একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৭+৮

0
320

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_7
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ান প্রভাকে কোলে নিয়ে চলতে লাগল। অনেক খোঁজার পর রায়ান জঙ্গল থেকে বের হবার রাস্তা খুঁজে পেল এবং প্রভাকে নিয়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে এলো। তারপর কিছুদূর হেটে যেতেই তাদের সাথে দেখা হলো সৌভিক ও অনুরাধার। অনুরাধা প্রভাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। বলতে লাগল,”তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি প্রভা? জানিস তোর জন্য আমার কত চিন্তা হচ্ছিল।”

রায়ান রাগী স্বরে বলে,”এতই যদি চিন্তা হচ্ছিল তাহলে নিজের বান্ধবীর খেয়াল রাখো নি কেন? আজ যদি ওর বড় কোন বিপদ হয়ে যেত তাহলে এর দায় কে নিত?”

অনুরাধাও রেগে গেল রায়ানের এমন কথা শুনে। তেতে উঠে বলল,”আমার বান্ধবীকে নিয়ে তোমাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। আর তুমি ওকে কোলে নিয়েছ কেন? নামাও ওকে কোল থেকে।”

প্রভা বলল,”তুই চুপ কর অনু। উনি যা করেছেন আমার ভালোর জন্যই করেছেন। আমার পায়ে চোট লেগেছে।”

সৌভিক অনুরাধাকে বলল,”এই মেয়ে তুমি কি দিয়ে গড়া হ্যাঁ? আমার বন্ধু তোমাদের এত বড় উপকার করল আর তুমি ওকে ধন্যবাদ না দিয়ে কথা শোনাচ্ছ?”

অনুরাধা কিছু বলে না। সে সত্যিই অনেক লজ্জিত। আবিরও সেখানে চলে আসে। সে অন্য দিকে প্রভাকে খুঁজতে গিয়েছিল। প্রভাকে সুরক্ষিত দেখে আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,”থ্যাংকস গড। তুমি একদম ঠিক আছো।”

প্রভা আবিরের দিকে তাকায়। আবিরও তাকায় প্রভার দিকে। প্রভাকে এভাবে রায়ানের কোলে দেখে আবিরের মোটেও ভালো লাগে না।

~~~~~~
প্রভা টেন্টের মধ্যে রেস্ট নিচ্ছিল। তার পাশেই ছিল অনুরাধা। সে প্রভাকে অনেক কথা শোনাচ্ছিল এভাবে হুট করে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ার জন্য। কিন্তু প্রভা সেসব কথায় কান না দিয়ে আবিরের কথা ভাবতে থাকে। আবিরের চোখে সে নিজের জন্য আজ অনেক দুশ্চিন্তা দেখতে পেয়েছে। প্রভা বুঝতে পারে না এই দুশ্চিন্তার কারণ কি। এছাড়া আবিরের চোখমুখ দেখে সে এটাও বুঝেছে যে তাকে রায়ানের কোলে দেখে আবির মোটেও খুশি হয়নি। এইসব ব্যাপার প্রভাকে অনেক ভাবাচ্ছে। তাহলে কি আবিরও প্রভাকে পছন্দ করে?

অনুরাধা প্রভাকে চুপ থাকতে দেখে বলে,”তুই চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল।”

“আমি কিছু ভাবছি।”

“কি ভাবছিস তুই?”

“আজ আবির ভাইয়ার চোখে আমি আমার জন্য দুশ্চিন্তা দেখেছি।”

“সেটা তো আমিও দেখেছি। আজ তো আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে গেছি যে আবির ভাইয়া তোকে ভালোবাসেন। তোকে ঐ ছেলেটার কোলে দেখে কি পরিমাণ রেগে গিয়েছিল।”

“তুইও ব্যাপারটা খেয়াল করেছিস?”

“করেছি তো। আমার মনে হয় এবার তোকেই দুই পা আগাতে হবে। আবির ভাইয়ার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করতে হবে তোকে।”

প্রভা কিছু বলতে যাবে এমন সময় টেন্টের মধ্যে প্রবেশ করে রায়ান। তার হাতে একটা মলম। রায়ান এসে প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”তোমার পায়ের অবস্থা এখন কেমন?”

“জ্বি, আগের থেকে ভালো।”

রায়ান তার দিকে মলমটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই মলমটা পায়ে লাগিয়ে নাও সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এটুকু বলেই রায়ান বেরিয়ে যায়। রায়ান বেড়িয়ে যেতেই অনুরাধা বলে,”আচ্ছা, এই ছেলেটা তোর এত কেয়ার করছে কেন রে?”

প্রভা বলে,”আমার মনে হয় উনি খুব ভালো মনের মানুষ। তাই সবসময় আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন।”

“আমার কাছে তো ব্যাপারটা অন্যরকম লাগছে?”

“কিরকম?”

“আচ্ছা এই ছেলেটা তো আবির ভাইয়ার বন্ধু তাইনা?”

“হুম।”

“এবার আমি ব্যাপারটা বুঝলাম।”

“কি বুঝলি?”

“আবির ভাইয়াই বোধহয় ওকে পাঠিয়েছে তোকে এই মলমটা দেওয়ার জন্য।”

“তাই?”

“তা নয়তো কি? নাহলে ঐ ছেলের কি ঠ্যাকা তোর এত কেয়ার করার? আসলে আবির ভাইয়া অনেক লাজুক প্রকৃতির তো। তাই নিজে না এসে তার বন্ধুকে পাঠিয়েছে তোর সাহায্য করার জন্য। এভাবেই নিজের ভালোবাসার মানুষটার খেয়াল রাখছে।”

প্রভা ভাবতে থাকে অনুরাধার কথাই হয়তো ঠিক। নাহলে কেনই বা রায়ান তাকে শুধু শুধু সাহায্য করবে।

~~~~
প্রভা ও অনুরাধা বাইরে বের হয়। একটু পরেই তাদের স্কুলের সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করবে। তারপর হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাইরে এসেই প্রভাদের সাথে দেখা হয় আবিরের। আবির প্রভাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,”তুমি এখন কেমন আছ?”

“জ্বি, ভালো।”

“ওহ। নিজের খেয়াল রেখো।”

বলেই সুন্দর করে হাসি দেয়। প্রভা সেই হাসির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। অনুরাধা তাদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এদেরকে পাশাপাশি কত সুন্দর লাগে। একদম রাব নে বানা দে জোড়ি।”

অনুরাধার ঘোর কা’টে সৌভিকের ডাকে। সৌভিক এসে তাদেরকে বলে,”তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? স্যার, ম্যাডামরা সবাই খেতে ডাকছে।”

অনুরাধা বিরক্ত হয়ে বলে,”হ্যাঁ, যাচ্ছি যাচ্ছি। প্রভা চল।”

আবির প্রভার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসে প্রভা ও আবির। অনুরাধা আর সৌভিকও পাশাপাশি বসেছে। রায়ান বসেছে অন্য দিকে। অনুরাধা তো সৌভিককে নিজের পাশে দেখে অনেক বিরক্ত হচ্ছে। বিড়বিড় করে বলছে,”ভগবান! তুমি তো জানো এই ছেলেটাকে আমার সহ্য হয়না। তাও কেন বারবার এর সাথেই আমাকে থাকতে হয়?”

সৌভিক অনুরাধার কথা শুনে বলে,”আমারও কোন ইচ্ছা নেই তোমার পাশে বসার। তুমি চাইলে এখান থেকে উঠে যাও।”

“মামার বাড়ির আবদার যেন! আমি কেন যাব? যেতে হলে তুমি যাও।”

সৌভিক আর কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। কারণ স্যার ম্যাডামরা ততক্ষণে খাবার দেওয়া শুরু করেছে। আবির প্রভাকে বলে,”তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলো।”

আবিরের এমন ব্যবহারে প্রভা আরো বেশি করে মুগ্ধ হতে থাকে। সে যেন নিশ্চিত হতে থাকে যে আবির তাকে ভালোবাসে।

রায়ান দূর থেকে প্রভার দিকেই দেখছিল। প্রভাকে দেখে সে মনে মনে বলে,”এত মায়া কেন তোমার মধ্যে? তোমাকে যতই দেখি ততই বেশি করে তোমার মায়ায় ডুবে যেতে থাকি আমি। তোমায় দেখার তৃষ্ণা কমার বদলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তোমাকে যে করেই হোক আমি নিজের করে নেবো।”

খেতে খেতে অনুরাধার গলায় খাবার আটকে যায়। সে কাশতে থাকে। সৌভিক অনুরাধার দিকে পানি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও জল খাও।”

অনুরাধা পানিটা খেয়ে নিয়ে বলে,”তুমি জল বললে কেন? তুমি কি হিন্দু?”

সৌভিক বলল,”হ্যাঁ, কেন?”

“আমিও হিন্দু।”

“তো কি করব? তোমার কপালে সিঁদুর পড়িয়ে বিয়ে করব?”

অনুরাধা রেগে গিয়ে বলে,”আমি সেটা কখন বললাম। তুমি কি এক লাইন বেশি বোঝো নাকি?”

সৌভিক হেসে দেয়। অনুরাধার সাথে ঝগড়া করতেও তার কেন জানি খুব ভালো লাগছিল। কিছুক্ষণ পর সৌভিক নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে বলে,”আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে এত ভাবছি কেন? কি হচ্ছেটা কি আমার সাথে?”

অনুরাধাও সৌভিকের কথা ভাবছিল। আজ সকালে বাস থেকে পড়ে যাওয়ার সময় সৌভিকই তাকে বাঁচিয়েছে আবার প্রভাকে যখন খুঁজে পাচ্ছিল না তখন সে কাঁদছিল তখন সৌভিকই তাকে সামলাচ্ছিল এখন আবার পানিও খেতে দিলো। তাকে এত সাহায্য করছে কেন? অথচ সে সবসময় ছেলেটার সাথে ঝগড়া করে। অনুরাধার মনেও এবার সৌভিকের জন্য ভালো ধারণার জন্ম নেয়। সে ভাবে,”ছেলেটা একটু কড়া কথা বললেও মনের দিক দিয়ে খারাপ নয়।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_8
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রাঙামাটি থেকে ফেরার সময় পাশাপাশি সিটে যায়গা হলো প্রভা ও রায়ান। রায়ান এতে অনেক খুশি হলেও প্রভার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগল না। সে চাইছিল আবিরের পাশাপাশি থাকতে। অন্যদিকে সৌভিকের পাশে যায়গা পেয়েছে অনুরাধা। এতে অবশ্য প্রথমে অনুরাধা নাখোশ হয়েছিল। সৌভিকের পাশে বসতেও চাইছিল না। কিন্তু পরে আর কোন উপায় না পেয়ে বসে গেছিল। তবে বসার পর থেকে সে মুখ লটকিয়ে ছিল।

রায়ান প্রভার পাশে বসে থাকায় কিছুক্ষণ পরপরই সে প্রভার দিকে তাকাচ্ছিল। প্রভার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত প্রশান্তি এসে বাসা বাঁধে রায়ানের মনে। সে যেন নিজের মনে খুঁজে পায় স্বর্গীয় সুখ। রায়ান নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে খুবই আস্তে বলে,”আমি জানি না, কখন এবং কিভাবে তুমি আমার এখানে স্থান পেলে। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি তোমাকে আমি কতোটা চাই।”

প্রভা রায়ানকে বলল,”ভাইয়া কিছু বললেন?”

“না, সাধাসিধা মেয়ে। আমি কিছু বলিনি।”

প্রভা আর কিছু বলে না। সে পিছনের দিকে তাকিয়ে একবার অনুরাধাকে দেখে নেয়। অনুরাধা তার দিকে অসহায় চোখে তাকায়। অনুরাধার থেকে চোখ ফিরিয়ে সে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরও সেইসময় প্রভার দিকে তাকিয়ে ছিল। দুজনের চোখাচোখি হতেই প্রভা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। আবির প্রভার এই কাণ্ডে বেশ অবাক হয়। আবির ভাবতে থাকে,”প্রভা আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে চোখ সরিয়ে নিলো কেন? তাহলে ও কি কোনভাবে আমায় পছন্দ করে?”

ব্যাপারটা ভাবতেই হাসি ফুটে ওঠে আবিরের মুখে। ব্যাপারটা তার কাছে অনেক ভালো লাগতে থাকে। আবির বলে,”প্রভা যদি আমায় পছন্দ করে তাহলে ব্যাপারটা অনেক দারুণ হবে। সেই প্রথম দেখার পর থেকেই তো আমি মেয়েটাকে পছন্দ করি। যা আজ অব্দি আমি কখনো ওকে বলতে পারিনি।”

~~~~~
তখন একটু রাত হয়েছে। বাসের মধ্যে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সৌভিকেরও ঘুম পাচ্ছিল। এমন সময় সে খেয়াল করে তার কাধে কারো মাথা। সৌভিক চমকে ওঠে। নিজের কাধের দিকে তাকিয়ে অনুরাধাকে দেখে আরো বেশি চমকে যায় সৌভিক। অনুরাধাকে নিজের এত কাছে দেখে তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে খুব দ্রুত বেড়ে যায়। আগে কখনো কোন মেয়েকে নিজের এত কাছে দেখে নি সে। সৌভিক চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস নেয়। সে হাসফাস করছিল কিন্তু অনুরাধা ঘুমিয়ে থাকায় কিছু করতে পারছিল না। সে চাইছিল না অনুরাধার ঘুম ভাঙাতে। এর মাঝে অনুরাধা হঠাৎ কেশে ওঠে। সৌভিক বুঝতে পারে জানালা খোলা থাকায় হাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। তাই সে খুব সাবধানে জানালাটা বন্ধ করে দেয়। অনুরাধা তবুও কাশছিল। সৌভিক খেয়াল করে অনুরাধার গায়ে কোন ভারী পোশাক নেই। তাই সে আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের ব্যাগ খুলে তার সাথে আনা চাদর জড়িয়ে দেয় অনুরাধার গায়ে। তারপর অনুরাধার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অনুরাধাকে কতোই না ইনোসেন্ট লাগছে। সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”কে বলবে এই মেয়ে জেগে থাকলে কিরকম ঝগড়া করে? মেয়েটাকে কিন্তু আসলেই অনেক মিষ্টি দেখতে।”

প্রভাও ঘুমিয়ে পড়েছে রায়ানের কাধে মাথা রেখে। রায়ান ব্যাপারটাকে অনেক বেশি এনজয় করছে। প্রভাকে নিজের এত কাছে দেখে সে অনেক খুশি। অন্যদিকে আবির দূর থেকে এটা দেখে অনেক বেশি জেলাস হয়ে যায়। আবির ভাবে যদি প্রভা তার সাথে বসতো তাহলে কতোই না ভালো হতো। একটু ভেবেই সে বলে,”রায়ানকে আমার মনের কথাটা জানিয়ে দিতে হবে। ওর মনে তো আর প্রভাকে নিয়ে কোন অনুভূতি নেই। রায়ান তো আমার ছোটবেলার বন্ধু। ও যখন আমার মনের কথা জানতে পারবে তখন নিশ্চয়ই সাহায্য করবে আমাকে আর প্রভাকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া প্রভাও তো আমাকেই পছন্দ করে।”

এটা ভেবেই খুশি হতে থাকে আবির। তবে সে তো আর জানে না রায়ানের মনে প্রভাকে নিয়ে অনুভূতি করতো প্রখর। যেটা দিনকে দিন আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছিল।

অনুরাধার ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে সে নিজের গায়ে চাঁদর দেখে অবাক হয়। আবার জানালার দিকে তাকিয়েও অবাক হয়। কারণ সে যখন জেগেছিল তখন তো দেখেছিল জানালা খোলা। অনুরাধার নজর যায় সৌভিকের দিকে। ছেলেটা শীতে কাপছিল। অনুরাধা হালকা কেশে সৌভিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,”এই চাদরটা কি তোমার?”

“হ্যাঁ।”

“তোমার তো ঠান্ডা লাগছে। তুমি এটা নিতে পারো।”

“না, থাক। আমার কোন সমস্যা নেই।”

সৌভিকের এই ব্যাপারটা অনুরাধার অনেক ভালো লেগে যায়। কারণ সে স্পষ্ট বুঝতে পারছিল সৌভিকের ঠান্ডায় অনেক প্রব্লেম হচ্ছে কিন্তু তবুও সে অনুরাধার কথা ভাবছে। অথচ সে কখনো সৌভিকের সাথে ভালো ভাবে কথা পর্যন্ত বলে নি। অনুরাধা এবার চাদরের কিছু অংশ দিয়ে সৌভিকের শরীর ঢেকে দিয়ে বলে,”এবার তো ঠিক আছে তাই না? আমারও হলো আর তোমারও।”

সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকায়, অনুরাধাও তাকায় সৌভিকের দিকে। কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার পর দুজনেই প্রচণ্ড লজ্জায় আবার চোখ সরিয়ে নেয়।
~~~~~
ভোর ৬ টায় সকলে পৌঁছে যায় চট্টগ্রামে। তাদের কলেজের সামনে এসে বাস থামে। সকলের হুড়োহুড়ির শব্দে প্রভার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে যখন সে বুঝতে পারে সে রায়ানের কাধে মাথা দিয়ে রেখেছে তখন দ্রুত স্বাভাবিক হয়। রায়ানকে বলে,”সরি ভাইয়া। ঘুমের মধ্যে কোন খেয়াল ছিল না তাই..”

“কোন ব্যাপার না। আমি কিছু মনে করি নি।”

প্রভা সৌজন্য সূচক হাসি দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। বাস থেকে নামতেই সে দেখতে পায় অনুরাধাকে। অনুরাধা সৌভিককে তার চাদর ফিরিয়ে দিয়ে বলে,”গতকাল রাতের জন্য ধন্যবাদ। আর আগের সব বেয়াদবির জন্য সরি। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি অনেক ভালো ছেলে।”

সৌভিক হেসে বলে,”আমার মাও আমাকে তাই বলে যে আমি গুড বয়। কিন্তু তোমার কাছে ব্যাড বয় হয়ে থাকতেই আমার ভালো লাগছিল।”

প্রভা অনুরাধার নাম ধরে ডাক দেওয়ায় সে আর কথা না বাড়িয়ে সৌভিকের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সৌভিক অনুরাধার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

রায়ান এসে সৌভিকের কাধে হাত রেখে বলে,”কিরে সৌভিক?! ঐ ঝগড়ুটে মেয়েটার সাথে রাত কেমন কা”টল।”

সৌভিক মুখ ফুসে বলে ফেলে,
“বিন্দাস।”

“কি?”

সৌভিক দ্রুত জিভ কে’টে বলে,”কি আর বলবো দুঃখের কথা মেয়েটা যা নাক ডাকে। একেবারে কুম্ভকর্ণের মতো। ওর নাক ডাকার শব্দে তো আমি রাতে ভালো করে ঘুমাতেই পারিনি।”

“তাহলে একটু আগে হেসে হেসে কথা বলছিলি কেন?”

সৌভিক প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলে,”আরে তেমন কিছু না। আচ্ছা, তুই আমায় বল সারারাত ভাবির পাশে কেমন কা’টলো? আমি তো খেয়াল করেছি ভাবি তোর কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল।”

রায়ান গতকাল রাতের কথা ভেবে হাসতে থাকে। গতকাল রাত সত্যি তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছিল যে। রায়ানের ভাবনায় ছেদ পড়ে আবিরের ডাকে। আবির দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে তাদের দিকেই আসছিল। রায়ানের সামনে এসে সে হাফাতে থাকে।

আবির সৌভিক আর রায়ানকে বলে,”তোরা সবসময় আমাকে রেখে কি গোপন কথা বলিস রে এত?”

সৌভিকঃআরে তেমন কিছু না।

রায়ান বলে,”তুই জানতে চাস তো আমরা কি কথা বলি?”

“তোর কথা পরে শুনব রায়ান। আগে তুই আমার একটা গোপন কথা শোন। যেটা আমি তোকে বলতে চাই। তুই আমার সাথে আয়। এখানে বলা যাবে না। এটা তোর আর আমার গোপন কথা।”

সৌভিক বলে,”আমাকে বলা যাবে না?”

আবির বলে,”না, আগে আমি রায়ানকে বলব তারপর সবাইকে।”

এটা বলে সে রায়ানকে নিজের সাথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে আর মনে মনে বলে,”আজ আমি রায়ানকে প্রভার প্রতি আমার ভালো লাগার কথা বলে দেব। রায়ান নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে এই ব্যাপারে।”

to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে