#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat
‘কেমন আছেন?’
‘ভালো না থাকলে দেখা করতে আসতাম না অবশ্যই।’
‘হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।কি খাবেন?’
‘একটা কোল্ড কফি ব্যাস।’
রুমান ওয়েটারকে ডেকে একটা পেপসি আর একটা কোল্ড কফির অর্ডার দিলো।ওয়েটার চলে যেতেই রুমান ভণিতা না করে সরাসরিই বলল,’আমি আপনাকে পছন্দ করি।বিয়ে করতে চাই।’
‘শুনেছি মা বলেছে।’
‘আপনার কি এই সম্পর্কে কিছু বলার আছে?’
‘আপনি দেখতে বেশ ভালো।ভালো চাকরি করেন।না পছন্দ হওয়ার কারণ নেই কিন্তু আমার সমস্যা অন্য জায়গায়।’
ইফরা কথ শেষ করার আগেই ওয়েটার এসে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে গেলো।তাতে অবশ্য কথা বলায় ব্যাঘাত ঘটে নি।ইফরা দিব্যি বলেছে।আগে অবশ্য বলতে পারতো না এমন দিব্যি কথাবার্তা।চেহারায় লজ্জা লজ্জা একটা ভাব ছিলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভাবটা উবে যাচ্ছে দিনদিন।মাঝেমধ্যে ইফরা ভাবে কেনো এমন হচ্ছে!ছ্যাঁকা খেলে কি এমন হয়!
রুমান পেপসিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,’যেমন?কি সমস্যা?’
‘আমার অতীত।বোধহয় আমার অতীত জানলে আপনিই নিজেই আমাকে রিজেক্ট করবেন।’
রুমান বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই পেপসিতে আরেকটা চুমুক দিয়ে বলল,’আপনার অতীত আমি জানি।আপনার মা বলেছেন।আমার আপনার অতীত নিয়ে আপত্তি নেই।’
ইফরা একটু চমকালো।কারণ এর আগে সবাই ওকে অতীতের জন্যই রিজেক্ট করেছে কিন্তু এই ছেলেটা ব্যাতিক্রম।তবে হুট করে যাকে তাকে বিশ্বাস করে ফেলার মতো বোকামি ইফরা আর ইহকালে করবে না।তাই সে বলল,’আচ্ছা কিন্তু হুট করে আমি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবো না।আমার ভাবতে হবে।’
‘অবশ্যই।আমি অপেক্ষা করবো।’
ইফরা নিজের ঘড়িতে সময়টা দেখে বলল,’এবার উঠি তাহলে।’
‘আচ্ছা তবে যদি কিছু মনে না করেন আপনার নাম্বারটা পেতে পারি?’
ইফরা হাসলো।তারপর বলল,’মা এতো কিছু বলেছে অথচ নাম্বারটা দেয় নি!’
‘চেয়েছিলো কিন্তু আমি নেই নি।আপনার থেকে নেবো বলে।’
ইফরা মৃদু হাসির রেখে টেনে নিজের নাম্বারটা একটা টিস্যুর মধ্যে লিখে দিয়ে বলল,’ফোন দিলে রাত এগারোটা পর ফোন দিবেন।এর আগে আমি পড়াশোনা করি।ফোন বন্ধ থাকে।’
‘আচ্ছা।’
তারপর রুমান ইফরাকে রিকশায় তুলে দিয়ে বলল,’ভালো থাকবেন পারু।’
ইফরা চলন্ত রিকশাটা থামিয়ে বলল,’আমার নাম শাহনেওয়াজ পারুল ইফরা।আমাকে ইফরা ডাকবেন।পারু ডাকবেন না।ভালো লাগে না আমার।’
‘আচ্ছা ডাকবো না।’
‘এবার তাহলে আবার বলুন।’
‘কি?’
‘ওই যে রিকশায় তুলে যা বললেন।’
‘ভালো থাকবেন ইফরা।’
‘আপনিও ভালো থাকবেন রুমান।’
তারপর রিকশা চলতে শুরু করলো আপন গতিতে।পেছনে রুমান দাড়িয়ে আছে চেয়ে আছে রিকশার দিকে।ভাবছে হয়তো ইফরা পেছনে তাকাবে কিন্তু না তাকায় নি।
—————–
রুহান কারখানা থেকে মাত্রই ফিরলো।আজকে প্রচুর কাজের চাপ ছিলো।ড্রইং রুমের সোফায় এসে বসতেই শিহান দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠে বলল,’বাবা জানো আজ কে এসেছে?’
রুহান আদুরে কন্ঠে বলল,’কে এসেছে বাবু?’
‘হাগু আন্টি এসেছে।’এটা বলেই রুহান খিলখিলিয়ে হাসা শুরু করলো।পেছন থেকে শিরিন লেবুর শরবত নিয়ে এসে টেবিলে রেখে বললেন,’শিহান এগুলো কি কথা? কে বলেছে এই কথা তোমাকে?’
‘ছোট চাচ্চু বলেছে মা।’
‘না বাবা উনি তোমার মৌ খালামণি হয়।তুমি চোট চাচ্চুর কথা শুনিও না।’
‘আচ্ছা।’বলেই শিহান বাবার কোল থেকে নেমে দাদির রুমে চলে গেলো।শিহান চলে যেতেই শিরিন বলল,’আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে তোমায়।’
‘হ্যাঁ আজ প্রচুর কাজের চাপ ছিলো।নিঃশ্বাস ফেলারও সময় ছিলো না।’
‘আচ্ছা শরবতটা খাও।তারপর ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার দিচ্ছি।’
‘রুমান,রুশান ওরা কোথায়?’
‘রুমান কার সাথে যেনো দেখা করতে গেছে।আর রুশান টিউশনিতে গেছে।’
‘ওহ!আচ্ছা আজকে কে এসেছে শিহান বলল যে।’
‘ওই তো আমার এক খালামণির মেয়ে এসেছে।এখান থেকে এডমিশন পরীক্ষা দেবে।আসলে মা এমন করে বলছিলো যে না করতে পারি নি।’
রুহান কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,’উনি ওনার বাসায় নিয়ে রাখতে পারেন না?আমাদের ঘাড়ে কেনো?’
শিরিন প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না।খাবার বাড়তে চলে গেলো।রুহান হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে এসে বসলো।তারপর ভাত খেতে খেতে বলল,’দেখো যেনো বেশিদিন না থাকে।’
‘আচ্ছা।’
রুমান ঘরে ফিরলো রাত নয়টায়।রুমানকে দেখে শিরিন বলল,’তা দেখা হলো দেবর সাহেব?’
‘হ্যাঁ ভাবি হলো।’
‘তাহলে এবার তো বলো!’
‘এখনো বলার মতো কিছু হয় নি ভাবি হলে বলবো।’
শিরিন হতাশ গলায় বলল,’আচ্ছা।’
রুমান নিজের ঘরে চলে গেলো।আজ সে খাবে না।বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।আর রুশান এগারোটার সময় খাবে।ওরটা ওকে ঘরে বেড়ে নিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
——————
ভাত খেয়ে আরো কিছুক্ষণ পড়লো রুশান।পড়া নিয়ে সিরিয়াস না হলেও এখন পড়তে হচ্ছে অনেক কারণ সামনে ইন্জিনিয়ারিং ফাইনাল পরীক্ষা।একটানা পড়তে আর কতক্ষণ ভালো লাগে তাই সে বই বন্ধ করে ছাদে গেলো।এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না।কিন্তু এত রাতে বানাতে আলসি লাগছে।তাই চা ছাড়াই ছাদে চলে গেলো।ওদের ছাদে রেলিং নেই।রুশান ছাদের বাইরে দু’পা ঝুলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।তবে আজ চারপাশে আলো নেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।আজ অমাবস্যা।কোনো এক বিচিত্র কারণে রুশানের পূর্ণিমা নয় অমাবস্যা ভালো লাগে।
রুমান ফোন নিয়ে ইতস্তত করছে ফোন করবে নাকি করবে না।এখন তো রাত সাড়ে বারোটা বাজে।ঘুমিয়ে পড়লো না কি!প্রচুর ইতস্তত হওয়া স্বত্বেও রুমান ফোন করলো।ওপাশ থেকে খুব স্বাভাবিক গলায়ই ইফরা বলল,’আর দশমিনিট পর ফোন দিলে হয়তো কথা বলতে পারতেন না।আমি ঘুমিয়ে পড়তাম।’
‘যাক ভাগ্য ভালো বলতে গেলে।’রুমান ইষৎ হেসে বলল।
‘ভালোও আবার কিছুটা মন্দও কারণ ঠিক দশমিনিট পর আর কথা বলতে পারবো না।কারণ আমি ঘুমাবো।’
‘সমস্যা নেই।দশমিনিটেই হবে।’
‘বাহ!ভালো।তাহলে শুরু করুন।’
‘কি শুরু করবো?’
‘যা বলার জন্য ফোন দিয়েছেন তা।’
রুমান বলার জন্য বিশেষ কিছু খুঁজে পেলো না।সে তো এমনিই ফোন দিয়েছে।শুধু একটু কথা বলার জন্য।রুমানকে চুপ থাকতে দেখে ইফরা বলল,’চুপ কেনো?’
‘না আসলে এমনিই।’
‘আচ্ছা তাহলে আমি বলি?’
‘বলুন।’
‘আপনার আগে প্রেম ছিলো?’
‘হ্যাঁ ছিলো।’
‘কয়টা ছিলো?’
‘দুইটা।ক্লাস টেনে থাকতে একটা করেছি।পরে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সেটার ইতি ঘটে।তারপর অনার্সে উঠে।’
‘অনার্সের প্রেমটার ইতি ঘটলো কেনো?’
‘তারও বিয়ে হয়ে গেছে।’এটা বলেই রুমান হাসলো।
‘ও আচ্ছা।তাহলে এবার রাখি।আপনার দশমিনিট শেষ।শুভ রাত্রি।’
রুমান একটু হতাশ হয়ে বলল,’শুভ রাত্রি।’
ফোন রাখার পর ঘড়ির দিকে তাকাতেই রুমান আবিষ্কার করলো দশ মিনিট হতে আরো তিন মিনিট বাকি।সে চাইলো ইফরাকে আবার কল দিতে কিন্তু কল দিলে সে রিসিভ করতে করতে তিন মিনিট শেষ হয়ে যাবে।আর কথা বলাও যাবে না।তাই বেচারা আর কল দিলো না।
—————-
মৌ চুল আঁচড়াচ্ছিলো।একটু পরই বের হবে শিরিন আপুর আম্মুর সাথে দেখা করতে মানে ওর আম্মুর খালাতো বোনের সাথে।তাও ওকে দিয়ে আসতে যাবে রুশান।এটা নিয়েই বিরক্ত মৌ।সে রুশানকে দেখতে পারে না।প্রচুর অসভ্য ছেলেটা।কিন্তু মুখটা এমন করে রাখে যেনো ভাজা মাছটা উল্টাতে পারে না।কিন্তু পেটে পেটে প্রচুর শয়তানি।মৌ বিনুনিটা করে চিরুনিটা রাখতেই শিহান দৌড়ে ঘরে এসে বলল,’হাগু খালামণি আম্মু তোমায় নাস্তা খেতে ডাকে।’
মৌ অবাক হয়ে শিহানের দিকে চেয়ে বলল,’হাগু খালামণি কে?’
‘তুমি।ছোটচাচ্চু বলেছে।’
রাগটা যেনো চড়চড় করে মাথায় উঠে গেলো মৌ এর।কি সব বলেছে বাচ্চাটাকে।এখন ছেলেটাকে চড় দিয়ে বত্রিশটা দাঁত খুলতে ফেলতে ইচ্ছে করছে।মৌ এর রাগটা আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে শিহান বলল,’জানো ছোটচাচ্চু সবাইকে বলেছে তোমার নাম হাগু খালামণি।’
এটা বলেই শিহান চলে গেলো।মৌ এর এখন কান্না পাচ্ছে।আসলেই লোকটা অসভ্য,বেয়াদব,ইতর।
আদতে রুশান সবাইকে বলে নি সে শুধু শিরিনকে আর শিহানকে বলেছে তবে সবাইকে বলার দায়িত্বটা শিহান নিজের কাঁধেই নিয়েছে।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)