#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_55(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
“যেই ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে টায়রা। ঐ মেয়েটা ছলাকলা করে আমার বাবাই এর মাথা খেয়েছে। এবার কি হবে?”
টায়রা মনযোগ দিয়ে শুনল পুষ্পা চৌধুরীর কথা। সেও সমুদ্রর পরিবর্তিত ব্যবহার খেয়াল করেছে। তবে সে পুষ্পা চৌধুরীকে ভরসা দিয়ে বলে,”আপনি এমন কেন বলছেন আন্টি? আপনি পুষ্পা..এত সহজে ঝুকলে তো চলবে না। আপনার বাবাই আর আপনার মধ্যে যে এসেছে তাকে সরিয়ে দিন।”
“সরিয়ে দেব?”
“হু, দিন। আঙ্কেল তো এই সময় নেই। এটাই তো সুবর্ণ সুযোগ আন্টি। সমুদ্র আর যাই বলুক, আপনার আর প্রণালীর মধ্যে যেকোন একজনকে বেছে নিতে হলে ও আপনাকেই বেছে নেবে।”
পুষ্পা চৌধুরী যেন হারানো ভরসা ফিরে পায়। তিনি বলেন,”ঠিক বলেছ তুমি। আমি এবার ঐ প্রণালী নামের পথের কাটাকে যে ভাবেই হোক না কেন আমার পথ থেকে সরিয়ে দেব। তুমি আমার সাথ দেবে তো?”
“আমি সাথ না দিলে কে সাথ দেবে আপনাকে? আমি তো আপনার পাশেই আছি, আন্টি। ঐ প্রণালীকে এবার আমি সরিয়ে দেব সমুদ্রর জীবন থেকে। সমুদ্র শুধু আমার হবে।”
~~~~~~~
সমুদ্র গোসল করে একটা তোয়ালে গায়ে পেচিয়ে বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। প্রণালীও আচমকা তখন রুমে চলে এলো। সমুদ্রকে এই অবস্থায় দেখে দ্রুত সে নিজের চোখ ফিরিয়ে নিলো। সমুদ্রর মধ্যে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না। সে স্বাভাবিক ভাবেই ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগল। প্রণালী পিছনে ফিরে ছিল। সমুদ্র ড্রেস পড়ে নিয়ে বলল,”এখন তাকাতে পারো আমার দিকে।”
প্রণালী তাকায় সমুদ্রর দিকে। সমুদ্র লাজুক হেসে বলে,”তুমি তো আমার স্ত্রী, পরস্ত্রী তো নও। তাহলে আমাকে এভাবে দেখে লজ্জা পেলে কেন?”
প্রণালী আমতা আমতা করতে লাগল। সমুদ্র প্রণালীর একদম কাছে এসে বললো,”ওহ বুঝেছি। এখনো আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এটাই কারণ না? ”
বলেই এগোতে লাগল প্রণালীর দিক। প্রণালী পিছাতে পিছাতে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। সমুদ্র প্রণালীকে বাগে পায় যেন। তার হাতে হাত দিয়ে ঠোঁটে ডুবিয়ে দেয় ঠোঁট। প্রণালীর হৃদস্পন্দন আচমকা খুব বেড়ে যায়। সমুদ্রর থেকে এমন কিছু একদম আশা করে নি। ধীরে ধীরে সমুদ্রের স্পর্শ আরো গভীর হতে থাকে। সমুদ্র প্রণালীকে কোলে তুলে নেয়। তাকে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। প্রণালীর পেট থেকে শাড়ির আঁচলটা সরাতে যাবে এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ হয়। সমুদ্র বিরক্ত হয় ভীষণ। এই সময় ডিস্টার্ব করলে কোন পুরুষ স্বাভাবিক থাকে? সে নিজেকে সামলে শার্টটা পড়ে নেয়। প্রণালীও নিজেকে ঠিক করে।
সমুদ্র খিটখিটে মেজাজ নিয়ে দরজা খুলে টায়রাকে দেখে ভীষণ রেগে যায়। বলে,”এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছ? এটা কোন টাইমিং হলো?”
“মানে?”
সমুদ্র মুখ সামলায়। রেগে কি বলতে যাচ্ছিল।
“আমি ঘুমাচ্ছিলাম। তুমি ডিস্টার্ব করলা কেন টায়রা?”
টায়রা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,”তুমি বদলে গেছ সমুদ্র। আগে তো তুমি এমন ছিলে না। তাহলে এখন এমন করছ কেন?”
সমুদ্রর তো ইচ্ছা করছিল টায়রার গলা টিপে তাকে মেরে ফেলার। কিন্তু নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে বলল,”আমার খুব ঘুম পেয়েছে। প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দেও। তোমার এসব ন্যাকামি দেখার টাইম আমার নেই। গো টু দা হেল।”
সমুদ্র দরজা লাগাতে গেলে টায়রা আটকে দিয়ে বলে,”কে কোথায় যাবে সেটা তো একটু পরেই দেখা যাবে। তুমি ঐ প্রণালীকে নিয়ে নিচে এসো জলদি। তোমার মম ডাকছে।”
বলেই চলে যায় টায়রা। সমুদ্র অসহায় চোখে প্রণালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”সরি, রোম্যান্সটা ঠিক মতো করতে পারলাম না। চলো একটু নিচে যাই। মমের কথাটা শুনে আসি। তারপর মন, শরীর সব ভড়ে রোম্যান্স করব।”
প্রণালীর ফর্সা গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কানও গরম হয়ে যায় এমন কথা শুনে। সে দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিতেই সমুদ্র প্রণালীকে টেনে গালে চুমু খেয়ে বলে,”তুমি অনেক সুন্দরী প্রণালী।”
প্রণালীর কি হচ্ছে সে জানেনা। অন্যসময় হলে সে কোন পুরুষকে নিজের এত পাশে আসতে দিতো না। কিন্তু সমুদ্রকে আটকানোর সাধ্যি তার নেই। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তার সাথে? লোকটা তার স্বামী বলে? নাকি মায়া জন্মেছে লোকটার প্রতি?
প্রণালী বোঝার চেষ্টা করল। এরমধ্যে আবার সমুদ্র তাকে নিয়ে গেল পুষ্পা চৌধুরীর সামনে। পুষ্পা চৌধুরী দুজনকে একসাথে দেখে জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যান। তবে নিজেকে সামলান। তিনি তো পুষ্পা, এত সহজে ঝুঁকবেন না। তাই প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠেন,”এই মেয়ে আমার ছেলের থেকে দূরে সরো।”
প্রণালী সরতে চাইলে সমুদ্র তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”তুমি যেন কি বলার জন্য ডেকেছিলে মম। জলদি বলো তো। তোমার কথা শোনার জন্য জরুরি কাজ ফেলে এসেছি।”
পুষ্পা চৌধুরী বলেন,”এই মেয়েটার সাথে তোমার সম্পর্ক আমি আর মেনে নিতে পারছি না বাবাই। তুমি আমার ছেলে..বিয়ে করলে তুমি আমার পছন্দের মেয়েকেই করবে। কিন্তু তোমার বাবা মাঝখান থেকে এমন একটা কাজ করলেন যে..যাইহোক ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ তো আছে এখন। এই দেখো বাবাই।”
সমুদ্র অবাক হয়ে জানতে চায়,”কি এটা?”
“এটা একটা পেপার। এখানে লেখা আছে তুমি আর প্রণালী একে অপরের সাথে মানিয়ে নিতে পারছ না। ৬ মাস আগে তো ডিভোর্স হবে না তবে এখানে সই করলে সেপারেশনের ব্যবস্থা করা যাবে। তাহলে এই মেয়েটা এই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে। ৬ মাস পর নাহয় ডিভোর্স হবে কিন্তু ততদিন এই মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারবো না। এই মেয়ে সই করে দাও।”
প্রণালী চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। পুষ্পা চৌধুরী বলে,”তুমি যদি একজন ভালো মায়ের মেয়ে হও তাহলে এখনই এই পেপারে সই করবা।”
প্রণালীর কানে বাজতে থাকে কথাটা। মা তার দূর্বলতা। মায়ের সম্পর্কে এমন কথা মানবে না সে। তাই দ্রুত পেপারটা নিয়ে সই করতে উদ্যত হলো। সমুদ্র সহসা প্রণালীর হাত থেকে পেপারটা কেড়ে নিলো। প্রণালী, পুষ্পা অবাক! সমুদ্র পেপারটা ছিড়ে ফেলল। পুষ্পা চৌধুরী বলে উঠলেন,”এটা কি করলে বাবাই?”
সমুদ্র বলল,”আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, মম। তোমার সাথে অভদ্রতা করতে চাই না। কিন্তু প্রণালী আমার স্ত্রী, ওকে আমি সজ্ঞানে বিয়ে করেছি এবং আমি ওর সাথেই সংসার করতে চাই।”
“বাবাই..এ কি বলছ তুমি? এই মেয়ের সাথে তুমি কেন সংসার করবে?”
“কারণ আমি ভালোবাসি প্রণালীকে।”
প্রণালী অবাক হয়ে তাকালো সমুদ্রর দিকে। পু্ষ্পা চৌধুরী বললেন,”এই মেয়ে কি তোমায় কোনভাবে ব্রেনওয়াশ করেছে বাবাই? তুমি এমন করছ কেন? তুমি তো কখনো আমার অবাধ্য হওনা। এই মেয়ে ছলাকলা করে ঠিক তোমায় বশ করে নিলো।”
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মম, তোমার জন্য আমার মনে সবসময় বিশাল স্থান থাকবে। তবে সেই মনের কোঠায় একটু স্থান প্রণালীকে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।”
“আমি এই মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসেবে মানি না, মানি না, মানি না।”(চেচিয়ে)
“কিন্তু আমি মেনে নিয়েছি মম। ভালো হবে যদি তুমিও মেনে নাও। কারণ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি ওর সাথেই আমি সংসার করব।”
“তাহলে টায়রার কি হবে বাবাই? মেয়েটা তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে!”
“তুমি ওকে বোঝাও, আমার ওর প্রতি কোন আগ্রহ নেই। একটা ভালো ছেলে দেখে যেন বিয়ে করে নেয়। আমি আসছি।”
বলেই সমুদ্র প্রণালীকে নিয়ে যায়। পুষ্পা চৌধুরী শুধু ফুঁসতে থাকেন। এমন কিছু তিনি আশা করেন নি। তার বাবাই কি তাহলে তার হাতের বাইরে চলে গেলো!
to be continue…..
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_56(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
পুষ্পা চৌধুরী নিজের রুমে বসে সমুদ্রের বলা কথা গুলো ভাবছিলেন আর ক্রোধে ফুঁসছিলেন। তার সব রাগ গিয়ে জমা হচ্ছিল প্রণালীর উপর। কারণ তার মনে হচ্ছিল প্রণালী সমুদ্রকে ভুলভাল বুঝিয়ে নিজের বশে করে নিয়েছে। তার এই অবস্থার মাঝেই তার সামনে উপস্থিত হয় টায়রা। তার হাতে ছিল একটা ট্রলি ব্যাগ। সে পুষ্পা চৌধুরীর সামনে এসে বলে,”আন্টি আমি যাচ্ছি।”
পুষ্পা চৌধুরী অবাক গলায় বলেন,”যাচ্ছ মানে? কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
টায়রা মলিন কন্ঠে বলে,”আমি ফেলনা নই আন্টি। সমুদ্র আমাকে বলেছে আমার উপর ওর কোন আগ্রহ নেই। আমার মনে হয় না, ও আমাকে আর বিয়ে করতে চায়। তাছাড়া এখন মমও সব জেনে গেছে। মম চায় না, আমি কোন বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করি।”
পুষ্পা চৌধুরী অস্থির হয়ে বলেন,”তোমার মমকে আমি বোঝাবো। এটা..এটা কোন বিয়েই নয়।”
“আপনি তো চেনেন আমার মমকে। মন যা বলেছেন তার অবাধ্য হওয়ার সাধ্য আমার নেই। আমি এখন আসছি৷ ভালো থাকবেন।”
বলেই টায়রা বেরিয়ে যায়। পুষ্পা চৌধুরী হাজার চেষ্টা করেও টায়রাকে আটকাতে পারেন না। এতে করে তার মাথায় রাগ আরো চেপে বসে প্রণালীর প্রতি। তিনি চিৎকার করে বলেন,”এই প্রণালী মেয়েটা এসে আমার এতদিনের করা সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো। প্রথমে আমার বাবাইকে আমার থেকে কেড়ে নিলো আর এখন টায়রাকেও বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য করল। এই প্রণালীকে তো আমি ছাড়ব না। এতদিন অনেক ছাড় দিয়েছি আর নয়। এবার আমি নিজের আসল রূপ দেখাব ওকে!”
~~~~~~~~~~~
সমুদ্র ও প্রণালী দুজনেই রুমের মাঝে রয়েছে। সমুদ্র প্রণালীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিল কিন্তু প্রণালী অন্য ভাবনায় মত্ত ছিলো। লারার মৃত্যুটা সে এখনো মেনে নিতে পারে নি। এদিকে শান্তর কথাও ভাবাচ্ছে তাকে। ছেলেটা তো সুবিধার নয়। না জানি এখন কোথায় ওঁত পেতে বসে আছে সুযোগের সন্ধানে। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই আবার তার বা সমুদ্রের জীবনে সমস্যা তৈরির চেষ্টা করবে। এদিকে প্রণালী এখনো নিজের অনুভূতি নিয়ে নিশ্চিত নয়৷ সমুদ্রর ব্যবহারের আমুল পরিবর্তন তাকে ভাবাচ্ছে। সমুদ্রের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। সমুদ্র তার স্বামী জন্যই সেদিন যখন তার পাশে আসতে চাচ্ছিল তখন বাঁধা দেয়নি। কারণ এতে স্বামীর হক নষ্ট হয়। কিন্তু প্রণালীর জন্য এখনো সমুদ্রের প্রতি কোন গভীর অনুভূতি তৈরি হয়নি।
আবার সামনেই প্রণালীর ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম। অনেকদিন পড়াশোনায় মনযোগ দেয়নি সে। তাই ভাবল এখন থেকে জোরদমে পড়াশোনা শুরু করবে। প্রণালী এসব ভাবনা শেষ করে সমুদ্রের দিকে তাকায়৷ সমুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ। প্রণালী বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে কথা ঘোরানোর জন্য বলে,”আচ্ছা, আপনার ড্যাড কোথায়? এসেছি থেকে ওনাকে দেখছি না! সায়মা আন্টিও তো নেই।”
“ড্যাড বিজনেস মিটিং-এ বাইরে গেছেন। দুদিন পর ফিরবে। আর ফুপি তার শ্বশুর বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে চিন্তা করো না, আমি ফুপিকে বলেছি আজ এসে তোমার সাথে দেখা করে যাবে। আমি তো জানি, তোমার এখানে নিজেকে বড্ড একা একা লাগে। মমও তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করে না।”
প্রণালী নীরব থাকে। এই নীরবতার মাঝেই সমুদ্র অপলক দেখতে থাকে প্রণালীকে।
★★★★★★★★★★
প্রণালী ও সায়মা চৌধুরী দুজনে এখন রান্নাঘরে অবস্থান করছে। কিছুক্ষণ আগেই সায়মা চৌধুরী এসেছেন। সায়মা চৌধুরী কিছুক্ষণ গল্প করলেন প্রণালীর সাথে। কথায় কথায় জানতে পারলেন যে, প্রণালী সেরকম রান্নাবান্নায় পটু নয় তবে রান্না শিখতে চায়। এজন্যই মূলত তিনি প্রণালীকে রান্নাঘরে নিয়ে এসেছেন রান্না শেখাতে। আপাতত তিনি মাংস রান্না করা শেখাচ্ছেন।
মুরগীর মাংসে একটু লবণ দিয়ে বলেন,”এই দেখ, এভাবে পরিমাণমতো লবণ দিতে হবে। রান্নায় লবণের পরিমাণ ঠিক না হলে কিন্তু স্বাদ ভালো হয়না। আর লবণ বেশি হলে তো খাবার মুখেই দেওয়া যায়না।”
রান্না শিখতে শিখতেই আবেগপ্রবণ হয়ে যায় প্রণালী। তার চোখের কোণে জলে ভিজে যায়। সায়মা চৌধুরী সেটা নোটিশ করে বলেন,”তোমার চোখে জল কেন প্রণালী?”
প্রণালী হাতের উলটো পিঠে চোখের জল মুছে বলে,”আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। মা বেঁচে থাকলে হয়তো তিনিই নিজের হাতে আমায় রান্না শেখাতেন।”
সায়মা চৌধুরী প্রণালীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,”তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি মাঝে মাঝেই এ বাড়িতে এসে তোমায় রান্না শেখাবো।”
তখনই পুষ্পা চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন,”রান্না শেখানোর এত শখ হলে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শেখাও। আমার বাড়িতে আর এসব নাটক চলবে না।”
“ভাবি!”
পুষ্পা চৌধুরী কাউকে পরোয়া করলেন না। প্রণালীর সামনে এসে তার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,”যবে থেকে তুমি এই বাড়িতে এসেছ তবে দেখে আমার সাজানো গোছানো সংসারটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়ার চেষ্টা করেছ। আমার বাবাইয়ের মাথা খেয়েছ, রান্নাঘরেও নিজের দাপট দেখাচ্ছ, ক’দিন পর তো আমার সম্পত্তির দিকে হাত বাড়াবে!”
প্রণালী হতবাক হয়ে যায় পুষ্পা চৌধুরীর কথা শুনে। প্রতিবাদী কন্ঠে বলে,”আপনি ভুল ভাবছেন। আমার এমন কোন চিন্তা নেই।”
“চুপ করো মেয়ে। আমায় ঠিক ভুলের পার্থক্য বোঝাতে এসো না। অনেক সহ্য করেছি আর না। তোমাকে আমি আর এক সেকেন্ডও আমার বাড়িতে দেখতে চাই না। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।”
বলেই তিনি প্রণালীকে রান্নাঘর থেকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকেন। সায়মা চৌধুরী তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন কিন্তু পারেন না। পুষ্পা চৌধুরী প্রণালীকে বাড়ির গেটের বাইরে বের করে দিয়ে বলেন,”দূর হয়ে যাও এখান থেকে!”
এমন সময় সমুদ্র হঠাৎ পেছনে থেকে বলে ওঠে,”মম, এটা কি করছ তুমি?”
পুষ্পা চৌধুরী তেজ দেখিয়ে বলেন,”একদম ঠিক করেছি আমি। বাবাই, তুমি এই মেয়ের হয়ে আর কোন ফোপরদালালি করতে আসবে না। আমার বাড়িতে এই মেয়ের আর স্থান হবে না। এই বাড়িটা আমার নামে। এখানে কে থাকবে না থাকবে সেই সিদ্ধান্তও আমার।”
“প্রণালী আমার স্ত্রী। ও এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে ওঠে সমুদ্র। পুষ্পা চৌধুরীও দমে যাওয়ার পাত্রী নন। তিনিও বলেন,”আমি যা বলেছি তাই হবে। এই বাড়ি আমার। তাই এখানে আমার কথাই শেষ কথা।”
সমুদ্রর মাথায় এবার জেদ চেপে যায়। সে বলে,”যদি তুমি আমার স্ত্রীকে এই বাড়িতে থাকতে না দাও, তাহলে আমিও এই বাড়িতে থাকব না, মম।”
নিজের ছেলের এত বড় ধৃষ্টতা দেখে চমকে ওঠেন পুষ্পা চৌধুরী। অবাক হয়ে বলেন,”এটা তুমি কি বলছ বাবাই? এই মেয়ের জন্য তুমি বাড়ি ছাড়বে? নিজের মায়ের থেকেও আজ এই মেয়ে তোমার কাছে বড় হয়ে গেল!”
“ও আমার স্ত্রী মম। ওকে আমি বিয়ে করেছি যখন ওর সব দায়িত্ব আমার। যেখানে ওর কোন সম্মান নেই সেখানে আমি কিভাবে থাকি?”
পুষ্পা চৌধুরী ক্রোধে অন্ধ হয়ে যান। হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে বলেন,”বেশ, তাহলে তুমিও বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে। আমি ধরে নেব, আমার ছেলে মারা গেছে!”
“মম!”
“ভাবি তুমি এসব কি বলছ!”
সায়মা চৌধুরীর অস্থির কন্ঠ।
সমুদ্র যখন হতবিহ্বল হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল তখন পুষ্পা চৌধুরী নির্দয়ের মতো বলেন,”এই বাড়ি থেকে বের হলে এটা ভুলে যাবে যে, আমি তোমার মম। শুধু তাই নয়, একবার এই বাড়ির বাইরে পা রাখলে এই বাড়ির দরজা তোমার জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।”
সমুদ্র নিজের মায়ের এমন ব্যবহারে স্তম্ভিত। যেই মা ছোটবেলা থেকে এত ভালোবেসেছে সে কিনা এমন কথা বলছে! সমুদ্রের মাথায় জেদ চেপে বসল। সে প্রণালীর হাত শক্ত করে ধরে বলল,”চলো প্রণালী। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকব না। সবার সাথে আমি সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।”
প্রণালী বলে,”যা বলছেন ভেবে বলছেন তো? এরজন্য পস্তাবেন না?”
“কখনোই না।”
বলেই সে প্রণালীর হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হতে উদ্যত হয়। পুষ্পা চৌধুরী আজ অহংকারে আর রাগে একদম অন্ধ। তিনিও আটকাচ্ছেন না। সায়মা চৌধুরী এসে কাঁদছেন তার সামনে। কিন্তু তবুও তার মন গলছে না। নিজের একমাত্র সন্তানকে তিনি চোখের সামনে বের হয়ে যেতে দিলেন!
to be continue…..