#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_9
#ইয়াসমিন_খন্দকার
রায়ানের সাথে একটু দূরে আসে আবির। সে রায়ানকে প্রভার প্রতি তার অনুভূতির কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান তাকে বলল,”জানিস, তোকেও আমার কিছু বলার ছিল।”
“হ্যাঁ, বল।”
” না, আগে তুই বল।”
“আমার কথা পড়ে শুনিস আগে তুই বল।”
রায়ান ভাবল এবার সে আবিরকে সব বলবে। তাই সে বলা শুরু করল,”তুই তো আমাকে স্কুল থেকেই চিনিস আবির। তুই তো এটাও জানিস আমি জন্মগত সিঙ্গেল।”
“সেটা আর বলতে। তোর জন্য তো স্কুলে কত মেয়েই পাগল ছিল। প্রতিদিন কত শত লাভ লেটার পেতি। তাও তুই সিঙ্গেল।”
“এর কারণ আমি স্কুলে নিজের পছন্দ মতো কোন মেয়েকে খুঁজে পাইনি। আমার কাউকে দেখেই পছন্দ হয়নি। এজন্য। তবে কলেজে এসে ব্যাপারটা বদলে গেছে। কলেজে এসে আমি প্রথম দিনই একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি।”
“কি? সত্যি বলছিস তুই? তাহলে আমাকে এতদিন তার কথা বলিস নি কেন? কে সেই মেয়ে? কি হলো বল?”
“তুই তাকে চিনিস। সে আর কেউ নয় প্রভা।”
রায়ানের মুখে প্রভার নাম শুনে হচকচিয়ে গেল আবির। অনেক বড় ধাক্কা খেল সে। শেষপর্যন্ত কিনা তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু তার পছন্দের মেয়েকেই পছন্দ করল। আবির যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। আবিরের এমন ভাবনার মাঝেই রায়ান বলতে লাগল,”প্রথম দিন দেখাতেই আমি ঐ সাধাসিধা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি।”
রায়ানের কথা শুনে আবিরের অনেক কষ্ট হচ্ছিল। সে কিছু বলতেও পারছিল না। নিজের বন্ধুর মুখে এই কথা শোনার পর কিভাবে সে বলে যে সেও ঐ একই মেয়েকে পছন্দ করে। আবিরকে চুপ দেখে রায়ান বলে,”কিরে? তুই এমন চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল।”
আবিরের খুব কষ্ট হলেও সে নিজের কষ্ট লুকিয়ে হেসে বলে,”তোদের একসাথে অনেক ভালো মানাবে। আমি তোদের জন্য অনেক খুশি।”
“হ্যাঁ, এখন শুধু প্রভাকে আমার মনের কথা জানানো বাকি।”
“তাড়াতাড়ি জানিয়ে দে। বেশি দেরি করলে সমস্যা হতে পারে।”
“আমিও সেটাই ভাবছিলাম যে তাড়াতাড়ি ওকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দেব। যাক গে সেসব কথা। তুই যে আমায় কিছু বলতে চাইছিলি সেটা বলবি না?”
আবির আমতাআমতা করে বলল,”আমার সেরকম জরুরি কিছু বলার ছিল না। আমি বলতে চাইছিলাম যে, অনেকদিন তো আমরা কোথাও ঘুরতে যাইনি তাই চল না আজ কোথাও থেকে গিয়ে ঘুরে আসি।”
রায়ান বলল,”হুম, মন্দ হয়না। চল রায়ানকেও আমাদের সাথে নিয়ে নেই।”
আবির রায়ানের সাথে যেতে লাগল আর মনে মনে বলল,”তোর ভালোবাসার জন্য আমি নিজের ভালোবাসার কোরবানি দিয়ে দিলাম বন্ধু। তুই ভালো থাক, সুখে থাক। আমার কাছে ভালোবাসার থেকে বন্ধুত্বটাই বড়। আমি জানি, আমার যায়গায় থাকলে তুইও এই কাজই করতি। এখন শুধু আমি এটাই চাইব যে তোরা সুখে থাক। আমার দুঃখের বিনিময়ে হলেও তোরা সুখে থাক।”
~~~~~
বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। ক’দিন থেকে প্রভা খেয়াল করছে আবির কেমন যেন তাকে ইগ্নোর করছে। আগে যখন আবিরের সাথে তার দেখা হত তখন আবির হেসে কথা বলত। কিংবা কথা বলা না হলেও তার দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যেত। কিন্তু ইদানীং দেখা হলে সে অচেনার মতো ভান করে চলে যায়। এই ব্যাপারটা প্রভাকে অনেক মর্মাহত করেছে। তাই সে এই ব্যাপারে অনুরাধার সাথে কথা বলে। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”আমার মনে হয় আবির ভাইয়া কোন কারণে তোর উপর রাগ করেছে। তোর সরাসরি ওনার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা উচিৎ।”
“কিন্তু..”
“কোন কিন্তু না। তুই তো আবির ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে কেন এমন করছিস? তোকে তো আর আমি প্রপোজ করতে বলছিনা। তুই শুধু গিয়ে জানতে চাইবি উনি তোকে কেন এড়িয়ে চলছে। আর এখন তুই কথা না বললে ব্যাপারটা যদি আরো খারাপ হয়ে যায় তাহলে?”
প্রভা অনুরাধার কথায় যুক্তি খুঁজে পায়। তাই সে ঠিক করে নেয় আজ কলেজ ছুটির পর আবিরের সাথে কথা বলবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। আজ কলেজ ছুটির পর প্রভা আবিরের মুখোমুখি হলো। আবিরকে নিজের থেকে একটু দূরে দেখে সে বলল,”ভাইয়া, একটু থামুন। আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
আবির দাঁড়িয়ে যায়। প্রভা হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার কাছে গেলেও সে খুব রাগী স্বরে বিরক্তির ভঙ্গিমায় প্রভাকে বলে,”যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমার বেশি সময় নেই।”
“আপনি কি কোন কারণে আমার উপর রাগ করেছেন?”
“কেন আমি তোমার উপর রাগ করতে যাব কেন? কে হও তুমি আমার?”
“না, সেটা না। কিন্তু…”
“শোনো আমার সাথে এসব ন্যাকামো করতে এসো না। তোমাদের মেয়েদের এসব ন্যাকামো আমার সহ্য হয়না। ছেলেরা একটু হেসে কথা বললেই তোমরা অনেক কিছু ভেবে নাও তাইনা? আমার থেকে দূরে থাকবে। তোমাকে আমার একদম সহ্য হয়না। অসহ্য মেয়ে কোথাকার।”
প্রভা ফ্যালফ্যাল করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না আবির কেন তাকে এভাবে অপমান করছে। সে তো এমন কিছু বলে নি। আবির আবারো বলে,”আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে। গেট লস্ট।”
প্রভা কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায়। প্রভা যাওয়ার পর আবিরেরও অনেক খারাপ লাগে। আবির বলে,”সরি এসবের জন্য। আজকের পর তুমি নিশ্চয়ই আমায় ঘৃণা করবে। আর আমি এটাই চাই।”
প্রভা যখন কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই তার সাথে কারো ধাক্কা লাগে। প্রভা চোখ তুলে তাকাতেই রায়ানকে দেখতে পায়। রায়ান প্রভার চোখে জল দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। উদগ্রীব হয়ে জানতে চায়,”তুমি কাঁদছ কেন সাধাসিধা মেয়ে? কি হয়েছে তোমার?”
প্রভা কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিল। তখন রায়ান প্রভাকে আটকে বলে,”বলে যাও তুমি কাঁদছ কেন? কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে? আমাকে শুধু তার নাম বলো। যে তোমার চোখে জল এনেছে তাকে আমি ছাড়বো না।”
“কেউ কিছু বলেনি। আমার পার্সোনাল প্রব্লেম।”
রায়ান প্রভার মন ভালো করার জন্য বলে,”তুমি কি আমার সাথে পার্কে দেখতে যাবে? আমার কাছে দুটো টিকিট আছে।”
“না, আমার ভালো লাগছে না।”
“ভালো লাগছে না জন্যই তো তোমায় নিয়ে যেতে চাইছি। ওখানে গেলে দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে।”
প্রভা যেতে না চাইলেও রায়ানের জোরাজুরিতে সে রাজি হয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তারা অনেক আনন্দ করে। অনেক রাইডে চড়ে। রায়ান প্রভাকে তার পছন্দের ফুচকাসহ আরো অনেক খাবার খাওয়ায়। এসবের কারণে প্রভার মন ভালো হয়ে যায়। প্রভাকে খুশি দেখে রায়ানেরও অনেক ভালো লাগে।
রায়ান প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”এখন তুমি খুশি তো?”
প্রভা হ্যাঁ বললে রায়ানের অনেক ভালো লাগে। তার নিজেকে স্বার্থক মনে হয়। এরপর তারা দুজনে ফিরে যায়। যাওয়ার পথে প্রভার দেখা হয় অনুরাধার সাথে। প্রভা আর রায়ানকে একসাথে দেখে তো অনুরাধা অবাক হয়। রায়ান প্রভাকে অনুরাধার কাছে রেখে চলে যায়। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”তুই রায়ান ভাইয়ার সাথে কি করছিস? তোর তো আবির ভাইয়ার সাথে থাকার কথা ছিল।”
“ওনার নাম আর নিবি না আমার সামনে।”
“কেন? কি হয়েছে?”
প্রভা অনুরাধাকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে তো অনুরাধা অনেক রেগে যায়। বলে,”ঐ আবিরের বাচ্চাকে তো আমি গোবর জলে ডুবাবো। তোকে শুধুশুধু এত অপমান করল। আমি তো ওকে ভালো ভেবেছিলাম এখন দেখি ও জাত বজ্জাত। ওর থেকে তো সৌভিক আর রায়ান ভাইয়া অনেক ভালো। আমরাই মানুষ চিনতে ভুল করেছি।”
“আচ্ছা। বাদ দে এসব কথা। আজকের পর থেকে আমি ওনার থেকে দূরে থাকব। ওনার প্রতি সব অনুভূতিও মুছে ফেলার চেষ্টা করব।”
“এটাই ঠিক হবে। আর সামনে তো কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তুই এটায় মন দে। আমি নৃত্য দেব। তুই কিন্তু গান দিবি।”
“গান? আর আমি?”
“হ্যাঁ, নাটক করিস না তো। আমি জানি তুই অনেক ভালো গান জানিস।”
“আচ্ছা, ভেবে দেখব।”
to be continue…
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_10
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা আজ একাই কলেজে এসেছে কারণ অনুরাধা তার এক আত্মীয়র বিয়ের জন্য আজ কলেজে আসেনি। প্রভার অনুরাধা ছাড়া আর তেমন কোন বন্ধুবান্ধব না থাকায় সে আজ অনেক চুপচাপ ছিল। কলেজ ছুটির পর প্রভা যখন একা যাচ্ছিল তখন রায়ান তাকে দেখে ফেলে। প্রভাকে একা যেতে দেখে সে এগিয়ে এসে বলে,”কি হয়েছে সাধাসিধা মেয়ে? তুমি একা কেন? আজ তোমার বান্ধবী আসেনি?”
প্রভা সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়,”না, আসে নি।”
“তুমি একা যেতে পারবে তো?”
রায়ানের এমন প্রশ্নে প্রভা অবাক হয়। সে একটু সাধাসিধা হতে পারে কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে সে ছোট বাচ্চা যে সে একা কলেজে যেতে পারবে না। রায়ান প্রভাকে বলে,”তোমার সমস্যা হলে বলতে পারো। আমি তোমাকে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
প্রভা বলে,”আমি একাই যেতে পারব ভাইয়া। আপনাকে কষ্ট করে আমায় পৌঁছে দিতে হবে না।”
রায়ান আর কিছু বলে না। কিন্তু প্রভার জন্য তার চিন্তা হতে থাকে। তাই সে প্রভা বারণ করার পরও গোপনে প্রভার পিছু নেয়। প্রভা সেটা বুঝতে পারে না। রায়ানের সন্দেহই আজ সত্য হলো। প্রভাকে আজ কিছু শ*য়তান ছেলে ঘিরে ধরল মাঝ রাস্তায়। তারা প্রভাকে টিটকারি মে*রে বলল,”কোথায় যাচ্ছ সুন্দরী?”
প্রভা হঠাৎ করে খুব ভয় পেয়ে যায়। কয়েকটা ছেলে তার কাছে আসতে যাবে তখনই রায়ান সেখানে চলে আসে৷ সবাইকে হুংকার দিয়ে বলে,”যদি কেউ ওকে স্পর্শ করে তাহলে তার হাত আমি ভেঙে ফেলবো।”
প্রভা হতবাক হয়ে যায়। রায়ান সেই সব ছেলেকে মে*রে তাড়িয়ে দেয়। মা**রামারি করতে গিয়ে রায়ানের হাতে আঘাতের সৃষ্টি হয়। প্রভা সেটা লক্ষ্য করে বলে,”ভাইয়া আপনার হাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। আমার ব্যাগে ফাস্ট এইড আছে। আপনি একটু বসুন।”
রায়ান চুপচাপ প্রভার কথা শোনে। প্রভা রায়ানের হাতে ব্যান্ডেজ করার পর রায়ান প্রভাকে রাগী সুরে ধমকে বলে,”এইজন্য আমি তোমার সাথে আসতে চেয়েছিলাম। তুমি তো আমার কথা শুনলে না। দেখলে তো কত বড় বিপদ হতে যাচ্ছিল।”
প্রভা বলল,”তবুও তো আপনি আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন। আপনাকে ধন্যবাদ।”
“আমি আসলে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিস। ভাগ্যটা ভালো। নাহলে কি হতো বলো তো?”
“আমিও সেটাই ভাবছি।”
প্রভার কথা শুনে রায়ান বলে,”বাকি পথ আর তোমায় একা যেতে হবে না। চলো আমি তোমায় পৌঁছে দেব।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
~~~~~~~~~~~~~~~~
অনুরাধা আজ এসেছে তার খালাতো বোনের বিয়েতে। সে আজ বেশ খুশি। অনুরাধা তার কিছু কাজিনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদেরই মাঝে একজন বলে ওঠে,”আজ বিয়েতে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর সুন্দর ছেলে আসবে। আমরা সেখান থেকে নিজেদের বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নিতে পারব।”
আরো কিছু কাজিন তাদের তালে তাল মেলায়। কিন্তু অনুরাধা নিশ্চুপ ছিল। আজ হঠাৎ কেন জানি তার সৌভিকের কথা খুব মনে পড়ছে। অনুরাধা নিজেও বুঝতে পারছে না তার সাথে এসব কি হচ্ছে। তার কেন মনে পড়ছে সৌভিকের কথা? এরমাঝে অনুরাধার এক কাজিন তাকে অন্যমনস্ক দেখে বলে,”কিরে অনু? তুই এত চুপচাপ কেন?”
অনুরাধা বলে,”এমনি। আমার আসলে একটু রেস্ট দরকার। আমি রুমে যাচ্ছি।”
রাতের দিকে বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ এসে হাজির হয়। অনুরাধা তখনো ঘুমাচ্ছিল। অনুরাধার ছোট বোন অনুস্কা এসে তার ঘুম ভাঙায়। অনুরাধাকে বলে,”দিদি, তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ কেন? বর এসে গেছে তো। চলো গিয়ে দেখি।”
অনুরাধা দ্রুত উঠে বসে এবং নিজের বোনের সাথে বর দেখতে যায়। বর দেখতে গিয়ে তো অনুরাধা ভীষণ অবাক হয়। কারণ বরপত্রের মাঝে সৌভিকও ছিল। সৌভিকও অনুরাধাকে দেখে অনেক অবাক হয়। আসলে বর হলো সৌভিকের মামাতো ভাই। দুজনে একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।
~~~~
অনুরাধার এক কাজিনের কথায় সে অনেক বিরক্ত হচ্ছিল। কারণ সে তাকে বিয়েতে উপস্থিত বিভিন্ন ছেলের রূপের বর্ণনা দিচ্ছে। একটু পরেই সে সৌভিককে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে,”ঐ দেখ ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম। দেখে তো মনে হচ্ছে দারুণ।”
অনুরাধা মুখ বাকিয়ে বলে,”তোর রুচির তারিফ না করে পারছি না। এই ছেলের মধ্যে এমন কি পেলি? কেমন পাঠকাঠির মতো চেহারা।”
“আরে তুই অন্ধ নাকি? ভালো করে দেখ ছেলেটা কি সুদর্শন। আমি তো একেই প্রপোজ করব আজ।”
অনুরাধা খুব জেলাস হতে থাকে তার কাজিনের মুখে এমন কথা শুনে।
অন্যদিকে সৌভিককে তার চাচাতো ভাই অনুস্কাকে দেখিয়ে বলল,”দেখ সৌভিক ঐ মেয়েটা অনেক সুন্দরী না? আমার পাশে খুব মানাবে বল?”
সৌভিক অনুস্কাকে দেখে বলে,”কোথায় সুন্দরী? ঐ মেয়েটা তো একদম ভালো না। দেখেই কেমন ঝগড়ুটে ঝগড়ুটে লাগছে। তোর চয়েজ খুব খারাপ।”
“তুই কচু জানিস? মেয়েটাকে ভালো করে দেখ অনেক মিষ্টি দেখতে। আমার মা তো এমন মিষ্টি একটা মেয়েকেই তার বৌমা হিসেবে দেখতে চায়। তাই আমি ভাবছি মেয়েটার সাথে গিয়ে কথা বলব। ওর ফোন নম্বর নেব। তারপর…”
“এই থাম। বেশি আগানোর দরকার নেই। নাহলে আমি কাকাকে কিন্তু সব বলে দেব।”
“তুই এমন কেন রে?”
“আমি এমনই।”
“দেখবি তোর কপালে ডাইনি বউ জুটবে সৌভিক। যে তোকে জ্বালিয়ে মারবে, তোর রক্ত চুষে খাবে।”
সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,”তথাস্তু।”
বিয়ে সমাপ্ত হওয়ার পর সৌভিক অনুরাধার কাছে যায়। অনুরাধা একাই দাঁড়িয়ে ছিল। সৌভিককে নিজের দিকে আসতে দেখে হঠাৎ করেই অনুরাধার হৃদস্পন্দন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। সে নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত ভুলে যায়। সৌভিক অনুরাধার পাশে এসে বলে,”হ্যালো।”
“হ্যাঁ, দাদা কিছু বলবে?”
সৌভিক অনুরাধার মুখে দাদা ডাক শুনে খুব রেগে যায়। বলে,”তুমি আমাকে দাদা বলছ কেন? আমি তোমার কোন জন্মের দাদা?”
“এভাবে বিয়ে বাড়িতে আমি ঝগড়া করতে চাই না। আমার কোন জন্মের দাদা না হলেও তো তুমি আমার এই জন্মের সিনিয়র।”
“আগে তো কখনো সম্মান দেখিয়ে দাদা বলো নি। তাহলে আজ এমন কেন বলছ?”
অনুরাধা কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। সৌভিক অনুরাধাকে বলে,”আমি তো এখানে কিছুই চিনি না। আমাকে একটু ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দেবে?”
অনুরাধা বলে,”আমার সাথে আসুন।”
সৌভিক অনুরাধার পেছন পেছন যায়। একটু দূরে যেতেই সৌভিক হঠাৎ করে নিজের পেছন থেকে একটা গোপাল ফুল বের করে। অনুরাধার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। আর বলে,”আমি তোমায় ভালোবাসি অনুরাধা। তোমার এটা শুনে অদ্ভুত লাগতে পারে যে যেই ছেলেটা সবসময় তোমার সাথে ঝগড়া করে সে কিভাবে তোমার প্রেমে পড়ল। বিশ্বাস করো এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না। কখন কিভাবে তোমার প্রেমে পড়লাম এটা আমি বলতে পারব না। শুধু এটাই বলতে পারব যে আমি তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসো তো?”
অনুরাধা অনেক দুঃসাহসিক একটা কাজ করে ফেলে। সৌভিকের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে সে সরাসরি সৌভিককে কিস করতে শুরু করে। তাও আবার ঠোঁটে। সৌভিক অনুরাধার এমন আচরণে হতবাক হয়ে যায়। অনুরাধা সৌভিককে বলে,”তোমার ঠোঁটের স্বাদ অনেক মিষ্টি। আমি শুনেছিলাম, যখন আমরা কাউকে কিস পড়ার পর আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় তার মানে আমরা তাকে ভালোবাসি। এই জন্যই তোমাকে ভালোবাসি কিনা সেটা পরীক্ষা করে নিলাম। আর এর উত্তর হলো আমিও তোমায় ভালোবাসি।”
সৌভিক অনেক খুশি হয়। সে অনুরাধাকে নিজের অনেক কাছে টেনে নিয়ে কিস করতে থাকে। আর বলে,”আজ থেকে তুমি শুধু আমার।”
to be continue…