একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-০৪

0
392

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা ও অনুরাধার আজ দ্বিতীয় দিন কলেজে। শুরুর দিনটা তাদের সেরকম ভালো যায়নি। অনুরাধা যেভাবে স্টেজে উঠে সিনিয়রের সঙ্গে ঝামেলা করেছে তা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। রাতারাতি কলেজে তার নাম বনে গেছে ঝগড়ুটে মেয়ে। অনুরাধার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগে নি। তাই তো সে আজ কলেজেও যেতে চায়নি। প্রভা একপ্রকার টেনে নিয়ে আসছে তাকে। অনুরাধা এতে বিরক্ত হয়ে বলছে,”তুই আমায় জোর করছিস কেন প্রভা? তোকে তো বললাম আমি কলেজে যেতে চাই না।”

“যাব না বললেই হলো? তুই না গেলে আমি একা কলেজে যাব কিভাবে?”

“তুইও নাহয় কদিন কলেজ মিস দিতি।”

“আমি শুরুতেই কলেজ মিস দিতে পারব না। অনেক পিছিয়ে পড়ব রে।”

“তুই যেভাবে পড়িস আমার মনে হয় বছরে একদিন কলেজে গেলেও তোর কোন অসুবিধা হবে না। যাইহোক, নিয়েই যখন যাচ্ছিস চল। কিন্তু আজ যদি আমাকে কেউ ঝগড়ুটে মেয়ে বলে আমি মে-রে তার নাক ফা-*টিয়ে দেব। আর ঐ ছেলেটা সৌভিক না কি যেন নাম ওর সাথে যদি দেখা হয় তাহলে তো..”

“এই না। আর কোন ঝামেলা করিস না প্লিজ।”

বলতে বলতেই তারা কলেজে পৌঁছে গেল৷ আজ কলেজে তাদের দিন মোটামুটি ভালোই যাচ্ছে। ক্লাস শেষ করে দুই বান্ধবী ক্যান্টিনে মুখোমুখি বসে আছে। অনুরাধা আজ তাদের ভুগোল ক্লাসে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলছিল৷ তাদের ক্লাসের একটা মেয়ে নাকি আজ অনুরাধাকে ঝগড়ুটে বলেছিল। আর তারপর অনুরাধা সেই মেয়েটার চুলে চুইংগাম আটকে দিয়েছিল। মেয়েটা বুঝতেই পারে নি কিভাবে কি হলো। তারপর তার মুখটা দেখার মতো ছিল।

অনুরাধা এসব বলে খিটখিট করে হাসছিল। প্রভা কিছুটা রেগেই বলে,”তুই এমন না করলেও পারতি অনু!”

“ধুর, তোর মতো আমি এত ভালো হতে পারব না প্রভা। আমার দিকে ইট ছু’ড়লে আমি পা-*টকেল ছুড়ব।”

তাদের আলাপচারিতার মাঝেই আবির হঠাৎ করে সেখানে চলে এলো। আবির এসেই বসে পড়লো তাদের পাশে। প্রভার দিকে তাকিয়ে বলল,”তুমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে না?”

আবিরকে দেখে প্রভার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। মনে রাঙিয়ে যায় অন্যরকম অনুভূতিতে। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,”জ্বি।”

“আচ্ছা, কিছু মনে করো না, তোমাকে কেন জানি আমার খুব চেনা চেনা লাগে। আমাদের কি আগে কখনো দেখা হয়েছিল?”

প্রভা বলে,”জ্বি, আমার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার ক’মাস আগে আমি যখন লাইব্রেরিতে বই পড়তে গিয়েছিলাম তখন আমার বইটা হারিয়ে গিয়েছিল। ভুলবশত সেদিন আমি আপনার বই নিয়ে এসেছিলাম। তারপর আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করে বইটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।”

“ও, হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। তুমি তাহলে সেই মেয়েটা। আমার তো মনেই ছিল না। তোমার স্মৃতি শক্তি তো দারুণ!”

প্রভা স্মিত হাসে। আবির বলে,”তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে ভালো লাগল। ভালো করে পড়াশোনা করো। আর কোন হেল্প লাগলে আমাকে বলো। আসছি। আবার দেখা হবে।”

বলেই আবির চলে গেলো। আবির চলে যাওয়ার পর প্রভা তার দিকেই তাকিয়ে রইল। অনুরাধা বলে উঠল,”তোর দ্বারা কিছু হবে না।”

“আমি আবার কি করলাম?”

“সেটাই তো বলছি আমি যে তুই কিছুই করিস নি। তোর তো কিছু করা উচিৎ ছিল?”

“কি করা উচিৎ ছিল আমার?”

“হায় ভগবান! তুমি আমায় তুলে নাও। এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারবো না। আরে গবেট তুই এত বোকা কেন? তোকে কি করতে হবে সেটাও এখন আমি বলে দেব? আর কি আপনি আজ্ঞে করছিলি হ্যাঁ? তুমি করে বলতে পারলি না? আর ফোন নম্বরও তো নিতে পারতি!”

“কিসব বলছিস তুই! উনি আমার সিনিয়র ওনাকে তুমি করে কেন বলব।”

“সিনিয়রের উপর ক্রাশ খেতে পারো আর তাকে তুমি করে বলতে পারবে না? ঢং।”

“আমি ক্রাশ খেয়েছি কে বললো তোকে অনু?”

“আমাকে কিছু বলতে হয়না। আমার সিক্স সেন্স আছে।”

“…”

“কিরে এভাবে থতমত খেয়ে গেলি কেন?”

প্রভা বলল,”কিছু না। চল ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে আমরা যাই।”

প্রভা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ করে বাইরে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেল। দুকদম পিছিয়ে এসে বললো,”সরি।”

রায়াম মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল প্রভাকে। মেয়েটার সাজসজ্জা নিতান্তই সাধারণ। অন্যান্য মেয়েদের মতো নিজেকে পরিপাটি করে সাজায় না সে৷ মুখে নেই কোন কৃত্রিম মেকআপ। সবটাই ন্যাচরাল বিউটি। গালের ডান পাশে অবস্থিত তিলটি তার সৌন্দর্য যেন বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। মুগ্ধতার রেশ কাটিয়ে উঠে রায়ান বলল,”সাধাসিধা মেয়ে! তুমি কি আর ধাক্কা লাগানোর মানুষ খুঁজে পাওনা? বারবার আমার সাথেই তোমায় ধাক্কা খেতে হবে কেন?”

প্রভা এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল। রায়ানের গলা শুনে মুখ তুলে তাকায় রায়ানের দিকে। সে নিজেও আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে অনুরাধা সেখানে চলে আসে। আবার রায়ানের পিছন পিছন সৌভিকও চলে আসে। অনুরাধা ও সৌভিক একে অপরকে দেখেই ক্ষেপে যায়। যেন দুজন হাজার বছরের শত্রু। অনুরাধা সৌভিকের দিক থেকে নজর সরিয়ে রায়ানকে বললো,”দোষ আমার বান্ধবীর নয় দোষ তোমার। মেয়েদের সাথে চিপকে থাকতে নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগে তাই বারবার আমার বান্ধবীর সাথে ধাক্কা খাও ইচ্ছা করে।”

প্রভা ইশারা করে অনুরাধাকে চুপ করতে বলে। রায়ান অনুরাধার কথা শুনে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। সৌভিক দাঁত কটমট করে বলে,”এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো। আমার বন্ধু সম্পর্কে তুমি কিছু জানো না। ওর জন্য কত মেয়ে পাগল জানো তুমি? ওকে নিয়ে এমন কথা কিভাবে বলছ তুমি?”

“তোমার কাছে আমি কোন জ্ঞানের কথা শুনতে চাইনি। তোমাদের দুই বন্ধুই একই কোয়ালিটির বোঝাই যায়।”

রায়ান অনুরাধার কথা শুনে প্রভার দিকে তাকায়। প্রভাকে প্রশ্ন করে,”তোমারও কি তোমার বান্ধবীর মতো একই কথা মনে হয়?”

প্রভা সাথে সাথে মাথা দুলিয়ে নাবোধক ইশারা করে। রায়ান তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,”বেশ। যাও তোমরা।”

প্রভা যেতে থাকে। সাথে অনুরাধাকেও টেনে নিয়ে যেতে থাকে। ওরা যাওয়ার পর সৌভিক রায়ানকে বলে,”তুই এই মেয়েটাকে এভাবে যেতে দিলি কিভাবে? তোকে আর আমাকে কিভাবে অপমান করল দেখলি না?”

“থাক,যেতে দে। শুনলি না ঐ সাধাসিধা মেয়েটা বলল আমাকে ওর এমন মনে হয়না। এই কথাটা বলে ও আমার মনে নিজের যায়গাটা আরো শক্তপোক্ত করে নিলো। ওকে কিভাবে শাস্তি দেই?”

সৌভিক হতবাক হয়ে বলল,”তার মানে আমি যেটা ভাবছি সেটাই…”

“হুম।”

রায়ান হালকা হেসে নিজের চুলে হাত বুলোয়। সৌভিক এক পলক তাকায় নিজের বন্ধুর দিকে। রায়ানের সারা দেহ একদম ধবধবে ফর্সা। একদম রাজপুত্রর মতো চেহারা। অবশ্য হবে নাই বা কেন এলাকার এমপি রুহুল আমিনের একমাত্র ছেলে সে। আদর যত্নের কোন কমতি নেই। আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন। কত মেয়েই পাগল তার এই বন্ধুর জন্য। অথচ তার এই বন্ধু মন দিলো নিতান্তই সাধারণ একটি মেয়ের দিকে। হ্যাঁ, প্রভা মেয়েটা নিঃসন্দেহে সুন্দরী। তবে এর থেকেও অনেক সুন্দরী মেয়ে রায়ানের জন্য ফিদা।

সৌভিক ভাবলো, তাতে কি? ভালোবাসা কি বলে কয়ে হয়? কখন কে কাকে ভালোবেসে ফেলবে সেটা কেউ বলতেই পারে না। যদিও সে নিশ্চিত না তার বন্ধুর অনুভূতি কি। ভালোবাসা নাকি নিতান্তই ভালো লাগা?

এসব ভাবনা পাশে সরিয়ে দিলো সৌভিক। তারপর অনুরাধা মেয়েটার করা অপমানের কথা ভাবলো। তার চোয়াল শক্ত হলো। নিজের হাত মুঠো করে বলল,”ঐ মেয়েকে তো আমি একটা শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব। গতকাল আমায় অপমান করেছে আর আজ রায়ানকে। ওকে আমি ছাড়বো না।”

যেই ভাবা সেই কাজ। সৌভিক কিছু একটা দুষ্টু ফন্দি এটে নিলো তারপর। মনে মনে বলল,”এবার তুমি বুঝবে মেয়ে সৌভিকের সাথে লাগতে আসার ফল কি হয়।”

to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে