কথা শুনে শারমিন একটু মন খারাপ করলেও তাতে তার উৎসাহের বিন্দু মাত্র ভাঁটা পড়লো না।সে অতিউৎসাহে বলল,’আচ্ছা তাহলে আধঘন্টা পরই আমরা বের হবো।’

রুশান বলল,’ডান।’
————-
বান্ধবীর সাথে শপিং মলে ঘুরতে ঘুরতেই ভুলবশত একজনের সাথে ধাক্কা খেতেই ইফরা সরি বলার জন্য ঘুরে দাড়ালো কিন্তু সরি বলতে পারো না।কারণ সামনের মানুষটা আহাদ।ওর সাথে একটা মেয়ে দাড়ানো।ওর গার্লফ্রেন্ড।ইফরা মেয়েটাকে চেনে।চোখমুখ শক্ত করে ইফরা চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই আহাদ ওর হাত ধরে ফেললো।তারপর বলল,’একটু দাড়াও কথা আছে।’

‘হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি!’ভারী শক্ত গলায় বলল ইফরা।আহাদ হাতটা ছেড়ে দিয়ে ওর গার্লফ্রেন্ডকে বলল,’একটু সামনে যাও।আমি আসছি।’

মেয়েটা একবার ইফরার দিকে রুক্ষ দৃষ্টিতে চেয়ে কিছুটা সামনে গিয়ে দাড়ালো।আমিও আমার বান্ধবীকে একটু সাইডে যেতে বললাম।আহাদ কিছুক্ষণ ইতস্তত করতে করতে বলল,’তুমি নাকি বিয়ে করছো?’

‘হ্যাঁ।তোমার কোনো সমস্যা?’ইফরা তিক্ত গলায় বলল।

‘না সমস্যা না।ছেলেটা কে?’

‘সেটা জেনে তুমি কি করবে?’

‘না এমনিই।উইশ ইউ হ্যাপি ম্যারিড লাইফ।’

‘কথা শেষ।’

‘হ্যাঁ।’

‘ওকে।নাও বাই।’
এটা বলে ঘুরে হাটা ধরলো ইফরা।
————–
শারমিন ভারী মেকাপ করতেই একঘন্টা লাগিয়েছে।যেনো সে কোথাও বিয়ে খেতে যাচ্ছে।নিজের মেকাপ করা শেষ হতেই মৌ’কে বলল,’তুমি মেকাপ করবে?’

‘না।আমি মেকাপ দেই না।’

‘আচ্ছা তাহলে চলো বের হই।বেয়াই সাহেব অপেক্ষা করছে।’

রুশান শারমিনকে দেখেই মনে মনে একটা নাক ছিটকানি দিলো।কারণ ওর মেকাপ পছন্দ না।ন্যাচারাল বিউটিই সুন্দর।তবুও বেয়াইন বলে কথা বেয়াই সাহেব একটু প্রশংসা না করলে চলে?তাই রুশান একটু প্রশংসা করে দিলো।

বাসা থেকে তিনজন একসাথেই বের হলো।মৌ একটু পেছনে আর ওর দুজন সামনে কথা বলতে বলতে হাটছে।হঠাৎ হাটতে হাটতেই রুশান অসাবধানে ছাগলের হাগু এর মধ্যে পা দিয়ে ফেলসে।তাই দেখে মৌ আর শারমিনের হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ।আর এদিকে রুশান ক্রুর চোখে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে