#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_17(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা নিজের কেবিনে বসে রোগী দেখছিল। এমন সময় হঠাৎ করে আবির হন্তদন্ত করে এসে তার কেবিনে প্রবেশ করল৷ আবিরকে দেখে প্রভা ভড়কে গেল। সুধালো,”আপনি হঠাৎ এখানে? আপনাকে তো আমি বলেছিলাম যে, আমি ভেবে চিন্তে নিজের সব সিদ্ধান্ত আপনাকে জানাব। আপনার কি একটুও তড় সইছে না?”
আবির হাফাতে হাফাতে বলল,”তুমি আমায় ভুল বুঝছ প্রভা। আমি এমনি এমনি এখানে আসিনি। রুহুল আমিন আঙ্কেল অনেক অসুস্থ। ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। ওনাকে এই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে। উনি তোমাকে দেখতে চাইছেন। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসো।”
রুহুল আমিনের অসুস্থতার কথা শুনে অস্থির হয়ে উঠল প্রভার মন। সে ত্বরিত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”কি হয়েছে আঙ্কেলের?”
“হঠাৎ করেই ওনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখেই ওনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি।”
প্রভা আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করল না। আবিরকে বলল,”চলুন। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
আবির আর প্রভা একসাথে রুহুল আমিনের কেবিনের বাইরে এসে উপস্থিত হলো। আবির প্রভাকে বলল,”আমি তো পেশেন্টের বাড়ির লোক তাই আমাকে এখন ওরা যেতে দিচ্ছে না ভেতরে। তুমি তো একজন ডাক্তার। তুমি গিয়ে ওনার সাথে দেখা করো।”
প্রভা তাই করল। কেবিনে প্রবেশ করেই রুহুল আমিনের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারকে সে বলল,”ওনার অবস্থা এখন কেমন?”
“আরে ডা:প্রভা, উনি তো তখন থেকে আপনার কথাই বলছিলেন। ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ওনাকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
প্রভা বৃদ্ধ রুহুল আমিনের দিকে তাকালো। লোকটাকে দেখে প্রভার অনেক খারাপ লাগে। গোটা চট্টগ্রামের মানুষ এই লোকটাকে শ্রদ্ধা করে। একজন এমপি হয়েও যে জনগণের সেবা করা যায়, নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সকলের মন জয় করা যায় তার উদাহরণ এই লোকটা। অথচ আজ তার এই কি বেহাল দশা। প্রভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,”আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন আঙ্কেল। আমি এই কামনাই করি।”
বলেই সে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রভাকে বাইরে আসতে দেখে আবির তার নিকটে গিয়ে বলে,”আঙ্কেলের এখন কি অবস্থা? উনি ঠিক আছেন তো?”
“আপনি চিন্তা করবেন না। উনি ঠিক হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।”
আবির প্রভাকে দেখানোর জন্য নাটক শুরু করল। মিছে কান্না করে বলতে লাগল,”ঐ লোকটাই তো এখন আমার একান্ত আপন। উনি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? ওনার কিছু হয়ে গেলে যে আমি একদম একা হয়ে যাব।”
প্রভা নিশ্চুপ থাকে। আবিরের নিদারুণ অভিনয় আর চোখের জল দেখে তার মনেই হয়না যে সে কত বড় নাটক করছে৷ প্রভার মন একটু হলেও গলে যায় আবিরের প্রতি। সে আবিরকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। উনি সবকিছু ঠিক করে দেবেন।”
এটুকু বলেই প্রভা সেখান থেকে বিদায় নেয়। কারণ একটু পর তার একটা অস্ত্রোপচার করতে হবে।
~~~~~~~
অটি থেকে বেরিয়ে সোজা রুহুল আমিনকে দেখতে তার কেবিনের সামনে গিয়ে হাজির হলো প্রভা। বাইরে থেকে সে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেল। আবির নিজের হাতে রুহুল আমিনের পাশে বসে তার হাত-পা ডলে দিচ্ছে৷ তার জন্য চোখের জলও ফেলছে। এসব দেখে প্রভার মন আবিরের প্রতি আরো কোমল হতে থাকে। প্রভা ভাবে আজ রায়ান বেঁচে থাকত হয়তো সেও এভাবেই নিজের বাবার সেবা করত। আবিরের প্রতি তার এতদিনের ধারণা এখন ভুল মনে হতে থাকে। তার মনে হয়, সত্যি হয়তো আবির অতীতের জন্য অনুতপ্ত। তাই হয়তো সে এখন রুহুল আমিনের সেবা করছে এভাবে। প্রভা কেবিনে প্রবেশ করে। রুহুল আমিনের পাশে গিয়ে বলে,”আপনি এখন ঠিক আছেন আঙ্কেল?”
রুহুল আমিন অসুস্থতার মাঝেও স্মিত হেসে বলেন,”পরিস্থিতি আর আমায় কই ঠিক থাকতে দিচ্ছে মা। যতবার আমার মনে পড়ে আমার ছেলের শেষ ইচ্ছাটা অপূর্ণই থেকে যাবে ততবার আমার বুক কেপে ওঠে। মৃত্যুর পর ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াব কিভাবে?”
প্রভা চুপ হয়ে থাকে। কিছু বলার নেই তার। আবির বলে ওঠে,”আঙ্কেল, কারো ওপর জোর করার অধিকার তো আমাদের নেই। আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। এতে আপনার শরীর আরো খারাপ হবে।”
প্রভা রুহুল আমিনের পাশে বসে। তার হাতটা ধরে আশ্বাসের সুরে বলে,”আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। রায়ানের শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকবে না। আমি আবিরকে বিয়ে করতে রাজি আছি।”
প্রভার মুখে এই কথা শুনে আবিরের মনে যেন লাড্ডু ফোটে। সে মনে মনে বলে,”অবশেষে প্রভাকেও আমি তোর কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নিতে পেরেছি রায়ান। তোর সবকিছুই এখন আমার।”
রুহুল আমিন প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানি, তুমি রায়ানকে অনেক ভালোবাসো৷ হয়তো সারাজীবনই এমন ভালোবেসে যাবে। তবে তোমার কাছে একটাই অনুরোধ। এই হতভাগা আবিরকে একটু ভালোবাসা দিও। ছেলেটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল।”
প্রভা এর প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। কারণ তার পক্ষে রায়ান ছাড়া অন্য আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।
~~~~
আবির সেদিনই প্রেস কনফারেন্স ডাকল। প্রেস কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল রুহুল আমিনের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে অবগত করা। কিন্তু আবির মূলত তার আর প্রভার বিয়ের ব্যাপারটাকেই হাইলাইট করেছে। যাতে প্রভা আর এরপর চাইলেও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সহজে পিছিয়ে আসতে না পারে। সব নিউজ চ্যানেলেই এই নিউজটা চর্চিত হয় যে, চট্টগ্রামের এমপি আবির হোসেন বিয়ে করতে চলেছেন ডা:প্রভা আহসান কে।
এইদিকে প্রভা উদাস মনে হাসপাতালের করিডোরে বসে রয়েছে। হঠাৎ করেই ভীষণ মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছে সে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যে মানুষকে কতটা অসহায় করে দিতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ এখন সে নিজেই। প্রভা চোখ বন্ধ করল। এমতাবস্থায় সে শুধু রায়ানকেই দেখল পেল। এমন সময় হঠাৎ কারো ডাকে তার ঘোর ফিরল। একজন নার্স এসে তাকে বলল,”ম্যাম আপনাকে ইমিডিয়েটলি অটিতে যেতে হবে।”
“হুম যাচ্ছি।”
প্রভা উঠে বসে। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য সে দায়িত্বে অবহেলা কিছুতেই করতে পারে না। তাই সে নিজের মন খারাপ পাশ কাটিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ করেই ডা:খানের কেবিনের সামনে এসে তার মনে হলো ভেতরে যেন কোন ঝামেলা হচ্ছে। ডা: খানই রুহুল আমিনের চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন। প্রভা কৌতুহল বশত সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লো। তখনই ডা:খানের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন নার্স সুমি। তাকে ভীষণ ভীত লাগছিল। সুমি চলে যেতে নিলে প্রভা তাকে দাঁড় করালো। সুমি দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রভা তার কাছে গিয়ে বলল,”ভেতরে কিসের ঝামেলা লেগেছে?”
“কি…কিছু না।”
“সত্যি করে বলো।”
সুমির সাথে প্রভার বেশ ভালো সম্পর্ক। প্রভাকে বেশ সম্মানও করে সুমি। নার্সদের মধ্যে সেই বেশ অন্যরকম, প্রতিবাদী স্বভাবের। সুমি এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রভার কাছে এসে বলে,”জানেন ম্যাম, মিস্টার রুহুল আমিনের কেস নিয়ে আমার কিছু সন্দেহ আছে। আমি একজন নার্স হওয়ায় আমারও ওষুধ সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে। রুহুল আমিনকে যেসব ওষুধ খাওয়ানো আছে তার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন ভেজাল আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি ডা:খান প্রেসকিপশনে যেসব ওষুধ লিখে দিচ্ছে তা একজন শ্বাসকষ্ট রোগীর আরোগ্যের জন্য নয় বরং এসব খেলে শ্বাসকষ্ট আরো বাড়তে পারে।”
“এসব কি বলছ তুমি সুমি?”
“আমি একদম ঠিক বলছি।”
“কিন্তু ডাক্তার খান কেন এমন করবেন হঠাৎ? উনি তো এই হাসপাতালের অনেক পুরাতন একজন ডাক্তার।”
“সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে আমি এমপি মহোদয়ের সাথে ওনাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুনেছি।”
“আবির!!”
সুমি বলে,”আমি একজন সাধারণ নার্স। এত বড় মানুষদের সাথে লড়তে পারব না। তাই এই বিষয়ে আর কোন সাহায্য করতে বলবেন না প্লিজ।”
বলেই সুমি চলে যায়। প্রভা সুমির বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। তার মনে সন্দেহ দানা বাধে। প্রভা মনে মনে বলে,”তাহলে কি আবিরের এসব ভালোমানুষির পেছনে গভীর কোন চক্রান্ত লুকিয়ে আছে? আমাকে সবটা জানতেই হবে। আমি আঙ্কেলের কোন ক্ষতিই হতে দেবো না।”
to be continue…
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_18
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা আজ বাড়িতে ফিরল উদাস মনে। তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা। যা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না মোটেই। আবিরের প্রতি তার সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। তাই সব সত্য প্রভাকে বের করতে হবে। আর সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
এদিকে প্রভা বাড়িতে আসতেই দেখল তার বাবা-মায়ের খুশি মন। প্রজ্ঞা বেগম এগিয়ে এসে প্রভার মাথায় হাত রেখে বললেন,”তাহলে শেষমেষ আল্লাহ তোকে সুবুদ্ধি দিলো। এখন তুই বিয়ে করে সংসারী হলেই আমি আর তোর বাবা নিশ্চিত নই।”
প্রভা মলিন হাসল শুধু। আকরাম খান নিজের মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”বিয়ের পর দেখবি তুই অনেক সুখী হবি। অতীত আর ফিরে আসবে না তোর জীবনে।”
প্রভা এসব কথায় মনযোগ দিল না। তার এখন আবিরের ব্যাপারে জানতে হবে। আর এই জন্য সে একটা পন্থা বেছে নিলো। প্রভা আবিরের ব্যাপারে ইন্টারনেটে সার্চ করল। এতে অবশ্য তার নামে ভালো ভালো নিউজই সামনে এলো। কোথাও গরীবদেরকে বস্ত্র বিতরণ করছে তো কোন অনাথ আশ্রমে দান খয়রাতি করছে। এসব দেখে প্রভার মনে হলো,”একটা মানুষ কি সত্যিই এত সুন্দর নাটক করতে পারে? সমাজের সামনে এতটাও ভালো সেজে থাকা যায়? এমন একজন মানুষ যখন জনপ্রতিনিধি হয় তখন তো সেই এলাকার মানুষ কিছুতেই সেফ থাকে না। আমাকে এসব ব্যাপারে আরো খোঁজ নিতে হবে।”
হঠাৎ করেই একটা নিউজে প্রভার চোখ আটকে গেল। নিউজে প্রভা দেখল সেখানে লেখা,”ড্রাগ ডিলিং এর কেসে জড়িত হিসেবে সন্দেহ করাচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য আবির হোসেনকে।”
প্রভা আরো বিস্তারিত নিউজ পড়ল। সেখান থেকেই সে বুঝল কেসটা নিয়ে পড়ে আর কথা হয়নি৷ তার মানে এই কেসটাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।হয়ত নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই এটা করেছে আবির। প্রভা নিউজটার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলল,”যতই মুখোশ পড়ে থাকুন না কেন মিস্টার আবির হোসেন, আপনি যে কেমন মানুষ সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। এবার শুধু আপনার বিরুদ্ধ কোন প্রমাণ চাই আমার।”
~~~~~
পর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রভা দেখল তার মা-বাবাকে ভীষণ ব্যস্ত লাগল। প্রভা এসব দেখে জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে? তোমাদের এমন দেখাচ্ছে কেন?”
আকরাম খান হেসে বলেন,”আমাদের মেয়ের এনগেজমেন্ট বলে কথা। আমাদের তো একটু ব্যস্ত হতেই হবে। কত গেস্টদের দাওয়াত দিতে হবে।”
প্রভা হতবাক হয়ে বলে,”এনগেজমেন্ট মানে?”
“মিস্টার রুহুল আমিন তো আজ কল করেছিল। উনিই তো বললেন আজ তোর আর আবিরের এনগেজমেন্ট করাতে চান।”
“এভাবে হঠাৎ করে…”
“ওনারা নেতা-ফেতা মানুষ। অনেক ব্যস্ত থাকেন। এখন হয়তো ফ্রি আছেন তাই তাড়াহুড়ো করে এনগেজমেন্ট টা করিয়ে দিতে চাইছেন।”
প্রভা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। না আবিরের মতো একজন মানু্ষকে সে কিছুতেই নিজের জীবনে জড়াবে না। তাই তাকে যা করতে হবে দ্রুততার সাথেই করতে হবে। এই ভাবনা নিয়েই সে বাড়ি থেকে বের হতে নিলো। এমন সময় প্রজ্ঞা বেগম তার পথ আটকে বললো,”তুই এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস? আজ তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।”
“আমাকে যেতেই হবে মা। আমার খুব জরুরি কাজ আছে।”
এই বলে আর কোন কথা শুনেই প্রভা চলে গেল। প্রজ্ঞা বেগম হতাশ হয়ে চেয়ে রইলেন শুধু।
এদিকে প্রভা রুহুল আমিনের সাথে দেখা করতে এসেছে। আজ সকালেই রুহুল আমিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছেন। আবির তখন বাড়িতে ছিল না। প্রভাকে দেখেই রুহুল আমিন বললেন,”প্রভা মা, তুমি এসেছ।”
“হ্যাঁ, আঙ্কেল। শুনলাম আপনি নাকি আজ আমাদের এনগেজমেন্ট করাবেন বলে ভেবেছেন।”
“ঠিক শুনেছ। আসলে আমার শারীরিক অবস্থা তো বুঝতেই পারছ। আর ক’দিন বাঁচি না মরি তার তো কোন ঠিক নেই। এই জন্য আমি চাচ্ছি আমার জীবনদ্দশাতেই তোমাদের বিয়েটা হোক। এখন আপাতত এনগেজমেন্ট টা করাই। এরপর সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থাও করাব খুব শীঘ্রই।”
“মিস্টার আবির কি বাড়িতে আছেন?”
“না, ও কিছু জরুরি কাজে বাইরে গেছে।”
প্রভা মনে মনে বলে,”এটাই সঠিক সুযোগ। আমাকে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে হবে।”
প্রভা রুহুল আমিনকে বলে,”আঙ্কেল আপনার শ্বাসকষ্টের ওষুধটা একটু দেখতে পারি?”
রুহুল আমিন প্রভাকে ইশারা করে দেখাল। প্রভা ওষুধটা হাতে নিয়ে দেখল। আর বিড়বিড় করে বলল,”ওষুধটা তো ঠিকই আছে। তাহলে…আমায় এই ওষুধ পরীক্ষা করে দেখাতে হবে যে এখানে কোন ক্ষতিকর কিছু মেশানো আছে কিনা।”
প্রভা ওষুধের কিছু অংশ সুকৌশলে নিজের সাথে একটা বোতলে ভড়ে নেয়৷ অতঃপর রুহুল আমিনকে বলে,”আঙ্কেল, আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আমি আসছি। আজ তো আবার দেখা হবেই।”
“আচ্ছা মা, সাবধানে যেও।”
প্রভা ওষুধের স্যাম্পল নিজের সাথে এনেছে৷ এখন তার উদ্দ্যেশ্য এই স্যাম্পল টা ল্যাবে টেস্ট করাতে হবে৷ তারপর যেই রেজাল্ট আসবে সেটা দেখেই সে আবিরের আসল রূপ সবার সামনে আনতে পারবে।
~~~~~
তখন সন্ধ্যাবেলা। আবির ও প্রভার এনগেজমেন্টের আয়োজন তখন করা শেষ। এখন সবাই শুধু প্রভার আসার জন্যই অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রভার আশার কোন কথা নেই। এদিকে রুহুল আমিনও নিজের রুম থেকে বের হন নি এখনো। প্রজ্ঞা বেগম রাগে গজগজ করছেন। নিজের স্বামীকে তিনি বলছেন,”দেখো তোমার মেয়ের কাণ্ড। এদিকে সকল গেস্ট এসে উপস্থিত হয়েছে আর ওনার কোন পাত্তাই নেই।”
আকরাম খান বলেন,”তুমি কোন চিন্তা করো না তো৷ ওর সময় হলে ও ঠিকই চলে আসবে। হয়তো কোন কাজে আটকে পড়েছে।”
আবির এগিয়ে এসে তাদেরকে বলল,”আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি প্রভাকে আনতে ওর হাসপাতালে পৌঁছে যাচ্ছি।”
আবির বেরিয়ে পড়ে। প্রভার হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রভা তখনই হাসপাতাল থেকে বের হয়। আবির প্রভাকে দেখে বলে,”এসো। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”
প্রভা আবিরের কথা মতো চুপচাপ তার গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়িতে চলার পথে আবির অনেক কথা বলে। প্রভা শুধু হু হা করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ প্রভার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনটা হাতে নেয়। রিপোর্ট এসে গেছে। প্রভা যা সন্দেহ করেছিল তাই ঠিক৷ রুহুল আমিনের ওষুধে ভেজাল আছে।
প্রভাকে ফোনে ব্যস্ত দেখে আবির বলে,”এত মনযোগ দিয়ে কি দেখছ?”
প্রভা স্বাভাবিক ভাবে বলে,”তেমন কিছু না।”
আবির বাকা হাসে৷ হঠাৎ অন্ধকার একটা স্থানে গাড়ি থামিয়ে বলে,”আমাকে এতটা বোকা ভেবো না প্রভা। তুমি হয়তো জানো না রুহুল আমিনের রুমে আমি সিসিটিভি লাগিয়ে রেখেছি। তাই ওনার রুমে কখন কি হচ্ছে তার সবকিছুই আমি চাক্ষুস দেখতে পাই।”
প্রভা বুঝতে পারল সে যে রুহুল আমিনের রুম থেকে ওষুধের স্যাম্পল টেস্ট করার জন্য নিয়েছে সেটা আবির বুঝতে পেরেছে। তাই সে আর ভনিতা না করেই বলে,”আপনি এত বড় বেঈমান কি করে হতে পারলেন আবির ভাইয়া? যে মানুষটা আপনাকে নিজের ছেলের মতো দেখল আপনি তারই ক্ষতি করতে চাইছেন। আপনার মধ্যে কি একটুও মনুষ্যত্ব নেই?”
“না নেই আমার মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব। আমি যে কতটা অমানুষ হতে পারি সেই সম্পর্কে তোর কোন ধারণা নেই৷ যদি নিজের ভালো চাস তো আমার কথা মেনে নে। সব কথা গোপন রেখে আমায় বিয়ে করে নে। আমি তোকে অনেক সুখী রাখব। একদম রাজরানী করে রাখব।”
“আপনার মতো একজন খারাপ মানুষকে বিয়ে করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবোনা।”
“বুঝতে পেরেছি তুই ভালো কথায় মানবি না। এবার দেখ তোর আমি কি হাল করি।”
বলেই আবির প্রভাকে টেনে গাড়ি থেকে নামাল। তারপর পাশেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গেল প্রভাকে। তাকে মেঝেতে ফেলে বললো,”ভালো কথার মানুষ তুই না। রাজরানী হতে যখন চাস না তখন আর কি। আজ এখানেই তোকে ভোগ করে মে*রে ফেলে রেখে চলে যাব। কেউ টেরও পাবেনা।”
বলেই আবির প্রভার শাড়ির আঁচল ধরে টানতে থাকে। প্রভা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকে। সাথে চিৎকার করে সাহায্যর জন্য। আবির বলে,”এখানে কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না। আজ আমি এখানেই তোকে মে&*রে পুতে রাখব।”
বলেই প্রভার শাড়ি টেনে খুলে আবির৷ প্রভার পড়নে তখন শুধু পেডিকোট আর ব্লাউজ। সে নিজের সম্ভ্রম বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। শাড়িটা কোনরকমে তুলে নিজেকে আবৃত করার চেষ্টা।
to be continue…