একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১৩+১৪

0
359

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_13
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ানের ডাক শুনে তার দিকে তাকায় আবির ও প্রভা দুজনেই। রায়ান ছুটে এসে আবিরের শার্টের কলার ধরে বলে,”তোর এত বড় সাহস! তুই আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়াস। তোকে আমি নিজের বন্ধু ভাবতাম আর তুই…”

আবির নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”বন্ধুত্বর কথা ভেবেই আমি এতদিন দূরে ছিলাম। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব নয়। আমি প্রভাকে ভালোবাসি আর ওকে নিজের করেই নেব। তার জন্য যদি আমাকে তোর সাথে ফাইট করতে হয় আমি তাতেও রাজি আছি।”

রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমিও তো আবিরকে পছন্দ করো তাই না? এই জন্যই তো আমাকে কিছু না বলে চলে এলে তখন। কিন্তু শুনে রেখ,আমি রায়ান। ছোটবেলা থেকেই আমি বড্ড জেদি। একবার যেটা চাই সেটা যে করেই হোক আদায় করেই নেই। আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি সাধাসিধা মেয়ে। আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দেব না। তুমি শুধু আমার হবে শুধু আমার।”

এটা বলেই সে আবিরকে বলে,”আয় আমার সাথে ফাইট কর। যে জিতবে সেই প্রভাকে পাবে ”

আবিরও বলে,”ঠিক আছে। আমি তৈরি।”

প্রভা তাদের থামানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তারা প্রভার কোন কথা শুনছিলই না। প্রভা আর কোন উপায় না পেয়ে চিৎকার করে লোক ডাকতে থাকে। কিন্তু তার ডাক শুনে কেউ এগিয়ে আসে না। প্রভা রায়ানকে বলে,”আমার কথা শুনুন। আমার মতামতটা নিন। আমি কোন পণ্য নই যে আমাকে পাওয়ার জন্য আপনারা এমন ফাইট করবেন। আমার মতামতটা শুনুন।”

রায়ান প্রভার ডায়েরি পড়ে ভেবে নিয়েছে সে আবিরকেই বেছে নেবে। তাই সে প্রভার কথা শুনতে চায় না। রায়ান অনবরত আবিরকে মা*রতে থাকে। আবির কিছুতেই রায়ানের সাথে পেরে ওঠে না। রায়ান ঘু’ষি মে’রে তার নাক-মুখ ফা’টিয়ে দেয়। আবির ও রায়ান ফাইট করতে করতে পার্ক সংলগ্ন রোডে চলে যায়। প্রভার ভয় বাড়তে থাকে। রাস্তায় প্রতিনিয়ত গাড়ি ঘোড়া যাতায়াত করছে। যেকোন সময় যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই প্রভা ছুটে গেল ওদের সরিয়ে আনতে। এরইমধ্যে রায়ান ও আবির মাঝ রাস্তার মধ্যে চলে গেল। বিপরীত দিক থেকে দ্রুতবেগে একটি ট্রাক ছুটে আসতে থাকে। ট্রাকটিকে দেখে নেয় রায়ান। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাক অনেক কাছে চলে আসে। আবির তখনো সেদিকে নজর দেয়নি৷ রায়ান আবিরকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। কিন্তু নিজে ট্রাকের সামনে পড়ে যায়। প্রভা এটা থেকে চিৎকার করে বলে ওঠে,”রায়ান ভাইয়া!”

আবিরও পুরো ঘটনায় বোকে বনে যায়। রায়ান ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে পড়ে যায়। রাস্তা রক্তাক্ত হয়ে যায় রায়ানের লাল রক্তে। প্রভা হতভম্ব। এক মুহুর্তের মধ্যে এসব কি হয়ে গেল! সে দৌড়ে ছুটে যায় রায়ানের দিকে। রায়ান নিভু নিভু চোখে প্রভাকে দেখে। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। প্রভা রায়ানের পাশে বসে পড়ে। আবিরও ছুটে আসে রায়ানের দিকে। প্রভা রায়ানকে বলল,”এটা কি করলে তুমি?”

রায়ান শ্বাস টেনে বলে,”আমি জানি প্রভা তুমি আবিরকে ভালোবাসো। আবিরের কিছু হয়ে গেলে তুমি যে আমায় ক্ষমা করতে পারতে না। তাই আমি আবিরকে বাঁচিয়ে দিলাম। তোমরা সুখী হয়ো। তোমাদের সুখী দেখলেই আমি শান্তি পাবো৷”

এই বলে সে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি প্রভাকে তোর হাতে তুলে দিলাম। তুই জিতে গেলি বন্ধু। ওর খেয়াল রাখিস।”

এটুকু বলে রায়ান আবারো তাকায় প্রভার দিকে। আর বলে,”তোমাকে আমি সত্যি ভীষণ ভালোবেসেছিলাম প্রভা। তোমার দিকে তাকিয়েই আমি বিদায় নিতে চাই…”

এটুকু বলেই সে চোখ বন্ধ করে নেয়। প্রভা পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলে,”চোখ খুলুন রায়ান। আমি আবিরকে নয় আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্লিজ চোখ খুলুন।”

বলে অনবরত কাঁদতে লাগল সে। আবির মূর্তির মতো হয়ে গেছে। ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছে ছেলেটা। তার জন্যই সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।

ততক্ষণে রাস্তায় অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। সবাই মিলে রায়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

~~~~~~
রুহুল আমিন ছুটে ছুটে হাসপাতালে আসেন। স্ত্রীকে হারানোর পর তো তার ছেলেই তার একমাত্র আশ্রয়। এখন ছেলেকে হারালে তিনি একা কিভাবে থাকবেন। আসার পথে তিনি নিজের ছেলের আরোগ্য কামনা করতে থাকেন। হাসপাতালে এসেই ডাক্তারের মুখোমুখি হন। প্রশ্ন করেন,”আমার ছেলে..আমার রায়ান এখন কেমন আছে?”

ডাক্তার করুণ স্বরে বলেন,”আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।”

রুহুল আমিন পাথরের মতো শক্ত হয়ে যান। একেই নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে ছিলেন। তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল তার ছেলে। আর আজ সৃষ্টিকর্তা তার থেকে তার একমাত্র ছেলেকেও কেড়ে নিলেন। রুহুল আমিন হাহাকার শুরু করে দিলেন। বলতে লাগলেন,”কেন আল্লাহ কেন? কেন তুমি আমার সাথে এমন করলে?”

এদিকে প্রভা ও আবির হাসপাতালে এসে বসে আছে। তারা এখনো রায়ানের মৃত্যুর খবর পায়নি। সৌভিক আর অনুরাধাও ততক্ষণে ছুটে এসেছে। অনুরাধা আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয় প্রভা। কাঁদতে কাঁদতেই সে বলে,”আমি এটা মানতে পারছি না অনু। আমি এসব কিছুর জন্য দায়ী। আমার জন্যই আজ রায়ান ভাইয়ার এই অবস্থা। ওনার কোন ক্ষতি হয়ে গেলে আমি যে নিজেকে আর কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।”

আবিরও সৌভিককে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। অনুরাধা প্রভাকে শান্তনা দিয়ে বলে,”তুই চিন্তা করিস না। কিছু হবে না রায়ান ভাইয়ার। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এমন সময় একজন ডাক্তার চলে আসেন। তাকে দেখে প্রভা ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,”রায়ান চৌধুরী কেমন আছে এখন?”

“আপনারা হাসপাতালে আসতে অনেক দেরি করে দিয়েছেন। He is no more.”

প্রভার মাথায় যেন হঠাৎ আকাশ ভেঙে পড়ে। রায়ান আর নেই এই কথাটা তার বিশ্বাসই হতে চায় না। প্রভা কয়েকপা পিছোয়। তারপর কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে,”এটা হতে পারে না। রায়ান ভাইয়া এভাবে চলে যেতে পারেন না। উনি তো আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমি ওনাকে ভালোবাসি কিনা। আমার উত্তর না নিয়েই উনি এভাবে চলে যাবেন? ডাক্তার আপনি আমায় রায়ানের কাছে নিয়ে চলুন। আমি ওকে বলব যে আমি শুধু ওকে ভালোবাসি৷ অনেক অনেক ভালোবাসি।”

অনুরাধা প্রভাকে সামলে বলে,”প্রভা তুই সামলা নিজেকে। রায়ান ভাইয়া আর নেই।”

“চুপ কর তুই। রায়ান ভাইয়ার কিছু হয়নি৷ উনি আমার থেকে ভালোবাসার কথা জানতে চেয়েছিলেন। আমি এখনো ওনাকে বলতে পারিনি আমি ওনাকে কত ভালোবাসি। উনি এভাবে চলে যেতে পারেন না।”

আবির বলে,”এসব কিছু আমার জন্য হয়েছে। আমার জন্যই রায়ান নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। আমি এই গ্লানি নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে পারব না। আমিও নিজেকে শেষ করে দেব।”

বলেই সে ছাদের দিকে দৌড় দেয়৷ উদ্দ্যেশ্য ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবে। সৌভিকও যায় তার পিছু পিছু। এদিকে প্রভা নিজেকে দূর্বল অনুভব করে। নিজের রক্তভেজা জামা দেখে তার চোখের সামনে দূর্ঘটনার সময়টা ভেসে ওঠে। রায়ানের বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়ে। তার দিকে তাকিয়ে রায়ানের শেষ হাসির কথা মনে পড়ে। এর মাঝে সে রায়ানকে কল্পনা করে। রায়ান যেন তার সামনে এসে বলছে,”আমি চলে যাচ্ছি প্রভা। তুমি আবিরকে নিয়ে সুখী হও।”

প্রভা বলে ওঠে,”আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না। আপনাকে ছাড়া আমি সুখী হতে পারব না রায়ান ভাইয়া। আমার সুখ তো আপনার সাথেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। আজীবনের জন্য আমার জীবনটাকে জাহান্নাম করে যাবেন না।”

বলেই সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। রায়ানের কথা ভাবতে থাকে। “আমাকেও নিয়ে যান রায়ান ভাইয়া। আপনাকে ছাড়া একটা জীবন আমি কাঁটাতে পারব না।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_14
#ইয়াসমিন_খন্দকার

বর্তমানে,

প্রভা হাতে একটা কফি মাগ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাসার বেলকনিতে। কাল সারারাত জেগে সে অতীতের স্মৃতিচারণ করছিল। মনে করছিল রায়ানকে। তার সঙ্গে উপভোগ করা সুন্দর সময়গুলো। সাথে মনে পড়ছিল কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতিও। যা তাকে দুঃখের উপলব্ধি করিয়েছে। প্রভা ভাবতে থাকে রায়ানের মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলো। সেদিন আবির আত্মহ**ত্যার চেষ্টা করলেও সৌভিক তাকে রক্ষা করে। কিন্তু আবিরের মানসিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়৷ রুহুল আমিন আবিরের এই অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়ায়। আবিরের মা-বাবা কেউ বেচে ছিলেন না। সে নিজের মামার বাড়িতে থাকত। রুহুল আমিনও রায়ানকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েছিলেন। তাই তিনি আবিরকে দত্তক দেন। এরপর থেকে রায়ানের যায়গাটা আবিরকেই দিয়েছেন। নিজের ছেলের মতোন দেখেছেন আবিরকে। সমাজে সবাই আবিরকেই রুহুল আমিনের ছেলে বলে জানে। এমনকি রুহুল আমিন আবিরকেই তার পরবর্তীতে অত্র এলাকার এমপি করতে চেয়েছিলেন। এইজন্য নিজে না লড়ে বয়সের কথা বলে পিছিয়ে যান। আর নিজের বদলে আবিরকে ভোটে দাড় করান। রুহুল আমিনের এলাকায় অনেক সুনাম ছিল। তার দীর্ঘ শাসনামলে এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছিল এইজন্য সবাই তাকে অনেক শ্রদ্ধা থাকে। যেই কারণে তিনি যখন আবিরকে মনোনিত করেন তখন আবির ব্যাপক জনসমর্থন পায়। যেই কারণে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সে এমপি হয়।

প্রভা এসব ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। রুহুল আমিনের ছেলের যায়গা হয়তো আবির নিতে পেরেছে কিন্তু তার মনে আবির কোন যায়গা দখল করতে পারে না। প্রভা আজও শুধু আর শুধুমাত্র রায়ানকেই ভালোবাসে। রায়ানের মৃত্যুর পর ১২ বছর অতিবাহিত হয়েছে৷ এখনো প্রভার মনে অন্য কেউ রায়ানের যায়গা নিতে পারেনি। রায়ানের মৃত্যুর পর প্রভা অনেক ভেঙে পড়েছিল৷ তবে সে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছিল এইচএসসি পরীক্ষায়। কিন্তু সে সরকারি মেডিকেলে চান্স পায়নি৷ এরপর প্রভা কিরগিজস্তানে যায় এবং সেখানকার মেডিকেলেই অধ্যয়ন করে। সেখান থেকে মেডিকেলের পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই চাকরি নিয়েছিল প্রভা। সে আর চায়নি কখনো দেশে ফিরতে। রায়ানের স্মৃতি যে তাকে কষ্ট দিত। তবে নিজের মা-বাবার আকুল আবেদন সে ফেরাতে পারেনি। তাই একসময় দেশে ফিরতে হয়। কিন্তু দেশে ফেরার পর থেকে তারা যেভাবে বিয়ের জন্য বলছে আবার এখন আবির তাকে বিয়ে করার জন্য তার পেছনে পড়ে আছে এটা প্রভার ভালো লাগছে না। এইজন্য প্রভা আবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে আর দেশে থাকবে না। প্রভা কানাডার একটা মেডিকেলে এপ্লাই করেছে। এখন যদি সেখান থেকে ডাক আসে তো সে আবার কানাডায় চলে যাবে।

“ভেতরে আসব?”

নিজের মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় প্রভা। প্রজ্ঞা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, মা আসো। কিছু বলবা?”

“তুই নাকি কানাডায় যেতে চাইছিস?”

“কে বললো তোমায়? অনু?”

“সেটা বড় কথা নয় যে কে বলেছে। তুই কি মনে করেছিস বল তো?”

“আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছি। তোমরা যেভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ তাতে এছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।”

“তুই কেন বুঝতে পারছিস না?”

“আমি সবটাই বুঝতে পারছি। তোমরা আমার সুখের কথা ভেবেই এমন করছ। কিন্তু বিশ্বাস করো এতে আমার দুঃখ আরো বাড়ছে। কেন তোমরা আবার আমার অতীতকে আমাকে মনে করিয়ে দিলে? জানো ঐ আবিরকে দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা। আমি জানি আবির রায়ানকে খু** ন করেনি তবু আমার ওকে দেখলে মনে হয় ও রায়ানের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর আমার এই ভাবিনা ভুলও নয়। আর এমনিতেও আমি শুধু আবির জন্য বলছি না, অন্য কাউকেই আমি নিজের জীবনের সাথে জড়াতে পারব না।”

“তাই বলে আজীবন একা থাকবি?”

“৩০ টা বসন্ত তো একাই পার করলাম। বাকি জীবনটাও এভাবে চলে যাবে। তুমি ভেবো না। আমি একা থাকতে পারব।”

“ঠিক আছে। তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর। আমার বা তোর বাবার কথার তো কোন দাম নেই তোর কাছে। তাই আমরাও আর তোকে কিছু বলব না।”

প্রভা বুঝতে পারে তার মায়ের অভিমানটা। তবে সে কিছু বলে না। কখনো কখনো পরিস্থিতি মানুষকে অনেক স্বার্থপর বানিয়ে দেয়। প্রভাকেও হয়তো এভাবেই পরিস্থিতি একদম পরিবর্তন করে দিয়েছে। ১২ বছর আগের প্রভার সাথে বর্তমানের প্রভার তাই যেন কোন মিলও নেই।

~~~~~~
হোস্টেলে মুখোমুখি বসে আছে আবির ও প্রভা৷ মূলত আবিরের ডাকেই প্রভা আজ এখানে এসেছে। আবির প্রভার সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে চেয়েছিল আজ। আবির কিছু বলছেনা দেখে প্রভাই বলে,”কি জন্য আমায় ডেকেছিলেন বললেন না তো।”

“তুমি নাকি কানাডা যাচ্ছ?”

“আপনার কাছেও এই খবর চলে গেছে?”

“হ্যাঁ, শুনলাম। দেখো প্রভা তোমাকে আমি একটা কথা জানাতে চাই। তুমি হয়তো রায়ানের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী ভাবো এমনকি আমি নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে হীন্যমনতায় ভুগি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যদি জানতাম এমন কিছু হবে তাহলে সেদিন রায়ানের সাথে..”

“অতীত ঘেটে তো কোন লাভ নেই তাইনা? এখন এসব বলে আর কিছুই ঠিক হবে না।”

“তুমি অনেক বদলে গেছ প্রভা।”

“প্রত্যেকটা মানুষই সময়ের সাথে বদলায়।”

“এতটা না বদলালেও পারতে।”

“যদি কোন কাজের কথা থাকে তো বলুন আর নাহলে আমায় যেতে দিন।”

“তুমি এই বিয়েটায় রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

“সম্ভব নয়।”

“আমি এটা নিজের জন্য বলছি না প্রভা। বলছি রুহুল আমিন আঙ্কেলের জন্য। তুমি হয়তো জানো না উনি কতোটা অসুস্থ। ডাক্তার বলেছেন ওনার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। আর উনি যবে থেকে এটা জেনেছেন যে রায়ান মৃত্যুর আগে তোমাকে আর আমাকে সুখী দেখতে চেয়েছিল তখন থেকেই উনি আমাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন নিজের ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য। ইভেন বিশ্বাস করো আমিও শুরুতে এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু ওনার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই রাজি হয়েছি।”

“তাহলে আপনি এখন কি চান? আমিও এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাই?”

“তুমি তো রায়ানকে ভালোবাসতে প্রভা৷ তাই রায়ানের শেষ ইচ্ছার দাম তো তোমারও দেওয়া উচিৎ। তাছাড়া রায়ানের বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তো? একেই তো রায়ানের মৃত্যুর গ্লানি নিয়ে এত গুলো দিন বেঁচে আছ। এরপর যদি আঙ্কেলের কিছু হয় তাহলে তো…”

প্রভা একদম বরফের মতো জমে যায়। আবিরের একটা কথাও অযৌক্তিক নয়। প্রভা এই মুহুর্তে ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আদতে কি করবে সে? প্রভা ভাবল, এখন তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে আবিরকে বলল,”আমি ভেবে আপনাকে আমার সিদ্ধান্তটা জানাচ্ছি।”

এটুকু বলেই প্রভা উঠে চলে যায়৷ প্রভা যাওয়ার পর আবির হেসে বলে,”আমি জানি এবার তুমি রাজি হবেই। কারণ আমি তোমার দূর্বল যায়গাটায় আঘাত করেছি। তোমাকে পাওয়ার যুদ্ধে তাহলে আমি জিতেই গেলাম। রায়ান, তুই মরে গিয়ে আমার অনেক উপকার করে দিয়ে গেছিস দোস্ত। তুই মরেছিস জন্য তো আমি তোর যায়গায় স্থান পেয়েছি, রাজপুত্রর মতো জীবন অতিবাহিত করেছি, আজ এমপি হতে পেরেছি আর খুব শীঘ্রই প্রভাকেও পাব। তুই মরে আমার লাভই হয়েছে বল?”

বলেই অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল আবির।

to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে