#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_51
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রণালী চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। একটুর জন্য তার শ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। চোখের সামনে যেন নিজের মৃত্যু স্পষ্ট দেখতে পারছিল সে। কিন্তু লারা তাকে ধাক্কা দিয়েই তার হাত ধরে টেনে আবার তাকে বাঁচিয়েছে। অতঃপর নিজেই মাটিতে বসে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। প্রণালী দম নিয়ে লারার কাঁধে হাত রাখে। লারা উঠে দাঁড়িয়ে প্রণালীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি এটা কি করতে যাচ্ছিলাম? নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার প্রণালী। এত খারাপ কিভাবে হয়ে গেলাম আমি? আমি তো এমন ছিলাম না। আমি খু**ন..”
বলেই অনবরত কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায় মেয়েটার৷ প্রণালী লারাকে শান্তনা দিয়ে বলে,”তোমার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি লারা। কারণ তুমি বর্তমানে যেই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ সেটা আমিও একসময় কাটিয়েছি। শান্ত আমার অনুভূতি নিয়েও ঠিক এইভাবে খেলেছিল।”
লারা বলে,”জানো আমি সেই ১২ বছর বয়স থেকে শান্তকে পছন্দ করি। আমার শৈশব, কৈশোর সব ওকে ভালোবেসেই পার করেছি। কিন্তু ও আমার ভালোবাসার কোন মূল্য দেয় নি। শুধু আমায় ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থে।”
“আমি সবটাই বুঝতে পারছি। শান্ত একটা জঘন্য ছেলে। ও শুধু তোমার নয় আমার অনুভূতি নিয়েও খেলেছে৷ তবে দেখো ও একদিন সবকিছুর শাস্তি পাবে। অন্যকে কষ্ট দিয়ে কখনো নিজে সুখী হওয়া যায়না। তুমি নিজেকে সামলাও লারা। আমি জানি, মুখে বলা যতটা সহজ বাস্তবটা এতটা সহজ না। আমি নিজেও এখনও অব্দি নিজেকে সামলে উঠতে পারিনি। তবুও আমি চেষ্টা করছি, তোমাকেও একই পরামর্শ দিব।”
বলে প্রণালী লারাকে শান্তনা দিতে থাকে। অতঃপর লারাকে নিয়ে আসতে থাকে। মাঝপথে শান্তর সাথে তার দেখা হয়ে যায়। প্রণালী ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায় শান্তর দিকে। শান্ত লারাকে বলে,”তুমি প্রণালীর সাথে কি করছ? নিশ্চয়ই আমার বিরুদ্ধে ওর মনটা বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলে!”
প্রণালী বলে ওঠে,”লারার এমন কিছু করার প্রয়োজন নেই। কারণ এমনিতেই আমার মনে তোমার জন্য যথেষ্ট বিষ আছে। আর তুমি আমার পেছনে নিজের সময় নষ্ট না করে নিজের স্ত্রীর খেয়াল রাখো। যাকে বিয়ে করেছ তাকে পর্যাপ্ত সম্মানটুকু দাও।”
শান্ত আচমকা প্রণালীর হাত ধরে বলে,”আমি জানি, আমি যা করেছি তাতে তোমার আমার উপর এই রাগ দেখানো স্বাভাবিক। তোমার যায়গায় আমি থাকলেও আমি একই রকম ভাবে রাগ দেখাতাম। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো প্রণালী আমি সবটা বাধ্য হয়ে করেছিলাম। আমার মা আমাকে কসম দিয়েছিল তোমার উপর প্রতিশোধ না দিলে উনি নিজেকে শেষ করে দেবেন। তাই আমি বাধ্য হয়েই…তোমাকে কষ্ট দেওয়ার পর আমি একটা রাতও শান্তি পাইনি। লারাকে তো সহ্য করছি শুধু আমার মায়ের জন্য। নাহলে আমার মনে তো শুধু আর শুধু…”
“ব্যস, অনেক হয়েছে শান্ত। তোমার এসব ফাজুল বাতে বন্ধ করো। আমার এসব শোনার কোন মুড নেই। আর কোন সিনক্রিয়েট নয়। আমার হাতটা ছেড়ে নিজের স্ত্রীর হাতটা ধরো। যাকে বিয়ে করেছ তার দায়িত্ব নিতে শেখ।”
শান্ত কাতর সুরে বলে,”আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে প্রণালী। তুমি আমার জীবনটা আবার নতুন করে গুছিয়ে দাও।”
প্রণালী রেগে শান্তকে ঠাটিয়ে একটা চ*ড় মা*রে। অতঃপর লারার হাতটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এই মেয়েটাকে নাও, এই মেয়েটার সাথে গুছিয়ে নাও নিজের জীবন। আর কোনদিন যেন তোমাকে আমি আমার ত্রীসীমানায় না দেখি। নাহলে তোমার এমন অবস্থা করব যা তুমি ভাবতে পারছ না।”
বলেই প্রণালী হনহন করে চলে যেতে থাকে। সমুদ্র প্রণালীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”তুমি যাই বলো, আমি তোমারই হবো। শুধু আর শুধু তোমারই। ঐ সমুদ্র চৌধুরীর কাছ থেকে আমি তোমায় ছিনিয়ে নেবোই দেখে নিও তুমি।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রণালী রিসোর্টে ফিরে আসে। সমুদ্র প্রণালীর চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে ছিল। গোটা এলাকা চষে বেড়িয়েছে, পুলিশ ফাইলসও করেছে। তারপর ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসেছিল রিসোর্টে প্রণালী ফিরেছে কিনা দেখার জন্য।
এসেই প্রণালীকে দেখে সে যেন ধরে প্রাণ ফিরে পায়। প্রণালীর সামনে গিয়ে বলে,”কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি প্রণালী? এভাবে আমাকে না বলে কেন গেছিলে? জানো আমার কত চিন্তা হচ্ছিল।”
প্রণালীর মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল। সমুদ্রের কথায় সে তেতে উঠে বলে,”কেন? আমাকে কি আপনার পারমিশন নিয়ে সব যায়গায় যেতে হবে?”
“এভাবে বলছ কেন? আমার চিন্তা হচ্ছিল তোমার জন্য।”
“কে বলেছে আপনাকে আমার জন্য চিন্তা করতে? আমি বলেছি? বলিনি তো! তাহলে আল্লাহর দোহাই লাগে আমার জন্য এসব চিন্তা-ফিন্তার নাটক করতে হবে না। আমি কাউকে পরোয়া করি না।”
“নাটক? তোমার এসব কিছু নাটক মনে হচ্ছিল? জানো তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি আমি? পুলিশে ডাইরি পর্যন্ত করেছি।”
“কে করতে বলেছিল এসব আপনাকে? আমি বাঁচি মরি তাতে আপনার কি? আপনাকে আমার এত চিন্তা করতে হবে না।”
সমুদ্র অস্থির হয়ে দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে প্রণালীকে শক্ত করে ধরে বলে,”তুমি স্ত্রী হও আমার। আর আমি তোমার জন্য চিন্তা করব না?”
প্রণালী হতবাক হয়ে সমুদ্রর দিকে তাকায়। সমুদ্র দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে প্রণালীর থেকে দূরে সরে এসে বলে,”ড্যাড, তোমাকে আমার সাথে পাঠিয়েছে। তোমার কিছু হলে তো উনি আমাকেই প্রশ্ন করবেন৷ তখন আমি কি উত্তর দেব? এই ভেবেই…”
প্রণালী বলে ওঠে,”বললা তো আপনাকে আমার জন্য এত চিন্তা করতে হবে না। আপনি বলেন তো আমি এখনই বন্ড পেপারে সই করে দেই? লিখে দেই যে, আমার কোন কিছু হয়ে গেলে তার দায়ভার আপনার উপর বর্তাবে না। তাহলে তো আপনি শান্তি পাবেন।”
সমুদ্র নির্লিপ্ত চোখে তাকায় প্রণালীর দিকে। মেয়েটার কি তাকে একটুও পরোয়া করে না? সে কি সমুদ্রের চোখ দেখেও বুঝতে পারছে না যে ওর চিন্তায় চিন্তায় মরে যাচ্ছিস সে? সমুদ্রর হঠাৎ করেই নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। প্রণালী বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। সমুদ্র প্রণালীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তার মধ্যে থেকে চিন্তা দূর হয়না। হঠাৎ করে মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেছল এই চিন্তা তাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। এমনিতেই শান্তকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকছে। প্রণালীকে দেখেও কেমন জানি বিধ্বস্ত লাগছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই সমুদ্রর চোখ লেগে যায়।
মাঝরাতে হঠাৎ কারো গোঙানির শব্দে সমুদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বসে সে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেখতে পায় প্রণালী কেমন গুটিয়ে আছে। আর গোঙাচ্ছে। প্রণালীর পড়নে একটা সাদা সেলোয়াড়। সেই সেলোয়াড়ের ওড়না দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে৷ দেখে মনে হচ্ছে খুব ঠাণ্ডা লেগেছে। সমুদ্র প্রণালীর কাছে গিয়ে তার হাত স্পর্শ করেই আতকে ওঠে। হাত অস্বাভাবিক গরম। কপাল স্পর্শ করেই বুঝতে পারে মেয়েটা অসুস্থ। এরমধ্যে প্রণালীরও ঘুম ভাঙে। সমুদ্রকে নিজের এত কাছে দেখে এই অসুস্থ অবস্থাতেও সে বেশ জোরে চিতকার করে বলে,”দূরে চলে যান আমার থেকে।”
সমুদ্র যায় না। ঠায় বসে থাকে। ড্রয়ার থেকে ওষুধ বের করে এনে প্রণালীকে খাইয়ে দিতে চায়। প্রণালী সমুদ্রর হাত থেকে ওষুধটা কেড়ে নিয়ে বলে,”আমি একাই খেয়ে নিতে পারব।”
ওষুধটা খাওয়ার পর সমুদ্র প্রণালীর দিকে পানি বাড়িয়ে দেয়। প্রণালী পানিটা খেয়ে নিয়ে বলে,”ইউ ক্যান গো নাও।”
সমুদ্র তবুও যায়না। বলে,”তুমি ঘুমাও। আমি এখানেই আছি।”
“আপনাকে আর নতুন করে কোন নাটক করতে হবে না। আমার কোন দরকার হলে আমি নিজেই সেটা মিটিয়ে নেব।”
“তুমি অসুস্থ।”
“আপনি এখানে বসে থাকলে তো আমি আর সুস্থ হয়ে যাব না। প্লিজ যান এখান থেকে আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিন।”
সমুদ্র প্রণালীকে বলে,”তুমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ো। এখানে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।”
“আমি এখানেই ঠিক আছি।”
“বেশি জেদ করো না নাহলে তুলে নিয়ে যাব।”
প্রণালী অনেক কষ্টে উঠে বসে। সমুদ্র বলে,”চলো আমি তোমায় বিছানা অব্দি নিয়ে যাচ্ছি।”
“তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি একাই পারব।”
এই বলে উঠতে গিয়ে সে পড়ে যেতে নেয়। এরপর সমুদ্রই তাকে ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজে সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।
to be continue…..
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_52
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রণালীর আজকের সকালটা শুরু হলো বেশ অন্যরকম ভাবে। জ্বরের প্রকোপ কমার বদলে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে তার। একটু আগেই সমুদ্র মেপে দেখল ১০২° ছাড়িয়েছে। তবে প্রণালীকে যেটা অবাক করছে সেটা হলো সমুদ্রের পরিবর্তিত ব্যবহার। মিস্টার সমুদ্র চৌধুরী, অহংকারে যার মাটিতে পা পড়ে না, মায়ের কথা ছাড়া এক পা নড়ে না সেই সমুদ্র প্রণালীর সেবা করছে। এটা প্রণালীর কাছে একটু বিদঘুটে লাগছিল। সকাল থেকে সমুদ্র প্রণালীর মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। প্রণালী কিছু বলতেও পারছে না। কারণ এই সেবার ভীষণ প্রয়োজন। তবে সমুদ্রের প্রতি অঅন্যরকম কোন অনুভূতি তার নেই৷ ছেলেটার প্রতি বিরূপ ধারণা তার প্রবল। তবে এই মুহুর্তে ছেলেটার উপর সে ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে একথা সত্যি।
সমুদ্র প্রণালীর মাথায় জলপট্টি দিয়ে বলে,”আমি তোমার খেয়াল রাখছি এসব কিছু নিয়ে আবার বেশি কিছু ভেবে নিও না। আমি জাস্ট মানবিকতার খাতিরেই..”
“আমি কিছু ভাবছি না।”–প্রণালীর স্পষ্ট জবাব। যার পরে সমুদ্রর আর কিছুই বলার থাকে না। কিন্তু এই কথাটা যেন তাকে স্বস্তি দিলো না। বরঞ্চ তার বুকে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বের হচ্ছিল। সমুদ্রর যেন খুব করে শুনতে ইচ্ছা করছিল যে প্রণালী এবিষয় গুলোকে স্পেশাল ভাবছে, ইমপ্রেস হচ্ছে তার প্রতি। কিন্তু প্রণালী তো প্রণালীই। তার মন বরফ নয় পাথর। তাই এই মনকে গলিয়ে পানি করা যাবে না। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙতে হবে৷ যা মোটেই কোন সহজ কাজ নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~`
দুপুর নাগাদ প্রণালী কিছুটা সুস্থ অনুভব করল। অতঃপর বেরিয়ে পড়লো একটু বাইরে। ঘরে সবসময় থাকতে খুব দমবন্ধ লাগে। সমুদ্র প্রণালীর জন্য দুপুরের খাবার আনতে পাশেই একটু রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। প্রণালীকে রুমেই বাইরে আসতে দেখে ভীষণ রাগ হয় তার। বিড়বিড় করে বলে,”মেয়েটার কি কোন সেন্স নেই? এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে৷ এবার ওকে শিক্ষা দিতেই হবে।”
এই ভাবনা থেকে সমুদ্র প্রণালীর কাছে গেল। পিছন থেকে তার নাম ধরে ডাক দিলো। প্রণালী ফিরে তাকাতেই বললো,”তুই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে বেড়িয়েছ কেন? তোমার এখন রেস্টের প্রয়োজন।”
প্রণালীর কাছে কেন জানি সমুদ্রের এই আচরণগুলো ভীষণ অযাচিত লাগে। সোজা বাংলায় বলতে গেলে তার মনে হয় সমুদ্র তার ব্যাপারে অনাধিকার চর্চা করছে যেটা তার মোটেই ভালো লাগছে না। এইজন্য প্রণালী বেশ রেগেমেগেই বলে,”আপনাকে আমার সো কলড স্বামী হয়ে আমার খেয়াল রাখতে হবে না। আ’ম টোটালি ফাইন৷ নিজেকে নিজেই সামলাতে পারি আমি। খুব খুশি হবো যদি আপনি আমার ব্যাপারে খুব একটা ইন্টারফেয়ার না করেন।”
প্রণালীর কথায় ভীষণ রেগে যায় সমুদ্র৷ সে তো ভালোর জন্যই বলেছিল কিন্তু এই মেয়ে তো নিজের জেদ নিতেই চলে। সে-ও বা কম কিসে? তাই সমুদ্রও বলে দিল,”ওকে, ফাইন। আমি আর তোমার ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করব না। তোমার যা খুশি তুমি করো।”
বলেই রিসোর্টের দিকে পা বাড়ালো৷ যাওয়ার সময় প্রণালীর জন্য আনা খাবারটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। আর বলতে লাগল,”এইজন্যই মেয়েদের বেশি পাত্তা দিতে নেই। মাথায় উঠে বসে৷ যা খুশি করুক, আমার কি।”
প্রণালীও নিজের মতো হাঁটতে থাকে। নিজের ব্যবহার নিয়ে কখনো সে ভাবে না। ছোট থেকেই বড্ড বেপরোয়া। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার অগাধ ভালোবাসা আর স্বাধীনতা তাকে এমন করে দিয়েছে। হুটহাট রেগে যায় আর তখন নিজের উপরেই নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কাকে কি বলে দেয় তার কোন খেয়াল থাকে না। এর আগে শান্তর ব্যাপারটা নিয়ে নিজের বাবাকেও তো কম কথা শোনায় নি। এখন সমুদ্রের সাথেও একই আচরণ শুরু করেছে!
~~~~~~~~~~
শান্ত বাথরুম থেকে বের হতেই লারা তার দিকে তোয়ালে বাড়িয়ে দেয়। শান্ত লারার দিকে একবার তাকিয়ে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে বলে,”এসব করে আমার মন জিতবে পারবে না। তাই বলছি চেষ্টাও করো না।”
লারার গলায় কান্না আটকে আছে। সে বলে ওঠে,”আমার সাথে এমজ কেন করছ শান্ত? আমি তো ভালোবাসি তোমায়। বিয়ের পর থেকে তো আমাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিল। বাসর রাতেও তুমি কত সুন্দর আমায় কাছে টেনে নিলে। আর এখানে এসে প্রণালীকে দেখেই আবার এভাবে বদলে গেলে!”
শান্ত তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে তোয়ালেটা লারার দিকে ছু*ড়ে বলে,”হ্যাঁ, বদলে গেলাম। কারণ তোমার কাছে আমি সেই শান্তিটা খুঁজে পাইনা যেটা আমি প্রণালীর মধ্যে খুঁজে পেতাম। এই ক’দিন আমি তোমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। নিজের মনের কাছে হেরে গেছি। তাই বলছি আমার জীবন থেকে নিজ থেকে দূরে সরে যাও।”
“পারবো না আমি। তাছাড়া প্রণালীও তো এখন অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। তুমি ওর আশায় বসে থাকছ কেন?”
“প্রণালী বিয়ে করুক, তিন বাচ্চার মা হোক আই ডোন্ট কেয়ার। আমার শুধু ওকেই লাগবে। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু আমাকে মুক্তি দাও।”
এই কথা বলেই শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে লারার কানে বাজতে থাকে শান্তর বলা কথাটা। শান্ত মুক্তি চাইলো তার কাছে! ভালোবেসে চাইলে তো লারা নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারবে শান্তর জন্য। আর সে মুক্তি চাইছে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রণালী ঘুরতে ঘুরতে বিরক্ত হয়ে আবার কটেজেই ফিরে এলো। কটেজে নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখল সমুদ্র সেখানে নেই। ব্যাপারটা প্রণালীকে এতোটা ভাবালো না৷ ভীষণ গরম লাগছিল। প্রণালী ভাবল গোসল করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। গোসল করতে বাথরুমে ঢুকল। গোসল শেষে একটা তোয়ালে মাথায় পেচিয়ে নিল। অতঃপর একটা কমলা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে নিলো। সে এসবেই কমফোরকেউ নক করল। প্রণালী ভাবল সমুদ্র এসেছে বোধহয়। তাই দরজাটা গিয়ে খুলে দিলো। দরজা খুলতেই সে হতবাক হয়ে গেল কারণ তার সামনে সমুদ্র নয়, দাঁড়িয়ে আছে শান্ত। প্রণালী কিছু বুঝে ওঠার আগেই শান্ত রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নিলো৷ প্রণালী শান্তর এই কাণ্ডে হতবিহ্বল!
প্রণালী বলে উঠল,”কি করতে চাইছ তুমি? কেন এসেছ এখানে? বের হয়ে যাও এখান থেকে। কোন সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করো না।”
শান্ত বলল,”আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে চাই না। আমার শুধু তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা বলা দরকার। তাই আমি বাধ্য হয়ে…”
“তুমি যাও বলছি..”
শান্ত শোনে না। প্রণালীর হাতটা ধরে তাকে কাছে টানার চেষ্টা করে। প্রণালী হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলে,”ছাড়ো আমায় নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করো।”
“করো চিৎকার। এতে কিন্তু তোমারই সম্মানহানি হবে, আমার কিছুই হবে না।”
প্রণালী সরে আসার চেষ্টা করল। পারল না। শান্ত আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করল। প্রণালী আর উপায় পেল না। নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য বুঝি এবার চিৎকার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এরমধ্যেই প্রণালী টের পেলো বাইরে থেকে কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে। সমুদ্র চিৎকার করে পুরো রিসোর্টটা মাথায় তুলে দিচ্ছে। প্রণালী দরজার দিকে এগোতে যাবে তখনই শান্ত তার মুখ চেপে ধরে। এদিকে সমুদ্রর চিৎকারে আশেপাশের কয়েকজন লোক ছুটে আসে। তারা সবাই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে। সমুদ্র রেগে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েই শান্ত ও প্রণালীকে এত কাছাকাছি দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। আশেপাশের সবাইও নানা কাহিনি বানানো শুরু করে। কারণ ইতিমধ্যেই অনেকে সমুদ্র-প্রণালী ও শান্ত-লারার সম্পর্কে জানে যে ওরা স্বামী-স্ত্রী। তাই অনেকেই বলতে থাকে নানা কুরুচিকর কথা। আর প্রণালী নিস্তেজ হয়ে তাকিয়ে আছে সমুদ্রর দিকে। চোখের ভাষায় বোঝাতে চাইছে সে কিছু করে নি। এরমধ্যেই একজন হঠাৎ ছুটে এসে বলে,”আপনারা সবাই এখানে ভীড় করছেন। ওদিকে ৩১৩ নং কেবিনে একটা মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”
শান্ত আতংকিত হয়ে বলে ওঠে,”ঐ কেবিন তো আমার আর লারার! লারা!!”
to be continue…..