#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_53
#ইয়াসমিন_খন্দকার
কেবিন নং ৩১৩ থেকে উদ্ধার হলো একটা মেয়ের ঝুলন্ত ম**রদেহ। প্রণালী ছুটে এসে বসলো মেয়েটির পাশে। মেয়েটির চোখে এখনো বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে আছে। যা দেখে বোঝাই যাচ্ছে মৃত্যুর আগে মেয়েটা কাঁদছিল। এক বিশাল দুঃখের সমুদ্র যেন লুকিয়ে আছে এই চোখ দুটোর মাঝে।
শান্ত এলো প্রণালী আসার ঠিক কিছুক্ষণ পড়ে। এসে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইল। অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,”লারা…”
লারার মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি লেপ্টে ছিল৷ হয়তো মৃত্যুর পূর্বে এই হাসিটা সে হেসেছিল শান্তর উদ্দ্যেশ্যে। মুক্তি চেয়েছিল তো সে লারার কাছে। মেয়েটা দিয়ে গেল মুক্তি। পূরণ করল নিজের ভালোবাসার মানুষটার ইচ্ছা। জীবনে ১২ টা বছর ধরে যেই মানুষটাকে ভালোবাসছে, মৃত্যুর আগে তার ইচ্ছাটা পূরণ করে প্রমাণ দিয়ে গেল নিজের ভালোবাসার। শান্ত নিশ্চুপ, হতবাক নয়নে তাকিয়ে রইল লারার মৃতদেহের দিকে। প্রণালী লারার পাশে বসে কেঁদে চলেছে। কোথাও একটা গিয়ে এই মেয়েটার কষ্ট সে উপলব্ধি করতে পেরেছে। গতকাল মেয়েটা তাকে মা*রতে গিয়েও মারেনি। আকড়ে ধরেছিল তার হাত। আর আজ নিজেকেই শেষ করছিল। এটাই কি তবে প্রেম? যেই প্রেম হাসাতে পারে, আবার কাঁদাতে পারে..এমনকি কারো জীবন কেড়েও নিতে পারে। প্রণালীর বুকটা ফেটে যাচ্ছিল লারার জন্য। এরমধ্যে শুনতে পেল কিছু মানুষের কানাঘুষা। তারা বলছিল,”এরা তো পরকীয়া করেছে..এজন্যই তো বেচারি মেয়েটা আত্ম** করল। নিজের স্বামীর পরকীয়া কোন মেয়ে মেনে নিতে পারে।”
সবার আঙুল ছিল শান্ত ও প্রণালীর দিকে। প্রণালী হতবাক! পরিস্থিতি এভাবে তাকে অপরাধী বানিয়ে দিলো! প্রণালী একেবারে ভেঙে করল। এতসব মানুষের মধ্যে তাকে সমর্থন করার, তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য কি কেউ নেই? প্রণালীর বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। এরমধ্যে হঠাৎ সে খেয়াল করল কেউ তার কাধে হাত রাখল। প্রণালী চোখের জল মুছে পিছন ফিরে তাকায়। সমুদ্র দুটো হাত বাড়িয়ে রেখেছে প্রণালীর দিকে। প্রণালী ফিরে তাকাতেই বলে,”উঠে এসো তুমি।”
প্রণালী মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত। পাগলের মতো ছটফট করছিল মেয়েটা। সমুদ্র তার দিকে হাত বাড়াতেই সে বলতে থাকে,”আমি..আমি পর** করিনি,আমার জন্য লারা মরেনি। আমি কিছু করিনি..আমি নির্দোষ। কেউ আমায় বিশ্বাস করছে না..কেউ না..”
“আমি তোমায় বিশ্বাস করি প্রণালী। তুমি উঠে এসো।”
প্রণালী যেন হঠাৎ করে একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ খুঁজে পায়। সমুদ্রর বাহু ধরে উঠে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে অবিরত। সমুদ্র প্রণালীর চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,”যে যাই বলুক আমি জানি তুমি শান্তর সাথে..এটা অসম্ভব। তোমার চোখে ওর জন্য যে ঘৃণা আমি দেখেছি তা মিথ্যা নয়। তোমাকে সবাই দোষ দিলেও আমি তোমাকে সাপোর্ট করব।”
প্রণালীর হঠাৎ কি হলো সে জানে না। আচমকা সে জড়িয়ে ধরল সমুদ্রকে। সমুদ্রও নিস্তেজ থাকল না। প্রণালীর মাথায় ভরসায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,”সব ঠিক হয়ে যাবে।”
~~~~
পুলিশ এলো ঘটনাস্থলে। তারা এসে আশেপাশের প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের সাথে দেখা করল। শুনল তাদের কথা। প্রণালীকে রুমে এনে জোর করে ঘুমাতে বলেছে সমুদ্র। প্রণালীও শুয়ে পড়েছে বিছানায়। তবে তার ঘুম আসছিল না। লারার কথা মনে আসছিল বারবার। আর ভেসে আসছিল মানুষের বলা কথাগুলো। তার মন থেকে কেউ যেন বারবার তাকে বলছে,”তুই অপরাধী প্রণালী..তুই পাপী। তোর জন্য লারা মরেছে…”
প্রণালী শান্তি পাচ্ছিল না কিছুতেই। তবে একসময় সে ঘুমের জগতে পা রাখল। সমুদ্র চুপচাপ তার পাশেই বসে রইল।
পুলিশ শান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করল কিছুক্ষণ। একজন অফিসার শান্তকে বলল,”আপনার স্ত্রীর সাথে কি কোন বিষয় নিয়ে আপনার ঝামেলা চলছিল যার কারণে তিনি এমন একটা স্টেপ নিলেন?”
শান্ত স্বাভাবিক ভাবে বলে,”না।”
পুলিশ অফিসার শান্তকে পরখ করে নেয় ভালো ভাবে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছিল না তার স্ত্রীবিয়োগ ঘটেছে। কেমন যেন নির্লিপ্ত লাগছে। চোখমুখে দুঃখের লেশমাত্র নেই। কিছুক্ষণ পরেই তিনি পুনরায় শুধান,”আপনাদের বিয়ের কয়দিন হলো?”
“২ সপ্তাহ।”
“ও, নিউলি ম্যারেড কাপল। হানিমুনে এসেছিলেন বুঝি?”
“জ্বি।”
“আপনার স্ত্রীকে কি আপনি ভালোবাসতেন না?”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন?”
“কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর কথায় জানতে পারলাম যেই সময় আপনার স্ত্রীর ঝুলন্ত বডি উদ্ধার করা হলো সেই সময় নাকি আপনাকে অন্য এক মহিলার সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়…”
“এই বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইছি না। আপনারা এখানে লারার মৃত্যুর তদন্ত করতে এসেছেন সেটাই করুন..আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তদন্ত করার দরকার নেই।”
“কিন্তু যদি আপনার ব্যক্তিগত জীবনই আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে তো আমাদের তদন্ত করতেই হবে।”
“মানে?”
“আমার জোহরীর চোখ মিস্টার শান্ত। এই পেশায় তো কমদিন পার করিনি। তাই অপরাধের গতিবিধি সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা আছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা সুইসাই* নয় এটা মাডার। বাকিটা তো তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে। তবে আপনাকে এখন আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে?”
“থানা..থানায় কেন?”
“বারে..আপনার স্ত্রী মারা গেছে তাও কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। স্বাভাবিক কথায় যাকে বলে অপমৃত্যু। আপনাকে কিছু ফর্মালিটি তো মেইনটেইন করতেই হবে। তাছাড়া আমাদের আরো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে আপনাকে।”
শান্ত একটু বিচলিত হলো। ভয়ও পেল কিছুটা। ঘামল বেশ। চতুর পুলিশ অফিসার শান্তর দিকে নিজের রুমাল বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”ঘামটা মুছে নিন। সামনে আরো ঘামতে হবে।”
শেষ কথাটা বিড়বিড় করে বললেন যা শান্তর কানে গেল না।
শান্ত রুমালটা নিয়ে ঘাম মুছল। তারপর রুমালটা আবার ফেরত দিলো।
~~~~~~~~
সমুদ্র প্রণালীর মাথার পাশে বসে ছিল। এমন সময় তাদের রুমে কেউ কড়া নাড়ল। সমুদ্র গিয়ে দরজাটা খুলল। দেখতে পেল একজন পুলিশ অফিসারকে। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,”মিসেস প্রণালী জাহান কি এই রুমে আছেন?”
“জ্বি, উনি আমার স্ত্রী।”
“আচ্ছা, ওনাকে একটু ডেকে দিন তো।”
“কেন?”
“কিছু জরুরি কথা বলার আছে ওনার সাথে। মিসেস লারার মৃত্যুর কেস সম্মন্ধে।”
“আমার স্ত্রী এসব ব্যাপারে কিছু জানে না। তাই ওনাকে এসব ব্যাপারে জড়াবেন না।”
“আমার তো আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনি নিজেও এই ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন। আপনার স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থাও পাওয়া গেল আবার তখনই সেই পুরুষের স্ত্রীর ঝুলন্ত বডি পাওয়া গেল। এরপরেও আপনি বলছেন আপনার স্ত্রীর এই কেইসের সাথে কোন সম্পর্ক নেই? শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন মিস্টার?”
সমুদ্র ভীষণ রেগে গেলো। কিন্তু নিজের রাগ প্রকাশ করতে পারল না। এরমধ্যে প্রণালীর ঘুম ভেঙে গেল শব্দে। সে উঠে এসে দাঁড়ালো সমুদ্রর পাশে। পুলিশ অফিসার বলে উঠল,”আপনিই তাহলে প্রণালী জাহান?”
প্রণালী বলল,”জ্বি।”
সমুদ্র প্রণালীকে ধমকে বলল,”তুমি এখানে এসেছ কেন? তোমায় না আমি রেস্ট নিতে বলেছিলাম যাও ঘুমাও।”
পুলিশ অফিসার সন্দেহের দৃষ্টিতে প্রণালীকে দেখছিল। তিনি বলেন,”আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে। আপনাকে মিসেস লারার কেইসের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার আছে।”
প্রণালী বলে,”আমি ওনার ব্যাপারে বেশি কিছু জানি না। যতটুকু জানি তা এখনই এখানেই বলতে পারি।”
“আপনি কতটুকু জানেন বা জানেন না, সেটা বের করা তো আমাদের দায়িত্ব। তাই বলছি আর কথা না বাড়িয়ে থানায় চলুন। নাহলে আপনাকে এরেস্ট করে নিয়ে যেতে বাধ্য হবো।”
প্রণালী ভয় পেয়ে যায়। এমনিতেই তার মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত ছিল। সে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল। পুলিশ অফিসার বলল,”বুঝেছি আপনি ভালো কথায় শুনবেন না। আপনাকে বোধহয় থানায় তুলে নিয়ে যেতে হবে।”
সমুদ্র গর্জে উঠে বলে,”সাহস থাকলে আমার স্ত্রীর গায়ে হাত দিয়ে দেখান। আমি কিন্তু কাপুরুষ নই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখব না মোটেই।”
প্রণালী অবাক হয়ে দেখল সমুদ্রকে। লোকটা বারবার তাকে অবাক করে দিচ্ছে। বারবার কানে বাজছে তার বলা,”আমার স্ত্রী” শব্দটা।
to be continue…..
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_54
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সমুদ্র পুলিশের সাথে চূড়ান্ত বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লো। সে কিছুতেই প্রণালীকে তাদের সাথে যেতে দিবে না। এদিকে পুলিশও নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে তৎপর। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রণালী বলে ওঠে,”ইন্সপেক্টর আমি আপনাদের সাথে যেতে রাজি আছি।”
সমুদ্র প্রতিবাদী কন্ঠে বলে,”না, তুমি ওদের সাথে যাবে না। তুমি চেনো না এই সব পুলিশ অফিসারদের। এরা নিশ্চয়ই ঐ শান্তর থেকে ঘুষ খেয়েছে। আমি তো শিওর,ঐ শান্তই নিজের স্ত্রীকে মে*রেছে৷ তারপর এসব নাটক করে সব দোষ তোমার উপর চাপাতে চাইছে।”
প্রণালী বলে,”এতো ভরসা করেন আমায়?”
বলেই অবাক পানে চেয়ে থাকে প্রণালীর দিকে। প্রণালী মুচকি হাসে। বলে,”আমার উপর একটু ভরসা রাখুন। আমি ভরসাটা আইনের উপর রাখছি। আমি নিজেও তো এই আইন নিয়েই পড়ি। দেখবেন যা হবে একদম ঠিক হবে। আমি জানি, আমি কোন অন্যায় করিনি।”
এই বলে সে পা বাড়ায়। সমুদ্র বলে,”আমিও যাব পুলিশ স্টেশনে। তোমাকে না নিয়ে আমি ফিরব না।”
প্রণালী পদে পদে আজ যেন অবাক হচ্ছে। সমুদ্রর এত কেয়ার তার প্রতি! এটাও হবার ছিল জীবনে। এমনটা প্রণালী হয়তো স্বপ্নেও ভাবে নি। কিন্তু বাস্তবতা যে স্বপ্নকেও হার মানায়।
~~~~~
“আপনি তার মানে লারার মৃত্যুর ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না তাই তো?”
“না।”
প্রণালীর স্পষ্ট উত্তর। পুলিশ ইন্সপেক্টর কৌতুহলী দৃষ্টিতে প্রণালীকে দেখতে থাকেন। কিছু সময় ভাবনা চিন্তা করে বলেন,”গতকাল রাতে আপনার স্বামী থানায় আপনার নামে মিসিং ডাইরি করেছিল। এম আই রাইট?”
প্রণালী মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।
“কোথায় গিয়েছিলেন কাল আপনি?”
“ঘুরতে বেরিয়ে একা পথ হারিয়ে ফেললেন ব্যাপারটা হাস্যকর না?”
“হাস্যকর মানে?”
“হানিমুনে এসে আপনি একা একা ঘুরছিলেন কেন?”
“প্রশ্নটা ব্যক্তিগত পর্যায় চলে যাচ্ছে এটা ঠিক নয়।”
“আচ্ছা, তাহলে একটা অব্যক্তিগত কথাই বলি। গতকাল রাতে মিসেস লারা আপনাকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়। কি তাই তো?”
প্রণালী অবাক হয়ে বলে,”আপনারা কিভাবে জানলেন?”
“মিসেস লারার ঘর থেকে আমরা তার ডায়েরি উদ্ধার করেছি। যেখানে তিনি নিজের জীবনের সব কথা লিখে রেখেছেন গতকাল অব্দি। আর শেষ কথা গুলো আপনাকে নিয়েই। উনি আপনাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। কারণ ওনার মতে আপনি ওনার এবং ওনার স্বামীর মধ্যে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।”
“এসব বলে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন অফিসার?”
“নিজেকে বাঁচাতে আপনি আবার..”
“কখনোই না। আমি এমন কিছু করিনি। তাছাড়া লারার ক্ষতি করার কথা আমি ভাববো না। কারণ ও আমায় মা*রতে চাইলেও আখেরে আমার জীবন বাঁচিয়েছিল গতকাল। আর আমার শান্তর সাথে যা কিছু ছিল সব অতীতে। এখন আমার মনে শান্তর জন্য কোন অনুভূতি নেই। নেই বললে ভুল হবে আছে। তবে সেটা শুধুই ঘৃণা।”
পুলিশ অফিসার বলেন,”আপনার মুখের কথায় সব মানতে পারছি না। যদি আপনার সাথে সত্যি মিস্টার শান্তর কোন সম্পর্ক না থাকতো তাহলে আপনাদের একই ঘরে কিভাবে পাওয়া গেলো তাও ঘনিষ্ঠ অবস্থায়!”
“ইন্সপেক্টর! আপনি কিন্তু খারাপ দিকে ইঙ্গিত করছেন। আগে প্রমান জোগাড় করুন আমার বিরুদ্ধে তারপর কথা বলবেন।”
“২-৩ দিনের মধ্যেই মিসেস লারার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট চলে আসবে। তারপর সব সত্য জানা যাবে। ততদিন পর্যন্ত আপনার উপর আমাদের নজর থাকবে। ভুলেও শহর ত্যাগের চিন্তা করবেন না। আপনি আর মিস্টার শান্ত কিন্তু আমাদের প্রধান সাসপেক্ট।”
“আমি তাহলে এখন আসতে পারি?”
“জ্বি, আসুন।”
~~~~~~
প্রণালীর জন্য থানার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল সমুদ্র। প্রণালীকে বাইরে আসতে দেখেই দৌড়ে তার সামনে গিয়ে বলে,”কি বলল পুলিশ?”
“কেইস সংক্রান্ত কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।”
“ওরা তোমায় হেনস্তা করে নি কোন ভাবে? যদি করে থাকে তো আমায় বলো। আমি ওদের..”
