একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১১+১২

0
408

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_11
#ইয়াসমিন_খন্দকার

বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। সময় যেন সবকিছু বদলে দেয়। সময়ের আবর্তনে এখন অনেক কিছুই ঠিক তেমনি বদলে গেছে। সৌভিক অনুরাধার সম্পর্ক যত দিন যায় গভীর হয়েছে। এদিকে প্রভার মনের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। একসময় আবিরের জন্য তার মনে অনুভূতি ছিল। কিন্তু এখন সেই সব অনুভূতি সরে গেছে রায়ানের দিকে। কারণ প্রভা তার প্রতি রায়ানের কেয়ার, দায়বদ্ধতা এসবে মুগ্ধ গেছে। যদিও সে রায়ানকে তার অনুভূতির কথা জানাতে পারে নি। কিন্তু আজ জানালো নিজের বান্ধবী অনুরাধাকে। সব শুনে তো অনুরাধা অনেক বেশি খুশি হয়ে গেল। প্রভাকে বলল,”তুই অনেক ভালো একজনকে বেছে নিয়েছিস প্রভা। প্রথমদিকে আমার রায়ান ভাইয়া, সৌভিক সবার সম্পর্কে খারাপ ধারণা ছিল। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি ওরা আসলে কত ভালো। তুই চাইলে আমি সৌভিককে বলব রায়ান ভাইকে তোর ব্যাপারে বলতে।”

প্রভা লজ্জা পেয়ে গিয়ে বলে,”তোর এমন করতে হবে না। সময় হলে আমি নিজেই গিয়ে বলব।”

এমন সময় সৌভিক চলে এলো সেখানে। এসেই অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অনুরাধাও হাসল তাকে দেখে। প্রভা তাদের দেখে চলে যেতে উদ্যত হলো। কারণ ইতিমধ্যেই সে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানে। শুধু প্রভা নয় কলেজের সবাই কমবেশি জানে। ঝগড়া দিয়ে শুরু হওয়া সম্পর্ক একটু বেশিই গভীর হয়। সৌভিক আর অনুরাধা কলেজে এত ক্লোজ থাকে যে তাদের বিষয়টা জানতে সবাইকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। প্রভাকে অবশ্য অনুরাধা নিজেই বলেছিল। প্রিয় বান্ধবী বলে কথা।

প্রভাকে চলে যেতে দেখে অনুরাধা বলে,”কোথায় যাচ্ছিস তুই? থাক না এখানে।”

প্রভা হেসে বললো,”তোরা একটু একান্তে সুন্দর সময় উপভোগ কর। আমি আসছি।”

অনুরাধা লজ্জা পেলো। সৌভিক এসে তার হাত ধরল। অনুরাধা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,”এভাবে হুটহাট হাত ধরো কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে?”

“আমি তো সারাজীবনের জন্য এই হাত ধরতে চাই। কে কি ভাবল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।”

বলেই অনুরাধার অনেক কাছে চলে এলো সৌভিক। অনুরাধা বলল,”আরে কি করছ?”

সৌভিক নেশাতুর কন্ঠে বলল,”আমার ঠোঁটে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তোমায় চুমু না খাওয়া পর্যন্ত এই উত্তেজনা কমবে না।”

অনুরাধা সৌভিকের শার্টের কলার ধরে টেনে তাকে কিস করতে থাকে। সৌভিকও তার সাথে তাল মেলায়। একসময় অনুরাধা একটু নিচে নেমে সৌভিকের গলায় কামড় খায়। সৌভিক মৃদু আর্তনাদ করে বলে,”এটা কি করলে?”

অনুরাধা বলল,”লাভ বাইট দিয়ে দিলাম। এটা তোমায় সবসময় আমার কথা মনে করিয়ে দেবে। আর যখন অন্য মেয়েরা তোমার পাশে ঘুরবে তখন তাদের এটা দেখাবে আর বুঝিয়ে দেবে যে তুমি সিঙ্গেল নও তোমার হবু বউ আছে।”

সৌভিক অনুরাধার কাধে হাত রেখে বলল,”ও এই ব্যাপার। তার মানে তুমি জেলাস?”

অনুরাধা রেগে বলল,”ঐ রিয়া নামের মেয়েটা সবসময় তোমার গায়ে পড়ে কেন? ঐ দেখ মেয়েটা এদিকেই আসছে। ওকে গিয়ে এই কামড়ের দাগটা দেখিয়ে বলো তোমার হবু বউ আছে। ও যেন তোমার থেকে দূরে থাকে।”

সৌভিক বলে,”এটা করা কি ঠিক হবে?”

“তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো। নাহলে ব্রেকআপ করে দেব।”

সৌভিক আর কোন উপায় খুঁজে পায় না। অনুরাধার কথামতো রিয়ার সামনে যায়। নিজের গলার কামড়ের দাগটা দেখিয়ে বলে,”এই দেখ, আমার হবু বৌ আমার ঘাড়ে লাভ বাইট দিয়েছে। তুমি প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকো। নাহলে আর কোথায় কোথায় লাভ বাইট দেবে সেটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে।”

রিয়া তখন কান্নার সুরে বলে,”ইটস ওকে। আমি অন্য কাউকে খুঁজে নেব।”

বলেই সে চলে যায়। অনুরাধা হেসে বলে,”এভাবেই সব সতীন কাটা দূর করতে হয়।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রভা যখন কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তখন হঠাৎ তার সামনে একটি গাড়ি এসে থামে প্রভা উৎসুক দৃষ্টিতে গাড়ির দিকে তাকায়। গাড়ি থেকে নেমে আসেন এলাকার এমপি রুহুল আমিন। প্রভা চেনে তাকে। ইনি তো রায়ানের বাবা। প্রভা তাকে দেখে সালাম দিয়ে বলে,”আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমি প্রভা না?”

“জ্বি, আঙ্কেল। কিছুদিন আগে কলেজের ফাংশনে আপনি এসেছিলেন। তখন রায়ান ভাইয়া আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।”

“হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আসলে আমি রায়ানের জন্যই এখানে এসেছি। রায়ান খুব অসুস্থ সেইজন্য আজ কলেজে আসতে পারেনি। ও তোমাকে দেখতে চাই।”

প্রভা উত্তেজিত হয়ে বলে,”কি হয়েছে রায়ান ভাইয়ার?”

“আরে তেমন কিছু হয়নি। সামান্য জ্বর হয়েছে। কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিল তো।”

প্রভার মনে পড়ে কাল বৃষ্টি হয়েছিল খুব। প্রভা ছাতা আনে নি জন্য রায়ান তাকে নিজের ছাতা দিয়েছিল এবং সে কিছুটা ভিজে গাড়িতে গিয়ে উঠেছিল। এজন্যই বোধহয় তার জ্বর এসেছে। প্রভার খুব খারাপ লাগে রায়ানের জন্য। ছেলেটা তার কথা ভাবতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই প্রভা আর সময় নষ্ট না করে রুহুল আমিনের সাথে যেতে রাজি হয়।

রুহুল আমিনের সাথে রায়ানদের বাড়িতে যায় প্রভা। পথে যেতে যেতে রুহুল আমিন রায়ানের ব্যাপারে প্রভাকে অনেক কথা বলেন। তিনি বলেন,”জানো রায়ান আমার অনেক আদরের সন্তান। আমার আর আমার স্ত্রীর বিয়ের দীর্ঘ ১২ বছর আমাদের কোন সন্তান হয়নি। তারপর আল্লাহর কাছে অনেক কান্নাকাটি করে আমরা রায়ানকে পাই। ও আমাদের নয়নের মণি ছিল। কিন্তু ওর যখন মাত্র ৪ বছর বয়স তখন ওর মা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। তারপর আমি রায়ানকে একা বড় করি। ও ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। তাই ওকে অনেক আদরে বড় করেছি, গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগতে দেই নি।”

রায়ানদের বাড়িতে এসে তার রুমে যায় প্রভা। রুহুল আমিনই তাকে নিয়ে যায়। তারপর রায়ানকে বলে,”দেখ রায়ান তোমার সাথে দেখা করতে কে এসেছে।”

রায়ান প্রভাকে দেখে অনেক খুশি হয়। প্রভা রায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আপনি এখন কেমন আছেন?”

রায়ান হেসে বলে,”এতক্ষণ অসুস্থ বোধ করছিলাম কিন্তু তুমি আসার পর নিজেকে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে।”

প্রভা এমন উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারবে না। কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলে,”ওষুধ খেয়েছেন?”

রায়ান হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। প্রভা বলে,”চিন্তা করবেন না। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।”

রায়ান আবারো হেসে বলে,”তুমিই তো আমার মেডিসিন। তোমাকে যখন দেখেছি তখন আমি নিশ্চয়ই সুস্থ হবো।”

রুহুল আমিনের সামনে এমন কথা বলায় প্রভা অনেক অস্বস্তিতে পড়ে। সে মুখ লুকানোর যায়গা খুঁজছিল। রুহুল আমিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রভার কাছে এসে বলে,”আমি কিছু মনে করিনি মা। ও তো অসুস্থ তাই এসব ভুলভাল বকছে।”

তারপর তিনি রায়ানকে বলেন,”তোমার তো ওকে দেখা হয়ে গেছে। তাহলে ওকে আমি ওর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি। নাহলে ওর পরিবারের লোকজন আবার চিন্তা করবে।”

রায়ান বলে,”হ্যাঁ, ওকে সাবধানে নিয়ে যেও। আর দেখবে ওর যেন কোন অসুবিধা হয় না।”

রুহুল আমিন রায়ানের কানে কানে বলে,”তুই চিন্তা করিস না বেটা৷ তোর বাপ তার বৌমাকে নিরাপদেই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

রায়ান এবার প্রাণখুলে হাসে যা দেখার মতো ছিল। এরপর সে প্রভাকে বলে,”সাবধানে পৌঁছে যেও। আমি এরপর কলেজে ফিরেই তোমাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবো।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_12
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা আজ কলেজে এসেছে অনুরাধার সাথে। দুজনের মনে আজ দু ধরণের চিন্তা। অনুরাধা ভাবছে আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী যার মানে ভালোবাসার দিন। আজকের দিনটা সৌভিকের সাথে কিভাবে উপভোগ করবে সেটাই ভাবছে সে। তার এই ভাবনার মাঝেই আবার পরিবার নিয়েও সমস্যা। পরিবারের লোক ইদানীং সন্দেহ করছে যে অনুরাধা তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, প্রভা ভাবছে সে কি করবে। রায়ান আজ তাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছে। কিন্তু কি সারপ্রাইজ দেবে সেটা প্রভা অনুধাবন কর‍তে পারছে না। প্রভা আর অনুরাধা কলেজে পৌঁছে গেল। আজ ক্লাসে যাওয়ার আগে রায়ানের সাথে দেখা হলো প্রভার। রায়ান প্রভাকে বলল,”ক্লাস শেষে অনুরাধাকে সাথে নিয়ে চলে এসো।”

প্রভার সেদিন ক্লাসে মনই বসলো না। ক্লাস শেষের পর প্রভা অনুরাধার সাথে যেতে লাগল। অনুরাধা প্রভাকে নিয়ে একটি পার্কে উপস্থিত হলো। অনুরাধা গেল সৌভিকের সাথে। আর প্রভা পড়ে রইলো রায়ানের সাথে। রায়ান প্রভাকে বলল,”তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রভা রায়ানের সাথে যেতে লাগলো।

~~~~~~~~~~
আবির কলেজে মনমরা হয়ে বসে আছে। তার মন মেজাজ আজ খুব খারাপ। কারণ রায়ান আজ তাকে বলেছে সে আজ প্রভাকে প্রপোজ করবে। যা শুনে আবিরের মনে আজ অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। আবিরের আজ খুব খারাপ লাগছে। সে বুঝতে পারছে প্রভার জন্য তার মনের অনুভূতি গাঢ় হচ্ছে। আবির নিজেই নিজের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”বন্ধুত্বের জন্য প্রেমকে বলিদান দেওয়ার আমার সিদ্ধান্ত বোধহয় ভুল ছিল। আমি এভাবে থাকতে পারছি না। প্রভাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়৷ না যাই হয়ে যাক আমি প্রভাকে এত সহজে হারাতে পারব না। প্রভাকে আমি অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে পারবো না। প্রভা শুধু আমার শুধুই আমার।”

এটা বলেই আবির উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো পার্কের দিকে আর বলতে লাগল,”রায়ান আমার বন্ধু হতে পারে। আমি জানি রায়ান আমার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে পারবে। কিন্তু আমি এতটা মহান হতে পারবো না। এতদিন তো মহান হওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু রায়ান কি সত্যিই আমার যায়গায় থাকলে এত মহানুভবতা দেখাতো? ও তো প্রভাকে নিজের করেই নিতো। তাহলে এবার আমি হাল ছাড়বো না। আমি চেষ্টা করবো। আমি ওকে নিজের করে নেব। রায়ানের সাথে কোন প্রতিযোগিতায় তো কোনদিন জিততে পারিনি। রূপের দিক থেকে ও আমার থেকে অনেক সুন্দর, পড়াশোনাতেও আমি ওর ধারের কাছে নেই। কিন্তু প্রভাকে পাওয়ার জন্য আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করব।”

এটা বলেই আবির নিজের পায়ের গতি বাড়ায়।

~~~~
প্রভা ও রায়ান একে অপরের পাশাপাশি হাটছে। কিন্তু দুজনের কেউই কোন কথা বলছে না। হঠাৎ করে রায়ান প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”প্রভা, এই দেখ এই পার্কে একটা আর্টিফিসিয়াল লেক আছে। এই লেকে নৌকাও আছে। তুমি কি আমার সাথে নৌকাতে চড়তে ইচ্ছুক?”

প্রভা কিছু বললো না৷ সামান্য সময় চুপ থেকে মাথা নাড়ালো। রায়ান নৌকায় উঠে বসলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো প্রভার দিকে। প্রভা রায়ানের হাত ধরে নৌকায় বসল। রায়ান হেসে বললো,”এখানে কোন নাবিক নেই৷ নিজেদেরই নৌকা চালাতে হবে৷ আমি আজ তোমার নাবিক হয়ে যাচ্ছি।”

খুশি হলো প্রভা। সামান্য হেসে বললো,”আমিও রাজি আছি আপনার যাত্রী হওয়ার জন্য।”

রায়ান নৌকা চালাতে শুরু করল। দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ বিরাজ করল পিনপিতন নীরবতা। রায়ান মাঝ রাস্তায় গিয়ে প্রভাকে বলল,”তোমার কি ভয় লাগছে?”

প্রভা বলল,”নাহ, ভয় লাগবে কেন? আমি ঠিক আছি।”

“যাক, শুনে একটু স্বস্তি পেলাম। আমাকে ভরসা করো তো?”

“হুম, করি।”

“আজ যেভাবে আমায় ভরসা করে নৌকায় উঠে বসলে এভাবে আমার হাত ধরে সারাটা জীবন পারি দিতে পারবে তো?”

প্রভা কোন উত্তর দিলো না। রায়ান প্রভার থেকে কোন উত্তর না পেয়ে বলে,”জানো, আজকের দিনটা সম্পর্কে? আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আমার কাছে অবশ্য মনে হয় ভালোবাসার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা থাকলে প্রতিটা দিনই ভালোবাসার জন্য পারফেক্ট। তবু আজকের দিনটাকেই আমি বেছে নিলাম।”

এরপর একটু থেমে সে বললো,”আমি তোমার জন্য একটা গান বানিয়েছি, নিজেই সেই গান সুর দিয়েছি। গানটা শুনবে তুমি?”

প্রভা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ-বোধক ইশারা করে। রায়ান তখন তার সাথে আনা গিটারটা হাতে তুলে নিয়ে বাজাতে শুরু করে। অতঃপর গান গাইতে শুরু করে,
“যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় তবে প্রেমিকা কোথায়
আর প্রেমই বা কোথায়?
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়।
তবে ইশারা কোথায়?
আর আশারা কোথায়?
যদি মিথ্যা মনে হয় সব পুরোনো কথা
তবে চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরূপায়।
লা লা লা লা লালা লালা লা
লালা লালা লালা লালা লালা লালা লা।”

গান শেষে রায়ান আবার তাকালো প্রভার দিকে। প্রভার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,”আমি তোমাত ভালোবাসি প্রভা। তুমি কি আমার প্রেমিকা হবে?”

প্রভা হচকচিয়ে যায়। সে এই মুহুর্তটার জন্য তৈরি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে কেন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। থতমত খেয়ে বলল,”আমি…”

রায়ান বুঝল প্রভা লজ্জা পাচ্ছে, হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে উঠেছে সে। প্রভার সময় দরকার। এইজন্য রায়ান প্রভাকে বলল,”আমি তোমায় তাড়াহুড়ো করে কোন ডিশিসন নিতে বলব না প্রভা। আমি তোমায় সময় দিচ্ছি। তুমি নিজে বোঝার চেষ্টা করো আমার প্রতি তোমার এমন কোন অনুভূতি আছে কিনা। নিজেকে সময় দাও। আশা করি তোমার সিদ্ধান্তে আমি বা তুমি কেউই নিরাশ হবো না। আর তোমার উত্তর যদি নাও হয় তবু আমি খুশি মনে তোমার সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেব। এখন বাকিটা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম।”

প্রভা চুপ করেই থাকলো। সময় গড়ালো। লেকের অপর প্রান্তে এসে রায়ান প্রভাকে বলল,”আমরা ঘাটে এসেছি।”

প্রভা তড়িঘড়ি করে নামল নৌকা থেকে। রায়ান প্রভাকে বলল,”আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।”

প্রভা কিছু না বলেই চলে যায়।

আবির দৌড়াতে দৌড়াতে পার্কের মধ্যে চলে এলো। দূর থেকেই সে দেখতে পেল প্রভাকে। দৌড়ে চলে এলো প্রভার কাছে। এসে প্রভাকে বললো,”তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”

প্রভা আবিরকে দেখে অবাক হলো খুব। বলল,”আবির ভাইয়া আপনি এখানে!”

“হ্যাঁ, আমি। তোমাকে কিছু বলতে চাই।”

~~~~~~~~~
রায়ান নৌকা থেকে ওঠার সময় লক্ষ্য করল প্রভা যাওয়ার সময় ব্যাগ ছেড়ে গেছে। রায়ান ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে বললো,”সাধাসিধা মেয়েটা এখনো সাধাসিধাই রয়ে গেল। ব্যাগটাও এখানে রেখে গেছে। যাই গিয়ে দিয়ে আসি।”

রায়ান উঠতে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করল প্রভার ব্যাগটা থেকে একটা ডায়েরি পড়ে গেল। রায়ান কৌতুহল বশত ডায়েরিটা তুলে নিলো। যদিও সে পড়তে চায়নি তবে ডায়েরিটা খুলে যাওয়ার কারণে তার চোখে কিছু লেখা দৃশ্যমান হলো যাতে তার চোখ আটকে গেল। রায়ানের চোখ আটকে গেল যে প্রভা তার ডায়েরিতে আবিরের নাম লিখেছে। রায়ান ভালো করে পড়ে দেখলো সেখানে লেখা,”আবির ভাইয়ার প্রতি আমার অনুভূতি দিন দিন তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে। আমি বুঝতে পারছি যে আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”

রায়ান হতভম্ব হয়ে গেল। তার ভালোবাসার মানুষটা কিনা তারই ভালো বন্ধুকে ভালোবাসে! রায়ানের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটিটাই সে সরে গেল। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারল না। মেজাজ হারিয়ে সে উঠে দাঁড়ালো। ডায়েরিটা আর পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করল না৷ পড়লে হয়তো জানতে পারত প্রভা এখন আর আবিরকে নয়। সে তাকেই ভালোবাসে। রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে রেগে প্রভার সাথে কথা বলার জন্য যেতে লাগল। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সে আবির আর প্রভাকে একসাথে দেখল৷ এতে তার মেজাজ আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। হুংকার দিয়ে বলে উঠল,”আবিররররর!!!”

to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে