একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৫+৬

0
322

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_5
#ইয়াসমিন_খন্দকার

দেখতে দেখতে অনুরাধা ও প্রভার কলেজে কয়েকটা দিন সানন্দে অতিবাহিত হয়ে গেল। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেক কিছু বদলেছে। প্রভার সাথে আবিরের যতবারই দেখা হয়েছে প্রভা ততবারই লজ্জায় মূর্ছা গেছে। কখনো ঠিকভাবে কথাই বলতে পারে নি৷ এদিকে অনুরাধা হাত ধুয়ে পড়ে আছে প্রচার সাথে আবিরের রিলেশন করিয়ে দেওয়ার জন্য। এজন্য সে সবসময় প্রভাকে বলে আবিরের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে। কোন পড়া বুঝতে চাওয়ার ভান করে হলেও তার সাথে সময় কাটাতে কিন্তু লাজুক প্রভা এসব কথা কানে নেয় না৷ তবে অনুরাধা হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। সেও নানারকম ভাবে সুযোগ খুঁজছে আবির ও প্রভার প্রেম করিয়ে দেবার।

এরকমই একদিন হঠাৎ কলেজে ঘোষণা করা হলো খুব শীঘ্রই কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে যাওয়া হবে রাঙামাটিতে। সব ছাত্র-ছাত্রীই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। অনুরাধাও এই শিক্ষা সফরে যেতে ইচ্ছুক। প্রভাকে এই ব্যাপারে বলতেই সে বলল,”তুই গেলে যা, আমি যাবো না।”

“এমন কেন রে তুই প্রভা?”

“তুই তো জানিসই আমার এসব ভালো লাগে না।”

অনুরাধা প্রভাকে নানাভাবে মানানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়৷ শেষে হাল ছেড়ে বলে,
“ঠিক আছে। তুই না গেলে না যা। আমি একাই যাবো।”

~~~~~~~
শিক্ষাসফরে কারা যাবে কি যাবে না সেই নাম লিস্টে তোলার দায়িত্ব পড়েছে আবির, রায়ান, সৌভিক এই বন্ধুর হাতে। রায়ান ও সৌভিক যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের আর্টসের ক্লাসে গিয়ে নাম লেখাতে থাকে তখন রায়ানের দুচোখ শুধু প্রভাকেই খুঁজতে থাকে। এরমধ্যে অনুরাধা এসে বলে,”আমার নামটা লিখিয়ে নাও।”

সৌভিক বিরক্তি নিয়ে বলে,”কি নাম তোমার বলো।”

“অনুরাধা দাস।”

“আচ্ছা, লিখিয়ে নিয়েছি যাও এখন।”

অনুরাধা যেতে যাবে এমন সময় রায়ান তাকে আটকে বলে,”তোমার ঐ সাধাসিধা বান্ধবী যাবে না?”

“না, ওর যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।”

বলেই অনুরাধা চলে আসে। সৌভিক রায়ানকে বলে,”তোর ব্যাড লাক ভাই। ভাবি শিক্ষাসফরে যাবে না।”

“ও যাবে।”

“যাবে মানে? ঐ মেয়েটা তো বললোই যে ও যেতে ইচ্ছুক নয়।”

“তোকে এত কিছু ভাবতে হবে না৷ তুই শুধু খাতায় প্রভার নামটা তুলে নে। টাকা আমি দিয়ে দেব।”

“এটা কিভাবে হয়?”

“তোকে যেটা বলেছি সেটা কর। বাকিটা আমি সামলে নেব।”

~~~~~~~
আজ কলেজ থেকে যারা যারা শিক্ষাসফরে যাবে তাদের নামের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় নিজের নাম দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেল প্রভা। অবাক হয়ে অনুরাধাকে জিজ্ঞেস করল,”আমি তো শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য নাম লেখাই নি। তাহলে আমার নাম এখানে এলো কিভাবে?”

“জানি না প্রভা। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“সত্যি করে বল তো তুই আমার নাম দিস নি তো?”

“তুই কি পাগল হলি নাকি? নিজেই শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য কত কষ্ট করে ৫ হাজার টাকা ম্যানেজ করলাম তার উপর আমি আবার তোর নাম কিভাবে দেব?”

প্রভা ভেবে দেখে অনুরাধা তো ঠিকই বলছে। তাহলে তাঁর নামটা লেখালো কে? প্রভার ভাবনার মাঝেই অনুরাধা বলল,”কি রে কি ভাবছিস?”

“কিছু না।”

বলেই প্রভা কোথাও যেতে নেয়। অনুরাধা প্রভাকে আটকে বলে,”কই যাচ্ছিস রে তুই?”

“স্যারকে বলে আমার নামটা ক্যানসেল করতে হবে।”

“আরে থাক। তোর নাম যখন একবার উঠেই গেছে তখন তুই চল আমার সাথে। আমিও তো যাবো খুব মজা হবে।”

“আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।”

অনুরাধা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”এক মিনিট দাঁড়া, তোদের ক্লাসে শিক্ষাসফরে নাম কি আবির ভাইয়া লিখিয়েছে?”

“হুম। কেন?”

” তোকে কি কিছু জিজ্ঞেস করেছিল?”

“হ্যাঁ, বলেছিল শিক্ষা সফরে যেতে চাই নাকি। আমি সোজা না করে দিয়েছিলাম। তারপর আর কিছু বলেনি।”

“এবার আমি সবটা বুঝতে পারলাম।”

“কি বুঝলি?”

“আমার মনে হয় আবির ভাইয়াই তোর নাম লিখিয়েছে।”

“উনি এমন কেন করবেন?”

“তুই আসলেই একটা গাধী। তুই বুঝতে পারছিস না আবির ভাইয়া এমন কেন করল?”

“না, পারছি না।”

“আরে গবেট, আবির ভাইয়া চায় যে তুই সকলের সাথে শিক্ষাসফরে যাস।”

“উনি এমনটা কেন চাইবেন?”

“কারণ ওনার তোকে পছন্দ।”

“এসব কি বলছিস টা কি তুই?”

“যেটা সত্যি সেটাই।”

“তুই কিভাবে বুঝলি যে উনি আমায় ভালোবাসেন?”

“কারণ আমার সিক্স সেন্স আছে। সেদিন ক্যান্টিনে যখন আবির ভাইয়া যেচে তোর সাথে কথা বলতে এসেছিল তখনই তো আমি ওর চোখ দেখেই বুঝেছিলাম যে ও তোকে ভালোবাসে।”

প্রভা এবার একটু লজ্জা পেয়ে যায়। প্রভা বলে,”আরে দেখো মেয়ের অবস্থা। লজ্জায় ফর্সা গাল একদম লাল হয়ে গেছে।”

প্রভা বলল,”তাহলে এখন আমার কি করা উচিৎ?”

“তোর উচিৎ আমাদের সাথে শিক্ষাসফরে যাওয়া।”

“কিন্তু বাড়িতে কি বলব?”

“তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি আন্টির সাথে কথা বলে নেব। আমি বললে আন্টি ঠিকই রাজি হবে।”

“আচ্ছা। যা ভালো মনে করিস কর।”

~~~~
আজ শিক্ষাসফরে যাওয়ার দিন। সকাল সকাল অনুরাধা এসে উপস্থিত হয়েছে প্রভাদের বাসায়। প্রজ্ঞা বেগম অনুরাধাকে ভালো করে পরখ করে নিলো। অনেক সুন্দর করে সেজেছে মেয়েটি। আর অন্যদিকে তার মেয়ে প্রভা। যার সাজসজ্জার প্রতি কোন আগ্রহই নেই। তিনি অনুরাধাকে বললেন,”প্রভাকে একটু দেখে রেখো। আগে কখনও তো একা এতদূর যায়নি। তোমার ভরসাতেই কিন্তু ওকে যেতে দিচ্ছি।”

“আপনি কোন চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি ওর খেয়াল রাখব।”
~~~~~~~~

প্রভা ও অনুরাধা যথাসময়ে কলেজে এসে উপস্থিত হলো। কলেজে আসতেই তাদের সাথে আবিরের দেখা হয়ে গেল। আবির প্রভাকে দেখে বললো,”তুমি তাহলে শিক্ষাসফরে যাচ্ছ?”

প্রভা লাজুক হেসে বললো,”জ্বি।”

আবির আর কিছু বলতে যাবে তখনই সৌভিকের ডাক শুনে অন্যদিকে চলে গেল। সে যেতেই অনুরাধা বললো,”আমি আজকেও নোটিস করলাম। আবির ভাইয়া তোর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল।”

অনুরাধার কথায় প্রভা লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে থাকে। এরইমধ্যে তাদের একজন শিক্ষিকা মোছাঃআনোয়ারা বেগম সেখানে এসে তাদের বলেন,”তোমরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও গিয়ে বাসে উঠে পড়ো। এখনই আমরা রওনা দেব।”

অনুরাধা ও প্রভা বাসের দিকে যায়। প্রভা বাসে উঠে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায়। রায়ান পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,”আবার ধাক্কা!”

প্রভা আমতা আমতা করে বলে,”সরি।”

“আবার সরি!!”

প্রভা আর কিছু ভাবতে না পেরে দ্রুত বাসে উঠে পড়ে। অন্যদিকে অনুরাধাও তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠতে গিয়ে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যেতে ধরে। তখনই হঠাৎ কারো দুটো বাহু তাকে আগলে নেয়। প্রভা অনুরাধাকে পড়ে যেতে দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,”অনু…”

অনুরাধার জান যেন বেডিয়ে যাওয়ার জোগাড়। নিজেকে শুন্যে আবিস্কার করে সে আলতো করে চোখ খুলতেই দেখতে পেল সৌভিককে। দেখে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেল। সৌভিক অনুরাধাকে সোজা করে দিয়ে বলে,”চোখ কোথায় থাকে তোমার? নাকি শুধু মুখই চলে। এখনই আমি না ধরলে তো পড়ে গিয়ে হাত-পা সব ভাঙতে।”

“ধন্যবাদ।”

বলেই সামনে এগিয়ে যায় অনুরাধা। অনুরাধা ও প্রভা গিয়ে একই সিটে পাশাপাশি বসে পড়ে। রায়ান প্রভার দিকে দেখে বারকয়েক। এরমধ্যে আবিরও বাসে উঠে পড়ে। আবির ও রায়ান দুজনে অনুরাধা ও প্রভার কাছে অবস্থিত একটি সিটেই বসে। যেখান থেকে প্রভাকে ভালোভাবেই দেখা যায়। রায়ান বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে প্রভাকে দেখছিল। বাস রওনা দেয়৷ সারা রাস্তায় রায়ান যে কতবার লুকিয়ে প্রভাকে দেখেছে তার কোন ঠিক নেই। অন্যদিকে প্রভাও বারকয়েক লুকোচুরি তাকিয়েছে তাদের দিকে। তবে সে রায়ানের দিকে নয় তার চোখ ছিল আবিরের দিকে। এরইমধ্যে একবার তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনেই দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। দুজনের মনেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা ঘুরতে থাকে।

রায়ান ভাবছে,”সাধাসিধা মেয়েটা কি ভাবলো? যে আমি হ্যাংলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম? কিন্তু ও তো আমার দিকে তাকালো। তার মানে কি…”

রায়ান আবারো তাকালো প্রভার দিকে। এদিকে প্রভা ভাবলো,”উনি কি ভাবলেন? যে আমি ওনার বন্ধুকে..ছি ছি! আমি আর ভাবতে পারছি না। আমি কি করে এতটা নির্লজ্জ হলাম?”

ভেবেই সে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_6
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রাঙামাটিতে পৌঁছে গেছে সকলে। অনুরাধার সাথে বাস থেকে নামে প্রভা৷ তাদের পিছু পিছু আবির ও রায়ানও নামে। সৌভিক একটু পরে নামে। শিক্ষকরা তাদের একসাথে থাকতে বলে এবং অনুসরণ করতে বলে। তারা তাই করে।

রাঙামাটিতে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে থাকে প্রভা। অন্যদিকে রায়ান ডুবে যায় প্রভার মাঝেই। সৌভিক ব্যাপারটা খেয়াল করে নিজের বন্ধুকে বলে,”তুই তো দেখছি প্রেমের সমুদ্রে একেবারে ডুবে গেছিস রে।”

রায়ান হেসে বলে,”এই সমুদ্রের নাম যদি প্রভা হয় তাহলে আমি হাজারো বার এই সমুদ্রে ডুবতে রাজি আছি।”

“তোর রোম্যান্টিক কথা শুনেই আমি বুঝতে পারছি, তুই অনেক ভালো প্রেমিক হবি।”

“তাই যেন হয়।”

এমন সময় আবির সেখানে উপস্থিত হলো। তার হাতে একটি DSLR ক্যামেরা। আবির এসেই সৌভিক ও রায়ানকে বলে,”কিরে, তোরা ঘুরতে এসে এখানে ঘাপটি মে*রে বসে আছিস কেন? চল, গিয়ে রাঙামাটির সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করি।”

সৌভিক বলল,”এই যে, এসে গেছেন আমাদের ক্যামেরাম্যান আবির। রায়ান তুই যাবি নাকি?”

রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে ছিল। সৌভিকের কথায় তার ধ্যান ভাঙে। মৃদু হেসে বলে,”চল যাওয়া যাক।”

যদিও তার যাওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আবিরকে খুশি করতে সে রাজি হলো যেতে। কারণ সে না গেলে আবির অনেক কষ্ট পাবে। আর রায়ান নিজের বন্ধুকে কষ্ট দিতে চায় না।

রায়ানরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অনুরাধা এসে প্রভাকে বলল,”চল আমরা একটু আশেপাশে ঘুরে দেখি।”

প্রভা বলে দিলো,”আসলে আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই রে।”

“ইচ্ছা নেই বললেই হলো? চল আমার সাথে।”

এসব বলে একপ্রকার জোর করেই প্রভাকে নিয়ে গেল অনুরাধা। তারা দুজনে মিলে আশপাশটা ঘুরে দেখতে লাগল। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ প্রভার সাথে কারো ধাক্কা লেগে গেল। প্রভা চোখ তুলে রায়ানকে দেখল। রায়ান স্থির চোখে তার দিকেই তাকিয়ে। প্রভা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকায় রায়ান বলল,”আজ সরি বললে না যে?”

প্রভা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। রায়ান প্রভার দিকে একটু ঝুকে এসে বলল,”তোমার কি আমার সাথে ধাক্কা খেতে খুব ভালো লাগে নাকি?”

অনুরাধাও প্রভার পাশে ছিল। সে রায়ানকে বলল,”এই তুমি আমার বান্ধবীকে কি বলছ হ্যাঁ?”

“তেমন কিছু না।”

তাদের কথার মাঝেই আবির চলে এলো সেখানে। আবিরকে দেখে প্রভা হাসিমুখে তার দিকে তাকালো। আবিরও প্রভার দিকে হাস্যোজ্জ্বল দৃষ্টিতেই তাকালো। কিন্তু তাদের মাঝে কোন কথা হলো না। ততক্ষণে সৌভিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনুরাধাকে দেখতে পেল। অনুরাধাকে দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে গেল। তার কেন জানি এই মেয়েটাকে সহ্যই হয় না। সৌভিক আবির আর রায়ানকে বলল,”তোরা কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি সামনেও যাবি?”

আবির বললো,”হ্যাঁ, চল।”

রায়ান যেতে চাইল না কিছুতেই। তার ইচ্ছা করছে প্রভার দিকে তাকিয়ে থাকতে। মেয়েটাকে দেখলে সে যে অদ্ভুত শান্তি পায়। অনুরাধা প্রভাকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে গেলো। তারা যাওয়ার পর সৌভিক এসে রায়ানের কাধে হাত রেখে বললো,”আমার তো মনে হয় এই অনুরাধা নামের মেয়েটা যতদিন আছে ততদিন তোর ভাবিকে নিজের করতে পাওয়া হবে না। ভাবিকে পেতে হলে তোকে আগে এদের বন্ধুত্ব ভাঙতে হবে।”

রায়ান একবাক্যে বলে দেয়,”যদি ঐ সাধাসিধা মেয়ে আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে ওকে আমি এমনিই পাবো। ওকে পাওয়ার জন্য কোন ছলচাতুরী করা বা কারো বন্ধুত্ব ভাঙার প্রয়োজন হবে না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রায়ান ও আবির ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিল৷ সৌভিক একটু আলসে টাইপ। তাই সে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। এইজন্য সে আর ওদের সাথে না ঘুরে ক্যাম্পের কাছে ফিরে আসছিল। এমন সময় হঠাৎ কারো কান্না শুনে সে থেমে যায়। কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে সামনে গিয়ে দেখতে পায় অনুরাধা কাঁদছে। সৌভিকের ভ্রুজোড়া কুচকে যায়। সে অনুরাধার কাছে গিয়ে বলে,”এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছ কেন? কি সমস্যা তোমার?”

অনুরাধা কান্না থামিয়ে বলে,”অনেক বড় সমস্যা হয়ে গেছে। আমি প্রভাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”

“খুঁজে পাচ্ছ না মানে? ও তো তোমার সাথেই ছিল।”

“হ্যাঁ, আমার সাথে ছিল কিন্তু আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এইজন্য আমি ওকে এখানে অপেক্ষা করতে বলে ওয়াশরুমে যাই। তারপর এসে থেকে আর ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। কি করব কিছুই বুঝছি না। আমি আন্টিকে কথা দিয়েছিলাম ওর খেয়াল রাখব। এখন যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আন্টিকে কিভাবে মুখ দেখাব?”

এসব বলে আরো কাঁদতে থাকে অনুরাধা। সৌভিক বিরক্ত হয়ে রাগী গলায় বলে,”স্টপ। এভাবে কাঁদলে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। তার থেকে ভালো চলো আমরা আশেপাশে ওকে খুঁজে দেখি।”

“আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু ওকে কোথাও পাইনি।”

“এতটা ইউজলেস কেউ কি করে হতে পারে? চলো আমার সাথে স্যারদের জানাতে হবে। এভাবে বসে থাকলে হবে না। আমরা কেউ এখানকার কিছুই চিনি না। না জানি তোমার বান্ধবী কোন বিপদে ফেসে গেছে।”

তখনই আবির আর রায়ানও সেখানে চলে আসে। রায়ান এসে বলে,”কার বিপদের কথা বলছিস তুই?”

সৌভিক তাদের সব কথা খুলে বলে। সব শুনে আবির ও রায়ান দুজনেই ভীষণ ঘাবড়ে যায়। দুজনেই একসঙ্গে ছুট লাগায় প্রভাকে খোঁজার জন্য।

~~~
প্রভা একটা বড় চাপালিশ গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনুরাধা তাকে রেখে ওয়াশরুমে চলে যাবার পর সে একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছিল এইজন্যই আশেপাশে একটু ঘুরে দেখতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে সে একটা বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারপর কখন যে বনের গহীনে চলে আসে সেটা বুঝতেই পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। এখন এই বনটা তার কাছে পুরো গোলকধাঁধা লাগছে। এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুরেফিরে সেই চাপালিশ গাছটার সামনেই আসছে। প্রভার এখন ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।

এমন সময় হঠাৎ সে সামনে থাকা ঝোপের আড়ালে নড়াচড়ার শব্দ শোনে। সাথে সাথেই সে অনেক ঘাবড়ে যায়। না জানি বনের কোন ভয়ানক প্রাণী হবে। প্রভা মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে।

সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণে দৌড় দেয়। কিছুদূর সামনে গিয়ে হঠাৎ গাছের শিকড়ে পা আটকে পড়ে যায়। যার ফলে প্রভার পায়ে চোট লাগে এবং রক্ত পড়তে থাকে। সে গোঙাতে থাকে। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে। এমন সময় কেউ তার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রভা মাথা তুলে দেখতে পায় রায়ানকে। বলে ওঠে,”আপনি!”

রায়ান বলে,”ভেবেছিলাম তুমি শুধু সাধাসিধা এখন দেখছি তুমি যতটা না সাধাসিধা তার থেকেও বেশি গাধী। তাড়াতাড়ি আমার হাত ধরে উঠে এসো।”

প্রভা রায়ানের হাত ধরে উঠে পড়ে। কিন্তু তার পায়ে চোট লাগায় ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না। রায়ান প্রভার এই অবস্থা দেখে বলে,”তোমার কি মিনিমাম সেন্স নেই? কি করে এসব বিপদ বাধালে?”

“সরি।”

“আমাকে সরি বলছ কেন? আজ যদি আমি তোমাকে খুঁজে না পেতাম আর তুমি এই বনে হারিয়ে যেতে তাহলে কি হতো ভাবতে পারছ? এত কেয়ারলেস কেউ হয়?”

“সরি।”

“তুমি সরি বলা বন্ধ করবে?”

প্রভা আর কিছু বলে না। রায়ান চারপাশে তাকিয়ে বলে,”আমিও তো তোমার খোঁজে কোন কিছু না ভেবেই বনের মধ্যে চলে এলাম। এখন এই বন থেকে বের হবো কি ভাবে?”

“আপনিও কি রাস্তা ভুলে গেছেন?”

“সেটাই তো মনে হচ্ছে।”

“তাহলে আমাদের কি হবে?”

“তুমি চিন্তা করো না সাধাসিধা মেয়ে। আমি কোন উপায় বের করছি। তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রভাকে সাথে নিয়ে রায়ান হাটতে থাকে। কিন্তু প্রভার পায়ে চোট লাগায় সে ঠিকমতো হাটতে পারছিল না। তার উপর তার পা থেকে অনবরত রক্ত পড়ছিল। এইজন্য রায়ান নিজের টি-শার্টের কিছু অংশ ছিড়ে প্রভার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আর কিছু জঙ্গলি গাছ এনে দেয় যাতে রক্তপড়া বন্ধ হয়। তারপরেও প্রভার হাটার সমস্যা হওয়ার কারণে প্রভাকে কোলে তুলে নেয়। প্রভা হতবাক হয়ে বলে,”এ কি করছেন?”

রায়ান শান্ত অথচ কড়া গলায় বলে,”হুশ। নো মোর ওয়ার্ডস। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”

বলেই সে প্রভাকে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। আর প্রভা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে