#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_59
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রণালী আজ সকালে উঠে ভার্সিটিতে গিয়ে এক্সামের জন্য টাকা জমা দিয়ে এসেছে। সমুদ্রের এই অবস্থার কথা ভেবে তার কাছে চায় নি আবার স্বামীর আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে বাবার কাছেও হাত পাতে নি। প্রণালী নিজের গলার স্বর্ণের চেইন বিক্রি করেই টাকার জোগাড় করেছে।
এখন আপাতত নিশ্চিত লাগছে তার। বাসায় ফিরে লম্বা একটা ঘুম দেওয়া যাবে। এমনটা ভেবেই বাসার দিকে পা বাড়ালো। বাসায় ঢুকতেই যাবে এমন সময় এক চেনা জানা কণ্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকিয়ে অবাক গলায় বলে,”শান্ত..তুমি?”
শান্ত ধীর পায়ে এগিয়ে এসে প্রণালীর সম্মুখীন হয়। এসে প্রণালীকে বলে,”তোমায় এত কষ্টে থাকতে হচ্ছে প্রণালী! আমি তো ভাবতেই পারিনি।”
“তোমাকে ভাবতেও হবে না আমাকে নিয়ে। প্লিজ তুমি এখান থেকে যাও। আমার তোমাকে একদম সহ্য হচ্ছে না।”
“তুমি এটা ডিজার্ভ করো না প্রণালী। কত ঐশ্বর্যে বড় হয়েছ তুমি। আর এখন এমন গরীবি জীবন যাপন করতে হচ্ছে তোমায়? আমি এটা মেনে নিতে পারছি না। তুমি আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে অনেক ভালো রাখব।”
প্রণালী সপাটে চ’ড় বসিয়ে দেয় শান্তর গালে। এরপর রাগী গলায় বলে,”যদি যাওয়ার হতো তাহলে আমি নিজের বাবার কাছেই যেতে পারতাম। আমার বাবার কাছে যখন যাইনি তখন তোমার কাছে কেন যাব? আমার বাবার মতো কি তুমি ধনী?”
শান্ত অপমানিত বোধ করল। চোখমুখ শক্ত করে বলল,”তোমার বাবার মতো ধনী না হলেও তোমার স্বামীর থেকে তো বেটার আমি। অন্তত নিজের যোগ্যতায় একটা চাকরি করি। নিজের বাড়িও আছে। আর তোমার স্বামীর তো না আছে কোন চাকরি আর বাড়ি থেকেও বহিস্কৃত।”
“সব জেনে গেছ তাহলে!”
“হ্যাঁ, সব জেনেছি জন্যই তোমায় এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম। কিন্তু..”
“কিন্তু আমি ইচ্ছুক নই। তুমি এখন আসতে পারো। ফারদার, যেন তোমায় ছায়াও না দেখি।”
বলেই প্রণালী শান্তর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। শান্ত রেগে বলে,”এসব কিছুর প্রতিশোধ আমি নেবোই প্রণালী। তুমি আমাকে যতটা অপমান করলে তার থেকে হাজারগুণ বেশি অপমান আমি তোমার স্বামীকে করব। দেখে নিও তুমি।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র শপিং কমপ্লেক্সের মধ্যেই ছিল। এমন সময় শান্ত সেখানে চলে আসে। শান্তকে দেখে যদিও সমুদ্র ভীষণ রেগে যায় তবে এটা তার কাজের যায়গা তাই নিজেকে স্থির রাখে। শান্ত সমুদ্রকে দেখে গা জ্বালানি হাসি দেয়। শপিং কমপ্লেক্সের অন্য একজন কর্মচারী শান্তর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”বলুন স্যার, আপনার কি লাগবে?”
শান্ত বলে,”আমি জুতা কিনতে চাইছিলাম। আপনি ঐ লোকটাকে আসতে বলুন। উনি আমায় জুতা বাছতে সাহায্য করবে।”
সমুদ্রের দিকে ইশারা করে কথাটা বলে শান্ত।
“এই সমুদ্র এদিকে আসো, দেখ স্যার কি চাইছে।”
সমুদ্রের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে আসতে হয়। শান্ত যেন সুযোগ পেয়ে যায়। সমুদ্র শান্তকে জুতা দেখাতে থাকলে শান্ত বলে,”কি অবস্থা হয়েছে তোমার! আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে। এত বড়লোকের ছেলে শেষপর্যন্ত কিনা সেলসম্যান হা হা হা।”
সমুদ্র অনেক কষ্টে নিজের মেজাজ সামলিয়ে ঠান্ডা মাথায় নিজের সব কাজ করতে থাকে। শান্ত একটা জুতা পছন্দ করে সমুদ্রকে বলে,”আমার এটা পছন্দ হয়েছে। জুতাটা একটু পড়িয়ে দাও তো দেখি ফিট হয় কিনা।”
সমুদ্র রক্তিম চোখে তাকায়। শান্ত বলে,”চোখ রাঙাচ্ছ কাকে? ভুলে যেও না, তুমি এখানকার সামান্য একজন কর্মচারী আর আমি একজন কাস্টমার। চুপচাপ যা বলছি করো নাহলে আমি তোমার নামে রিপোর্ট দেব।”
সমুদ্র নিরুপায়। বাধ্য হয়ে সে নিচে বসে শান্তকে জুতা পড়াতে সাহায্য করছিল। শান্ত ফোন বের করে বলল,”এই দারুণ একটা ঘটনা তো ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে হয়। তোমার স্ত্রীকে তো দেখাতে হবেই। তার অনেক অহংকার না। সেটা এবার ভাঙতে হবে।”
সমুদ্র এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না। উঠে দাঁড়িয়ে শান্তকে জোরে একটা পাঞ্চ পারল। শান্ত নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। তার নাক দিয়ে রক্ত পড়তে লাগল। উঠে দাঁড়িয়ে সেও ফাইট করতে লাগল সমুদ্রের সাথে। আশেপাশের কিছু মানুষ ছুটে এসে তাদের থামালো।
সমুদ্রের এরকম কাস্টমারের সাথে মারামারি মোটেই ভালো ভাবে নিলেন না শপিং কমপ্লেক্সের মালিক। তার শপিং কমপ্লেক্সের রেপুটেশন এর জন্য কমে গেছে। তাই যা হওয়ার তাই হলো। তিনি সমুদ্রকে কাজ থেকে ফায়ার করলেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সজল চৌধুরী বাড়িতে ফিরে পুষ্পা চৌধুরীর উপর রাগারাগি করতে শুরু করে দিয়েছেন। সায়মা চৌধুরীর থেকে সব শুনে তার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে।
“পুষ্পা এত সাহস পেল কোথায়? কোন সাহসে ও আমার ছেলে আর ছেলের বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিল? এই বাড়ি আমার বাপ-দাদার। ওর নামে লিখে দিয়েছে জন্যই যা খুশি তাই করবে?”
পুষ্পা চৌধুরী এসে বললেন,”হ্যাঁ, করব। আমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে এখন আমি তোমাকেও ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করব। কি করবে তুমি?”
“পু্ষ্পা!”
“এই! গলা নামিয়ে কথা বলো। এত অডাসিটি আমি ট্রলারেট করব না।”
“আমি এক্ষুনি যাচ্ছি, আমার ছেলে আর ছেলের বউকে ফিরিয়ে আনতে। অনেক সহ্য করেছি আর না।”
“এই বাড়ি থেকে বেরোলে আর কোনদিন এই বাড়িতে ফিরতে পারবে না। বাড়ির দরজা চিরকালের জন্য তোমার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।”
“পুষ্পা!”
পুষ্পা চৌধুরী আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলন। সজল চৌধুরী ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হঠাৎ করেই যেন নিজেকে খুব অসহায় আর অবহেলিত বোধ হলো। তিনি যেন বুঝতে পারছেন চিরকাল আভিজাত্যপূর্ণ জীবনযাপন করলেও তার পায়ের তলার মাটি শক্ত নয়। তাই তো নিজের ছেলে-ছেলের বউয়ের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। হঠাৎ করেই তার বুকের বা পাশে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হলো। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। তিনি আর বেশিক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। সিঁড়ি ধরে বসে পড়লেন। সায়মা চৌধুরী দৌড়ে এসে বলল,”ঠিক আছ তো ভাইয়া?”
সজল চৌধুরী কোন সাড়া দিলেন না।
~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরল। তাকে এই অবস্থায় দেখে প্রণালী বিচরিত হয়ে পড়লো। অস্থির কন্ঠে বলল,”আপনাকে এরকম লাগছে কেন? সব ঠিক আছে তো?”
সমুদ্র কোন কিছু না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। প্রণালী লক্ষ্য করল সমুদ্রের মুখে আঘাতের দাগ। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ আঘাত করেছে। প্রণালী আর দেরি করলো না। পাশের বাসার ভাবির থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। এসে সমুদ্রকে বলল,”উঠে বসুন,আমি ফাস্ট এইড করে দিচ্ছি।”
সমুদ্র উঠে না বসে প্রণালীকে কাছে টেনে নিলো।
“কি করছেন? আপনার ব্লিডিং হচ্ছে তো
কিভাবে হলো এমন? আমাকে ফাস্ট এইড করতে দিন।”
“লাগবে না। তুমি শুধু আমার পাশে থাকো।”
প্রণালী সমুদ্রকে বোঝানোর প্রয়াস করল কিছুক্ষণ। অত:পর দমে গিয়ে বলল,”আপনার এত জেদ কেন?”
সমুদ্র বলল,”জানি না, আমি। তোমাকে ছাড়তে একদম ইচ্ছা করছে না। বুকে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, আমার খুব কাছের কাউকে হারিয়ে ফেলতে চলেছি। তুমি আমায় ছেড়ে যেও না প্রণালী। আমি বাঁচবো না তোমায় ছাড়া।”
“আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, সমুদ্র। আপনি সামলান নিজেকে। কি অবস্থা আপনার। কে করলো এমনটা?”
সমুদ্র নিশ্চুপ। প্রণালী আর বেশি ঘাটালো না। সমুদ্রকে ফাস্ট এইড করে দিলো সন্তপর্ণে। অত:পর দুজনে একসাথে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো। রাতে ঘুমানোর আগে সমুদ্র শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমালো প্রণালীকে। কেন জানি হারানোর ভয় তাকে জেঁকে বসেছে। প্রণালীও কিছু বলল না।
to be continue…..