“ওনারা জাস্ট কেইস সম্পর্কে কিছু জরুরি প্রশ্ন করেছেন। আমায় হিউমিলিয়েট করেন নি। আপনি প্লিজ এত হাইপার হবেন না। চলুন এখান থেকে।”
সমুদ্র প্রণালীর কথা বিশ্বাস করে তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে যায়। এমন সময় শান্তর সাথে দেখা হয়ে যায়। তাকেও পুলিশ তলব করেছে। তাই সে এসেছে। শান্তকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় সে প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এইসব ঝামেলা মিটে যেতে দাও প্রণালী। তারপর আমি তোমাকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনব।”
সমুদ্র রেগে শান্তর কলার ধরে বলে,”ওর স্বামী এখনো মরে যায় নি। ওর দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টাও করবি না।”
শান্ত বাকা হেসে বলে,”মরেনি, মরতে কতক্ষণ।”
বলেই গা ঝাড়া দিয়ে চলে যায়। প্রণালী সমুদ্রর পাশে এসে দাঁড়ায়। বলে,”কি বলে গেলো শান্ত? ওকে আমার বিশ্বাস নেই। লারাকে হয়তো ঐ মে*রেছে। এখন যদি আপনারও কিছু করে দেয়!”
“তুমি চিন্তা করো না। ও আমার কিছু করতে পারবে না।”
প্রণালী তবুও যেন শান্তি পায়না। সে বলে,”সব হয়েছে আমার জন্য। আমি আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে আপনার জীবনে হুমকির তৈরি করেছি। আমি আপনার জীবন থেকে চলে যাবো। তাহলেই আপনার সব বিপদ দূর হবে। এখান থেকে ফিরেই আমি…”
সমুদ্র হঠাৎ করে প্রণালীর হাত শক্ত করে আঁচড়ে ধরে। প্রণালী ব্যাথায় কুকিয়ে উঠতেই বলে,”আর একবার যদি আমায় ছাড়ার কথা বলো তাহলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। একবার যখন আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে তখন মৃত্যুর আগে অব্দি তোমায় ছাড়ব না।”
প্রণালী অবাক পানে চেয়ে থাকে সমুদ্রের পানে। সমুদ্রের চোখের মধ্যে যেন হারিয়ে যায়। প্রণালী দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই হয়তোবা ঐ চোখের মায়ায় ডুবে যেত সে!
~~~~~~~~
সময় কে’টে দিলো তিনদিন। এই তিনদিন অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে সমুদ্র-প্রণালীকে। পুলিশ যখন তখন তলব করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে৷ সব সয়ে যেতে হয়েছে মুখ বুজে। তবে আজ অবশেষে তারা মুক্তির হাওয়া পেল। লারার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এসেছে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী লারার সাথে মৃত্যুর আগে কোন জোরজবরদস্তির প্রমাণ পাওয়া যায় নি। বা এমন কোন জিনিস যা থেকে মনে হয় এটা হ**ত্যা। তাই ডাক্তার ঘোষণা করে দিয়েছে লারার মৃত্যুটা সু**সাইডই ছিল।
এরপরই এই কেইসের মুলতবি হলো। শান্ত-প্রণালীর উপর থেকে সন্দেহের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া হলো।
আজ প্রণালী ও সমুদ্র সিলেট থেকে আবার ঢাকা ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। এখানে থাকার মতো আর মানসিকতা নেই। তাই সময় হতেই বেরিয়ে পড়লো। ঢাকায় ফিরে চৌধুরী ম্যানশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। বাড়িতে এখনো কেইসের ব্যাপারে জানাজানি হয়নি। তবে প্রণালীর ভয় পু্ষ্পা চৌধুরীকে নিয়ে। না জানি তিনি আজ কোন নাটক করবেন। তবে প্রণালীর এখন কেন জানি সমুদ্রকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। মনে হয় সেই তাকে প্রোটেক্ট করবে। সমুদ্র দরজায় কলিং বেল বাজাতেই পুষ্পা চৌধুরী এসে দরজা খুলে দেন। যেন তিনি অনেকদিন থেকে এই অপেক্ষাতেই ছিলেন। সমুদ্রকে দেখেই তিনি জড়িয়ে ধরে বলেন,”তুমি ফিরেছ বাবাই! আমি জানি এই মেয়েটাই ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছিল। নাহলে আমার বাবাই তার মমকে না বলে কোথাও যাবে না।”
“কেউ আমায় ভুলায় নি মম। আমি নিজের ইচ্ছাতেই গিয়েছিলাম। আমি অনেক টায়ার্ড। প্রণালী রুমে চলো।”
বলেই সে পুষ্পা চৌধুরীর সামনে নিয়ে প্রণালীর হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায়। পুষ্পা চৌধুরী অবাক চেয়ে রয়। তার বাবাইয়ের এ কি রূপ!
to be continue…..