একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৫৭+৫৮

0
307

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_57+58
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সমুদ্রের হাত ধরে চৌধুরী ম্যানশন থেকে বেরিয়ে আসে প্রণালী। তার মনে চলছিল ভিন্নরকম চিন্তা ভাবনা। বাইরে এসেই সে সমুদ্রের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনি নিজের কাজটা পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। আমার জন্য কি সত্যিই আপনি নিজের পরিবার ত্যাগ করতে চান? দেখুন, আমি কিন্তু অসহায় নেই। আমি চাইলেই আমার বাবার কাছে গিয়ে থাকতে পারি। তাই আপনাকে আমায় নিয়ে..”

প্রণালী নিজের পুরো কথা বলার আগেই সমুদ্র তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”তোমার বিয়ে হয়ে গেছে প্রণালী। এখন তোমার দায়িত্ব আর তোমার বাবার নয়, তোমার দায়িত্ব এখন আমার।”

প্রণালী থমকে যায় সমুদ্রের কথা শুনে। সমুদ্র বলতে থাকে,”আমি জানি, তোমার বাবা একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তার সম্পদের অভাব নেই। তুমি চাইলেই তার কাছে গিয়ে থাকতে পারো। সেখানে আমার কাছে কিছুই নেই। আমার মা আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন, হয়তো আমার ব্যাংক একাউন্টও সিল করে দেবেন। আমার বাবা…তারও কোন পুঁজি নেই৷ তাই এখন বলতেই পারো যে, আমি একজন দেউলিয়া। আমি হয়তো তোমায় তোমার বাবার মতো সুখী রাখতে পারব না। তবে আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব যতটুকু পারি করার। তবে তোমার উপর আমার কোন জোর নেই। তুমি চাইলে এখনই নিজের বাবার কাছে ফিরে যেতে পারো আমি তোমায় বাধা দেব না। তবে আমি কখনোই আর আমার বাড়িতে ফিরব না। আর নাতো মেরুদণ্ডহীন পুরুষের মতো শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ঘরজামাই হবো। এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও তুমি কি করবে।”

প্রণালী দ্বিধায় পড়ে যায়। সমুদ্র তার জন্য এত ত্যাগ করল! প্রণালীর তো এখন উচিৎ সমুদ্রের পাশে থাকা। কিন্তু তারা তো সত্যিকার অর্থেই এখন দেউলিয়া। না আছে মাথার উপর ছাদ আর নাতো কোন রোজকার। কি হবে তাদের ভবিষ্যত? প্রণালী চিন্তায় পড়ে যায়। সমুদ্র যেন বুঝতে পারল প্রণালীর ভাবনা। তাই তো মৃদু হেসে বলল,”আমি কোন না কোন ব্যবস্থা ঠিকই করে নেব। তুমি শুধু আমার হাতটা ধরো।”

প্রণালীর কি হলো সে জানে না। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে লাগল সে সমুদ্রকে। লোকটার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তার কাছে আর কোন উপায় নেই। প্রণালী তার দুই হাত বাড়িয়ে দিলো সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র প্রণালীর হাত শক্ত করে ধরে বলল,”আজ থেকে শুরু হলো আমাদের নতুন লড়াই। জানি, সামনের পথটা খুব একটা মসৃণ হবে না। তবে তুমি পাশে থাকলে আমি সব রকমের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে পারব। আমি আশাবাদী পরিস্থিতি বদলাবে। আমাদেরও সুদিন আসবে।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র নিজের এক বন্ধুর সহায়তায় শহর থেকে দূরে মফস্বল এলাকায় একটা রুম ভাড়া নিয়েছে তাও আবার সেই বন্ধুর থেকেই টাকা ধার নিয়ে। কিছু আসবাবপত্র এবং কয়েকদিনের বাজারের টাকা সে নিজের আইফোন বিক্রি করে দিয়ে জোগাড় করেছে। আসবাপত্র বলতে বিছানা আর রান্নার জন্য একটা ম্যাজিক চুলা। এভাবেই একটা ছোট সংসার গড়ে তুলেছে সমুদ্র। প্রণালী সমুদ্রের অসহায় অবস্থা বুঝতে পারছে। সমুদ্র এবং প্রণালী দুজনেই বড়লোক ঘরের আলালের ঘরের দুলাল/দুলালী। জীবনে কখনোই তারা দরিদ্রতার মধ্যে দিয়ে যায়নি, জীবন সবসময় স্বচ্ছলতা ও আভিজাত্যপূর্ণ ছিল। তবে এখন সময় বদলেছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া দুজনের জন্যই কঠিন।

দুপুরে সমুদ্র বেড়িয়েছে চাকরির খোঁজে। প্রণালী তখন সমুদ্রের আনা ডাল, সবজি চালগুলো দেখছিল। রান্নায় সে একেবারেই পটু নয়। তাই কিছুই করতে পারছিল না। প্রণালীর ভীষণ খারাপ লাগছিল তবে নিজের জন্য নয় সমুদ্রের জন্য। তাই সে ভাবল একবার নিজের বাবা রায়ান সাহেবের সাথে কথা বলবে। তিনি নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন। তাহলেই তাদের আর এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না। তবে সবার আগে সমুদ্রের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে।

ঘামার্ত শরীর নিয়ে সমুদ্র বাইরে থেকে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বাইরে প্রচণ্ড রোদ। এত রোদে থাকার অভ্যাস সমুদ্রের নেই। দিনরাত ২৪ ঘন্টা এসির বাতাসে থেকেছে সে। আর এই বাসায় এসি তো দূর একটা সিলিং ফ্যানও নেই। গরমে সমুদ্রের অবস্থা শোচনীয়। প্রণালী এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো সমুদ্রের কাছে। সমুদ্র পানিটা সম্পূর্ণ খেয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রণালী কিছুক্ষণ আগে পাশের বাসার ভাড়াটিয়ার থেকে একটা হাতপাখা এনেছিল। সেটা দিয়েই সমুদ্রকে বাতাস করে। সমুদ্র কিছুটা হলেও আরামবোধ করে। প্রণালী সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে,”আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? এত গরমে থাকার অভ্যাস তো আপনার নেই আর সত্যি বলতে আমারও নেই।”

সমুদ্র একগাল হেসে বলে,”একটু আগে কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু তুমি এত সুন্দর করে বাতাস করছ যে..আর কষ্ট হচ্ছে না।”

প্রণালী নীরব থাকে স্বল্প সময়। তারপর বলে,”আপনি যদি কিছু না মনে করেন, তাহলে আমি বাবার সাথে যোগাযোগ করি? তিনি নিশ্চয়ই আমাদের সাহায্য করবেন।”

সমুদ্র রেগে যায় কথাটা শুনে। স্পষ্ট বলে দেয়,”আমি এ বিষয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না প্রণালী। আগেও বলেছি আর আবারো বলছি, আমি তোমার বাবার থেকে কোন সাহায্য নিতে পারব না। ”

“কিন্তু কেন সমুদ্র? আপনার সমস্যা তো আপনার মায়ের সাথে, আমার বাবার সাথে তো কোন সমস্যা হয়নি। আর আপনি তো নিজের বন্ধুর থেকে সহায়তা নিয়েছেন তাহলে আমার বাবার থেকে নিতে কি সমস্যা?”

“আমি আমার বন্ধুর থেকে টাকা ধার নিয়েছি। তোমার বাবার থেকে সেটা পারবো না। তাছাড়া তোমার বাবা আমাদের এই অবস্থার কথা জানলে উনি নিশ্চয়ই নিজের আদরের মেয়েকে এখানে এত কষ্টে থাকতে দিতে চাইবেন না। আর আমি তোমাকে আগেও বলেছি, আমি ঘরজামাই হয়ে থাকতে পারবো না। সেটা আমার আত্মসম্মানে আঘাত হানবে। একজন স্ত্রী হিসেবে তোমার কর্তব্য নয় কি আমার আত্মসম্মান বজায় রাখার?”

প্রণালী চুপ হয়ে যায়। সমুদ্রের এই কথার পরে সে আর বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। সত্যি তো একজন স্ত্রী হিসেবে তাকে তার স্বামীর আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে হবে। সমুদ্র প্রণালীকে বলে,”তোমাকে তো একটা খুশির খবর দেওয়া হয় নি?”

“কি খবর?”

“আমার একটা চাকরির জোগাড় হয়েছে?”

প্রণালী খুশি হয়ে বলে,”সত্যি?”

“হুম। ১০ হাজার টাকা বেতন। জানি এটা খুব কম। আমাদের বাসায় কাজের লোকের বেতনও এর থেকে বেশি ছিল। তবে আপাতত আমাদের চলে যাবে। তুমি শুধু এভাবেই আমার পাশে থাকো। দেখবে একদিন আমাদের সুদিন আসবে।”

প্রণালী জোরপূর্বক হাসে। সমুদ্র হঠাৎ প্রণালীকে নিজের খুব কাছে টেনে নেয়। অতঃপর দুষ্টু হেসে বলে,”এখানে তো আমাদের ডিস্টার্ব করার মতো কেউ নেই..তো কি বলো আমাদের অসম্পূর্ণ বাসর টা এখানেই সম্পূর্ণ করি?”

প্রণালী লজ্জায় নুইয়ে পড়ে। যদিও সে এখনো মন থেকে এখনো এসবের জন্য প্রস্তুত নয়। তবে তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লারার মৃত্যুর পর থেকে শান্তকে সে ভীষণ ভাবে ঘৃণা করে, সমুদ্রের সবসময় তার পাশে থাকায় সমুদ্রের প্রতিও ভালো লাগা তৈরি হয়েছে তবে তা ভালোবাসা অব্দি পৌঁছায় নি। কিন্তু স্বামীকে বাঁধা দিতে প্রণালী চায় না। কারণ এতে ফেরেস্তারা লানত দেয়। তাই প্রণালী আজ আর সমুদ্রকে বাঁধা দিলো না। সমুদ্র ধীরে ধীরে প্রণালীকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিতে লাগল। প্রণালীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে নিজের শার্ট খুলল, প্রণালীর বুক থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিলো। প্রণালীর গলায় ডুবিয়ে দিলো মুখ। এভাবেই ধীরে ধীরে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ত থাকে। সমুদ্র ও প্রণালী আরো কাছাকাছি আসতে থাকে। তাদের অসম্পূর্ণ বাসর সম্পূর্ণ হতে থাকে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পুষ্পা চৌধুরী বসে আছেন আরাম কেদারায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে সায়মা চৌধুরী অনেকক্ষণ থেকে বকবক করছেন। কিন্তু তিনি তার কোন কথায় কান দিচ্ছেন না। যেন ওনাকে ব্রাত্য করে রেখেছেন। সায়মা চৌধুরী কথায় কথায় বলেন,”কেমন মা তুমি? নিজের সন্তানের থেকে তোমার কাছে নিজের ইগো বড় হয়ে গেল ভাবি? তুমি মা হিসেবে জঘন্য। তোমাকে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। কালকে ভাইয়াকে শুধু আসতে দাও। তিনি এসে সব ঠিক করবেন।”

“তোমার ভাইয়া কিছু করতে পারবে না। তার কোন ক্ষমতা নেই। আর যদি কিছু করতে চায় তাহলে তাকেও আমি বাড়ি থেকে বের করে দেব। এই বয়সে এসে নিশ্চয়ই তিনি তা চাইবেন না। আর তুমি অনেক বকবক করেছ। এখন যাও এখান থেকে। নাহলে কখন ঘাড়ধাক্কা দেব তার কোন ঠিক নেই।”

“ভাইয়া না আসা পর্যন্ত আমি কোথাও যাব না।”

“বেশ থাক তাহলে। তোমার ভাইয়া আসার পর নাহয় দুই ভাই বোন একসাথে বেড়িয়ে যেও। তবে একটা কথা জেনে রেখো, যতদিন পর্যন্ত না সমুদ্র নিজে থেকে এসে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর ঐ মেয়েটাকে ছেড়ে দেবে ততক্ষণ ও এই বাড়ি তে স্থান পাবে না। আমি জানি, ও বেশিদিন ঐ মেয়ের সাথে থাকতে পারবে না। আমার ছেলের আত্মমর্যাদাই অন্যরকম, শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকার ছেলে ও নয়। এক না একদিন ও আমার কাছে ফিরবেই।”

“তুমি যদি সমুদ্রের আত্মমর্যাদা সম্পদ জানো তাহলে এটা জানবে যে, ও ফিরবে না। নিজের স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকবে তবুও না।”

“ফিরতে ওকে হবেই। মায়ের ভালোবাসার কাছে ঐ মেয়ের ভালোবাসা ধোপে টিকবে না।”

“দেখে নিও, প্রণালীরই জয় হবে। তুমি হেরে যাবে ভাবি।”

“আমি হারতে শিখিনি।”

“কিন্তু এই বার হারবে। চরমভাবে হারবে তুমি।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রণালী ভার্সিটি থেকে ফিরলো। অনেক দেরি করেই ফিরলো। ভার্সিটিতে সামনে তার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য টাকা জমা দিতে হবে। প্রণালীর ল নিয়ে পড়া টাকে রায়ান সমর্থন না করলেও এতদিন যাবতীয় খরচ সেই দিয়েছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। প্রণালী বিবাহিত, এখন আর বাবার থেকে সাহায্য নেয়া ঠিক দেখায় না। কিন্তু টাকার পরিমাণটা মোটেই কম নয়। প্রণালী এমনিতেই একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে। তাই অনেক খরচা। প্রণালী চায় না রায়ানের সাহায্য নিয়ে সমুদ্রকে ছোট করতে। তাছাড়া সমুদ্রের যা আত্মাভিমানী সে রাজিও হবে না। তাই এখন প্রণালীকে বড় চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কি করবে এখন সে? এসব ভাবতে ভাবতেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ তার নজর যায় পাশেই একটি শপিং কমপ্লেক্সে। হতবাক হয়েই সেদিকে তাকিয়ে থাকে। প্রণালী দেখে সমুদ্র শপিং কমপ্লেক্সে কিছু মানুষকে ড্রেস দেখাচ্ছে। প্রণালী ছুটে যায় সেদিকে। প্রণালীকে দেখে সমুদ্র অবাক হয়ে বলে,”তুমি! এখানে কি করছ?”

প্রণালী বলে,”আপনি এখানে সেলস ম্যানের কাজ নিয়েছেন সমুদ্র?”

সমুদ্র হতাশ সুরে বলে,”তুমি বাসায় যাও। বাসায় গিয়ে কথা হবে।”

প্রণালী আর কথা না বাড়িয়ে ফিরে চলে। তার মন একদম খারাপ হয়ে গেছে। সমুদ্র আজ শুধুমাত্র তার জন্য এত সমস্যায় পড়ে গেছে। এত বড়লোক পরিবারের ছেলে কিনা শেষপর্যন্ত সেলস ম্যানের কাজ করছে! প্রণালী আর কিছু ভাবতে পারে না। ভীষণ কান্না পায় তার। বাসায় ফিরে সে আর কিছু খায় ওনা। না খেয়ে চুপচাপ বসে থাকে। অপেক্ষা করতে থাকে সমুদ্রের আসার।

সন্ধ্যার কিছু আগে সমুদ্র ফিরে আসে বাসায়। তার হাতে ছিল দুটো প্যাকেট। বাসায় এসে সে প্যাকেট দুটো প্রণালীর হাতে দিয়ে বলে,”তুমি তো আর রান্না করতে পারো না। তাই আমি বাইরে থেকে খাবার আনলাম। তবে এভাবে কিন্তু বেশিদিন চলা যাবে না। তুমি রান্নাবান্না শিখে নাও। কেমন?”

প্রণালী আজ আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। সমুদ্র প্রণালীকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”কাঁদছ কেন পাগলী মেয়ে? কি হয়েছে? আমি সেলস ম্যানের কাজ করছি দেখে কি তোমার খারাপ লাগছে? কি করবো বলো….জানি আমার বিদেশের ডিগ্রী আছে কিন্তু এই দেশে চাকরি পাওয়া তো এত সহজ না। আমি কত যায়গায় ঘুরেছি,কত জনের দ্বারে দ্বারে গেছি চাকরির জন্য কিন্তু পাইনি। সবাই এক্সপেরিয়েন্স চায়। হয়তো কিছুদিন অপেক্ষা করলে পেয়ে যাব কিন্তু ততদিন তো আমাদের খেয়ে বাঁচতে হবে। টাকা ছাড়া যে বাঁচা সম্ভব নয়। তাই আমি..”

“সব আমার জন্য হয়েছে। আমার জন্য আপনি এত কষ্টে আছেন। কেন আপনি আমার প্রেমে পড়লেন সমুদ্র? আমার প্রেম আপনাকে কি দিল? শুধুই কান্না। আমার প্রেম শুধুই আপনার দূর্ভাগ্যের কারণ। সব কেড়ে নিয়েছে আপনার থেকে।”

“হু, কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছুই। কিন্তু তার বিনিময়ে আমি যা পেয়েছি সেটাও কম না। তোমার প্রেম আমায় শুধু কাঁদায় নি হাসিয়েও সে। তোমাকে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। আমার জীবনে কখনোই সেরকম কোন উদ্দ্যেশ্য ছিল না। মমের ইচ্ছা ছিল, আমায় তার কোম্পানির দায়িত্ব দেবেন। আমিও আলাদা করে আর কিছু ভাবি নি। তবে এখন আমার একটা ইচ্ছা আছে। তোমাকে নিয়ে ছোট্ট একটা সংসার সাজাবো। আমাদের ঘর আলো করে রাজপুত্র-রাজকন্যারা আসবে। আমার এই ইচ্ছা পূরণের জন্য একটু কষ্ট তো করতে হবে। সেটা আমি করে নেব। শুধু তুমি আমার পাশে থাকো। থাকবে তো?”

প্রণালী নিজের চোখের জল মুছে বলে,”পারব।”

সমুদ্র প্রণালীর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে বলে,”আমায় একটু বাতাস করো তো৷ গরম লাগছে খুব।”

প্রণালী সমুদ্রকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে। এরপর আসে খাওয়া দাওয়ার পালা। প্রণালী দুটো থালা আনে। সেখানে খাবার বাড়ে। ভাত, ডাল আর একটু আলু ভাজি। সমুদ্র হালকা হেসে বলে,”হাতে খুব একটা টাকা ছিল না। তাই বেশি কিছুর ব্যবস্থা করতে পারি নি। তুমি আপাতত এগুলো দিয়েই ম্যানেজ করে নাও। এগুলো খেয়ে নাও। পরে নাহয়…”

“আমি এগুলো দিয়েই খেতে পারব। আপনাকে এত চিন্তা করতে হবে না।”

“তুমি তো সবই পারো। এখানেও বেশ ভালোই মানিয়ে নিচ্ছ। আমার অসুবিধা হচ্ছে। জানো, আমি না এগুলা একদম খেতে পারিনা। একটু খাইয়ে দেবে, আমার বিশ্বাস তুমি খাইয়ে দিলে আমি খেতে পারব।”

প্রণালী মৃদু হেসে সমুদ্রকে খাইয়ে দিতে থাকে। সমুদ্র খেতে থাকে আয়েশ করে। এই সাধারণ জীবন যাপনও এখন তার কাছে অসাধারণ মনে হচ্ছে। প্রণালীকে পেয়ে যেন সে জীবনে সব সুখ পেয়ে গেছে। যেই সুখের কোন তুলনাই চল না অন্য কিছুর সাথে।

প্রণালী ভাত খাওয়ানো শেষ করার পর সমুদ্র তাকে বলে,”একটা গান শুনবে?”

“জ্বি, বলুন।”

❝যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?

যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়?❞

to be continue…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে