#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_48(হানিমুন স্পেশাল)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সিলেটের ব্ল্যাক মুন রিসোর্টের বাগানের দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে দুজন যুগল। এক অতীব সুন্দরী রমণী তার প্রিয় পুরুষের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। তারা আর কেউ না, শান্ত-লারা। বিয়ের পর প্রথম হানিমুনে এসেছে। লারা শান্তকে বলে,”আমি ভাবতেই পারিনি শান্ত তুমি আমায় এত ভালোবাসবে। জানো, সেই ছোটবেলা থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। সবসময় তোমাকে নিয়ে কল্পনা করেছি সংসার সাজানোর। কিন্তু মাঝখানে ঐ প্রণালীর প্রতি তোমার এত আগ্রহ দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমায় বুঝি কোনদিনও আমি পাবো না। কিন্তু দেখো আজ আল্লাহ আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছে।”
শান্ত অন্যমনস্ক হয়ে বলে,”আল্লাহ যা চেয়েছিলেন তাই হয়েছে। প্রণালী শুধু আমার প্রতিশোধ ছিল, আমার ভাগ্য তো তুমি।”
~~~~~~~~~~
প্রণালী ও সমুদ্রও পৌঁছে গেছে হযরত শাহজালালের পবিত্র মাটি সিলেটে। ভাগ্যক্রমে তারাও এসেছে ব্ল্যাকমুন রিসোর্টে। প্রণালী দীর্ঘ যাত্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। সমুদ্র বারকয়েক তার নাম ধরে ডেকেও ঘুম ভাঙাতে ব্যর্থ হলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। প্রণালী বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে বলে,”কি হয়েছে?”
“কিছু হয়নি। আমরা সিলেটে পৌঁছে গেছি।”
প্রণালীও বিরক্তি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বিড়বিড় করে বলে,”যেখানে বিয়েটাই মানি না, সেখানে হানিমুন নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কিভাবে মানব।”
সমুদ্র প্রণালীর এই কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। বলল,”আমারও ইচ্ছা ছিল না এখানে তোমার সাথে হানিমুনে আসার ইচ্ছা ছিল না। নেহাৎ ডেড অসুস্থ তাই..”
প্রণালী আর কিছু বলে না। দুজনে মিলে ব্ল্যাক মুন রিসোর্টে প্রবেশ করে। রিশেপসনিস্ট তাদের দেখেই বলে,”ওয়েলকাম টু আওয়ার রিসোর্ট। আপনারা অনেক লাকি জানেন?”
সমুদ্র বলে,”লাকি কেন?”
“আমাদের রেস্টুরেন্টে আজ একটা বিশেষ সিক্রেট উদ্বেগ নেওয়া হয়েছিল আজ আমাদের প্রথম গেস্টদের জন্য ড্রিম হানিমুন অফার ছিল। আর আপনারাই সেই কাপল।”
প্রণালী কোন আগ্রহ না দেখিয়ে বলে,”এসবের দরকার নেই। আপনারা আমাদের জন্য রুম বুক করুন দুটো।”
রিশেপসনিস্ট বলে,”দুটো কেন? আপনারা কি কাপল নন?”
প্রণালী কিছু বলার ওঠার পূর্বেই সমুদ্র বলে,”হ্যাঁ, আমরা কাপল। আর আমি আপনাদের অফার এক্সসেপ্ট করলাম।”
প্রণালী বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। সমুদ্র প্রণালীকে চোখ মারে। সে তো প্রণালীকে জ্বালানোর জন্যই রাজি হয়েছে। মেয়েটাকে জ্বালানোর কোন সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চায় না৷ সে তো প্রথমে রিজেক্ট করতেই যাচ্ছিল কিন্তু যখন দেখল প্রণালী রিজেক্ট করছে তখন তাকে শায়েস্তা করার জন্যই একপ্রকার রাজি হয়েছে।
প্রণালী ও সমুদ্র তাদের জন্য বুক করা রুমে যায়। সেখানে গিয়েই প্রণালী বলতে শুরু করে,”আপনি ওনাদের ওফার এক্সসেপ্ট করলেন কেন? আর একটা রুম নেওয়ার মানে কি? বাড়িতে তো নিজের মায়ের আঁচলের তলায় ঘুরতেন। আর এখানে এসে রোমিওগিরি করছেন।”
সমুদ্র বলে,”এই শোনো, আমি মোটেই রোমিওগিরি করছি না। তোমার সাথে রোমিওগিরি করব কেন? তুমি কি নিজেকে জুলিয়েট ভাবছ? তুমি তো হলে লেডি দেবদাস!”
প্রণালী কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। সমুদ্র বিছানায় গিয়ে শুয়ে বলে,”তুমি আজ থেকে মেঝেতে থাকতে পারো।”
“আমি কেন মেঝেতে থাকব?”
“তাহলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ো 🥵”
“আপনার কি মাথা খারাপ? আমি আপনার সাথে বেড শেয়ার করবো। কখনো না। আপনার মম তো তাহলে আমায় জ্যান্ত রাখবে না।”
“আমার মাকে কি তুমি এত ভয় পাও?”
“আমি কেন ভয় পাবো? আমি তো আপনার কথা ভেবেই বলছি। আপনার মম যদি এসব জানতে পারে তাহলে..”
সমুদ্র হঠাৎ করে উঠে বসে। তারপর বলে,”আমি একটু আসছি।”
এই বলে বাইরে এসে ভাবে কি করবে এখন। ড্যাডকে তো কথা দিয়েছিল যে, মমের সাথে যোগাযোগ করবে না। আবার মম যদি রেগে যায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই ফ্যাসাদে পড়ে গেল বেচারা সমুদ্র।
~~~~~~~~
প্রণালী সকালের ব্রেকফাস্ট করার জন্য ব্ল্যাক মুন রিসোর্টের সংলগ্ন একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে। এসে বসে চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছিল। এমন সময় সে এমন জিনিস লক্ষ্য করে যা তার চোখে জল এনে দেয়। শান্ত-লারাকে দেখতে পায় সে। তার থেকে কিছুটা দূরে বসে ওরা ব্রেকফাস্ট করছে। তাদেরকে একসাথে কতো হ্যাপি লাগছে। প্রণালীর সহ্য হলো না এই দৃশ্য। তাকে ঠকিয়ে শান্ত যে এত শান্তিতে আছে এটা অকল্পনীয়। প্রণালী বিড়বিড় করে বলল,”এই ২ বছরে তোমার মনে কি আমার জন্য বিন্দুমাত্র ফিলিংস জন্মায় নি? তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো নি শান্ত?”
এরমধ্যে লারার নজর যায় প্রণালীর দিকে। সে শান্তকে বলে,”শান্ত লুক, ওটা প্রণালী না?”
শান্ত প্রণালীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,”আরে তাই তো।”
লারা বলে,”ঠিক আমাদের পিছু করতে করতে এখান অব্দি চলে এসেছে। দাঁড়াও আমি ওর ক্লাস লাগাচ্ছি।”
বলেই সে চলতে লাগে। শান্ত বলে,”লারা দাঁড়াও”
কিন্তু লারা প্রণালীর সামনে গিয়ে বলে,”এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছ?”
প্রণালী আচমকা এমন ঘটনায় হচকচিয়ে যায়। লারা প্রণালীকে নানা রকম বাজে কথা বলতে থাকে। প্রণালীও কম যায় কিসে। সেও লারার সাথে তর্ক করতে থাকে। এর মাঝে শান্ত এসে তার গালে ঠাস করে চড় মা*রে। প্রণালী একদম পাথরের মতো জমে যায়। এমন কিছু সে একদম আশা করে নি। শান্ত যে এমন করবে তা প্রণালীর ভাবনার বাইরে। যে শান্তকে সে এতো ভালোবাসত আজ সে তার গায়ে হাত তুলল। প্রণালীর চোখ দিয়ে ছলছল করে জল পড়তে থাকে। এরমধ্যে কোথা থেকে সমুদ্র এসে পড়ে। সে এসেই শান্তকে বলে,”কে আপনি? আর আপনার এত বড় সাহস কোথা থেকে এলো, এত অডাসিটি আপনার যে আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। আপনাকে তো আমি।”
বলেই সমুদ্র শান্তর সাথে ফাইট শুরু করে। প্রণালী অবাক হয়ে সবটা দেখতে থাকে। এ সমুদ্রর কোন রূপ দেখছে সে? যেই সমুদ্র তাকে দেখতেই পারে না সেই আজ তার জন্য ফাইট করছে৷ এটা প্রণালীর কল্পনাও নেই।
সে শুধু অবাক হয়ে দেখছে। একটা সময় পর সমুদ্রকে আটকাতে গেলে সমুদ্র প্রণালীকে বলে,”এর এত সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার এর হাত আমি ভেঙে দেব ছাড়ো আমায়।”
প্রণালী সমুদ্রর এমন বদলে যাওয়া রূপ দেখে বলে,”এটা কিভাবে সম্ভব? এতো বদল? মম কি চামচার এই রূপ!”
সমুদ্র শান্তকে মা*রতে মা-রতে মে**রেই ফেলবে এমন অবস্থা। কয়েকজন লোক এসে তাকে ছাড়িয়ে নেয়।
প্রণালী সমুদ্রর কাটা স্থানে ব্যাণ্ডেজ করতে করতে বলে,”আমার জন্য এতো লড়াই?”
“তোমার জন্য না আমার স্ত্রীর জন্য।”
“আপনার স্ত্রী কে?”
সমুদ্র হচকচিয়ে গেলেও বলে,”আমি কাপুরুষ নই সেটা প্রমাণের জন্যই।”
তখনই রেডিওতে বেজে ওঠে,”যদি অভিযোগ কেড়ে নেয় সব অধিকার
তবে অভিনয় হয় সবগুলো অভিসার
যদি ঝিলমিল নীল আলোকে ঢেকে দেয় আঁধার
তবে কী থাকে তোমার, বলো কী থাকে আমার?
যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাদাঁয়…”
to be continue…..
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_49
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রণালী ও সমুদ্র ব্ল্যাক মুন রিসোর্টে সময় কা’টাচ্ছে। সমুদ্রর কি হয়েছে সে জানে না। না চাইতেই অনেক বার তার নজর চলে যাচ্ছে প্রণালীর দিকে। নিজের এই বদলে সে অবাক হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রণালীও সমুদ্রর হঠাৎ ব্যবহারে চমকে গিয়েছিল। যদিও সে এই ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে ইচ্ছুক নয়। তাই সে সমুদ্রের কথা বাদ দিয়ে শান্তর কথা ভাবতে থাকে। শান্তকে সে কিছুতেই এত শান্তিতে থাকতে দেবে না। শান্ত প্রণালীর গায়ে হাত তুলেছে এর পরিণাম ভালো হবে না। প্রণালী ক্ষোভে ফুসছিল। হঠাৎ করে সমুদ্র,”আহ” করে গোঙানি করে ওঠে। প্রণালী সমুদ্রর কাছে এসে বুঝতে পারে তখন শান্তর সাথে মা*রামারি করে মুখে আঘাত পেয়েছিল সেখানেই বোধহয় ব্যাথা করছে। প্রণালী সমুদ্রকে বলে,”আপনার এতো হিরোগিরি করার কি দরকার ছিল? এখন শুধু শুধু ভুগছেন। আপনার মম যদি এটা জানতে পারে তাহলে তো কেঁদে কেঁদে চোখের জলের নদী বয়ে দেবে। তার বাবাইয়ের কি অবস্থা!”
সমুদ্র আচমকা প্রণালীর ভীষণ কাছে এসে বলে,”মজা নিচ্চজ তাইনা? আমার এমন অবস্থা তো তোমার জন্যই হয়েছে। কোথায় আমায় ধন্যবাদ দেবে তা না আমাকে আরো পিঞ্চ মা*রছ!”
প্রণালী সাবধানে সমুদ্রর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বলে,”আমি তো আপনাকে আমার হয়ে মা*রামারি করতে বলিনি। আপনি নিজের ইচ্ছাতেই করেছেন। তাহলে আমি কেন আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো?”
“অকৃতজ্ঞ! যাইহোক ঐ ছেলেটা কেন থা**প্পড় মা*রল তোমাকে? কে ঐ ছেলেটা তুমি চেনো?”
প্রণালী মৌন থাকে। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বলে,”ও আমার প্রাক্তন।”
“ও, আচ্ছা। এই সেই ছেলে যে তোমায় পোল্টি দিয়েছিল!”
প্রণালী গরম চোখে তাকাতেই সমুদ্র চুপ হয়ে যায়। অতঃপর বিছানায় শুয়ে পড়ে বলে,”আমার মাথায় খুব ব্যাথা করছে। কেউ মাথা টিপে দিলে ভালো লাগত।”
প্রণালী চুপচাপ সমুদ্রর মাথা টিপে দিতে থাকে। শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতাবশতই। এই লোকটা তার জন্য মা*রামারি করল সেখানে সে এটুকু তো করতেই পারে! ভেবেই সে সমুদ্রর মাথা টিপছিল। অন্যদিকে সমুদ্রর মধ্যে তখন অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল। তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করেই ভীষণ বেড়ে যাচ্ছিল। প্রণালীর সান্নিধ্যে কেন এমন হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। আড়চোখে দেখতে থাকে প্রণালীকে। এই মুখশ্রী কেমন জানি তাকে শান্তি দিচ্ছে। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে। প্রণালীর সমুদ্রের দিকে কোন নজর নেই। যদি থাকত তাহলে সে দেখতে পেত এক জোড়া চোখ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকেই দেখে চলেছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পু্ষ্পা চৌধুরীর মাথায় আগুন জ্বলে গেছে যখন থেকে তিনি জানতে পারলেন সমুদ্র আর প্রণালী বাসায় নেই। তারা একসাথে কোথায় গেছে সেটাও তিনি জানেন না। সমুদ্রর ফোনও সুইচ স্টপ বলছে। সব মিলিয়ে ভীষণ রেগে আছেন তিনি। সায়মা চৌধুরী বিপদ বুঝতে পেরে সকাল সকাল নিজের শ্বশুর বাড়ি চম্পট দিয়েছেন। সজল চৌধুরীও বিজনেস মিটিং এর বাহানা দিয়ে চলে গেছেন। পুষ্পা চৌধুরী সহজেই বুঝতে পারছেন যে তারা সবাই মিলেই কোন প্ল্যান করে সব করেছে। টায়রা তার সাথেই আছে। পুষ্পা চৌধুরী টায়রাকে বলে,”আচ্ছা, কালকের রাতের খাবারে কি কিছু মেশানো ছিল? আমার এখনো মনে আছে ডিনার করার পর আমি দুচোখ খুলে রাখতে পারছিলাম না আর।”
“জ্বি, আন্টি। আমারও তো একই অবস্থা।”
“বুঝতে পেরেছি। সব চক্রান্ত। সজল আমার থেকে আমার বাবাইকে কেড়ে নিতে চাইছে। নিজের পছন্দমতো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে আর এখন চাইছে ঐ মেয়ের সাহায্য নিয়ে আমার বাবাইয়ের মগজ ধোলাই করতে চাইছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে টায়রা, আমার ভোলাভালা বাবাইটাকে ঐ চতুর মেয়েটা ছলাকলা করে বশ করে নেবে না তো?”
“তুমি চিন্তা করো না, আন্টি। ঐ মেয়ে কিছুই করতে পারবে না। আমি সমুদ্রকে চিনি। দেখলে না, ও সেদিন তোমার কথায় কিভাবে আমায় প্রপোজ করল। ও শুধু আমাকে ভালোবাসে। ঐ মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না।”
“তাই যেন হয় টায়রা। আমার বাবাইকে আমি হারাতে চাই না। ঐ চতুর মেয়ের কব্জায় আমি কিছুতেই নিজের বাবাইকে ফিরতে দেব না। একবার বাবাইকে ফিরতে দাও ঐ মেয়েকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।”
টায়রা খুশি হয়ে যায় পুষ্পা চৌধুরীর কথা শুনে।
~~~~~~~~~~~~~~
তপ্ত দুপুর, সমুদ্র গভীর মগ্ন। প্রণালীর ভালো লাগছিল না তাই সে নিচে ঘুরতে বের হয়। সে রিসোর্টের পাশেই একটি চা বাগানে ঘুরতে গেছিল। প্রণালী আগেও একবার বন্ধুদের সাথে সিলেটে ঘুরতে এসেছিল। তখন চা-বাগানেও ঘুরেছিল। বেশ ভালো লেগেছিল। তাই আজও চলে এসেছে। হঠাৎ করেই কেউ প্রণালীর হাত ধরে টেনে তাকে নিয়ে যায়। প্রণালী কিছু বুঝে উঠতে পারে না। কিছুক্ষণ পর নিজের চোখের সামনে শান্তকে দেখতে পায়। শান্তকে দেখে প্রণালী ভীষণ রেগে যায়। তখনকার স্মৃতি মনে পড়ে। ঠাস করে চ*ড় বসিয়ে দেয় শান্তর গালে। তাও একবার নয় পরপর পাঁচ বার। শান্ত অবাক হয়ে তাকায় প্রণালীর দিকে। বলে ওঠে,”তুমি আমায় মা*রলে প্রণালী?”
“কেন? হাত শুধু তোমার একাই আছে? আমার হাত নেই? তখন আমার স্বামীর হাতে এতগুলো থা**প্পড় খেয়ে তোমার আক্কেল হয়নি তাই না? তাই আবার চলে এসেছ আমায় বিরক্ত করতে।”
“স্বামী! তুমি বিয়ে করেছ?”
“হ্যাঁ, করেছি। কেন কি ভেবেছিলে তুমি? আমি আজীবন তোমার কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকব?”
শান্ত আচমকা প্রণালীর হাতটা ধরে বলে,”জানো, আমি লারার কাছে একটুও শান্তি পাই না। ওর মধ্যে সব সময় তোমাকে খোঁজার চেষ্টা করি। তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে কখন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি সেটা নিজেও জানি না। আজ আমি তোমায় মা***রার পর থেকে কতটা অনুশোচনায় ভুগছি তুমি জানো না। আমার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।”
প্রণালী হেসে বলে,”তাই বুঝি? আমাকে মে*রে তোমার আফসোস হচ্ছে? কিন্তু বিশ্বাস করো তোমায় মে*রে আমার একটুও আফসোস হচ্ছে না। বরং ইচ্ছা করছে তোমায় ঠাটিয়ে আরো একটা..”
শান্ত আচমকা প্রণালীর হাত ধরে বলে,”চলো না, আমরা অতীতের সব কিছু ভুলে যাই। আবার সবটা নতুন করে শুরু করি। দূরে কোথাও পালিয়ে যাই আমরা….তারপর সবটা আবার নতুন করে শুরু করব।”
প্রণালী শান্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বলে,”খবরদার! এই স্পর্ধা দ্বিতীয় বার আর দেখাতে এসো না। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।”
শান্ত নাছোড়বান্দা। সে জোরপূর্বক প্রণালীকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় কোথা থেকে যেন সমুদ্র চলে আসে। শান্ত আর প্রণালীকে এত পাশাপাশি দেখে রেগে যায়।
সমুদ্র এসে এক ঝটকায় শান্ত আর প্রণালীকে দূরে সরিয়ে দেয়। সমুদ্র শান্তর কলার ধরে বলে,”তোকে না বলেছি আমার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকতে? তাও চলে এসেছিস? সকালের মার গুলো ভুলে গেছিস?”
শান্ত বলে,”তোর স্ত্রী আমাকে ভালোবাসে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ আমার জন্য অঢেল ভালোবাসা দেখতে পারবি।”
সমুদ্র প্রণালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি এই ছেলেটাকে এর প্রাপ্য উত্তর দিয়ে দাও।”
প্রণালী বলে,”আমার চোখে ভালো করে দেখ শান্ত, তোমার জন্য সেখানে একটুও ভালোবাসা নেই। আছে এক বুক ঘৃণা। তোমায় আমি এতটাই ঘৃণা করি যে, তোমার মৃত্যুর খবর পেলে আমি মিষ্টি বিলি করব।”
“প্রণালী!”
সমুদ্র হেসে বলে,”শুনলি তো ওর কথা। ও তোকে নয় শুধু আমাকে ভালোবাসে। তাই না প্রণালী?”
প্রণালী অবাক হয়ে যায় সমুদ্রর কথা শুনে। সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে। প্রণালী কোন উত্তর দেয় না। শান্ত বলে,”ওর চুপ থাকাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ও তোকে ভালোবাসে না। আমি জানি ও মুখে যাই বলুক ও আসলে আমাকেই ভালোবাসে।”
প্রণালী বলে ওঠে,”তুমি ভুল ভাবছ শান্ত
আমি…আমি শুধু আর শুধু….”
থেমে,
“সমুদ্রকেই ভালোবাসি।”
কথাটা মন থেকে বলে নি প্রণালী। পরিস্থিতির চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই বলেছে। আসলে তো তার মনে সমুদ্রের প্রতি কোন অনুভূতি নেই। কিন্তু সমুদ্রর কি হলো সে জানে না। প্রণালীর কথা শুনে তার হৃদয়ে শীতল বাতাস বইছিল। মন ফুল ফুটছিল।
to be continue…..
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_50(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সমুদ্র প্রণালীর হাত ধরে তাকে শান্তর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসে। শান্ত পেছন থেকে চেচিয়ে বলতে থাকে,”আমি ছাড়া তুমি আর কারো সাথে সুখে থাকতে পারবে না প্রণালী। তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।”
সমুদ্র এই কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে প্রণালীর হাত আরো শক্ত করে ধরে নিয়ে যেতে থাকে।
এই দিকে লারা দূরে থেকে এতোক্ষণ সব কিছু দেখছিল৷ শান্তর প্রণালীর প্রতি হঠাৎ এই জেগে ওঠা ভালোবাসা লারার দুঃখের কারণ হলো। লারা শান্তর সামনে এসে বলল,”তুমি কেন করলে আমার সাথে এমন?”
শান্ত লারার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। লারা চিতকার করে উঠল। বলল,”আমার ফিলিংস এর সাথে কেন খেললে তুমি? আমি কি তোমার কাছে গিনিপিগ ছিলাম? সেই ছোটবেলা থেকে আমি তোমায় ভালোবাসি শান্ত। কিন্তু তুমি কখনো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। তবুও অবুঝ আমি তোমায় ভালো বেসে গেছি। আল্লাহর কাছে প্রতিটা মোনাজাতে আমি তোমায় চেয়েছি। আমার ভালোবাসা কতটা গভীর সেটা তুমি উপলব্ধি করতে পারবে না শান্ত। তোমার জন্য হাসতে হাসতে আমি আমার জীবন টাও দিয়ে দিতে পারি। তোমাকে বিয়ে করে তোমার সাথে সুখে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি। কিন্তু তুমি কি করলে? আমার সব স্বপ্ন তুমি শেষ করে দিলে। আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা সব নষ্ট করে দিলে। এতোটাই যখন ভালোবাসো প্রণালীকে তাহলে আমায় কেন বিয়ে করলে তুমি?”
শান্ত চেঁচিয়ে উঠে বলে,”হ্যাঁ, আমি শুধু আর শুধু প্রণালীকেই ভালোবাসি। প্রণালীকে কষ্ট দিয়ে তোমায় বিয়ে করেছি শুধু আমার মায়ের কথায়। কারণ আমার মা চেয়েছিল আমি প্রণালীর উপর প্রতিশোধ নেই যেহেতু ওর বাবা-মার জন্য আমার মা জেলে। কিন্তু এখন আমার প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে। এখন আমি প্রণালীকে আবার হাসিল করে নেব।”
লারা ভগ্ন মন নিয়ে বলে,”তাহলে আমার কি হবে? আমি যে তোমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন সাজালাম তার কি হবে?”
“জানিনা, আমি কিচ্ছু জানিনা। তোমার কত টাকা লাগবে তুমি বলে দিও। কিন্তু তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ইউ গো টু দ্যা হেল।”
বলেই শান্ত চলে যায়। লারা সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে। আজ বড্ড বাজে ভাবে ঠকে গেল মেয়েটা। লারা চিতকার করে বলতে থাকে,”কি দোষ ছিল আমার? আমি তো শুধু তোমায় ভালোই বেসেছিলাম। তোমার কথাতেই তো তোমায় বিয়ে করেছিলাম আর এখন তুমি আমার সাথে এমন করছ। সব, এই সব হয়েছে ঐ প্রণালী নামের মেয়েটার জন্য। ওর জন্য আমি তোমাকে পাইনি। তাহলে আমি ওকেই সুখী থাকতে দেব না। আমি প্রণালীকে শেষ করে দেব। দুনিয়া থেকে ওর সব চিহ্ন মুছে দেব আমি।”
বলেই ভয়ানক ভাবে হাসতে থাকে সে। এই হিংসে মনোভাব কতদূর নিয়ে যাবে?!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র প্রণালীকে একটু দূরে নিয়ে এসে তার হাত ছেড়ে দেয়। প্রণালী যেন হাফ ছেড়ে বাসে। বারকয়েক শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,”এভাবে টানছিলেন কেন আমায়?”
“কেন? আমার স্পর্শ তোমার ভালো লাগছিল না বুঝি? তুমি তো ঐ শান্তর সামনে বললে তুমি আমায় ভালোবাসো।”
“আপনি ভাবলেন কি করে যে আপনার মতো মানুষকে আমি ভালোবাসবো? আপনার বোধহয় আমার বলা কথা মনে নেই। আমার এসব প্রেম-ভালোবাসায় কোন বিশ্বাস নেই। ভালোবাসা শব্দটাকেই আমি ঘৃণা করি।”
সমুদ্রকে এই কথাটা বলেই প্রণালী রিসোর্টের দিকে চলে যায়। এদিকে সমুদ্রর কেন জানি ভীষণ কষ্ট হয় প্রণালীর কথাটা শুনে। সে নিজেও জানে না তার সাথে হঠাৎ এসব কি হচ্ছে। আজ শান্ত আর প্রণালীকে একসাথে দেখে সমুদ্রর তো মাথাই গরম হয়ে গেছিল। ইচ্ছা করছিল সব শেষ করে দিতে। কিন্তু এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেন হচ্ছে তার? সমুদ্র সম্পূর্ণ এক গোলকধাঁধায় পড়ে যায়।
তবে এটা সে নিশ্চিহ্ন বুঝতে পারে তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে। তবে এই অনুভূতিতে তার মগজ সাড়া দিতে চাইছে না। কিন্তু বেচারা বুঝতেও পারছে না তার মন কিভাবে এই অনুভূতির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। এই অনুভূতির নামই কি তাহলে ভালোবাসা!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সিলেটের আবহাওয়া বেশ শীতল। বিশেষ করে রাতের দিকে সেখানে ভালোই ঠান্ডা অনুভূত হয়। তখন রাত ৮ টা। প্রণালী রিসোর্টেই বসে ছিল৷ সমুদ্র অনেকক্ষণ থেকে রুমে নেই। প্রণালীর মনে চিন্তাটা এসেছিল যে এত রাতে কোথায় গেল সে। কিন্তু প্রণালী চিন্তাটাকে বেশি পাত্তা দিল না। সমুদ্রকে নিয়ে একদমই আগ্রহ দেখাতে চায় না সে।
ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল প্রণালী৷ তাই ভাবল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসবে। এই ভাবনা থেকেই সে বাইরে চলে এলো। রিসোর্টের বাইরে এসেই প্রণালী হাঁটতে বের হলো একা একা। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারল কেউ তাকে ফলো করছে। পেছনে ফিরে তাকাতেই কেউ প্রণালীর নাকে একটা রুমাল ধরে। প্রণালী সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এদিকে সমুদ্র ডিনার শেষে প্রণালীর জন্য খাবার নিয়ে রিসোর্টে এসে দেখতে পায় প্রণালী সেখানে নেই। সমুদ্র ভ্রু কুচকে বলে,”এত রাতে কোথায় গেল প্রণালী।”
একবার ভাবল বাথরুমে গেছে বোধহয়। কিন্তু চেক করে দেখল নেই৷ বেলকনিতে গিয়েও প্রণালীকে না পেয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। ভয়ার্ত হয়ে রিশেপসনিস্টকে জিজ্ঞেস করে। রিশেপশনিস্ট বলে,”ম্যামকে তো আমি একা একা বাইরে যেতে দেখলাম।”
সমুদ্র বেশ ভয় পায়। এত রাতে একা কিভাবে বের হল? মনে কি একটুও ভয়ডর নেই? ভেবেই সে বের হয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগল প্রণালীকে কিন্তু কোন লাভ হলো না। সমুদ্র চিন্তায় পড়ে গেলো যে শান্ত প্রণালীর কোন ক্ষতি করল না তো? প্রণালীর ফোন নম্বরও নেই সমুদ্রর কাছে সে ভীষণ অসহায় বোধ করতে লাগল। প্রণালীর নাম ধরে চিতকার করতে লাগল।
~~~~
প্রণালীর জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি পাহাড়ের চূড়ায়। আরো ভালো করে খেয়াল করলে সে বুঝতে পারে তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রণালী নিজের চোখ খুলে নিজের চোখের সামনে এক নারী অববয় দেখতে পায়। ভ্রু কুচকে বলে,”কে ওখানে?”
লারা প্রণালীর সামনে চলে আসে। প্রণালী অবাক হয়ে বলে,”তুমি! তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছ? যেতে দাও আমায়।”
লারা উন্মাদের মতো হাসতে থাকে৷ যেই হাসি দেখে প্রণালী ভয় পেয়ে যায়। লারা হাসি থামিয়ে হঠাৎ করেই কাঁদতে থাকে। তার এই ব্যবহার প্রণালীর কেমন জানি লাগে। লারা প্রণালীর কাছে এসে তার হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বলে,”জানো, আমি না একদম এমন ছিলাম না। আমার পাড়ায় গিয়ে যদি বলো এখানকার সবথেকে ভালো মেয়ে কে সবাই নিদ্বিধায় আমার নাম বলবে। আমার কি দোষ ছিল বলো? শুধু তো পাগলের মতো একজনকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সে আমার ভালোবাসা বুঝল না। শুধু নিজের স্বার্থে আমাকে ইউজ করল। তারপরেও আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি। কিন্তু তাকে পেতে হলে যে তোমায় আমায় মারতেই হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও প্রণালী। আমার এটা করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু কি করব বলো? আমি যে বড্ড অসহায়। সরি।”
“না, না লারা তুমি এমন করবে না।”
লারা প্রণালীর কোন কথার তোয়াক্কা না করে তার হাতের বাধন খুলে তাকে দাড় করিয়ে পাহাড়ের একদম কিনারায় নিয়ে যায়। প্রণালী বলে,”তুমি ভুল করছ লারা। প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও।”
“ছেড়ে দেব? যাও দিলাম ছেড়ে।”
বলেই প্রণালীকে ধাক্কা দেয়।
প্রণালী বলে ওঠে, “নাআআআআআআআ”
to be continue…..